লেখকঃ নিরালোকে দিব্যরথ
খণ্ড : ১
পর্ব ১
১১/৫/১৭, সকাল ১১:২০টা
স্যা হাই টু ইউর নিউ ফেসবুক ফ্রেন্ড নীরদ।
১১/৫/১৭, রাত ৮:২০টা
নীরদ :
হাই। আর ইউ ফ্রম চিটাগং?
নীনা :
ইয়েস।
নীরদ :
সেইম হেয়ার।
নাম কি নীনা? অদ্ভুত সুন্দর নাম।
নীনা :
তাই! আই থিংক সেইম গোস টু ইউর নেইম টু।
১১/৬/১৭, বিকেল ৫:০৯ টা
নীনা :
সো, ইউ আর এ ব্যাংকার?
নীরদ :
ইউ ক্যান কল মি দ্যট।
সো, অরিজিনালি আর ইউ ফ্রম হিল ট্র্যাক?
নীনা :
নাহ, নট ইভেন ক্লোজ।
মাই মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো, আর ইউ হ্যাপি
উইথ ইউর জব? ডাস দিস পজিশন স্যাটিসফাই ইউ?
নীরদ :
স্যাটিসফ্যাকশন ইন ব্যাংকিং জব!? আই
উইশ।
নীনা :
হুম। ইজ ইট সেইম ফর পাবলিক এন্ড প্রাইভেট এইদার?
নীরদ :
ইয়েহ, এভরিওয়্যার। হনেস্টলি, জব মিন্স ইউ আর ওনলি স্ল্যাভারিং ফর মানি, নাথিং
এলস।
নীনা :
আই মিন, ইউ আর বাউন্ড টু ডু ব্যাংক জব।
ডিড ইউ হ্যাভ এনি আদার অপশনস টু চুজ? লাইক ল্যান্ড
মিনিস্ট্রি অর এনবিআর থ্রু নন ক্যাডার?
নীরদ :
দেয়ার ইস নট এনি ডিফারেন্স বিটুইন প্রাইভেট এন্ড পাবলিক সেক্টর।
বোথ আর জাস্ট এ সিম্বল অফ মডার্ন স্ল্যাভারি।
নীনা :
ওকে। পয়েন্ট নোটেড।
নীরদ :
ইন গভারনমেন্ট সেক্টর ইউ উইল বি মোর সিকিউরড।
সো, ইট সিমস লাইক ইউ আর হাইলি সিরিয়াস
এবাউট দ্য বিসিএস!
নীনা :
হা হা। হাউ ডু ইউ নো?
নীরদ :
বাই রিডিং ইউর পোস্ট।
নীনা :
ইটস নট ওল এবাউট সিরয়াসনেস র্যাদার দ্যান আউটকামস অফ এ সাম অফ
এক্সপেরিয়েন্স।
নীরদ :
গুড ডিসিশন।
নীনা :
আই ডোন্ট নো।
নীরদ :
হ্যাভ ইউ অলরেডি গ্রাজুয়্যাটেড।
নীনা :
ইয়েপ, বোথ অফ দেম, মাস্টার্স এন্ড আন্ডারগ্র্যাড।
নীরদ :
দেন আই গেস ইউ আর নাউ এন অফিসিয়াল মেম্বার অফ দোস আনহ্যাপি জব
সিকারস সোসাইটি।
নীনা :
ইনডিড, আই এম!
নীরদ :
হোয়াট ওয়াস ইউর ম্যাজর?
নীনা :
আই গেস ইউ শুড ফিগার ইট বাই ইউরসেল্ফ। কজ আই ওন্ট টেল ইট টু ইউ।
নীরদ :
ওকে। দেন আই স্কিপড দ্যাট কোয়েশ্চেন।
নীনা :
হা হা, এ সাইলেন্ট রিপারক্রাশন।
নীরদ :
বাট ইফ ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রব্লেম, ইউ
ক্যান শেয়ার ওল অফ ইউর এক্সপেরিয়েন্সেস এবাউট বিসিএস উইথ মি, কজ আই এম অলসো দ্য ক্যান্ডিডেট অফ থার্টি এইট বিসিএস।
১১/৬/১৭, দুপুর ১:০৪টা
নীনা :
ওকে, উই হ্যাভ চোজেন বিসিএস এজ আউয়ার
টপিক টু ডিসকাস। বাট ডু ইউ থিংক শুড আই চেঞ্জ দ্য টপিক?
এ স্টোরি রাইটার, জান্নাতুন নাঈম প্রীতি,
ইউ হার্ড ইন রেসপেক্ট অফ হার?
নীরদ :
ইয়েপ।
নীনা :
ডিড ইউ রেড দ্যাট পোস্ট, নেইমড ‘প্রেমিক’? ইট ওয়াস রিটেন বাই জান্নাতুন
প্রীতি। ওমেন চাপ্টার, পেইজ অন ফেইসবুক, পাব্লিশেস হার রাইটিং।
নীরদ :
এন্ড মে আই নো হোয়াই ইউ আর ইন্টেরেস্টেড ইন হার রাইটিং?
নীনা :
নট ইন হার রাইটিং একচুয়েলি, ওনলি দ্যাট স্টোরি,
‘প্রেমিক’। ইফ ইউ এভার গেট এ চান্স, প্লিজ রিড
ইট এন্ড দেন আই উইল এক্সপ্লেইন ইট টু ইউ, ইফ ইট ইস পসিবল।
ম্যা আই প্রিটেন্ড টু স্ট্যা এজ মিস্টেরিয়াস?
নীরদ :
সরি শি এইন্ট ইন মাই ফ্রেন্ডলিস্ট।
নীনা :
ওকে, লেটস স্কিপ ইট এন্ড টক এবাউট ইউর
প্রিপ্যারেশন ইন রিলেশন টু বিসিএস।
নীরদ :
আই অলওয়েস থিংক টু স্টার্ট সামথিং ফ্রম টোমরো, বাট দ্যট ডে নেভার কামস।
নীনা :
দেন?
নীরদ :
ওয়াইটিং ফর টোমরো। রিডিং এ নভেল।
নীনা :
দ্যাট মিন্স ইউ আর নট সিরিয়াস এবাউট ইউর নিড।
নীরদ :
হ্যাভ ইউ রিড ‘কালবেলা? দিস টাইপ অফ বুকস অলওয়েস রুইউন্স মাই ফোকাস টু আদার স্টাফস। আই এম
স্টিল ওয়াইটিং টু বি সিরিয়াস।
নীনা :
আই রেড ইট বিফোর, প্রোব্যাবলি বিফোর
স্টার্টেড মাই ইউনিভার্সিটি লাইফ।
নীরদ :
একচুয়েলি আই এম রিডিং ইট টু লার্ন এবাউট নক্সালিস্ট।
নীনা :
ফর হোয়াট?
নীরদ :
ফর নাথিং। কজ রিডিং হিস্টোরিক্যাল নভেল কিপস মি হ্যাপি।
নীনা :
ইনডিড, এ ভেরি গুড হ্যাবিট।
নীরদ :
আই থিংক দ্যাট নক্সালিস্ট মেইড এ গ্রেট মিস্টেক। দ্যা শুড হ্যাভ
ওয়াইটেড ফর এ পারফেক্ট টাইম।
নীনা :
দ্য অথর এস্টাব্লিশড দ্যট দেয়ার ওয়াজ এ মিস্টেক।
নীরদ :
সমরেশ ওয়াস নট ফিক্সড ইন এনি পয়েন্ট ইন হিস রাইটিং।
নীনা :
আই ডিডন্ট ফিনিশ দ্য ফোর্থ ওয়ান অফ দ্য সিরিজ। দ্য সিকোয়েন্স গোস
লাইক দিস, উত্তরাধিকার, কালবেলা,
কালপুরুষ, এন্ড হুইচ ওয়ান ইস ফোরথ পার্ট?
একচুয়েলি আই ডোন্ট গেট টাইম টু রিড আউটবুকস নাওয়াডেজ। বিসিএস টুক
এওয়ে ওল মাই হবিস।
নীরদ :
দ্য ফোর্থ ওয়ান ইস কলড মৌষলকাল।
দেন ইউ শুড এভয়ড এভরিথিং এক্সেপ্ট বিসিএস বুক্স।
ইস ইট ইউর ফার্স্ট বিসিএস?
নীনা :
আই এম থারটি সিক্স নন ক্যাডার। থারটি সেভেন ওয়াস মাই বেস্ট রিটেন
এক্সাম এভার। বাট এন ইনক্রেডিবল ফেইলুর হ্যাপেন্ড, উই টু
হান্ড্রেড ক্যান্ডিডেটস আর ইনভলভড ইন এ মুভমেন্ট ইন ফ্রন্ট অব পিএসসি অফিস। ওন্ট
গিভ আপ আওয়ার হোপ। উই বিলিভ দ্যট, ইট ওয়াস নট আওয়ার
ফেইলুর। উই ওয়ার এক্সিলেন্ট ইন রিটেন। পারহ্যাপ্স এনি টেকনিক্যাল ইরোর বিট্রেইড
উইথ আওয়ার ফেইথ। দ্যাটস দ্য আপডেট।
নীরদ :
আই হারড এবাউট দ্য মুভম্যান্ট। ইস দেয়ার এনি হোপ?
নীনা :
আই ডিসারভ ফাইভ হান্ড্রেড এন্ড ফিফটি মারক্স এট লিস্ট। এট এনি
কস্ট ইট নেভার ক্যান বি ডাউন টু ফোর হান্ড্রেড এন্ড ফিফটি। হাউ কুড আই ম্যানেজ মাই
মাইন্ড টু বিলিভ দ্যাট। ওনলি ফেইট অর এক্ট অব গড ক্যান মেক মি বিলিভ ইট উড
হ্যাপেন।
হোয়টেভার, দেয়ার ইস নো হোপ। বাট বিনা
যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী।
নীরদ :
আল্লাহ ভরসা।
নীনা :
হুম্ম। ভরসা করছি, সফল হয়ত হচ্ছি না।
অন্তত আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে মনে মনে মিছে প্রবোধ দেয়া যাবে। আমার দুটো বছর নষ্ট
হল, সেটা এদের খামখেয়ালির বশে আমি শিকার হব, এই ইঞ্জাস্টিস সইবে কেমন করে! এইরকম কথাটা সান্ত্বনা হোক না।কেউ নেই,
যে আমার বছর কটি ফিরিয়ে দেবে।
নীরদ :
ইস দেয়ার এনি গড।
নীনা :
ইউ সেইড ‘আল্লাহ ভরসা।’
নীরদ :
বলার জন্যই বলা। এর বেশি না।
১১/১০/১৭, রাত ১:১৮টা
নীরদ :
জান্নাতুন নাঈম এর প্রোফাইলে ঘুরেছি। ভাল লেখেন।
নীনা :
‘প্রেমিক’ নামে একটা গল্প আছে ওর। সেই
গল্পটা পড়ার পর আপনার মন্তব্য শুনতে চাই।
নীরদ :
আই ডিডন্ট ফাইন্ড ইট ইন হার পোস্ট। ইফ ইউ হ্যাভ সফট কপি অর লিংক
ইউ ক্যান ইনবক্স মি।
নীনা :
খুঁজে পেতে সময় দিন আমায়।
১১/২৫/১৭, রাত ১০:৫৯টা
নীরদ :
হ্যালো। ইস ইট পসিবল টু কভার হোল সিলেবাস ইন ওয়ান মান্থ ইফ আই
কন্টিনিউ ফাইভ আওয়ারস এ ডে।
নীনা :
গ্যারান্টি দেয়া যায় না। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে এখান থেকেই
একটা ভাল চেষ্টা সম্ভব। নির্ভর করবে আগে কী কী কনটেন্ট, ডাটা
আত্মস্থ করেছেন, যা শুধু রিভিশন দিলে চলছে। তার পরেও কিছু
কথা থাকবে।
নীরদ :
জটিল না করে বলা যেত না? দিলেন তো সাব
তালগোল পাকিয়ে।
নীনা :
দেখ! আগের সবকিছুই রিভিশন দেবেন। ইংরেজি সাহিত্য, কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তি, বাংলা, গণিত, মানসিক
দক্ষতা, পরিবেশ ও ভূগোল, সংস্থা,
স্থান ও ব্যাক্তি, সাথে ইংরেজি
গ্রামারটাও, এই ক্ষেত্রগুলোতে সহজে বেশি নম্বর তুলবার
সুযোগ আছে। এখানে সমস্যা থাকলে সমাধানের চেষ্টা করুন না।
নীরদ :
আপনাকে ধন্যবাদ, নীনা।
নীনা :
আপনাকেও স্বাগতম, নীরদ।
১১/২৭/১৭, রাত ১২:৪০টা
নীরদ :
নীনা, আপনি অনেক রাত জেগে পড়েন?
নীনা :
প্রথমত. রাত জেগে একদম অভ্যাস নেই। দিনে জেগে পড়ি। তবে এখন দিনেও
অতটা হয় না, মশাই। ছয়ত্রিশতমের লিখিতের আগে রাতে চার
ঘন্টা ঘুমানোর ঐ সময় বাদে চব্বিশ ঘন্টার বাকি বিশ ঘন্টা শুধুই জপ করেছি। ফাঁকে
দিয়ে খাওয়া গোসল এইসব। আর কিচ্ছুটি নয়। কিন্তু ভাইভার পর সকাল নটা থেকে দুপুর একটা,
সন্ধ্যে ছটা থেকে সর্বোচ্চ রাত নটা। মাত্র চার ঘন্টা ঘুমের ঐ
সিজনের কথা এখন ভাবতেই গায়ে জ্বর ওঠে।
নীরদ :
আপনি লিখিত পরীক্ষার কোচিং করেছিলেন?
নীনা :
না, প্রথম প্রিলিমিনারির আগে চার/পাঁচ
মাস করেছি। কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষার দুমাস আগেই বাদ দিয়েছি। লিখিত, মৌখিক কোনওটির জন্যই ঐমুখো হইনি।
নীরদ :
লিখিত কোচিংয়ে আমি মাসখানেক সময় নষ্ট করেছি।
নীনা :
কোচিং ও সময় নষ্ট, এই টার্ম বুঝতে পারেন
দেখছি।
প্রিলি না দিয়েই?
নীরদ :
প্রিলি না দিয়ে কেউ লিখিত দেয় ? শুনিনি।
ছয়ত্রিশতমে প্রিলিতে উতরেছিলাম।
নীনা :
অনেকেই আছেন লিখিতের প্রস্তুতি আগেই শেষ করেছেন। সে যাই হোক,
পরীক্ষা ভাল হয়েছিল?
নীরদ :
প্রিলিমিনারির রেজাল্টের কদিন পরেই এই ব্যাংকের চাকরিতে আমি ঢুকে
পড়লাম। সকাল সাড়ে নটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা অবধি অফিস করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের
পিছে আর ছুটতে পারলাম না।
নীনা :
যদি সময় বের করা সম্ভব না হয়, বলব এখন
যেখানেই আছেন, সেখানটাকেই সৃজনশীল করে তুলুন। দেখুন,
এর মধ্যেই আনন্দ সঞ্চার করা যায় কিনা।
নীরদ :
চিন্তা করেছি, একটা বাইসাইকেল নেব।
ট্রাফিক জ্যামকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অফ ডে-তে পুরো শহরে ঘুরব।
নীনা :
সেটাও একটা গতানুগতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে না কিছুদিন পরে?
ঐ কাজেও তখন বৈচিত্রের দরকার হবে।
______________________________________________________________________________
পর্ব ২
_______________________________________
১২/০১/১৭, সকাল ১০:১১টা
নীরদ :
আনিসুল হক নিয়ে আপনার নিজস্ব কোনও মতামত থাকলে বলুন।
নীনা :
মেয়র সাহেব? আমার রাজনৈতিক আদর্শ
সূক্ষ্ম বুদ্ধিতে পরীক্ষা করতে চান বুঝি? কিন্তু ওর
সম্বন্ধে ভাল-মন্দ বলার মত খুব বেশি জানাশোনা তো আমার নেই। একটা জিনিস দেখেছি।
মেয়র হওয়ার নেপথ্যে ভোট শিল মেরে দেয়া হয়েছে। এই রকমে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট পড়ার
ঘটনা আমি একটুও বানিয়ে বলছি না, প্রত্যক্ষ করেছি বলতে
পারেন। কীভাবে, কী অসদুপায়ে নির্বাচিত হয়েছেন, নিশ্চয় আমাদের মেয়র অবগত। তবে এই দেশের প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক অবশ্যই।
তাই ভাল-খারাপের মূল্যায়ণও আপেক্ষিক মনে করেন কেউ।
নীরদ :
দেয়ার হ্যাভ বিন এ লট অফ ডিসকাসন এবাউট হিম। দ্যটস দ্য রিজন হোয়াই
আই থট ইউ কনভে ডিফারেন্ট প্রাস্পেক্টিভ এবাউট হিস লাইফ এন্ড ডিডস।
নীনা :
পারহ্যাপ্স, হি ওয়াজন্ট মাই ফিল্ড অফ
ইন্টেরেস্ট। ডু আই সাউন্ড রিডিক্যুলাস নট বিং এন্থাসিয়াস্টিক এবাউট হিম।
নীরদ :
নো। ইউ আর নট রিডিক্যুলাস। বাট আই থিংক হি কুড বি বেটার অপশন ফর
আওয়ার পলিটিক্যাল ফিল্ড।
নীনা :
আপনার উদ্দেশ্যে বলছি না। সাধারণভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। মৃত্যুর পর
মেয়র সাহেবের ব্যাপারে সুনাম কিছু বেশি শুনেছি, ঐটি তার
প্রকৃত মাহাত্ম্য বুঝতে সাহায্য করছে না।
নীরদ :
হা হা। এ তো আমাদের সমাজের কমন ফেনোমেনন। এই দেশের মানুষ- যে
কারও মৃত্যুর পর তাকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বানিয়ে দেয়। বাট ইউ আর টকিং এবাউট হিম
লাইক এ লেফটিস্ট।
নীনা :
এখানে লেফটিস্ট মনে হচ্ছে কেন আমাকে!
নীরদ :
আমার কিছু বামপন্থী বন্ধুদের স্ট্যাটাস দেখছি আপনার উপরের
অভিমতের কিছু সাদৃশ্য আছে।
নীনা :
শুনুন, যাহা বলিব সত্য বলিব, ডান বাম কোনওটি হওয়ার সৌভাগ্যই আমার হল না।
নীরদ :
আপনি ইরানের প্রেসিডেন্ট। মর্ডানাইজড!
নীনা :
গুড জোক। ডান বা বাম কিছু একটা না হলেই চলবে না?
যা হোক; আনিসুল ভাইকে আমি ভাল মন্দ
কোনওটির অর্থ করিনি। মৃত্যুর পর তার সম্মানে পত্রিকায় যেই হারে কলাম, ফেসবুকে স্ট্যাটাস প্রভৃতি লেখা হচ্ছে সেখানটাতে আমি অভিভূত। মৃত্যুর
পরে এসব ফুলঝুরি কারও বিশ্বাস হয়?মেয়র আইডেন্টিটির আগে
ভাল একজন উপস্থাপক, শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যবসায়ী কত পরিচয়ে
ছিলেন যিনি, ঐসবেও কত মহান এবং দিলদরিয়া ছিলেন এই লোকটি,
তা আমি এখনই শুনছি। আমারই ব্যর্থতা হয়ত। তবু মৃত্যুর পর শোনা
দিয়ে বিচার করব কেমন করে? ভাল মানুষ হলে ঈশ্বর অবশ্যই ওকে
উত্তম প্রতিদান দিন।
নীরদ :
আচ্ছা।
১২/৫/১৭, রাত ৮:৫৩টা
নীরদ :
আপনার নিবাস কোথায়?
নীনা :
এখন চট্টগ্রামে। তবে দুহাজার পনের থেকে সতেরর আংশিক পর্যন্ত
ঢাকাতে থাকতে হয়েছিল।
নীরদ :
ঢাকা? ঢাকাতে চাকরি ছেড়ে এসেছেন!
নীনা :
আরে ধুর। খালা থাকেন। মায়ের বড় বোন। চট্টগ্রামে
চেনা পরিবেশে চাকরির পড়াশোনায় বিন্দু বিসর্গ মন বসছিল না আমার, জানতাম। তাই এনভায়রনমেন্ট চেঞ্জের প্রয়োজনে ঢাকাতে ডুব দিয়েছি।
নীরদ :
এনভায়রনমেন্ট চেঞ্জ করতে ঢাকাতে!
ঢাকাতে ধুলোবালি আর শব্দদূষণের ভয়ে বের হতেও তো বুকের পাটা লাগে।
আমার বোধহয় সেটাই নেই। জ্যাম তো আছে ধ্রুব সত্যের মত।
আজ গিয়েছিলাম নীলক্ষেতে। সবেধন নীলমণি ছুটির দিনটি মাটি হল।
নীনা :
পরিবেশ বলতে মাটি পানি বায়ু কে বোঝাচ্ছে! এনভায়রনমেন্ট চেঞ্জ
বলতে, পরিচিত বৃত্তের বাইরে যেখানে আপাতত কোনও বন্ধু নেই,
কাউকে সময় দেওয়ার দায় নেই, মাথা দশদিকে
বিক্ষিপ্ত হবে না, লেখাপড়াতে ধ্যানস্থ হব সেই উদ্দেশ্যে
ঢাকাতে কিছুদিন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।
নীলক্ষেতে বই কিনেছিলেন? পরামর্শপ্রার্থীদের
আমি কতগুলো বইয়ের সাজেশন দেই, তার বেশ কিছু বই
প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভার
নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া পাওয়া যায় না। মিরপুরে একটা লাইব্রেরি আছে। ওখানে খুঁজলেই সব
পাই।
আর হ্যাঁ, উপন্যাসের কথা বলছি মনে করে
মিলিয়ে ফেলবেন না।
নীরদ :
নীলক্ষেতে চাকরির বইয়ের খোঁজ করতেই গিয়েছি। কিন্তু শক্তি
চট্টপাধ্যায়ের কবিতার বই দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। আচ্ছা, চট্টগ্রামের আবহাওয়া এখন কেমন?
নীনা :
দশ বছরের জন্য ধুলোবালি ছাড়া আর কিছু চোখে দেখব বলে তো আমার মনে
হচ্ছে না, এটা আমি হলফ করতে পারি। আর শীতের কথা বললে,
সম্পূর্ণ শীত এখনও নামেনি।
নীরদ :
সকালে আম্মা ফোন দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে
বৃষ্টি হয়েছিল নাকি। ঢাকার কী হাল জানতে চেয়েছেন। তার দাবি, ঠাণ্ডার মধ্যে আমি যেন বাইরে না যাই।
নীনা :
সুইট মাম্মা।
নীরদ :
কিন্তু দুপুরে হালদা দেখতে গিয়ে আমার হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি
লাগাতে ইচ্ছে করছে।
১২/১০/১৭, রাত ১২:১৮টা
নীনা :
চট্টগ্রামে আসলেই শীত বৃষ্টি দুটোই গলা জড়িয়ে ধরেছে।
নীরদ :
কই। ঢাকাতে শীতের দেখা নেই। হুট করে আসা এক পশলা বৃষ্টিটাই
ঠাণ্ডা লাগিয়ে দিতে পারে অবশ্য।
১২/১০/১৭, বিকেল ৩:৪৯টা
নীনা :
আপনার প্রস্তুতি কেমন? ঊনত্রিশ তারিখ
বেশি দেরি নেই।
নীরদ :
মাঝামাঝি মতন। এক্সাম ডেট পেছাবে কি?
পাঁচদিন ধরে আপনার দেখা নেই। একটা প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে,
প্রশ্নটির জন্য হাত নিশিপিশ করলেও সুযোগ পাইনি। আপনি কবিতা শোনেন?
নীনা :
ডেট পেছাবার কোনও সম্ভাবনা নেই।
ও হ্যাঁ, কবিতার জন্য আমার একটা
প্লাটফর্ম আছে। শিল্পকলা একাডেমির একটা দল। আবৃত্তিদল, নাম
অযান্ত্রিক।
নীরদ :
আসলেই? বাহ! অযান্ত্রিক খুব সুন্দর নাম।
আপনি পরীক্ষার জন্য আবারও আদা জল খেয়ে নেমেছেন বোধহয়। তাই কবিতার
কথা আপাতত থামিয়ে দিচ্ছি। পরে এই বিষয়ে চুটিয়ে গল্প করব।
নীনা :
হা হা। হাসি পাচ্ছে আপনার কাণ্ডে।
হ্যাঁ। কিছু রুটিন প্ল্যান করা ছিল এজ ইজুয়াল। সেটাই নিজের উপর ইন্সটল
করে নিলাম। মানে পরীক্ষা আসলে নিজের উপর বরাবরই চাপিয়ে দিই। রুটিন হল প্রোগ্রাম,
আমাকে সেক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার ভাবতে পারেন।
নীরদ :
হাসুন।
কিন্তু অযান্ত্রিকের মুখে যন্ত্রের নিকেশ কেন? অবশ্য এরকম প্রোগ্রামড হয়ে আমিও চলেছি বৈ কী একসময়। এখনও। কিন্তু মন ঠিকই
উড়িয়ে দিয়েছি।
১২/১৮/১৭, রাত ১১:১২টা
নীনা :
যন্ত্র থেকে মুক্তির আশা তো কবর দিইনি। আটকে আছি, এইটুকুই যা যান্ত্রিক। তাও শরীরটা, মনটা নয়।
বিশ্রাম নিচ্ছি। কবিতার আলাপ চলতে পারে।
নাহ, কবিতা নয়। অন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ
কথা আছে আমার। নিচের এই লেখাটি থেকে তথ্যোদ্ধার করতে পারেন কিনা দেখুন তো!
