যাদুর শহর

“ভাবুনতো এমন এক শহরের কথা যেখানে রাজত্ব করে সমকামীরা! বাকীরা সংখ্যালঘু । বিষমকামিরা লড়ছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলে আসা সমকামী মূল্যবোধ আর রীতিনীতি কি সহজে তা হতে দিবে?এমন এই শহরে সৌরভ আর আবিদ এর পরিচয়। তারপর প্রণয়। আর সকল সমকামী যুগলের মত ওরাও স্বপ্ন দেখে বিয়ে করে সংসার করার। কিন্তু বাঁধ সাধে দুই পরিবার। কারণ? যে সমাজে সমকামী বিয়েই একমাত্র রীতি সেখানে আর কি কারণ থাকতে পারে?”

দৃশ্য ১

সভাপতিঃ আজকের সেমিনারে আসার জন্য ধন্যবাদ। আগের মিটিং এ আমরা ছিলাম ৪ জন। আজকে ৮ জন । এত্ত লোক দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে। কারোর আসতে কোন অসুবিধা হইনি তো?

ব্যক্তি ১: না। না। তেমন কোন অসুবিধা হয়নি। শুধু একটু ভয় হচ্ছিলো! চারপাশ তো সব গে আর লেসবিয়ানদের ছড়াছড়ি। পাড়ার কেউ যদি জেনে ফেলে আমি স্ট্রেইট তাহলে আমাকে নিয়ে অনেক হাসাহসি হবে।

ব্যক্তি ২: আমার আম্মুজান আর আম্মিজান যদি কিছু জানতে পারে তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

আবিদের বাবাঃ কথায় কথায় এরকম আত্মহত্যার কথা ভাবলে কি হয়? এটার একটা সমাধান করা দরকার।

সভাপতিঃ এইজন্যেই আজকে আমাদের এই সিক্রেট আলোচনা। আজকে আমরা অধিকার নিয়ে আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে আমাদের জানতে হবে যে আসলে স্ট্রেইট হিসেবে আমাদের কি কি অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়।

ব্যক্তি৩:আমি বলি, আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম। ওই ছেলেও আমার উপর পুরা ফিদা। সারাদিন জানু, সোনা, হানিবানি বলে ডাকতো। কিন্তু বিয়ে করলো একটা ছেলেকে। তারপরে আমি আর কি করি! শেষ পর্যন্ত ফ্যামিলি প্রেশার সামলাতে না পেরে এক মেয়েকেই বিয়ে করে ফেললাম। আমি লেসবিয়ান না, তারপরও সবার সাথে আমাকে সবসময় অভিনয় করে যেতে হচ্ছে।

ব্যক্তি ২: আরে আমার কথা একটু চিন্তা করেন! ১০ বছর মেডিকেলে পড়ে গাইনি ডাক্তার হলাম কিন্তু কোন ব্যবসাই নাই! তাই শেষ পর্যন্ত পেটের দায় মিটানোর জন্যে চেম্বারটাকে একটা বিউটি পার্লার বানিয়ে ফেললাম। এই হল অবস্থা!

আবিদের মাঃ আজকেই তো একটা কাহিনি ঘটলো। আমি আজকে শাড়ি পরে রাস্তা পার হচ্ছিলাম তখন হঠাৎ করে এক লেসবিয়ান কাপল জোরে জোরে ‘ফুল লেডিস’! ‘ফুল লেডিস’! বলে ডাকা শুরু করলো।

আবিদের বাবাঃ আর বইলেন না, আমি একদিন অফিসে স্কিনটাইট প্যান্টটা না পরে লুজ প্যান্টটা পরে গিয়েছিলাম। তা দেখে অফিসের লোকজন আমাকে নিয়ে কি যে হাসাহসি শুরু করে দিলো!

সভাপতিঃ আজকে আমরা এইজন্যেই একত্রিত হয়েছি। এই সমাজ ব্যবস্থা বদলাতে সরকারের কাছে আমাদের দাবিগুলো হল,

১) সমাজে আমাদের পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে হবে।

২) আমাদেরকে দেখলে হাসিহাসি করা যাবে না।

৩) চাকরিতে কোন রকম ভয় দেখানো যাবে না।

ব্যক্তি ১: আমার মনে হয় মিডিয়াতেও আমাদেরকে ঠিকভাবে দেখাতে হবে। অনন্ত জলিল আর শাকিব খানের রোম্যান্টিক সিনেমা দেখতে দেখতে আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু স্ট্রেইট লাভ স্টোরি দেখালেও তো হয়!

সভাপতিঃ হ্যাঁ! খুবই ভালো একটা পয়েন্ট বলেছেন। তুমি তো নতুন এসেছ খোকা, তুমি কি কিছু বলতে চাও? (সৌরভের দিকে তাকিয়ে)

সৌরভ: আমম, আসলে, আমি স্ট্রেইট নই। কিন্তু আপনাদের কাজের প্রতি আমার অনেক আগ্রহ তাই একটু দেখতে আসলাম।

সবাই (একসাথে): অ্যায় হ্যায়! একজন গে চলে এসেছে! ছি ছি ছিঃ

সভাপতিঃ থামেন, থামেন। এইসব বলেন না! ওর মতো আমাদের আরও গে allies দরকার। আসার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। এইভাবেই আস্তে আস্তে সবাই আমাদেরকে বুঝতে পারবে। এই বছর আমরা একটা কমিক বের করেছি, শী। তুমি একটা কপি নিয়ে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবে। কেমন?

সৌরভঃ Thank you.

সভাপতিঃ তাহলে আজকে এই পর্যন্তই। আমরা আবার আগামী সপ্তাহে বসবো। সবাই অবশ্যই সাবধানে থাকবেন।

(সবাই আস্তে আস্তে চলে গেলো। যখন আবিদ বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে তখন সৌরভ আবিদের কাছে আসলো)

আবিদঃ আমাদের প্রোগ্রামে আসার জন্য ধন্যবাদ। এই বোরিং প্রোগ্রামে একজন সমবয়সী পেয়ে ভালোই লাগছে।

সৌরভঃ আমি অনেকদিন ধরেই আসতে চেয়েছিলাম। ‘Boys and Girls of Bangladesh’ এর পেইজে তোমাদের ইভেন্টের কথা দেখে চলে আসলাম।

আবিদঃ ভালোই করেছো।

সৌরভঃ আজকে এসে বুঝতে পারছি তোমরা কতো রকমের বৈষম্যের শিকার হও।

আবিদঃ আসলে, হুমম, আমি স্ট্রেইট নই। আমিও তোমাদের মতোই গে। কিন্তু বাবা-মা ধরে এইখানে নিয়ে আসছে।

সৌরভঃ ওহ তোমার বাবা-মা স্ট্রেইট?

