
লেখকঃ ঝরাপাতার কাব্য
আমি নিবির,সাধারণ ঘরের অতি সাধারণ একটি ছেলে।ফেসবুকের কল্যাণে আজ থেকে ৫ বছর আগে আমার এই সাতরঙা জগতে প্রবেশ।প্রথম প্রথম খুব এক্সাইটেড ছিলাম এই জগতটা কে নিয়ে।প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয়,চ্যাটিং,ফোনে কথা বলা,এগুলো চলতেই থাকত।কিন্তু কখনও কারো সাথে দেখা করতাম না।যখনই দেখা করার প্রসঙ্গ আসতো,তখন নানা রকম তালবাহানা শুরু করে দিতাম,আমি অনেক ব্যস্ত থাকি,একদম সময় হয়ে উঠেনা,নানা রকম ইস্যু দেখিয়ে দেখা করার বিষয় গুলো এড়িয়ে যেতাম।এই কারণে দ্রুত বন্ধু গুলোকে হারিয়ে ফেলতাম।দেখা করার বিষয়ে আমার একরকম অলসতা কাজ করত,কারো উপর তেমন আস্থা রাখতে পারতাম না হয়তোবা!
তার ৬ মাসের মাঝে আমার পরিচয় হয় ফাহিম এর সাথে।ফাহিমের সাথে আমার বেশিরভাগ চ্যাট এ বাস্তবধর্মী কথা হত,জীবনের কথা,সারাদিনের সব কর্মকাণ্ড আমরা রাতে দুজন শেয়ার করতাম,আমাদের মাঝে কোন আপত্তিকর কোন কথা হত না,তাই তোমার সাথে কথাবলতে আমার ভাল লাগত।তোমার লেখার ভঙ্গি গুলো এত সাবলীল ছিল যা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যেত।তোমার ভেতর স্বার্থ-কেন্দ্রিক কিছু ছিলনা।দিনে দিনে আমার মনে তুমি জায়গা করে নিচ্ছ তা আমার মন ইতিমধ্যেই আমায় জানান দিয়ে গেছে।তুমিও প্রতিদিন আমার খোজ খবর রাখতে শুরু করে দিলে।দুজন দুজনকে দেখিনি তবুও কেমন এক অদ্ভুত টান অনুভব করতাম তোমার প্রতি,প্রতিদিন ফোনে কথা বলা,সকাল,দুপুর,রাতে,মেসেজ দিয়ে উইশ করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়গিয়েছিল।এভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব নতুন এক দিগন্তের পথে মোড় নিতে লাগল।
দেখতে দেখতে ফেসবুকের এই সাতরঙা জগতে প্রায় ৫ বছর হয় গেছে আমার।৫ বছর আগে থেকে এই পর্যন্ত ফেসবুকে অনেক ভাল ভাল বন্ধু হয়েছে আমার,কিন্তু জেনে অবাক লাগবে,তোমার আমার ভালবাসায় যাতে কোনরকম আচ না লাগে সেই কারণে আমি আর কোন বন্ধুর সাথেই কখনও দেখা করা হয়ে উঠেনি।
শুরু থেকে শেষ ফাহিম কে আঁকড়ে রেখে,তাকে ভালবেসেই এতটা পথচলা।
থার্টিফাস্ট নাইট,আজ আমাদের ভালবাসার ৪বছর পূর্ণ হল।এমন ই একদিনে তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা।ভালবাসার কথা টা তুমিই আমাকে প্রথমে বলেছিলে।আমিও কোনকিছু না ভেবে একবারে চোখ বুঝে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম তোমার প্রস্তাবে।তারপর হাতে হাত রেখে দুজন ঘুরে বেরিয়েছিলাম পুরো শাহবাগ।সেদিন রাতেই তোমাকে হ্যাপি নিউ ইয়ার এবং তোমার জন্মদিন এর শুভেচ্ছা জানিয়ে তোমার নরম গালে আমার ঠোটের আলতো করে চুমু একে দিয়েছিলাম।তারপর ওভারব্রিজ এর উপর শুধু তুমি আর আমি,তার নিচে পুরো শাহবাগ বর্ষবরণে ব্যস্ত।আমি তোমার ঠোটে আমার ঠোট ছোঁয়ালাম।ওটা ছিল আমার প্রথম কাউকে লিপকিস এর অভিজ্ঞতা।আমি ভয়ে অনুভূতি গুলোই হারিয়ে ফেলছিলাম।তুমি আমাকে বলেছিলে,তোমার ঠোটের এই আলতো ছোঁয়া এই পর্যন্ত আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে সেরা উপহার।তখন মনে হয়েছিল পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি।হ্যাঁ সুখীই ছিলাম।জীবনের সবচেয়ে সুখের সময় ছিল আমার এই দিনগুলো।তোমার আমার অতি যত্নে লালিত এই রিলেশন নিয়ে আমার অনেক গর্ব।কারণ,ফেসবুকের রিলেশন গুলো খুব একটা স্থায়ী হয় না। আমাদের সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে আমার মনে কোন সংশয় ছিল না।আমাকে নিয়ে তোমার অনেক স্বপ্ন ছিল,তুমি খুব শীঘ্রই মালয়েশিয়া চলে যাবে.একটু স্থির হতে পারলে আমাকেও নিয়ে যাবে বলেছিলে তুমি।আমরা দুজন অঙ্গীকার করেছিলাম যদি আমাদের বিয়েও হয়ে যায় তবুও আমরা সারাজীবন আমাদের রিলেশন কন্টিনিউড করব।এভাবে হাটি হাটি পা পা করে এগুতে থাকল আমাদের পথ চলা।তোমার আর আমার বাসা অনেক টা দুর হওয়ায় আমাদের খুব একটা দেখা হত না।তাতে কি আমাদের রেগুলার ফোনে কথা তো হচ্ছে,তাতেই আমি খুশি।প্রতিদিন ফোনে কথা বলা,মাঝে মধ্যে মাসে দু একবার মিট করা,আর তোমার হাতে হাত রেখে হাটা,গল্প করা,একসাথে খাওয়া,এইটুকুতেই আমরা অনেক খুশি ছিলাম,দৈহিক সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না আমাদের,তাই এই ৪বছরে তোমার সাথে একবার ও শারীরিক সম্পর্ক করা হয়ে উঠেনি আমার,এটা একটা অবাক হওয়ার মত কথা বটে,সময়ের সাথে সাথে যেন আমাদের ভালবাসাটা আরও গভীর হতে লাগল।সবকিছু ভালভাবেই চলছিল।
