লেখকঃ ইরেজার হাসান
এক
.
ওরা ঠিক করল এটা আর চলতে দেবে না। আর এটা থামানোর জন্য প্রয়োজন ছিল একটা প্ল্যান। এতক্ষণ ধরে তিন জন মিলে সেই প্ল্যানটাই করে ফেলল। সজীব, সুমন, রানা তিন জন মিলে যে প্ল্যানটা করেছে, তাতে ফুয়াদকে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাওয়ানো যাবে!
.
একটা পরিত্যক্ত দেয়ালের উপর বসে আছে ওরা। দূর থেকে মাগরিবের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে কানে। আযান শুনে মনে হচ্ছে প্রাচীন চিরন্তন সত্য কোনো বার্তা মাথার মধ্যে সফটওয়্যারের মতো সেট করে দেয়া আছে, ‘নামাজের জন্য আসো, কল্যানের জন্য আসো।’ আর সেটাই ওদের মাথার মনিটরে ভেসে আসছে। আরেকটা দিনের সমাপ্তি।
.
‘তাহলে কথা কিন্তু একটাই, তিনজন যতো ব্যস্তই থাকি না কেন, ফুয়াদ ভাই যখনই আমাদের মাঝে কাউকে ডাকবে তখন বাকী দুইজনও সেখানে গিয়ে হাজির হবো। কিন্তু সেটা গোপনে। প্রয়োজনে দুইজন লুকিয়ে থাকবো, আর যখন সে তার কাজ শুরু করতে চাইবে তখন তিনজন মিলে তারে সিস্টেম করে দিবো, ঠিক আছে?’ লাফিয়ে দেয়াল থেকে নীচে নামল রানা। প্যান্টের পেছনের অংশের ময়লা ঝারতে ঝারতে বলল সে।
.
সুমন ও সজীবও নীচে নেমে এলো। সজীব রানার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘প্ল্যান অনুযায়ী কাজটা করতে পারলেই হয় বন্ধু। ফুয়াদ ভাইয়ের এই অত্যাচার আর সহ্য হয় না। খানকির পোলার মতো বেজন্মা আমি দ্বিতীয়টা দেখি নাই।’
.
দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুমন। হাত দুইটা প্যান্টের সাইড পকেটে চালান করে দিয়ে বলল, ‘ও হলো অসুস্থ মানসিকতার মানুষ। আর সেই মানসিকতার ক্ষুধা মিটাইতেছে আমাদের দিয়ে। তাও ভাল আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করে কথাটা শেয়ার করছিলাম, নয়তো সাহস করে এই প্ল্যানটাও করা হতো না, ওরে পাড় দেয়ার চিন্তাও হতো না। তবে এখন কাজ একটাই, ওরে পাড় দেয়া। এতোদিন নানা ভয় দেখিয়ে, ক্ষমতা দেখিয়ে ফাপরে রাখছিল। এখন আর সেটা চলবে না।’
.
মাথা ঝাঁকল ওরা। সেটাই। এখন আর রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, স্বাভাবিক তিনজন ছেলের জীবনকে অস্বাভাবিক করে তোলার খেলা খেলতে দেয়া যাবে না। চারপাশে যখন আঁধার চাদর তার ব্যপ্তি ছড়াচ্ছে, তখন ওরা তিনজন সেখান থেকে বিদায় নিলো। রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন, অসুস্থ মানসিকতার ফুয়াদকে ওরা কীভাবে সিস্টেম করবে, সেটা দেখা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!
.
দুই
.
