
লেখকঃ একলা পথিক
ভয়াল শীতার্ত এক রাত……………
হাড়কাঁপানো কনকনে শীতেরমধ্যরাত। রাস্তায় কুয়াশার ঘনঘটা এতোটাই প্রকট যে সামান্যদুইহাত দূরে কোন বস্তু আছে কিনা সেটা বোঝাও ভীষণ মুশকিল। যদিও রাস্তার দুধার ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা ল্যামপোস্ট গুলোর সোডিয়াম বাতিরাটিমটিম করে আলোক ঝরাচ্ছিল।কিন্তু ভয়ানক দাপুটে ঘন কুয়াশার সাথে যুদ্ধ করে সেই আলোককে চারপাশ আলোকিত করতে নেহায়েতই অসহায় বলেই মনে হচ্ছিল। এরই মধ্যেদিয়ে কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে ঢাকা শহরের অলিগলি পেরিয়ে সাই-সাই করে দ্রুত গতিতে সাদা রঙের প্রাইভেট কারটি ছুটে চলছে বুড়িগঙ্গা সেতুর দিকে।সাধারণত ড্রাইভার দ্বারা সচরাচর গাড়ি ড্রাইভ করালেও আজ আবীর নিজেই চালকের আসনে বসেছে। আবীরের ঠিক পাশের আসনেই বসে আছে তার বয়ফ্রেন্ড সৌরভ।
ভার্সিটি পড়ুয়া সৌরভ বয়সে আবীরের চেয়ে বছর তিনেকের ছোট। একই এপার্টমেন্টের একই ইউনিটের মুখোমুখি ফ্ল্যাটেইতাদের দুইজনের বাসা। সেই ছেলেবেলা থেকেই একে অপরের চেনাজানা, বন্ধুত্ব, ভালোলাগা, হৃদ্যতা এবং অতপর ভালোবাসা। আর প্রাইভেট কারের একদম পেছনের আসনে আগাগোড়া কাপড়ে প্যাঁচানোমুখাবয়ব খোলা কিন্তু দুচোখ বন্ধ অবস্থায় পিঠ টান করে সোজা হয়ে বসে আছে শাওন। যেন তীব্র শীতে আক্রান্তঅশীতিপরঘুমন্ত কোন বৃদ্ধ। শাওন সৌরভের ভার্সিটি ফ্রেন্ড। কয়েকবছর পূর্বে শাওনের বাবার চাকরীর সুবাদেসপরিবারে তাদের সৌরভদেরএলাকাতে আসা এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু।সমবয়সী ও সহপাঠীহবার কারণে দুজনের পরিচয়ের শুরু থেকেই ধীরেধীরে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবংপারিবারিক ভাবেও দুইজনের বেশ সখ্যতা ও যাওয়াআসা।
~ ভাইয়া! আমার না ভীষণ ভয় করছে। ভয়ে হাত-পা সব ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কীভাবে যে কি হয়ে গেলো , কিছুই বুঝতেছি না।কিছুই মাথায় ঢুকছে না।(আবীরকে উদ্দেশ্য করে বলল সৌরভ)
_ এসব বলে এখন আর কোন লাভ নেই!সৌরভ। যা হবার হয়ে গেছে। ভয় কি আমারও করছে না। অবশ্যই করছে। কিন্তু পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক আর তোকে শান্ত রাখতেই আমি নির্ভার থাকার চেষ্টা করছি।( গাড়ি চালাতে চালাতেই সৌরভকে উদ্দেশ্য করে বলল আবীর)
~ সেটাতো তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তুমি জোর করে নিজেকে শক্ত স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছ। কারণ গাড়ির স্টিয়ারিং এথাকা তোমার হাত দুইটা থরথর করে কাঁপছে। ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণা তোমার ভেতোরেও তীব্রভাবে কাজ করছে।
_ হুম ঠিক ধরেছিস। কিন্তু এখন ওত টেনশন না করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা কর। ভালোই ভালোই কোনরকমে একবার বুড়িগঙ্গা সেতুতে পৌঁছাতে পারলেই হয়।পেছনের ওটাকে নদীতে কোনভাবে ফেলতে পারলেই সব ঝামেলা শেষ।
