
লেখকঃ চিন্ময়ের ইতিকথা
আফজাল সাহেব বিপত্নীক একজন ৪৫ উর্দ্ধ মানুষ। থাকেন
মধুপুরের ভাওয়াল গড়ে। মানে ভাওয়াল গড়ের পাশেই তার বাসা। তার বাসার পর থেকেই ভাওয়াল গড়ের শুরু।
তার ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই দেশের প্রানকেন্দ্রে
অবস্থিত। কিন্তু অরণ্যের সঙ্গ ছাড়তে পারেন না বলে তিনি রয়ে
গেছেন এই ভীষন অরণ্যের দ্বারপ্রান্তে। সবসময়ই একটা থমথমে
ভাব বিরাজমান তার বাসায়। সে নিজেই রান্না করে খায়। তার বাসার পাশের বাসাটা অর্ধ কিমি দূরে। একদিন
চায়ের দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় তিনি শুনতে পান যে
কিছু,লোক ডাইনি নিয়ে ফিসফাস করছে। ব্যাপারটা
আরো,গভীরভাবে জানতে পারলেন তিনি! অনেকটা এইরকমঃ
প্রায় তিনশ বছর আগে উইচক্রাফট (ডাইনিবিদ্যা) নিয়ে চর্চা করা
এক মহিলাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। তারপর সে পঞ্চাশ বছর পর পর আসে তার বিভীষিকাময় রূপে। আর এবার আরো দুই দিন পর পূর্ণিমাতে তাকে আবার দেখা যাবে!
নিতান্তই হেসে উড়িয়ে দিলেও মনের মাঝে একধরনের অস্বস্তি
যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কেমন যেন নীরব থমথমে পরিবেশে অস্বস্তি টা আরো বেড়ে যায়। পূর্ণিমার অপেক্ষায়ই আছে সে। কিছু কি হবে?
দু দিন পর
আজ পূর্ণিমা।
শীতের রাত্রের ধোয়াশাযুক্ত সেই কুয়াশা ভেদ করতে পারছেনা
আজকের এই বিশাল কলঙ্কিনী চাঁদ। চারদিকে হলদেটে আলো।
নিঃস্থব্ধতার বুক চিরে ভেসে আসছে নেকড়ের ডাক। মনে হচ্ছে
যেন পাঁজরভাঙা কোন প্রেতের দীর্ঘশ্বাস। হিমমৃত্যুশীতল নিরবতা বিরাজমান তার বাসায়। রকিং চেয়ারে বসে থাকা তার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দটা যেন আরো ভয় ঢুকিয়ে দেয়। বারান্দায় চাঁদের আলো এসে পরেছে। এককাপ কফি নিয়ে বারান্দায় বসল। চারদিক কুয়াশায় ঢাকা।
হিমশীতল বাতাস যেন তার হাড় চিরে ঢুকছে। রাত বাড়ছে। বড় হচ্ছে চাঁদ। এতক্ষনের অপেক্ষায় যেই না ঢিল দিতে যাবে তখনি একভয়াবহ বীভৎস চিৎকার রাত্রের নিরবতা ভেঙে খানখান করে দিল।
বুকটা ধরাস করে উঠল। বনের মাঝে কি যেন ঢুকতে দেখল। অমনি কারেন্ট চলে গেলো। দোতালা থেকে টর্চ নিয়ে সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নামতে লাগল। ক্যাঁচক্যাঁচ ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হচ্ছে সেই সিঁড়িতে। আস্তে করে দরজাটা খুলল সে।হাতে টর্চ টা জ্বালাতে গিয়ে দেখে নষ্ট।
টর্চ ছাড়াই বেরুল বাইরে। রাত্রের আলোয় দূরের কুয়াশাগুলোকে
মনে হচ্ছে ভাসমান প্রেত! আস্তে করে পা রাখল সেই অরণ্যে। চারদিক অস্বাভাবিক রকম নিঃস্থব্ধ। নিজের বুকের ঢিপঢিপানিই যেন শোনা যাচ্ছিল। পায়ের কাছে হাজারো পাতা মচমচ মচমচ করে ভাঙছিল। অদ্ভূতুরে সেই জোছনায় হলদেটে আলোটা যেন ভৌতিকতার সাক্ষী বহন করে। আবার শুনতে পেল সেই চিৎকার। তবে মনে হচ্ছে কিছু তার পিছনে আছে। প্রবল শৈতিক বাতাসের সাথে তীব্র আতঙ্ক যেন মনের মাঝ থেকে পেটে চলে গেছে। পেটে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। পিছনে ভাঙা গলার একটা চাপা গোঙ্গানি শুনতে পেল সে। হিম শীতল একটা আতঙ্ক সে অনুভব করছে। অাস্তে আস্তে ঘুরছে সে। শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতি! বনের আবছা আলোয় দেখতে পেল তার সামনে দাড়িয়ে আছে অতি বিশ্রী,কদাকার এক বিভীষিকাময় নারকীয় প্রেত……….
*****************(সমাপ্ত) **************