অনুমতি না নিয়েই চাপিয়ে দিচ্ছি কিন্তু। ইম্পোর্ট্যান্ট।
২.
আমার ভাল লাগছে না। -বলেই সামান্য উদাসীন ভঙ্গিতে উপরে নিঃসীম
বরাবর তাকাল রুম্মন। তারপর ব্যাকুলভাবে একটা আশা খুঁজতে চাইল সে- “আমি আর
পারছি না।”
উত্তর আগে দিয়েছিল মৌমিতা। আবার একই কথা বলতে হল- “এরচে
ভাল আর কী হতে পারত, সোনা আমার!”
“আমি তোমাকে ছাড়া থাকতেই তো পারব না। এক সংসারে থাকতে
হবে।”- এই বলে রুম্মন আর কিছু শুনতে চায়নি। ঘড়ি দেখতে দেখতে বত্রিশ বছর
বয়সের যুবকটি এসে পড়েছিল ততক্ষণে। মৌমিতা চিনতে পেরেছিল। উঠে গেল একই সাথে। দুজন
চার মিনিট কিছু বলেছিল ঐ পাশে। রুম্মনের চোখে অজান্তে পানি পড়েছিল টপ করে।
“কী হচ্ছে?”- মৌমিতা চেচিয়ে
উঠেছিল। শান্ত হল রুম্মন- ঐ লোকটির সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে একটু হেসে রসিকতাও
করে ফেললে একটা- “মৌমিতাকে এত বিশ্বাস করছেন কীভাবে? না হলে আপনার কাছে আমাকে তুলে দিতে পারত সে?”
হাসল। সবাই। নতুন করে কারওরই কিছু বলার নেই। আগেই সব চূড়ান্ত
করেছে। বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম সোসাইটিকে ফাঁকি দেবে এই চারজন, ট্যাবু। সব তো ঠিক। রুম্মনের কেন ভাল লাগছে না তবু?
তিনজন একসঙ্গে নৌকাতে ঘুরবে। একজনের মন খারাপ। চতুর্থজন আসেনি।
অজুহাত দেখানোর কথা তো তার নয়- মৌমিতাকে বোঝাতে চেয়েছিল ঐ যুবকটি।
তার মানে শান্তনু আসেনি বাস্তব কোন গোলমালে পড়ে। মৌমিতারও মনে
হল, শান্তনুর উপরে এই তিনজনের রাগ করবার যুক্তিসঙ্গত কারণ
আছে। “এই দিনটার জন্য অন্য কোথাও ম্যানেজ করে নিতে না পারা এমন কী অসম্ভব ছিল
শান্তনুর!”
“তুমি বুঝবে না মৌমিতা, তোমার
বোঝার কথাও নয়”- বলেই অভিমানে মুখটা একশো আশি ডিগ্রি ঘু্রিয়ে লোকটার সাথে
পানসে হাত মিলিয়ে দ্রুত উঠে পড়েছিল রুম্মন। ভ্যানিটি ব্যাগ আর কামিজ দুলিয়ে
সিরিয়ালের নায়িকার মত হনহন করে ওর চলে যাওয়ার দৃশ্যটিতে বাকি দুজন ফ্যালফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকল।
ঘাটটা অন্ধকার!
১.
“জ্বি কেমন আছেন?”
মেয়েটি কথা বলল না। মাথায় একটা সম্মতিসূচক ভঙ্গি দেখাল। একই
জায়গায় থাকলে শান্তনু নিশ্চয় ‘ভাল আছি’ বলতে কার্পণ্য করত না, মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোত
ওর।
প্রথম আচরণ থেকে বোঝা গেল মেয়েটি গতানুগতিক।
নাশতার অর্ডার দিয়ে শান্তনু কথা বলতে শুরু করে। এই গুণটি তার
আগে ছিল না। অন্য পক্ষের জড়তা দেখলে সে দিব্বি পরিচালকের আসনে বসতে পারে। শান্তনু
ভাবতে থাকে, মেয়েটিকে ভাল লাগার মত শক্ত কিছু সে খুঁজে
পাবে তো আদৌ!
না, কোথায় পড়ছে, কোথায় চড়ছে এসব প্রশ্ন দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে না শান্তনু।
মেয়েটি কী চায় যদিও সে জানে না, তবু নিজের বিরক্তি ধরে
যায় এমন গল্প সে নিজের গরজে শোনাতে চায় না। তারপরও…
“আমি কিন্তু বেকার।” শুনে মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে আছে। তবে ঠোঁটটা কেমন অভিনয় করে বাঁকিয়ে নিয়েছে, সূক্ষ্ম একটা ছিদ্র দিয়ে মেয়েটির দাঁত টের পাওয়া যায়। একটু পর অবশ্য
হাসি চোখের নিচে আর চিবুকে প্রসারিত হয়েছে তার। মেয়েটির হাসি বেশ, চিন্তা করল শান্তনু। হাসি ভাল লাগলেও হাসি কারণটা বিরক্ত লাগে।
গতানুগতিক কারণ। মেয়েটি মনে মনে ওর এসব কথাকে আনপ্রফেশনাল ভাবছে।
“আপনার সম্পর্কে আমি জেনে নিয়েছি।”
মেয়েটি অদ্ভুত সুন্দর। ঠিক আর দশ-বারটি মেয়ের মত নয়। চিবুক
থেকে হাসি এখনও সরায়নি। চোখে মাশকারা লাগিয়েছে শুধু তার জন্য। ভাবতে ভাল লাগে। ‘জেনে নিয়েছি’ বলে মেয়েটি মনের অকৃত্রিম তথ্য
পরিবেশন করতে পারে। অন্তত আর কোন মেয়েকে শান্তনু এই কাজে দেখেনি।
শান্তনু খুশি হয়েছে এই ভাবটা গোপন করল এবং গতানুগতিক প্রশ্ন করল
কিছু। যথারীতি উত্তর দেয়ার পরে মেয়েটি সারমর্ম করেছিল এই ভাবে– “আপনার
সম্পর্কে অনেক খবর আমি জেনেছি, কিন্তু আপনি আমার কোন খবর
শোনেননি। আমার পরিবার আপনাকে জানাবে অবশ্য এটাও আশা করা যায় না। আমি কিন্তু
ডিভোর্সি।” টেবিল থেকে ওঠার আর রেস্টুরেন্টের গেইট ধাক্কানোর সামান্য আগে
জানাল মেয়েটি। ডিভোর্সের তথ্যটা শোনার আগে শান্তনু জানতে চেয়েছিল- মেয়েটি ফোনে
কথা বলবে কিনা।
বাসে উঠে বাসায় ফেরার পথে শান্তনু একটা ফোন দিয়েছিল। মেয়েটি
মোবাইল সাইল্যান্ট রেখেছিল সম্ভবত, গতানুগতিকভাবে মেয়েরা
যেটা করে। তারপরও এই মেয়েটির মধ্যে অন্য কিছুর আভাস টের পাচ্ছে শান্তনু। একটা
টেক্সট করে, শোনাতে চায় একটা প্ল্যান আছে।
মেয়েটি দুদিন পর এক আশ্চর্য তথ্য দেয়। তথ্যটা শান্তনু
সম্পর্কে। শান্তনু বিব্রত হয়। মেয়েটি জেরা করে। “আমি আমার সত্য আপনাকে
জানিয়েছি, আপনি কিন্তু ঠিকই নিজের কথা লুকিয়ে
গেছেন।”
ফোনের ওপারে মেয়েটি থাকলেও ঘাম মুছতে হল শান্তনুকে। “আপনি
কীভাবে জানলেন।”
“প্রথম দিনই কিন্তু বলেছি। আপনার সম্পর্কে সব জেনে নিয়েছি
আমি।”
“তাই বলে এতখানি! এ যে ভয়ঙ্কর!”
মেয়েটি এবার বলে– “আমরা বিয়ে করলে কেমন হবে।”
শান্তনু ইতস্তত করে বলে– “আমার সব জেনেশুনে?”
মেয়েটি বলেছিল, “আপনি আমার
সম্পর্কে সবকিছু জানেন না। শুধু আমি যা-ই বলি বিশ্বাস করছেন।”
______________________________________________________________________________
পর্ব ৩
_______________________________________
১২/১৯/১৭, দুপুর ১২:৫৭টা
নীরদ :
বেশ কয়েকবার পড়েছি, মনে হচ্ছে নিজেই
কয়েক লাইনের এই ছোট গল্পের ভেতর আটকে পড়লাম। কোনও ক্লু নেই।
নীনা :
কিন্তু আপনাকে যে জট ভাঙতে হবে! দ্বিতীয় দৃশ্যটি শুরুতে এনেছি
রহস্য তৈরির জন্য।
আমি ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন করে যাচ্ছি। একটির পর একটির উত্তর
দেবেন আপনি।
শান্তনুর সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করেছে, সেই মেয়েটির নাম কী, আমাকে বলুন।
নীরদ :
সে নিঃসন্দেহে মৌমিতা।
নীনা :
বাহ!
এখন আরও গভীরে আপনাকে যেতে হবে। শান্তনু বাকি তিনজন বন্ধুর সাথে
সদরঘাট ঘুরতে এল না। রুম্মন বলেছিল, শান্তনুর না আসার
কারণ সে জানে, মৌমিতা না জানুক, তবু
জানে।
প্রশ্নটি সেখানে নয়, শুনবেন। শান্তনু
এল না এই কারণে কার মন খারাপ? রুম্মনের? মৌমিতার? নাকি বত্রিশ বছরের ঐ যুবকের?
আপনি বিরক্ত হচ্ছেন? গল্পটির নেপথ্যে
একটি বিশেষ কারণ আছে।
নীরদ :
মৌমিতার মন খারাপ?
হাহা, যা তা রহস্য করছেন আপনি।
নীনা :
উহু। এই উত্তরটি হল না। মৌমিতা খুব সামান্য রেগে আছে গেছে বটে।
কিন্তু মন খারাপটি তার নয়। তবে কার?
আরেকটি সূত্র দিচ্ছি। রুম্মনের সাথে বত্রিশ বছরের ঐ যুবকের বিয়ে
হবে, তা আঁচ করে নেওয়া যায়।
আমার তৃতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে- সোসাইটির চোখকে কীভাবে ফাঁকি দেবে
তারা?
নীরদ :
দ্বিতীয় সমস্যার সমাধান না দিয়ে তৃতীয় সমস্যায় চলে গেলেন?
নীনা :
দ্বিতীয় প্রশ্নটি আপাতত পজ নিয়ে নিচ্ছি। হুল্লোড় নেই। আপনার যখন
সময় হবে।
নীরদ :
আপনি চাইলে এখনই জানিয়ে দিতে পারেন। সোসাইটির চোখ ফাঁকি দেয়ার
ঘটনা কী হতে পারে? তাদের সম্পর্কের কথা গোপন থাকবে?
নীনা :
আমি জানাব কেন, স্যার? জট তো আপনাকে খুলতে বলছি।
গোপন রাখবে ঠিক। কিন্তু এই প্রথম এমনভাবে তারা গোপন রাখবে যেভাবে
আগে কেউ রাখেনি অথবা রেখেছে বলে শোনা যায়নি কোথাও।
নীরদ :
আচ্ছা, কেন ফাঁকি দেবে, কীইবা ফাঁকি দেবে?
নীনা :
তাৎপর্যপূর্ণ নিচের এই দুই অংশে আবার নজর দিন :
এক. শান্ত হল রুম্মন- ঐ লোকটির সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে একটু
হেসে রসিকতাও করে ফেললে একটা- “মৌমিতাকে এত বিশ্বাস করছেন কীভাবে? না হলে আপনার কাছে আমাকে তুলে দিতে পারত সে?”
হাসল। সবাই। নতুন করে কারওরই কিছু বলার নেই। আগেই সব চূড়ান্ত
করেছে। বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম সোসাইটির চোখকে ফাঁকি দেবে এই চারজন, ট্যাবু। সব তো ঠিক। রুম্মনের কেন ভাল লাগছে না তবু?
দুই. মেয়েটি দুদিন পর এক আশ্চর্য তথ্য দেয়। তথ্যটা শান্তনু
সম্পর্কে। শান্তনু বিব্রত হয়। মেয়েটি জেরা করে। “আমি আমার সত্য আপনাকে
জানিয়েছি, আপনি কিন্তু ঠিকই নিজের কথা লুকিয়ে
গেছেন।”
ফোনের ওপারে মেয়েটি থাকলেও ঘাম মুছতে হল শান্তনুকে। “আপনি
কীভাবে জানলেন।”
“প্রথম দিনই কিন্তু বলেছি। আপনার সম্পর্কে সব জেনে নিয়েছি
আমি।”
“তাই বলে এতখানি! এ যে ভয়ঙ্কর!”
মেয়েটি এবার বলে– “আমরা বিয়ে করলে কেমন হবে।”
নীরদ :
তারা নিজেদের মধ্যে ম্যারেড? পরে আবারও
বিয়ে!!
নীনা :
এখানে দুটি নারী চরিত্র। মৌমিতা এবং রুম্মন। বাকি দুটি পুরুষ।
কেউ এখনও ম্যারেড নয়। শুধু প্ল্যান করেছে।
খুব টর্চার হচ্ছে কি এই খেলা? আমি
দুঃখিত। রহস্যটি অত্যাচার মনে হলে বিনা দ্বিধায় আমার বিরুদ্ধে নালিশ করবেন,
প্লিজ।
নীরদ :
হা হা, কার কোর্টে?
আরে নাহ। অত্যাচার নয়। কেমন যেন বুঝতে পারছি না।
নীনা :
মিসটেরির অভ্যেস নেই আপনার।
যাক। এটুকু নিশ্চিন্ত হলাম। বইপড়ুয়া এটির সার আঁচ করতে পারে
না। আমি যেমন চেয়েছিলাম।
হ্যাঁ এভাবেই কলেবর বাড়বে। পরীক্ষার জন্য আপাতত হাত লাগাতে
পারছি না।
নীরদ :
সত্যি বলছি। এটি অসম্পূর্ণ গল্প, এবং
আপনার লেখা হতে পারে, এইটা কিছুটা অনুমান করেছিলাম।
১২/২০/১৭, সকাল ৬:৫৬টা
নীরদ :
এই যে…
নীনা :
‘প্রেমিক’ নামের ঐ ছোট গল্পটির জন্যে
চাপ সৃষ্টি করেছি আপনার উপর। আমিও খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমার কাছে হার্ডকপি আছে। ফটো
তুলে দিলে অস্পষ্ট মনে হতে পারে। ঐটি খুঁজে পেলে আমার কাঁচা হাতের লেখা আপনাকে
ধৈর্য নিয়ে পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করতে হত না। রহস্যও পরিষ্কার হয়ে যেত। যদিও দুটো
ভিন্ন আঙ্গিকের লেখা। শুধু বিষয়বস্তু এক। আমার গল্পটি
আগে লেখা হয়েছে।
নীরদ :
আমিও জান্নাতুনের প্রোফাইলে খুঁজে দেখেছি। কিন্তু পাইনি।
যাই হোক, আপনার উপন্যাস শেষ করুন,
অপেক্ষায় থাকলাম।
নীনা :
কখনও এটির শেষ হবে, নাকি আর হবে না,
তার কোনও ঠিক নেই।
আমাকে নিচের অংশটি থেকে কী জেনেছেন বলুন :
উত্তর আগে দিয়েছিল মৌমিতা। আবার একই কথা বলতে হল- “এরচে
ভাল আর কী হতে পারত, সোনা আমার!”
“আমি তোমাকে ছাড়া থাকতেই তো পারব না। এক সংসারে থাকতে
হবে।”-এই বলে রুম্মন আর কিছু শুনতে চায়নি।
নীরদ :
আমার পরীক্ষা নিতে আপনি অস্থির হয়ে পড়েছেন।
মৌমিতা এবং রুম্মনের সম্পর্ক কী তা সত্যিই অনুমান করা যাচ্ছে না।
নীনা :
প্রেমিক। তাদের সম্পর্ক প্রেমিক।
নীরদ :
প্রেমিক?! এজ ফার আই নো, বোথ অফ টু, মৌমিতা এন্ড রুম্মন আর গার্লস!
নীনা :
ইয়েস অফকোর্স। দে আর গার্লস। বিয়ে হবে মৌমিতার সাথে শান্তনুর। রুম্মনের
সাথে অন্য যুবকটির। কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক উল্টো। মৌমিতা এবং রুম্মনের। শান্তনু
এবং যুবকটির। প্রেমিক যেন দূরে সরে না যায়, আবার সমাজের
চোখেও ধুলো দেওয়া যায়, সেই প্ল্যান করে, সব ভেবে-চিন্তে চারজন একটি চুক্তিতে এসেছে।
আমি বিশ্বাস করি, গল্পের মাহাত্ম্য এর
মাঝেই আপনি বুঝে গেছেন। জানেন- জান্নাতুন প্রীতির ঐ গল্পে পুরোটাই লাশকাটা ঘরের
একটি মাছির সংলাপ ছিল, মাছির শেষ কথা- “মেয়েটির
প্রেমিকটি সম্ভবত পুরুষ হতে চেয়েছিল; নারী হতে যেমনটি
চেয়েছিলাম আমি।”
নীরদ :
সমাজের চোখ ফাঁকি দিয়ে… এইটুকু পড়ে এমন কিছু ভেবেছি আমি।
কিন্তু আপনার মানসিকতার গভীরতা সম্পর্কে আমার পূর্বানুমান না থাকার ফলে এই
স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লিখবেন, তা আমি বিশ্বাস করতে
পারিনি। যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য আপনি এতই উদার হতে পারেন, জেনে
ভাল লাগছে।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৪
_______________________________________
১২/২১/১৭, রাত ১১:২৬টা
নীরদ :
‘রূপকথার গল্প’ দ্বিতীয় বারের মত দেখার
পর গতকাল একটি স্ট্যাটাস দেই। ভুলেই গিয়েছিলাম আসলে। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারি
আগের দেখা। তবুও পুরো শেষ না করে উঠিনি।
নীনা :
আপনার বাইসাইকেলপ্রীতির নমুনা এই লেখায় টেনে এনেছেন। খুব মজার
লোক মশাই আপনি, বই পড়েন, ছবি
দেখেন, আবার যান্ত্রিক চাকরিটাও কীভাবে যে সামলান!
অদ্ভুত।
তৌকির আহমেদের নির্মাণের কথা বলছেন। তার চলচ্চিত্রের ভাষা নিয়ে
তো বিতর্কের সুযোগ নেই, তাকে খুব শিক্ষিত পরিচালক মনে হয়।
‘জয়যাত্রা’ আপনার নিশ্চয় দেখা।
সত্যি বলতে, এইটের মত হৃদয় কেঁপে যাওয়া আর কোনও সৃষ্টি
বাংলাদেশে আমি দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। ‘রূপকথার গল্প’ও চমৎকার।
নীরদ :
আপনার আমার বেশ ভাল জমে গেছে দেখি! শুনুন, গতরাতের মজার এক ঘটনা! সময় প্রায় তিনটা, ঘুমানোর
প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করার সময় একটা রিভিউতে চোখ আটকে যায়।
রিভিউ পড়েই বিপদে পড়ে গেলাম খুব। কমেন্ট বক্সে লিংক দেয়া আছে, আর ঠেকায় কে? দেখতে দেখতেই হুট করে সুবাহা
সাদিকের আযান ভেসে এল। বুঝতে বাকি রইল না সপ্তাহের শেষ দিনে অফিসের সময়ে আজাব
নাজিল হবে। আল্লাহ-ভরসাতে গেলাম ঘুমিয়ে। মোবাইলের
ভাইব্রেশন। কল রিসিভ হতেই অন্যপ্রান্তে কলিগের কন্ঠ “ভাই
আপনি কই?” উত্তর দিতে দিতে সময় দেখে আমার চোখ
ছানাভরা। দশটা বেজে বিশ মিনিট!
বাকিটা ইতিহাস । হাহাহা।
নীনা :
এমন মহার্ঘ্য কোন ছবি?
নীরদ :
অরিন্দম শীলের। ধনঞ্জয়, এই বছরের।
দেখেন, কিন্তু আমার মত ডুবে যাবেন না,
ভেসে উঠবেন কিন্তু। নাহয় সর্বনাশ হতে পারে। ডোন্ট ওয়েস্ট ইউর
টাইম বিফোর থার্টি এইট বিসিএস প্রিলিমিনারি এক্সাম।
নীনা :
পরীক্ষার আগে সবকিছুই বন্ধ আছে। একটাই তো মাস কষ্ট হয়। একাডেমি
লাইফেও যেমনটা হত। তাই সেটা আর গায়ে মাখছি না। ব্যাংকে পরীক্ষা দিলে হয়ত সারা
বছরেই সেঁটে থাকতে হত।
নীরদ :
তা ঠিক।
১২/২৪/১৭, রাত ৮টা
নীরদ :
নীনা, সেন্টার কোথায়?
নীনা :
পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, নাসিরাবাদে।
নীরদ :
বাসা পাশে?
১২/২৯/১৭, দুপুর ২:৫১টা
নীনা :
দুঃখিত, লম্বা সপ্তাহ হয়ে গেল ফিরতে।
আপনার রিপ্লে দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
বাসা এই তো, একটা স্টপেজ আগেই ছিল।
জানেন, আজ বমি করে দিয়েছি। পরীক্ষা দিয়ে এলাম। সময় কাভার
দিতে পারিনি। শরীরে শক্তি পাচ্ছিলাম না এক রত্তি।
পরীক্ষা দিয়েছেন?
নীরদ :
হ্যাঁ, দিয়েছি। চট্টগ্রামে এসে।
কেন এত টেনশন নিতে গেলেন শুধু শুধু!
নীনা :
সাইত্রিশতমের দুর্ঘটনার পর আটত্রিশতমেও ব্যাম্বো দিলে চল্লিশের
দিকে ছিটকে যাব যে। ঊনত্রিশ স্পেশাল, শুধু ডাক্তারদের
পরীক্ষা হবে। আমি তো জেনারাল। তাই আগের প্রিলিমিনারি, লিখিত,
ভাইভার সব বই একত্রে গিলতে গিয়ে যন্ত্রে ধকল বেশি দিয়ে ফেললাম।
ফলস্বরূপ হিতে বিপরীত।
নীরদ :
এই কদিনে যেটুকু জেনেছি আপনাকে তো ক্যারিয়ার নিয়ে অত সিরিয়াস মনে
হয়নি কখনও। পড়বেন সে ঠিক আছে, কিন্তু না হলে ভেঙে পড়বেন
এমন মনে হয়নি।
নীনা :
কারণ আছে। আমি ক্যাডারের পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোথাও পরীক্ষা
দেইনি। বাকি যেখানে এটেন্ড করেছি ওসব চড়ুইভাতির মত। আমি সরকারে নয়তো শিল্পকলা
দুটোর কমপক্ষে একটাতেই থিথু হতে চাই। কিন্তু শিল্পকলা পেশা হিসেবে দেখবার সুযোগ কই
হল আমার। তা তো সৌখিন।
একটা আপসেট কয়েক ব্যাচ দূরে টেনে নামাতে পারে এটা ভেবে বেশি চাপ
পড়েছে আসলে।
নীরদ :
এখন কী অবস্থা শরীরের? খেয়েছেন?
আমি করেছি কী সেন্টার থেকে বেরিয়েই বন্ধুদের সাথে আড্ডয় মশগুল
হয়ে পড়েছি চেরাগির পাহাড়ে। বাসায় ফিরে দেখি আম্মা না খেয়ে আমার জন্য সেই বসে আছেন।
নীনা :
খুব খারাপ। মা কেমন তা জানতেন না বুঝি!
বাসায় এসে তো আবারও বমি হয়েছে।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে বুঝিনি খারাপ হবে। প্রশ্ন
অনুকূলে। শুধু নব্বই শতাংশ নিশ্চিত এমন গোলা না দাগিয়ে ফেলে এসেছি। এদিকে ঘড়ি ছিল
বেজায় দূরে। হতভাগীর চোখের অবস্থা যে এত নষ্ট, আগে বুঝতেই
পারিনি, চশমাও পরিনি এদ্দিন। তাতেই মায়োপিয়ার কারণে সময়
ভুল দেখি। আসলে সময় একদম খেয়ালেই ছিল না বলতে পারেন। কত্ত স্লো মোশনে ওএমআর পূরণ
করি আল্লাহ জানেন। বিশ/পচিশটির মতন আয়ত্তের বিষয় যদি উত্তর না করি কেমন লাগে বলুন
তো!
প্যারাসিটেমল নিয়ে শুয়ে আছি এখন। ভাত খেলাম এই অল্প।
নীরদ :
আপনি এখনও দুশ্চিন্তা করছেন! মহাবিশ্বে খুব সামান্য কিছু দিনের
জন্য আমাদের যাত্রা। সময় এমনিতে বয়ে যাবে। এত ভেবে কী হবে বলুন।
নীনা :
সামান্য কয়েকটি দিনের জন্যি । কিন্তু নিজের শরীরের বোঝা তো
নিজেকেই টানতে হবে, না কি? অন্যের
পায়ে দিয়ে হাঁটলে মুড়ো ভেঙে দেবে।
নীরদ :
আচ্ছা ধরুন, আমার বা আমার জানাশোনা
বন্ধুটির ভাল সরকারি চাকরি হল না। ছোট্ট চাকরি নিয়ে দুবেলা দু মুঠো খাবার জুটিয়ে
কাটিয়ে দিলাম জীবন। তা বলে মানুষ হিসেবে নিজেদের কি খুব ফেলনা ভাবব?