~ আচ্ছা গাড়িটা আর একটু জোরে চালালেই তো পারো!তাহলে দ্রুতই পৌঁছে যাবো ওখানে। রাস্তা তো দেখছি একদম ফাঁকা।
_ বেশি বুঝিস না! সৌরভ! যেভাবে যাচ্ছি, এভাবেই যেতে দে। গাড়ি বেশি দ্রুত টানলে রাতের বেলায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে যেসব টহল পুলিশ থাকে ওরা সন্দেহ করতে পারে । গাড়ি থামিয়ে চেক করতে পারে।
~ বল কি! এতো রাতে আবার পুলিশ! আমার না ভীষণ ভয় করছে, ভাইয়া। যদি সত্যিই পুলিশ আমাদের ধরে ফেলে। কি যে হবে তখন।আচ্ছা পুলিশ কি আদৌ বুঝতে পারবে, পেছনের সিটে যে শাওন বসে আছে ও আসলে জীবন্ত শাওন নয়, মৃত। ও কেবলমাত্রই একটা ডেডবডি। কিছুক্ষণ আগেই যাকে আমরা দুইজন মিলে খুন করেছিআর যার লাশ আমরা বুড়িগঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ করার জন্য এখনএতো রাতে গাড়িতে করে বুড়িগঙ্গা সেতুর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছি।
_ উহ!সৌরভ!প্লিজ থাম তো।আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। যা হবার হবে। আর এখন মুখ দিকে এত্ত পাকাপাকা কথা বেরুচ্ছে কেমনে শুনি ? সব আকামের গোঁড়া তো তুই। তোর জন্যই তো আজ এই ভয়াবহ অবস্থা।তোর বোকামির জন্যইআজ আমরা ঘোরতর বিপদের সম্মুখীন।এখন পণ্ডিতমার্কা সব কথা বলা হচ্ছে, তাই না!
~ কি বললে ভাইয়া, সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী। এখন সব দোষ একমাত্র আমার হয়ে গেলো। তোমার কোন দোষ নেই। তুমি একদম নির্দোষ নিষ্পাপ। বাহ ভাইয়া বেশ বেশ! ভালোই বলেছ। তুমি এত কঠিন কথাগুলো এভাবে আমাকে বলতে পারলে?(বলতে বলতেই সৌরভ কেঁদে ফেললো)
_ দেখ সৌরভ মোটেও মায়াকান্না করবিনা কিন্তু। এমনিতেই মাথানষ্ট আর এর মধ্যে তুই যদি সিনক্রিয়েট করিস! লাথি মেরে গাড়ি থেকে ফেলো দেবো। তোর ন্যাকামি কিন্তু মোটেও সহ্য হচ্ছে না।
~ ভাইয়া প্লিজ থামো। আমি আর তোমার অকথ্য বাণী একটুও সহ্য করতে পারছি না। তোমার কি আসলেই কোন অপরাধ নেই? সব দোষই কি আমার?শাওনকে খুন করার পেছনে তোমার কোন হাত নেই? এতোটা স্বার্থপরের মত কথা বলার আগে একটুও ভেবে দেখলে না? এতোটা নির্দয় হতে পারলে কীভাবে? তুমি না আমাকে তোমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসো, তাহলে কীভাবে পারলে?
_ বলবো নাহ তো কি করবো? আদর করবো তোকে,চুমু খাবো? তুই নির্বোধের মত আমাদের দুইজনের মধ্যকার গোপনীয়অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ফুটেজটা তোর ডেস্কটপের হোম পেইজে কেন সেভ করে রেখে দিয়েছিলি? আর কেনই বা তোর বন্ধু শাওন সেই ভিডিও ক্লিপ্সটা দেখে ফেলে।তোর অজান্তে সে ভিডিও ফুটেজ পেন ড্রাইভে করে নিয়ে গিয়ে তোর ভার্সিটিরসব ফ্রেন্ডদেরকেদেখিয়ে দেবার হুমকি দিয়েছিল?সবকিছু ফাঁস করে দেবার ভয় দেখিয়েছিল? উত্তর দে,কেন তুই এতো বড় বোকামি করলি যার জন্য আজ দুইজনকে খুনি সাজতে হল?
