
কবিঃ তারাশঙ্কর
সুন্দর করে সাজানো এক হলঘরে
বিচার-সভাটা বসেছিল,
আমার বিচার সভা।
বড় শক্ত অভিযোগ!
অন্যায়কে একেবারেই সহ্য
করা হবে না, ওরা বলছিল।
‘ঝুলিয়ে দে ব্যাটাকে, শখ কত!’-
একটি সুদর্শন যুবক চিৎকার করে উঠল।
আমি ওর দিকে ফিরে একটু মুচকি হাসলাম,
কিছুটা বা বিভ্রান্ত হয়ে চোখ নামিয়ে সে সরে গেল।
গম্ভীর বিউগলের ভাষায় বিচারকদের আগমন-ধ্বনি ঘোষিত হল; কী প্রশান্ত মূর্তি এক একটি,
শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসে!
অভিযোগ পড়ে শোনানো হল।
‘আমার কিছু বলার আছে’-
সমবেত জনতার দিকে ফিরে বললাম।
‘এক ঘোর লাগা চন্দ্রাহত রাতে
আমি ছুঁয়েছিলাম এক যুবকের হাত-
এ কথা তোমরা জানো।
তার ওষ্ঠাধর হতে পান করেছিলাম
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানীয়-
এ কথাও তোমরা জানো।
তোমরা শুধু জানো না
কী অনি:শেষ ভালোবাসায় দগ্ধ হয়েছিলাম আমি!
দেহের অশুচিতে তোমরা বিদ্ধ হও,
তোমাদের ভালোবাসাহীন আত্মা কি অশুচি নয়?!’
অনুমিতভাবেই প্রবল হর্ষধ্বনির মাঝে
আমার মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হল।
জল্লাদ যখন আমায় নিয়ে যাচ্ছিল,
একবার সেই যুবকের দিকে তাকালাম।
ওর চোখে জল,
ভালোবাসা আর মুক্তি!