অথবা একজন ফরেইন ক্যাডার পেলেন। তিনি মানুষের বাইরে অতিমানবীয়
মর্যাদা দাবি করতে পারেন?
তবে এটা ঠিক প্রস্তুতি থাকার পরেও পরীক্ষা খারাপ হলে কষ্ট বেশিই হবে।
আপনার ঠিক সেই বোধটাই হচ্ছে , নিজের উপর রাগ হচ্ছে খুব,
নিশ্চয়? এখন বরং রেস্ট নিন।
১২/২৯/১৭, রাত ১১:৪৯টা
নীরদ :
ম্যাম।
নীনা :
জি স্যার!
নীরদ :
আপনার মত অন্য একজনের গল্প শুনবেন?
নীনা :
কেমন সে?
নীরদ :
আমার বন্ধু। পরীক্ষা শেষে বাতিঘর বইয়ের দোকানে আসবার কথা। এদিকে
পরীক্ষা ভাল হয়নি বলে মন খারাপ করে বাসায় চলে গেল। মোবাইলও বন্ধ। আর আমি দু ঘন্টা
ধরে বাতিঘরে অপেক্ষাই করে গিয়েছি। সারাদিনে কোনও যোগাযোগ নেই। কিছুক্ষণ আগে টেক্সট
পেলাম।
নীনা :
আমার কথা বলছি। মন খারাপের চেয়ে বেশি দুর্ঘটনাবোধ কাজ করছে।
বিশ্বাস হতে না চাওয়ার মত। আপনার এক পায় আপনি আট/দশ ফুট অতিক্রান্ত হয়ে যেতে
সক্ষম। কিন্তু আপনাকে মাত্র পাঁচ ফুট প্রস্থ- কিন্তু অতল গভীরতার খাদের এক প্রান্ত
থেকে অন্য প্রান্তে রিস্ক নিতে বলা হল। বুক কাঁপবে না? বাই
চান্স পা যদি ফস্কে যায়! আপনার সামর্থ্যের চেয়ে আপনার মৃত্যু বা পতনের ন্যূনতম
সম্ভাব্যতা এখন আপনার মানসিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
আপনার বন্ধুটির নাম কী?
নীরদ :
বাহরে। মনে হচ্ছে নাম বললে চিনে ফেলবেন! বেশ লোক আপনি।
আমার বন্ধুর নাম সুপ্রকাশ সেতু। সুপ্রকাশের রিএক্ট দেখেও অনুমান
করতে পারি বৈ কী।
হ্যাঁ, আপনার এটিও মন খারাপের সংজ্ঞায়
পড়ে। আমার ক্ষেত্রে ঘটলে হয়ত আরও বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাব।
নীনা :
আচ্ছা যাক। এসব ছাইপাঁশ। চলুন না আমরা সেদিনের সিনেমার কথাই বলি।
নীরদ :
ঠিক। আজ সন্ধ্যায় কজন ইচ্ছে করেই হাল্কা বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা
করেছি, যেন পরীক্ষা টরিক্ষা এসব মরণ এভয়েড করা যায়।
জ্বর ভাল হয়েছে এখন?
নীনা :
ঝেড়ে কেশেছি।
নিন। কমাস আগের। আমার কথা হুবুহু মিলে গেছে এখানে। তাই রিভিউটা
আপনাপনি লেখা হয়েছে। আপনি রিভিউ পড়ে লোভ সামলাতে পারেন না বলেছেন, এ জন্য যাচাই করে দেখব।
স্পয়লার হবে কি না বুঝতে পারছি না অবশ্য।
“মর্মস্পর্শী অংশটুকু তুলে ধরা হয়েছে। গল্প আছে ইঙ্গিতে।
একনিষ্ঠ এক ধর্মপ্রচারক, যার মনে কোন
পাপ নেই- ধর্মের বাণী পৌঁছে দিতে সে পাড়ি দিতে পারে ভিনদেশে। পর্তুগাল ছেড়ে যেতে
পারে সে জাপানে।
এমন যদি হয় আপনিই সেই ধর্মের দূত। ভিনদেশে গিয়ে শিকার হলেন
নির্যাতনের। বন্দি করা হয়েছে আপনাকে, আপনারই চোখের সামনে
মেরে ফেলা হচ্ছে শান্তির বাণী প্রচারের পর আপনার ধর্মে দীক্ষিত হওয়া পরম প্রিয়
অনুসারীদের। এরপর নৃশংস খুনীরা আপনাকেই বলছে তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে, শুধু তাই নয়- এই কাজে আপনাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যেতে হবে আপনার নিজের
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, হতে পারে ত্রিপিটক, কোরান, বেদ; বা আপনি
খ্রিস্টান হয়ে থাকলে জেসাসের কোন পবিত্র ছবির উপর ফেলতে হবে আপনার পা, ফেলতে হবে থুথু ঐ জিনিসটির উপর যাকে আপনি এতদিন অতি সাবধানে স্থান
দিয়েছিলেন মাথা আর কপাল ছোঁয়ানোতে।
আপনি রাজি নন। প্রাণ দিয়ে দেবেন, তারপরও
কোরানের বা জেসাসের উপর পা দেবেন না- এটাই ঠিক করেছেন। কিন্তু শত্রু আপনার সামনেই
গর্দান ফেলে দিল আপনার বন্ধুর, টুকরো টুকরো লাশ করে
দেয়ার হুমকি দিল ওদের হাতে জিম্মি আপনার অসংখ্য অনুসারীদের। আপনার নিজের প্রাণের
ভয় না থাকতে পারে। কিন্তু ওদের জীবন? কী সিদ্ধান্ত নেবেন
মহামান্য আপনি এখন?
অত্যাচার অবিচার নৃশংসতা! ঈশ্বর কি দেখেও দেখেন না? কোথায় তাঁর অলৌকিকত্ব! কেন তিনি রক্ষা করছেন না তাঁর ধর্ম, তাঁর দাসদের?
কোথায় কোথায় সে দয়াময় আছিলেন/ বেহেস্তের কোন বাগিচায় থাকলে
পরে বান্দার কান্দন তাঁর কানে না পশায়!
এই হল ‘সাইলেন্স’-এর রহস্য।
ঠিক সেই মুহূর্তে জেসাস যদি বলে ওঠেন- “পা দাও, পা দিয়ে মাড়িয়ে যাও আমার ধাতব নির্মিত ছবির উপর…
কাম এহেড নাউ
ইটস অলরাইট
স্টেপ অন মি।
আই আন্ডারস্টযান্ড ইউর পেইন।
য়াই ওয়াস বরন ইন্টু দিস ওয়ারল্ড টু শেয়ার মেন্স পেইন।
ইউর লাইফ ইস উইথ মি নাউ।
স্টেপ।
ভয়াবহ রকমের কান্না পেয়েছিল জেসাসের এই অসম্ভব উদার ডাক শোনার
পর। যদিও ব্যাপারটা কাল্পনিক, সাইলেন্স ভাঙেনি তাঁর।
কিন্তু এমনই তো হবেন ঈশ্বর, বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়া ঐ
লৌকিক ধর্মভীরুদের মত নিষ্ঠুর তিনি হবেন না কখনও। ওহ হরি, হে জিশু, ও আল্লাহ্!
মার্টিন স্কর্সেসের দ্য ডিপার্টেড আমার প্রিয় ছবি। কিন্তু যে
মেসেজ তিনি ‘সাইলেন্স’এ পৌঁছে
দিলেন তার ধারে কাছে তার অন্য সব ছবি এগোতে পারবে না।
ছবিটির দুর্বলতা রয়েছে। বিষন্নতার মধ্যে বৈচিত্র খুঁজে পাওয়া
যায়নি শেষ নাগাদ। বিষন্নতা আরও গভীরে মুচড়ে দিতে পারত। অথবা দীর্ঘ বিষন্নতার পর
আনন্দযবনিকা হতে পারত। সে জায়গায় নিরসভাবে শেষ হয়েছে গল্প।
আরও একটা ব্যাপার হয়ত বোঝাতে চেয়েছে- পাদ্রীর পরাজয় নৃশংসতার
কাছে নয়। জাপানের স্বাভাবিক বৌদ্ধতান্ত্রিক জীবনে খ্রিস্টের প্রচারে বিভাজনতার
দরকার ছিল না। এত ত্যাগ তিতীক্ষা স্বীকার করে ধর্মপ্রচারের চেয়ে কম্প্রোমাইজ করে
মানবতাকেই জিইয়ে রাখতে পারলে হল
সে যাই হোক- জেসাসের ঐ কাল্পনিক সংলাপ গেঁথে থাকবে হৃদয়ে,
সাথে Silence নামটাও। Silent জেনেও যে ঈশ্বরকে আমরা ধারণ করছি বিশ্বাসে ভালবাসায় তিনি অসম্ভব উদার।
নিষ্ঠুর নন তাঁর সৃষ্টির মত।”
নীরদ :
টাস্কি খেয়ে গেছি। আপনি সম্পূর্ণ অন্যরকম। চেনা মেয়েদের মত নন।
আপনি লেখেন, কিন্তু শুধু ফেসবুকের জন্য নয়, আবার পড়িয়ে ছাড়েন, কোনও ইগো নেই, জড়তা নেই, এটাই ভীষণ অন্যরকম।
নীনা :
ইশ! যাক। কনসানট্রেশন সিকিং ভাবছেন বলে অন্তত অপমান করেননি। আমার
তো মনে হয় আমি খুব স্থূল। আপনি সম্মান দেখাতে জানেন খুব। মেকী প্রশংসা নাকি সেই
বিচারে যাব না। রিভিউটি কিন্তু এই মুহুর্তের চটপট লেখা নয়, তা নিশ্চয় বুঝতে কষ্ট হয়নি আপনার!
নীরদ :
ধূর, ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করছি না
আপনাকে। আপনার স্যাকুলারিটি আধ্যাত্মিকতা দিয়ে পরিপূর্ণ। উইংটা আমারও জানতে হবে
আসলে।
আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে অথবা সপ্তাহ অন্তর
অন্তর একটা করে ছবি দেখব হল গিয়ে। যে কদিন বেঁচে আছি আর কোন পেইন নেব না।
নীনা :
সিনেপ্লেক্সে যান?
নীরদ :
হ্যাঁ। আপনার অভ্যাস আছে?
১২/৩০/২০১৭, সকাল ৪.০৮টা
নীনা :
থ্রিডি হলে সিনেপ্লেক্সই পছন্দ আমার। কিন্তু অত কই দেখা হয়,
পয়সাকড়ির যা নাদান অবস্থা। এমনিতে থিয়েটারেই সিনেমা বেশি পছন্দ।
আর অলস সময় হলে ঘরে। বৃষ্টির দিন হলে কথাই নেই। ক্লাসিক অনেক পছন্দের। সুপারহিট
সিনেমায় আমার আকর্ষণ নেই যদিও। তবে তাতে আলাদা প্রণোদনা থাকলে ইচ্ছে জাগে দেখবার।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৫
_______________________________________
১২/৩০/২০১৭, সকাল ৯.১৮টা
নীরদ : এত ভোরে বার্তা!
নীনা :
জ্বি, কিন্তু ঘুমের ভাঙার উপর কারও তো
হাত নেই।
নীরদ :
এতক্ষণে কী করছিলেন?
নীনা :
সকাল সকাল বেরিয়েছি। এখন বেহাইয়ের বৌভাতে।
১২/৩০/২০১৭, দুপুর ১.০২টা
নীরদ :
এখনও?
১২/৩০/২০১৭, বিকেল ৩.৪৫টা
নীনা :
জ্বি, এখনও।
নীরদ :
জানেন, আমার খুব মন খারাপ। এত বাজেভাবে
বছরটা শেষ হচ্ছে, ভাবতে পারছি না কিছুই।
নীনা :
প্লিজ!
নীরদ :
সাত দিনের টানা ছুটি আজ শেষ। কাল থেকে জীবন আবার বন্দি। এই কদিন
পড়ে ছিলাম বাড়িতে। সব্বাইকে ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই খুব মুষড়ে পড়ছি। চাকরিতে ঢোকার
পর চট্টগ্রামে টানা এতদিন এইভাবে আর কাটাইনি তো।
নীনা :
ভীষণ আবেগী লোক আপনি।
নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর আনন্দের জন্য এই কল্পনাপ্রবণ
আনন্দগুলো ত্যাগ দিতে হয়- এটাই যে বাস্তবতা। এই যে আমি ভার্চুয়ালিটি নিয়ে পড়ে
আছি। কিন্তু পায়ের তলে শক্ত মাটিটা নেই।
নীরদ :
বাস্তবতা দিয়ে আপনার এই বোধ সত্য, তবু
বলব, এসব ত্যাগ করা বড় কঠিন, অনেক
সময় আর জীবনই খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনটা কখনও বুঝিনি আগে। কেন যে এই কদিন বন্ধুদের
সাথে এত বেশি সময় কাটাতে গেছি। নিজেই নিজের খারাপ লাগাটা ডেকে আনার কোনও মানে হয়!
নীনা :
কেন, এমন লম্বা ছুটি নিলেন কেন?
নীরদ :
আমার খুব যে চট্টগ্রামে আসা হয় না। অনেকদিন পরপর। তাই একটু বেশি
সময় নিয়ে ফেললাম।
নীনা :
কিছু মনে না করলে, একটা প্রশ্ন করতাম?
নীরদ :
করুন না।
নীনা :
বিয়েশাদির কোনও প্ল্যান নেই আপনার?
নীরদ :
নাহ, ভেবে দেখিনি।
১২/৩০/২০১৭, রাত ১০.৫৮টা
এই যে ম্যাডাম, এখনও বৌভাত?
১/১/২০১৮, সকাল ৮.৫০টা
নীনা :
গড! জ্বি না স্যার, এখন নই। কাল সন্ধ্যা
থেকেই ম্যারাথন রেসের মত ঘুমিয়েছিলাম। কতদিন এভাবে ঘুমাই না!
ভাল কথা আপনাকে কিন্তু নববর্ষের শুভেচ্ছা।
নীরদ :
আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা! ওতে লাভ!
নীনা
আনুষ্ঠানিক! পারেনও বটে! আপনার ভাষায় বললে, এত লাভ ক্ষতি বিচার করেও বা কাজ কী!
এনিওয়ে, অন্তহীন তো দেখেছেন?
নীরদ :
আমাকে ভাল চিনতে শুরু করেছেন দেখছি।
হ্যাঁ। গানগুলো অসম্ভব ভাল।
নীনা :
অন্তহীনের মূলভাবটি বলুন তো!
নীর
বুঝিনি খুব একটা। আপনিই বলুন।
নীনা :
সত্যি বোঝেননি? নাকি গপ্পো ভাল লাগছে না
তাই এড়িয়ে যাচ্ছেন।
নীরদ :
সত্যি বলব। অনেক আগের দেখা। স্মৃতিচারণ করেও পারছি না। তবে সাদা
পাজামা পরা বাইকে ঠেসে চা খাওয়া চরিত্রটা ভুলতে পারি না। সাংঘাতিক নির্মোহ
অভিব্যক্তি ছিল!
নীনা :
এত হৃদয়ের আকূলতা, এত টান যার জন্য তার
সাথে কখনও দেখাই হল না। সাক্ষাতের, ছবির, পরিচয় জানবার কোনও মোহই নেই। আছে শুধু আশ্চর্য এক বিশ্বাস। মানুষ নষ্ট
না হলেও সেই বিশ্বাসও নষ্ট হতে পারে। মৃত্যু তো হিসেবেই থাকে, তবু মৃত্যু ভীষণ অপ্রত্যাশিত, হিসেবকে
উল্টেপাল্টে দেয়। সেই না দেখা টান তখন সত্যি সত্যি কষ্টে পরিণত হয়।
নীরদ :
হ্যাঁ, এই বিশ্বাসে ভর করে সম্পর্ক ,
তারপর মায়া বাড়ে জ্যামিতিক হারে, সাথে
কষ্টও ।
নীনা :
না দেখা সম্পর্কটা স্বাভাবিক? এজ
জাপানিজ ওআইফ?
নীরদ :
সম্পর্ক না দেখে হবে কেন? প্রতিটি শব্দ,
কথার পিঠে কথা সবই দেখা। দেখার অনেক রূপ থাকতে পারে না? শুধু কি চোখ দিয়েই দেখা হয়?
নীনা :
ঐ দেখা যথেষ্ট তাহলে! মানে কথার পিঠে কথাটুকুই? আপনার মতে!
নীরদ :
যদি কেউ মনে করে যথেষ্ট, তাহলে অবশ্যই যথেষ্ট।
তবে প্রতিটি সম্পর্কে কিছুটা মৌলিক ব্যবধান থাকা ভাল, যেমনটি
বিজ্ঞান বলে।
নীনা :
কথার মায়া জুড়িয়ে একদিন যদি হারিয়ে যায় সেটাও মেনে নেয়া
সহজ। না?
নীরদ :
সহজ না হলে কি মেনে নেবেন না ?
যা না মেনে উপায় থাকে না, কঠিন হলেও
মেনে নিতেই তো হয়।
নীনা :
হুম্ম। জীবন কারও জন্য থামে না। তেতো বাস্তব। সম্পর্কের মৌলিক
ব্যবধান ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলুন তো।
নীরদ :
বিজ্ঞানের সূত্রে ঐ কথাটি বলেছি।
নীনা :
বিজ্ঞানী হলেন কবে থেকে? মাহাত্ম্যটি
বুঝিয়ে বলতে হবে। আরও স্পষ্টভাবে।
নীরদ :
পরমানুর নিউক্লিয়াসের সাথে ইলেক্ট্রনের একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব
থাকতে হয়। না হয় বন্ধন হয় না। আবার দূরত্ব বেশি হলেও বন্ধন থাকে না।
এই দূরত্বটুকু-ই মৌলিক ব্যবধান।
নীনা :
মোটা দাগে আর্টফিল্মের গোছের হল কথাটা। যা হোক। সম্পর্কের বেশি
দূরত্বটা কত বোঝা যাবে কী করে?
নীরদ :
শেষের কবিতায় নদীর দুকূলে ঘর করে অমিত যে সত্যিই দূরত্ব রাখতে
চেয়েছিল, দূরত্ব টা এমন হওয়া দরকার যেন একজনের ছায়ায়ে
অন্যজন না হারায়। যেন দুজনের যেন আলাদা পরিচয় থাকে।
আপনার কাছে হাস্যকর হয়ে যাচ্ছি এসব কথায়।
নীনা :
হুহ! সবাই প্রেমকে ঐভাবে দেখে না। ওটা একটা দৃষ্টিভঙ্গি।
নিরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন ধারণা করা যায় না। শরীরকেই সর্বস্ব করে বা
শরীরকে বাদ দিয়ে কোনওটাই প্রেম হয় বলে আমার অনুভব হয় না।
নীরদ :
তা ঠিক। প্রেম তো প্রেমই তাতে শরীরের আগমন থাকতেও পারে নাও পারে।
নীনা :
একসাথে থেকে স্বাতন্ত্র্য থাকা এটা অন্য ব্যাপার। তা তো মানেন!
নীরদ :
স্বাতন্ত্র্য থাকাটা লোকে তেমন মানতে পারছে কই, নীনা?
আচ্ছা, শেষের কবিতায় কি শরীর ব্যতিরেকে
প্রেমের কথা বলেছে?
নীনা :
শেষের কবিতায় দুই রকম প্রেম আছে। দুটোকেই রাখা হয়েছে। কবির
মানসীতেও সেটা করা হয়েছে। কিন্তু শরীরের বিচ্ছেদ অমিত-লাবণ্যের প্রেমকে
মহিমান্বিত করবে এটাই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। নয় কি? কেটি আর
শোভনের সাথেও হবে ওদের ভালবাসা। ওতে শরীরও থাকবে। কিন্তু অমিত-লাবণ্যের বিচ্ছেদময়
ভালবাসার কাছে লাবণ্য-শোভন বা অমিত-কেটির মিলন গৌণ।
নীরদ :
অমিত লাবণ্যে প্রেম শরীর ছাড়া হবে কেন!
কোন এক বেশ পরিচিত লেখকের লেখনীতে পড়েছিলাম অমিত লাবণ্যের
শারীরিক সম্পর্কের কথা , মিলনের স্থানের কথাও। যদিও ঠাকুর
সরাসরি তা বলেননি , বিশ্লেষক ঘটনার ঘনঘটায় অনুমান
করেছিলেন। হুমায়ুন আজাদ সম্ভবত।
নীনা :
ওদের শারীরিক সম্পর্ক আদৌ হয়েছে কিনা তা তো আলোচ্য বিষয় নয়।
শেষাবধি যে পর্যন্ত তারা গিয়েছে তাতে প্রেম হয়েছে জীবন্ত, আর শারীরিক নৈকট্য হয়েছে অপ্রয়োজনীয়, এই
কথাটায় শেষের কবিতাতে দিবালোকের মত স্পষ্ট। নজরুলের শিউলিমালা পড়েছেন? একই কথা। অন্তত আমি এইভাবেই গল্প দুটি অনুভব করেছি। অন্যদের কাছেও একই
ব্যাখ্যাই শোনা।
নীরদ :
গোড়াতেই বলেছি আমার ভাবনা-চিন্তা আপনার কাছে হাস্যকরও মনে হতে
পারে ।
নীনা :
হাস্যকর মনে হবার আদৌ কোনও কারণ আছে কি? যে যেভাবে জেনেছে। তাছাড়া আমাদের মধ্যে মতভেদ আছে কিনা তাও স্পষ্ট নয়।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৬
_______________________________________
১/৫/২০১৮, সকাল ১১:১২টা
নীরদ :
শীত পড়েছে চট্টগ্রামে?
নীনা :
রয়েসয়ে। ঢাকায় শীত নিশ্চয় কম?
নীরদ :
মোটেও না। গতকাল থেকেই জেঁকে বসেছে।
নীনা :
কী হবে আমার! বার তারিখে কম্বাইনের পরীক্ষা। ঢাকা তো যেতেই
হচ্ছে। বহু কষ্টে তাও টিকেট পেলাম দশ তারিখের। এত করুণ অবস্থা না দেখলে বুঝতেই
পারবেন না। সবগুলো টিকেট বুকড হয়ে আছে । নিরুপায় হয়ে নিলাম এসি। ঠান্ডা যম,
তারপরও।
নীরদ :
গায়ের চাদর, কানটুপি সব মনে করে নেবেন ।
বার তারিখ দেরিতে আছে, এদ্দিনে শীত নাও
থাকতে পারে।
তবে একটা কথা, ব্যাংকের পরীক্ষা দিয়ে
কাজ কী আপনার!
১/৫/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:৫৬টা
নীনা :
একইসাথে আটটি ব্যাংকের পরীক্ষা, ছেড়ে
দিতে মনে খুঁতখুঁতে একটা অনুভূতি হয় না!
আর সিজন যাই হোক, শীতাতপই তো। প্রথমে হাঁচি,
হাঁচির পরে জ্বর ওঠে আমার।
নীরদ :
আসুন, ঘুরেই যান তবে। হাওয়া বদলে যান।
শীতের ভয়ে আমিও সারাদিন বাসায় বন্দি।
নীনা :
কেন? যাননি সিনেপ্লেক্স?
নীরদ :
ঐ যে, শীতের ভয়ে।
নীনা :
এত ভয়! প্রটেকশন নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। অবশ্য কম্বলের ভেতরে ঢুকে
গুটিসুটি মারার স্বাদ আলাদা।
নীরদ :
এই স্বাদ আমার একদিনের বেশি সইবে না।
১/৬/২০১৮, সকাল ৮.৩৩টা
নীনা :
অফিসের ছুটি সাধারণত কখন হয়?
নীরদ :
ধরুন, ছটা, সোয়া
ছটা নাগাদ।
নীনা :
বাসায় ফিরতে?
নীরদ :
ওয়াকিং ডিস্টেন্সেই, পনের মিনিট।
নীনা :
তবে তো চার-পাঁচ ঘন্টা বেশ ভালই সময় পান। একান্তে। নিজের মত।
নীরদ :
একদম না। বাসায় ফিরে ঐভাবে আর কিছুতেই মন বসে না।
নীনা :
জরুরি কিছুর কথা বলছি না। বলছি একান্তই নিজের মত সময় গড়িয়ে দেয়া।
ছবি, বই, আড্ডা।
নীরদ :
তাতেও সুখ পাওয়া হয় কই! সময় নষ্ট করছি কিনা দ্বিধা হয়। বর্তমান
চাকরিতে জীবন আটকে যাবে এটা ভাবাও কষ্ট।
নীনা :
ইশ, ঠিক এইটেই। প্রশ্ন করেছিলেন নন
ক্যাডার তো আছেই তবে ব্যাংকের পরীক্ষা দিতেই যাই কেন! আসলে সেই ব্যাংকের চাকরির
লোভটি বলতে গেলে হিসেব থেকে ফেলেই দিয়েছি। এরপরও দুশ্চিন্তা হয়, সময় থাকতে সদ্ব্যবহার করিনি, এমন কোনও বাক্য
ভবিষ্যতে উচ্চারণ করা লাগে যদি! টু বি অর নট টু বি!