আপনি যদি জীবনটাকে উপভোগ করতে চান তাহলে উচিৎ অনুচিৎ নিয়ে ভাবা যাবে না। যখন যা মন চাইবে সেটা করার মেন্টালিটি নিয়েই উপভোগ করার ইচ্ছা নদীতে নামতে হবে। পাশাপাশি, সেই নদীতে নামার পর বড় বড় ‘আইটকাওয়ালা’ বাঁশ যেকোনো মুহুর্তে আপনার পাছায় ‘হান্দাই’ যেতে পারে সেই প্রস্তুতিও রাখতে হবে। থামলে চলবে না, পাছার ট্রিটমেন্ট করিয়ে আবার নদীতে নামতে হবে। সব উপায়ে জীবন উপভোগ করতে চাওয়া মানেই মানবিকতা বিসর্জন দেয়া। আর মানবিকতা বিসর্জন দিতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মূত্র বিসর্জন দিতে হতেই পারে! ফুয়াদের এমন অবস্থা দেখার জন্য প্রস্তুতি নিন, ঠিক আছে?
.
‘ভাই, আপনারে একটা প্রশ্ন করি?’ ফুয়াদের কানের কাছে মাথাটা এগিয়ে দিলো সজল। সজল হলো ফুয়াদের পি.এস। শুধু ঘুম আর বাথরুম, এই দুই সময় বাদে বাকী পুরোটা সময় ফুয়াদের সাথে থাকে সে। সজল ছেলেটা ভাল। বাবা মা ওকে জন্ম দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে সেটা সে জানে না। ছোটবেলা থেকে একটা এতিমখানায় বড় হয়েছে।
.
ওর বয়স যখন আট বছর তখন ফুয়াদের বাবা ওকে বাড়িরে নিয়ে আসেন টুকটাক কাজ করানোর জন্য আর নিজের ছেলেকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। তখন থেকে এই পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত অনেক কিছুই ঘটে গেছে। ফুয়াদের বাবা মারা গেছে, সে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে, প্রতিদিন মেঘেরা তাদের জায়গা রদবদল করেছে, ফুল ফুটেছে আবার ঝরেছে, ফুয়াদ ‘গে’ হয়েছে, ফুয়াদ সজলের সাথে নিয়মিত যা তা ব্যবহার করে চলেছে তবুও, ফুয়াদের বাবার কথা ভেবেই সজল এখানে রয়ে গেছে। আর ইদানীং সে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
.
ফুয়াদের বাবা সজলের জন্য কিছু টাকা রেখে গেছে, সেগুলা দিয়েই ওর বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই ফুয়াদ সেই টাকা নিয়ে ঝামেলা শুরু করে দিয়েছে। আচোদা একটা! সজল চেষ্টা করে যাচ্ছে, ভুলিয়ে ভালিয়ে তার প্রাপ্য টাকাটা নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারলেই হয়। এই সাইকোর কাছে থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়া যাবে। তাই সে চেষ্টা করছে ফুয়াদের মন জয় করে চলার।
.
‘কী প্রশ্ন?’ গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করল ফুয়াদ। সে ছাদের উপর টেনশন চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়েছে। চোখ দুইটা বন্ধ।
.
‘না মানে, আপনি কী ঐসব কাজ কোনোদিনই ছাড়বেন না?’ কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল সজল।
ফুয়াদের মাথার চান্দিতে যেন বাদাম ভাজার উত্তপ্ত বালু ঢেলে দেয়া হলো! চেতে গেল সে!
.
‘আরে বোকাচণ্ডী, আমার ব্যাপারে তোর পাছা এতো জ্বলে ক্যা? আমিতো তোরে দয়া কইরা মাফ কইরা দিছি। নাকি দেই নাই? আমি চাইলে তোরেওতো প্রতিদিন ‘ঢেঁকি পাড়’ খাওয়াইতে পারতাম তাইনা?’
.
‘হ ভাই!’
.
‘তাতো করি নাই। তাইলে আমার এই ব্যাপার নিয়া তোর পাছা জ্বলে ক্যা? নাকি তোরও ‘ঢেঁকি পাড়’ খাইতে ইচ্ছা করে মাদারচোদ?’
.
