
লেখক :- Valentine
(1 )
মোবাইল এর প্লে ষ্টোর থেকে একটা এ্যাপস ডাওনলোড করার আগে এই এ্যাপস সম্পর্কে কে কি কমেন্ট করেছে সেটা আমি দেখে নেই তার পর সেই এ্যাপস ডাউনলোড করি । স্বাভাবিক ভাবেই ওইদিন আমি একটা এ্যাপস ডা উনলোড করতে গিয়ে এই এ্যাপস সম্মন্দে কে কি কমেন্ট করেছে সেটা দেখছিলাম ! কিন্তু একজন ছেলের করা কমেন্ট দেখে আমি তার ছবির দিকে খেয়াল করলাম আর আমি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেলাম ! ছেলেটার নাম মিলন ,
তারপর আমি তার গুগোল একাউন্টে গিয়ে তার আরো ছবি দেখলাম ! তার একটা ছবি ছিল এমনঃ গ্রামের সাধারন একটা বাড়ির উঠানে একটা চেয়ার এ বসা তার চারপাশে ঝকঝকে সোনালি রোদ পিছনে পরিস্কার উঠান ! তার পাশে সন্ধ্যা মালতী ফুলের কিছু গাছ ,
দেখে বুঝা যাচ্ছিলো রোদের কারনে ফুল গুলো চুপসে আছে , সন্ধ্যা হলেই আবার সেগুলো ফুটে উঠবে ! সাথে তার হাসি মাখা সরল রোমান্টিক মুখ ! সে দেখতেও চমৎকার একটা ছেলে , আমি ক্রেস খেলাম , যেনো প্রথম দেখাতেই প্রেম । আমার এমন মনে হচ্ছে যেনো কোন একজনমে আমি এই বাড়ির এই উঠোনে ছিলাম , অনেক খেলেছি বসেছি , খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে সব !
আমি তার গুগোল একাউন্টে এ চেক করে দেখলাম সে ওখানে তার মোবাইল নাম্বার পাবলিক করে রেখেছে, আর মোবাইল নাম্বার টা একটা বিদেশি নাম্বার +৯৭ দিয়ে শুরু !
তাই আর দেরি না করে আমি তার মোবাইল নাম্বার টা আমার মোবাইলে ছেভ করে নিলাম আর মুহূর্তেই নোটিফিকেশন আসলো মিলন ইজ নাও অন ইমু ,
আমি তখন তাকে ইমুতে লিখলাম
আসসালামু আলাইকুম
রিপ্লে এলো ওয়ালাইকুম আসসালাম , কে আপনি ?
-আমি আপনার একজন অচেনা নতুন বন্ধু
-অহ আচ্ছা তো আমাকে পেলেন কিভাবে ?
-আমি বললাম এ তো অনেক কাহিনী আপনার সময় হলে এসব কথা ভয়েস কল এ বলি ?
-ওকে , তাহলে রাত ১১ টায় কল দিয়েন
বলে মিলন বাই লিখলো !
আমিও বাই ফর নাও লিখলাম
আমি ভাবতে লাগলাম , ছেলেটা তো মনে হয় তার চেহারার মত আসলেই সরল
আমি একজন অচেনা মানুষ হঠাৎ তাকে লিখলাম আর সে এতে তেমন মিছু মাইন্ড করলো না , স্বাভাবিক ভাবেই আমার সাথে কথা বললো
রাত ঠিক ১১ টায় আমি তাকে ইমু তে লিখলাম , আসসালামু আলাইকুম !
আমি সাধারনত চ্যাট হাই লিখে শুরু করি না , সালাম দিয়ে শুরু করি !
কি রাতের খাবার খেয়েছেন ? কথা বলার মত ফ্রি আছেন ?
মিলন কোন রিপ্লে না দিয়ে সাথে সাথে কল করলো !
আমি কল রিছিভ করে কথা বলতে লাগলাম , কিভাবে তাকে পেলাম সব খুলে বললাম ,
সে শুনে খুব মজা পেলো ,
-আচ্ছা দারুন তো আপনার বন্ধু খুজার ব্যাপার টা !
-আমার খুব ভালো লাগছে কেউ একজন আমাকে এত পছন্দ করেছে , থ্যাংক ইউ !
-তো আপনার নাম কি ?