(আবিদের বাবা চিৎকার করে বলবে) আবিদের বাবাঃ অ্যায় আবিদ! বাসায় যাবি না?

আবিদঃ তোমরা যাও। আমি একটু পরে আসবো।

সৌরভঃ তো, তোমরা আর কি কি ইভেন্টস ওরগানাইজ করো?

আবিদঃ খুব বেশী কিছু না। মানুষজন ভয়ে আসতেই চায় না। মাঝেমধ্যে কিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস, আর কিছু পার্টিস।

সৌরভঃ পার্টিস গুলো নিশ্চয় অনেক মজার হয়?

আবিদঃ আরে না! স্ট্রেইটগুলো তো নাচতে-তাচতে পারে না, কোন মিউজিক-টিউজিক থাকে না। পার্টিগুলোতে শুধু খাওয়া যাওয়া থাকে আর পলিটিক্স নিয়ে আলোচনা হয়। অ্যান্ড, অফ কোর্স! কার সাথে কার বিয়ে হল সেটা তো আছেই!

(সৌরভ মুখ কুচকাবে।)

আবিদঃ এই বছর আমরা একটা নাটক করবো ঠিক করেছি। ‘পেনিস মনোলোগ’।

সৌরভঃ এইটাতে কি হবে?

আবিদঃ বেশি কিছু না। কিছু স্ট্রেইট পুরুষেরা তাদের দুঃখের কথা শেয়ার করবে।

সৌরভঃ কি ধরণের দুঃখ?

আবিদঃ বহু ধরণের। যেমন তারা আরামে কোন কিছু খেতে পারে না, একটু ওয়েট বাড়লেই গে’রা কমেন্ট করে। তারপরে আরামে কিছুই পরতে পারেও না। কালার ঠিকমতো কর্ডিনেট না করলেই মানুষজন হাসাহাসি করে।

সৌরভঃ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে!

আবিদঃ তুমি কি ভলেন্টিয়ারিং করতে চাও? আমাদের কিছু লোক দরকার।

সৌরভঃ অবশ্যই। আচ্ছা, তোমার নামটা জানা হল না।

আবিদঃ (হাত বারিয়ে বলবে) আমি আবিদ। আর তুমি?

সৌরভঃ (হ্যান্ডশেক করে বলবে) সৌরভ। কথা বলে ভালো লাগলো।

আবিদঃ আমারও।

(দুজন হাসলো এবং আস্তে আস্তে সৌরভ ও আবিদ দর্শকের মধ্যে হেঁটে চলে গেলো)

দৃশ্য ২

(ডাইনিং রুমে মা আর মামনি একে অন্যের সাথে কথা বলছে)

মামনিঃ আচ্ছা শোনো, আমার না একটু সন্দেহ হচ্ছে।

মাঃ কি নিয়ে?

মামনিঃ সৌরভ কে নিয়ে। খুবই দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

মাঃ কেন?

মামনিঃ কাল ওর ঘরে আমি এই কমিকস পেয়েছি।

মাঃ ছি!ছি! কি বলছো এসব? এ হ’তেই পারেনা।

মামনিঃ আমার খুবই সন্দেহ হচ্ছে ওকে নিয়ে। ছেলেটার কাপড় চোপড়ের অবস্থা দেখেছো? কোনও স্টাইল সেন্স নেই।

মাঃ হ্যাঁ, কিন্তু ওমন তো হতেই পারে। কয়েকজনের স্টাইল সেন্স না-ই থাকতে পারে।

মামনিঃ আর ছেলেটার ইন্টারেস্ট দেখেছ? সারাদিন টিভিতে স্পোর্টস দেখে! রেসলিং দেখলেও হতো! তা না, কিসব ক্রিকেট-ফুটবল দেখে। উফফ!!!!!!

মাঃ না, খেলা তো আর সবাই দেখে না। কিন্তু আমি অবশ্য সেদিন একটা জিনিস খেয়াল করলাম। টিভিতে সাকিব খান আর অনন্ত জলিলের ‘আমি রোমিও, তুমিও রোমিও’ না দেখেই উঠে গেল।

মামনিঃ উফফ!! কি যে টেনশন হচ্ছে আমার। সব তোমার দোষ।

মাঃ আমার দোষ!!!!!!!! আমি কি করলাম?!!!??

মামনিঃ তুমি সারাদিন ওর সামনে ক্যাটরিনা কত সুন্দর, ক্যাটরিনা এই, ক্যাটরিনা সেই, এসব বললে ও তো স্ট্রেইট হবেই। উফফ! কি যে করি! মানুষজন জানলে কি বলবে? সোসাইটিতে আমাদের প্রেস্টিজ একেবারে পাংচার হয়ে যাবে।

মাঃ হায়রে হায়! আমাদের তো আর ওদের ল্যাভিশ পার্টিগুলোতে ইনভাইটও করবে না। বোরিং সব স্ট্রেইট দাওয়াত খেতে হবে।

মামনিঃ এই শোনো, এক কাজ করি। সৌরভের বিয়ে করিয়ে দেই। বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

মাঃ হ্যাঁ, খুবই ভালো আইডিয়া। তোমার ঐ কোন এক বন্ধুর ছেলে আছে না?

মামনিঃ হ্যাঁ, ওর সাথে সৌরভকে দারুন মানাবে। সৌরভকে একটু ডাকো তো।

মাঃ সৌরভ! এই সৌরভ! নাস্তা রেডি, খেতে আয়।

(সৌরভ খেতে এল)

মাঃ শায়লা। শুনেছো নাকি, আতিফ সাহেবের ছেলের সাথে রাশেদ সাহেবের ছেলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

মামনিঃ তাই নাকি? ভালো খবর তো। শুনে খুব খুশি লাগছে ।

সৌরভঃ উনার ছেলের বিয়ে শুনে তোমার এতো খুশি লাগছে কেন?