~ বললাম তো ভুল হয়ে গেছিলো। আমি কি ইচ্ছা করে এমনটা করেছিলাম? কোন বদ্ধউন্মাদ পাগলও বোধহয় নিজের অজান্তে এমন কাজ করবে না। আর তুমি আমাকে মোটেও বিশ্বাস করছ না কেন ? আসলে সেইদিন শাওন ভার্সিটির একটা জরুরী অ্যাসাইনমেন্টের কাজে আমার বাসায় এসেছিল। ওকে কম্পিউটারে বসিয়ে দিয়ে আমি পাশের রুমে চা আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আগের রাতে আমি পিসিতে বসে আমাদের দুজনেরগোপন অভিসারের সেই ভিডিও ক্লিপ্সটা যে দেখেছিলাম, সেইটা ডেস্কটপের হোম স্ক্রিন থেকে ডিলিট করতে বেমালুম ভুলে গেছিলাম।আর শাওনযে ওটা দেখে ফেলবে এবং পক্ষান্তরে পেন ড্রাইভে করে নিয়ে গিয়ে ওভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার অপচেষ্টা করতে পারে সেটা আদৌ আমার মাথাতেও ছিল না।
_ তা থাকবে কেমনে ? শুধু পারো তো ন্যাকাদের মত মায়াকান্না করতে। আর তোর সামান্য এই ভুলের কারণেশাওনকে আজ কৌশলেডেকে এনে কফির সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরাতে বাধ্য হলাম। বাজে স্ক্যান্ডাল থেকে নিজেদের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য খুনি হলাম। আর এখন এই রাতের বেলায় সেই লাশ কাঁধে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। এখন বল তাহলে দোষটা কাকে দেব? তোকে না আমাকে ?
~ ও আচ্ছা এখন সব দোষ তাহলে আমার।আর তুমি একেবারে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা,তাই না?
_ নয়ত কি? তোর মত নির্বোধ আর অপদার্থকে কীভাবে আমি ভালবাসলাম তা ভাবতেই অবাক লাগছে!
~ বাহ! একেবারে একভাবে বলেই চলছ। শোন,আমি একবার মুখ খুললে কিন্তু তোমাকেও ছেড়ে কথা বলবো না,বুঝলা?
_ কি বলবি, বল ?
~ আমি তোমাকে কত্তবার নিষেধ করেছিলাম না,যে এসব নোংরামি ভিডিও করার কোন দরকার নাই। দুইজনের ভালোবাসার নিতান্তই ব্যক্তিগত গোপন বিষয়গুলো নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখাই শ্রেয়,একান্ত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কোন বাহ্যিক ডকুমেন্ট রাখা পরবর্তীতে বিপদের কারণ হতে পারে। তুমি আমার কোনকথাই শুনছিলা তখন। শোন নাই। মোটেও ভ্রুক্ষেপ করনি আমার কথায়। কি,আমি সত্য বলছি কিনা স্বীকার কর?
_ হ্যাঁ,করেছিলি। অস্বীকার করার কিছুই নাই। কিন্তু আমি কি বুঝতে পেরেছিলাম যে এইভাবে..