এই ‘মাদারচোদ’ গালিটা একদমই নিতে পারে না সজল। সে তার মাকে কোনোদিন দেখেইনি, তার নামটাও পর্যন্ত জানে না। আর ‘মা’ বলে ডাকার মতো সৌভাগ্যতো দূরের কথা। অথচ সেই মা’কে নিয়ে এমন গালি দিলে রাগে তার রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। ফুয়াদ প্রায়ই তাকে এই গালিটা দেয়। আর নিয়মিত যা তা ব্যবহারতো আছেই। কিন্তু সজল মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কারণ, সে শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ফুয়াদকে পাড় দেয়ার, আর ভুলিয়ে ভালিয়ে ওর প্রাপ্য টাকাটা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার।
.
‘তা না ভাই। আমি বলতে চাইছিলাম, এসব বিষয় বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথেইতো করতে হয়। মনের ভিতর থেকেই একটা আকর্ষণ কাজ করে। আপনারেতো কতোবার বলছি আপনি ঐ পোলাদের ছাইড়া দিয়ে, একবার একজন মেয়ের সঙ্গ নিয়েই দেখেন, আপনার আর ঐ পোলাদের কথা মনেও হবে না। আমি আপনার ভাল চাই ভাই। তাই প্রতিদিনই এই কথাগুলা বলি।’ কাচুমাচু হয়ে কথাগুলো বলল সজল। ওর কথাতে ফুয়াদের কোনো ভাবাবেগ হলো বলে মনে হলো না।
.
চেয়ারে সোজা হয়ে বসলো ফুয়াদ। চোয়াল শক্ত করে শ্লথ গতিতে চোখের পলক ফেলে সজলের দিকে তাকাল। যেন খুব কষ্ট করে রাগ সংবরণ করল সে।
.
‘শোন মাদারচোদ, তোরে প্রতিদিন এই একটা কথা কইতে কইতে আমার জিহ্বার ফ্যানা উইঠা গেছে, আমার পোলাগোর প্রতিই আকর্ষণ আসে। মাইয়াগো নিয়া ভাইবা মজা পাইনা। এরপর যদি আর এইসব কস তাইলে তোরেই ‘ঢেঁকি পাড়’ দিমু। বিশ্বাস কর, কোনো বাপের ব্যাটা নাই যে আমারে আটকায়। কথাডা পুটকিতে ঢুকছে?’
.
কথাটা আমলেই নিলো না সজল। যেন তার কথাকে ফুঁ দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিল।
‘ভাই, ছোটবেলা থেকে আপনার সাথে বড় হইছি। কখনো আপনার খারাপ চাই না। আমার একটা কথা শুনেন, দেখেন ভাল লাগে কীনা?’
.
থু থু ফেলল ফুয়াদ। ‘ঠিক আছে, কইয়া ফালা।’
.
‘আমি একটা মেয়ে দেখছি কাল। এইতো আমগো চার বাসা পরেই থাকে। নতুন ভাড়া আসছে আরকী। মেয়েটা যেমন সুন্দর, তেমন পর্দানশীন, আচার-ব্যবহার অমাইক, লম্বা, দারুণ ফিটনেস। মেয়েটারে দেখার পরেই আমার মনে হইছে এই মেয়েটা বর্তমানের তথাকথিত লোক দেখানো পর্দানশীন মেয়ে না। সে সত্যিই ভাল মেয়ে।’ বলে একটু থামল সে। ফুয়াদ চুপচাপ কথাগুলো শুনছে। তবে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
.
সজল আবার তার কথার খেই ধরল, ‘আপনারতো এখন বিয়ার বয়স হইছে। তাছাড়া রাজনীতিতে মনযোগ দিতে গেলে তো ঘরের সাপোর্টও দরকার আছে। তাইরে নাইরে করে আর কতো দিন চলবে বলেন? বিশ্বাস করেন, এই মেয়েটা আপনার জন্য পারফেক্ট হবে ভাই। তাছাড়া সুন্দরী, গুণবতী বউ ঘরে থাকলে রাজনৈতিক পার্টনাররাও আপনারে গুরুত্ব দিবে বেশি।’
.
