
লেখকঃ চিন্ময়ের ইতিকথা
রাত্র ১১.৪৫ মিনিট।
গোস্ট লেন।
একটা অজপাড়াগাঁয়ের মাঝে বিশাল দূর্গ আকৃতির একটি বাড়ি।
তথাকথিত লর্ড হ্যামিংটন নামে জনৈক ইংরেজের মৃত্যুর পর
অত্যন্ত পানির দামে কিনে নেন জমিদার শঙ্খসাগর মিত্র। তবে
তার সেখানেও থাকা হয়ে উঠে না। বিশাল বাড়ির দ্বায়িত্ব পালন
করতে হয় তারই বিশস্থ কেয়ারটেকার নয়নলাল মিত্রের। পঞ্চাশোর্ধ সেই বৃদ্ধই যেন আজ অরণ্যের মনমাঝে বিশাল এক দূর্গসম বাটিতে নিভৃতে দিন গুজরান করছে।
বাড়িটার আশেপাশে বিশাল বন। আর সেই বনের মাঝে বাড়িতে যেন একটা থমথমে আবহাওয়া সবসময়ের সঙ্গী। রাত্রে বিশাল নিঃস্থব্ধতারর মাঝে এক দুইটা পেঁচার কর্কশ ডাক আর নেকড়ের
ভৌতিক ডাকে যেন বাড়ির পরিবেশ আরো রহস্যময় হয়ে উঠে।
শুক্রবার রাত্র ১১.৪৫
একটা গ্রান্ডফাদার ক্লক টিকটিক করে যেন সেই বাড়ির মৃত্যুশীতল নীরবতা ভাংতে চেয়েছিলো। নয়ন শুয়ে আছে সেই বাড়ির কোনের একটা ঘরে! নিঃস্থব্ধতার বুক চিরে এবার যেন তার বুকের ধুকপুকানির প্রতীয়মান সে নিজেই। অদ্ভুতুরে এক রহস্যের কুহেলিকার মায়াজালে বন্ধি যেন এ বাড়ি। মৃত্যুর মত বিষন্ন ভঙ্গিতে ঘড়িটা তার অস্থিত্ব জানান দিচ্ছে বারোটা বাজার ঢং ঢং শব্দে।
কে যেন আসছে। অতি ধীরে। কানে আসছে ছোট্ট বাচ্চার বলা
কবিতা। টুইংকেল টুইংকেল লিটিল স্টার। পা টা যেন ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে আসছে। ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগল নয়নের বুকটা।
সারা বাড়িতে শুধু দুটি জীব।
নয়ন আর সেই অশরীরি। জানালা দিয়ে হলদেটে আলো রুমে আসছে। পরিবেশটা যেন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ছোট্ট একটা মেয়ের হাসিতে। আস্তে আস্তে সেই পথ চলা শব্দটি তার রুমের কাছে এসে থামল। টকটক।টকটক। টকটক।
রুমের কড়া নারছে ।
নয়ন যেন জমে বরফ হয়ে গেছে। একগ্রাস তীব্র শীতল নীল
আতঙ্ক যেন তাকে জেঁকে ধরেছে।চুঁইয়ে পড়ছে যেন নীল আতঙ্করা!
কপাল বেয়ে কালঘাম ছুটছে তার।
আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে যাচ্ছে।
একটা হলেটে আলো তার রুমে তার মুখের উপর পড়ছে।
তারপর সে যা দেখল তা অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অচিন্তনীয়।
দেখল যে একটা ছোট্ট মেয়ে উদ্ভ্রান্তের মত শূন্য,দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে তার দিকে।
হা করে আছে সেই মেয়েটি। ধীরে ধীরে এগুচ্ছে.।
একটা চিৎকারের পর সেই বাড়িটি নিঃস্থব্ধ হয়ে গেলো।
করাল নীল নির্জনের গ্রাসে সেই বাড়িটি আছে এখনো
নিঃস্থব্ধতায়….