
লেখক :- মুহম্মদ রিপন
তুই আজও দেরি করেছিস!
আর হবে নারে। সরি!
এভাবে আর কতদিন! ডেইলি লেট করলে আমি কিন্তু এর আসবো না রূপক!
আহা রেগে যাচ্ছিস কেন?
রাগবো নাতো কি করবো! আজকের কথা মনে আছে তোর?
কিভাবে ভুলি বল। আজ যে তোর সাথে আমার ভালো লাগার দিন গুলো শুরু হয়েছিলো। আমার তো এখনো মনে পড়ে সেই পাঁচ বছর আগের কথা। তোর মনে পড়ে কিছু? না সব ভুলে গেছিস?
সেদিন কি আর ভোলা যায়। সে দিনের জন্য কি আমাদের কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিলো!
অবশেষে সবাই মেনেও নিলো বল।
হ্যা এখন গাধার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে বোস আমার পাশে।
আজ রূপক ও রূপমের প্রেম জীবনের পঞ্চম বর্ষ পূর্ণ হলো! প্রতি বছর ওরা এই দিনে পার্কের ওদের ঠিক করা একটা সিটে বসে থাকে।
যদিও রুপম আগে এসে বসে থাকে সব সময়, তবুও সারাদিনটা এখানেই কাটায় তারা দুজনে!
তাদের পরিচয় টা ছিলো সব বর্তমান গল্পের মতোই ফেইজবুকে! তারপর থেকে ভালো বন্ধুত্ব এবং দুই বছরের বন্ধুত্বের পর দুজনের প্রেম জীবন শুরু! এর পর থেকেই নিয়মিতই যাতায়াত দুজনে দুজনের বাসায়! বাসায় পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিল দুই পরিবারেই দুজন!
সবাই জানতো তারা খুব ভালো বন্ধু। বন্ধুমহলে হাতে গুনা কয়েকজন বাদে সবাই জানতো ওরা ভালো বন্ধু! দুজন মিলে একসাথে ঘুরতে যাওয়া। একসাথে বেড়ানো। খাওয়া দাওয়া। প্রায়ই দুষ্ট মিষ্টি কথা নিয়ে একটু ঝগড়া খুনসুটি। দুজনেই খুব বাচ্চামো করে। বন্ধুমহলে তাদের বন্ধুত্ব নিয়ে সবাই ক্ষুব্ধ! কারণ এরা একজন অন্যজনকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। যেখানে যাবে একসাথে। যা করবে একসাথে। এক মুহূর্তের জন্য কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না। খুব ভালোই যাচ্ছে তাদের দিন।
রুপম হাসছে!
তুই হাসছিস কেনো?
কিছু কথা মনে পড়ে গেলো। মনে আছে আমাদের বন্ধুরা আমাদের ক্ষেপাত এই বলে যে আমাদের নাকি একজনের সাথেই বিয়ে হবে। মনে আছে আমরা কতো হাসাহাসি করতাম ব্যাপার গুলো নিয়ে। তুই আমার জন্য কিছু আনলে ওদের যা চাহনি! মনে হতো যেন তোকে চোখেই খেয়ে ফেলবে। আর সারা তো তোর জন্য পাগল ছিলো। কি যে করতো মেয়েটা তো জন্য। হাহাহা। বেচারি মেয়েটা। বিয়ে হয়ে গেছে তাই নারে? কিরে কিছু বলছিস না যে?
রূপক?
হ্যা বল।
এনেছিস আমার জনিস?
কি জিনিস?
তুই আবার ও ভুলে গেছিস?
সত্যি ভুলে গেছি বল তো কোন জিনিস?
থাক আর কিছুই বলবো না। থাক তুই তোর মতো আমি চললাম!
আরে দাঁড়া আবার ও রেগে যাচ্ছিস।
তুই রেগে যাওয়ার মতোই কাজ করছিস।
এই দেখ।
কি?
তোর জিনিস।
তুই এনেছিস। তোর মনে আছে তাহলে।
তুই বলেছিস আর আমি আনবো না, বা ভুলে যাবো এটা কিভাবে হতে পারে বল।
কই দে দেখি।
রূপক রূপমের হাতে বেলিফুলের একটা মালা দিলো।
বাহ কি সুন্দর গন্ধ দেখেছিস?
হুম।
হুম মানে কি চুপ করে গেলিযে?
রুপম?
হ্যা বল,
কেমন আছিস?
এ আর নতুন কি! সব তো জানিসই!
তারপরও বল না। আবার শুনতে ইচ্ছে করছে! বলতে বলতেই চোখে পানি এলো রূপকের। এরপর রূপমের হাতটা জড়িয়ে ধরে ওকে জিজ্ঞেস করলো, তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি নাতো কখনো?
রুপমও হেসে উত্তর দিলো! ধুর বোকা আমি আবার কোথায় যাবো তোকে ছেড়ে? তোকে ছেড়ে কি আমি থাকতে পারবো বল। কাঁদিস না! খুব কষ্ট হয়।
এরপর রুপম রূপকের ঘাড়ে মাথা রেখে ওর হাতটা জড়িয়ে ধরলো। তুই একটা পাগল। আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি এভাবে? পারবি আমাকে সব সময় আগলে রাখতে? পারবি তোর পরিবারের কাছে আমাকে তুলে ধরতে? কাটাতে পারবি সারাজীবন আমার সাথে বা আমার অপেক্ষায়?
এই কথা গুলো এর আগেও রুপম অনেকবার রূপককে বলেছে।
রূপক কিছুই বললো না।
চারিদিকে নীরবতা। পার্কে প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। সবাই পার্ক থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
রূপককে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে রূপমের। কিন্তু সে পারছে না।
রুপম হঠাৎই বলে উঠলো, এবার তোর যাওয়া উচিত।
আর তুই?
আমার জন্য চিন্তা করিস না আমি ভালো আছি।
তুই সত্যিই কি ভালো আছিস রুপম?
আর কতো রূপক? এবার তো আমার আশায় বসে থাকিস না। খুঁজে নে না নতুন কাউকে!
রূপক কান্নায় জড়িয়ে গেলো এবং বলে উঠলো তোকে তো কতজনের মাঝেই খুঁজেছি কই পেলাম নাতো! পাবো না আর কখনো!
হ্যা দু বছর হলো রুপম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলো। সে দিনও এই একই দিন ছিলো। সেদিন শুধু একটা জিনিস ভিন্ন ছিল। সেদিন রূপক রূপমের অপেক্ষায় ছিলো। যা আজও আছে সে। আজও রূপক তার রূপমের জন্য একই জায়গায় প্রতিবছরের মতো অপেক্ষা করে! তার বিশ্বাস তার রুপম তার কাছে একদিন ফিরে আসবেই। কিন্তু রুপম আর ফিরে এলো না! এবং অপেক্ষার প্রহরও শেষ হচ্ছে না! হয়তো কখনো রূপকের এই অপেক্ষা শেষ হবেও না।