
লেখক :- অনির্বাণ আহমেদ
শনি :-
——————————-
সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনি। মায়াবী বলয় আর অস্বাভাবিক সৌন্দোর্য নিয়ে আকাশের গায়ে জ্বল জ্বল করছে। এটিই সেই গ্রহ যাকে পৃথিবী থেকে সবচাইতে দূরে খালি চোখে দেখায় যায়। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ শনি গ্রহের সাথে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব থেকেই ব্যাবিলনীয় এবং দূরপ্রাচ্যের মানুষেরা একে চিনতো। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও, আবারো শনিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলেন। গ্রিক পুরানের দেবতা ইউরেনাসের পুত্র এবং দেবতা জিউসের পিতা ‘ক্রোনাস’ এর নাম অনুসারে গ্রিসে এই গ্রহের নাম রাখা হয় ‘ক্রোনাস’। পরবর্তিতে রোমানরা ক্রোনাস নাম বদলে ‘স্যাটার্ন’ নাম দেয়। ভারতীয় উপমহাদেশে একে ‘শনি’ বলে ডাকা হয়। সনাতন পূরাণ মতে ‘শনি’ সূর্য দেবের পুত্র এবং নবগ্রহের অন্যতম একটি গ্রহ।
শনির প্রকৃতি :-
——————–
শনিও বৃহস্পতি গ্রহের মতো একটি গ্যাস জায়ন্ট। এর প্রধাণ উপাদন হলো হাইড্রোজেন,হিলিয়াম,মিথেন ইত্যাদি। শনির ঘনত্ব খুবই কম,পানির ঘনত্বের ০.৭ গুণ, মানে পুরোটা শনি গ্রহকে পানিতে ডোবালে তা ভেসে উঠবে। তবে এর আবর্তন বেগ অনেক তীব্র। ফলে দিনের দৈর্ঘ্যের স্বল্পতা অনেক কম। শনি সৌর জগতের সবচাইতে চ্যাপ্টা গ্রহ। শনির বায়ুমন্ডল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম সমৃদ্ধ এবং কিছু পুঞ্জিভূত মেঘের আস্তরণ দ্বারা গঠিত। সবচেয়ে উপরের স্তরে অ্যামোনিয়া বরফ দিয়ে ঢাকা। সামান্য মিথেন থাকে তা সূর্যের আলোয় ভেঙে অ্যাসিটিলিন,ইথেন ও প্রপেন তৈরী করে। শনির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। ভেতরের দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বেশি।আর কেন্দ্রের দিকে তাপমাত্রা অনেক বেশি।এক নজরে
শনি :-
———————–
সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে শনি গ্রহের অবস্থান ষষ্ঠ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ১৪,২৭০ লক্ষ কিলোমিটার। গ্রহের ব্যাস ১,১৯,৩০০ কিলোমিটার।সূর্যকে ঘুরে আসতে সময় লাগে ২৯.৪৫৭ বছর।নিজের অক্ষে একবার পাক খেতে সময় লাগে ১০ ঘন্টা ১৪ মিনিট। এর ভর পৃথিবীর ভরের ৯৫ গুণ। উপগ্রহের সংখ্যা ৬২ টি, তবে ক্ষুদ্র উপগ্রহ আরো শতাধিক রয়েছে।
শনির বলয় :-
——————
গ্যালিলিও প্রথম শনিকে দেখেছিলেন ১৬১০ সালে। অস্পষ্ট একটা চাকতির দুইপাশে দুটি আলোক বস্তু দেখতে পান। গ্যালিলিও এদেরকে তিনটি গ্রহ মনে করেছিলেন এবং তার ছবিও আঁকেন। পরবর্তিতে ১৬৫৫ সালে বিজ্ঞানী হাইগেন্স আবিষ্কার করেন গ্রহটির চতুর্দিকে রিং বা চক্র গুচ্ছ রয়েছে। তবে চক্রগুলোর পুরত্ব কম, কিন্তু দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। ১৬৭৫ সালে জিডি ক্যাসিনি লক্ষ করেন চক্রগুলো শুন্যস্থান দিয়ে বিভক্ত। পর পর দুইটি বলয় বা চাকতির মাঝে বিশাল শূন্যস্থান।সবচাইতে বড় শুন্যস্থানটিকে বলা হয় ‘ক্যাসিন ডিভিশন’। ১৮৯৫ সালে ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল দেখান চক্রগুলো কঠিন চাকতি নয়। এগুলো মূলত বরফ ও কার্বোনেসাস ধূলি দিয়ে তৈরি, অগণিত কণা, পাথর সমন্বয়ে গঠিত।