~ এমনকি তোমার হাতেপায়ে পর্যন্ত ধরে বাধা দিয়েছিলাম ওসব ভিডিও না করতে। তুমি তো কিছুই শোনই নাই। বরং উল্টা বলেছিলে তোমার মামা আমেরিকা থেকে তোমার জন্য অনেক দামী “লেটেস্ট মডেলের হাই টেক রেজুলেশনেরডি.এস.এল.আর. ভিডিও ক্যামেরা” পাঠাইছে। তুমি আমার কথার কোনরূপ তোয়াক্কা না করেআনন্দে উদ্বেলিত হয়ে গালভরা অট্ট হাসি দিয়ে বলেছিলে,তোমার খুব শখ তোমার বিদেশী ভিডিও ক্যামেরার প্রথম শুট হবে আমাদের দুইজনের মধ্যকার যৌনসঙ্গমের দৃশ্য ধারণের মাধ্যমে। যা হবে তোমার ভিডিও ক্যামেরায় প্রথম ভিডিওকৃত আমাদের দুজনের ভালোবাসার লীলাখেলার জীবন্তনিদর্শন। যার চাক্ষুষ সাক্ষী হবার মহিমান্বিত গৌরব অর্জন করবে তোমার ঐ ভিডিও ক্যামেরা।
_ আচ্ছা আমি তো কিছুই অস্বীকার করছি না। তো তুই এভাবে খোঁচা মেরে কথাগুলো বলছিস কেন?
~ বলবো না তো কি করবো? তুমি একতরফা ভাবে শাওনকে খুন করার পেছনে সমস্ত দোষ আমার কাঁধে চাপিয়ে দিবে আর আমি সব মুখ বুঝে সহ্য করবো, তা কীভাবে হয়। তাছাড়া শাওনকে খুন করার বুদ্ধিও কিন্তু প্রথমে তুমিই দিয়েছ। আমিই কিন্তু তোমাকে বলেছিলাম ওকে কোনমতে বুঝিয়েশুনিয়ে সবকিছু মীমাংসা করা যায় কিনা। কিন্তু তুমি অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে ওকে হত্যা করার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলে। যার ফলেই আজ আমাদের দুজনের পরিকল্পনা মাফিক ওকে খুন করা। আর লাশ নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলার জন্য এই রাতবিরাতে গাড়ি করে শহরের পর শহর ছুটে বেড়াচ্ছি। এর পরেও কি তুমি বলবে যে, শাওনকে খুনের পেছনে সব দায় কেবলমাত্র আমারই। তোমার আর তোমার ঐ বিদেশী ভিডিও ক্যামেরার কি কোনই দোষ নাই ? বল,জবাব দাও?(কাঁদতে কাঁদতে একনাগাড়ে কথাগুলো বলল সৌরভ)
_ প্লিজ সৌরভ!আমাকে ভুল বুঝিস না। আমার দোষ আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। যা হবার তাতো হয়েই গেছে। ভুল যা করার করেই ফেলেছি। আসলে এই ভয়ানক সীমাহীন বিপদে পড়ে মাথায় কিছুই কাজ করছে না। তোকে অযথাই একগাদা উল্টাপাল্টা বকলাম। প্লিজ লক্ষি ভাই আমার, কাঁদিস না। তোকে অনেক ভালোবাসি বলেই এমনকরে বলার সাহস পাই। আচ্ছা এই নে আমি কানে ধরে মাফ চাইছি,এবার অন্তত থাম।
~ থাক হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না। তুমি পারোও বটে। তোমার মারতেও বাঁধে না, ভালবাসতেও বাঁধে না। যতসব ঢং।
_ আমি সত্যিই মন থেকেই বলেছি। মোটেও অভিনয় করে বলিনি। ঢং করিনি। তুই অন্তত বিশ্বাস কর।
~ বিশ্বাস করলাম তো। এখন বকবক বন্ধ করে দ্রুত গাড়ি চালাও। আর কতক্ষণ লাগবে বুড়িগঙ্গায় পৌঁছাতে।
_ এইতো অলরেডি গুলিস্থান চলে এসেছি। আর বেশিক্ষণ লাগবে না। বড়জোর ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবো। তুই শুধু পেছনে খেয়াল রাখিস যেন শাওনের ডেডবডিটা কোনভাবেই সিটের উপরে কাঁত হয়ে না পড়ে। যেভাবে বসা অবস্থায় আছে ওভাবেই যেন থাকে। কাঁত হয়ে পড়েগেলে পুলিশ চেকিংএ কিন্তু ঝামেলায় পড়বো।
~ ঠিক আছে আমি পেছনে খেয়াল রাখতেছি। কিন্তুতুমি সামনে দেখো । সম্ভবত ৪/৫ জন পুলিশের একটি দল রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে হাত ইশারা করে আমাদের গাড়িটাকে থামাতে নির্দেশ করতেছে।দেখেছো?