এই কথা শোনার পর ফুয়াদের যেন ভাবাবেগ হলো! ‘রাজনৈতিক পার্টনাররা গুরুত্ব দিবে’ এই পয়েন্টটা তার কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আর মেয়ের এতো পজেটিভ বর্ণনা কিছুটা ভাবাচ্ছে তাকে। তাছাড়া মেয়ে যেহেতু পাশেই থাকে, তাহলে অন্তত একবার মেয়েটাকে দেখা যায়!
.
ফুয়াদ গা মুচড়িয়ে বলল, ‘কিন্তু আমারতো পোলাদের…….’ কথাটা শেষ করতে দিল না সজল।
.
‘আমি আর কিছুই শুনতে চাই না ভাই। আপনি একবার মেয়ের বাসায় যান। যদি পছন্দ হয়, তাইলে আপনার যে ক্ষমতা তাতে ভয়ে মেয়ের বাপ রাজিতো হবেই, সাথে মুইতাও দিতে পারে।’
.
কথাটা মনে ধরল ফুয়াদের। নিজের ক্ষমতার প্রশংসা শুনে নিজেকে আরো উপরের লেভেলের মানুষ মনে হলো। আর কিছু বলল না সে। সজল বুঝতে পারল, ফুয়াদ রাজি হয়েছে। এতো বছর একসাথে থেকে অন্তত ফুয়াদের নীরবতার ভাষা বোঝার মতো যোগ্যতা তার হয়েছে।
.
তিন
.
পুরো ব্যাপারটার দায়িত্ব নিলো সজল। মেয়ের বাসায় সবকিছু ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে, ফুয়াদকে মেয়ের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত, সবকিছু। দুই দিনের মধ্যে হয়ে গেল সব। দুই দিন পর ফুয়াদকে নিয়ে মেয়ের বাসায় গেল সজল। সাথে কয়েকরকম মিষ্টি, ফলমূল, গোশত, বাজার সদাই। আর ফুয়াদের ‘স্ট্যাটাস’ বোঝানোর জন্য মেয়ের বাবাকে হাতে যা ধরিয়ে দেয়ার তা পরিমাণ মতোই দিয়েছে। তার মানে যদি ফুয়াদ একবার রাজি হয় তাহলে এই বিয়ে থেমে থাকবে না। আর ফুয়াদ বিয়েতে রাজি হলে কী হবে বলেন তো?
.
হ্যাঁ, ফুয়াদ বিয়েতে রাজি হলে সজলের উপর খুশি হয়ে তার বিদেশ যাওয়ার প্রাপ্য টাকাটা দিয়ে দিবে, সুমন, সজীব, রানার মতো কয়েকজন অসহায় ছেলেদের ফুয়াদের অসুস্থ চাহিদা মেটাতে হবে না, আর সবচেয়ে বড় একটা কাজ হবে, সেটা হলো……………….. নাহ! ওটা গল্পের শেষ লাইনে বলবো!
.
ফুয়াদ তার পারিবারিক জৌলুশ যথাসম্ভব প্রকাশ করেই মেয়েদের বাসায় গেল। মেয়ের বাবা মা ফুয়াদকে দেখে যারপরনাই আমতা আমতা শুরু করে দিলো। এতো টাকা পয়সাওয়ালা, রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ তাদের বাসায় এসেছে, কী রেখে কী করবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না তারা। তাছাড়া সবচেয়ে অবাক হয়েছে এটা দেখে যে, অল্প বয়সেই ফুয়াদের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক অবস্থান দেখে। ফুয়াদ সোফায় চুপচাপ বসে রইল অনেকক্ষণ। সৌজন্যমূলক কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথাই বলছে না সে। এটাও এক প্রকার ভাব।
.
অবশেষে যখন মেয়েকে সামনে আনা হলো, ফুয়াদ মনযোগ দিয়ে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করল। ফুয়াদ লম্বায় ৫ফুট ৩ইঞ্চি, শুকনা গড়নের। আর মেয়ে কম করে হলেও ৫ফুট ৬ইঞ্চি, মিডিয়াম গড়নের। সে একবার মনে মনে ভাবল, এই মেয়ে যদি একবার তার সাথে পাঞ্জা লাগে, তাহলে ফুয়াদের মরা বাপ কবর থেকে উঠে আসলেও তার হার ঠেকাতে পারবে না!
