
হ্যাল্লো ফ্রেন্ডস। ওয়েলকাম টু ইউর ফেভারিট অনু আড্ডা। বর্তমান সময়ের অনেকের কাছে অনু আড্ডা সম্পূর্ণ অপরিচিত হলেও আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যারা দুই বছরের অধিক সময়ে আছো তারা ভালো করেই জানো অনু আড্ডা কি! প্রথম সিজনে অনু আড্ডার পঞ্চাশ পর্ব প্রকাশিত হয়েছিলো। দ্বিতীয় সিজনে আবার অনু আড্ডা শুরু হলো। নতুনদের বলতে চাই অনু আড্ডা হচ্ছে এমনই একটা প্লাটফর্ম যেখানে রঙধনু মনের মানুষগুলো তাদের না বলা কথাগুলো বলতে পারে।
আর কথা নয়। আজকের আড্ডা শুরু করা যাক। আজকে আমাদের সংগে আছে ইমু। অনুভূতিহীন আমি নামেই যার ফেসবুক পরিচিতি।
#
শুভ্র ভাইঃ হ্যালো ইমু, অনু আড্ডায় স্বাগতম। আমার খুব ভালো লাগছে অনু আড্ডায় দ্বিতীয় সিজনে তোকে দিয়ে শুরু করতে। স্বাভাবিক ভাবেই তুই বলছি। মনে আছে অনু আড্ডা শেষ প্রকাশের সময় তোর সাক্ষাতকার নেওয়া হলেও প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু দ্বিতীয় সিজন তোকে দিয়েই শুরু করছি। এখন পাঠকের সুবিধার জন্য নিজের পরিচয় দে।
ইমুঃ আমি ইমরান।তবে ব্যাপকভাবে ইমু বলেই পরিচিত।রসমালাই আর খাদির জন্য বিখ্যাত শহর কুমিল্লাতে থাকি। মেডিকেলে পড়ছি।
#
শুভ্র ভাইঃ কুমিল্লার রসমালাই আমার অনেক প্রিয়। যদিও যে দুইবার কুমিল্লা গিয়েছিলাম একবারও কুমিল্লায় বসে রসমালাই খাওয়া হয়ে ওঠেনি। আচ্ছা ইমু তোর প্রেমের বাজারের খবর বল। অনু আড্ডা মানেই পারসোনাল সব কথা বলা। এই পর্যন্ত কত জনের সাথে প্রেম করেছিস? এখন কি প্রেম করছিস নাকি সিংগেল।আছিস?
ইমুঃ ইনশাল্লাহ নেক্সট টাইম আগে থেকেই রসমালাই আনিয়ে রাখব। একদম খাঁটি টা। ফরমালিনের বাজারে রসমালাইয়েও ফরমালিন আছে(ভেজাল)। প্রেমের সংখ্যা হিসেব ছাড়া। তবে লাইফে একজনকে ভালবেসে কেঁদেছি অনেক”সোহেল”। ওর ব্যাপারে আর বলছি না।আমার কিছু প্রেমের কাহিনী হয়ত তোমারও জানা আছে। খুব সহজে মানুষের ভেতর ঢুকে যেতে পারি আর তার অপব্যবহার করে প্রেমও করেছি অনেক। সেসব নিয়ে এখন অনুশোচনায় ভোগী। এখন নিজেকে সিংগেলই মনে হয়। কারন চরম একাকীত্বেও কারো সামান্য স্পর্শ পাইনা তাই।
#
শুভ্র ভাইঃ ইমু একটা পাখির নাম। তুই নিজেকে কেন ইমু বলিস? এই নাম করনের শানে নুযুল কি? ইমু পাখির সাথে কি তোর কোন সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য আছে?
ইমুঃ হা হা।এই এক প্রশ্নের অনেক কোঁপ খাইছি আমি।তবে আসল কথা আমার গার্লফেন্ড এর নাম ছিল মিমু।নাম মিলিয়ে সে আদর করে আমায় ইমু ডাকত।২০১৩ তে আমাদের ব্রেকাপ হয়।আর তার দেওয়া নামই পরে সবার কাছে পরিচিতি পায়।
#
শুভ্র ভাইঃ তুই নিজেকে সমকামী ভাবিস নাকি উভকামী?