শনিতে অভিজান :-
——————-
১৯৭৩ সালে উৎক্ষেপন করা হয় পায়োনিয়ার-১১। এটি শনি গ্রহের অঞ্চলে পৌঁছায় ১৯৭৯ সালে। পায়োনিয়ার -১১ তখন শনির ১৭৬০ কিলোমিটার দূরে দিয়ে তার পাশ কেটে যাাওয়ার সময় প্রচুর ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠায়।এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা শনি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারে। এরপর ভয়েজার -১ শনিগ্রহের অঞ্চলে পৌছায় ১৯৮০ সালে আগস্ট মাসে, অক্টবারের শেষ পর্যন্ত ৬০ টি করে ছবি পাঠায়। তারপর ভয়েজার-২ শনিগ্রহের আলোকচিত্র পাঠায় ১৯৮১ সালে।১৯৯৬ সালে শনির উদ্দেশ্যে ‘ক্যাসিনি’ নামে আরেকটি নভোযান উৎক্ষেপন করা হয়। সেটি শনির এলাকায় পৌঁছায় ২০০২ সালে। যা ২০১৭ সালে ১৩ বছর ধরে কাজ করে, শনির বুকে অন্তিম যাত্রা করে।
শনির উপগ্রহ :-
——————–
শনির উপগ্রহের সংখ্যা ৬২। এর মধ্যে নাম দেওয়া হয়েছে ৫৩ টি উপগ্রহের।শনির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হলো টাইটান।এর ব্যাস ৫১৫০ কিলোমিটার এটি শুধু শনির সবচাইতে বড় উপগ্রহ নয়, এটা সৌরগজতের সবচাইতে বড় উপগ্রহ। শনির সবচাইতে ছোট উপগ্রহের নাম ফিবি। এর ব্যাস ২২০ কিলোমিটার।এনসেলাডাসের হিমায়িত পৃষ্ঠের নিচে সাগর আছে বলে মনে করা হয়। টাইটান এবং এনসেলাডাসে প্রাণের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হয়।
টাইটান এবং এনসেলাডাসে প্রাণের সম্ভাবনা :-
————————————————————-
সূর্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করায় সূর্যরশ্মি সেভাবে টাইটানে পৌঁছাতে পারে না। তায় টাইটানে জীবনের সম্ভাবনা না থাকার সম্ভাবনায় বেশি। তবে অ্যাস্ট্রোবায়লজিস্টরা বলছে অন্য কথা। তাঁরা টাইটানে সম্ভাব্য প্রাণের চালিকা শক্তি খুজে পেয়েছে। সেটি হলো অ্যাসিটিলিন। জীবন টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যাসিটিলিন টাইটানে রয়েছে।
টাইটানের আবহাওয়াতে ৯০% নাইট্রোজেন এবং ১% মিথেন। যেখানে পৃথিবীতে ৭৫% নাইট্রোজেন রয়েছে। এইদিক থেকে পৃথিবীর সাথে উল্লেখযোগ্য মিল থাকার কারনে এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।নাসা এনসেলাডাসা থেকে ক্যাসিনোর পাঠানো তথ্য বিশ্লেষন করে পয়েছেন এনোলাডাসের দক্ষিণ মেরুতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বরফের নিচে প্রায় ১০ কিলোমিটার সমুদ্রে বয়ে চলেছে তরল জল।যেহেতু পনি থাকলে প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে। সেহেতু বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন এনসেলাডাসে প্রাণ থাকা সম্ভব।• বিজ্ঞানীরা এটাও মনে করেন যে টাইটান এবং এনসেলাডাসা কে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব।