
লেখক :- সামীউল হাসান সামী
পেয়ারা বাই! একজন যাত্রা শিল্পী। দির্ঘ্য ৩২ বৎসর হয়ে গেছে সে যাত্রা পালায় অভিনয় করছে। শুরুটা ১৪ বৎসর বয়সে হয়েছিলো। একটু আধটু পড়াশোনাও হয়েছিলো সে সময়। যাত্রার শুরুটা তার নারী চরিত্রে। মঞ্চে তার দাপটি অভিনয়ে বারবার তাকে নিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় চরিত্রে। সে সময়ে নায়িকা চরিত্রে তার সঙ্গে পেরে উঠার মতো কেউ ছিলনা বললেই চলে। নাচ, সু মধুর কন্ঠ, ঝলমলে রাঙা দেহ কী ছিলোনা তার.?
একনামে চিনতো সবাই ” পেয়ারা বাই “কে। অনেক পুরুষের মন জুগিয়েছে পেয়ারা বাই। রাত কাটাতে গুনতে হতো মোটা অঙ্কের এনাম। তবে এখন আর পেয়ারা বাই সে অবস্থায় নেই। সাইড চরিত্রে অভিনয়ের জন্য হঠাৎ ডাকা হয় তাকে। সেই আয় দিয়েই কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার।
তবে তার মনে হাজারো প্রশ্ন। প্রতিদিন খবরের কাগজ বিক্রি করেন ঢাকা সচিবালয়ের পথে। নিয়মকরে পত্রিকাও পরেন তিনি।
রাস্তার পাশে চা খেতে খেতে তার সঙ্গে কথা এগুচ্ছিলো।
————————————————-
আমি : আপনার নাম কী ছিলো ?
পেয়ারা বাই : চান মিয়া বেপারী। তবে নামে কেউ চেনে না। যাত্রায় যখন পাঠ গাইতে নেমেছি তখনই এ নাম হারিয়ে গেছে, পেয়ারা বাই -এর মধ্যে।
আমি : আপনি বিয়ে করেছেন.?
পেয়ারা বাই : না গো দাদা। আমি যাত্রা করতাম। কতো মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে। কিন্তু রাজি হইনাই। আমি পছন্দ করতাম পুরুষদের। কতো পুরুষ আমার সঙ্গে রাত কাটাইছে। বিয়ে করতে বললে হাসতো।
আমি : আপনার ইচ্ছে ছিলো বিয়ে করতে ?
পেয়ারা বাই : হ গো দাদা। কিন্তু সম্ভব না। কোন কাজী, কোন পুরোহিত বিয়ে পড়াবে? সরকারও তো কোন নিয়ম করেনাই।
আমি : আপনি কী জানেন আপনি সমকামী?
পেয়ারা বাই : ওইটা কী? কোন অসুখ নাকি ?
আমি : না। যারা সমলিঙ্গ বা একই লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে প্রেম বা যৌনতা অনুভব করে।
পেয়ারা বাই : হ্যাঁ পরেছি পত্রিকায়। চিন্তা করে দেখেন, এদের নিয়ে কতো কথা লেখে পত্রিকায়। কিন্তু এদের নিয়ে কেউ ভাবেনা।
আমি : আপনি কী চান?
পেয়ারা বাই : আমার আর এখন কিছুই চাইনা। সরকার যখন বিরুদ্ধে যায় সংখ্যা লঘু জনগনের তখন কী আর কিছু চাইবার থাকে ?
আমি : সরকার কিভাবে বিরুদ্ধে?
পেয়ারা বাই : রাইতে রাইতে পার্কে পার্কে দেখি ছেলেগুলো ঘুরাঘুরি করে। আমিতো জানি কেন ঘুরে।
আপনিই বলেন দাদা, একটা ছেলে যদি অন্য একটা ছেলের সঙ্গে সংসার করে সুখী হয়। তবে কেন তাদেরকে একটা মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে ?
এইযে সরকার এদের নিয়ে ভাবেনা, এতেকরে তো তাদের এবং দেশেরই খতি হচ্ছে।
আমি : দেশের খতি হচ্ছে কিভাবে?
পেয়ারা বাই : এরা একেক দিন একেক জনের সঙ্গে দেহ ভাগাভাগি করছে অসচেতন ভাবে এতে রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। এদের জীবন ঝুঁকি পূর্ণ হচ্ছে। দিনদিন এই ঝূঁকি বারতেই থাকছে।
আমি : কিভাবে এটা দূর করা সম্ভব.?
পেয়ারা বাই : শুনেন দাদা। যদি সরকার এদের বিয়ের বৈধতা দেয় তবে এরা পছন্দের মানুষকে নিয়ে জীবন নিয়ে ভাববে। সমস্যা হলে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতো দিধ্বাহীন ভাবে। এরা সাস্থ্য সচেতন হতো। কিন্তু এখন কী তাই সম্ভব.?
শুনেন দাদা! চাহিদা আইন মানেন। শরীরের চাহিদা মিটাতেই এখন এরা ছুটোছুটি করে। চাহিদা মিটলেই এরা শান্তি। কারণ এরা জানে এর বেশি পাওয়া সম্ভব না। কোন শারীরিক সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যাইতেও ভয়পায়। গিয়ে কী বলবে, এই ভেবে আর যায়না।
আমি : আপনার কথা মেনে নিলে তো বংশবৃদ্ধি থেমে যাবে ?
পেয়ারা বাই : কেন দাদা? পৃথিবীর সবাই কী সমকামী নাকি ? যারা সমকামী ওরা বিয়ে করুক আর না করুক, ধর্ম মানুক আর না মানুক, রাষ্ট্র মানুক আর না মানুক তারা সমকামী।
আমি : সমকামী বিয়ে বৈধতা দিলে কী পারিবারিক শৃঙ্খল বিঘ্ন ঘটবে না ?
পেয়ারা বাই : কেন বিঘ্ন ঘটবে ? ছেলে যদি তার বিয়ে করা বউকে নিয়ে রাতে দরজা দিলে বিঘ্ন না ঘটে তবে একজন ছেলে তার বিয়েকরা বর কে নিয়ে দরজা দিলে বিঘ্ন কেন ঘটবে ?
আমি : বাচ্চাকাচ্চা তো হবেনা ?
পেয়ারা বাই : দরজা দেবার মানে কী বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার জন্য. ? সারাজীবন অনেক বার স্বামী স্ত্রী বিছানায় যায় তাই বলেকি প্রতিবারই বাচ্চাকাচ্চা হয়.?
আর যদি না হয় তবে ওই বিছানায় যাওয়া কী অপ্রাকৃতিক?
বাচ্চা তো শেয়াল কুকুরেরও হয়।
এভাবেই পেয়ারা বাই তার কথাগুলো বলছিলো। পেয়ারা বাই কতটুকু সত্য বলছিলো তা আপনি আপনাকে প্রশ্ন করলেই পাবেন। তবে রাস্ট্র যে তার জনগনের সঙ্গে চাতুরতা করছে তা স্পষ্ট।
সংবিধানের ১৯ (১) অনুচ্ছেদে, রাষ্ট্র বা সরকার সকল নাগরিকের অধিকার ভুগে সমতা নিশ্চিত করতে বাধ্য।
তবে তা সুধুই সংবিধানে।
জানিনা এই অনির্ধারিত ভাগ্যবান মানুষগুলোর দায় কে নেবে , রাষ্ট্র, সরকার নাকি সংবিধান.?