_ ওহ সিট! তাই তো দেখছি। বিপদে বোধহয় পড়েই গেলাম রে। কি যে হবে কিছুই বুঝতেছি না।
~ বল কি ভাইয়া। আমার তো ভয়ে গলা-বুক শুঁকিয়ে আসছে। যদি ওরা সব বুঝে যায়।
_ শোন,বেশি নার্ভাস হউস না। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা কর। যা বলার আমিই বলবো। তুই শুধু মাথা নেড়ে আমাকে সাঁয় দিবি। আমার কথায় তাল মেলাবি। ঠিক আছে?
~ হুম ওকে। ঠিক আছে।
পরদিন খুব সকালে………………
ঘুম ভেঙে চোখমেলেইসৌরভ শোয়া অবস্থা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসে পড়লো। প্রচণ্ড শীতেও সে একেবারে ঘেমেভিজে একাকার। শরীরে জড়ানো পশমি মোটা কম্বলখানা শরীর থেকে টেনে দূরে সরিয়ে দেখলো ভয়ে শিউরে শরীরের সমস্ত লোম কাঁটা দিয়ে আছে। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়েও মাত্রাতিরিক্ত রকমের ওঠানামা করছে। তার কাছে কেবলই মনে হচ্ছিল সে যেন একটা ঘোরের ভেতোরে আছে আর সবকিছুই তার চোখের সামনে জলজল করে ভাসছে।সেনিজেইনিজেকেচিমটিকেটেদেখলএতক্ষণতারসাথেযাঘটলোএটাকিআদৌদুঃস্বপ্নছিল,নাকিসত্যিই।এতোটা ভয়ানক আতঙ্কগ্রস্থ দুঃস্বপ্ন সে শেষ কবে দেখেছিল সেটাও মনে করতে পারছিলো না।এমন সময় হুট করেই রুমের ভেতোরে সৌরভের মা এসে প্রবেশ করায় সে কিছুটা স্বস্তি পেলো। নিজেকে রহস্যের ঘোর থেকে বাস্তবে নামালো। কিন্তু মায়ের কথায় সে যেন আরো চমকে গেলো—-
::কিরে তুই একটু আগে ঘুমের মধ্যে ওভাবে পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করছিলি কেন?
~ কি বল তাই নাকি? সত্যিই ?
::সত্যি না তো কি মিথ্যে বলছি। তোর রুমের পাশ দিয়ে যাবার সময় খেয়াল করলাম তুই পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করছিস। কি হয়েছে রে তোর,কি করেছিস ?
