
লেখকঃ নীল মেঘ
১.
লতিফ উদ্দিন অনেকক্ষণ থেকে চায়ের জন্য চেঁচামেচি করে এখন চুপ করে আছেন। তবে কিছুক্ষণ পর উনি আবার শুরু করবেন এই চেঁচামেচি। উনার কথা যে কারো কানে যায়না তা নয়,আজকাল উনাকে আর কেউ গ্রাহ্য করেনা।আজকাল বলতে সংসারে অভাব আসার পর থেকেই।
রহিমা বেগমও ঠিকই স্বামীর কথা শুনতে পাচ্ছেন রান্নাঘর থেকে কিন্তু চা সকালে একবার দেয়া হয়েছে তাই বিকেলের আগে আর চা দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। শুধুমাত্র স্বামীর পেনশনের টাকা দিয়ে রহিমা বেগমকে অনেক হিসেব করে সংসার চালাতে হয়। তার উপর সন্তানসম্ভবা মেয়ে বীথিকে আজ দুইমাস হল তার দুই মেয়েসহ জামাই এখানে দিয়ে গেছে। বলে গেছে যদি ছেলে হয় তাহলে তাকে খবর দিতে নাহলে সে যেন আর তার ওই মুখ না দেখায়। এতগুলা মানুষ নিয়ে এভাবে বেঁচে থাকা যে জীবনের সাথে কত কঠিন যুদ্ধ তা যিনি এই যুদ্ধের মোকাবেলা করছেন একমাত্র তিনিই জানেন।
বছর-খানেক আগেও তাদের এই দুর্দশা ছিলনা।লতিফ উদ্দিনের পেনশনের টাকা আর বাড়িতে বসে ছাত্রদের পড়ানোর টাকায় তাদের মোটামুটি ভালই চলে যেত। অস্ট্রেলিয়া থেকে তাদের বড়ছেলে সাজুও মাঝেমাঝে টাকা পাঠাত। কিন্তু লতিফ উদ্দিনের চোখে ছানি পরার পর ছাত্রদের আর পড়াতে পারছিলেন না। বিপদ যখন আসে তখন সবদিক দিয়েই আসে। এমন সময় সাজুও টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিল। চিঠি দিলে উত্তর আসেনা আর মোবাইল নাম্বারটাও বন্ধ। ভাগ্যিস লতিফ উদ্দিনের প্রাক্তন এক ছাত্র বিদেশ যাবার আগে টিন-শেডের এই বাড়িটিতে তাদের থাকতে দিয়েছে সবকিছু দেখভাল করে রাখার জন্য নইলে এতদিন ভাড়া বাড়িতে থাকলে অনেক আগেই বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া দেনার দায়ে তাদের বের করে দিত। তখন রাস্তায় থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকত না কারণ গ্রামের বাড়িতে জমিজিরাত যা ছিল তার সব বিক্রি করেই সাজুকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়েছিল। টাকার অভাবে লতিফ উদ্দিনের চোখের অপারেশনও হচ্ছেনা।
রাজু এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। চাপা স্বভাবের ছেলে রাজু আর্থিক এই নির্মমতার সাথে নিজেকে এখন ভালই মানিয়ে নিয়েছে কিন্তু পরীক্ষার ফিস দেবার তারিখের আর বেশিদিন বাকী নেই। সে বারান্দায় বসে বসে ভাবছে মাকে কথাটা কিভাবে বলবে। প্রাইভেট শিক্ষকও পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন চারমাসের বেতন বাকী থাকায়।
রাজু রোজই ভাবে মাকে বলবে,আমাদের এই দিন থাকবেনা মা। আমার পড়ালেখাটা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু কষ্ট কর। তারপর দেখ আমি ঠিক একটা চাকরি যোগাড় করে ফেলব। বাবার অপারেশনও করিয়ে নেব, আমাদের আর কোন অভাব থাকবেনা। বুবু তোর ছেলে হলেও আমি তোকে আর ও বাড়িতে যেতে দেবনা। যে তোকে বের করে দিয়েছে,যার মনে তোর জন্য কোন ভালবাসা নাই তুই কেন তার কাছে যাবি।
কিন্তু কাউকেই কিছু বলা হয়না। অভাব সবাইকে কেমন দূরে ঠেলে দিয়েছে। শারীরিকভাবে একজন আরেকজনের কাছে থাকলেও মানসিকভাবে এখন তারা কত দূরে।অথচ একসময় তারা সবাই কত কাছেই না ছিল!
