
লেখক :- অনির্বাণ অহমেদ
প্রসারণ মহাবিশ্ব সম্পর্কে ফ্রিডম্যানের মডেল থেকে সম্ভাব্য তিনটি সমাধান পাওয়া যায়। তার মধ্যে দ্বিতীয় সম্ভাব্য মডেলটি হচ্ছে “যদি গড় ঘনত্ব সঙ্কট মানের চেয়ে কম হয়, তাহলে প্রসারণ বন্ধ করার মতো যথেষ্ট মহাকর্ষীয় আকর্ষন থাকবে না। ফলে মহাবিশ্ব চিরোকাল প্রসারিত হতে থাকবে।
এখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানেন যে প্রতি মিলিয় বছরে মহাবিশ্ব ৫ থেকে ১০ শতাংশ প্রসারিত হয়।কিন্তু বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব কতো সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা দিতে পারেন না। আমরা জানি মহাবিশ্বে সাধারন ম্যাটার মাত্র ৫ শতাংশ বাকি ৯৫ শতাংশ হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি। এই ৫ শতাংশ ক্ষুদ্রভর মহাবিশ্বের প্রসারণ থামাতে পারে না এমনকি ১৫ শতাংশ ডার্কম্যাটারও প্রসারণ রোধ করার জন্য প্রয়জনীয় ভরের অনেক কম। ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের সমস্ত তারকা, গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার স্থায়ীত্ব ধরে রাখছে অপরদিকে ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের প্রসারণের জন্য দায়ী।এবার আসা যাক তাপ গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রে। একবার ভাবুন তো কেন ভাঙ্গা কাঁচের গ্লাস আর জোড়া দেওয়া যায় না! কেনই বা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় না কিংবা পুড়ে যাওয়া কয়লা পূনরায় কেন কাঠে পরিনত হতে পারে না। এর সহজ কারণ হচ্ছে তাপ গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রে অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ অর্থাৎ এই সূত্র অনুযায়ী বিশৃঙ্খলা এবং তাপমাত্রা সময়ের সাথে বাড়তে থাকে।
কাচের গ্লাস এবং কাঠ তার সঠিক অবস্থান বা সর্বোচ্চ সুন্দরতম অবস্থা থেকে ভাঙ্গা গ্লাস এবং কয়লাতে রুপান্তরিত হওয়াতে বিশৃঙ্খল অবস্থায় বিরাজমান করছে অর্থাৎ এন্ট্রোপি বেড়েছে। সহজ কথায় এন্ট্রোপি হলো মহাবিশ্বের বিশৃঙ্খলার পরিমাপ।মহাবিশ্বের গড় শক্তি ঘনত্ব যখন সংকট মানের চাইতে কম হবে তখন মহাবিশ্বের সকল বস্তু একে অন্যের আকর্ষন প্রভাবের বাইরে চলে যাবে।যদি পর্যাপ্ত ডার্ক এনার্জি না থাকে তাহলে মহাবিশ্বের প্রসারণ ধীর হয়ে যাবে তবে অসীম হারে প্রসারিত হতে থাকবে যতক্ষণ না এর গড় তাপমাত্রা অসম ভাবে পরম শুন্যের দিকে নেমে যায়। এ অবস্থায় মহাবিশ্বের শীতল মৃত্যু ঘটতে থাকে।আর এন্ট্রোপি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।এ অবস্থাকে মহাবিশ্বের “তাপীয় মৃত্যু” বলে।যেহেতু বিশ্বের প্রধান উপাদাগুলো হলো নীহারিকা, গ্যালাক্সি,তারকা এগুলো জন্মের প্রায় দশহাজার কোটি বছর পরে এরা এদের জীবনের চূড়ান্ত অবস্থায় পৌছাবে। সকল নক্ষত্র এবং কিছু নক্ষত্র সুপারনোভা বিষ্ফোড়নের পরে শ্বেত বামন,নিউট্রন নক্ষত্র বা কৃষ্ণবিবরে পরিণত হবে। নক্ষত্রগুলো শ্বেত বামন বা ব্লাকহোলে পরিনত হওয়ার পর নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রয়া ঘটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে জ্বালানী থাকে না ফলে নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে। প্রোটন ক্ষয় তত্ত্ব অনুযায়ী নাক্ষত্র শুধু কৃষ্ণগহ্বর অবশেষ হিসাবে থেকে যাবে। সেগুলো একসময় হকিং বিকিরণে শুরু করবে এভাবে ১০^১০০ বছর পরে ব্লাকহোলেরাও তাদের সমস্ত ভর হারিয়ে ফেলবে । কোন ব্লাকহোলও আর থাকবে না ।শেষপর্যন্ত মহাবিশ্বের সবজায়গায় তাপমাত্রা একই হয়ে যাবে, আর কোন কাজ করা যাবে না।এসময় মহাবিশ্বের তাপমাত্রা পরম শূন্যের তাপমাত্রায় নেমে আসবে ।আর কোন এনট্রপিও বাড়বে না। এতে করে মহাবিশ্বের তাপীয় মৃত্যুর সাথে এনট্রোপির মৃত্যুও ঘটবে।