১/৬/২০১৮, দুপুর ২.১৫টা
নীরদ :
ম্যাম, ভুল হচ্ছে আপনার কোথাও। আমাদের
কপালে নন ক্যাডার বলেও কিছু নেই।
নীনা :
নন ক্যাডার জিনিসটা খুব নিশ্চিন্ত হবার বিষয়? হতেও পারে হয়ত। শুধু নিজের চাওয়াটাই নয়, চারপাশ
যেন বিদ্রুপাত্মক চোখে না তাকায়, তেমন একটি প্রত্যাশার
খড়গ মাথার উপর ঝোলে। পেশাটির সামাজিক অবস্থান- না চাইতেই ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
মানুষের যা-তা কথা আমলে না নেবার সুবুদ্ধি হয়ত আমারও আছে। কিন্তু ঐ মানুষদের উপরেই
জয়ী হবার একটি আকাঙ্ক্ষা থাকে, থাকে একটি মর্যাদার
প্রশ্ন।
বিদ্রুপ পরিবার থেকেই করে বেশি। সেইখানটায় জয়ী হওয়াটা জরুরি
সবচেয়ে বেশি।
আমার স্থানে হলে আপনি খুব নিশ্চিন্ত হতেন?
নীরদ :
ব্যাংক থেকে নন ক্যাডারে নিশ্চয় অনেক ভাল হবে। আমার বন্ধু জনতা
ব্যাংকের ভাল পোস্ট ছেড়েছে, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে যোগ দিল
কিছুদিন আগে।
নীনা :
খুব কি নিশ্চিত থাকতে পারি? জানি না
আমি। যদি আশ্বস্ত করতে পারেন, আসলেই এই ভীষণ চাপটুকু আমার
কমে। দম বন্ধ হয়ে আসছে।
নীরদ :
কাজের চাপ, অফিসটাইম, সব দিক দিয়েই ভাল অপশন।
নীনা :
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা ধরিয়ে দিলে? কাজটা হয়ত মহান। কিন্তু জীবনমানের স্বাচ্ছন্দ্যের কথাও তো বিবেচনা করা
প্রয়োজন। এতদিন পর এসে শেষাবধি এ-ই… চারপাশ থেকে এমন অভিব্যক্তিগুলো খুব পীড়া
দেয়। যেটাই আমি বলি, সেই জবাব দিয়ে পরাজিত করা যাবে না
কাউকে। অন্য চাকরি হলে অবশ্য তেমন সমস্যায় পড়তে হয় না।
নীরদ :
পিএইচটি আই মিন প্রাইমারির হেডটিচার দ্বিতীয় শ্রেণিরই তো! আমার
কলিগ আছেন এইখানে সুপারিশপ্রাপ্ত। বর্তমানে সে যা উপার্জন করছে, তা পিএইচটির তুলনাতে চারগুণ বেশি। তবু বলছে, প্রাইমারি
না হয়ে হাইস্কুলের এসিস্ট্যান্ট হলেই সে এই ব্যাংকের চাকরিকে একেবারে টাটা জানিয়ে
দেয়, হলে। খুব ভাল কবিতা লেখে, বই
পড়ে এই লোক কী করে আটকে থাকবে ব্যাংকে ,বলুন।
নীনা :
পিএইচিটি বেতনের স্কেল এখনও দশম গ্রেডে নেই। নিদেনপক্ষে দশম
গ্রেডের চাকরিটা না পেলে এযাবতকালের কোনও পরিশ্রম উপযুক্ত মূল্য পাবে তো না-ই।
রাষ্ট্র দ্বারা শিক্ষকতা পেশাকে এভাবেই তলানী মর্যাদা দেয়া। প্রার্থীদের দোষ দেয়া
যায় না কিছুতেই!
নীরদ :
তা ঠিক। তবে প্রাইমারি হলেও আমি ভোঁ-দৌড় দেব। দু-বেলা দুমুঠো আর
টুকিটাকি বই কেনার সামর্থ্যতেই আমার পোষায়। জীবন নিয়ে আমার কোনও লক্ষ্য নেই।
নীনা :
কী বিচ্ছিরি কথা!
যা-ই হোক। শিক্ষকতা খুবই সৃজনশীল আর দারুণ! তবে কী, পরিবারের কাছে আমায় তাচ্ছিল্যের শিকারই হতে হবে তখন আজীবন। এমনিতেই আমি
মেয়েটা ভীষণ অবাধ্য। কিছু ঘটনা তাদের জানান দিতেই আমায় সাব্যস্ত করে যেতে হবে,
অবাধ্য হয়ে আমি ভুল কিছু করিনি, তোমরাই
বরং ইচ্ছে করলে এই পথে কাঁটা না বিছিয়ে ফুল বিছিয়ে দিতে পারতে। মা কখনওই চাকরির
বিষয়ে আমায় একটা ভাল কথা শোনাননি, কিন্তু মেয়ে বিসিএসে
পাশ করেছে এই কথা মানুষকে জানান দিতে তার বেশ আহ্লাদ। এইটেই আমি চেয়েছিলেম। একদিন
তাদের যেন মগজে কথা বলে, মানসিক সমর্থনটুকু আর আশীর্বাদ
দিলে, ঠুনকো বিসিএস নয় শুধু, বিশ্বজয়
করতে পারে নীনা, যা তারা সিঁকি পরিমাণ দেননি।
নীরদ :
মানুষের অভিযোগ, মানুষের কাছে প্রমাণিত
হবার ইচ্ছে জীবন জটিল করে তোলে।
আমার গল্পটা শুনবেন? ছয়ত্রিশতমে।
প্রিলিমিনারি পাশের পরে মেজ ভাইয়ের কাছে তিন-তিনবার গিয়েছি পরামর্শ চাইতে যে
চাকরিতে ঢুকে গেলে রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি খারাপ হবে। আবার আর্থিক দুশ্চিন্তার
মধ্যেও টেকা দায়। পরোক্ষভাবে তার কাছে একটা আর্থিক নির্ভরতা পাব আশা করেছি। কিন্তু
ব্যর্থ হই। প্রিলিমিনারির ঐ ফলের সপ্তাখানেক পরেই এই চাকরিতে আসা।
কিছুদিন পরের কথা। কাকতালীয়ভাবে ভাই আর আমার ট্রেনিং পড়ে একই
সময়। মা তাকে বলে দিলেন, আমার সাথে যেন দেখা করে। এক রাতে
সে মতিঝিল হয়ে বসুন্ধরাতে আসে, আমার ট্রেনিং সেন্টারে ছিল
এখানে। এক পর্যায়ে সে-ই বলে, ব্যাংকের চাকরি কদিন পরে আর
সুবিধের মনে হবে না, অন্য কিছুর চেষ্টা করি যেন।
নীনা :
একটা কথা কী! শত হলেও পরিবার তো পরিবারই। পৃথিবীর পরোয়া আমি
নাইবা করেছি, কিন্তু এই ছোট পরিসরের মানুষগুলো যতই হয়ে
থাকুক না মননে মানসিকতায় আমার বিপরীত মেরুর ,শেষ অবধি ঐ
মুখ কটিতে হাসিটাই ফোটাতে ইচ্ছে করে, যেন তাদের অনায্য
ধারণা ভেঙে দিয়েই তা সম্ভব হয়। সবাই বোধহয় এভাবে ভাবছে না আমার মত। বা একইরকম
সমস্যায় হয়ত সবাই জর্জরিত নয়।
নীরদ :
তখন প্রচন্ড রাগ হতে থাকে, ইচ্ছে করেছিল
মুখের উপর একটা কিছু বলে বসি। পারিনি। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় কিছু একটা কাণ্ড করে
দেখাই। কিন্তু বাসায় ফিরে… আর সেই মনোযোগ! দিতেই পারি না।
নীনা :
আপনার ভাইটি এভাবে রিফিউজ করে দিতে পারল?
নীরদ :
টাকার কথা বলিইনি সরাসরি। কৌশলে পরামর্শ চেয়েছি। যাই হোক,
একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি? ব্যক্তিগত
কিন্তু।
১/৬/২০১৮, রাত ৯:২৭টা
নীনা :
ব্যক্তিগত ব্যাপারে কোনওই আপত্তি নেই। কিন্তু যদি এমন কোনও
ব্যক্তিগত কথা থেকে থাকে যেটি আগেই গোপন থাকবে বলে বিধাতা আমার দ্বারা নির্ধারণ
করেছেন, সেক্ষেত্রে বিনয়ের সাথেই দুঃখিত বলে রাখছি।
নীরদ :
থাক, আপনাকে বিনয়ের সাথে দুঃখিত বলার আর
সুযোগ দিচ্ছি না।
নীনা :
আপনি যে কোনও কিছুই প্রশ্ন করবার স্বাধীনতা রাখেন। কোনও অভিযোগ
করব না। উত্তর দিতে যদি আমি ব্যর্থও হই, ক্ষমা করতে হবে
এটুকুই যা। এমনও তো হতে পারে যে ঐ প্রত্যুত্তরে আমার কোনও আপত্তি থাকছে না। করে
ফেলুন ঝটপট।
নীরদ :
হা হা। রসিকতা করেছিলাম। বিকেলের প্রসঙ্গটি বদলানোর দরকার,
এজন্য।
নীনা :
দুঃখের কথা বলতে অস্বস্তি লাগে?
১/৭/২০১৮, সকাল ১০:২৯টা
নীনা :
আরেকটি কথা। মনে হল আপনার পারসোনাল এফেয়ার্সে প্রশ্ন করাটাকেই
আমার নাহক হয়েছে এটা বুঝিয়ে দিতে চান। ভাইয়ের ব্যাপারটি সেই ব্যক্তিগত গণ্ডির
মধ্যেই পড়ে। বিনিময়ে আমাকে কিছু গোপন কোশ্চেন করলে আমারই বা কেমন লাগবে- অনেকটা
এটা উপলব্ধি করানোর প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরি, বোকাসোকার
মত আপনার মনোভাব আমি বুঝতে পারিনি। দুঃখ প্রকাশ করছি।
নীরদ :
না না, মোটেও নয়। মনে হল ঐ প্রসঙ্গে কথা
আর বাড়িয়ে না তোলাই উচিত। আপনিই জানতে চাইলেন, দুঃখের কথা
বলতে অস্বস্তি লাগে কিনা। সত্যি বলতে কি, স্মৃতিচারণ করতে
গিয়ে জীবনে যা কিছু বেদনাবোধের জন্ম দেয়, তা সচেতনভাবেই
মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পক্ষে।
নীনা :
একটু দুষ্টুমিই করি আপনার সাথে তবে। আগেই বলে দিচ্ছি, গুগলে সার্চ করা নিষেধ, নিজের অনুমানে উত্তর
দেবেন, কথা দিন।
নীরদ :
দিলাম।
নীনা :
ফাইন। বলুন নিচের লেখাটি কার :
চুম্বনের জলে তোমায় সিক্ত করি, এসো
দশ আঙুলে লাঙল দেব বুকে
আসঙ্গম শরীরময় শৃঙ্গারের বীজ ছড়িয়ে দেব ঝুঁকে।
কী লাভ বলো ব্রাত্য পড়ে থেকে?
বাসের যোগ্য যে-জন, তাকে ভিটেয় রাখো
তুলে। এই ভূমিহীন চাষাকে দাও বর্গা চাষের মাটি
ক্লান্তিহীন প্রেমে ফলাই সুখের খুঁটিনাটি।
নীরদ :
হেলাল হাফিজের নয়তো!
নীনা :
না, আবু হাসান শাহরিয়ার। আমার
দারুণ প্রিয় কটি পঙক্তি। ভালবাসায় চতুর হতে হয় কীভাবে, তার একটি নমুনা পাবেন এখানে। তবে আপনাকে পরীক্ষা করে দেখারও এখানে দুটি
উদ্দেশ্য ছিল।
নীরদ :
কী ফল পেলেন?
নীনা :
নাহ, আপনি সৎ, আর
সরল। গুগলসার্চ দিলেও কেউ আপনাকে জেলে দিত না জেনেও সৎ।
নীরদ :
দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি?
নীনা :
জানতে চাওয়া, তাতে মনে হল, আপনি উদাসীন আছেন। কোথাও ভূমিকম্প যদি শিল্পের মত আসে টেরই পাবেন না।
নীরদ :
আপনি জটিল।
১/৭/২০১৮, রাত ৮:৫২টা
নীরদ :
ঢাকা আসছেন তো সত্যি?
নীনা :
কত কাণ্ড হল। রিট হয়ে গেল, একবার তো
বাতিল। আবার বলছে পরীক্ষা হবে, পদ কমবে। বেকারদের লসই হল।
আমিও প্রিপারেশন ছেড়েই দিলাম। এবার এই পরীক্ষাটা দেব পিকনিকের আদলে। যা-তা করে।
নীরদ :
কত না উচ্ছ্বলতা আপনার মধ্যে।
নীনা :
ব্যাপার কি বলুন তো। দুদিন ধরে আপনার ঘটনা সুবিধার মনে হচ্ছে না।
কেউ যেন কিছু একটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আপনার।
নীরদ :
হাহাহা। না, ওরকম কিছু নয়। ভয়ংকর রকমের
ঠান্ডা পড়ছে।
নীনা :
এত স্পষ্টভাবে কথা এড়ায়! আপনাকে আর বিরক্ত করছি না।
নীরদ :
যাবেন না। কিছু বইয়ের সাজেস্ট করুন তো।
১/৮/২০১৮, সকাল ৭:৪৪টা
নীরদ :
রাতে সত্যিই আর এলেন না! নিষ্ঠুরতা কিছু খুঁজে পাওয়া যায় আপনার
মধ্যে।
নীনা :
নভেল বা সাহিত্যের বইয়ের নাম চাইছেন?
নীরদ :
জ্বি।
নীনা :
আমার তালিকা খুব যে আপনার রুচিতে যাবে, সেটুকু
অনুমান করতে পারছি না। এবং কিছু হয়ত এর আগেই আপনি পড়ে নিয়েছেন। ওসব হাল বই নয়,
পুরনো আর ক্লাসিক।
নীরদ :
বলুন না।
নীনা :
বিদেশি বই পড়িনি। বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে বাকি সবকটা ভাষায় কোনও
অনুভূতি নেই বলতে পারেন আমার কাছে। যে সমস্ত সাহিত্য পড়ে শতভাগ তৃপ্তি পেয়েছি
তালিকাটা-
গোরা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), সংস্কৃতিকথা
(মোতাহের হোসেন চৌধুরী), আয়না (আবুল মনসুর আহমেদ),
তরঙ্গভঙ্গ এবং চাঁদের অমাবস্যা (সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ), বরফ গলা নদী (জহির রায়হান, নবনাট্যায়িতজমিদারদর্পণ
(মমতাজ উদ্দিন আহমদ), নারী (হুমায়ুন আজাদ), এপিটাফ (হুমায়ুন আহমেদ), প্রেত, মহব্বত আলীর একদিন (মুহম্মদ জাফর ইকবাল), চারুমতি
(বুদ্ধদেব গুহ), গর্ভধারিনী (সমরেশ মজুমদার),লিরিকসমগ্র (মহাদেব সাহা)।
আরও থাকলে ভেবে জানাব।
নীরদ :
ধন্যবাদ, নীনা।
নীনা :
তালিকা আগেই সাজানো আছে। পছন্দের বস্তুর তালিকা করে রাখা আমার
অভ্যেস। বই, সিনেমা, স্পোর্টসম্যান,
আর্টিস্ট, খাবার, রঙ, ব্যাক্তি সব। ধন্যবাদ দিতে হবে না।
নীরদ :
তবু। এটুকু তো করেছেন আমার জন্য। যাক, আপনার
পরিশ্রম কাজে দেবে।
নীনা :
কেন, কোনওটাই আগে পড়েননি?
নীরদ :
বেশিরভাগই পড়িনি।
সময় কাটছে কীভাবে? এমন শীত, কিছুর কি ইচ্ছে জাগে?
নীনা :
কেমন ইচ্ছে, মশাই!
নীরদ :
জিভ দেখালেন? খুব পরিচ্ছন্ন জিভ আপনার।
নীনা :
রাগ করেছি বলে, আজ বোধহয় বেশি করে পাজি
হচ্ছেন। আপনার কৌশল ভাল।
উনত্রিশ তারিখের পর থেকেই চমৎকার আলস্যের মধ্যেই সময় কেটে
যাচ্ছে। রিহার্সালে গিয়েছি দুএকবার। আর ইচ্ছে বলতে এই মাসটিতে আর পড়াশোনার বিরক্তি
হজম করতে না হওয়া।
নীরদ :
খুব সুন্দর ইচ্ছে।
রিহার্সালটি কীসের?
নীনা
প্রোডাকশন। রূপা প্রামাণিকের ধর্ষণের প্রতিবাদে নির্মিত।
নীরদ :
মঞ্চস্থ হবে কবে? রুপাটাই বা কে?
নীনা :
চলন্ত বাসে বাংলাদেশি যে তরুণী ধর্ষিত হলেন। শিক্ষক নিবন্ধনের
পরীক্ষা দিতে গিয়ে, তাকে আপনি সত্যি চেনেন না?
হ্যাঁ, ফেব্রুয়ারিতে। পনের তারিখে
মঞ্চে উঠবে।
নীরদ :
ওহ, হ্যাঁ। আসলেই মাথায় কিছু থাকছে না
কাজের চাপে।
আপনার নাটক থিয়েটার ইন্সটিটিউটেই হবে?
১/৯/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:৩৪টা
নীনা :
আপনার কথায় প্রভাবিত হয়ে বার তারিখের কম্বাইন পরীক্ষার প্রস্তুতি
লাটে দিয়েছি। ভাল করেছি না?
নীরদ :
আমি আবার কী করলাম? কবে?
নীনা :
বলছি।
শো কোথায় সেটি পত্রিকা থেকে উদ্ধার করে নেয়া লাগবে যে যথাসময়ে।
নীরদ :
চট্টগ্রামে হলে টিআইসি, শিল্পকলা বা
থিয়েটার ইন্সটিটিউটই হবে।
নীনা :
একটা ক্লু দিচ্ছি। এটি প্রযোজনাটির উদ্ভাবনী শো যেটি জাতীয়
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করবেন। সেদিনের পত্রিকায় ছাপা হলে আপনি
আবিষ্কার করে নেবেন স্থান কোথায়, এই প্রত্যাশা রইল। সময়
তো আমি আপনাকে বলেই দিয়েছি।
নীরদ :
হুহ! ক্লু লাগবে না। এমনিতেই বের করে নেব।
নীনা :
বাব্বা, কীভাবে!
নীরদ :
আগে উদ্ধার করি।
আপনাকে ভাল লাগে। সব দিক নিয়েই আছেন।
নীনা :
যাই হোক, সেই কথায় আসছি, মানে আপনার কারণেই পড়াশোনা করছি না। এমনিতে আমি বড্ড ক্লান্ত। ফাঁকি
দেবার মত একটা অবলম্বন দরকার ছিল, বা মোটিভেশন বলতে
পারেন।
নীরদ :
উঁহু। কোথায় মোটিভেট করব, তা নয়। উলটো
ডিমোটিভেট করে দিলাম। আমি লোকটিই এমনই। কাউকে এগিয়ে নিতে পারি না। বরং পেছন দিক
থেকে টেনে ধরি।
নীনা :
আসলে নিজের বোঝা নিজেকেই টানতে হবে- এই চিন্তা থেকেই এইসব চাকরি
বাকরি ছাইপাশ। নাহয় কারইবা ভাল লাগে আজেবাজে বই মুখস্থ করার।
নীরদ :
সেইটেই। একটা লেখা দেখাতে পারি যদি আপনার সময় হয়। আবার ভয়ও হচ্ছে
খুব, যদি আবার ডিমোটিভেটেড হন এই ভেবে। আমি শতভাগ নিশ্চিত
প্রভাবিত হবেনই।
নীনা :
বিসিএস থেকে অন্তত আমায় টলাতে পারবেন না, যে যেটিই বলুক। অন্য সেক্টর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছি। তাই কেউ
কিছু বললেই মন্ত্রণায় কান দিই।
নীরদ :
বিসিএসেও জল ঢেলে দিতে পারেন, এই লেখা
পড়ে।
নীনা :
ইম্পসিবল। আপনি দিয়েই দেখুন না।
নীরদ :
পারবেন না। খুব শক্ত একটা লেখা। তারচেয়ে
গল্পই করি কিছুক্ষণ।
ঢাকাতে আর আসছেন না তাহলে?
নীনা :
এত সোজা নয়। আড়াই বছরের কষ্টের জলাঞ্জলি দেয়া। ইন্টু দ্য
ওয়াইল্ড দেখেছেন না? ঐটার চেয়ে ডিমোটিভ্যাশন আর কীসে আছে?
ঢাকায় আসছি, এক্সাম দেবই। তার জন্য
পড়ছি না, এই যা।
নীরদ :
যেদিন আপনার চাকরির বয়স ত্রিশ পূর্ণ হবে সেদিন লেখাটা দেব। নাউ
লেট মি কাউন্টডাউন।
নীনা :
বুঝবেন কী করে। ত্রিশ কবে পূর্ণ হবে!
নীরদ :
সেটি জানতে চাইব।
নীনা :
আরও কিছুদিন যাক না। নাকি এখনই তাড়া?
নীরদ :
কেউ যদি কাউকে অপেক্ষায় রেখে শান্তি পায় কিছুদিন অপেক্ষা করা
যেতেই পারে। একজনের শান্তি বলে কথা।
নীনা :
যাক, আপনার অপেক্ষার প্রহর বৃথা না
বাড়াই।
আরও তিনটি বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারি। মাঝে ডাক্তারদের স্পেশাল না
হলে চারটে হতো।
নীরদ :
বিসিএস দিয়ে বয়স মাপা! দারুণ! আপনার ক্যাডার আটকানোর ক্ষমতা
স্বয়ং বিধাতারও নেই। তবে আমার থাকতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা আপনার
দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
নীনা :
আরে ধূর। আপনি ত্রিশ বছরের উদাহরণ দিলেন, যেটা চাকরির বয়স বৈ আর কিছু মানে করে কী?
নীরদ :
বিধাতার অক্ষমতার কি আর শুধু শুধু বলেছি?
নীনা :
আমি কিন্তুক আস্তিক। ভক্তি ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। এটা ছাড়া
একা লড়াই করা আমার অসম্ভব মনে হয়।
নীরদ :
আস্তিকতার সাথে লড়াই করবার প্রেরণার সম্পর্ক ঠিক কী আমি জানি না।
যদি সম্পর্ক থেকেও থাকে তা একান্ত নিজস্ব নয় কি?
আচ্ছা নীনা এই সব বিষয় থাক। কথার জটিলতা আবার কথা বলার আনন্দটা
যেন না কেড়ে নেয়।
নীনা :
নিজস্বই তো। এজন্যই বললাম যে বিধাতার সাধ্য নেই বলেছেন। আমি সেটা
বিচার করব এভাবে- লালন সাঁইয়ের মত- ডুবায়ে ভাসাতে পার/ ভাসায়ে কিনার দাও কারও/
রাখ মার সে নাম নমি।
বিরক্ত?
নীরদ :
নাহ। বিরক্ত হব কেন?
নীনা :
মনে হল। বলছি, সিরিয়াস হবেন না।
নীরদ :
নাহ। তবে অপরাধী যেন না হই।
নীনা
অপরাধী?
নীরদ :
আপনার মুল্যবান সময় যে মুল্যহীন করে দিচ্ছি। আমার সাথে কথা বলতে
গিয়ে সময় নষ্ট হচ্ছে এমন দোটানায় ভুগছেন কি?
নীনা :
আমার রিক্রিয়েশনের সময় চলছে কদিন যাবৎ। এখন মুক্ত, আপনার ঈর্ষা হতে পারে, আমার এই দিনগুলিকে।
নীরদ :
তবে আর বিপদ নেই।
নীনা :
উল্টোও হতে তো পারে। চাকরি শেষে আপনার একান্ত নিজস্ব সময়গুলো
এখানে অপচয় করছেন।
নীরদ :
আমার আবার সময়! জীবন বন্ধক দিয়ে রেখেছি দুবেলা খেতে পরতে। আর
ক্লান্তি নিয়ে দিনশেষে শুয়ে পড়তে।
নীনা :
আপনার জীবনে প্রাপ্তিটা? ঠিক কোন কারণে
মনে হয়, জীবন এখনও অর্থবহ।
নীরদ :
সেই অন্তহীনের সাদা পাজামা চাখানেওয়ালার ছবি। এখন আবারও মনে পড়ছে,
বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। সাধের জীবন।
নীনা :
বেশ! কত লক্ষ জনম ভ্রমণ করে। সাধের মানবজনম পেয়েছি… লালনের
ফিলসফি কিন্তু ঠিকই ধার করেছেন।
কিন্তু কেন? শুধু বেঁচে থাকা অর্থহীন
হবে না কেন?
নীরদ :
অর্থবহ জীবন বলতে যা বুঝায় তা আমার কাছে জীবনকে ফাঁকি দেবার
নামান্তর।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৭
_______________________________________
১/১০/২০১৮, সকাল ১০:২০টা
নীরদ :
শুভ সকাল।
নীনা :
শুভ সকাল।
ধ্যাত্তেরি, ট্রেন ছাড়া অবধি নেটে একসেস
পাচ্ছি না।
নীরদ :
ঢাকাবাসী আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে।
১/১০/২০১৮, দুপুর ১২:১৫টা
নীনা :
এয়ারপোর্ট সড়কে এত ট্রাফিক জ্যাম! সচরাচর তো থাকে না। বিশ্ব
ইজতেমা কি শুরু হয়ে গেছে?
নীরদ :
হ্যাঁ। শুনেছি মাওলানা সাদ নামের এক ভারতীয়কে নিয়ে তাবলিগের
ভেতরেই বিদ্রোহ চলছে। আপনার জ্যামের রহস্য ঐ কারণেই মনে হয়।
১/১০/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:১৮টা
ম্যাম, এখনও জ্যামে?