.
কিন্তু মেয়েটা সত্যিই পর্দানশীন। শুধুমাত্র মুখের অংশটা দেখা যাচ্ছে। মুখ কিছুটা শুকনা ধরনের। দুই একটা কথা যা হলো, তাতে বোঝা গেল মেয়ে ভদ্র, কথা কম বলে। সবচেয়ে ভাল দিক হলো, মেয়ে লাজুক স্বভাবের। এমন মেয়ে সংসারে থাকলে ভালোই হবে। বাইরে নষ্টামি করা যাবে, কোনো কৈফিয়ত দিতে হবে না, আর ‘সুন্দরী বউ’ নামে একটা সাউনবোর্ডও থাকবে নিজের সংসারে। সব মিলিয়ে মেয়েটাকে পছন্দ হলো তার। সজল নিজেও ভাবতে পারেনি ফুয়াদ এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবে। কথায় আছে না? ভাদ্র মাসের কুত্তা যখন পাগল হয় তখন সামনে কুত্তীর সাথে জোড়া লাগার জন্য অস্থির হয়ে যায়! ফুয়াদের অবস্থাও তাই হলো।
.
এতো দিন ‘গে’ হয়ে ছিল, আর এখন এই মেয়েকে কাছে থেকে দেখে তার জিভ দিয়ে ঝোল পরছে! আসলেতো সে মেয়েটাকে বিয়ে করবে ভোগ করার জন্য আর ঘর প্রহরী রাখার জন্য। মন থেকে বিয়ে করে সংসার করার মতো ছেলে সবাই হতে পারে না। ফুয়াদও সেই ক্যাটাগরির। ফুয়াদ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের আয়োজন করতে বলল।
.
সজল জানে, মেয়ের বাবাও রাজি,
তার দু’হাত তো ভরে দিয়েছে আজই,
অফিসে বসে থাকবে নাকি কাজী?
এক সপ্তাহ পর বিয়ে করবে ফুয়াদ পাজি!
.
চার
.
মেয়ের বাসা থেকে ফেরার পর রুমে কিছুক্ষণ আরাম করল ফুয়াদ। তার রুমটা অগোছালো হলেও খুব সুন্দর। তার একটা সখ হলো বিভিন্ন মুখোশ দিয়ে রুম সাজানো। নানান রকম মুখোশে তার রুম ভরা। তার সাথে কিছু খেলনা বানর ঝুলতে দেখা যায় রুমের দেয়ালে।
.
বিছানায় শুয়ে বাদামী রঙের এক খেলনা বানরের দাঁত কেলানো দেখা যায়! ফুয়াদ বিছানায় শুয়ে আরাম করতে গিয়ে ভাবল, এক সপ্তাহ পর বিয়ে। এখন অন্তত দুই দিন ‘ঢেঁকি পাড়’ এর প্র্যাক্টিস করা উচিৎ। অবশ্য এটা সে মেয়ের বাসায় যাওয়ার আগে থেকেই ভেবেছে। কিন্তু সমস্যা হলো, সুমন, সজীব, রানা কেউই তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এতোবার কল করে আসতে বলতেছে অথচ রাজি হয়েও তারা আসছে না। আজকে আবারো কল দিল ওদের। কিন্তু ফলাফল, যেই লাউ, সেই কদু!
.
মেজাজ বিগড়ে গেল তার। বিয়ের আগে একটু প্র্যাক্টিস করা দরকার, অথচ পোলাপানের এখন পাখ গজিয়েছে। পাত্তাই দিচ্ছে না। এতো সাহস ওরা পেল কই? প্রমাদ গুনল ফুয়াদ। এমন সময় সজল এসে ঢুকল রুমে। ফুয়াদ চটপট করে বলে উঠল, ‘শুয়োরের বাচ্চাগো সাহস বাইরা গেছে। আসতে চাইয়াও আসে না। ওদের পাছা দিয়া যদি বাঁশ না দিছি তাইলে আমার নাম ফুয়াদ না।’
.