২৫/১২/২০১৪
আজ আমার জন্মদিন,রাত ১২ বাজার পর থেকেই প্রচুর ফোন কল,মেসেজ আসতে থাকল আমার আত্মীয় স্বজন,এবং বন্ধু বান্ধব এর কাছ থেকে,ফেসবুক থেকেও প্রচুর উইশ পেলাম,কিন্তু আমি কেন যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না,তোমার কোন উইশ কেন এখন পর্যন্ত এল না এইভাবে,কিন্তু বিগত বছর গুলতে তো তুমিই সবার আগে আমাকে উইশ করতে,ক্রিসমাস ডে তে আমার জন্মদিন হওয়ায় তুমি আমার জন্মদিন ঠিকই মনে রাখতে,তারপর সারাদিন অপেক্ষা তোমার কল,এবং মেসেজ এর।কিন্তু তোমার কোন খোজ খবর নেই,আমিও মন খারাপ করে তোমাকে আর সেদিন কল দিলাম না।
২৬/১২/২০১৪ রাত ১১:৩০
ফাহিমের ফোন,,
-হ্যালো নিবির কেমন আছ?
-বার্ড আমার মন খারাপ,কই ছিলা তুমি?
-সরি! আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম বার্ড,
-আমি কিন্তু রাগ করেছি,তোমার সাথে কথা নেই!
-একটা গুড নিউজ আছে,যা শুনলে তোমার মন ভাল হয়ে যাবে,
-গুড নিউজ আমার জন্য?
-আমার গুড নিউজ মানে তো তোমার জন্য গুড নিউজ,তাই নয় কি!
-হ্যাঁ অবশ্যই, কেন নয়! তাড়াতাড়ি বল কি গুড নিউজ,
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,জানুয়ারি তেই এনগেজমেন্ট,আমি অনেক মানা করেছিলাম,ফ্যামিলির চাপে একরকম জোড় করেই রাজী হতে হয়েছে,আন্টি কে বোলো আমার জন্য দোয়া করতে,আর আমাদের রিলেশন টা আর থাকছে না,তুমি আজীবন আমার একজন ভালো বন্ধু হয়ে থাকবে,আমার প্রতি কোন রকম মান অভিমান কিংবা কোন অভিযোগ রেখ না,ভাল থেক,বাই।
আমি আমার কানগুলো কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,মুখ দিয়ে কোন কথাই বলতে পারছিলাম না,যেন এক প্রাণহীন পাথরের মূর্তি হয়ে গিয়েছিলাম,মুহূর্তেই যেন আমার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল,তোমার কথা গুলো কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না আমি,এত দিনের যত্নে লালিত স্বচ্ছ ভালবাসা এক নিমিষেই কিভাবে শেষ করে দিলে তুমি?আমি আর কোন কিছুই যেন ভাবতে পারছিলাম না,বুক ফাটা আর্তনাদ ছাড়া কিছুই করার ছিল না আমার।
আজ আমাদের রিলেশন ব্যাকআপ এর প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল।
০১/০১/২০১৫
আজ তোমার জন্মদিন।কত কিছুই না ভেবে রেখেছিলাম এই দিনটি কে ঘিরে।কত পরিকল্পনা।চেয়েছিলাম আজ দিনের প্রথম প্রহরে তোমার জন্মদিনের কেক,উপহার নিয়ে সশরীরে হাজির হব তোমার বাসায়।তোমাকে চমকে দেব।কিন্তু,তা আর তুমি হতে দিলে না।তার আগেই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।আমার এই স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নিলো না।
কাল রাতে তুমি যখন আমাকে হ্যাপি নিউ ইয়ার এর মেসেজ দিলে,তখন বুকটা হু হু করে উঠল।তোমার সাথে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করতে লাগল।তাই তোমায় ফোন দিলাম।তোমাকে নতুন বছর এবং তোমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম।তুমি বেশি একটা কথা বললে না।ধন্যবাদ জানিয়ে দু একটা কথা জিজ্ঞাস করে ফোন রেখে দিলে।অথচ বিগত বছর গুলোতে এই রাত টা আমারা ফোনে কথা বলতে বলতেই কাটিয়ে দিয়েছি।আমাদের ভালবাসার রঙ্গিন সময় গুলোর স্মৃতিচারণ করেছি।
কত স্বপ্ন তুমি আমায় দেখিয়েছিলে,আমি নিজেও কত স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে।কিন্তু সেই স্বপ্ন গুলো আজ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে।
যেই তুমি আমাকে আজীবন ভালবাসার অঙ্গীকার করেছিলে,সেই তুমিই আজ মাঝপথে এসে আমাকে ফেলে চলে গেলে।আমি হয়ে গেলাম একা।হয়ে গেল আমার ভালোবাসার পরিসমাপ্তি…এবং শত স্বপ্নের ভাঙ্গন…..
সমাপ্ত