-আমার নাম সৈকত আর হ্যাঁ আমি কিন্তু এভাবে বন্ধু খুজিনা আপনাকে দেখে পরিচিত হতে ইচ্ছে করছিলো , কেন যানি খুব চেনা চেনা আপন আপন লাগছিল তাই , আপনাকে খুজে বের করে যোগাযোগ করলাম ! ,
– আচ্ছা তাই ? আর আপনার নাম টা ও খুব সুন্দর , আর আপনি কথাও বলেন খুব গুছিয়ে সুন্দর করে , আপনার সাথে কথা বলতে ভালই লাগছে !
আমি একজন গে সেটা মিলন কে বলিনি, বুঝতেও দেই নি,
আমি ভাবলাম আগে ওর সাথে বন্ধুত্ব করি, বন্ধু হিসেবে যখন তার আপন হয়ে যাবো তার প্রিয় হতে পারব, আর যদি বুঝি যে সে আমার প্রতি বা সমপ্রেমের প্রতি পজেটিভ তাহলে তাকে মনের কথা খুলে বলবো তখন তাকে আমার ভালবাসার কথা বললে সে হয়ত আমাকে ভালবাসবে আর যদি সে সমপ্রেমের প্রতি আগ্রহী না থাকে তাহলে ওর সাথে বন্ধু হিসেবেই থেকে যাবো !
সে দিন রাতে আমরা অনেক গল্প করলাম, বেশ ভালো লাগলো মিলন কে
মিলন ও আমাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিল !
আমি খুব হ্যাপিনেস নিয়ে সেদিন রাতে শুয়ে পরলাম !
আমি শোয়েছি ঠিক ই কিন্তু মিলন কে পাওয়ার উত্তেজনায় আনন্দে
আর ঘুম আসছে না
শুধু মিলন কেই ভাবছি , ইস কখন যে ভোর হবে তাকে একটা টেক্সট করে মর্নিং উইস করবো !
এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পরলাম
সকালে আমার যখন ঘুম ভাংলো তখন বেলা ১২ টা
মিলন কে মর্নিং উইস করার সময় শেষ !
মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো , ইস এত্তখন ঘুমালাম আমি , থ্যাত ! নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে !
যাক দুপরে একটা টেক্সট করে জিজ্ঞেস করবো লাঞ্চ করেছেন ?
বিকেলে উইস করবো শুভ বিকেল আর সন্ধ্যায় উইস করবো শুভ সন্ধ্যা এসব বলে নিজেকে সান্তনা দিলাম!
আর যা ভাবা তাই করা
আমি মিলন কে এভাবে উইস করতে করতে আবার পরের দিন রাত ১১ টা পেয়ে গেলাম !
সারা দিন এত উইস করলাম কিন্তু মিলন এর কোন রিপ্লে দিলো না,
আমি ভাবলাম সে বিদেশ এ থাকে সে সারা দিন ব্যাস্ত থাকে তাই হয়তু সারা দিন মোবাইলে এত সময় দিতে পারে না !
রাত যখন ঠিক ১১ টা তখন আমি তাকে আবার ইমু তে লিখলাম
আসসালামু আলাইকুম , মিলন সাহেব !
কেমন কাটল সারা দিন ?
মিলন আমাকে রিপ্লে দিলো,
-আপনার হোয়াটস এ্যাপ এর প্রোফাইল এ ২ টা ছেলের কিসিং ছবি দেওয়া কেন ?
আপনি কি এমন ?
আমি লিখলাম আপনি আমার হোয়াটস এ্যাপ চেক করেছিলেন ?
– হ্যাঁ ! আপনার উইশ এর উত্তর দিতে আমি আপনার হোয়াটস এ্যাপ এ ভয়েস ম্যাসেজ পাঠাতে গিয়েছিলাম ইমুতে তো আর ভয়েস ম্যাসেজ পাঠানো যায়না তাই ! তখন দেখলাম !
– আচ্ছাএসব কথা আমি আপনাকে এভাবে চ্যাট এ বলে বুঝাতে পারব না,
ভয়েস কল এ সব বলি ?
আমি ভাবলাম মিলন কে গে সম্মন্দে সব ভালো ভাবে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় সে আমাকে ঘৃণা করবে না, কিন্তু কবে যে আমার হোয়াটস এ্যাপ এর প্রোফাইল পিক টা আমি গে রোমাঞ্চ এর পিক দিয়ে রেখেছিলাম আমার মনে ছিল না
মিলন রিপ্লে দিলো,
-আপনি আর আমাকে লিখবেন না , আপনার মত বন্ধুর আমার দরকার নাই
আমি আপনাকে ব্লক করে দিলাম ছিঃ !