নীনা :
আপনার মাথা। হিহি। সেই কবে পৌঁছে এতক্ষণ ঘুমিয়ে আবার উঠেও
গিয়েছি।
নীরদ :
ঠিক আছে, বিশ্রাম নিন।
নীনা :
বলেছে! ইবলিশের শিরোমণি, এখানে মোট
কতগুলো কচিকাঁচা, জানেন। ছয়জন। বিশ্রাম নেব কী! এক একটা
দস্যু ভাতিজা আছে না! চারপাশে সব ভেঙেচুরে দিচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর হাউকাউ এদের! আগে দেড়
বছর নাগাদ ছিলাম, তাতে নিতান্তই আমার অভ্যেস হয়ে গেছে বলে
রক্ষে।
নীরদ :
কোথায় উঠেছেন!
নীনা :
এই যে মীরপুরে। খালার বাসায়। খালা, মানে
আমার মায়ের জ্যাঠত বোন।
নীরদ :
ওহ। আপনি ক্লান্ত পথিক, এখন বরং আরাম
করুন।
নীনা :
আমার আরামের দুশ্চিন্তা করে নিজের ঘুম হারাম করবেন না।
জানেন, পড়াশোনা না থাকলেও আমি এক
মুশকিলে পড়েছি। তথ্য কমিশনে আপিল করতে যাব।
পিডিএফ এডিট করে নেয়া চাই, খুব
বিরক্তিকর কাজ।
নীরদ :
কীসের পিডিএফ জানতে পারি!
সরি কোনও কোশ্চেন করছি না। উত্তরের প্রয়োজন নেই।
নীনা :
তথ্য কমিশনের আপিল। সাইত্রিশতমের ফলাফল পূনর্মূল্যায়নে রিট করবার
প্রিমেডিটেশন।
আপনি কি পাগল? এ কথা বললে সরি বলার কী
আছে!
নীরদ :
কারণ আসলে, এই ঘটনাটি নিয়ে আপনি বিরক্ত
বুঝতে পারি।
নীনা :
উঁহু, আপনাকেই সাডেন অন্যমনস্ক
দেখাচ্ছে।
নীরদ :
আরে নাহ।
১/১০/২০১৮, রাত ১১:১৪টা
নীনা :
একজনকে হাতে পায়ে ধরে প্রিন্ট এনে দিতে বলেছি কাল। আইসিটি মানে
ঘুপচি, আমার দ্বারা মর্মোদ্ধার করা দুরূহ।
যাই হোক, আপনাকে আরেকটি গল্প বলব,
লিখিনি আমি, শোনাতে শোনাতেই লেখা হবে।
হু?
নীরদ :
বেশ!
(নীরদ নির্বাসনে সেন্ট ইউ অ্যান ইনভাইট টু জয়েন মেসেঞ্জার।)
নীরদ :
আবারও সরি। মেসেঞ্জারে ইনভাইটটা কেমন যেন হাতের টিপে চলে গেল।
নীনা :
মেসেঞ্জারে আমার একটুখানি অসুবিধা আছে। টাইজেন ওএসে মেসেঞ্জার
এডমিট করাতে পারছি না। এসব কাজে আমি ভীষণ কাঁচা।
নীরদ :
ভুলে হাত গিয়েছে।
শোনান সেই গল্পটা।
নীনা :
সকালে শোনাই?
নীরদ :
যখনই আপনার সুবিধা হয়।
১/১১/২০১৮, সকাল ৭.২৯টা
নীনা :
বিয়ের বছর কয়েকের মধ্যে রসকষ যা ছিল সব শেষ হয়ে সিত বর্ণ ধারণ
করল পদ্মাবতী-বাহার দম্পতির জীবনে। অথচ পদ্মাবতীর এই পৌরণিক নামটি একসময় বাহারই
দিয়েছিল। তাদের জীবনে কোনও খলজির উপস্থিতিও ছিল না। তারপরও বাহার মনে করেছিল এই
সোনাবরণ পদ্মাবতীকে নিয়ে সে মহলে মহলে ঈর্ষার পাত্র হবে।
নীরদ :
এক সেকেন্ড। আপনি এখনই লিখেছেন তা তো আমার মনে হচ্ছে না।
নীনা :
চতুর লোক। লিখেছি আসলে, কিন্তু এর
মধ্যেই ঘষেমেজে দেব অনেকখানে। আপনাকে শোনাব বলেই এটি বিশেষভাবে লেখা।
নীরদ :
বাব্বাহ, তাই? ঠিক
আছে চলুন।
নীনা :
হুম্ম।
তেমন কিছু ঘটার পরিবর্তে নিজেই পদ্মাবতীকে কেবল ভালবাসতে পারল না
বাহার। এক পর্যায়ে এমন হল যে একই ঘরে একই বিছানায় শুলেও স্বামীর মনের ব্যক্তিগত
রাজ্যে অধিকার বলতে কিছু রইল না সোনালি গড়নের মেয়েটির। এদিকে কোন এক স্বাভাবিক
বা বিচিত্র কারণে তালাকনামা পাঠানোর কথা মাথায় আনল না বাহার। হয়ত পারিপার্শ্বিক
ভূমিকম্প সে এড়িয়ে চলতে চেয়েছে; হয়ত সন্তানের দিকে
তাকিয়ে ‘ব্রোকেন ফেমিলি’ শব্দটি
এড়াতে! হয়ত!
নীরদ :
তারপর?
নীনা :
বাহারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথোপকথন শুরু হল এক
আগন্তুকের। কথা। প্রকৃত নামধাম, ছবি কিচ্ছু নেই। চ্যাটে
শুধু মেয়েটির কথার প্রেমে পড়ল বাহার; আগন্তুক মেয়েটির
রূপের বাহার জানতে বিতৃষ্ণ হল না। পদ্মাবতীর প্রতি তার স্বামীর নেগেটিভ রোল দেখে
যারা ধরে নিয়েছেন- স্বামী একজন পুরুষতান্ত্রবাদী বুদ্ধিহীন পশু- ভুলের রাজ্যে
আছেন তারা। এমনও হতে পারে যে স্ত্রীর পিঞ্চ এমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে
বাহারের ভেতরে সহানুভূতিপ্রবণ হৃদয়টি হতে পারেনি বিকশিত; মাংস কচলালে সিঁটে। বাইরে বাইরে সে নারীসঙ্গ ধুমসে উপভোগ করছে এমনও
নয়। নারীর প্রতিই সে বিতৃষ্ণ হয়ে থাকবে। এমন সময় চ্যাটের অপরিচিতার জন্য একটা
মায়া কাজ করল বাহারের। এই মেয়ে তার স্ত্রীর চেয়ে আলাদা। অন্যান্য টিপিক্যাল
বিরক্তিকর মেয়েদের চেয়ে আলাদা। কিন্তু দেখা করার সাহস বাহার পায়নি। পাছে এই সুন্দর
কাল্পনিক নায়িকার সাথে বাস্তবের মেয়েটির এক শতাংশও অমিল চোখে পড়ে- নিস্পৃহতা
গ্রাস করবে তাকে। চ্যাটের এই মোহিনী সময়গুলোতে সে তার দাম্পত্যখরা কিছুটা পুষিয়ে
নিচ্ছে। দার্শনিক ব্যাপার স্যাপার।
বাহার হঠাৎ লক্ষ্য করল – পদ্মাবতীর ঝগড়া-দা-কুমড়া বন্ধ হয়ে
গিয়েছে; প্রায় বাহারের মতই উদাসীন সে এখন। ভুল করে হলেও
যদি স্বামী কোনও ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেলে- পদ্মাবতী জানায়- উত্তর দিতে সে বাধ্য
নয়। ভেতরে ভেতরে খুশি হতে চাইলেও কোথাও একটা খটকা লাগল বাহারের। কিন্তু অনাহূত
চিন্তা জোর করে সে মাথা থেকে ঝেরে ফেলল। যেমন আছে চলুক- এমনটাই তো সে চেয়েছিল।
নীরদ :
আচ্ছা, এখানে আপনি পরকীয়া জায়েজ করতে
চান?
নীনা :
তা আমি কবি হাসান শাহরিয়ারের দুষ্টুমিষ্টি সেই কবিতাতেই বুঝে
নিতে বলেছিলাম আপনাকে। সেই, চাষাবাদ কবিতায়। “এই
ভূমিহীন চাষাকে দাও বর্গা চাষের মাটি” পড়েননি? চোখে
এড়িয়ে গেছে নিশ্চয়। কিন্তু আমার গল্পটি এখনও শেষ হয়নি, ফায়সালা
আরও পরে করবেন।
নীরদ :
শেষ করুন তাহলে।
১/১১/২০১৮, বিকেল ৩.১৯টা
নীনা :
চ্যাটের অপরিচিতা এর মধ্যে একদিন বাহারের খুবই গোপন একটি শারীরিক
স্থানের বিশেষ চিহ্নের কথা উল্লেখ করে হতভম্ব করে দিল বাহারকে। স্ত্রীর আগে সে
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে দুটি মাত্র মেয়ের সঙ্গে, তাও
মাত্র একবার করে; তাদের মধ্যে একজন এই চ্যাটের মেয়েটি?
বিশ্বাস করতে গিয়ে নিজের চোখে ধূসর দেখল বাহার।
নীরদ :
ওকে।
নীনা :
পদ্মাবতী আরেকজনের প্রেমে পড়েছে- এরকম একটি ব্যক্তিগত তথ্য হুট
করে জানিয়ে বসল স্বামীকে। এবং জানাল বাহার চাইলে ডিভোর্স নিতে পারে; সে জোর অনুরোধ করবে না। পদ্মাবতী সিদ্ধান্ত স্বামীর হাতে ছেড়ে দিল।
এরকম অদ্ভুত আবদার শুনে কিছু বুঝল না বাহার। তবে কে সেই আরেকজন তাও জানতে চাইল না;
কারণ সম্পর্কটা আর ইন্টারফেয়ারের নয়। পাছে আবার অনধিকার চর্চার
নিজের তত্ত্বটাই না আবার তার দিকে ধেয়ে আসে। তবু জানতে ইচ্ছে করছিল; এবং তবু দূরত্ব বজায় রাখছিল; এবং কিছু সময়
বাহার চেয়ে নিল দুর্দান্ত সিদ্ধান্তে আসার আগে।
বাহারের সামনে এখন দুটি ক্রাইসিস। এক. অপরিচিতা তার কোন পরিচিত
ললনা- সেই রহস্য প্রকাশ করছে না; জোর করে উত্তর ছিনিয়ে
নিতে বাহারেরও ব্যক্তিত্বে বাঁধে। দুই. স্ত্রীকে সে তালাক দিবে বটে; কিন্তু স্ত্রী তালাকের জন্য জোরাজুরি কেন করল না সেই প্রশ্নের উত্তর
বের করা।
১/১১/২০১৮, বিকেল ৪.৪৪টা
নীরদ :
নীনা, আমি আপনার ক্ষতি করে বসলাম!
নীনা :
সে কী! কেমন ক্ষতি!
নীরদ :
নিউজে পেলাম, সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা
হচ্ছে আগামীকাল। স্থগিতাদেশ উঠে গেছে।
নীনা :
আমি শুনেছি। আসলে কী জানেন, বই নিয়ে
বসেছিলাম গত কিছুদিন, বই ধরলেই মনে হচ্ছে, পারি সব। সমস্যাটি একমাত্র সময়। মানে ডিউরেশন। ব্যাংকের অঙ্কে কেমন
বুলেটের গতিতে হাত কাঁপাতে হয়, দ্রুত সারতে পারি না। ধাতে
সয় না আমার। বিসিএস পরীক্ষায় এই বিপদ নেই, বেঁচে যাই।
নীরদ :
ও।
১/১১/২০১৮, রাত ৯:০৩টা
নীরদ :
আপনার গল্প! শেষ?
নীনা :
আপনি অমনোযোগী না হলে বুঝতেন, আমার গল্প
শেষ নয়, বরং ক্লাইমেক্সে আছে।
নীরদ :
থাক, পরীক্ষা দিন। এরপর নাহয় বাকিটা
জানা যাবে।
আমি খুব যন্ত্রণায় আছি। অফিস থেকে ফিরেই বই নিয়ে দেখি মাথা
স্থবির। অফিসের কাজে এটা ওভার লোডেড।
১/১২/২০১৮, সন্ধ্যা ৬:৫১টা
নীনা :
পরীক্ষা দিয়ে দিনটা জলাঞ্জলি দিয়েছেন আজ?
নীরদ :
হ্যাঁ। কেমন হল আপনার?
নীনা :
খারাপ নয়। নেগেটিভ মার্ক যে নেই, তা বুঝতে
পারিনি। নাহয় আরও কটি ভরাট করা যেত।
নীরদ :
এক্সপেরিয়েন্স মেকস এ ম্যান পারফেক্ট, নট
ওমেন।
নীনা :
ভুল বললেন, ব্যাংকের পরীক্ষার অভিজ্ঞতা
আমার জিরো বললেই চলে।
নীরদ :
তার আর দরকারও নেই।
নীনা :
কেন কেন?
নীরদ :
সে আপনি ভাল করেই জানেন।
আপনার কেন্দ্র কোথায় ছিল?
নীনা :
তিতুমীরে।
হ্যাঁ, আমি অসাবধানে ভুল করি রীতিমত।
তখন মনে হবে বিশ্বের কিছুই দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, একটি
ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। একজন প্রিন্টার কিনেছে ৪৫০০ দিয়ে, ধরে নিয়েছি ৪৫০০০। দেখুন আমার কাছে এর পাশে একটি জিরো ঠেকিয়ে দেয়া ছাড়া দুটো
সংখ্যার কোনও অর্থই পরিষ্কার হয়নি। খুব বোকা না?
নীরদ :
তিতুমীর কলেজ! আগে কেন বলেননি? আমার
বাসার পাশেই তো! হাহা, আসার পথে তিতুমীরের সামনে যে জটলা
ছিল বোধহয় তাদের একজন আপনি।
নীনা :
হুহ! মজা পাইনি আপনার কথায়।
আপনার কেন্দ্র কোথায় ছিল?
নীরদ :
আজিমপুর, ঢাবির পাশেই।
এখন আছি টিএসসিতে। চট্টগ্রামের বন্ধুরা এসেছে অনেকে।
নীনা :
আহ! মধুময় সেই টিএসসি, কাঁচকলার ভর্তা।
টিএসসি আমার না খুউব প্রিয় নাম, জানেন!
শুনুন, আপনি যখন ঐ জটলা দেখেছিলেন তার
আগেই আমি ফিরে গেছি, এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন।
নীরদ :
পরে নয়। সকালবেলায় আসার পথে দেখেছিলাম। পরীক্ষার আগে।
নীনা :
ও, তাই তো! এই দেখুনতো হাতেনাতে প্রমাণ
পেলেন না, এই বোকা মেয়েটা আসলেই কিছু বুঝতে পারে না!
আচ্ছা, আপনি আড্ডা দিন। পরে কথা হবে।
নীরদ :
হা হা। আপনার বিনয় আমাকে কৃতার্থ করবে।
আড্ডা তো চলবেই, একজনের একটা রিটেন আছে কাল,
অন্যজনও রাতে থাকছে আমার বাসায়।
১/১৩/২০১৮, রাত ১২:২৭টা
নীরদ :
শুনেছেন? দিস সিনারিও ফ্রম যশোর রোড,
অথরিটি হ্যাজ টেইকেন ডিসিশন টু কাট ডাউন টু থাউজ্যান্ড এন্ড
থার্টি হানড্রেড সেন্টেনারি ট্রিজ।
১/১৩/২০১৮, সকাল ৪:৫৩টা
নীনা :
শুনেছি। এত এত গাছ, মায়া হয় খুব। সরকার
নিশ্চয় এর পেছনে একটা যুক্তি দাঁড় করাবে রামপাল কাণ্ডের মত।
নীরদ :
কে এটা! ভূত!!
নীনা :
কী ব্যাপার! এত সকালে উঠে পড়েন, নাকি
ঘুম ভেঙে গেছে!
১/১৩/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:৩৮টা
নীরদ :
ওয়াইফাই অন ছিল, সাথে সাউন্ড মোড,
আর আমার ঘুম খুব হালকা। ‘ভূত’ লিখেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম অবশ্য।
১/১৩/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:৩০টা
নীনা :
ভূতের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।
নীরদ :
আসলে বেড শেয়ার করলে ঘুম ওভাবে হয় না আসলে।
খুব ব্যস্ত ছিলেন আজ?
নীনা :
ঐ সময় ঘুম ভেঙে যাওয়াতে ফেসবুকে ঢু মেরেছি ক্ষাণিকটা। কিন্তু পরে
সারাদিনে ইন্টারনেটে ফিরিনি আজ। ইচ্ছে করেই।
নীরদ :
তাই বুঝি! হুম্ম। এভয়েড করতে পারলেই ভাল, কেউ পারে না।
শীতে সারাদিন বাসায় বন্দি, ইন্টারনেট
ছাড়া আমার উপায় ছিল না অবশ্য। হাতের কাছে নতুন কোনও বইও নেই যে পড়ব। তার উপর
জ্বর-সর্দি ভর করেছে।
নীনা :
লেখাপড়া বা জরুরি কাজের সময় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে হয়,
সে কথা আমিও বলি সব্বাইকে।
জ্বর-সর্দি জলদি সারিয়ে নিন, কেমন! সাথে
আমার ঐ ভিভিআইপি স্টোরিতে একটু চোখ রাখুন। গল্পটা এগিয়ে নেব?
নীরদ :
হ্যাঁ। সারিয়ে নেবার চেষ্টা চলছে।
আপনি বলুন।
নীনা :
তার বিয়ের আগে তারই সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে যাওয়া দুই নারীর
উদ্দেশ্যে আবার যেচে যোগাযোগ করল বাহার। একজনের দুটো বাচ্চা আছে; বেশ সুখে আছে স্বামী সন্তান নিয়ে। অন্যজন তাকে পাত্তাই দিল না। কেমন
অপমানই করল এক প্রকার। তাহলে চ্যাটের অপরিচিতা এদের দুজনের কেউ নয়? কিন্তু তা কী করে সম্ভব! তার গুপ্তাঙ্গের চিহ্নের খবর কী করে পেল
মেয়েটি! এই বলদ দুই নারী কিছুতেই তার নায়িকা হতে পারে না- এসব ভাবতে ভাবতে
বাহারের পাগল হবার জোগাড়।
নীরদ :
তারপর?
নীনা :
স্ত্রীর ব্যাপারে সে চ্যাটকন্যার কাছেই করণীয় কী জানতে চাইল।
ওহ্- চ্যাটকন্যার নাম সে দিয়েছিল ‘বিদ্যা’। পুরুষ
বিদ্যা খোঁজে, আর নারী খোঁজে… এই নীতিতে সে বিশ্বাস এনেছিল,
অন্তত নিজের ক্ষেত্রে। বিদ্যা তাকে জ্ঞান দেয়ার আগে প্রশ্নটি
করল- “আপনার মনে হয় কি আপনার স্ত্রী আপনাকে ভালবাসে?”। বাহার
জানাল- “হয়ত সে কারণেই তাকে ছেড়ে দেব, এমন ভাবনা নিমিষে নিয়ে দু পা এগোতে পারছি না। হয়ত!”
বিদ্যা এবার জ্ঞান দিল- “করুণা করে কাউকে টিকিয়ে রাখার ফল
আদৌ ভাল হবে কী? বন্ধু হিসেবে এটুকু ধারণা দিতে
পারি।” “তা ঠিক বলেছ”- বাহার বলল- “কিন্তু তুমি আর আমি শুধু
বন্ধুই নই; তা তুমি ভাল করেই জান।”
নীরদ :
হুউম্ম।
নীনা :
চ্যাটকন্যা ‘Her’ নামে সিনেমার গল্পটি
শোনাল। একাকিত্ব কাটাতে সিনেমায় হিরো একটি সফটওয়্যার ইন্সটল করে নেয়। একটা
ভয়েসই হয় তার প্রেমিকা। রক্তমাংসের কিছু নয়, একটা
ডিভাইস বসিয়ে নারীকণ্ঠের সঙ্গে দিনের পর দিন প্রেম করে যেতে হিরোর এক ফোঁটাও মেকি
মনে হয় না। দীর্ঘদিন পর ডিভাইস জানায় মেয়াদ প্রায় শেষের পর্যায়ে। হিরো মেনে
নেয়। কিন্তু বেদনায় বুক চিরে যেতে চায় তার। তাই নারীকণ্ঠটিকে সে জানায়-
“তোমার কি রক্ত ঝরছে না হৃদয়ে?” কৃত্রিম
কণ্ঠটি তাকে সান্ত্বনা দিতেই হয়ত জানায়- “ঝরছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তবু
আমাকে যেতেই হচ্ছে; মাই ডিয়ার।” কিন্তু মেশিনের
কষ্ট বলতে কিছু যে নেই। সব যে প্রোগ্রাম!
চ্যাটকন্যা বাহারকে জানায়- “আমি কি আপনার কাছে এই
যন্ত্রটির মতই না?” বাহার বলে- “তোমাকে আমি জোর
করব না। কিন্তু সামনে আসাটা কি একান্তই অপ্রয়োজনীয়?” বিদ্যা- “সম্ভব নয়। সম্ভব নয় সামনে আসা। ধর- আমি একটি ডিভাইস,
রক্তমাংসের মানুষের চেয়ে নিখুঁত। পারফেক্ট। আর পারফেক্ট বলেই
আমি মানুষ নই। যন্ত্র।”
দুদিন পর পদ্মাবতী অন্তর্ধান হল। যেন শরীরে ব্যাধি বাসা
বেঁধেছিল- এটুকু সত্য জানানো খুব পার্সনাল। সেই সাথে বিদ্যার ভার্চুয়াল আইডি শত
চেষ্টা করেও আর খুঁজে পেল না বাহার। কোনও স্পষ্ট জবাব না দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল
মেয়েটি কে জানে!
নীরদ :
বাহ! মানে স্ত্রীই ছিল ঐ চ্যাটের মেয়েটি।
নীনা :
তা তো স্পষ্টই অনুমান করা যায়। আসলে কাছের মানুষদের ভেতরের
মানুষটিকে আমরা রিড বিটুইন দ্য লাইন করে দেখতে চাইছি না, অনুভব
করতে পারছি না। এক্ষেত্রে কাছে থাকাটাই যেন একমাত্র দোষ। অন্তহীনের সেই সংলাপটা
মনে আছে! “দূরে গেলেই তোমাকে আরও কাছে করে পাই যেন!”
নীরদ :
এটা দোষ বলা ঠিক না আসলে। একে বলা যায়, আমাদের
মাঝে বোঝাপড়া ঠিকভাবে না হলে এমনটি ঘটবে।
নীনা
আমাদের বলতে?
নীরদ :
আমাদের বলতে সোসাইটির সবগুলো মানুষ।
নীনা
বোঝাপড়ার বিষয়ে বলব? আমার মনে হয়…
হার্ড মেলোডিস আর সুইট, বাট দোস আনহার্ড আর সুইটার। অথবা heard
melodies ar হার্ড মেলোডিস আর বিটার, বাট
দোস আনহার্ড আর সুইটার।
নীরদ :
হাহা। কিন্তু এমন অনেকেই আছে, যারা
পাশাপাশি থেকে অনেক সুন্দর সময় পার করে যাচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আপনার যুক্তি
প্রাসঙ্গিক।
নীনা :
আসলে কি গ্রিপের জিনিস মানুষের কাছে সস্তা। হ্যাঁ, পাশাপাশি ভাল আছে, এমন নমুনাও কমবেশি দেখা
মিলবে। পৃথিবীতে সব রকমের কেস স্টাডি আছে আসলে।
নীরদ :
নীনা, পূর্ণতার অপর নামই নাকি মৃত্যু!
বিচ্ছেদের পরই প্রেমটা নাকি ভাল জেগে ওঠে!
নীনা :
হ্যাঁ, তবে সবার প্রতি নয় আসলে। যে
প্রেমটা আসলেই ছিল, মেঘে ঢেকে গেছিল। ঐটাই বিচ্ছেদের পর
জেগে উঠে। কিন্তু প্রেম না থাকলে, পরিবর্তে প্রেমের
চেষ্টা বা অভিনয় হলে, বিচ্ছেদে পরিষ্কার হয় যে প্রেমই
নয়, হাহাহা। বিচ্ছেদ অমূল্য মাপকাঠি ।
নীরদ :
তাই তো!
আমি একটা কথা বলি কী! আপনি বরং লেখালেখি নিয়েই থাকুন। টুটাফাটা
আমলাগিরি বাদ দিন। হাজার হাজার আমলার চেয়ে একজন লেখক অনেক বেশি প্রয়োজন আমাদের।
আপনার চিন্তারাজ্য বেশ স্বচ্ছ।
নীনা :
লেখক! বেশ বলেছেন, ভেবে দেখব। এ নিয়ে
স্বপ্ন লালন করছি, চরিত্র গবেষণা করছি এই যেমন আপনি।
হাহাহা।
নীরদ, আপনাকে আমি মোট দুটো গল্প
শুনিয়েছি, প্রত্যেকটি নিয়ে আপনি একটুখানি গভীরে চিন্তা
করবেন তো! আমি শুধু অলস সময় কাটাতে এগুলোর অবতারণা করিনি। এ দুটির জীবনঘনিষ্ঠ
মাহাত্ম্য আছে। আমারই জীবনের। দুটো গল্প থেকে দুটো ভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে একটা
সুঁতোয় গেঁথে দিলে চমৎকার কোনও ঘটনা জানা যায় কিনা একটু ভেবে দেখবেন।
হয়ত এই ফিরিস্তির ছায়াবৃত্তে বিশাল কিছু কষ্ট চাপা পড়ে আছে আমার!
কী সেই কষ্টটা হয়ত, মুখ ফুটে বলাও সম্ভব নয়।
আপনার ধৈর্য হবে? তেমন হলে আপনি ভাববেন?
ওটা আর এটা মিলে এক! এ আবার কী! এ কেমন! রহস্য জাগে না!
কাজের সময় নয়, অকাজের সময়, আপনি ভাববেন। প্লিইজ! যদি একঘেয়েমি না এসে থাকে… মনে থাকবে?
নীরদ :
খুব সিরিয়াস!
আর হ্যাঁ। আমাকে আপনি গবেষণা করছেন জেনে বিস্মিত না প্রফুল্ল হব
ভাবছি।
নীনা :
খুব সিরিয়াস। খুব।
বিস্মিত বা প্রফুল্ল না হয়ে আপনি সাবধানও হতে পারেন।
নীরদ :
এত করে বলছেন, চেষ্টা করে দেখব আমি,
যদি কোনও যোগসূত্র মেলাতে পারি জানাব।
তসলিমা নাসরিন এক লেখার জন্যই সরকারি চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন তাতো
জানেন। আপনার থেকেও আশা করতে পারি।
নীনা :
সেটা সময় বলে দেবে।
কিন্তু আমার চেষ্টাটা কিন্তু করবেন। ভুলে যাবেন না। শুধু অকাজ বা
অবসর সময়ে একটু আধটু ভাববেন- যতদিন পর্যন্ত না উত্তর না পান। ক্লান্ত হলে সেদিনের
মত ছুটি। আবার পরের অকাজের সময় ভাববেন… আবার ভাববেন।
প্রয়োজনে আমার কাছে ছোট ছোট ক্লু চাইতে পারেন। উত্তরের কোনও অংশ
নিশ্চিত হলে সেটা তখনই আমায় বলবেন, নিসঙ্কোচে বলবেন।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৮
_______________________________________
১/১৪/২০১৮, সকাল ৭:২২টা
নীনা :
আপনি ফেসবুকে লেখেন, রাষ্ট্র, সমাজ, বিশ্ব নিয়ে। খুব ভাল লেখেন আপনি। আচ্ছা,
লেখালেখি নিয়ে কী প্ল্যান আপনার? এর
পরিধি সাহিত্যে টেনে আনতে ধৈর্য নেই?
ধরুন, আমিই বলছি আপনার ধৈর্য আছে। তাই
যদি থাকে- অসহনীয় এই চাকরি ছেড়ে বাঁচা আপনার পক্ষে সম্ভব? নিজের বিরুদ্ধে গিয়েই আপনাকে টিকে থাকতে হচ্ছে না?
নাসরিন লেখার জন্যেই সরকারি চাকরি ছেড়েছেন, আর আপনি আমার কাছে একই উদাহরণ আশা করেন।
তাই মনে হল, জিজ্ঞেস করে নিই।
সন্তানের জীবদ্দশায় মা-বাবা পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিন, আমার কাছে এমন কল্পনা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এটাই যদি হয়-
নিজের বোঝা আমায় টানতে হবে না? হাজবেন্ড আমাকে বইবে,
তা তো হতে পারে না।
আর্ট আর কালচার নিয়ে পড়ে থাকা আমার জন্য তো দারুণ সুখের হবে।
একালে আমার কিছু যোগ্যতারও অভাব আছে। নাসরিনের মতন অনেক কিছুই হয়ত আমি শিখিনি,
আমি জানি না।
আর মাইরি! আজ যেন মেসেন্জারে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে!
১/১৪/২০১৮, দুপুর ১২:০৩টা
নীরদ :
মাইরি! দিজ ওয়ার্ড ইজ ইজুয়ালি ইউজড ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল।
নীনা :
সো হোয়াট! আমার ইচ্ছে হলে বলব, কেউ
জরিমানা করছে বুঝি! ভাষা কাঁটাতারে আটকে পড়ার বস্তু নয়।
১/১৪/২০১৮, সন্ধ্যা ৭টা
নীরদ :
ফিরে গেছেন?
নীনা :
ট্রেনে। প্রায় পৌঁছেছি।
নীরদ :
একা?
নীনা :
হা হা। কেন, একা আসতে পারি না? আমি পুরুষ হলে এই প্রশ্ন আসত না নিশ্চয়।
একা চলাফেরা অভ্যাস করে নিয়েছি। বইভর্তি দু দুটো ট্রলি নিয়ে
এসেছিলাম একবার। দুটো ট্রলিই সেবার ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই ভেঙে যায়। সে কী করুণ
দৃশ্য!
নীরদ :
আমি তো চাই প্রত্যেকে একাই পথ পাড়ি দিক। একটা ভয়-ডরহীন উপত্যকার
স্বপ্নে বিভোর।
১/১৪/২০১৮, ৯:১৯টা
নীনা
একা থাকা ভাল নয়, মন্দের ভাল। সাথে কেউ
থাকলে আনন্দের। না থাকলেও চলতে শিখতে হয়, এই
যা। আমি যদিও সব ক্ষেত্রেই একা সামলে ওঠার সামর্থ্য অর্জন করিনি।
নীরদ :
একা জার্নিটাই ভাল লাগে আমার। নিজের অগোছালো ভাবনা নিয়ে সময়
কাটাতে ভাল লাগে।
পৌঁছেছেন?
১/১৫/২০১৮, সকাল ১১:৫৮টা
নীনা :
রাতে বাসায় ফিরতে দশটা নাগাদ।
মানুষ যদি শুধু আত্মা হত ভাল হত। মনে মনে সম্পর্ক হত। ভাবনায়
ভাবনায় সময় কেটে যেত। বাহ্যিক কিছুই এই সুন্দরে বাগড়া দিতে আসত না। নাসরিন আর
রুদ্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব হত না।
নীরদ :
মানুষতো আত্মা-ই।
নীনা :
আপনি একা থাকবার কথা বললেন, তাই বললাম।
সেই ব্যাপারটা আত্মার মত। ডুয়ো হতে চাইলে আত্মার মধ্যে দেহের ঠোকাঠুকি পড়ে।
রান্নাবান্না, ঝাড়ু দেয়া, থালা-বাসন,
বাজার। আত্মা গল্প জুড়ে দেবার সময় খুঁজে মরে। কিছুদিন আত্মাও
একাজে সুর যে তোলে না, তা নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে জমতে থাকে
ধুলো। তবু যদি সবকিছু জয় করেই আত্মার উপর চিরদিনের প্রভাব ধরে রাখা যায়, সে জিনিস অমূল্য।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আমি একটা কিছু লিখেছি।
নীরদ :
সে জন্যেই বলি লেখা নিয়েই থাকুন। আপনি শুনছেন কই, যুক্তি তর্কে আপনাকে হার মানানো দায়।
কী লিখলেন দিন তো, পড়ে দেখি।
নীনা :
পছন্দ না হলে!
নীরদ :
কেন যেন মনে হয়, আপনার সৃষ্টি আমার
অপছন্দ হবে না। আপনি যেন শুধু মেয়ে নন, একটু আলাদা।
নীনা :
আবার বলছি, মাইরি! আনন্দে ভেসে গেলাম,
এ জিনিস আমি আপনাকেই উৎসর্গ করছি তবে। কথোপকথন, মর্জি হলে কবিতা নাম ধরেও ডাকতে পারেন।
” : চিরদিনের নতুন থাকা যায়!
: কিছু আটপৌরে সুতি শাড়ি আর কিছু যত্নে রাখা জামদানি। কোনওদিন
দেখেছেন মায়ের ঘরে-পরা শাড়ি বৌকে দিতে! মায়ের একপরা বেনারসি কিন্তু
প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে হাত বদল হয়।
: সুতির শাড়ির প্রয়োজনে অন্য একটি খুঁজে নিতে হয় তবে।
: এইতো জালে আটকে গেলাম; কী জবাব দেব
দুদিকেই হারাব। যদি সুতি থেকেই থাকে, সারা
দিন-রাত পরতেই যদি হয় তো একটু মায়া করে পরলেই, আদর করে
তাকালেই হল। সুতি অন্তত নষ্ট হলে কষ্ট পাবেন না। চুপচাপ সব সইবে, বিনিময়ে ড্রাই ওয়াশের দাবি-দাওয়ার বালাই নেই।
: সুতি নষ্ট হলে কষ্ট পাব না!
: যত্ন করলে সুতি পরতে পারবেন, ছিঁড়ে
গেলে কাঁথা বানিয়ে জড়াতে পারবেন, নষ্ট হলে লুছনি বানিয়ে
আঁচ থেকে বাঁচাতে পারবেন হাত।”
নীরদ :
আপনার কথা, আপনার কবিতার মধ্যে খুব তফাৎ
পাই না। কোনটাকে উপরে তুলে ধরব তা-ই ভাবছি।
নীনা :
হাহা। এর মানে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
নীরদ :
না তো। শাড়ি আমার ভীষণ প্রিয়। সেই উপমা টেনেছেন, আর আমার মাথায় বাজছে, আপনি শাড়ি পরেন না?
নীনা :
যদি বলি শাড়ি পরতে চাই না, বিশ্বাস হবে?
নীরদ :
বিশ্বাস হবে না। আপনাকে শাড়িতে ভীষণ ভাল দেখাবে।
নীনা :
আমাকে না দেখে কীভাবে ভাবছেন?
নীরদ :
সেদিনের কথা ভুলে গেছেন, বলেছিলাম,
চোখের দেখাটাই কি আসল? আপনার ভাষায় পরতে
পরতে নকশী শাড়ির এফোঁড় ওফোঁড় পরে যে।
নীনা :
হায় হায়, নীরদ, ফ্ল্যাটারড হতে পারছি না। রসালাপের ড্রাগ বেশি পড়েছে। এ জিনিস যথাসময়ে
আপনার নিজেরই সইবে না।
নীরদ :
আমি দুঃখিত।
নীনা :
কী! এবার আমার কথাতেই সেন্টিমেন্টাল হলেন নাকি? আমিও একটু খোঁচাচ্ছিলাম। ভাষাটা আপনারও কম সম্পদ নয়।
শুনুন, পুরনো কথায় ফিরে যাই বরং।
নীরদ :
আচ্ছা। একা থাকার কথা হচ্ছিল।
নিজের থেকে দূরে সরতে সরতে আমরা নিজেদের আত্মপরিচয় ভুলে গেছি।
তাইতো স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য করি।
নীনা :
আচ্ছা, আপনি কি একসময় এখনকার মত
শুভ্রতার কথা সবসময়েই ভাবতেন? দুর্নীতি করবেন এই বাসনা
কখনও কি আপনারও ছিল না?
নীরদ :
জীবনে যার লক্ষ্যই নেই, সে কেন
দুর্নীতির আশ্রয় নিতে যাবে?
লিসেন, আই হ্যাড অ্যা মিগ৩৩ একাউন্ট
নেইমড ছিল, ‘শুভ্রতার খোঁজে’, ইউ
ফাউন্ড ইট লাইক এ গডেস, হাহা।
নীনা :
বাহ। আমি সুন্দর কাকতালীয়। আপনার সাথে পরিচয়ও কাকতালীয়।
নীরদ :
পরিচয় বলতে যা বুঝায় আপনার সাথে তা এখনো হয়ে উঠেনি।
নীনা :
পিছিয়ে যাচ্ছেন কেন, ইনফরমেশন নির্ভর
পরিচয়ের সবটাই হয়ত জানেন না, কিন্তু টাইপিংয়ের মধ্যেই
নিজেদের ভেতরের মানুষটিকে জানা যাচ্ছে, অনেক দূর থেকেও।
আমার কথা বাদ রাখলাম, আপনার ভাবনাই তো এমন।
নীরদ :
হ্যাঁ, বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভেতরের
মানুষটি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছি।
১/১৫/২০১৮, রাত ৯.৪৫টা
নীরদ :
“আমি সুন্দর কাকতালীয়”?
নীনা :
ওহ, ঐ কথাটা। দুষ্টুমি ছিল। আপনার ‘শুভ্রতার খোঁজে’ মিলে গেল, সেই প্রেক্ষাপটে।
নীরদ :
আমি ভেবেছি আপনার মিগ৩৩-এর আইডির নাম এটি।
নীনা :
ফেসবুক ছাড়া অন্য কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট আমার
নেই। এ জিনিসগুলোর মানেই হল একাধিক সময় নষ্টের উপাদান থাকার মত। এই ফেসবুকটিও গোড়া
থেকেই আছে বলে মায়া কাটাতে পারছি না। নাহয় হয়ত এটাও…। মাঝে
মাঝে একে লম্বা নির্বাসনে পাঠাই।
নীরদ :
আমিও পাঠাই। আবার সময় হচ্ছে বোধহয়।
নীনা :
সেজন্যই আপনার নামটিও ‘নীরদ নির্বাসনে’!কোথায় যাবেন নির্বাসনে?
নীরদ :
যাব না কোথাও। নিজেকেই সময় দেব। তালিকা করা কিছু বই নেব। আপনার
তালিকা থেকেও নেব। শীতটা একটু গেলেই নেমে পড়ব মাঠে। তারপর ধুমিয়ে শুরু করব বসবাস
বইয়ের সঙ্গে।
নীনা :
আমার থেকে কোন কোনটি নেবেন, এখনও ঠিক
করেছেন?
নীরদ :
এখনও ফিল্টারিং করিনি। সময় নিয়ে বসতে হবে একদিন।
নীনা :
গোরা পড়েননি?
নীরদ :
আসলে কী পড়েছি, কী পড়িনি তাও ভুলে গেছি।
কয়েক পাতা পড়লেই টের পাই- ইতোমধ্যে পড়া আছে। ইভেন ইট হ্যাপেন্স হোয়াইল ওয়াচিং মুভি
অর ডামা ইন ইউটিউব।
তবে নারী বইটি পড়েছিলাম অনেকটা চুরি করে। ভাইয়ের শেলফ থেকে চুরি
করে। তাই এটা ভোলার কথা না। পরে অবশ্য নিজে কিনেছি। সব বই বাড়িতে ফেলে আসতে
হয়েছিল।
নীনা :
রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা কম। যা
হোক। আগের কটি ছাড়াও আপনাকে আরও কয়েকটির নাম বলব। সব হয়ত আমার চূড়ান্ত তালিকায়
রাখিনি। কিন্তু আপনার কাজে লাগতে পারে।
নীরদ :
বলুন।
নীনা :
ও, হ্যাঁ। নারী বইটি আমারও চুরি হয়ে
গেছে। মজার কথা বন্ধুর বিয়েতে ঐটাই গিফট দিলেও আমি নিজে আর কিনিনি। মিস করি এখনও।
নীরদ :
আরও বইয়ের নাম বলুন।
১/১৭/২০১৮, সকাল ৭:৩৫টা
নীনা :
বইয়ের এই ডেকোরেশান কি আপনার? অনুপাতটি
কীসের?
নীরদ :
মাইন্ড ভার্সেস স্টমাক। গতকাল নীলক্ষেত গিয়েছিলাম।
নীনা :
চাকরির বইও নতুন নিয়েছেন দেখছি। এখনও পড়বেন?
গর্ভধারিণী আগে পড়েননি?
নীরদ :
গর্ভধারিণী আগে পড়া হয়নি।
নীনা :
আপনার জন্য কয়েকটি নাম মনে করার চেষ্টা করেছি। অবশ্য আপনার জন্য
বললে ভুল হতে পারে, সব আসলে আমার ক্যাটাগরিতে পড়ে। দেখুন-
(১)
মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ উপন্যাসটি পাঠাবশ্যক। এমন হৃদয়স্পর্শী পরিণতি কোথাও পাইনি আমি আর। (২)
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্পসমগ্র আর তার তার ‘দিবারাত্রির
কাব্য’ উপন্যাসটি আমার খুব ভাল লাগার। (৩) নাটকের বইয়ে
চরম নেশা পেয়েছিল একসময়। ডাকঘর, রক্তকরবী, রাজা- পড়েছেন? নুরুল মোমেনের ‘নেমেসিস’ পড়বেন, মানাবে
আপনার সাথে; নাটকের পাঠক না হলেও এ জিনিস পড়ে আনন্দ আছে।
তাছাড়া সেলিম আল দীনের নাট্যসাহিত্য উপমহাদেশে অনন্য মাপের। (৪) আর সাহিত্য
সমালোচনা, ছফা, আজাদ, রুহুল অনেকে আছেন। প্রাক্তনদের মধ্যে মুনীর চৌধুরীর ‘তুলনামূলক সমালোচনা’ আমার ভাল লাগে ভীষণ। (৫)
মুজতবা আলীর চেয়ে আবুল মনসুর আহমেদের রসবোধ আমায় টানে বেশি। ‘আয়না’র কথা আগের তালিকায় বলেছিলাম। ‘ফুড কনফারেন্স’, ‘গালিভরের সফরনামা’ একঘেঁয়ে মুহুর্তে পাশে রাখতে পারেন, এ বইগুলি
বারবার পড়েও ক্লান্তি আসবে না। ইনি তো আমাদের জোনাথন সুইফট। গড্ডালিকা- মানে
পরশুরামের ব্যঙ্গ-রচনাও অসাধারণ; বোধহয় পড়েছেন। (৬)
সূর্যদীঘল বাড়ি, লালসালু, ক্রীতদাসের
হাসি, তেইশ নম্বর তৈলচিত্র- এই কটি ক্লাসিক পড়া তো?
আপনি নিশ্চয় আমার চেয়ে বেশ ভাল পড়েন। আমার টেস্ট ক্ষাণিক
ক্লাসিকের দিকে। আবার পুরনো অনেক বই বাজারে পাইনি বলে পড়া হয়নি। সমকালীন বই পড়া
হয় না, নিরীক্ষিত না হলে ঝুঁকি নিতে সাহস হয় না আসলে।
তাছাড়া আগের মত বই কেনাও হয়ে ওঠে না এখন।
১/১৭/২০১৮, সন্ধ্যা ৬:৩২টা
নীরদ :
পাঠক হিসেবে আমি কেমন জানি না, কারও
সাথে নিজেকে তুলনা করে এগিয়ে থাকা বা পিছিয়ে পড়া মনোভাবের চেয়ে সমান্তরাল ভাবতেই
ভালো লাগে। তবে মানুষ হিসেবে আপনার যে পূর্ণতা সত্যিই আমাকে অবাক করে।
নীনা :
ইদানীং বলতে গেলে আউট বই পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এর জন্য মঞ্চের
প্রোডাকশনের প্রেমে পড়া দায়ী ছিল প্রথমে। পরে বইয়ের চেয়ে সিনেমা দেখার প্রতি
আগ্রহ চলে এল; জবের বইয়ের জগতে প্রবেশের পরে আর ফিরে
তাকানোর সময়ই পেলাম না। একান্ত অবসর বইয়ের চেয়ে ফেসবুকিং নেশাটা আমাদের খেয়ে
নিচ্ছে।
তাই বলছিলাম পাঠক হিসেবে নিজের উন্নতি আর ধরে রাখতে পেরেছি কই।
প্রচুর প্রবন্ধ পড়া উচিত ছিল। শুধু বিগত একটা প্রজন্মের লেখকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ
হয়েই ছিলাম, যেখানেও জমাট হয়ে মত বিচরণ করতে পারিনি।
যা হোক- পড়া আর সবকিছু মিলিয়ে হয়ত আপনার সাধুবাদ পেলাম। আনন্দ
লেগেছে আমার।
তবু খুব সীমাবদ্ধ মনে হয় নিজেকে। কোনওদিকেই তেমন করে জাতে ওঠা
হয়নি তো। অল্পসল্প। এ থেকেও পিছিয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
নীরদ :
নিজেকে সবার থেকে আলাদা ভাবতে যাবেন কেন? চারপাশের দশজন মানুষ আমায় চিনল বলে আমি আলাদা হয়ে যাব? অথবা আমায় কেউ চিনল না বলে নিজেকে খুব ফেলনা ভাবতে হবে?
অর্থ, যশ কোনও কিছুতেই আকর্ষণবোধ করি
না। যা মন থেকে করতে ভালো লাগে তাই করার পক্ষপাতী ; মানুষ
আমায় ভাল জানুক, আমার কথা শুনে দশজন লোক হাত তালি দিক
এসবের কোন কিছু প্রাপ্তির আশা করি না।
নীনা :
না না। আলাদা হওয়া না হওয়া নিয়ে কিছু মানে করিনি। কেমন অলস
আমি। ইচ্ছেপূরণ সে কারণেই দূরেই সরে যায়। এটা নিজের উন্নতি নিয়ে স্বস্তি বোধ
করার বিষয়। ডিস্টিংগুইশড হওয়া ফ্যাক্ট নয়।
আচ্ছা, আপনি ঐ নতুন জব সলিউশনগুলো কেন
কিনলেন?
নীরদ :
নিজেকে সান্ত্বনা দেব বলে।
নীনা :
যে জন্য আমি গত সপ্তাহে ঢাকা গেছিলাম। হাহা।
নীরদ :
আমার খুব ইচ্ছে চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাব, মাছ চাষ, সব্জিক্ষেত করব । এর আগে কিছু পুঁজি
লাগবে। আমার অহংকার করার মত একটা জিনিসই আছে। তা হল মানুষের বিশ্বাস। কেউ একজন
আমাকে বিশ্বাস করেছে টের পেলে অহংকারে আমার মাথা আকাশ ছুঁতে চায়। তখন সেই মানুষদের
অন্ধের মত ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
নীনা
গ্রামে ফিরে গেলে স্ত্রী থাকবে না আপনার সাথে?
নীরদ :
এই সমাজে কৃষকের যা অবস্থা, কপালে বউ
জুটবার কথা নয়।
নীনা :
গ্রামের কোনও মেয়েকে পছন্দ হবে না?
নীরদ :
আমাকে পছন্দ হলেই হবে।
নীনা :
গ্রামে জায়গা আছে খুব ভাল? মানে চাষবাস
খামারের।
নীরদ :
বাবা রেখে গেছেন। ক্ষয়িঞ্চু পুঁজিবাদের যুগে আমি যৌথ চাষাবাদের
স্বপ্ন দেখি।
নীনা :
আমারও বাবার জমিতে পশুপাখি, মাছ আর শস্য
বা কৃষিবন প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে। সেখানে বিশ্বস্ত মানুষ লাগে, আপনাকে বসিয়ে দেব। বিশ্বাস করলে যেহেতু আপনি খুশি হবেন।
নীরদ :
হাহাহা, কামলা কাটাবেন?
নীনা :
কামলা নয়। তদারকি। তাও নয়। জয়েন্ট ভেঞ্চার। তবে তদারকি আপনার।
নীরদ :
আপনার কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতার পরপুরুষ প্রেমিকের মত আমি
বর্গাচাষী হতে চাই না। তিন বেলা খেতে হবে বলে চাষবাস করার কথা চিন্তা করছি,
মুনাফার উদ্দেশ্যে নয়। বর্গাচাষ আর কর্পোরেট স্লেভারি তো
একইজিনিসের ভিন্ন নাম। কেউ অন্যের জমিতে শ্রম দেয় আর কেউ অন্যের প্রতিষ্ঠানে
নিজেকে সওদা করে।
বিশ্বাস করেছেন তাতেই আমি খুশি। আচ্ছা, খুশি
করার জন্য বিশ্বাস করেননি তো!
১/১৮/২০১৮, দুপুর ১২:৪০টা
নীনা
:
আপাতত এটা রসবোধ থেকেই বলা। অবিশ্বাস বা বিশ্বাসের সময় আসলেই
আসেনি। কে জানে আপনি মন খারাপ করে ফেলবেন কিনা। আমরা তো কাল্পনিক চরিত্র, ভারচুয়াল। আপনি আমাকে যত উঁচুমাপের এখানে আবিষ্কার করতে পারেন- বাস্তব
আমিতে হয়তো সেটুকু পাবেন না- ঐ যে আমার পদ্মাবতী গল্পের চরিত্রে যে সংকট। অথবা
এখানেই আমরা ঠিক আছি। তথাকথিত বাস্তবতায় আমরা নষ্ট হয়ে যাই।
আর শুনুন, কবির বর্গাচাষের সাথে এই
দাসত্বের বর্গাচাষের হিসেব এক করলে মানাচ্ছে না তো।
পর্ব ৯
_______________________________________
১/১৯/২০১৮, সকাল ৯:১৯টা
নীনা :
নীরদ, রাগ করেছেন আমার কথায়!
নীরদ :
দেখুন, আমাদের ‘ভারচুয়াল’ পরিচয়, রাগ
বা অভিমান করবার মত ম্যাচিউর হয়নি।
নীনা :
তাই তো দেখছি। আমার তোলা ‘ভারচুয়াল’
ওয়ার্ডটির উপরে আপনার রাগ হয়েছে।
নীরদ :
আচ্ছা, মানুষের অনুভূতি, বিশ্বাস, ভাল লাগা, মন্দ
লাগা, ভাবনা সব কিছু কি ভারচুয়াল জগতে এসে পাল্টে যায়?
