
রাশ নাজমুল
কর্কশ কাকের ডাকে নীরবতা ভাঙলো,একটা দমকা হাওয়া পাশ থেকে কিছু একটা উড়িয়ে নিয়ে গেলো। নীরবে চেয়ে থাকলাম……… ..আর কতকাল আগলে রাখবো…………. হয়তো পার্কের ঝাড়ুদার,হ্মনিক বাদে সেটাকে কুড়িয়ে নিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে ছাই করে ফেলবে। তাতেও কি তুমি কষ্ট পাবে,ব্যাথার প্রকোপের জন্য আমার হাতটা আরো একবারের জন্য চেপে ধরবে।আর একবার বলবে কি, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো,আমার ভয় করে।।।।।।।।
আর একটি বার দিবে কি সেই সযোগ টা,যেটা আমি সেদিন করতে পারিনি। তুমি আর একটি বার প্রশ্ন করবে কি,ভালবাসা কেনো এতো অসহায়।
ঘর ছেরে এতো দূর চলে এসে,আমার বুকের জমিনটাকে ছিন্নভিন্ন করে,আকাশের নীলিমার সাথে জোট বেধে,এ কেমন উপহাস তুমি করছো।
তুমি কি ভাবছো সেদিন হ্মনিকের জন্য আমি তোমাকে ভালবাসি নি।তুমি উপহাসের এ কেমন আগুনে পোড়াচ্ছো আমায়।না পুড়ে ছাই হচ্ছি,না যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি।,,,,,,, হঠাৎই চিন্তার জগতে ছেদ ফেললো,এক ফোটা পানি। আমার চোখের জলতো সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিল,তাহলে? খানিক বাদেই,অঝোড় ধারায় ভেঙে পড়লো আকাশটা।তার টাপটুপ ঝংকার আমার কানে কানে বলতে লাগলো,যা একবার শেষ সেটা কি ফিরে আসে। আমি সেই মানুষটার অনুরোধের ধারা। যে তোমার যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছে না।এই বলেই বৃষটি অট্টহাসিতে ঝড়তে লাগলো,,,,মনে করিয়ে দিলো সেই দিনের কথা,,,,,,,,,,২ বছর আগেকার কথা…..
. বাড়ির পাশেই স্কুল,তার পাশ দিয়ে হাইওয়ে।
রিমঝিম ধারায় বৃষটি ঝড়ছে,পাশেই বসে দু পা উচিয়ে,দুহাতে মুড়িয়ে,থুতনিটি আলতো করে তারউপর রেখে বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে চোখের অশ্রু ঝড়াচ্ছি।
হঠাৎ একটা হাত আমার কাধে,চমকে উঠে, শ্রাবন ভাইয়া আপনি?
কলেজ থেকে ফেরলাম,তোমায় দেখে নেমে পরলাম। চলো বাড়ি ফিরি।
না ভাইয়া,আমি যাবো না।
তুমি কাদছিলে,শাওন? কই, নাতো ভাইয়া? মিথ্যা বলো না,তোমার
কন্ঠ সব বলে দিচ্ছে। কি হয়েছে,শাওন? তখন ই যদি মরে যেতাম ভালোই হতো।
হঠাৎ শ্রাবন ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো,আমি গড়াতে গড়াতে নিচে পড়লাম।। শ্রাবন ভাইয়া ঐখানে দাড়িয়ে থেকেই বললো,কিরে কেমন লাগলো।?
আমি কিন্তু ব্যাথা পাইছি ভাইয়া। তাহলে আমার কাছে আর মিথ্যা বলবি? না,ভাইয়া/ উঠে আয়,হাত ধরবো? বলেই অন্যরকম হাসি,,,,,
আমার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক গাল গপ্পো হলো,কিন্তু নিজের ভিতরের কান্নাটাকে থামাতে পারছিলাম না। পরের দিন দেখি,শ্রাবন ভাইয়াকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছেন তার বড় ভাই।
কিছুই করলাম না,শুধু দারিয়ে দেখলাম। কিন্তু যখন চোখের আড়াল হলো,তখনই বুকের ভিতরটা গোলমাল বাধালো। কেয়ার করলাম না,,,,,,
সবই চলছিলো,শ্রাবন ভাইয়া সুস্ত হয়ে ফির
লেন। কিন্তু কোথথেকে কি হয়ে গেলো,,,, শ্রাবন ভাইয়া,হঠাৎ ই আমাকে কোনরকম।
জোর করে বাড়ির বাহিরে নিয়েগেলো।সেই জায়গা যেখানে আমি গত রাতে বাদল ভাইয়ের সাথে মহাপাপ করেছি। কিরে করবি আমার সাথে?
শাওন ভাইয়ার এমন প্রশ্নে চমকে উঠি, ভাইয়া কি বলছেন? ঠাস করে একটা থাপ্পর,মেরে দিলো। কিছুখন পর দেখি বাদল,সেখানে হাজির।
এবার শ্রাবন ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে,সেদিনের লুকানো চোখের পানি ছেড়ে দিলাম।সব খুেল বললাম। আমি আর আমার অস্তিত্ব সব জানিয়ে দিলাম।
বুক থেকে সড়িয়ে দিলো আমায়।
চোখ মুছতে মুছতে চলে এলাম।
. ৩ দিন পরে………….
শাওন ভাইয়া,বাড়ি আছেন?