মাঃ খুশির খবর শুনে কি খুশি লাগবে না? তোর সমস্যাটা কি?

সৌরভঃ তোমাদের সারাদিন ঐ একই টপিক, আজ এর বিয়ে, কাল ওর বিয়ে, পরশু ওর হলুদ, তরশু এর বাসর……… অন্য কিছু নিয়ে কথা বলতে পারো না?

মামনিঃ বিয়ে নিয়ে কথা বললেই তুই এমন করিস কেন? তোর কি কোন প্রবলেম আছে?

সৌরভঃ এসব বিয়ে টিয়ের ব্যাপারে আমার অনেক প্রবলেম আছে।

মামনিঃ ওহ মাই লর্ড! তাহলে কি আমার সব সন্দেহ সত্যি?

সৌরভঃ কিসের সন্দেহ?

মামনিঃ যে তুই…… তোর ঘর গোছাতে গিয়ে আমি আজ এই কমিকসটা পেলাম…… ‘শী’!

সৌরভঃ একটা কমিকস পাওয়া মানেই স্ট্রেইট হয়ে যাওয়া না।

মাঃ শুধু কমিকস তো তা না, তোর সিডি কালেকশনে একটা ম্যাডোনা বা লেডি গাগার কোন অ্যালবামও নাই। সব কি সব Guns n Roses, Metallica এই সব!

সৌরভঃ উফফ, তোমাদের যে কিসব ব্যাকওয়ার্ড চিন্তা ভাবনা। স্ট্রেইটরাও আমাদের মতো।

মাঃ মোটেই না, ওরা অ্যাবনরমাল। ওরা অসুস্থ। হেট্রোসেক্সুয়ালিটি ইজ অ্যান ইলনেস, একটা মানসিক সমস্যা!

মামনিঃ আচ্ছা শোন, এসব ফালতু তর্ক রাখ। সামনের রবিবারে আমার এক ফ্রেন্ড আসছে বিদেশ থেকে। আমি চাই তুই সেদিন বাসায় থাক।

সৌরভঃ তোমার ফ্রেন্ড আসছে, আমাকে বাসায় থাকতে হবে কেন? তুমি নিশ্চই আংকেলের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছো। তাই না?

মামনিঃ বিয়ে যদি দিতেই চাই, তাতে সমস্যা কি?

সৌরভঃ দেখো, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।

মামনিঃ বিয়ে না করলে জীবন কিভাবে কাটাবে, শুনি?

সৌরভঃ সেটা পরে দেখা যাবে।

মাঃ তোর যদি কোন পছন্দের ছেলে থেকে থাকে, তাহলে আমাদের আমাদেরকে সেটা বলতে পারিস।

সৌরভঃ আমি এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাইনা।

(সৌরভ স্টেইজ থেকে বের হয়ে গেল)

মামনিঃ তোমার কি মনে হয় ওকে একটা ডাক্তার দেখানো দরকার? আজকাল শুনছি ঔষধ খেলেই স্ট্রেইটরা গে হয়ে যায়।

মাঃ কি যে আবল তাবল বকছ!!!!!

(মামনি আর মা হেঁটে বেরিয়ে যাবেন)

দৃশ্য ৩

(MONOLOGUE REHEARSAL)

A guy is overacting, “কি পেয়েছি আমি একজন পুরুষ হয়ে? না সমাজে কোন রেসপেক্ট, না কোন শান্তি। এই জীবনটাই বৃথা।”

আবিদঃ উফ! কি ওভারঅ্যাকটিং! আর তারা বলে গে’রা নাকি ওভারঅ্যাকটিং করে।

সৌরভঃ উহু! ওভারঅ্যাকটিং এ গে’রাই সেরা। আরে এইগুলো কিছুই না। গ্রাইন্ডার এর গে’গুলা যে কি সব ড্রামা করে।

আবিদঃ কি ধরণের ড্রামা?

সৌরভঃ কতো ধরণের ড্রাম! আমি একদিন একজনের সাথে মিট করতে গিয়েছিলাম। আধা-ঘন্টা পরে সে আসলো। তারপরে কি যে attitude শুরু করলো আমাকে দেখে! কারণ আমার ছবিতে দাড়ি ছিল না, কিন্তু আসলে কেন দাড়ি আছে।

আবিদঃ হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে এক সেকেন্ডের মধ্যে রেসপন্স না করলে ১০টা মেসেজ করে দেয়। কি হল? তুমি আমার উপর রাগ করেছো? আমি কি কোন ভুল করে ফেলেছি? এই টাইপের মেসেজ।

সৌরভঃ আমি একদিন আরেকজনের সাথে কথা বলছিলাম। মিটিং এর আগে নানা প্রশ্ন শুরু করে দিয়েছে। কি ব্র্যান্ডের কাপড় পরছি, আন্ডারওয়্যার কোন ব্র্যান্ডের, ফোনের মডেল কি, ফেবারেট পারফিউমের ব্র্যান্ড কি। পরে পারফিউম পছন্দ হইনি দেখে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। আর জবাব নেই।

আবিদঃ কতো রকমের যে চিড়িয়া আছে! আশা করি তুমি ওরকম না।

সৌরভঃ আমার সাথে ডেটিং করলেই তুমি জানতে পারবে আমি কতো অদ্ভুত।

আবিদঃ তুমি কি আমার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছ?

সৌরভঃ একটু একটু

আবিদঃ চলো তাহলে একদিন ডেইটে যাই। দেখি তুমি কতো ভালো ড্রামা করতে পারো।

সৌরভ হাসছে।

SONG:

দৃশ্য

(আবিদের বাবা মা কথা বলছে)

আবিদের মাঃ শুনেছ কাল কি হয়েছে?

আবিদের বাবাঃ কি?