নীনা :
আমি মনে করি মানুষের একের অধিক জীবন থাকতে পারে। থাকে। এক জীবন
দিয়ে দ্বিতীয় জীবনকে মেপে নেয়া ভুল। দুটি বা তিনটি-চারটি জীবন প্রত্যেকটিই হয়ত
মৌলিক, আলাদা আলাদা। অথবা যে কোনও একটি জীবন অভিনয়ের। না,
প্রত্যেক জীবনে কম বেশি অভিনয় এবং নিজস্বতা মিলেমিশে আছে।
১/১৯/২০১৮, সন্ধ্যা ৬:২৪টা
নীনা :
সত্যি রাগ করেছেন! তেমনটি হলে ভারচুয়াল, রিয়াল যাই হোক আমার আসলেই অনুশোচনা হচ্ছে। আমার বর্ণনাটুকু যথাযথ
প্রক্রিয়া মেনে সবিনয় হয়নি।
আমি আসলে এত কট্টর নই। আঘাত দিয়ে থাকলে মন থেকে মাফ চাই।
নীরদ :
মানুষের অনুভূতি, বিশ্বাস , এসব কী করে ভারচুয়াল আর নন-ভারচুয়ালের সংজ্ঞায় আলাদা হয় তা ভাবছি। আদৌ
আলাদা হয়? কোনও নাস্তিক বন্ধুর সামনে এলে যেভাবে ধর্ম
নিয়ে সমালোচনামুখর হব, একজন হেফাজতের অনুসারী আত্মীয়ের
সামনে এ জিনিস সেভাবেই সম্ভব নয় মানি, কিন্তু তার মানে এই
না যে চিন্তার মধ্যে ফারাক। বরং একটাই চিন্তাকে বিভিন্ন পরিবেশের উপযোগী করে নিজের
বিশ্বাস এবং চিন্তার পক্ষে অবস্থান গড়া।
আপনি বোধহয় তাদের কথা বলতে চেয়েছেন যারা নিজের মত ভাবতে পারে না,
যাদের চিন্তায় নিজস্বতা নেই, অন্যের
চিন্তায় দোল খেয়ে বার বার দিক পরিবর্তন করে।
নীনা :
আমি সম্ভবত আপনাকে এই কথা বোঝাতে আপাতত ডিসেবল। এই ব্যাপারে
অভিজ্ঞতায় আপনার আর আমার পার্থক্য থাকার জন্যই বোধহয় সেটা সম্ভব নয়। কিছু
কিছু ঘটনায় অভিজ্ঞতা ব্যাপার করে, বুঝিয়ে শুনিয়ে দিলেই
হল না।
প্রত্যেক জিনিসের একই সাথে অভিজ্ঞতা না থাকা অবশ্য ব্যর্থতা নয়।
বরং এটাই স্বাভাবিক।
যা হোক, আঘাত দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়,
তা জানাতে চাই।
খুব ভাল হয়নি। একটা পদ্য লিখেছি।
নীরদ :
শোনাবেন?
নীনা :
আপাতত শোনানোর ক্ষমতা নেই, তাই
লিখেপড়িয়েই দিলাম।-
“আঙুল পাঁচটি, তার ছিদ্র কটি-
প্রশ্ন সুধাবে তুমি আঁতুড়ঘরের শিশুটিরে
পেট চিরে জন্মদাত্রীর
ভূমিষ্ঠ হয়নি যার মাংসপিণ্ড।
নাম তার শিশু!
হৃদয় আছে?
আঙুলের শূন্যস্থানে যে আঙুল রাখে তার নাম ‘প্রেমিক’।
যথারীতি-
মাংসপিণ্ডের কাছে প্রেমিক হতে বাতিকি আবদার জুড়ে দিলে
পিণ্ড সুর মেলালে- হ্যাঁ;
এইটুকু তার সহানুভূতি হল কীভাবে
ভাবনায় দিশেহারা অনিষ্ট জীব- আমি-
কীসে উৎফুল্ল হব সেই খবর পেলে কেমন করে
কচি ব্লাডি শিট!
গালি পরিপাকে সমস্যার পরে কান্নায় সোরগোল করে ভূমিষ্ঠ হল সে।
এখানেই শেষ নয়, প্রেমিক একদিন আঙুলের
ফাঁক
খুঁজে পাবে -চারের গুণিতক সংখ্যায়
অসংখ্য
আমি নামের অনিষ্ট জীব যার নাম দেয় ট্রাজেডি।”
নীরদ :
শোনানোর ক্ষমতা নেই! বটে। আপনি
নিজেই এমন এক ভাষা, মুখের ভাষা নন।
আপনার কবিতা এক্সপ্লোর করবেন?
নীনা :
শোনাব, ভবিষ্যতের অপেক্ষ করা লাগে।
আর এ জিনিস কবিতা হয়নি। পদ্য। না, তাও
নয়। গদ্যরূপ, তাই পদ্যও নয়। কে জানে কী দাঁড়াল খড়কুটো !
অখাদ্যও বলতে পারেন। তবু বলি- প্রেমের মাহাত্ম্য জানে না তেমন সরল লোককে সেধে
প্রেমিক বানানো; প্রেম শেখানো। তারপরে বিরহের দুঃখ সওয়া।
নীরদ :
রূপক অর্থ। বেশ! আমি কবিতার সমঝদার পাঠক নই। তবে মনে হচ্ছে,
আপনার কবিতার হাত আছে।
১/১৯/২০১৮, রাত ১০:১২টা
নীনা :
আমায় দিয়ে মান রক্ষে হয় না। এমনভাবে লেখা উচিত যেন সহজবোধ্য
হওয়ার পরিমিতি ত্রিশ শতাংশ নিয়ে শুরু করে পঁচাত্তুর-আশি শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা
করে। এর কম বেশি নয়।
বাদ দিন।
প্রসঙ্গান্তরে যাব, আমার একটা কৌতূহল,
আপনার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। প্রায় আপনি বলেন বিভিন্ন বন্ধুর
কথা। বিশেষ কারও গল্প করুন না।
নীরদ :
অনেক তো বন্ধু। কাকে ছেড়ে কার কথা বলি!
নীনা :
যে আলোকিত। অথবা আপনার ইচ্ছে।
নীরদ :
অর্থনীতি বিভাগের লিটনদা বেশ মজার লোক। একদিন
আমাদের বন্ধু সুব্রতের নাম জসিম দিয়ে দেন, সুব্রত
খুব মোটাসোটা। লোকে সুব্রতকে জসিম ডাকলে সে খুব রাগত। একদিন তার সহপাঠী ভুল করে
জসিম ডেকে বসে। তাতে সুব্রতের সে কী রাগ! ফুঁসে উঠে ততক্ষণাৎ হুমকি দিয়ে বসে।
আমি আর সেতু যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলি, সুব্রত নয়, জাসিম রেফারেন্স নেই। সেদিনের এক
কথোপকথনে জিজ্ঞেস করি “আমার বন্ধু জসিমের খবর কী!” সেতু হেসে বলে
“তোর বন্ধু জসিম থেকেই জিজ্ঞেস করে নে।” ততক্ষণাৎ সুব্রতকে ফোন দেব বলে
সার্চ-বাক্সে বার বার জসিম নামে খুঁজে যাচ্ছি, কোনভাবেই জসিম নামে কনট্যাক্ট পাচ্ছি না। মনে পড়ল, আসলে আমি সুব্রতকে কল দেব, জসিম নামে তো কোনও
নম্বর সেভ করা নেই।
সুব্রতের দেখা পেলে অনুমতি নিয়ে খুব ভয়ভয় মনে ঘটনাটা তাকে না
জানিয়ে পারলাম না। ভাবছিলাম, আবার মন খারাপ করে কিনা,
দেখি সেও মুখ টিপে হাসছে।
এখন তুমিও হাসো।
সরি আপনি।
১/২০/২০১৮, রাত ৯:২৯টা
নীনা :
এটা তো একটা মুহূর্ত। বন্ধুর সমগ্রটা নিয়েই আপনি যা বোঝেন,
কয়েক বাক্যে সারমর্ম… জানতে চাওয়ার নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই-
মানুষের বিচিত্রতা নিয়ে জানতে ভাল লাগে।
নীরদ :
ঐভাবে কারও জীবন নিয়ে ব্যবচ্ছেদ করার ভাবনা এখনও হয়ে উঠেনি।
নীনা :
আমার এই কাজের বদভ্যাস আছে।
নীরদ :
আপনি মহান, নমস্য।
নীনা :
আপনি মনে হয় সরল। প্যাঁচখোপ বোঝেন না।
নীরদ :
বিকেল চারটা থেকে ওয়াজ মাহফিলের মাইকের নিচে আছি। শব্দ দূষণের
ঠেলায় মাথার খুলি উড়ে যাওয়ার দশা। সরল গরল কিছুই টের পাচ্ছি না আপাতত।
নীনা :
ওয়াজ?
নীরদ :
ঢাকার দেয়ানবাগীর ওরশের সমর্থনে ওয়াজ মাহফিল।
নীনা :
দেওয়ানবাগীর আখড়া কি মহাখালীতে?
নীরদ :
না, ফার্মগেটে বোধহয়। এখানে তার ভক্তকুল
আছে, তাদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।
আপনি দেয়ানবাগীর ভক্ত নয়তো?
নীনা :
না, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
আমার একজন বন্ধুর আজ সম্পর্কচ্ছেদ হল। আজই নতুন প্রেমকে গান
গেয়ে ভিডিওতে বার্থডে উইশ করবেন।
নীরদ :
নীনা।
নীনা :
বলুন।
নীরদ :
কিছু না। আপনার নামটা এত মধুর ডাকার লোভ সামলাতে পারলাম না।
নীনা :
আচ্ছা, নীরদ, না
নীরোদ? আপনার নামটাও বেশ সুন্দর। বোধহয় নীরোদ, ব্যাকরণে?
নীরদ :
না না, ভুল হচ্ছে আপনার।
নীনা :
কনফিউজড হয়ে পড়েছি। নীরদ সুন্দর, অবশ্যই
সুন্দর।
নীরদ :
অবশেষে দেওয়ানবাগীরা থামল। আল্লাহ্র দয়ায়।
১/২১/২০১৮, সকাল ৮:৪৭টা
নীনা :
নিঃ+রব= নীরব। এটা সংস্কৃত বিসর্গ সন্ধির নিয়ম। কিন্তু ‘রদ’ শব্দটা আমার ধারণা বিদেশি। তাই লেখার সময়
একে সূত্রবদ্ধ করতে ইচ্ছে হয়নি।
অথবা নীরদের অর্থ আছে। আমি জানি না।
নীরদ :
আমি জল দেই। মেঘ, সাদা মেঘের দল।
নীনা :
বলাহক।
______________________________________________________________________________
পর্ব ১০
_______________________________________
১/২১/২০১৮, বিকেল ৪:৩১টা
নীনা :
অফিসে?
নীরদ :
জ্বি ম্যাম।
নীনা :
অফিসের কাজ কী আপনার?
নীরদ :
কিছুই না। সারাদিন খবরের কাগজ পড়া, খেলা
দেখা, ফেবু তো আছেই।
নীনা :
এ যাবৎ দাসত্ব আর হেনতেন বদনাম দিয়েও এখন কাজ কী তা অবশেষে চেপে
যাচ্ছেন!
হোয়াটএভার, নাইস জব এস পার সেইড এবাভ।
নীরদ :
হাহা। জব ইজ নেভার নাইস।
নীনা :
এন্ড বিজনেস ইজ?
নীরদ :
নো।
ফার্মিং ইজ দ্য বেস্ট চয়েস। পাশাপাশি স্কুলের মাস্টারি।
নীনা :
তাহলে সে জিনিসের খোঁজে নেমে পড়ুন।
১/২১/২০১৮, রাত ৮:৫৭টা
নীরদ :
সারাদিনে কী কী নিয়ে রইলেন?
নীনা :
কাজের কাজ কিছুই নয়। গত কিছুদিন যা একটু রিহার্সালের টুকিটাকি
ছিল। আজ একেবারেই বেকার।
নীরদ :
আমার তো কোনওটিই হয় না ঠিকমত।
নীনা :
কোনওটিই হয় না!
নীরদ :
পড়ব ভেবেছিলাম। আর হল কই!
নীনা :
গল্পের? বা চাকরির?
নীরদ :
গল্প-উপন্যাস অল্পসল্প হয় ঠিক। বাকিটার তো কিছুই নয়।
১/২২/২০১৮, দুপুর ১:৩৬টা
নীনা :
আমি জানতে চেয়েছি, আক্ষেপ করছিলেন
কোনটির শোকে?
নীরদ :
কঠিন প্রশ্ন।
নীনা :
দুটোই?
নীরদ :
তা-ই বোধহয়, ম্যাডাম।
১/২২/২০১৮, রাত ৮.২৫টা
নীনা :
সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস ছাড়া আর কিছু লেখা কি হয় আপনার?
নীরদ :
সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস নিয়ে কবে লিখলাম?
নীনা :
ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলো।
নীরদ :
ও, তা-ই। একটা জিনিস দেখাচ্ছি। সবুর।
“দায়বদ্ধতার চরম ব্যর্থতা
আমি।
আমি
পিছিয়ে পড়া মনুষের নীরব কান্না।
তীব্র প্রতিবাদের অস্পষ্ট স্বর
আমি।
আমি
প্রতীজ্ঞাভঙ্গের নিদারুণ যন্ত্রণা।
সৃষ্টিতত্ত্বের উদ্বেলিত শির।
আমি।
আমি
রবি ঠাকুরের নষ্টনীড়।
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা
আমি।
আমি
শরতের অভিমানী বিজয়ার হাসি, দত্তা।
যুবতীর হৃদয় ছুঁয়ে পড়া বাঁধাহীন অশ্রুমুখ
আমি।
আমি
আমার দুখিনী মায়ের একমুঠো সুখ।
আজন্ম ভুল, মহাপাপ
আমি।
আমি
তসলিমা নাসরিনের কুড়ি টাকার নোট।
আমি
অবলীলায় কিনতে পাওয়া এক পুরুষ।
তবু আমিই
আমার সবটুকু সুখ।”
বানান ভুল এড়িয়ে পড়বেন। সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি আত্মতৃপ্তি নিয়ে
লিখেছিলাম।
১/২৩/২০১৮, রাত ১:৪৯টা
নীরদ :
কোনও বন্ধুকে সামগ্রিকভাবে কয়েক লাইনে মধ্যে সেবার দেখতে
চেয়েছিলেন। তাই বছর পাঁচেক আগের নিজেকে নিয়েই এই লেখাটা প্রক্সি হিসেবে চালিয়ে
দিলাম।
নীনা :
তসলিমা নাসরিনের কুড়ি টাকার নোটের মাহাত্ম্যটি বোঝাবেন?
নীরদ :
ভুলে গেছি। কবেকার! দুহাজার তের সালের কথা।
নীনা, আপনি কি তাহাজ্জুদ পড়েন?
নীনা :
পড়ি না। আর যারা পড়ে বা যারা পড়ে না কারও প্রতি আমার কোন
ক্ষোভও নেই।
নীরদ :
এত রাত অবধি আপনারও জাগা হল।
১/২৩/২০১৮, সকাল ১১:১৯টা
নীরদ :
“ডেঞ্জারাস ওয়ার্কিং কন্ডিশন এন্ড লো ওয়েজেস হ্যাভ লং বিন
অ্যা কনসার্ন ইন বাংলাদেশ, হুইচ সাফারড ওয়ান অফ দ্য ওরস্ট
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্আকসিডেন্টস ইন টু থাউজ্যান্ড থারটিন।”
এখানে ‘হ্যাভ লং বিন’-এর ব্যবহার কী অর্থে ?
নীনা :
এটার অর্থ বলতে পারব। এবং ট্রান্সলেশনে এলে আমার নম্বর কাটা যাবে
না। কিন্তু ফ্রেসটি চোখে পড়েনি আগে। ‘দীর্ঘমেয়াদি’
বুঝিয়েছে। তা তো আপনারা ধরে ফেলার কথা।
নীরদ :
মানে বুঝেছি। কিন্তু কেমন যেন কাঠামো ধরতে পারছি না।
যা-হোক, আমার কবিতার মান কি খুব দরিদ্র
পর্যায়ে? প্লিজ, ইউ আর
রিকুয়েস্টেড টু ক্রিটিসাইস, এন্ড অফকোর্স ফ্র্যাঙ্কলি।
১/২৩/২০১৮, রাত ৯:০৯টা
নীনা :
এই কবিতা দিয়ে একজন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য আমূল বিচার করা যাচ্ছে
না। উপমাগুলো খারাপ নয়। ‘আমি’ নিয়ে
একটি কম্পোজিশন করেছেন, পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দুটো সমস্যা।
প্রথমত. এ থেকে চরিত্রের নতুন তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয় না। যেন এ সমস্ত ভাবনা ইতোমধ্যে
অনেকে বলে গেছেন। দ্বিতীয়ত. বিদ্রোহী কবিতার ন্যূনতম ছায়া মাড়ায়। দুএকটি অনুপ্রাস
আনন্দ দেয়, কিন্তু ছন্দ দুর্বল।
আপনার হুকুম মতে ফ্র্যাঙ্কলি বলেছি, কে
জানে খারাপ ব্যাখ্যা হল কিনা। সে জিনিস আপনিই বিচার করবেন।
নীরদ :
হাহা, আমি তো তেমন নিয়ম মেনে লিখি না।
আপনার কাছ থেকে যেটুকু ইতিবাচক শুনেছি ওতেই চলবে।
আর হ্যাঁ, ভাল থাকবেন। কিছুদিন সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করব। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন, এই আশা করি।
নীনা :
আপনার জন্য শুভকামনা। ফিরে আসবেন সময়মতো। অপেক্ষায় রইলাম।
১/৩০/২০১৮, বিকেল ৪:২৫টা
নীরদ :
সত্যি কি অপেক্ষা করেছিলেন?
নীনা :
“: অপেক্ষা ভাঙাতেই তো চাই, প্রশ্ন
এড়িয়ে যায় যে!
: আরেকটু অপেক্ষা কর নোনা সাগর, নদী
বুকে ঝাপিয়ে পড়ব।”
আপনার প্রশ্নটি শুনে নিজের কবিতার স্মৃতিচারণ করেছি।
সাধারণভাবে বললে আজ খুব অসুস্থবোধ করেছি, যদি যাবার আগে সুস্থ থাকবার একটা আশীর্বাদ দিয়ে গিয়েছিলেন বটে। শেষ
রক্ষে হয়নি।
আর অপেক্ষা করেছি, হ্যাঁ করেছি।
এর চেয়ে ভালভাবে আর কিছু লিখে বোঝাতে পারব না।
নীরদ :
তবু অনেক কিছুই বলে ফেললেন।
সাথে ইমোজি! কবি, আপনার কাছে এই ভক্ত
ইমোহীন কবিতা প্রত্যাশা করেছিল।
১/৩০/২০১৮, রাত ৯:২১টা
নীনা :
অসুখ নিয়ে কোনও ওষুধ দিলেন না?
নীরদ :
মেয়েদের মুখে ‘অসুস্থ’ শব্দটি প্রকৃতিপ্রদত্ত কিছুর অর্থ করে কিনা, তাই
ভেবে আর জানতে চাইনি।
এখন জানতে চাইছি, কী হয়েছে বলুন তো।
নীনা :
সেরেছে! থাক।
কোথায় ছিলেন এতদিন, কী করছিলেন আপনি?
নীরদ :
তেমন কিছুই নয়। আগের মতই কেটেছে। একটু বাইরে ঘোরাফেরা।
কী অসুখ বললেন না যে!
নীনা :
কোল্ড থেকে গলাব্যাথা। নাসারন্ধ্রে জ্যাম। জ্বর। মাথাধরা।
নীরদ :
আহারে! সত্যি মায়া হচ্ছে।
নীনা :
শুক্রবার কেমন কাটল?
নীরদ :
শুক্রবারে বোন আদেশ দিয়েছিল, তার মেয়ের
জন্যে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে যেতে, ব্যাগে থাকতে হবে
কার্টুন। এইসব নিয়ে মেলায় ঘুরতে গেছি।
১/৩১/২০১৮, রাত ৯:৫৩টা
নীনা :
নীরদ, আপনার কখনও ফ্রিল্যান্সিং স্বপ্ন
ছিল?
নীরদ :
যদি বলি এখনও আছে! হাস্যকর শোনায়?
নীনা :
বিশ্বাসযোগ্য শোনায়। সেটিই জীবনের জন্য বেছে নেননি কেন?
নীরদ :
সময় তো এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
আপনার শরীরের অবস্থা উন্নতি করেছে?
নীনা :
তা বটে। চাকরির বয়সের ফুরিয়ে যাওয়ার নয় এ জিনিস।
হ্যাঁ। ওষুধপথ্যের পর কিছু উন্নতি হয়েছে। এখনও দুর্বল।
নীরদ :
খাওয়াদাওয়া ঠিকভাবে চলছে তো? নাকি বড্ড
অবহেলা চলছে।
নীনা :
সবই চলছে মোটামুটি।
নতুন উপন্যাসগুলো পড়া শুরু করেননি বোধহয়।
নীরদ :
আমার সম্পর্কে আপনার দেখছি খুব নীচু ধারণা। একটা বই শেষ। অন্যটার
কিছু অংশ এগিয়েছে।
নীনা :
তা নয়। এতদিন কী করেছেন, জানতে চেয়েছি,
সেখানে ঘোরাফেরার নাম এসেছে। বইয়ের নাম তো বলেননি।
এতে নীচু ধারণার কী হল?
নীরদ :
না না, রসিকতা করেছি মোটে।
আর উপন্যাস পড়া নিয়মমত একটি বিষয়, তাই
আলাদা করে বলাও হল না। যদিও সময় পাওয়া যায় না অনেক ক্ষেত্রে।
২/১/১৮, দুপুর ১২:৩১টা
নীনা :
রবীন্দ্রনাথের ড্রাই হার্ট ফ্যান, কিন্তু
টেলিভিশন হারাম তাহার নিকট… এমন মানুষও চিনি।
নীরদ :
এও সম্ভব!
নীনা :
মাত্র একজন নয়। এই চরিত্রের লোক একের অধিক। ঠাকুর ভাগ্যবান। সবার
মন জুগিয়েছেন।
তবে শুধু রবি কেন, সাহিত্য পড়ে, চলচ্চিত্র দেখে, মনের অন্ধকার অন্ধকারেই থেকে
গেছে, কম নয় সেই লোকেদের সংখ্যা। উঁচু-নীচু কোন কাতারে
তাদের ফেলবেন?
সাহিত্যিকেরা স্বয়ং আছেন সেই কাতারে।
নীরদ :
এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ আছে। যদিও রবীন্দ্রনাথ অনেক
পরিচিত এবং লিখেছেন প্রচুর। কিন্তু তা পাঠকের চিন্তার জগতে খুব একটা নাড়া দিতে
সক্ষম হয়নি। বরং তার চেয়ে আহমদ ছফা, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদের লেখা অনেক শক্তিশালী যা চিন্তার জগতে মৌলিক পরিবর্তন
আনতে বড় ভূমিকা রাখে।
নীনা :
‘গোরা’ পড়বেন।
নীরদ :
গোরা, স্ত্রীর পত্র এমন কিছু সৃষ্টি তার
আছে, অস্বীকার করছি না। কিন্তু তার সমগ্র হিসেবে এইসব
লেখা নগণ্য।
২/৫/২০১৮, দুপুর ১২:৫১টা
নীনা :
আসলে তুলনার কিছু নেই। তার লেখার আবহ, অনুপ্রেরণা
পুরোটাই অন্য বস্তু। আর প্রথাবিরোধী যেসব প্রাবন্ধিকের নাম নিয়েছেন, তাদের পরিচয়, পরিসর অন্যরকম। এখানে তুলনা দিয়ে
কৃতিত্ব মাপা উচিত কি?
নীরদ :
প্রসঙ্গটি এখানেই থাক। আপনার শরীরের কী অবস্থা এখন? বেশ কদিন ধরে দেখা মিলছে না।
নীনা :
হারিয়ে গিয়েছি এই তো জরুরি খবর।
নীরদ :
মানুষের হারিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নিজের হাতে থাকে না।
নীনা :
থাকে তো। তবে গত কদিন আসলেই নিজের হাতে ছিল না। আমি ছিনতাই হয়ে
গিয়েছিলাম। আমাকে ওরা বন্দি করেছিল। তারপর… সম্পূর্ণ বিশ্বাস করবেন না।
নীরদ :
ওরা! বন্দি! কীসব বলছেন!
হসপিটাল?
নীনা :
মোবাইল হারিয়েছে।
আপনি ভাল ছিলেন তো?
নীরদ :
আপনার জন্য কেন যেন দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। অসুস্থ ছিলেন বলে হয়ত।
২/৫/২০১৮, সকাল ৯:৩০টা
নীনা :
রিপ্লেটা লিখতে গিয়েছিলাম। তখন এক ঝামেলা এল। কী লিখেছি তা আর পেলাম
না। যা হোক, কিছু ভাল লাগা লিখে বা মুখে কীভাবে প্রকাশ
করি আমার জানা নেই। আমার জন্য আপনার এই উদ্বিগ্নতা অবশ্যই দারুণ উপহার। দুঃখও
লাগছে যে ঐসময় কথা বলার কোনও সুযোগ তৈরি হয়নি।
নীরদ :
মনের আকুলতার কাছে সমস্ত বাঁধা বড্ড অসহায় হয়ে পড়ে।
২/৬/২০১৮, সকাল ৯:২১টা
নীনা :
মানুষ ছাড়া অন্য কোনও প্রাণীর প্রতি আলাদা টান আছে? যেমন খরগোশ, ডগ, বিল্লু!
নীরদ :
হয়ত হ্যাঁ। হয়ত না।
নীনা :
এটা কেমন উত্তর। ধরে নিচ্ছি তেমন নেই।
তার মানে আপনার ভাল লাগতে হলে তাকে ন্যূনতম রূপসী হতে হবে,
যেটুকু না হলেই নয়। কুশ্রী কাউকে আপনার পছন্দ হবে না।
নীরদ :
দেখুন, পরিচয় না থাকলে কারও প্রতি টান
অনুভব করার কথা নয়, সে হোক, মানুষ,
অথবা কুকুর। এখনও মানুষের বাইরে কোনও গরু বা কুকুরের সাথে পরিচয়
ঘটেনি, তাই উত্তরটি এভাবেই দিতে হল।
২/৭/২০১৮, সকাল ৮:৫২টা
নীনা :
পরিচয় হলে বাকি সব ঠিক থাকলে বহিরঙ্গ সুশ্রী না হলে তার সাথে ঘর করা
কতখানি সম্ভব আপনার রুচিতে?
