
লেখকঃ আবিআ
তোমার সাথে আমার প্রথম বাসে দেখা হবে। প্রায় সবসময়ের মত জায়গা না পেয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো। সবসময়ের মত মনে মনে রুদ্রের কবিতার কথা ভাববো। ঠিক তখনই তুমি পিছন থেকে এসে আমার হাতের উপর তোমার হাত রাখবে। সেই সময় তুমি আমার বুকে হাত দিবে আর আস্তে করে ‘বেশ্যা’ বলবে। আনমনা থাকবো বলে আমি প্রথমে কিছুই বুঝবো না। কিন্তু আমি পরের মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াবো। বাসে বসা মানুষগুলো ভাববে আমি কিছু ফেলে দিয়েছি কিন্তু আসলে তো আমি তোমাকে খুঁজবো। একজন বয়স্ক মানুষ সরে দাঁড়াবে আর ব্যাকপ্যাক কাঁধে একটা ছেলে একটা ভাঙ্গা কানের দুল দেখিয়ে বলবে, ‘এইযে, এইযে’। তোমার মুখে ক্লিন সেভ, সাদা দাঁত আর পরিষ্কার হাত। এইসব দেখে আমি ভাববো এটা তোমার কাজ না। আমি অন্যদের দিকে তাকাবো। কালো মুখ, নোংরা আর লালচে চোখওলাদের দিকে। কিন্তু আমি এতটাই ভীত থাকবো যে আমি কিছুই বুঝতে পারবো না। যখন তুমি বাস থেকে নেমে আমার দিকে হাত নাড়িয়ে হাসতে থাকবে তখন আমি বুঝবো এটা তুমি। অফিসে কলিগরা বলাবলি করবে, পেপারে রেইপের নিউজ পাবলিশ হয় শুধুমাত্র পেপারের সেক্স অ্যাপিল বাড়ানোর জন্য। কেউ কেউ বলবে ছোট বাচ্চাদের রেইপ করার মধ্যে অন্য ধরনের ফিলিং আছে। সবাই হাসাহাসি করবে এই সময় আর আমি আবার রুদ্রের কবিতার কথা ভাববো। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে আসবো।
*
এরপর থেকে প্রতি সকালে তুমি বাসে উঠবে শুধুমাত্র আমার শরীর ছোঁয়ার জন্য। তুমি আমার হাত, আমার কোমর, আমার পায়ে খোঁচা দিবে। আমার বুকে হাত দিয়ে আবার আস্তে করে বলবে, ‘বেশ্যা’। আমি বাসের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটাছুটি করবো। আমি তোমাকে পিন, কাঁটা কম্পাস বা বলপেন দিয়ে মারার চেষ্টা করবো। হিল পড়া জুতা দিয়ে তোমার পায়ে আঘাত করবো। খামচি দেওয়ার চেষ্টা করবো কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হবে না। প্রতিবার যখনই এটা শুরু হয়, তখন আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিবো যে এটা আমার মনের ভুল। হয়ত কোন অ্যান্টির হ্যান্ডব্যাগের গায়ে লাগছে। যখন আর এইসব বলে নিজেকে শান্ত রাখতে পারবো না তখন জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবো আর আবার রুদ্রের কবিতার কথা ভাবতে থাকবো। তুমি হয়ত আসলেই ঠিক। আমি আসলেই ‘বেশ্যা’ নইলে কেন আমি বাসে চিৎকার করে সবাই কে বলি না কেন? কিন্তু আমি তো কিভাবে চিৎকার করতে হয় সেটা ভুলে গেছি। ক্লাস এইটে পড়ার সময় বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু যখন রুম বন্ধ করে আমার মুখে হাত চেপে ধরেছিলো তখন থেকেই আমি চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। তোমার কারনে আমি টিশার্ট, জিন্স, শর্টস্লিভ সালোয়ার, কানের দুল পড়া বন্ধ করে দিবো। তাও কোন পরিবর্তন হলনা। আমার বন্ধুরা বলল আমার নাকি ভিটামিনের স্বল্পতা আছে। আমার নিজের যত্ন নিজেরই নেওয়া উচিত। আমি মাল্টিভিটামিন স্যাপ্লিমেন্টস খাওয়া শুরু করলাম তাও কোন পরিবর্তন হলনা।
*
আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখি। আমি একটা বিল্ডিং এর ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আর ছোট ছোট বাচ্চাদের গিলে ফেলছি। আশেপাশে অনেক মানুষ হাসাহাসি করছে আর আরো বাচ্চা ঠেলে দিচ্ছে আমার দিকে। চারপাশে রুদ্রের কবিতার আবৃতি চলছে। তুমি অনেক রূপসী মহিলাদের সাথে ছিলে। তুমি একটা ময়লা, ধুলামাখা বাক্স থেকে একটা খুব ছোট নগ্ন মেয়েকে চুল ধরে টেনে বের করছিলে। তুমি এই বাচ্চাকে ধরে মুখের কাছে এনে ‘বেশ্যা, বেশ্যা’ বলে চিৎকার করছিলে। এটা দেখে আশেপাশের সবাই হাততালি দিচ্ছিলো। আমি স্বপ্নে তোমাকে গালিগালাজ করছিলাম। গরম ফুটন্ত তেল তোমার মুখে ছুঁড়েদিয়েছিলাম। লোহার শিক দিয়ে তোমার চোখ গালিয়ে দিয়ে চাচ্ছিলাম। তোমার যৌনাঙ্গ কেটে কুকুরকে খেতে দিয়েছিলাম… নাহ! আমি এইগুলোর কিছুই করতে পারিনি। অন্য সবার সাথে আমিও তালি দিচ্ছিলাম। স্বপ্নেও তোমাকে আঘাত করতে করতে পারিনি। হয়ত আমি একটা ‘বেশ্যা’।
*
মাস খানেক পর, এইসব শেষ হয়ে যাবে। তুমি অদৃশ্য হয়ে যাবে আর আমি তোমার মত কাউকে দেখলেই আঁতকে উঠবো। আমার শরীরে অজানা অদৃশ্য অনেক ক্ষত থাকবে যেগুলো কখনো ঠিক হবে না। আমি আমার মোবাইলের রিংটোন হিসাবে জাতীয় সংগীত সেট করবো। কেউ ফেসবুকে পোস্ট দিবে ‘বেশিভাগ রেইপ হয় মেয়েদের পোশাকের কারনে আর ব্যবহারের জন্য’ আর আমি সেটাতে লাইক দিবো। আমি বোরখা পরা শুরু করবো। নববর্ষ পালন করবো না। কারন ওইসব অনুষ্ঠানে তুমি যাবে। আমি অফিসে কাজ করা বন্ধ করে দিবো কারন ওখানে তুমি থাকবে। আমি বাস ব্যবহার করা বন্ধ করে দিবো। আস্তে আস্তে বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিবো। নিজেকে বুঝাবো এই বলে যে, এটা কোন বড় ব্যাপার না, আমি একদিন সব ভুলে যাবো।
***