ভাইয়া তখন দেশে ছিল।
অভাব ছিল তবে সেটা আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারে যেমন থাকে তেমন। হঠাৎ কোন জোছনারাতে ভাইয়া বলে উঠত, আজ জ্যোৎস্না-বরণ হবে। রাতে কেউ ঘুমাতে পারবেনা।
মা সাথে সাথেই বলতেন, সকালে উঠে আমার অনেক কাজ আছে। আমি রাত জেগে তোদের এসব বরণ টরনে থাকতে পারবনা।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ভাইয়াই সবাইকে ডেকে ডেকে খোলা বারান্দায় নিয়ে আসত। এ ব্যাপারে ভাইয়ার উৎসাহের সীমা ছিলনা। বাসার সবকটা বাতি নিভিয়ে দেয়া হত তখন।
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন বুবু গুনগুন করবে কারণ বুবুর গুনগুন সুর মানেই সে এখন গান গাইবে। বুবুর গুনগুনের আগে বুবুকে কেউ গানের কথা বলতোনা কারণ বুবুকে কেউ গান গাইতে বললে তখন তার গলা দিয়ে গান আসতনা। একবার গান গাইতে শুরু করলে তখন আর তাকে মনে হতনা সে এ জগতে আছে। কিন্নর কণ্ঠে একটার পর একটা গান গেয়েই চলছে।
একসময় মা ও ফ্লাস্ক-ভর্তি চা নিয়ে এসে বলতেন, এরকম গানবাজনার মাঝে ঘুমানো যায়?তাই চলে এলাম।
আমরা সবাই জানতাম মা একটা বাহানা তৈরি করে আসবেনই।
ভাইয়া বলত,আমি বিদেশ গেলেই তোকে একটা হারমোনিয়াম কিনে দেব বীথি।
বাবা বলতেন,বীথি ওই গানটা গা না।
বুবু লজ্জারাঙা মুখে গাইতে শুরু করত।
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে…..
-“রাজু, ও রাজু” ঘরের ভেতর থেকে লতিফ উদ্দিন ডেকে যাচ্ছেন।
-কি হইছে?
-আজ কি বার?
-রবিবার।
-বলিস কি,শুক্রবার চলে গেছে?তোরা কেউ আমাকে নামাজে নিয়ে গেলিনা।
-মনে ছিল না।
লতিফ উদ্দিন জানেন ওদের ঠিকই মনে আছে কিন্তু ওরা কেউ এখন আর তাকে গ্রাহ্য করেনা। তিনি এখন সংসারের অচল পয়সা। লতিফ উদ্দিন তাই এসব ব্যাপারে এখন আর তেমন ব্যথিত হননা।
সেদিন বীথির মেয়েটাকে তিনি একগ্লাস পানি আনতে বলছিলেন। মেয়েটা মুখের উপর বলে দিল, “পারবনা”। লতিফ উদ্দিন অবশ্য মেয়েটাকে দোষ দিচ্ছেন না, সবাই তার সাথে যেরকম আচরণ করছে সেটা দেখে দেখেই মেয়েটা এটা শিখেছে। তারপরও তিনি ঠিক করেছেন বীথির কাছে তিনি তার মেয়ের নালিশ দিবেন এবং যাতে দুইতিনটা চড়থাপ্পর খায় সেভাবেই দিবেন।দরকার হলে দুইএকটা কথা বাড়িয়ে বলবেন এতে কোন দোষ হবেনা কারণ শাস্তি পেয়ে মেয়েটা আচার-ব্যবহার শিখতে আর ভুল করবেনা কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বীথির কোন মেয়েটা তার সাথে বেয়াদবি করছে তা তিনি ধরতে পারছেন না। মেয়ে দুটির গলার স্বর একই রকম, কে জানে এরা দুইবোন হয়ত দেখতেও একই রকম।তার চোখের দৃষ্টি নেই বলে বুঝতে পারছেন না।
রাজু আমতা আমতা করে মাকে বলেই ফেলল।
-মা,সামনের সপ্তাহে আমার এসএসসি পরীক্ষার ফিস দিতে হবে।
-ফিস আমি কই থেকে দেব?
-ফিস না দিলে আমাকে পরীক্ষায় বসতে দিবেনা।
বলেই রাজু চোখ মুছল।
-আমার কাছে কি মোহর ভরা কলসি আছে যে আমি গোপন জায়গা থেকে মাঠি খুড়ে মোহর বের করে তোর পরীক্ষার ফিস দেব?আর শুন এত অল্পতেই চোখের পানি ফেলতে যাস না,জীবনে এরচেয়ে আরও বড় বড় বিপদ পাবি চোখের পানি ফেলার জন্য।
-আমি কি পরীক্ষা দিতে পারবনা?
-জানিনা।দুইবেলা ভাত যোগাড় করতেই পারছিনা আবার পরীক্ষা! তারউপর উপরি আরও তিনমুখ বেড়েছে।তোরা সবাই মিলে আমায় খেয়ে ফেল।
বীথি কাছেই ছিল।ওর প্রসঙ্গ আসতেই উঠে এলো।
-মা তুমি সবসময় উপরি তিনমুখ উপরি তিনমুখ বলে আমাদের খোটা দেও।আমার ছেলেটা হবার পরেইতো আমরা চলে যাব।
-ছেলে হবার পর মানে!তুই কিভাবে জানিস তোর ছেলে হবে?
-আমি স্বপ্নে দেখেছি টুনি রুনির বাপ ইয়া বড় একটা কাতল মাছ নিয়ে আসছে।তখনই বুঝেছি খবর ভাল।
-যদি পুঁটি মাছ নিয়ে আসতে দেখতি তাইলে কি বুঝতি?মেয়ে হবে?
বীথি কিছু বললনা। করুণ চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,আরেকটি কথা মা। তুমি আমার মেয়ে দু’টিকে একেবারে দেখতে পারনা কেন? শুধু তুমি না,এ বাড়ির কেউই দেখতে পারেনা।
মেয়েদুটি কাছেই ছিল। একসাথে দুই মেয়েই বলে উঠল নানু পচা নানু পচা।
রহিমা বেগম বললেন ‘একদম বাপের মত বদ হইছে’ তবে কথাটা তিনি চাপাস্বরে বললেন যাতে বীথি শুনতে না পায়।
দুপুরে খেতে বসে লতিফ উদ্দিন বললেন, “আলুভাজির উপর যদি একটু ঘি ছড়িয়ে দিতে!”
-খাওয়া ছাড়া তোমায় মাথায় আর কোন চিন্তা নেই?সকাল বিকাল রাত খালি এই খাওয়া আর খাওয়া।
-এত রাগ কর কেন সাজুর মা।
-কি বললে?সাজুর মা?তোমাকে না কতদিন বলছি ওই কুলাঙ্গার ছেলের মা বলে আমাকে ডাকবেনা। যে ছেলে বিদেশ গিয়ে মেম মাইয়া বিয়া কইরা বাপমারে ভুলে গেছে তার মা আমি না।
কদিন আগে লতিফ উদ্দিনের এক প্রাক্তন ছাত্র অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে দেখা করতে এসেছিল। সে-ই খবরটা দিয়েছে যে সে নাকি সাজুকে সাদা চামড়ার এক মেয়ের সাথে একটা মলে দেখেছিল।
রাত ১০টা। রাজু এখনও ফিরেনি।
বীথি মাকে কথাটা বলায় মা বললেন, পেটে টান পরলে এমনিতেই ফিরবে। এত চিন্তা করতে হবেনা।
বীথি মনেমনে ভাবছে, এই মা কি সেই মা!
যে ছোটবেলায় তাদের একটু অসুখ হলেই রাত জেগে কাটাতেন।
অভাব কি মানুষকে এতটা বদলে দিতে পারে?
সেইরাতে রহিমা বেগম অনেক রাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে রইলেন।
বাড়ির কেউ জানল না সবাই ঘুমিয়ে পরলেও মা ঘুমাতে পারেননা সন্তানের অপেক্ষায়।
আজ ৪দিন হল রাজু বাড়ি ফিরেনি।
বীথি তার মেয়েদের নিয়ে হাটার কথা বলে রাস্তায় রাস্তায় রাজুকে খোঁজে।
রহিমা বেগম তার শেষ সম্বল হাতের একগাছা বালা বিক্রি করে রাজুর পরীক্ষার ফিসের জন্য রেখে দিয়েছেন। আগে বাড়ির বাজার রাজুই করত। এখন রহিমা বেগম যান। বাজারে গেলে তিনিও উদ্দেশ্যহীন হাঁটেন রাজুর খোঁজে।
একসপ্তাহ পর রাজু বাড়ি ফিরল।
এতদিন কোথায় ছিলি, কেমন ছিলি এসব বিষয়ে কেউ কিছুই বলল না।
সে বাড়ি থেকে পণ করে বের হয়েছিল যে করেই হোক টাকা যোগাড় করবে। সারাদিন এদিক সেদিক উদ্দেশ্যহীন ঘুরছে কিন্তু কোন উপায় বের হয়নি। অনেক দোকানে গেছে কাজের জন্য কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস করে অগ্রিম টাকা দিতে রাজি হয়নি।
সন্ধ্যা প্রায় হয়েই গেল। রাজু বিকেল থেকেই পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। বাসায় ফিরে যেতেও মন চাইছেনা। মা তো বলেই দিছে টাকা দিতে পারবেনা।
তাহলে কি তার পড়ালেখা এখানেই শেষ?
পড়ালেখা শেষ করে ভাল একটা চাকরি আর সংসারে একটুখানি হাঁসি ফিরিয়ে আনা এটা কি আর সম্ভব হবে না?