হুম,কে?
আমি বৃষ্টি,আপনারে শ্রাবন ভাইয়া মসজিদের কাছে জেতে বলছে। অবাক কন্ঠে বললাম….
তুই যা আমি যাচ্ছি।
ভাইয়া ওযু করে যেতে বলছে। আচ্ছা।
শ্রাবন ভাইয়ার কথা ভাবছি,আর ব্ৃষ্টির লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়ে যাওয়াটা দেখছি। ১৫ মিনিট পর……. শ্রাবন ভাইয়া? এতো দেরি
? কিছুই বললাম না।
তুই যা করছিছ এট ঠিক না।শাওন।
ভাইয়া……..? আমার কথা শেষ হয় নি বলে আমাকে থামিয়ে দিলো, শ্রাবন ভাইয়া। কিন্তু আমি তোর অস্তিত্বে বিশ্বাস করি। ভাইয়া। জড়িয়ে ধরে কাদলাম।
কিছুখন পর ভাইয়াও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি তোমাকে ভালবাসি, ভাইয়া।
আমি, শ্রাবন ভাইয়া,মসজিদ আর আমাদের ভালবাসা। সেই থেকে শ্রাবন ভাইয়া সব লোক চহ্মুর আড়ালে আমার শ্রাবন। ৩ মাস পার হয়ে গেলো…….. হঠাৎ শ্রাবন দৌড়ে এসে বললো,তুমি তোমার জামা কাপড় আর প্রয়োজনীয় সব গুছিয়ে রাখবে আমি বিকেলে তোমাদের বাড়ি আসবো।
কারন কি?শ্রাবন। ও কিছুই বললো না। আমিও বাড়ি গিয়ে ওর কথামতো কাজ করলাম। বিকেল পাড় হয়ে সন্ধা হয়ে গেলো,শ্রাবনের কোনো খবর নেই।
.রাত ১২ টা…….. শাওন,,,,,, শাওন,,,,,,,, জানালা খুলে দেখি শ্রাবন। শাওন সব কিছু নিয়ে বের হয়ে আসো।
দুজনে হাটতে শুরু করলাম। দুজনেই নীরব। হঠাৎ শ্রাবন বললো। বাদল ওদের সব বলে দিয়েছে। আমি শুধুইশ্রাবনের দিকে তাকিয়ে রইলাম ও আমাকে বললো, আমাকে বিশ্বাস করো,আমরা খুব সুখে থাকবো। আমি ও কে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।
২ ঘন্টা হাটছি……. কোথাও কেউ নেই,মাঝে মধ্যে দু একটা বাস চলে যাচ্ছে,হাত জাগিয়ে থামানোর চেষ্টা করছি,লাভ হচ্ছিলো না। শ্রাবন কে বললাম পানি খাবো।
ও রাস্তা পার হচ্ছিলো…. আমি ঐ পাশটায় দাড়িয়ে ওর যাওয়া দেখছিলাম। হঠাৎই শ্রাবন চোখের পলকে ছিটকে পরলো রাস্তা
র পারে,যেখানে ও আমাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলো।
আমি ছুটে গেলাম,ওর হাত শক্ত করে ধরলাম,ও বলছিলো আমাকে বাচাও। আমি পাগলের মতো রাস্তায় দৌড়াতে লাগলাম,কিন্তু লাভ হলো না।
দৌড়ে আবার শ্রাবনের কাছে গেলাম,ও বললো পানি খাবো,আমি দৌড়ে পানি খাওয়ালাম। হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামলো।
এমন অদিনে বৃষটি কোনোদিনও হয় নি। কিছুখন পর টের পেলাম শ্রাবনের মাথার রক্ত,বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে।
শ্রাবন সেটা দেখেই, চিৎকার করে বলতে লাগ
লো,আমি তোমায় ভালবাসি,তুমি আমাকে বাচাও,আমার ভয় করে,আমাকে জড়িয়ে ধরো……..
আমি শুধু শুনছিলাম…… শ্রাবনকে বুকে জড়িয়ে,সেদিন শেষ বাড়ের মতো কাদলাম।আর শুধু শ্রাবনের প্রশ্নের উওর খুজলাম,ভালবাসা কেনো এতো অসহায়।
পরের দিন শ্রাবনকে বিসর্জন দিয়ে,বাড়ি আসতেই বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিলো।
কিছুই বলার শক্তি ছিলো না।
শ্রাবনের ছবি টা আর রক্ত ভেজা শার্টা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ঢাকা……………………
.প্রায় ২ বছর পার হয়ে
গেছে….. .
.সেই ছবি টা আজ বাতাস উড়িয়ে নিলো।ভেজা শার্টটা কুকুরে টেনে নিয়ে গেলো…. শুধুতাকিয়ে
দেখলাম…… আজ কোনো কান্না পাচ্ছে না…… শুধু হাসতে ইচ্ছা করছে……. আমার হাসিতে চারপাশ কেপে উঠলো….. বৃষ্টিও থেমে গেছে…… পাগলের মতো ছুটতে লাগলাম…….. আর বলতে লাগলাম…… ওরা শ্রাবনকে বাচতে দিলো না। আমি কোনো পাপ করি নি। আমি ইচ্ছে কর সমকামি হই নি।
আমায় তোমরা বিশ্বাস করো, ,,,,,,,,,,,,,,,।