আবিদের মাঃ কাল পাশের বাসার ভাবী আবিদকে একটা ছেলের সাথে রাস্তায় ঘুরতে দেখেছে।

আবিদের বাবাঃ তো কি হয়েছে? হবে হয়তো ওর কোন ফ্রেন্ড।

আবিদের মাঃ ওর কি এখন ওই বয়স আছে যে রিকশায় করে অন্য ছেলেদের সাথে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবে? তুমি একটু ওর সাথে কথা বলতো

(আবিদ ঘরে ঢুকবে)

আবিদঃ আচ্ছা শোন, এই সপ্তাহে আমি কক্সবাজার যাচ্ছি

আবিদের বাবাঃ কক্সবাজার? কার সাথে?

আবিদঃ কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে।

আবিদের বাবাঃ ছেলে ফ্রেন্ড না মেয়ে?

আবিদঃ ছেলে ফ্রেন্ড

আবিদের মাঃ ৫/৬ টা ছেলে ফ্রেন্ড এর সাথে একা একা? ছি ছি ছি!

আবিদঃ আরে ধুর! ওরা জাস্ট আমার ফ্রেন্ড

আবিদের বাবাঃ কোন মেয়ে যাবে না সাথে?

আবিদঃ নাহ!

আবিদের বাবাঃ ছি ছি ছি! পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সবাই কি বলবে? ৫/৬ টা ছেলের সাথে একা একা কক্সবাজার যাচ্ছে। ছি ছি ছি!

আবিদঃ আরে কি বলছ তোমরা? ওরা জাস্ট আমার ফ্রেন্ড

আবিদের বাবাঃ না, তুই এভাবে কয়েকটা ছেলের সাথে একা একা যেতে পারবি না। সাথে অবশ্যই একটা মেয়েকে নিতে হবে। কোন মেয়ে ছাড়া তুই একা যেতে পারবি না। আর শোন, তুই ওইখানে অবশ্যই একটা মেয়ের সাথে এক রুমে থাকবি। বুঝেছিস?

আবিদঃ আমি এখন একটা মেয়ে কোত্থেকে জোগাড় করবো?

আবিদের বাবাঃ তা জানি না। যখন ছোট ছিলি তখন এসব ঠিক ছিল। এখন তুই বড় হয়েছিস। তোর বিয়ের বয়স হয়েছে। এখন এসব মানায় না।

আবিদঃ বিয়ের বয়স? আমি তো মাত্র ২৬!

আবিদের মাঃ হুম ২৬। গে দের জন্য এটাই উপযুক্ত বয়স। এই বয়স পার হলে তারা না থাকে টুইঙ্ক, না হয় সুগার ড্যাডী।

আবিদঃ উফফ

আবিদের মাঃ শোন, বিয়ে করে তোর হাসবেন্ডের সাথে যত খুশি ঘোরাঘুরি করিস। এখন না।

আবিদঃ সারাদিন শুধু বিয়ে, বিয়ে আর বিয়ে। ভাল্লাগে না আর। অসহ্য

আবিদের বাবাঃ বিয়ের বয়সে তো বিয়ে নিয়ে তো কথা হবেই। আচ্ছা শোন, তোর কয়েকটা ভালো ছবি দিস তো। তোর বাইওডাটায় দিতে হবে। আজকাল তো সবজায়গায়, ‘নো পিক-নো রিপ্লাই’ লিখে রাখে।

আবিদঃ উফফ, অসহ্য। আমি গেলাম

দৃশ্য

আবিদঃ উফ! বিশ্বাস করবা না আমার বাবা-মা আজকে কি করেছে। এক ফ্রেন্ডের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সৌরভঃ আমার বাবা-মা তো আমার জন্মের পর থেকেই এই চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আবিদঃ বাবা-মাকে কি আমাদের ব্যাপারে বলে ফেলবো?

সৌরভঃ এতো আর্লি? আমরা তো মাত্র ডেটিং শুরু করলাম। দুই মাসও হয়নি।.

আবিদঃ হুম। তাও ঠিক। আমাদের তো এইসব নিয়ে কোন কথাই হয়নি। আচ্ছা, বিয়ের পর কে কার বাসায় মুভ করবে?

সৌরভঃ আমার ফ্যামিলিতে মুভ করাটাই বেটার হবে। স্ট্রেইট ফ্যামিলির চেয়ে গে ফ্যামিলিতে মুভ করা ইজিয়ার হবে।

আবিদঃ দুই দুইটা শাশুড়ি! মানুষজন তো একটাই সামলাতে হিমসিম খায়।

সৌরভঃ কিন্তু একটা স্ট্রেইট ফ্যামিলিতে মুভ করলে আমার মা-মামণি খুবই মাইন্ড করবে।

আবিদঃ হুম… তাহলে তোমার বাসাতেই মুভ করি।

সৌরভঃ কিন্তু একটা সমস্যা, আমার বাসায় তোমার এইসব স্ট্রেইট সেমিনার ফ্রেন্ডরা আসতে পারবে না।

আবিদঃ ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ডই। এতে গে-স্ট্রেইটের কি আছে?

সৌরভঃ আমার কাছে নেই, কিন্তু আমার মা আর মামণি – ওরা খুবই কনজারভেটিভ।

আবিদঃ তাহলে আমার আত্মীয়স্বজন ?

সৌরভঃ তোমার আত্মীয়স্বজন আসুক ঠিক আছে কিন্তু আমাদের বাসার দাওয়াত এর থিম থাকে। থিম অনুযায়ী আসতে হবে।

আবিদঃ কি ধরণের থিম?

সৌরভঃ এই ধরো costume party, dr party, বন্ডেজ থিম এই সব আর কি!

আবিদঃ মানে? আমার স্ট্রেইট আত্মীয়রা এইসব থিমের পার্টিতে কিভাবে আসবে?

সৌরভঃ আসলে থিম অনুযায়ী আসতে হবে। গে আর লেসবিয়ানগুলো ড্রেস কোড নিয়ে খুবই স্ট্রিক্ট।

আবিদঃ Oh god…আচ্ছা, তো তোমার বাসায় আর কি কি রুলস আছে?

সৌরভঃ আর কোন রুলস নাই। তবে… আমাদের বাসায় প্রতি উইকে একটা থিমড পার্টি হয়। নতুন জামাই হিসেবে ওইটার অ্যারেঞ্জমেন্ট তোমাকে করতে হবে।

আবিদঃ প্রতি সপ্তাহে পার্টি?