বাই !
আমার মনটা মুহূর্তেই ভেঙ্গে গেলো , প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম মনে, মনের দেয়াল গুলো যেন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো !
খুব খুব কস্ট পেলাম, কান্না আসতে লাগলো আমার !
আমি কস্টে ছট ফট করতে লাগলাম !
আমার এত প্রিয় এত পছন্দের মানুষ টা , তার সাথে অন্তত বন্ধুত্ত টা থাকলেও তো , তাকে দেখতে পেতাম, তার সাথে কথা বলতে পারতাম, এভাবে তার কাছা কাছি থাকতে পারলেও আমার মন টা শান্তি পেত !
কিন্তু এটুকুও আর পাবো না ? আমি যে প্রথম দেখাতে ই তার প্রেমে পরে গেছি
এত অল্প সময়েই আমি ভালবেসে ফেলেছি তাকে !
কস্টে আমার মনে হচ্ছিলো আমার পোরা দুনিয়াটা ই শেষ হয়ে গেছে !
কিন্তু মিলন কে তো আমি আর গে জগৎ থেকে পাইনি যে সে এসব ব্যাপার কে স্বাভাবিক ভাবে নিবে !
সে তো স্ত্রেইট ছেলে ! সে এসব পছন্দ নাও করতে পারে ! এসব ভেবে ভেবে সারা রাত কস্টে কাটিয়ে দিলাম !
আল্লাহর কি লীলা খেলা আগের রাত টা তে আমি ছিলাম খুশির উল্লাসে মাতোয়ারা আর আজকের রাতে ই আমি দুঃখের কস্টে দিশেহারা !
কি অদ্ভুদ মানুষের জীবন !
আমি খুব ব্যাকতিত্ব সম্পরন্ন মানুষ ! কেউ একবার কিছু মানা করলে বা আমার সম্মানে আঘাত হানলে আমি আর সেদিকে ফিরেও তাকাই না !
খুব কস্ট নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম !
( 2 )
মিলনের এমন আচরনে এতোটাই কস্ট পেয়েছি যে , মনে মনে ঠিক করে নিলাম আর কখনো ভালোবাসার মানুষ খুজবোনা , কাউকে ভালবাসবো না ! অনেক দেখেছি এই ফেছবুক জগতে আসলে ভালবাসার মানুষ পাওয়া যায়না , সব মরীচিকা !
কত দিন ধরে এই গে জগতে আছি ফেছবুকে কত শত ফ্রেন্ড অথচ এখনো একটা মনের মানুষ পেলাম না , জীবনের মানুষ টাকে পেলাম না,
আমি এখন নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলাম ,
আমি না বুঝে একজন সাধারন ছেলের প্রেমে পরে অপমানের মত কথা শুনেছিলাম !
৭ মাস হয়ে গেছে,
এই ৭ মাসে এখন আমি খুব স্বাভাবিক, এখন আর মনে কস্ট নেই , মিলনকে ভুলে গেছি ,
ফেছবুকে না না মানুষ আমাকে নক করে একটু আধটু চ্যাট ও করি , কিন্তু প্রেম ভালবাসার থেকে রিলেশন থেকে ভাবনা চিন্তা উঠে গেছে ।
এখন আমার সকালের ঘুম ভাঙ্গে দোয়েল শ্যামা আর ইস্টিকুটুম পাখির ডাকা ডাকিতে ,
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামায পরি , ভোরের নির্মল বাতাস উপভোগ করি , এটাই যেন গ্রামে থাকার শান্তি , প্রকৃতির অনেক ভালোবাসা পাওয়া যায় !
প্রতিদিন সকালে কিছু ছেলে মেয়েকে পড়াই এতে আমার হাত খরচ টা আর ইন্টারনেট এর খরচ টা চলে !
বিদেশের জন্য ইন্টারভিও দিয়েছিলাম সেখানে টিকে গেছি , এখন শুধু ভিসা আসার জন্য অপেক্ষা !
বাড়িতে আমার বাবা আর মা ছাড়া কেউ নেই , এক বোন ছিল তার বিয়ে হয়ে গেছে । বাবা খুব অসুস্থ , বাবার বয়স প্রায় ৬৫ !