সজল গলা খাকারি দিল। গলার স্বর নীচু করে বলল, ‘আমি শুনছি ওরা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেছে। অর্থাৎ, ওরা তিনজনই জেনে গেছে গেছে যে ওদের আপনি ব্যবহার করেন। আর এটা জানার পর থেকেই ওরা তিনজন মিলে নাকি প্ল্যান করছে আপনারে শিক্ষা দিবে।’
.
‘কী কইলি!! হালাগো সাহস দেইখাতো চান্দি গরম হইয়া গেল। ওগো সবার ভিডিও আছে আমার কাছে। সব ইন্টারনেটে ছাইড়া দিমু। ওগো ন্যাংটা শরীর সবাইরে দেখামু। হালারা আমারে চিনে নাই। হালারা কই আছে আমারে নিয়া যা তো সজল!’ কটমট করে বলল ফুয়াদ।
.
কথাটা শুনে তাজ্জব বনে গেল সজল! বলে কী! ছেলেদের সাথে ওসব করে আবার ভিডিও করে রাখছে!! এতো দেখি এক্সট্রিম পর্যায়ের সাইকো! ‘হালারা যেখানেই থাকুক, আপনি মুখ বন্ধ করেন। নয়তো সুই সুতা দিয়ে মুখ সেলাই করে নকশী কাঁথা বানাই ফেলমু।’ কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারল না সজল।
.
সে বলল, ‘মাথা গরম করা যাবে না ভাই। বুদ্ধি দিয়ে ওদের শায়েস্তা করতে হবে। ওরা যদি একবার পাবলিকলি আপনার বিরুদ্ধে এইসবের অভিযোগ আনে, তাইলে আপনার ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সব ইঁন্দুরের গর্তে যাবে।’
.
‘হুম্মম্মম্ম!’ মাথা ঝাঁকাল ফুয়াদ। ‘কথাডা ভাল কইছোস। তোর মাথায় বুদ্ধি আছে। তবে একবার সুযোগ পাই, দেখ একেকটার কী অবস্থা করি আমি। আচ্ছা ভাল কথা, তুই ওদের প্ল্যানের কথা জানলি ক্যামনে?’
.
‘ওরাতো জানেই যে আমি আপনার সব কিছু জানি। তাই সুমন ঐদিন আমারে সব বলছে। আর বলছে আপনারে যাতে কিছু না জানাই। কিন্তু আমি ভাবলাম, আপনারে এতো ঝামেলায় জড়ানোর কি দরকার! বিয়া করলে এমনিতেই আপনি এসব ছাইড়া দিবেন, ঠিক না? তাই ওদের বুঝাইয়া দিছি যাতে আপনার বিরুদ্ধে কিছু না করে। ভাল করছি না?’ একটু হেসে বলল সজল।
.
‘ভাল করছোস। কিন্তু বিয়ার পর যে আমি এসব ছাড়মু হেইডা তোরে ক্যারা কইছে? আমি ওদের আমার রাজ্যের হাইকোর্ট, জর্জকোট দেখাইয়া ছাড়মু, দেখিস!’
.
সজল মুখে যাই বলুক, ভেতরে ভেতরে সুমন, রানাদের সাহসের প্রশংসা করল। ফুয়াদের ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে, তাকে সিস্টেম করার জন্য ওরা যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এটাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ফুয়াদের মতো সাইকোরা এমন অনেক ছেলে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করছে। আর বিনিময়ে সেসব ছেলে মেয়েরা ভয়ে তার মতো ছেলেদের চামচামি করে যাচ্ছে, কেউবা এই অত্যাচারের জন্য সুইসাইড করছে।
.
কিন্তু এসব কোনো সমাধান না। এমন ভুক্তভোগীদের সুমন, রানাদের মতো মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই এসব সাইকোদেরকে হাইকোর্ট, জর্জকোর্ট দেখিয়ে দেয়া যাবে। প্রয়োজন সৎ সাহস, আর নিজের প্রতি রেসপেক্ট।
.