সৌরভঃ মাঝেমধ্যে সপ্তাহে দুই বার ও হয়! আর কিছু লোক স্টে-ওভারও করে। তো বেডরুম ছেড়ে দিতে হবে।

আবিদঃ হায়! হায়! এরকম বাসায় মুভ ইন কড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এর চেয়ে আমরা আলাদা থাকি।

সৌরভঃ না! আলাদা থাকা আমার পক্ষে পসিবল না। আমার মা-মামণি খুবই মাইন্ড করবে।

আবিদঃ কিন্ত এইরকমভাবে আমি থাকতে পারবো না। আমরা বরং এই ব্যাপারে বাবা-মা’কে নাই বলি।

আবিদ আর সৌরভ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল।

আবিদঃ তোমার কি মনে হয় একটা স্ট্রেইট ফ্যামিলি আর গে ফ্যামিলি মধ্যে মিল হইয়াটা সম্ভব না?

সৌরভঃ হুম। আমার এইরকমই মনে হচ্ছে। আমাদের লাইফস্টাইল একটু বেশী ভিন্ন।

আবিদঃ তাহলে আমাদের কি করা উচিত?

সৌরভঃ আমার মনে হয় আর সামনে আগানোর চেয়ে আমাদের একটু ভেবে দেখা উচিত।

আবিদঃ হুম। আমারও তাই মনে হচ্ছে।

দৃশ্য

ABIR is talking on the phone with a friend.

আবিদঃ বুঝচ্ছি না, দোস্তো। সৌরভ কে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছে না। কিন্তু ওর ফ্যামিলির সাথে থাকা খুবই… কি যে করবো? আমার বাবা-মাও ওদের পছন্দমতো ছেলে বিয়ে না করলে খুবই রাগ করবে। কিছু নতুন মানুষ মিট করে দেখি।

(ABIR and SOUROBH meets some guys)

Abid is talking to someone (লোক১)

লোক ১: তোমার প্রোফাইলটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। মনে হল তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি।

আবিদঃ শিউর!

লোক ১: So what are you looking for?

আবিদঃ Nothing serious. এমনেই ঘুরছি।

লোক ১: আমিও কিছুই খুঁজছি না। এমনেই বসেবসে প্রোফাইল ঘাঁটি। মজা লাগে।

আবিদঃ মানে?

লোক ১: আমি আসলে married to a guy. মাঝেমধ্যে গল্প করতে আসি। ভালোই লাগে।

আবিদঃ ওহ! কিন্তু আপনার হাসব্যান্ড মাইন্ড করবে না তো?

লোক ১: না। মাইন্ড করবে কেন? আমি তো দেখা করি না, শুধু ছবিএক্সচেঞ্জ।

আবিদঃ মানে, শুধু ছবি এক্সচেঞ্জ?

লোক ১: আর মাঝেমধ্যে স্কাইপি তে দেখা করি। কিন্তু এমনে দেখা করি না।

আবিদঃ স্কাইপি না করে এমনে দেখা করলেই তো হয়।

লোক ১: ছি ছি। আমি তো ম্যারিড। আমার হাসব্যান্ড কি মনে করবে?

আবিদঃ আপনি তো সবই করছেন তাহলে আপনার হাসব্যান্ড কি কিছু মনে করে না?

লোক ১: না, আমি তো ফিজিক্যালি কিছু করছি না। আর ইমোশনালিও না। তো, কিছু মনে করার কি আছে। তো, তোমার একটা ছবি পাঠাও।

আবিদঃ না। আমি এইসব ছবি পাঠাই না। নট ইন্টারেস্টেড।

লোক ১: আরে! খামাখা টাইম ওয়েস্ট করলা কেন তাহলে? তোমাকে দেখে ভাবি নাই যে তুমি এইরকম একটা টাইম ওয়েস্টার।

আবিদঃ উফ! আল্লাহ্‌! বাই

SCENE B

লোক ২: হ্যালো হ্যান্ডসাম।

সৌরভঃহ্যালো।

লোক ২: তুমি অনেক হ্যান্ডসাম। আমার সাথে ভালো মানাবে।

সৌরভঃ বুঝলাম না।

লোক ২: মানে, আমার আর তোমার ভালো জমবে। We are both good looking.

সৌরভঃ Umm, thanks, I guess.

লোক ২: আমি তোমাকে আমার কয়েকটা মডেলিং এর ছবি দেখাই। বোলো তো সবচে বেস্ট কোনটা!

সৌরভঃ আরে না! আমরা বরং কিছুক্ষণ কথা বলি।

লোক ২: ওকে। তোমাকে আমার মডেলিং এর কিছু গল্প শুনাই…

সৌরভঃ আমম, আচ্ছা ঠিক আছে। শুনান।

লোক২: সো, আজকে সকালে আমার একটা শ্যুট ছিল। সো ফার্স্টে আমি ফেসিয়াল করলাম, তারপরে আমার মেকআপ আর্টিস্ট এসে আমাকে ফাউন্ডেশন দিয়ে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ…

সৌরভঃ আমম, অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি?

লোক ২: তাহলে তোমাকে আমার জিমের রুটিনটা শুনাই? সো, আমি প্রতিদিন সকালে…

সৌরভ: আমম, আমার একটা ফোন এসেছে। আমি একটু যাচ্ছি…

লোক ২: ওকে। কিন্তু তাড়াতাড়ি এসো। আমার আরও অনেক ইন্টারেস্টিং স্টোরি আছে।

SCENE C

SOUROBH is talking to someone. (লোক৩)

সৌরভঃ হ্যালো।

লোক ৩: Hi.

সৌরভ; সো, তুমি কি করো?

লোক ৩: উফফ, কি চিজি লাইন। কিছু ইন্টারেস্টিং বলা যায় না?

সৌরভঃ আমম, কি বলবো। তোমার প্রোফাইল পিকচারটা সুন্দর।

লোক ৩: সরি, তোমার ব্যাপারে একই কথা বলতে পারলাম না।

সৌরভঃ কেন, আমার ছবিতে কি সমস্যা?