আমার বয়স ২৫ কিন্তু কোন চাকরি পাইনি তাই
এখন পরিবারে উপার্জন নেই ,
বিদেশ যাবো বলে জমি বিক্রি করে কিছু টাকা ব্যাংক এ রাখা আছে সেটার লভ্যাংশ থেকেই কোন রকমে আমাদের সংসার চলে !
বাস্তবতা নিয়ে ই এখন পরে থাকি, বিদেশ যেতে পারলে হয়তো ভালকিছু টাকা জমাতে পারবো !
মা বার বার বলছে বিয়ে করে বউ রেখে বিদেশ এ যাওয়ার জন্য ! আমি বুঝি আমার মায়ের ও বয়স হয়ে গেছে তাই এখন পরিবারে একটা বউ খুব দরকার !
কিন্তু আমি যে নিজেই মনের দিক থেকে একজন নারী !
কিকরে একজন নারীকে বিয়ে করে ঠকাই ? নিজের বিবেকে বাধা লাগে !
মা বাবা কে বুঝাই , আমি এখন কিছু করি না তাই এখন বিয়ে করলে ভালো পরিবারের ভালো মেয়ে পাবো না, আমি আগে বিদেশ যাই টাকা উপার্জন করি তারপর ২/৩ বছর পরে দেশ এ এসে বিয়ে করবো !
আর ভেতরে ভেতরে পরিকল্পনা করে রেখেছি , আমি একবার বিদেশ গেলে আর দেশ এ আসব না, ৫/৭ বছর পরে যদিও আসি তাহলে সবাইকে বলব , আমি ঐ দেশের ই একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি , আর আমার ঐ দেশের বউ বাংলাদেশ এ আসতে চায় না, তাই তাকে আনা হয়নি !
এভাবেই চলছিল আমার জীবন !
এর মধ্যে একদিন এমনি এমনি কিছু না ভেবে আমি আমার গুগল একাউন্ডে ঢুকি
ঢুকে আমার গুগল প্রোফাইল এর ছবিটা তে চোখ পরে !
আমি আমার ছবিটা তে দেখতে পেলাম ,
কেউ একজন একটা কমেন্ট করেছে ,
আমি খেয়াল করে দেখলাম , মিলন আমার ছবিতে কমেন্ট করে লিখেছে ” sorry “
ওর লিখা এই ছোট্ট একটা ” sorry ” আমার পৃথিবীটাকে নারা দিয়ে দিলো ! মনে হচ্ছে আমার মনের পৃথিবীতে আশা আনন্দের ভূমিকম্প হচ্ছে !
আমি আনন্দে উল্লাসে আত্ম হারা হয়ে গেলাম !
আমি ভাবছি মিলন হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চায় , তাই আমাকে আবার এত দিন পরে নক করেছে !
আমি ৭ মাস পরে আমার গুগল একাউন্ডে ঢুকেছি ২০১৬ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ রাত ১১ টায় !
আর মিলন আমার ছবিতে কমেন্ট করেছে ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ রাত ১১ টায় !
আমি অবাক হয়ে গেলাম , আমি আমার গুগল একাউন্ডে তেমন ঢুকিই না ,
এমনতো হতে পারতো যে মিলন আমার ছবিতে কমেন্ট করার ১ বছর বা ৮ মাস বা ২ বছর পর আমি গুগল এ ঢুকেছি !
তাহলে আর মিলন এর সাথে আমার যোগাযোগ ই হত না হয়তু , কিন্তু কি অলৌকিক ভাবে সব মিলে গেলো , মিলন ও ছবিতে কমেন্ট করেছে আর আমিও তার ঠিক পরের দিন গুগল এ লগইন করেছি , তাও আবার তার কমেন্ট ও সেই পরিচিত সময় রাত ১১ টায় আর আমিও গুগল একাউন্ডে লগইন করেছি ঠিক রাত এখন ১১ টা !
( ৩ )
আমি তাৎক্ষনিক মিলনকে ফেছবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই আর যেহেতু তখন বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা তাই মিলন ও ফ্রি ছিল আর আমাকে তাৎক্ষনিক একছেপ্ট করে নেয়
মিলন আমাকে একছেপ্ট করে চ্যাট এ লিখলো
– হাই , আমি আপনাকে অনেক খুজেছি , ফেছবুকে ইমুতে কোথাও পাই নি
– আসলে আমি আমার আগের ফেছবুক টা ডিএক্টিভ করে রেখেছি আর ইমু একাউন্ট টাও পরিবর্তন করেছি
– তাই ? কেন সব একসাথে পরিবর্তন ?
