
রাশ নাজমুল
“সখি গনরে করি মান এমন প্রেম আর কইরো না।” ” আমার মতো প্রেম করিয়া,জনম ভইরা কাইন্দনা।”
বিকট শব্দে, হঠাৎ করেই সুরটা কেটে গেলো। দমকা হাওয়ায় জানালার কাপড়টা উড়তে শুরুকরলো। হারমোনিয়ামের ব্লো টাকে ছেড়ে দিয়ে,দুহাত তার উপর রেখে মাথাটাকে নুয়ে দিলাম। বাহিরে বিদুৎ চমকাচ্ছে, মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে।জানালার কাপড়টা উড়তেছেই
তবলাটা পাশেই পড়ে আছে, যে হাতের স্পর্শে ও জীবন পেতো,সেই হাতটাই যে আমি কেড়ে নিয়েছি। মনে হচ্ছে তবলটা আমার কাছে, শ্রাবন কে ফেরত চাইছে
চিৎকার করে বলতে লাগলাম,আমি শ্রাবন কে মেরে ফেলেছি,ওকে আমি বাচতে দেইনি। দেয়ালের ছবিটা হঠাৎ করে নড়ে উঠলো, শাওন, আমি শ্রাবন। এইদিকে দেখো শাওন,এইতো আমি।
পাগলের মতো ছুটে যাই,ছবিটির কাছে। কিন্তু একি,শ্রাবন তুমি কোথায়? চিৎকার দিয়ে বসে পরলাম,। দেয়ালের লাল ফ্রেমে বাধানো ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছি,বাহিরে নীল আকাশের ক্রন্দন, আমার অন্তর ক্রন্দন কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ছবিটিকে বুকে জড়িয়ে, ফেলে রেখে খোলা হারমোনিয়াম,শ্রা বনের অনেক সখের তবলা। ছুটতে লাগলাম সেই সমাধিতে,যেখানে ঘুমিয়ে আছে, দরদী আমার। পাগলের মতো ছুটতে লাগলাম। পিচ ঢালা পথ,আমার খালি পা,ভেজা শরীর আর বুকে জড়ানো লাল ফ্রেমটার দিকে তাকিয়ে আছে,হাতে গোনা কয়েকটা মানুষ।পথ চলা বন্ধ হয়ে গেছে ছাতা হাতে কিছু মানুষের,ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুর থেকে দেখতে পাচ্ছি,সেই সমাধি যেখানে ঘুমিয়ে আছে,দরদী আমার। চোখের সামনে ভাসছে সেদিনের বৃষ্টিভেজা বিকেলের মানুষটাকে। ১৪’ই আগস্ট,২০১৩. বগুড়া শিল্পকলা একাডেমি। ঐতিহাসিক ১৫’ই আগস্ট উপলহ্মে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গানের অনুশীলন শেষে,বাড়ি ফিড়ছিলাম।গন্তব্ য মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট। বাহিড়ে প্রচুর বৃষ্টি, গানের ডায়েরি টা মাথায় দিয়ে,বের হলাম।
বৃষ্টিতে ভেজার খুব সখ ছিলো,তাই সুযোগটা ব্যবহার করলাম। একা একা হাটছি,আর গুন গুন করে গান গাচ্ছিলাম,রাস্তায় কেউই ছিলো না।
হঠাৎ একটা সি এন জি গা ঘেসে চলে গেলো। আমি একটা ইট তুলে ঘা দিবো ভাবছিলাম,কিন্তু সাহস হলো না,কিছুদুর যাওয়ার পর সি এন জি টা থামলো,একট ছেলে মুখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো আর একটা কাগজ ফেলে গেলো।কেয়ার করলাম না
কাছাকাছি গিয়ে কাগজটাতে দেখতে পেলাম কিছু একটা লেখা। তুললাম
ভিজে গিয়ে,লেখাটা মুছে মুছে গেছে
লেখাটা বুঝতে পারলাম… লেখা ছিলো…….. ★তুমি একটা বদ্ধ পাগল।★ মেজাজ টা এতো খারাপ হয়ে গেলো,ওকে পাইলে যে কি করতাম. কিন্তু পাগল বললো কেনো? ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরলাম……… পরদিন অনুষ্ঠানে গেলাম…. সকাল১০:৪৮ টা। অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরি হলো,কারন যে তবলা বাজাবে সে আসে নি। তাই আলোচনা,বক্তৃতা চলছিলো। জাতীয় সঙ্গিত তবলা ছাড়াই গাইলাম….. ১১:৫০ টা।
শুনলাম তিনি আসছেন। আমি স্টেজে গেলাম। গানটা ছিলো,”যদি রাত পোহালে শোনা যেতো…” তাই হারমোনিয়াম এর ভলিউম টা ঠিক করতে করতে, তবলাকে তালটা বলে দিলাম যে,তালটা দাদরা আর আমি সি সার্বে গাইবো। ও হাসতে হাসতে বললো ঠিকআছে….