ইমুঃ একসময় উভকামী ভাবতাম।তবে এখন পুরোদুস্তর সমকামী মনে হয়। তবে আমি খুশিই আছি এই ব্যাপারে।
শুভ্র ভাইঃ ভাবনাটা একান্তই তোর নিজের ব্যাপার। তবুও উভকামি থেকে নিজেকে সমকামী ভাবা। এই মানসিক পরিবর্তনের পিছে কি কোন কারণ বা ঘটনা আছে?
ইমুঃ না।এটা ন্যাচারাল মনে হয়েছে।আর এই পরিবর্তনে আমি বিন্ধুমাত্র চিন্তিত না।কারন সমকামী মানেই যে মানসিকতার পরিবর্তন তা আমি মানিনা।
#
শুভ্র ভাইঃ রঙধনু গোত্রের মানুষের সমপ্রেমী এবং সমকামী এই দুই পরিচয়ে নিজেদের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যদিও সমপ্রেমীরা নিজেদেরকে সমকামীদের থেকে আলাদা দাবি করে। এদের মধ্যে প্রাক্টিক্যালি কি কোন।দৃশ্যমান পার্থক্য চোখে পড়ে?
ইমুঃ কামের প্রেম ক্ষনস্থায়ী। সেটা উত্তেজনা দমানো পর্যন্তঈ থাকে।আর যেকোন প্রেমই স্বর্গীয়।তবে এখানে সমকাম আর সমপ্রেম আমার কাছে একই মনে হয়।
#
শুভ্র ভাইঃ প্রথম কবে এবং কিভাবে বুঝতে পারলি তুই একজন রঙধনু গোত্রের মানুষ। আশপাশের অন্য ছেলেদের থেকে কিছুটা আলাদা। তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিলো
ইমুঃ সেটা ২০১২ সালের দিকে। এক অপরিচত নাম্বারের মাধ্যমে। নিজেকে কখনো অন্যদের থেকে আলাদা লাগেনি। এখনো লাগে না।
#
শুভ্র ভাইঃ তোর পপুলারিটি পাওয়া আইডি হচ্ছে “অনুভূতি হীন আমি”. কেন এই অনুভূতিহীনতা কাজ করে? তুই কি আসলেই অনুভূতিহীন।
ইমুঃ হ্যা।নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হয় সবসময়।আমার জন্য কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখেও ভেতর থেকে কোন হাহাকার শুনতাম না।বিশেষ করে রাজ, জয় কিংবা আবিরের কান্না যখন আমায় স্পর্শ করেনি তখন বুঝতে পারতাম আমি অনুভূতিহীন।
#
শুভ্র ভাইঃ সব কান্না সবসময় স্পর্শ করবে এমন নয়। যারা কারণে ওকারণে কেঁদে ফেলে অনেক সময় তাদের কান্না অন্যদের কাছে গা সওয়া হয়ে যায়। প্রথম সেক্স অনেকের কাছে স্পেশাল কিছু আবার অনেকের কাছে হঠাৎ করে হয়ে যায়। তোর প্রথম সেক্সের অভিজ্ঞতা কি বলা যায় আমাদের?
ইমুঃ লাইফে প্রথম চুমুটাই স্পেশাল লেগেছিল।কনকনে শীতের সন্ধ্যায় টাউনহলের ছাদে স্যামের সাথে প্রথম চুমু।দুজনই অনভিজ্ঞ ছিলাম।কিন্তু আবেগ ছিল বেশি।
#
শুভ্র ভাইঃ হুউম। প্রথম চুমু। প্রথম চুমু নিয়ে হাজারো কবিতা লেখা হলেও সেই অনুভূতিকে ঠিকঠাক প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সমকামী জীবনে কষ্ট একটা নৈমিত্তিক বিষয়। এমন কোন সমকামী ব্যক্তি নেই যে নিজেকে কষ্টহীন মনে করে। যেহেতু সোহেলের কথা বলতে চাচ্ছিস না। সেহেতু আমরা তোর জীবনের সমকামী সম্পর্কিত মজার কোন গল্প শুনতে চাই।
ইমুঃ একবার একজনের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।গিয়ে দেখি পরিচিত সিনিওর ভাই।কি আর বলব।লজ্জায় মাথা তুলতে পারিনি।আরেকবার একজনের সাথে দেখা করতে গিয়ে তার ব্ল্যাকমেইলিং টাইপ কথা শুনে মোবাইল দিয়ে মাথায় বাড়ি দিয়ে দেই।পরে শুনলাম মাথায় আধাকেজি ওজনের আলু উৎপাদন হয়ে গেছিল।পরে ভদ্রলোকের সাথে একবার দেখা হতেই দুজন দুদিকে পালিয়ে গেছিলাম।আমি দৌড়াইছি ভয়ে কিন্তু বেচারা কেন দৌঁড় দিল তা ভাবতে এখনো হাসি পায়।
#
শুভ্র ভাইঃ হা হা হা। মোবাইল দিয়ে মাথায় বাড়ি মারা! দৃশ্যটা আমি কল্পনা করার চেষ্টা করছি। প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। দুজন সমকামীর মধ্যে যৌন সম্পর্কের বাইরে কেন বন্ধুত্ব সম্পর্ক অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থায়ী হয় না কেন?