– আপনাকে ভুলার জন্য
– তাই , lol !
– হাসলেন কেন ?
– না আমাকে ভুলতে যে নিজের সব পালটিয়ে ফেলতে হল আপনাকে তাই
– এতে হাসতে হবে ?
– sorry ! আসলে এমনি জাস্ট lol লিখলাম
– আচ্ছা ঠিক আছে
– আসলেই আমি খুব sorry ঐ দিন আপনার সাথে এমন আচরন করার জন্য
– আচ্ছা বাদ দিন ওইসব কথা, শেষ ভালো যার সব ভালো তার,
– আচ্ছা পরে কথা হবে, এখন ঘুমাতে হবে বাই ! কাল সকালে ডিউটি আছে !
– ওকে বাই
তার পর থেকে মিলনের সাথে আমার প্রতি রাতে চ্যাট এ কথা হয় !
একটু একটু করে আমাদের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হতে লাগলো
ভ্যালেন্টাইন ডে ১৪ ফেব্রুয়ারি তে আমি মিলন কে নিয়ে একটা কবিতা লিখলাম
সেটা তাকে ফেছবুকের ইনবক্স এ পাঠালাম
কিন্তু মিলন কোন রিপ্লে দিলো না
আমি তাকে মেছেজ করলাম
আপনাকে নিয়ে আমি কবিতা লিখেছি এটা কি আপনার ভালো লাগেনি ?
মিলন কোন রিপ্লে দিলো না
১৫ ফেব্রুয়ারি দুপর ২ টায় মিলন আমাকে কল করলো
আমি -আসসালামু আলাইকুম , কেমন আছেন ?
– ভালো আছি
– আচ্ছা আপনি হঠাৎ নিজ থেকেই আমার সাথে আবার যোগাযোগ করলেন অথচ আপনাকে নিয়ে আমি কবিতা লিখলাম আপনি তার কোন উত্তরি দিলেন না
– আসলে আপনার কবিতা টা ভালো লেগেছে কিন্তু আবার লজ্জা লেগেছে আমার !
কোন ছেলে আমাকে এভাবে লিখেছে কেমন জেন লাগছে আমার
– অহ আচ্ছা ! তাহলে আপনি আমার সাথে আবার কি মনে করে যোগাযোগ করলেন ?
– আমি Valentine page এ গে দের নিয়ে একটা লিখা পরেছিলাম কিছু দিন আগে আর ঐ লিখা টা পরে আমার খুব ভাললেগেছে ! আমি বুঝতে পেরেছিলাম গে মানে কি , আর গে দের কস্ট ভাললাগা মন্ধ লাগা এসব
– তাই নাকি ? Valentine page এ আপনি লাইক দিয়েছেন ? কিন্তু এই পেজ আপনি পেলেন কিভাবে ?
– আমার লাইক দেওয়া ছিল না , কিছু দিন আগে Valentine সম্মন্দে কিছু love quotation খুজতে আমি Valentine লিখে সার্চ দিয়েছিলাম আমার ফেছবুক থেকে আর তখন এই পেজ টা সামনে চলে আসে আর তখন আমি গে দেরকে নিয়ে লিখা ” যদি আপনি বিবেক বান মানুষ হন ” এই শিরোনামের লিখা টা পরি আর আমি বুঝতে পারি আমি আপনাকে না বুঝে কস্ট দিয়েছিলাম ! আমার বিবেক খুলে যায় !
-হুম ! তো আমাকে এমন কষ্ট দেওয়ার অপরাধে আমি যদি আপনাকে সাস্তি দেই ?
-সাস্তি দিবেন ? ওকে দিন আমি সাস্তি মাথা পেতে নিবো !
– সত্যি বলছেন তো ?
– সত্যি !
– ওকে আমি আপনাকে খুন করবো
– কি ? আমাকে খুন করবেন ? তাহলেতো আপনাকেই আবার খুনের সাস্তি পেতে হবে
– জ্বী না খুন করলেই সবার সাস্তি হয় না, দেখেননি সাগর রুনির খুনের কি কোন সাস্তি হয়েছে ? ওরা ছিল সাংবাদিক দম্পত্তি তাও ওদের খুনের বিচার হয়নি আর আপনি তো একজন সাধারন মানুষ মাত্র !-
হা হা হা হা , ভালই বলতে পারেন আপনি !
মিলন খুব হাসতে থাকলো !
( ৪ )
এখন আমার আর মিলনের প্রায় প্রতিদিন ফোনে কথা হয় !
এখন আমরা আপনি থেকে তুমি তে চলে এসেছি ,
মিলনের প্রতি আমার ভালোবাসা , তার প্রতি আমার খেয়াল তার প্রতি আমার care
আমার সরলতা সব দেখে ধীরে ধীরে কথা বলে বলে মিলন আমাকে ভালবেসে ফেলে ,
প্রতি দিন সকালে এখন আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি মিলনের , মিসড কল, মেসেজ ,
এখন মিলনের মিসড কল আর মেসেজ দিয়ে আমার দিন শুরু হয় আর দিন এর শেষে রাত হলে রাতেও তার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমতে যাই ,
এ জন্য মিসড কল বললাম কারন সে যখন আমাকে সকালে কল দেয় তখন আমি ঘুমে থাকি তাই তার কল রিছিভ করা হয় না আর কল টা মিসড কল হয়ে যায়
আমি আমার সকালের টিউশন গুলোকে বিকেলে নিয়ে গেছি কারন এখন মিলনের সাথে আমি রাত জেগে কথা বলি তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারি না !
সারা দিন আমরা কথা বলি,
আমি তার ভালো মন্দে সব বিষয়ে পরামর্শ দেই, ধীরে ধীরে মিলন কেমন যেনো আমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরছে !
সে তার অজান্তেই একজন ছেলেকে মানে আমাকে ভালোবেসে ফেলছে,
আমি মিলনকে বলেছি , মিলন ভালোবাসা মানে বন্দি করে রাখা নয় , ভয় পাওয়া নয় কোনকিছু লোকানো নয় , আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই আমি তোমার একটা স্বাধীন পৃথিবী , তোমার সব ভালোমন্দ আমাকে বলতে পার ,
ভালোবাসা মানে স্বাধীনতা !
মিলন বলল, আসলেই আমি তোমার কাছে সব খুলে বলতে পারি , সব শেয়ার করতে পারি , তোমার সাথে কথা বললে আমার খুব ভালো লাগে নিজেকে খুব হাল্কা লাগে !
প্রশান্তি পাই !
আচ্ছা মিলন তুমি কি আমাকে ভালোবাসো আমার জন্য মায়া লাগে তোমার ?
– হ্যাঁ সেটা কি বুঝনা ? তোমার সাথে কথা বলার সময় আমার জিনিস তো দারায় যায় !
তোমাকে খুব কাছে পেতে মন চায় !
– ভালোবাসা , মায়া আর ঐ জিনিশ দারিয়ে যাওয়া কিন্তু এক কথা না,
– তা ঠিক , তবে তোমার প্রতি আমার মায়া ভাললাগা ভালোবাসা না থাকলে আকর্ষণ না থাকলে কি যতখন যেগে থাকি ততখন ই তোমার কন্টাক্ট এ থাকি ? তাছারা তোমার কাছে আসতেও খুব মন চায় সত্যি
-তাই ? তাহলে তারাতারি দেশ এ চলে আসো !
– হুম, ভেবেছিলাম এ বছরের ডিসেম্বর এ দেশ এ আসবো কিন্তু এখন ভাবছি আগামি মাসে ই দেশ এ চলে আসবো
– গুড ! তো কোন মাসের কত তারিখে দেশ এ আসবা ভাবছ ?
– এপ্রিল এর ১০ তারিখ এর মধ্যে আসবো ইনশাহ আল্লাহ ,
– মিলন তুমি জানো তোমার কন্ঠ, কথা বলার স্টাইল কিন্তু অনেক ভালো
– আমি কিন্তু গান ও গাইতে পারি ভালো
– তাই ? তাহলে আমি একটা গায়ক প্রেমিক পেলাম , তো আমাকে গান শুনাবে না ?
– অবশ্যই শুনাব , আর আমিতো তোমারই গায়ক নায়ক, পাবলিকের নই, বলো কার গান কোন গানটা তুমি শুনতে চাও ? এখনই তোমাকে একটা গান গেয়ে শুনাই
– আসিফ এর , পিছু ফিরে তাকালাম চোখে চোখ রাখলাম ফিরে যাবো আশা ছিল ডাকবেই ভাবলাম এই গানটা
( এভাবে ৪ টা গান শুনানুর পর )
– আচ্ছা মিলন তুমি যে শুধু আমাকে গান শুনাচ্ছ এতে তো হবে না
আমার বন্ধু দের কেউ তো শুনাতে হবে, তাই তুমি ভয়েস মেসেজ করে আমাকে গান গেয়ে পাঠাও
আমি আমার বন্ধু David Sad, edward nill , ratul hasan, Zahid yean আরো সব friend দের কে শুনাবো তোমার গান
– ওকে ! ডিয়ার , আমরা কথা বলা শেষ করে আমি হোয়াটসএপ এ গান রেকরড করে পাঠিয়ে দিবু ,
– ধন্যবাদ আমার জান্টুস ! মিলন তুমি তো জানোনা আমার এই গে জগতের এক বন্ধু আছে , সে আমাদের এই ভালোবাসার কথা শুনে সে বলছে আমাদের প্রেমের এই কাহিনী নিয়ে নাকি সে একটা শর্ট ফিল্ম বানাবে
-তাই নাকি ? তাহলে আমার ক্যারেক্টারে কিন্তু আমি আর তোমার ক্যারেক্টারে তুমি অভিনয় করবে , ওকে !
– আচ্ছা সোনা সে পরে ভেবে দেখা যাবে !
– সৈকত তুমি না বললে তোমার মোবাইল এ নাকি সমস্যা আমি আসার সময় একটা মোবাইল নিয়ে আসবো, কি মোবাইল আর কোন মডেল এর মোবাইল আনবো বল
– জ্বি না জনাব , আমি এত সস্তা জিনিশ নিব না, মোবাইল তো খুব সস্তা জিনিশ
আমি আরো দামি কিছু নিবো
আমি পোড়া মানুষ টা কে চাই , আমি তোমাকে চাই, তুমি আমার হয়ে আমার কাছে চলে আসো !
– হা হা হা আমি তো তোমার ই আছি সেটা আর এমন কি
– আচ্ছা দেখছ কথা বলতে বলতে এখন রাত ১ টা বেজে গেলো, আমরা সারা দিন কথা বলি তবুও না , আমার মনে হয় যেন তোমার সাথে আমার কিছুই বলা হয় নি
– আসলেই তাই , আমারও এমন লাগে যেন এই মাত্র কথা বলা শুরু করেছিলাম,
আর কিছুই যেন বলা হয় নি
– মিলন তুমি যানো তোমার ঐ ছোট্ট একটা ” sorry ” আমার জীবনে অনেক বড় একটা Happy নিয়ে আসছে !
– আমিও অনেক happy সৈকত
– এই শুনো অনেক রাত হল , এখন ঘুমাও বাই !
উম্মাহ উম্মাহ ! ফোন রাখার আগে আমরা একে অপরকে চুমো দিয়ে ফোন রাখি !
এভাবেই মধুর প্রেম চলছে আমাদের, একদিন আমি মিলনের সাথে একটু অভিমান করলাম , আমার অভিমান ভাঙ্গাতে সে গুনে গুনে ১০৮ বার sorry লিখে পাঠালো, আমার ইমুতে,
আমি খুব মুড নিয়ে তার কল রিছিভ করলাম আর বললাম , এত্ত বার sorry লিখার কি মানে ?
মিলন বললো , হুমায়ন আহমেদ এর বই হিমুর হাতে ১০৮ টা নিল পদ্ম তাই সেটাকে অনুসরণ করে আমি ১০৮ বার sorry লিখেছি !
আমি তোমার হিমু প্রেমিক !
তাও আমি খুব মুড নিয়ে আছি,
তারপর সে তার ঐ বিশেষ অশ্র কাজে লাগালো, মানে গান গেয়ে মন ভোলানোর অশ্র,
শুনো আমার একটা প্রিয় গান শুনাই তোমাকে
এটা বলে সে গাইতে শুরু করলো ” আজকে না হয় ভালোবাস আর কোনদিন নয়, ঐ মনের দরজা খুলো না কাল কি হবে যানো না “
তার এই গান শুনে কি আর আমার মনে কোন রাগ থাকতে পারে আমি হেসে দিলাম,
মিলন বললো , এই তো আমার মিলি হেসেছে , মিলন তার নামের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছে মিলি, এখন সে ভালোবেসে আমাকে মিলি বলে ডাকে,
আচ্ছা আজকে সকালে কি দিয়ে নাস্তা করলো আমার মিলি ?