লোক ৩: কোথায় স্টার্ট করবো, এরকম শার্ট তো আজকালকার রাস্তার ছেলেরাও পরে না। আর একটু দামি মোবাইলের ছবি হলেও হইত।

সৌরভঃ মাই গড! তোমার attitude এ অনেক সমস্যা।

লোক ৩: আমার attitude এ সমস্যা? তুমি নিজেকে কি মনে করো? পরসো একটা ১০০টাকার শার্ট। at least একটা ভালো ছবি তুলে তারপরে মানুষের সাথে কথা বলতে আসো।

সৌরভঃ আরে, তুমি কি পাগল নাকি?

লোক ৩: আমি পাগল? কি পাগলামি করলাম? (starts crying)। তুমি আমাকে কিভাবে এইটা ক্যামনে বলতে পারলা। আমি খুবই হার্ট হয়েছি। প্লিজ সরি বোলো।

সৌরভঃ আমি কেন সরি বলবো? আচ্ছা বাবা, সরি।

লোক ৩: It’s okay. ভালো হয়ে যাও। ভালো হতে পয়সা লাগে না। তোমার অবশ্য পয়সা যে নাই সেটা বুঝাই যাচ্ছে।

সৌরভঃ ওহ মাই গড! প্লিজ পাবনা গিয়ে চিকিৎসা করাও।

সৌরভ উঠে গিয়ে চলে যাবে।

লোক ৩: পাবনা! How dare you? এতো LS জায়গা!

SCENE D

ABIR is talking to someone.(লোক৪)

আবিদঃ তোমার সাথে পরিচিত হতে পারি?

লোক ৪: কিছু মনে করেন না, কিন্তু আপনার প্রোফাইল পিকটা খুবই সুন্দর।

আবিদঃ আপনার ছবিটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

লোক ৪: শুধু ছবি না, আপনাকেও খুবই ভালো লেগেছে। আপনার কি রিলেশন আছে?

আবিদঃ না, আসলে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।

লোক ৪: আপনার এই ব্যাপারটাই আমার সবচে ভালো লাগে। যে আপনি ওনেস্ট…

আবিদঃ আমি তো কিছুই বলি নাই।

লোক ৪: উফ, আপনি এতো ভালো কেন? আপনার মতো এরকম কাউকে যে গ্রাইন্ডার এ পাবো আমি কল্পনাই করি নাই। আমি খুব লাকি।

আবিদঃ আরে, আপনার সাথে তো আমার কথা হল না, তার আগেই ভালো লেগে গিয়েছে? আপনি তো আমাকে দেখেননি, মিট করেননি, এইটা অসম্ভব!.

লোক ৪: তো কি হয়েছে? এইযে কথা হল আপনার সাথে। আমার মনে হয় আমি আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। I love you.

আবিদঃ অফিস থেকে আমার একটা ফোন এসেছে…

লোক ৪: ওকে। আমি আপনাকে অনেক মিস করবো। প্লিজ তাড়াতাড়ি করেন।

SCENE: E

আবিদঃ আরে, তুমি অনলাইনে?

সৌরভঃ এই আর কি! দেখতে আসলাম চারপাশের কি অবস্থা।

আবিদঃ কেমন লাগলো দেখে?

সৌরভঃ খুবই বাজে। দিনদিন মানুষের কোয়ালিটি আরও বাজে হচ্ছে।

আবিদঃ আসলেই, তো তোমার আর কি খবর। তোমার মা-মামণি আচে কেমন?

সৌরভঃ হুম, ওরা ভালোই আছে। আচ্ছা শুনো, আমার এইসব আর ভালো লাগছে না।

আবিদঃ কি সব।

সৌরভঃ এই পাগলদের সাথে কথা বলা। আমার মনে হয় আমরা একটু ভুল করে ফেলেছি।

আবিদঃ হুম, আমারও তাই মনে হচ্ছে।

সৌরভঃ তুমি সেদিন বলেছিলে যে মা আর মামণিকে আমাদের ব্যাপারে বলবো কিনা। চলো, বলেই ফেলি।

দৃশ্য

(দু’পরিবারের সাক্ষাত এবং কথোপকথন, আবিদ তার বাবা মা কে নিয়ে সৌরভের বাসায় এসেছে)

সৌরভের মাঃ আসুন, ভেতরে আসুন।

আবিদের মাঃ তা, আপনারা কেমন আছেন?

সৌরভের মাঃ এই আছি আর কি। আপনারা কেমন আছেন?

আবিদের মাঃ আমরাও ঐ আছি আর কি।

সৌরভের মাঃ আসতে কোনও অসুবিধে হয়নি তো?

আবিদের বাবাঃ না না, আসতে কোনও অসুবিধে হয়নি আমাদের। আ আ আ আ …..ম তাহলে আসল কথা শুরু করা যাক, নাকি?

মামনিঃ হুমম…… শুরু করেন। কি বলতে চান।

আবিদের বাবাঃ আপনাদের ছেলে, সৌরভ। ওকে আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। খুবই ভালো ছেলে।

মামনিঃ দেখতে হবেনা, কোন পরিবারে বড় হয়েছে ? ভালো তো হবেই।

আবিদের বাবাঃ খুবই সুন্দর আপনাদের পরিবার।

মামনিঃ সে তো বটেই। আর সে কারনেই তো টেনশন হচ্ছে। আপনাদের মতো পরিবারে আমার ছেলে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে তো?

আবিদের বাবাঃ আমাদের পরিবার আর আপনাদের পরিবারে কোনও পার্থক্য নেই। সৌরভ খুব ভালোই মানিয়ে নেবে।

মাঃ পার্থক্য নেই মানে? আমরা কি আপনাদের মতো এমন নাকি?

মামনিঃ আরে থামো, আমরা উনাদের সাথে আলাপ করতে বসেছি, ঝগড়া করতে না।

আবিরের বাবাঃ এমন মানে?

মাঃ এ্মন মানে এমনই, একটা পুরুষ মানুষ আর একটা মহিলার যে কি সংসার হয় কে জানে? দু জনের মেন্টালিটি কত্ত ডিফারেন্ট। একজন তো আর একজনকে বুঝতে পারারই কথা না। এর মধ্যে আমার ছেলে! উফফ…… চিন্তা করলেই মাথা ধরে যাচ্ছে

আবিদের মাঃ আপনারা কি আমাদের অপমান করতে এখানে ডেকেছেন?