এসব ভেবে ভেবে সে কোন কূলকিনারাই খুঁজে পাচ্ছিলনা।
পার্কের গার্ড অনেকক্ষণ থেকেই রাজুকে খেয়াল করছিল। শেষে কাছে এসে বলল, এই ছেলে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ি যাবেনা?
রাজু কিছু বলল না।
এবার লোকটি বলল, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছ?
রাজু এবারও কিছু বললনা।
এবার লোকটি গলার স্বর যথাসম্ভব খাদে নামিয়ে বলল, ভাড়া যাবে? একবারে ৫০০টাকা, উপরি বখশিসও পেতে পার।
এবারে রাজু লোকটির দিকে তাকাল।
আধপাকা চুল, গলায় মাফলার পেঁচানো। পান খাওয়া মানুষের মুখে সহজসরল একটা ভাব থাকলেও এই লোকের মুখে ধূর্ত-ভাব ফুটে উঠেছে।
টাকার কথা শুনেই তার পরীক্ষার ফিস, ভাল একটা চাকরি এসবই চোখে ভেসে উঠল। কি কাজ, কি করতে হবে এসব কিছুই না জেনে রাজু ‘হ্যাঁ’ বলে দিল।
-ঠিক আছে, তুমি এখানে থাকো। পার্টি পেলেই আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
অন্ধকার নেমে গেছে।
প্রায় ৪৫মিনিট পরে লোকটি এলো রাজুকে নিতে।
রাজু কল্পনাও করেনি তাকে এরকম কিছু করার জন্য লোকটি টাকা দিছে।কিন্তু প্রচণ্ড আর্থিক সঙ্কট আর ক্যারিয়ারের জন্য নিজের সত্ত্বাকে একসময় তার বিকিয়ে দিতে হল।
প্রচণ্ড শারীরিক ক্লেশ আর নিজেকে নিজের মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সে পেল জীবনের প্রথম উপার্জনের টাকা।
বীথির আবারও কন্যাসন্তান হল।
স্বাস্থ্যহীনতা এবং অতিরিক্ত ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ের কারণে বাচ্চা জন্মের ২দিন পরই বীথি মারা গেল।
বীথির মেয়েদের তার স্বামী নিতে পারবেনা বলে জানিয়ে দিল। রহিমা বেগম অনেক চেষ্টা করেও নিজের মনকে বুঝাতে না পেরে ছোট বাচ্চাটাকে দত্তক দিলেন না।
এখন রাজুও মাঝেমাঝে টাকা দেয়। কোথা থেকে দেয়, কি করে দেয় তা রহিমা বেগম জিজ্ঞাসা করেননা। সংসার চালানোটাই তার কাছে এখন বড়, সেই চালিকাশক্তি কোথা থেকে আসছে সেটা বড় নয়।
২.
হঠাৎ একদিন সাজুর চিঠি এলো। সাথে একটা মানি-ড্রাফট।
তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এতদিন সে জেলে ছিল। তারপর মার্গারেট নামে বিদেশী এক মেয়ে বিয়ে করে সে অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেনশীপ পায়।
রুনি টুনির সাথে মিল রেখে বীথির ছোট মেয়ের নাম রাখা হল ঝুনি। রুনি টুনি নানীর কাছে তেমন একটা না ঘেঁষলেও ঝুনি সবসময় নানীর সাথে সাথে থাকে।
সংসারে এখন আর অভাব নেই।
লতিফ উদ্দিনের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে।
একবছর হল রাজুও উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া গেছে। এ ব্যাপারে সাজু সব ব্যবস্থা করেছে।
সবকিছু ঠিক হলেও রাজু সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা ভুলতে পারেনি।
শরীরের কঠিন ক্ষত শুকিয়ে গেলেও সেটার দাগ যেমন রয়ে যায়, জীবনের কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি হলেও সেটার ছাপ সারাজীবন মনের মধ্যে থেকে যায়।
রাজু কিছুতেই তার জীবনের এই কালো অধ্যায়ের কথা ভুলতে পারছেনা। সারাদিনের ব্যস্ততার পরে যখন রাতে ঘরে ফিরে তখন নিজের দহনে নিজেই পুড়ে ছাই হয়। নিজের শরীরটাকে তখন মনে হয় অস্পৃশ্য কোন বস্তু যেটা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে।
একা হলেই অভাবের সময়ের সেই মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে।
শরিফ ভাইয়ের ফোন তারপর অফিস ফেরত কয়েকজন ভদ্রলোকের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয়া। এরা হয়ত তখনই নিজের ঘরে গিয়ে স্নান করে পবিত্র হয়ে মিশে যেত পরিবারের সাথে। কিন্তু রাজু আজও সেই গ্লানি মুছতে পারেনি হাজার স্নান করেও।
(সমাপ্ত)
প্রথম প্রকাশঃ বাংলা গে গল্প। ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৫।