
লেখক :- অনির্বাণ আহমেদ
সারা পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরতে শুরু করেছে৷ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী কার্বনডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ কমানোর জন্য সম্ভাব্য পথ হতে পারে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। কারণ পারমানবিক চুল্লি কার্বন নির্গত করে না। The world neculear Association এর মতে বর্তমানে বিশ্বে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পারমানবিক কেন্দ্র উৎপন্ন হয় তা কয়লা দিয়ে উৎপন্ন করতে গেলে প্রতি বছর 2.6 বিলিয়ন টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাতাসে যোগ হবে৷ কিন্তু পারমানবিক কেন্দ্রের দূর্ঘটনা বেশ ভয়াবহ।
ইউক্রেন,রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপানে নিউক্লািয়ার রিয়েক্টর দূর্ঘটনাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।তাহলে এই সঙ্কট নিরসনের জন্য কি নিরাপদ পারমানবিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করা দরকার?
আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু উন্নত দেশ নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর বানানো পুরপুরিই বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু অপরদিকে চীন এবং রাশিয়া নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর আগ্রাসীভাবে তৈরি করে যাচ্ছে এবং এই প্রযুক্তির আরো বেশি নিরাপদ করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর যেভাবে কাজ করে
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লীতে ইউরেনিয়ামের রডগুলো বিশেষভাবে সজ্জিত থাকে।
পারমানবিক চুল্লীগুলো কয়েক ধাপে খুব শক্ত ও প্রশস্ত কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে তেজস্ক্রিয়তা বাহিরে আসতে না পারে। ফিশনের চেইন রিয়েকশনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য Cadmium রড ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ রিয়েক্টরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয় পানি। রিয়েক্টরের তাপে এই পানি বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প দিয়েই টারবাইনের সাহায্যে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। টারবাইনে ব্যবহারের পর এই বাষ্পকে কুলিং টাওয়ারের মাধ্যমে পানিতে পরিণত করে আবার রিয়েক্টরে ফেরত পাঠানো হয়। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাষ্প চিমনি দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ও নতুন পানি বাহির থেকে সরবরাহ করা হয়।
রিয়েক্টরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে না রাখতে পারলে ইউরেনিয়াম গলে গিয়ে তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশে ছড়িয়ে পরে। এবং তা ভূগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে
এছাড়া রিয়েক্টরের তেজস্ক্রিয় বাষ্প বাতাসের অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটায়।
তবে নতুন মডেলের নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে এধরনের কোন ঝুকি নেই।
নিরাপদ নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে
চীন এবং রাশিয়া বেশ জোরের সঙ্গেই পরিবেশ বান্ধব পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে যাচ্ছে। এবং সর্বোচ্চ নিরাপদ পাওয়ার প্লান্ট হিসাবে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এই নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে হলো চতুর্থ প্রজন্মের রিয়েক্টরে। এই রিয়েক্টরে পাঁচের অধিক স্তরের নিরপত্তা রেয়েছে।
ফুয়েল পেলেট, অতি উচ্চ তাপমাত্রায় তার জ্বালানী বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে। ফুয়েল পেলেট সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী করা হয়, ফলে তেজস্ক্রিয় ফিশন প্রোডাক্টসমূহ পেলেটের ভেতরে অবস্থান করে।
ফুয়েল পেলেটগুলো জিরকোনিয়াম অ্যালয়ের তৈরী ফুয়েল ক্ল্যাডিং দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। বিশেষ কোন কারণে সামান্য পরিমাণ তেজস্ক্রিয় প্রোডাক্ট ফুয়েল পেলেট থেকে বের হয়ে আসলেও তা জিরকোনিয়াম ক্ল্যাডিং ভেদ করতে পারবে না।
এই “চতুর্থ প্রজন্মের” মডেলের রিয়েক্টরে পানির পরিবর্তে তরল সোডিয়াম বা গলিত লবণ ব্যবহার করে, যাতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরলে অক্সিজেন হাইড্রোজেনের সংস্পর্শে বিস্ফোরণ না ঘটে। চীন এ বছর একটি হিলিয়াম-শীতল চুল্লীও এর গ্রিডে সংযুক্ত করতে চায় ।এটি ৮ মাত্রার ভূমিকম্পকেও মোকাবেলা করতে পারে।
আশা করি গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর এই যুগে এই নতুন মডেলের নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের নিরাপদ দূষনমুক্ত বিদ্যুৎ উপহার দিবে।