সৌরভের মাঃ আমরা ডেকেছি বলে তো মনে পড়ছেনা। আপনারাই তো মিটিং ঠিক করে চলে এসেছেন।

আবিদের বাবাঃ আমার মনে হচ্ছে এই বিয়েতে আপনাদের মত নেই। না থাকলে আগেই বলতেন। খামোখা কথা বাড়াতাম না।

মামনিঃ আমরা তো কখন থেকেই ইঙ্গিত দিচ্ছি। কিন্তু আপনাদের মত সাধারন পরিবারের মানুষজন কি আর সে ইঙ্গিত ধরতে পারে?

আবিদের মাঃ এই চলো তো, অনেক হয়েছে। আর পারছিনা।

আবিদের বাবাঃ হ্যাঁ, তাই চলো। এমন রক্ষণশীল পরিবারে আবিরের না আসাই ভালো।

(আবিদের মা-বাবা চলে যাবেন)

মামনিঃ উফফ, স্ট্রেইট ফ্যামিলি গুলো যে কি ভাবে নিজেদের!? দেখলে? কিভাবে আমাদের ইনসাল্ট করে গেল?

মাঃ হ্যাঁ, আমার ছেলেটার পুরো জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেত ঐ ফ্যামিলিতে গেলে………

দৃশ্য

(সৌরভ নাস্তা খাচ্ছে)

মামনিঃ শোন, কাল আমার এক ফ্রেন্ড তোকে দেখতে আসবে। তুই বাসাতে থাকিস।

সৌরভঃ আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না

মামনিঃ শোন, তুই আমাদের উপর এত রাগ করছিশ কেন? আমরা তো ঠিকমতই কথা শুরু করেছিলাম। উনারাই তো কথার মাঝখানে উঠে চলে গেল।

সৌরভঃ ওদের অসুস্থ বললে ওরা তো উঠে চলে যাবেই

মামনিঃ আর কতবার এক কথা বলবি? যারা অসুস্থ তাদের তো তাই বলতে হবে। তুই জানিস ওরা কতটা অদ্ভুত? ওদের ছেলে মেয়েরা পরিচয় ছাড়াই বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পর ফার্স্ট টাইম কিস করে।

মাঃ হুম, সেক্স এর ব্যাপারে ওদের কি অদ্ভুত আচরণ। সারাদিন টিভিতে শিলা কি জাওয়ানি দেখে আর কোন মেয়ে একটু শর্ট ড্রেস পরলেই ছি ছি করতে থাকে। কি অদ্ভুত!

সৌরভঃ আরে আবিদের মা বাবা মোটেও ওরকম নয়। উনারা খুবই শিক্ষিত আর উদার মনমানুষিকতার মানুষ।

মাঃ এতই যদি শিক্ষিত হবে, তাহলে কেউ কি এমন জীবনাচরণ বেছে নেয়?

সৌরভঃ কেউ শখ করে হেটারসেক্সুয়াল হয়না মা। তোমরা যেমন জন্ম থেকেই গে, ঠিক তেমনি ওরাও জন্ম থেকে হেটারসেক্সুয়াল। তোমাদের এইসব ভুল ধারনা মাথা থেকে সরান উচিৎ

মামনিঃ তোকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ানই আমাদের ভুল হয়েছে। কি যে সব আবোল তাবোল বকছিস! এরপর কোনদিন বলবি ওদেরও আমাদের মত সব বিষয়ে সমান অধিকার থাকা উচিৎ।

মাঃ শোন, এইসব কথা আমাদের বলছিশ ঠিক আছে। কিন্তু ভুলেও এসব অফিসে আলাপ করতে যাস না।

সৌরভঃ উফফ, আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না

মামনিঃ যা হবার হয়েছে। শোন, কাল তুই বাসায় থাকিস। হাফিজ সাহেবের ছেলে মফিজ আসবে। ওদের ফ্যামিলি খুবই ভালো। উনার বড় ছেলে একজন ফ্যাশান ডিসাইনার, মেঝ ছেলে সিনেমার মেকাপ আর্টিস্ট। কি প্রতিষ্ঠিত ফ্যামিলি!

সৌরভঃ শোন, আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি বলে এখনও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিনা। আমাকে জোর করো না। (সৌরভ উঠে যাবে)

মামনিঃ ছেলের সাহস দেখেছ? আমাদের হুমকি দিয়ে চলে গেল! দাড়াও আমি ওর ব্যাবস্থা করছি।

মাঃ আমার এসব ভালো লাগছে না। ছেলেটা দুই সপ্তাহ ধরে কিছু ঠিকমত খাচ্ছে না। সারাদিন মনমরা হয়ে ঘরে বসে থাকে। এখন আবার পালিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছে। আমার বিষয়টা একদম ভালো লাগছে না। আমি আমার ছেলেকে হারাতে চাই না।

মামনিঃ তাহলে তুমি কি চাও? ওই স্ট্রেট লোকজন আমার বেয়াই বেয়াইন হবে? এটা শুনলে আমার বাবা আর ডেডী আত্মহত্যা করবে।

মাঃ ওই দুই বুইড়া মরলেই তো আমি বাঁচি। ওদের যন্ত্রণায় আমার জীবন শেষ। ওদের জন্য আমি আমার ছেলেকে হারাতে পারবনা।

মামনিঃ আসলেই। আমারও একটু চিন্তা হচ্ছে। আমরা বরং আবিদের বাবা-মা’র সঙ্গে আরেকবার কথা বলি। কিন্তু আমাদের কথা কি উনারা শুনবে?

মাঃ আমাদের মত উঁচু ফামিলিতে উনাদের ছেলে আসবে … বুদ্ধি বিবেচনা থাকলে নিশ্চয়ই উনারা বিষয়টা ভেবে দেখবে।

দৃশ্য

(সৌরভের মা মামনি আবিদদের বাসায় আসবে)

মামনিঃ আপনারা কেমন আছেন?

আবিদের বাবাঃ আমরা অসুস্থ মানুষজন। কেমন আর থাকব!

সৌরভের মাঃ তা ঠিক

আরে না না, ঠিক তা না। আমরা আসলে আপনাদের ভুল বুঝেছিলাম। তাই সেদিন কথা বলতে গিয়ে একটু ওলট পালট করে ফেলেছিলাম।

আবিদের মাঃ এসব কথা থাক। আপনারা কি জন্য এসেছেন?