~ আরে মা!ধুর কি যে বলনা,কি করবো? কিছুই না। একটা বাজে দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম এই আর কি।
::ও আচ্ছা। তাহলেই ভালো।আর আজকে যে তোর জন্মদিন সেইটাও নিশ্চয়ই ভুলে বসে আছিস।
~ ওহ মাই গড। তাই তো। আমার তো একদমই মনে নাই। থ্যাংক ইউ মা। মনে করিয়ে দেবার জন্য।
:: মনে থাকবে কীভাবে।সারাদিন তো শুধুই উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় ঘুরে। শোন, ড্রয়িং রুমে সেই কখন থেকে আবীর একাএকা বসে আছে। ছেলেটা সেই ভোঁরবেলা এসেছে তোকে জন্মদিনের উইশ করবে বলে। আরতুই এখনো গাধার মত পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস। জলদি ও ঘরে যা ।
সৌরভ একদৌড়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখল আবীর সোফায় বসে পেপার পড়ছে। সৌরভ আবীরের কাছে গিয়েই তাঁকে সজোরে বুকের জাপটে ধরে কেঁদে ফেললো। তখনো ভয়ে সৌরভের হৃদস্পন্দন ঘড়ির কাঁটার ন্যায় টিকটিক করে বাজছিল। সৌরভের চোখে জল দেখে আবীর ভাবলো হয়ত রাতেই ফোন করে কেন তাঁকে জন্মদিনের উইশ করা হয়নি সেইজন্যই বোধহয় রাগেঅভিমানে সে কাঁদছে। তাই কোন অজুহাত দাড় না করিয়ে আবীর সৌরভের ঠোঁটে আলতো করে একখানা চুমু খেয়ে কানের কাছে ঠোঁট দুখানা ঘেঁষে মৃদুসুরে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। ভয়ার্ত সৌরভওনিজের আবেগকে সংবরণ করতে না পেরে আবীরের ঠোঁটে অনেকগুলো চুমু খেলো।অতপর আবীর সৌরভের দুইচোখ তার দুইহাত দিয়ে আলতো করে চেপে ধরে বলল—
_ বলতো সৌরভচোখ মেলেই তুই সামনে স্পেশাল কি দেখতে পাবি?
~ জানিনা । কিছুই আন্দাজ করতে পারছি না। কি আছে দেখি?
আবীর সৌরভের চোখ থেকে হাত সরাতেই সৌরভযা দেখতে পেলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। দেখলো সামনে একদম ব্র্যান্ডনিউ একটা ভিডিও ক্যামেরা রাখা। নতুন ঝাঁ চকচকে অ্যাশ কালারের বেশ দামী একটা ভিডিও ক্যামেরা। সীমাহীন বিস্ময়,ভয়,আতংক আর রাজ্যের বিষণ্ণতা এসে ভর করলো সৌরভের চোখেমুখে।ঠিক যেন রাতে দেখা সেই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের বাস্তব মঞ্চায়নের একদম দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়ে সে।
_ কি ক্যামেরা দেখে একদম চমকে গেলি তাই না ? তোকে না বলেছিলাম যে মামা আমেরিকা থেকে আমার জন্য ভিডিও ক্যামেরা পাঠাবে। তুই তো তখন বিশ্বাসই করিস নি। এখন দেখলি তো। এইবার কিন্তু আমার কথামত তোকে সেইকাজ করতে হবে। তুই কথা দিয়েছিলি তোর জন্মদিনে আমি আর তুই আমার ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে প্রথমেই আমাদের দুইজনের রাসলীলা ভিডিও করবো। আমার ক্যামেরার উদ্বোধনী ভিডিও হবে আমাদের গোপন অভিসারের অন্তরঙ্গ দৃশ্য দিয়ে। আর এটা আমাদের ভালোবাসার স্মৃতি হিসাবে দুইজনের কাছে জমা থাকবে। যখন দুইজনকে দুইজনকে ভীষণভাবে মিস করবো তখন এটা দেখে নেবো।এখন কিন্তু কোনভাবেই তুই আর আমাকে না করতে পারবি না………………।
ভিডিও ক্যামেরায় দুইজনের যৌনকর্মেরনগ্নদৃশ্য ধারণ কার্যের মাধ্যমে আবীর দুজনের যৌনাভিলাসের মনবাসনার একান্তআকাঙ্খার কথাগুলো সৌরভের উদ্দেশ্য একাএকা একনাগাড়ে বলেই চলেছে। আর সৌরভ নির্বাক শ্রোতা হয়ে পাঁথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে বুকে একপশলা ভয়, চোখে সাগর সমান আতংক আর মনে একরাশভয়ানক বিপদাশঙ্কা নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে এক ধ্যানে ভিডিও ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে।
*সমাপ্ত*
(বিঃদ্রঃ ইহা একটি জনসচেতনতা মূলক কাল্পনিক গল্প মাত্র।)
প্রথম প্রকাশঃ বাংলা গে গল্প। ২৮ই ডিসেম্বর, ২০১৪।