ইমুঃ এই বিষয়ে প্রচুর লিখেছিলাম।আমাদের চিন্তাধারা গুলো যৌনতা কেন্দ্রিক।তাই সম্পর্কগুলো যতই বন্ধুত্বপূর্ণ হোক সেখানে যৌনতার হানায় খুব সহজেই তা ভেংগে যায়। আর বিশেষ করে আমরা বাংগালীদের একজিনিসে অনীহা একটু বেশি।
#
শুভ্র ভাইঃ আমিও অনেক ক্ষেত্রে বাঙালিদের দোষ ধরি তবে একথা সত্য যে ভালো মন্দ সব খানেই আছে। অনেক বাঙালি আছে যারা সত্যিকারেই ভালোবাসে। হোক সে সমকামী কি বিষমকামী। রঙধনু সম্পর্ক গুলো টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে কোন দিকে সচেতন হওয়া উচিত
ইমুঃ পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা, বিশ্বাস খুব জরুরি।আর ইগো প্রবলেম থাকলে তা মন থেকে দূর করা দরকার। ছোটছোট ভুল গুলো নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নেওয়া উচিত। তৃতীয় কাউকে এসবে না আনাই উত্তম।
#
শুভ্র ভাইঃ থার্ড পার্সন নিয়ে কচলাকচলি করা শতকরা নিরানব্বই জন মানুষের কাছে খুবই ফেভারিট। রঙধনুকামীদের মধ্যে বহুগামিতার প্রবনতা বিষমকামীদের তুলনায় অনেক বেশী দেখা যায়। এই ব্যাপারে তোর দৃষ্টিভঙ্গি কি?
ইমুঃ সহজলভ্যতা এর অন্যতম কারণ। দুজন ছেলের একসাথে থাকা আমাদের সমাজের চোখে খুব সিম্পল ব্যাপার।তাই সমাজের এই দৃষ্টিভংগি কে সমকামীরা খুব ভালোভাবে কাজে লাগায়। আর বর্তমানে এভেইলেবিলিটির কারনে বহুগামিতা বেড়ে গেছে। চাইলেই হোটেলে গিয়ে থাকা যাচ্ছে।বিষমকামীদের ক্ষেত্রে এসব সম্ভব না।
শুভ্র ভাইঃ বিষমকামীদের ক্ষেত্রে যে একদম সম্ভব না তা নয় তবে হোটেলে গিয়ে থাকার ব্যাপারে তাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বয়স হচ্ছে।।ফ্যামিলি নিশ্চয় ছেলেকে বিয়ে দিতে চাইবে। তোর ভবিষ্যৎ ভাবনা কি? বাবা মা কে কি বলবি? তারা কি মেনে নিতে পারবে?
ইমুঃ আমার বাবা সন্তান অন্ত:প্রাণ মানুষ। সবসময় আমাদের সীদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেন। এখন পর্যন্ত বিয়ে না করার ব্যাপারে আমার মত।বাহিরে চলে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে সব ছাপিয়ে আসল কথা হল এখনো তো ছাত্র মানুষ। সময় গড়াক আরও। দেখি কি আছে কপালে।
শুভ্র ভাইঃ ওকে। সময় গড়াক। সফলতা আসুক তোর দুয়ারে এই প্রত্যাশা করি। ফেসবুকের অনেকেই বলে থাকে তোর স্ট্যাটাস বেশ ইন্সাপায়ারিং। আমিও মনে করি তোর স্ট্যাটাসে জীবনের দার্শনিক ভাষ্য বেশী থাকে। তো এই স্ট্যাটাসের ভাবনাগুলো তোর মাথায় কিভাবে আসে?