‘তুমি সেই সুযোগ পাইলে তো ভায়া! বিয়ার পর আর ওসবের ধারে কাছেও যাবা না তুমি। সেই সিস্টেম করতেছি!’ বিড়বিড় করল সজল।
.
‘কিছু কইলি?’ জিজ্ঞেস করল ফুয়াদ।
.
‘না না। শোনেন, মেয়ে সম্পর্কে আরেকটা তথ্য জানলাম, মেয়ে নাকি বাসায় মহিলা টিচারের কাছে পড়াশুনা করে। বাবা মা তাকে কলেজে যেতে দেয় না। যে যুগ পড়ছে, কখন কী হয় তাতো বলা যায় না। দেখছেন ওর ফ্যামেলির সবাই কতো সচেতন?’
.
‘বাহ! লা জওয়াব! এমনইতো চাই। ইনটেক ইনটেক!’ ঠোঁট চাটলো ফুয়াদ।
এবার শুধু বিয়ে হওয়াটা বাকী।
.
পাঁচ
.
বিয়েটা হলো শুক্রবার। বাড়তি কাউকে দাওয়াত করা হলো না। নিজেরাই ঝামেলামুক্ত ভাবে বিয়ের আয়োজন সেরে ফেলল। এদিকে সজল তার প্রাপ্য টাকা পেয়ে গেছে। মেয়েকে ফুয়াদের বাড়িতে তুলে দিয়েই সে আপাতত এক বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবে বলে ঠিক করেছে। ফুয়াদের কাঁধে একটা বউতো জুটিয়ে দেয়া গেল! এটা ভেবেই সে খুব খুশি। এবার ঠ্যালা সামলাক সে!
.
টিপিক্যাল বিয়ের মতোই মেয়েকে তুলে আনার সময় মেয়ের বাবা মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল। মেয়েটাকে এতো মেকাপ দিয়ে সাজিয়েছে যে, মেয়ের মুখ থেকে মেয়েসুলভ মায়াটুকু হারিয়ে গেছে। চোখের জলে মেকাপের জন্য গালে দাগ পড়ে যাচ্ছে। এদিকে ফুয়াদের তর সইছে না।
.
সুমন, সজীব, রানাকে এতো দিন কিছু করতে পারেনি। এই মেয়েকে কিছু করার পর ঐ বোকাচণ্ডীদের শায়েস্তা করতে হবে! ছটফট করছে ফুয়াদ। অবশেষে সব কিছুর পর সেই মধু ক্ষণ চলে এলো। সূর্য অস্ত গেল, সজলও বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আকাশে চাঁদ ছাড়াই ফুয়াদের মধুচন্দ্রিমা শুরু হলো।
.
ঘোমটা দিয়ে বসে আছে মেয়েটা। প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনেই এই রাতটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আকাঙ্ক্ষিত, স্বপ্নে পরিপূর্ণ। ফুয়াদ রুমে ঢুকে দরোজা লক করে দিল! হন্তদন্ত হয়ে খাটের উপর বসেই মেয়ের হাত ধরে ফেলল। গলা খাকারি দিয়ে বলল, ‘আমি তোমাকে খুব কাছে পেতে চাই। তুমি সারাজীবন আমার ঘরটা আলোকিত করে রেখো, ঠিক আছে?’
.
বলেই মেয়ের কাঁধ ধরল। ঘোমটা না সরিয়েই মেয়েকে শুইয়ে দিল। মেয়েটা স্ফীত স্বরে বলে উঠল, ‘লাইট অফ করবেন না?’
.
ফুয়াদ মেয়েটার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ‘উহু। অন্ধকারে মজা আছে নাকি? লাইটের আলোতে তোমার প্রতিটা লোমের কাঁপুনি দেখে তোমায় ‘ঢেঁকি পাড়’ থুক্কু আদর করব।’
.
