
লেখক :- অনির্বাণ অহমেদ
বায়োলজিক্যালি আদর্শ মেল বা ফিমেল বলে কিছু নেই অর্থাৎ আমরা কেউই ১০০% নারী কিংবা পুরুষ নই। আমাদের সুবিধার জন্য আমরা ক্লাসিফিকেশন করি মেল,ফিমেল বা কখনো কখনো কমনজেন্ডার। আমরা কেবলই একটা স্পেক্টার্মের কোন এক জায়গায় অবস্থান করছি। তবে আমাদের অবস্থানটা কোথায় সেটা আমরা জানিনা।
যৌন অভিমুখিতার ক্ষেত্রেও একই রকম কেউই শতভাগ সমকামী বা বিষমকামী নই। একটা স্পেক্টার্মের কোন এক জায়গায় আমরা অবস্থান করছি, সেই অবস্থানটা আমরা কেউই জানিনা।
আবার বায়োলজিতে Sex, Reproduction, Coitus সবগুলোই আলাদা আলাদা টার্ম। যদিও আমরা আগে থেকেই জানি sex এবং reproduction দুইটা আলাদা জিনিস। তবে Coitus বিষয়টা বেশিরভাগরই অজানা ।
আমরা সমকামীরা বা একই লিঙ্গের মধ্যে যৌনসঙ্গম বলতে গেলে কখনোই Sex করছিনা, (এখানে যৌন ক্রিয়া হিসাবে sex কে দেখা হচ্ছে)।আমরা সমকামীরা যা করছি সেটা হচ্ছে Coitus। Coitus হচ্ছে সেক্সুয়াল প্লিজার যা হতে পারে Sex, reproduction এবং শুধু মাত্র sex pleasuer।
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে সমকামীদের মাঝে কিভাবে Sex হচ্ছে না? এবার দেখতে হবে Sex আসলে কী, বায়োলজিতে Sex কে কিভাবে ডিফাইন করা হয়েছে। যদি বায়োলজির দিক দিয়ে Sex কে দেখা হয় তালে sex হচ্ছে “genetic metariel exchange” অর্থাৎ জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এক্সচেইঞ্জ হলেই সেটা বায়লোজিক্যালি Sex হবে।
এখন সমকামিতায় জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এক্সচেইঞ্জ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই, তায় বায়লোজিক্যালী সমকামীরা সেক্স করছে না, যা করছে সেটা হলো Coitus। Coitus যা সমকামী, বিষমকামী অন্য আর যতো যৌন ক্রিয়া আছে সবার মাঝেই বিদ্যমান।। এবং অন্যান্য অনেক প্রানীতেই আছে যারা সেক্স করে শুধুমাত্র আনন্দের জন্য, সেটাই হচ্ছে Coitus।
আমরা যে সমাজে বাস করছি এখানে সমকামীদের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে স্বাভাবিক ভাবে না নেওয়ার প্রধান কারণ গুলোর অন্যতম হচ্ছে এই যৌনতায় সন্তান উৎপাদন না হওয়া অর্থাৎ বংশপরম্পারায় পূর্ব প্রজন্ম থেকে উত্তর প্রজন্মে জিন সঞ্চালন না হওয়াটা।
আর এর ভিত্তিতেই আমরা বিচার করছি কোনটা প্রাকৃতিক আর কোনটা প্রাকৃতিক নয়!
অথচ সেক্স এবং রিপ্রোডাকশন দুটোই পুরোপুরি আলাদা জিনিস। সেক্সের সাথে রিপ্রোডাকশনের কোন সম্পর্ক নেই। প্রানী জগতে এমন হজার হাজার প্রাণীর উদাহরণ দেখা যাবে যারা যৌনজনন করে না, অযৌন জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। আবার অনেক প্রানী আছে যারা অযৌনজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে কিন্তু শারিরিক যৌন সঙ্গমেও লিপ্ত হয়। এই যৌন সঙ্গমে কখনো রিপ্রোডাকশন হয়না তারপরেও এই ধরনের আচরণ তারা করে যাচ্ছে। মানুষ বা প্রাইমেট প্রজাতির প্রাণীরা সেক্স করে প্রজাতি বাড়ানোর জন্য না বরং আনন্দ উপলব্ধির জন্য। সেক্স মানুষের একটা জৈবিক কাজের মতোই খাওয়া, ঘুম এর মতোই সাধারণ। এর সাথে রিপ্রোডাকশনের কোন সম্পর্ক নেই।। যদি সম্পর্ক থাকতোই তাহলে মানুষ একজীবনে শত বাচ্চা প্রসব করতো। প্রকৃতিতেও পার্থেনোজেনেসিস নামে কিছু সৃষ্টি হতো না।
আমরা যদি পৃথিবীর একেবারে আদিমতমো সময়ে ফিরে যায় তাহলে দেখতে পাবো সেই সময়ের প্রাণীদের কোন কোষ বিভাজন ছাড়া অন্য কোন উপায়ে বংশবিস্তার করতে পারতো না। তারপরে প্রাণীগুলো একই দেহে পুং লিঙ্গ এবং স্ত্রী লিঙ্গ ধরণ করা শুরু করলো তখনও সেক্স বংশ বিস্তারের জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো না। তারও কয়েক বিলিয়ন বছর পরে প্রাণীদের মাঝে সেক্স করাটা অনেক বেশি পরিমাণে দেখা গেলো। এখন বলতে গেলে বেশির ভাগ প্রাণী যৌন জননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করছে। এর একটা বিবর্তনীয় কারণ হতে পারে যৌন জননের মাধ্যমে প্রজাতি টিকে থাকার সুবিধা পায়।। আর এই যৌনতার উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রজাতি নিজের ভিতর ভালোবাসার দৃঢ়তা, একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা।
৭০ এর দশকে জাপানী ম্যাকাক নিয়ে গবেষনা করার সময় যখন বায়োলজিস্ট লিন্ডা উলফ, ম্যাকাকদের মধ্যে সমলিঙ্গ আচরনের কথা উল্লেখ করেন। তখনকার সময়ে এটাই প্রথম আবিষ্কার ছিলো প্রাইমেটদের মাঝে সমকামি আচরণ। এটাতে বেশির ভাগ মানুষই অখুশি হয়েছিলো। এর পরে একে একে আরো বহুত প্রজাতিতে সমকামিতার বিষয়টা সামনে চলে আসে। প্রকৃতিতে ছোট মাছি থেকে শুরু করে মানুষের মতো সামাজিক জীব ডলফিনেও ব্যাপক পরিমানে সমকামিতা দেখা যায়। প্রকৃতি ক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে বড় প্রজাতিতেও এই প্রবণতা আছে। যদি এর কোন বিবর্তনীয় সুবিধা না থাকবে তাহলে এই ব্যাপক পরিমানে জীবের মাঝে সমকামিতা সংগঠিত হতো না।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে সংখ্যগুরুরা যা বলবে তায়ই সন্টান্ডার্ড হিসেবে মেনে নেওয়া। প্রকৃতি টিকে আছে ভালোবাসার উপর এই ভালোবাসাকে রুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই।। মানুষ সৃষ্টির সেরা না। বিজ্ঞানের চোখে কোন আশরাফুল মাখলুকাত নেই, সবই বিবর্তনের ফসল।
মানুষকে শুধুমাত্র প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।