ইমুঃ মেডিকেলের ছাত্র হওয়ায় জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে আমার।সেসব থেকেই আমার লেখার উপকরন জোগাড় করি।আর খুব একটা ভেবে কখনো লিখিনা।যেটা দেখেছি সেটা লিখার চেষ্টা করি।আর আমি সবসময়ই ইন্সপায়ারিং।সেটা হোক ভারচুয়াল কিংবা ব্যক্তিগত জীবন।বিশেষ করে বন্ধু/ছোটভাইদের কাছে আমার এই ব্যাপারে ভাল সুনাম।গভীর সমুদ্রে ডুবতে যাওয়া মানুষটি যদি সামান্য খড়কুটো দেখেও তা ধরে বাঁচার উৎসাহ পায়, স্বপ্ন দেখে তবে আমরা এত ভাল থেকেও কেন হতাশায় ভুগবো??রিমুভ ইউর স্যাডনেস;রাইজ ইউর হেড;বি স্টং;টেক ইউর ফেইলুর ইজি।সফলতার সোনালী সুর্য উঁকি দিবেই।
শুভ্র ভাইঃ অনু পমের সাথে তোর পরিচয় সুদীর্ঘ দিনের। এই সম্পর্ককে তুই কিভাবে মুল্যায়িত করবি?
ইমুঃ কোন এক বর্ষার সকালে প্রথম চ্যাট হয়েছিল সেই অনুপম আর আজকের শুভ্র মুহাম্মদের সাথে। আমাকে আভ্যন্তরীণভাবে পরিবর্তন করার মানুষ। অনেকে আমাকে শুভ্রের চেলা বলে ক্ষেপায়। আমি কিচ্ছু বলিনা। ওদের একটা হাসি উপহার দেই। শুভ্র আমার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র”আমার শুভ্র ভাই”। একরাতে আমার পিঠে ব্যাথার কথা শুনে তার যে বিচলিত হওয়া দেখেছিলাম তা আমাকে বলে দিয়েছি শুভ্র আমার কেমন ভাই।
শুভ্র ভাইঃ যেহেতু আড্ডাটি হচ্ছে অনু আড্ডা সেহেতু এর পরিধি ছোট রাখাই উচিত। আমরা আজকের আড্ডা এখানেই শেষ করছি। আমাদের মধ্যকার রঙধনু মনের মানুষদের অনেকেই হতাশায় ভোগে, একাকিত্ব বোধ করে। ডাক্তারি শাস্ত্রের ছাত্র হিসেবে অনু আড্ডার পাঠকদের জন্য তুই কি কিছু বলতে চাস?
ইমুঃ হতাশা খুব খারাপ রোগ। এক ক্যাসকেড ফিনোমিনার নাম। একটা হতাশা আরও হতাশা ডেকে আনে। নিজের মধ্যে থাকা পজিটিভ জিনিসগুলো নিয়ে ভাবুন। দেখবেন আপনি ভাল থাকবেন। ভালকিছু মানুষের সাথে সময় কাটান;প্রবলেম শেয়ার করেন। দেখবেন ভাল লাগবে।
##
বন্ধুগণ আমি শুভ্র আজকের মত অনু আড্ডা থেকে বিদায় নিচ্ছি। আগামী সোমবার অনু আড্ডার দ্বিতীয় পর্বে সি সন কে নিয়ে হাজির হচ্ছি। এখন থেকে প্রতি সোম ও শুক্রবার অনু আড্ডা প্রকাশিত হবে। তুমি যদি আগ্রহী হও তবে অসংকোচে আমাকে ইনবক্সে নক করো। বাংলা লিখতে পারলে তোমাকে পরবর্তী অনু আড্ডায় নিয়ে হাজির হবো সেই পর্যন্ত ভালো থাকো। শুভ রাত্রি।