. আপনি হাসছেন কেনো? তুমি তালটা ভুল বলছো,ওটা দাদরা হবে না,ঝংকার হবে। ও আবার বললো,কালকের পাগলামি আজও আছে তাইনা,যার জন্য তালও ভুলে যাচ্ছো? ও তুমি?দাড়াও গানটা শেষ হোক,দেখছি তোমায়। পরপর তিনটা গান গেয়ে নেমে পরলাম।
জানো টা এতো ভালো লাগলো যে,নিজেই পরিচিতো হলাম। ও শ্রাবন,আজিজুল হকে পরে। সেই থেকেই সখ্যতা। সেই থেকে ওই আমার সাথে তবলা বাজাতো। ১৫ই জানুয়ারি,২০১৪ বিকেল ৩:০০ টা কলিং বেল……. বাদল ভাই আপনি? বাসাটা পুরোই খালি,আপনি আ
সায় ভালোই হলো। আসেন। তুমি খালি গায়ে,আবার তোয়ালে সাথে,গোছল করবে? হুম,আপনি বসেন। সেদিন এমন হবে বুঝতে পারি নি। যেহেতু বাড়িতে কেউই নেই তাই বাথরুমের দরজা চাপিয়ে গোছল করছিলাম, হঠাৎ বাদল ভাইয়া। তারপর বাদল চলে গেলো।! সেদিনের সবকিছুতেই আমার ভালো লাগছিলো….. তখনই বুঝলাম….. সমকামি আমি। ৪ই মার্চ,২০১৪ রাত৮;০০ আমি আর শ্রাবন,আমার রুমে।
হঠাৎ বাদল ভাইয়া আসলো। তিনজনে মিলে গল্প করছিলাম। গল্পের মাঝে শ্রাবনের ফোন আসলো,ও বাহিড়ে গেলো। এই সুযোগো বাদল ভাইয়া,আমার বারন না শুনে,কিস করতে লাগলো। আর কাকতালিয় ভাবে শ্রাবন দেখে ফেললো। বাদল ভাই চলে গেলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম,শ্রাবন কে। ও আমাকে থাপ্পর দিয়ে ফেলে দিলো,গিয়ে পড়লাম হারমোনিয়ামের উপর।মাথা কেটে গেলো। ও কিছুই না বলে চলে গেলো। মা কিছুই বুঝতে পারলো, না। বারবার বললো,কেমন করে হলো,কিছুই বললাম না। ৮ ই মার্চ,সকাল১০:০০ ভাইয়া,দরজা খোলো। কে রে?
আমি বৃষটি। কি কিছু বলবি? তোমারে শ্রাবন ভাইয়া,ড্রইং রুমে ডাকে। তুই যা আমি আসছি। ও এক দৌড়ে চলে হেলো,আর বলতে লাগলো,শ্রাবন ভাইয়া তুমি বসো ভাইয়া আসতেছে। সেদিন আমি,শ্রাবন আর সমকামিতা এক হয়ে গেলাম। শুরু হলো নতুন পথ চলা। ওর তাল আর আমার সুর,আমার জীবন কে সুন্দর করে তুললো। ১২ই জুলাই,২০১৪ বিকেল৩:০০ বগুড়া পৌড় পার্কে বসে আছি। হঠাৎ বৃষ্টি,বজ্র। আমরা একটা গাছের নিচে গেলাম। কিন্তু পরহ্মনেই একটা বাজ আমার আর শ্রাবনের মাঝে আছরে পরলো। দুজন ছিটকে পরলাম যখন ঙ্গান ফিরলো,তখন আমি জিয়া মেডিকেলে ভর্তি।শ্রাবন মারা গেছে শুনে,পাগলের মতো হয়ে গেলাম,আমার আবছা মনে পরছে,সেদিন আমাকে বেধে রাখা হয়ে ছিলো। “””””””” চিন্তার জগতে ছেদ পরলো,যখন পিছন থেকে একটা ট্রাক আমাকে ধাক্কা দিলো। এক দিকে আমি অন্য দিকে শ্রাবনের ছবিটা।আবছা চোখে দেখতে পেলাম ট্রাকটা শ্রাবনের ছবিটাকে পিশিয়ে দিয়ে চলে গেলো। ১৪ আগসট,২০১৪ ঠিক এক বছর পর আজ আমি বদ্ধ পাগল,বাহিরে বৃষ্টি,সেই রাস্তা, কিন্তু যে পাগল বানালো সেই নেই। রয়ে গেলো তার কথা। সবই আমার সমকামিতার পাপ।আজ আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি আর শ্রাবনের ছবিটাকে খুজি।
প্রকাশকাল জুন ২০১৬ “সমপ্রেমের গল্প” ফেসবুক পেইজ হতে সংগৃহীত