মেয়েটা আপত্তি করল না। শুধু চোখের পলক ফেলে সম্মতি জানালো। ফুয়াদ ধীরে ধীরে শাড়ীর আঁচল সরিয়ে ফেলল। ঠিক তখনই, তড়িৎ গতিতে মেয়েটা এক মোচড়ে ফুয়াদকে নীচে ফেলল! এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ফুয়াদ!
.
‘কী ব্যাপার! তুমি এমন করছো কেন?’ জিজ্ঞেস করল ফুয়াদ।
.
মেয়েটা ফুয়াদের পেটের উপর বসে বলল, ‘আমি এতো বছর উপোষ থেকেছি তোমার জন্যেই। নিজেকে কারো সামনে উন্মুক্ত করিনি। তুমি যে আমার মতোই একজনকে চাও সেটা সজল ভাই আমাকে বলে দিয়েছে! আজ এই মধুচন্দ্রিমায় আমি কি আমার মতো করে তোমাকে পেতে পারি না?’
.
ফুয়াদ ওর কথা শুনে খুব খুশি হলো। এবার বুঝি তার মতো অস্থির টাইপের একজন সঙ্গী পাওয়া গেল। জমবে ভাল। এবার আর সুমন, সজীব, রানাদের প্রয়োজন হবে না, আর ওরা আমার বিরুদ্ধে কিছু করতেও যাবে না, আমার বদনামও হবে না, মনে মনে ভাবল ফুয়াদ। মেয়েটা ফুয়াদের উপর এমনভাবে বসেছে, ফুয়াদ নড়তে পারছে না। পাঞ্জাবি খুলে ফেলল সে। আর মেয়েটাও জামা খুলে ফেলল।
.
ইটনেক! বুবসতো এমনই হওয়া উচিৎ! কিন্তু মেয়েটা ফুয়াদের পাজামা খুলেই ফুয়াদকে উপুর করে শুইয়ে দিল! কিছুই বুঝে উঠতে পারল না ফুয়াদ। খাট থেকে সরাসরি ড্রেসিং টেবিলের গ্লাসে তাদেরকে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা উলঙ্গ হওয়ার পর তার আসল রুপ দেখা গেল। সে একজন তৃতীয় লিঙ্গ! বৃহন্নলা!
.
মাই গুডনেস!
.
ফুয়াদের মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না। তার পৃথিবীটা চরকির মতো ঘুরছে! এসব কি তাহলে সজল, সুমন, সজীব, রানার প্ল্যান? আর কিছুই ভাবতে পারল না সে। এবার ফুয়াদের সেই বিশেষ ‘ঢেঁকি পাড়’ তাকেই দেয়া হবে!! ফুয়াদ আবারো সেই গ্লাসের দিকে তাকালো। দেয়ালে ঝুলে থাকা দাঁত কেলানো সেই বানরটা দেখা যাচ্ছে! মনে হচ্ছে ফুয়াদের এই চরম মুহুর্তে বানরটাও তাকে উপহাস করছে!
.
হিজড়াটা ফুয়াদকে এমনভাবে চেপে ধরেছে যে তার মুখ দিয়ে ক্যাক ক্যাক জাতীয় আওয়াজ বের হচ্ছে। সে একটু নড়তেও পারছে না। হিজড়াটা মিটমিট করে হেসে বলল, ‘এবার লাইটের আলোয় তোমার প্রতিটা লোমের কাঁপুনি দেখে তোমায় ‘ঢেঁকি পাড়’ থুক্কু আদর করব ডার্লিং!’
.
ফুয়াদের চেহারা বাংলা ‘ঙ’ এর মতো হলো। নিজের বলাৎকারের জন্য সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রস্তত! অবশেষে কাজ শুরু করে দিলো হিজড়াটা!
.
ফুয়াদ ‘ঢেঁকি পাড়’ খাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
‘মনের দুঃখে বনে গেলাম,
এখন বানরও কয় প্যান্ট খোল!’
.
গল্পের মাঝখানে বলেছিলাম না, ফুয়াদ বিয়েতে রাজি হলে একটা বড় কাজ হবে? কী কাজ হলো বুঝেছেন তো??
.