সৌরভের মাঃ আসলে আমাদের ছেলেটা অনেক মন মরা হয়ে আছে। তাই আমরা ভাবছিলাম ওদের বিয়ের বিষয়টা নিয়ে আমরা যদি আরেকবার আলাপ করে দেখি…

আবিদের মাঃ আপনাদের মত পরিবারে আমার ছেলের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে আমাদের কোনই আগ্রহ নেই।

মামনিঃ আমাদের মত পরিবারে? কি বলতে চান আপনি?

সৌরভের মাঃ আরে আরে থামো। আমরা খুবই দুঃখিত সেদিন আপনাদের অপমান করবার জন্য। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি।

আবিদের বাবাঃ আসলে আমরাই ভুল বুঝেছিলাম। আমাদের ছেলেকে আপনারা কখনই পুরোপুরি মেনে নেবেন না। এখন আপনাদের ছেলে মন খারাপ করে আছে বলে আজ আপনারা আমাদের কাছে এসেছেন কিন্তু বিয়ের পরে দেখা যাবে আমাদের ছেলেকে আপনারা ছোট চোখে দেখছেন। এর চেয়ে ভালো এই বিয়ে নাই হোক।

মামনিঃ না, আসলে আপনাদের ছেলেকে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। অন্য স্ট্রেট পরিবারের ছেলেদের মত না।

আবিদের মাঃ আরে? আপনি আবার আমাদের আপমান করছেন?

সৌরভের মাঃ আপনারাই বা বারবার এমন অপমানিত হচ্ছেন কেন? মনে হচ্ছে আপনারা একটু ইন্সিকিউর।

আবিদের বাবাঃ উফফ, আমরা আর ঝগড়া না করি। এই বিয়েতে আমাদের মত নেই। দুঃখিত! (আবিদের বাবা মা বের হয়ে যাবে)

মামনিঃ কি হল কিছু বুঝলাম না, এরা আবার রাগ করে চলে গেল!

সৌরভের মাঃ এই স্ট্রেট লোকজনরা এত্ত নাটক করতে পারে, কি আর বলব! অসহ্য!

দৃশ্য ১০

সভাপতিঃ আজকের সেমিনারে আপনাদের আসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আগামী পহেলা বৈশাখে প্রথমবারের মতো একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট র্যারলি করবো। আপনাদের কি মনে হয়?

ব্যক্তি১: এই ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট র্যাটলিতে কি হবে?

সভাপতিঃ খুবই বোরিং টাইপের একটা র্যাঅলি হবে। এই গেগুলো এতোই কালারফুল, এরমধ্যে এই বোরিং কালারের র্যা লিটা মানুষজনের চোখে পড়বে। এতে আমাদের ভিজিবিলিটি বাড়বে।

আবিরের বাবাঃ খুবই ভালো আইডিয়া। কিন্তু আমাদের তো লোকজন খুব কম। এতো কম মানুষজনকে দিয়ে কিভাবে হবে?

হঠাৎ, সৌরভের মা আর মামণি আসবে।

মামণিঃ আমরা ইন্টারেস্টেড আপনাদের র্যােলিতে জয়েন করার জন্য।

আবিরের বাবাঃ আপনারা এইখানে কি করছেন!

সৌরভের মাঃ আমরা আপনাদের সাপোর্ট করতে এসেছি।

আবিরের মাঃ প্লিজ! আমাদের সেমিনারে এসে এইসব ড্রামা করবেন না।

সভাপতিঃ কি ব্যাপার! কি হচ্ছে এইখানে?

আবিরের মাঃ উনারা খুবই নিচু মন মানসিকতার লোকজন। উনারা আমাদের অনেক অনেক অপমান করেছে। কিন্তু আজকে উনাদের ছেলে রেগে আছে দেখে, এইসব নাটক করছে।

মামণিঃ না ভাবী! আমরা আসলেই খুবই দুঃখিত।

সৌরভঃ মা! তোমরা খামোখা উনাদের সেমিনারে নাক গলাতে যেও না।

সভাপতিঃ আমার মনে হচ্ছে উনারা আসলেই অনুতপ্ত।

আবিরের বাবাঃ আপনি র্যামলির মানুষ বাড়ানোর জন্য খামোখা এইসব বলছেন।

সভাপতিঃ দুইজন র্যাছলিতে বাড়াতে চাওতে কি দোষ? আমার মনে হয় আমাদের চান্স দেওয়া উচিত। সবাই যেভাবে ভাবে সে একই চিন্তাধারণায় তারা আটকা পড়ে গিয়েছিলেন. চিন্তাধারা বদলাতে হলে জানতে হবে, আর জানতে হলে আমাদেরকে উনাদের…

আবিরের বাবাঃ উফফ, থামান এই লেকচার! ফাইন! উনারাও জয়েন করুক আমার কোন সমস্যা নাই।

সৌরভঃ আংকেল, আমার মনে হয় আমার মা আর মামণি আসলেই অনুতপ্ত। তা না হলে উনারা স্ট্রেইট কোন অনুষ্ঠানে কখনই আসতো না।

ব্যক্তি১: আমার মনে হয় আমাদের সাথে উনারা কিছুদিন কাজ করুক। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো উনারা কি আসলেই আমাদের বুঝতে পারছে কি না।

আবিরের বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আইডিয়াটা খারাপ না।

মাঃ Thank you. আপনারা আসলেই অতো খারাপ না যতটুকু ভেবেছিলাম।

মামণিঃ না, না। মানে… ও এইটা মিন করেনি।

আবিরের মাঃইটস ওকে, ভাবী। নিজেদের বদলে নিতে তো একটু সময়লাগবেই।

মামণিঃ আসলেই, আপনারা অনেক ভালো মানুষ। আমরা আপনাদেরকে ভুল বুঝতেছিলাম। আমার ছেলে আপনাদের ফ্যামিলিতে ভালোই থাকবে।

সৌরভঃ Thank you, মা আর মামণি।

সভাপতিঃ তাহলে আপনারা কি আমাদের ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট র্যাভলিতে জয়েন করবেন?

মামণিঃ আমার ক্লসেট তো ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট স্যুটে ভরা!

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.