
লেখকঃ সামীউল হাসান সামী
সেদিন শুক্রবার। প্রতিদিনের ব্যাস্ততার মতো সেদিন রাজবাড়ি এতটা ব্যাস্ত ছিলোনা। তবে ব্যাস্ততাইবা থাকবে কেনো.? মাত্রতো দুপুর। কিছুসময় পর ব্যাস্ততার চিরচেনা রুপ দেখাযাবে। আমরা কয়েকজন কয়েকজন বলতে ৩০ কী ৩৫ জন হবো। গতকাল রাজা বলেছেন আমাদের নিশ্বাস নিতে দেবেনা। কেনো দেবেনা প্রশ্ন করতে সেনাপতি বললেন এটা রাজআইনে আছে।
প্রশ্ন করলাম, এটাতো অন্য সবার মতো আমারও অধিকার, তবে আমার কেনো এ শাস্তি ?
মন্ত্রী মহোদয় রেগে এগিয়ে আসলেন বললেন এটা ব্রিটিশদের তৈরি আইন। যাদের নাক বোঁচা এরা নিশ্বাস নিতে পারবেনা।
পরক্ষনেই আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা রতন পাল এগিয়ে এসে বললো, “এটা কেমন কথা হে! ব্রিটিশ তারালাম রক্ত দিয়ে, আর আজও ব্রিটিশদের আইন আমাদের মানতে হবে কেন হে? “
রাজপন্ডিত : কে হে তুমি ? জানোনা নাকি কিছু ? স্রষ্টা নাক তৈরি করেছে নিশ্বাস নিতে, তাই এটি মানুষের সম্মুখে দেয়া হয়েছে। এবং ইহা প্রশস্ত ও উচ্চতা বিশিষ্ট হবে তবেইনা শান্তিতে নিশ্বাস নেবে মানুষগণ, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এইযে দেখো যতো চেপ্টা নাকগুলো এগুলো সব তোদের মতো গর্দভ গুলোর নিজেদের তৈরি। যত্তোসব অপ্রাকৃতিক কর্মকাণ্ড।
আমার ডানপাশে থাকা ডেনিম রুজারিও বললো,
ডেনিম রুজারিও : কেন তা হবে ? যদি আমরা ইচ্ছে করেই নাক চেপ্টা করে থাকি তবে আপনার লম্বা নাকটি চেপ্টা করে দেখান. ?
রাজ পেয়াদাদের চোখে ইঙ্গিত দিলেন সেনাপতি, পেয়াদারা বল্লম হাতে ঠেলে সরিয়ে দিতে থাকলো আমাদের। আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না। আমরা নিরবে সরে আসতে বাধ্য হলাম।
আমরা সবাই স্বিদ্ধান্ত নিলাম এবার সকল বোঁচা নাক ওয়ালাদের বুঝাতে হবে এভাবে সম্ভব নয়, নিজের ব্যাক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো তোমরা নিশ্বাস নেবে, ওদের মতো স্বাধীন ভাবে তোমাদেরও নিশ্বাস নেবার অধিকার রয়েছে।
ভাবছো, লোকে কী ভাববে বোঁচা নাক দেখে ?
যারা লম্বা নাক দেখে অভ্যস্ত, তারাতো বোঁচা নাক দেখলে চোখ মটকে তাকাবেই।
তবে এদের তাকানোর সুযোগ দিতে হবে। তাকাতে তাকাতে একদিন ওরাও বুঝতে পারবে, চোখা নাক ওয়ালারাই সুধু প্রকৃতির তৈরি নয়, বোঁচা রাও প্রকৃতির তৈরি। প্রকৃতির খেয়ালীপনায় আমরা সকলেই অসহায়। প্রকৃতি কিছুই অকারণে করেননা। হয়তো সে কারণ সম্পর্কে এখনো আমরা অবহিত নই। যা সম্পর্কে আমরা অবহিত নই, তাই যে অপ্রাকৃতিক তা কখনোই বলতে পারিনা। যদি প্রকৃতিতেই সকলের বসবাস হয় তবে সকলেই প্রাকৃতিক।
আর আইন.? সেতো সুধুই কাগজ ও কালির অঙ্কিত শব্দ গুচ্ছ মাত্র যা মানুষই তৈরি করে, আবার মানুষই ছুড়ে ফেলে। যে ব্রিটিশদের ভালোবেসে এই আইন রাজতন্ত্রে রাখা হয়েছে, সেই ব্রিটিশ বাবুরাইতো তা ছুরে ফেলেছে।
রাজা সকলের রাজা। রাজতন্ত্র অনুযায়ী সে সকলের মঙ্গল করতে বাধ্য। সকলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করাই রাজার কর্তব্য।
আমরা অনেককেই বুঝাতে সক্ষম হলাম। আমরা এবার একটি মিছিলের ডাক দিলাম। দিক দিগন্ত থেকে অনেকেই ছোটে এলো।
আবার অনেকেই গোপনে নিশ্বাস নেবে ভেবেই লুকিয়ে রইলো।
এবার বৈশাখের প্রথম দিবসের প্রথম প্রহর। আমরা সবাই রাজপ্রাসাদের ফটকের দিকে এগিয়ে চলছি। আমাদের এবার স্বাধীনতা পেতে হবে। স্বাধীন ভাবে বাচতে। স্বাধীনতা স্বাদ নিতে। বুক ভরে স্বাধীন বাতাসে দির্ঘ্য নিশ্বাস নিতে চাই বলে।
হঠাৎ আমাদের পথ আগলে দাড়ালো রঘু ডাকাতের দল। হাতে চাপাতি ও তরবারি, ওদের হিংস্রতা প্রকাশ করলো পলকের নিমিষেই।
রুজারিও নিস্তব্ধ হয়েগেল, সঙ্গে রতনও। হ্যাঁ ওই চাপাতি ওদের নিস্তব্ধ করে গেছে।
এখন ওদের লাশ আমাদের কাছে। এ লাশের বোঝা আমরা বইবো যুগ থেকে যুগান্তর। যতদিন আমরা স্বাধীনতা শব্দের স্বাদ পাবোনা ততদিন আমাদের এ লাশের বোঝা কাধে নিয়েই হাটতে হবে সম্মুখে। এই রক্তের দাগই আমাদের পথ চেনাবে। এই রক্তের মূল্যেই আমরা স্বাধীনতা কিনবো। এই ভগ্ন স্বপ্ন পূর্নতা পাবে এই আর্তনাদের মূল্যেই। যে মাটিতে মিশে আছে ওদের রক্ত, সেই মাটিতেই হবে একটি মিছিল একটি শ্লোগান একটি স্বাধীনতা।