আমি বললাম ,
– কাঞ্জির চালের ভাত আর শুটকির ভর্তা ,
– কাঞ্জির চাল ? এটা আবার কি ?
– কেন তুমি যানোনা , ভাত রান্না করার সময় চুলার পাশে একটা মাটির কলসিতে কিছু পানির সাথে যে ভাত রান্না করার আগে কিছু ভেজা চাল রেখে দেয় আর ১ মাস পর ঐ চাল এ একটু গন্ধ গন্ধ হয়ে যায় , তখন ঐ চাল দিয়া ভাত রান্না করে খায়,জাউ রান্না করে খায় ,
মিলন আম্মা আমাকে ডাকছে,
আচ্ছা শুনো তুমি আমাকে ঠিক ৬ মিনিট পর কল দাও ,
আম্মার কথা টা আমি শুনে আসছি !
একটু পর মিলনের সাথে আবার ফোনে কথা ,
আচ্ছা মিলি , তুমি সবসময় কোন সময় নিলে , ৬ মিনিট , ১২ মিনিট , ৮ মিনিট বা ৪ মিনিট এমন সংখ্যা বল কেন ? নর্মাললি সবাই বলে , ৫ মিনিট পরে আসছি বা ১০ মিনিট পর কল দিন !
হা হা হা ! আসলে মিলন এটা আমার একটা বৈশিষ্ট্য , আমি সব সময় একটু আলাদা কিছু করি, আলাদা ভাবে বলি !
– তুমি না হা হা হা !
( ৫ )
আমাকে ভ্যালেন্টাইন পেজের জন্য একটা গল্প লিখতে বলা হয়েছিলো, কিন্তু আমার সারা দিন আর রাতের ১ টা / ২ টা পর্যন্ত মিলনের সাথে কথা বলেই কেটে যায় , এডমিন বার বার জিজ্ঞেস করে গল্প কত দূর , কিন্তু আমি গল্প লিখতে বসতেই পারছি না , মিলন সারাক্ষন আমাকে ফোনে ব্যাস্ত রাখে , এ যেন এক প্রকারের জ্বালাতন,ভালবাসার জ্বালাতন , এমন ভালবাসার জ্বালাতন পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার !
ওর জ্বালাতন জেন আমার এক সুখের জ্বালাতন !
সেই মানুষ ই সবথেকে ভাগ্যবান যে ভালবাসার জ্বালাতন পায়, আসলেই আমি মিলনকে পেয়ে এখন অনেক সুখি ,
যে মিলন একদিন আমাকে ব্লক করে দিয়েছিলো , তাকে আর লিখতে মানা করেছিল , আমার মত বন্ধু তার দরকার নেই এমন কথা বলেছিল , সেই মিলন এখন আমাকে ভালবাসে , আল্লাহ চাইলে মানুষকে কি না দিতে পারে ? একজন স্ত্রেইট ছেলে এখন আমাকে ভালোবাসে, আমার সাথে কথা না বললে তার ভালোলাগেনা !
ওর সেই ছোট্ট একটা ” sorry “
আমার জীবনে সুখ আর প্রেম নিয়ে এলো ভুরি ভুরি !
সেই ছোট্ট একটা ” sorry ” এর পর থেকেই আমার আর মিলনের জীবনটা পালটে গেলো !
এখন আমি আমার এই লিখাটা লিখার সময়ও মিলন আমাকে ফোন করেগেছে সারাক্ষন ।
আমি তাকে ফোন করতে মানা করিনি ,
আমি মিলনকে বলেছি ” জানো আমার আর তোমার এই প্রেমের গল্পটা Valentine পেজ এ আমি লিখে দিচ্ছি
– তাই ? কবে Valentine পেজে প্রকাশ করবে আমাকে জানিও , দেখি আমার মিলি কিভাবে আমাদের ভালোবাসার কথা সবার সামনে তুলে ধরলো ! আর শোন আমার জন্যও একটা ফেক আইডি খুলবে আমিও তোমাদের ঐ পেজে ঐ গ্রুপে থাকবো আমিও যে এখন তোমার জীবনের একটা অংশ !
আমার জীবনে সবার আগে মিলন তাই মিলনের সাথে , কথা বলার পর রাত ১.২৯ am
এ আমি আবার গল্পটা আমাদের ভালবাসার ১০০% সত্য গল্পটা লিখতে বসি !