নীরদ :
শুভ সকাল।
আপনি যা জানতে চেয়েছিলেন, তা যথার্থ বলা
মুশকিল। তবে দৈহিক সম্পর্ক দীর্ঘ সম্পর্কে তেমন ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে হয় না।
আমরা তো আসলে মনের খোঁজ করি। দেহ বয়ে আনে মন। যতক্ষণ মন দেখতে পাই না, ততক্ষণই দেহ মুখ্য। বা মন দৃষ্ট হবার সাথে সাথেই দেহ গৌণ হয়ে যায়।
নীনা :
প্রথমে দর্শনধারী- এই কথা অস্বীকার্য?
নীরদ :
বললাম তো, যতক্ষণ মন প্রকাশিত হবে না,
ততক্ষণ দেহ কথা বলবে।
নীনা :
তা হলেও যে দেহ ছাড়া মনে ঢোকা অসম্ভব বলতে হচ্ছে। দেহ যে
কোনওভাবে আবশ্যিক!
নীরদ :
মন বুঝতে যে সময় লাগে।
নীনা :
আমি বুঝতে বা বোঝাতে পারছি না, কুশ্রীরা
কি একটি রোমান্টিক সম্পর্কের জীবনের আশা বাদ দেবে?
নীরদ :
কাছে যেতে হয়।
আপনার প্রশ্ন আমি বুঝেছি।
শুনুন, আজ আমার জন্মদিন। আপনি চাইলে উইশ
করতে পারেন আমায়। এই সুযোগ সবাই পাচ্ছে না।
নীনা :
আহা গতকাল রাতে বললেন না কেন, মশাই!
অবশ্য জন্মদিনের উইশের সুযোগ সবাইকে দিচ্ছেন না জানার আগেই খবরটা
শুনে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম কীভাবে উইশ করব ভেবে।
কী আছে এই স্টিকারের বাক্সের ভেতরে বলুন তো!
নীরদ :
ভেতর রহস্য হয়েই থাকুক।
দিচ্ছি না মানে হাইড আছে, যেন
ফরম্যালিটির স্রোতে না ভাসি বা নোটিফিকেশন দেখাচ্ছে বলেই মানুষ উইশ না করে বসে।
নীনা :
তা বুঝেছি।
শুধু বাক্সের রহস্য দিয়ে পোষাবে তো? আর
কীভাবে সেলিব্রেট করা যায় মাথাতেই তো আসছে না। আগের ফোনটা থাকলে কাব্যিক কিছু লিখে
ফেলতাম। এই ফোনে এতে চন্দ্রবিন্দুসহ লেখার কিছু অনিবার্য উপকরণ পাচ্ছি না। হাত
খালি। সস্তা একটা মোবাইল নিয়েছি।
নীরদ :
না পোষালে কী উপায়! সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে হয়।
______________________________________________________________________________
পর্ব ১১
_______________________________________
২/৭/২০১৮ রাত ৮:২০টা
নীরদ :
মোবাইল কিভাবে হারিয়ে গেল তা বললেন না।
নীনা :
নিজেই জানি না। বাইরে থেকে এসে আর পাইনি। কল দিয়ে বন্ধ পেলাম,
হতভাগা।
নীরদ :
ওহ।
আপনি একা থাকেন?
নীনা :
অবশ্যই না। সারাদিনে রান্নাবাটি নিয়ে পড়ে থাকতে হত না তেমন হলে!
নীরদ :
তবে?
ফ্যামিলি সাবলেট থেকে মোবাইল মিসিং!
নীনা :
না তো। বাইরেই হারিয়ে গেছে।
নীরদ :
তা বলুন।
জানেন, আজ অফিসে সারপ্রাইজিং একটা ঘটনা
ঘটেছে।
নীনা :
সেটাই জানতে চাইছিলাম। জন্মদিনে কী কী কাণ্ড হল?
নীরদ :
কলিগেরা হোমমেড কেক আর গিফট এনে লুকিয়ে রেখেছিল। পড়ন্ত বেলায়
ডেকে নিয়ে উইশ করেছিল, কেক কাটতে হল।
একজন আগে থেকেই তারিখ জানে। সে-ই জানিয়েছে সবাইকে। এ সবের কিছুই
হবে ভাবিনি আমি।
নীনা :
জন্মদিনে সারপ্রাইজ এভাবেই হয়। নতুন কিছু নয়।
অবশ্য তা পেলে মনে হয় বিশেষ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। যেহেতু আপনার তারিখ
গোপন করা, তবে তো খুবই ভাল হল। সহকর্মীদের মধ্যে একটা ভাল
বন্ডিংস, আর সারপ্রাইজ আসলেই আনন্দের, বোঝা যাচ্ছে।
নীরদ :
জ্বি।
নীনা :
সারপ্রাইজে আপনি নরম হয়ে পড়েছেন।
নীরদ :
আসলেই।
২/৯/২০১৮, সকাল ১১:৩৯টা
নীরদ:
আপনার খুব লেখাপড়া হচ্ছে বোধহয়?
নীনা :
চেষ্টা করছি, কিন্তু হচ্ছে না তো।
রেজাল্ট ডিক্লেয়ারেশনের পর হয়ত হবে, যদি ফেইল না আসে।।
আজ প্ল্যান কী?
নীরদ :
বইমেলা। অথবা লেকের পাড়ে চুপটি করে বসে থাকা। যদিও লেকের পানি
এখন সমূহ দুর্গন্ধ হওয়ার কথা।
নীনা :
মেয়ে বন্ধু আছে না ঢাকায়?
নীরদ :
না, নেই।
নীনা :
ছেলে বন্ধু থাকলে মেয়ে বন্ধু থাকবে না? তাছাড়া
ঢাকার মেয়েদের মাঝে এত জড়তা নেই।
আপনি কিছু মনে করেননি তো! এমনি কৌতূহল ছিল।
নীরদ :
ছেলে বন্ধু আছে কখনও বলেছিলাম?
নীনা :
আড্ডা, ঘোরাফেরার কথা বলেন মাঝেমাঝে।
মেয়ে বন্ধু না হলে বাকিরা সব ছেলেই হবে না কি! নাকি সবখানে একা?
নীরদ :
চট্টগ্রাম থেকে মাঝে মাঝে পরীক্ষা দিতে বন্ধুদের কেউ আসে;
ঐ সময়ে আড্ডা হয়। এইখানে যে পরিচিত নেই তা নয়, কিন্তু তাদের সাথে ঠিক আড্ডা জমে না । আর ঘোরাঘুরি একা একাই।
২/১৪/২০১৮, দুপুর ১:৩১টা
নীনা :
দুঃখিত, আপনাকে না জানিয়েই আবার কিছুদিন
গায়েব হয়েছি। রাগ করেননি তো?
আচ্ছা, আমার একটা অবজারভেশন আছে।
নীরদ :
না। বরং প্রার্থনা করেছি, অসুস্থ না
হলেই হল।
অবজারভেশন কী, বলুন তো শুনি!
২/১৪/২০১৮, রাত ৯:২২টা
নীরদ :
কী হল?
অবজারভেশন এখন হাইড করতে চান নাকি?
নীনা :
না, মন ভাল নেই। নন ক্যাডারে একটা খারাপ
খবর।
নীরদ :
হেডমাস্টার?
নীনা :
আরে ধুর, সে তো বহু দেরি। ফার্স্টক্লাস
রিকুইজিশন বেশ লিমিটেড শোনা যাচ্ছে।
নীরদ :
তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছ কেন! যা হবার হবে।
নীনা :
ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা মনে হল। ব্যাংকের পরীক্ষায় যে আমি একেবারেই
মন বসাতে পারি না। শেষমেশ বেকারত্বের গ্লানি দীর্ঘ হয়ে পড়েছে।
নীরদ :
ক্যারিয়ার আর ক্যারিয়ার করে দুশ্চিন্তায় লাইফ হেল কোর না। সময় তো
ফুরিয়ে যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি পরীক্ষা আছে সামনে।
তোমাকে তুমি নামে বলছি। আপত্তি থাকলে জানাও।
২/১৫/২০১৮, সকাল ৭:২৪টা
নীনা :
‘তুমি’ শুনে ঘাবড়ে গেছি প্রথমে।
অল্পসল্প লজ্জাও করছে। তবে ইতিবাচক।
দুঃখ হল, এই ভাল লাগা ছুঁতে পারলে না
আমায়। কারণ সেই বিষফোঁড়া ক্যারিয়ার! ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে থাকতে পারি? বড্ড অলস আমি। আর এই বিসিএসের পরীক্ষা বাদে আমি পড়াশোনা করি কবে! গুমট
পরিবেশে সারাবছরেই থাকতে হবে যে নাহয়। এডির পরীক্ষার জন্য আমার কোনও মানসিকতাই
খুঁজে পাচ্ছি না। এদিকে মানুষ যখন আপডেট পেতে চায়, সত্য
না মিথ্যে বলব কিছু বুঝে উঠতে পারি না।
যতই সুন্দর কথা, কবিতার কথা শোনাও,
সে জিনিস আমি নিজেকে শোনাতে চাই, কিন্তু
আমার ব্যর্থতা শুধু আমাকে কাঁদায়।
যা হোক। তুমি নামে ডেকেছ, ধন্যবাদের
বেশি কিছু তোমার প্রাপ্য।
২/১৫/২০১৮, বিকেল ৪:৩০টা
নীরদ :
ভাবছি। ধন্যবাদের বেশি কিছু কী নেব!
নীনা :
নির্দ্বিধায় বলে ফেল।
নীরদ :
অপার্থিব কিছু চেয়ে বসলে কি অপ্রত্যাশিত ঠেকবে?
তোমার মনঃকষ্ট হয়ত আমাকে স্পর্শ করে না, কিন্তু তোমার হতাশা আমাকে একটু হলেও ভাবায়।
আমি চাই তোমার মত ক্রিয়েটিভ মানুষ প্রশাসনে আসুক, কিন্তু ক্যারিয়ারের চিন্তা তোমার সৃষ্টিশীলতার পথে না আবার
প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ।
নীনা :
অপার্থিব চাওয়াটা দয়া করে অবশ্যই বলবে। আরেকটা কথা আমার পরিবারের
কাছে আমি একটি বড় বোঝা। শুধু রক্তের ভালবাসার কারণে ওরা আমাকে তাদের ছায়ার তলে
রেখেছেন। এই বাস্তবতার কাছে আমার সব সৃজনশীলতা, মননশীলতা
তুচ্ছ।
নীরদ :
ফিরিয়ে দিয়ে যদি কেউ বিজয়ী ভেবে বসে? যদি
বলি- চল আমরা লতা, গুল্ম, বৃক্ষ
ভালবাসি”- ভালবাসবে তুমি? যদি বলি- আলোর শহরকে বিদায়
জানিয়ে চল জোনাকির দেশে যাই, যাবে তুমি?
নীনা :
পথ বলতে হবে।
নীরদ :
পথহীন পথের পথিক হব। পথ জানাটা জরুরি নয়।
নীনা :
শুনে আমার আরও বেশি আবৃত্তি, শ্রুতি,
কোরিওগ্রাফি, প্রযোজনায় ডুবে যেতে মনে
চায়। মনে এও চাইছে হেডমিস্ট্রেস হতে।
তোমাকে লেখা গল্পটা সম্পাদনা করেছি। ট্যাগ দেয়া হয়েছে, পড়ে দেখো।
নীরদ :
পড়েছি।
তুমি বরং হেডমিস্ট্রেস হও। চোখে চশমা, আর
শাড়িতে রাগী রাগী হেডমিস্ট্রেস।
নীনা :
মন খারাপে দাওয়াই দিচ্ছ, কিন্তু এই
চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না।
নীরদ :
অপেক্ষা কর বালিকা, একটু পরে তোমায় মন
খারাপের উপত্যকা দেখাব।
ওহে বালিকা, তোমার দৃষ্টি প্রসারিত কর,
দেখ এই মহাবিশ্বে তোমার জন্য রয়েছে কয়েক লক্ষ নক্ষত্র, তুমি কেন মিছে মিছে একটা চাকরি খুঁজে জীবনকে করছ সীমাবদ্ধ?
নীনা :
সান্ত্বনা আর নয় প্লিজ।
তোমাকে নিয়ে আমার একটা অবজারভেশন আছে বলেছিলাম। তুমি চাইছ আমাকে
পবিত্র করে রাখতে। আলোচনাকে তাই নিজস্ব গতিতে দিচ্ছ না হাঁটতে। একটু দ্বন্দ্বমুখর
বক্তব্য হবে আশঙ্কা থাকলেই অসুখী হওয়ার ভয়ে ‘এখন না বলি?’
অনুনয় করে যাও পাশ কাটিয়ে।
এটা আমার বেশ লাগে, আমারও যে আর দশটি
মানুষের মত দোষগুণের সমাহার থাকতে পারে, অশুভ ভাবনা থাকতে
পারে, সব জান তুমি, কিন্তু তবু
আমি তোমার চোখে সাদা এই কচুমিছে ধারণাটিকে টলতে দিতে চাইছ না।
এত যত্ন! আমার উপভোগ করা চাই।
কি জান? আমিও কিন্তু তর্কপ্রিয় নই,
ও সম্ভাবনা থাকলে নিজে হ্রাস টেনে দিতাম। তোমার এই ভয় আর আমাকে
পবিত্র করে রাখার চেষ্টা দেখে হাসি পায়।
নীরদ :
আমার সরলতার মজা নিচ্ছ?
একটা অপার্থিব চাওয়া ছিল; ভুলে যাওনি
নিশ্চয়।
নীনা :
জানতে উদগ্রীব।
২/১৬/২০১৮, সকাল ৬:৪৪টা
নীরদ :
যদি তোমার কন্ঠটি শুনতে চাই, শোনাবে ?
ও হ্যাঁ, গুড মরনিং।
২/১৬/২০১৮, দুপুর ১:৫২টা
নীনা :
গুড নুন।
ইশ। সেটা আমি চাই না?
কিন্তু আগে আমার একটি উত্তরের দরকার যে !
একটি হরিণ দেখতে খুবই চমৎকার, সুশ্রী।
কিন্তু শত হলেও সে একজন মানবী নয়।
এবার কল্পনাতে চলি। হরিণ মানুষের ভাষায় কথা বলা শুরু করলে। তার
ভেতরটা মানুষ বা মানবী। তার আচরণ প্রেমময়। বাইরেরটা সুশ্রী হরিণ।
তার সাথে তোমার বন্ধুত্বটা কেমন হবে যদি তার ভেতরটা তোমাকে
স্পর্শ করে। মানব-মানবীর সম্পর্কের যে সব প্রকৃতি আছে- তার মধ্যে কোনটি হবে?
২/১৬/২০১৮, রাত ৯:০২টা
নীনা :
উত্তর, দিলে না? থমকে যাওয়ার মত কিছু বলেছি কি?
কথাগুলো নিতান্তই দার্শনিক ধরে নাও না কেন? কিন্তু আমার কাছে ম্যাটার করে। তাই ঐ উত্তরটা চেয়েছিলাম।
নীরদ :
আজ সারাদিন বাইরে টোটো করছি। এখনও বাইরে। তোমার উত্তর
ভেবে-চিন্তে দেব ঠিক করেছি।
আর তুমি এত জটিল করে প্রশ্ন কেন কর,বলতো?
নীনা :
সহজ প্রশ্ন। সহজ।
নীরদ :
ভেংচি কেটে দিলাম। হুম্ম অনেক সোজা।
২/১৭/২০১৮, সকাল ৯:৪৮টা
নীরদ :
কী ম্যাম, কোনও শব্দ নেই যে!
নীনা :
আমিই তো উত্তর পেলাম না।
নীরদ :
তোমার উত্তর আপাতত স্থগিত।
নীনা :
কতদিনের স্থগিতাদেশ?
নীরদ :
আবার উত্তর?
নীনা :
সেটা না পেলে অপার্থিব চাওয়া যে পূরণ করতে পারছি না।
নীরদ
তুমি কখনো মানুষ চিনতে ভুল করেছ?
নীনা :
সেই ভুল না করে কে! সেই ভুলটাই স্বাভাবিক, সহজাত। ঠিক চেনাটাই অপেক্ষাকৃত অস্বাভাবিক।
নীরদ :
কিন্তু তুমি আমায় নিয়ে যে অবজারভেশন বলেছো তাতো পুরো মিলে গেছে।
যে এই কাজে দক্ষ তার তো মানুষ চিনতে ভুল হবার কথা নয়।
নীনা :
এটা তো তোমাকে আংশিক জানা।
পুরোটা জানা বিশাল ব্যাপার। টুকরো টুকরো অংশ মিলে সমগ্র হবে।
এতদূর যাওয়ার ফুরসত কি এত সহজে মেলে?
নীরদ :
ব্যাষ্টিক থেকে কি সামষ্টিকের ধারণা মেলে না?
একজন মানুষকে ব্যবচ্ছেদ করতে তার সময়ের প্রতিটি ভগ্নাংশকে
স্যাম্পল হিসেবে নিলে কয়েক জীবনেও সিদ্ধান্ত পোঁছানো যাবে বলে মনে হয় না।
নীনা :
একজন মানুষের সবগুলো টুকরো তো এক নয়। মানুষের নিজের মধ্যেই কত
সংঘর্ষ লুকিয়ে আছে। তাই পুরোটা চিনে ফেলার অতিআত্মবিশ্বাস ভাল নয়।
আমার সম্পর্কে অবজারভেশন দিতে পারবে?
নীরদ :
তোমায় নিয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই না। তোমার বিষয়ে
কৌতুহল ধরে রাখতে চাই। তাই সচেতনভাবেই অবজারভেশন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।
নীনা :
হা হা। করূণাদৃষ্টির মত হল এই ঘটনা।
আর ঘুরে ফিরে আমার কথাতেই আসলে কিন্তু। সহজে চেনা যায় না
মানুষকে।
নীনাদ :
নীনা।
নীনা :
হ্যাঁ বল।
নীরদ :
তুমি কি জানো তোমার নামটা এত সুন্দর যে এক জীবন কেবল এই নামটা
ভালোবেসে কাটিয়ে দেয়া যাবে।
এত সুন্দর নাম না দিলে হতো না?
নীনা :
আমার নামটির পেছনে একটি কবিতা আছে।
নীরদ :
কবিতা?
নীনা :
‘নোনা…
নীরদ :
তোমার কবিতা?
নীনা :
হুম্ম। আমার।
নীরদ :
এই নামে একটা উপন্যাস হতে পারে , এত
বিশাল করে বুকে লাগে; না না একটা জীবন হতে পারে।
নীনা :
এই যে, আমার কিন্তু বদভ্যাস। বাস্তব
কথোপকথনকে সাহিত্যের পেটে গুঁজে দিই। তুমি খপ্পরে পড়ে যাবে কাব্য করলে। কথা হবে
তোমার। ক্রেডিট হবে আমার।
নীরদ :
স্রষ্টা একজন হলেই হয়, তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়াটা
না হলেই সুন্দর।
নীনা :
নোনা গাঙ নাকি নীনা গাঙ কোন নামটা জীবন?
নীরদ :
নীনা।
নীনা :
নীনা বহিরঙ্গ। অন্তর নোনা।
নীরদ :
নীনা-ই তো নোনাকে প্রকাশ করছে, নাকি
নীনা ধারণ করে আছে নোনাকে?
নীনা :
তুমি নামের কারণেই আমার সাথে বন্ধুত্ব পেতেছ; আর আমি প্রথম কথা বলেছিলাম ব্যাংকের চাকরিতে কিছু সুখ আছে কিনা জানতে।
তারপর তুমি এর বিপক্ষে আমাকে ভালই ড্রাইভ করেছ।
নীনা নোনা এক। নীনা নোনার নাম। নোনা নীনার ভেতর।
নীরদ :
আমি যে কারণেই তোমার সাথে কথা বলি না কেন, তোমার প্রতিটি অক্ষর আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি।
আমি তোমায় মিসলিড করেছি!
মন খারাপ হয়ে গেল।
নীনা :
মানুষ যে জিনিস ভালবাসে না তা দূরে সরাতে এডভোকেসির প্রয়োজন পড়ে।
শৈশবে যখন ধর্মের খড়গ নেমে আসত ওসব আমার সহ্যই হত না, মুক্তির
আশে আমি এমন কিছুর হয়ত খুঁজে বেড়িয়েছি যেন পাপবোধ আমায় স্পর্শ না করে, একই সাথে মনের আনন্দ পাই। এ জন্যেই সাহিত্য আমায় প্রভাবিত করেছে এত
সহজেই। অনুশাসন যদি আমার মনে ধরত বা আমার মা যদি ধর্মসংস্কার নিয়ে এতখানি বাড়াবাড়ি
না করে বসতেন তবে হয়ত আজ আমি হতাম অন্য নীনা। হয়তবা নীনাই নই। কোনওকিছুর উপরে একটা
নির্দিষ্ট ঘটনা তো দায়ী নয়।
এছাড়া আমার কিছু বন্ধু ব্যাংকের চাকরি ছেড়েই দিয়েছে। এসব ঘটনার
ন্যূনতম ভূমিকা তো আছে। শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ কোর না খামখা।
২/১৭/২০১৮, দুপুর ১২:১৪টা।
নীনা :
মাঝে মাঝে তোমার সাথে প্রেমে হয়ে গেল কিনা ভেবে ভয় পেয়ে যাই।
দুটি নরনারী এভাবে কথা বললে বাতাসের বেগ সেদিকে ধাবিত হবে না সে
গ্যারান্টি দেয়া যায় না।
ভয়টা কীসের? তুমি যা ভাবছ তা নাও হতে
পারে।
তুমি হয়ত ভাবতে পার আমি সেই ঘটনা চাইনে।
বা ভাবতে পার তুমি তেমন কিছু ভাবছ না জেনে আমি সাবধান।
বা এটা সত্যি হতে পারে সম্পর্ক মানেই বন্ধুত্ব, প্রেম এরকম গৎবাধা কতগুলো নাম নয়। সেখানে কোনও শিরোনাম দিতে ভয়।
সঙ্কুচিত হই। ‘তুমি’ করে বলার পর
তাই বেশ লজ্জা পাই।
নীরদ :
যা কিছু স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত তা
নিয়ে ভয় পাবার কী আছে?
তবে আমার ক্ষেত্রে ভয় পাবার যথাযথ কারণ রয়েছে।
নীনা :
যেমন?
নীরদ :
আমার ভয় যদি সত্যি সত্যি কারও প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়।
এখন তো প্রেম বলতে বিয়ের কমিটমেন্ট। এদিকে আমি যে চাকরিতে আছি তা
নিয়ে অসুখী। একটা সময় চাকরি ছেড়ে দেব নিশ্চয়। ভাল লাগে না এমন কিছুর ব্যবস্থা করতে
না পারলে কমিটমেন্ট যাবে ভেঙে। আর কোনও মেয়েই চাইবে না জীবন নিয়ে জুয়া খেলতে। শেষে
কমিটমেন্ট না রাখাতে প্রতারক উপাধি জুটবে আমার।
নীনা :
বিয়ের বাঁধা ছাড়া আর কোনও বাঁধা থাকতে পারে না?
নীরদ :
কী থাকতে পারে?
______________________________________________________________________________
পর্ব ১২
_______________________________________
২/১৭/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:৪১টা
নীনা :
বিয়ের বাঁধা ছাড়া প্রেমের পথে আর কী বাঁধা থাকতে পারে! আমাকে
এইটুকু বল, প্রেম কি শুধু কাছেই সীমাবদ্ধ! বিচ্ছেদে নয়?শেষের কবিতার উপমা একদিন হয়েছিল না? বা
নজরুলের শিউলিমালা। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও প্রেমের অন্য সার্থকতা থাকতে পারে কি পারে
না?
আমি কিন্তু নিজের মনোভাব এ দ্বারা প্রকাশ করছি না। শেষের কবিতাকে
মেনে নিচ্ছি সেই কথাও এ মুহুর্তে বলছি না। শুধু প্রশ্ন করে তোমার দৃষ্টিভঙ্গিটা
জেনে নিতে চাই।
নীরদ :
প্রেমে বিচ্ছেদ থাকতেই পারে, তাতে প্রেম
ছোট হয়ে যায় না। তা তুমি ভাল করেই জান। তবে প্রেমের ক্ষেত্রে সার্বজনীন কোনও
সংজ্ঞা নেই। কেউ দূর থেকেই ভালবাসতে পারে, কেউ পারে না,
ভুলে বসে।
নীনা :
তবে কি তোমার আর ভয় নেই! বিয়েতে পরিণতি হোক বা বিচ্ছেদে হারানোর
কিছু নেই!
নীরদ :
প্রতারকের তকমার কী হবে?
নীনা :
সে জিনিস তুমি নিজেই ভেবেছ যে সেই কাজটা হবে প্রতারণা।
কমিটমেন্টই কি প্রেম? বিয়ে একটা
কমিটমেন্ট। কিন্তু সবসময়েই সেখানে প্রেম কোথায়!
নীরদ :
মা জননী, নীনাকে থামাও না।
নীনা :
ইশ! খারাপ তুমি।
স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার মধ্যে কোন অনুভূতি কাজ করছে বল দেখি?
নীরদ :
তুমি শুধু প্রশ্নই করে যাবে? নিজেই বলে
ফেল। প্রশ্ন থেকে বেঁচে যাই আমি।
নীনা :
হুহ। থাক।
নীরদ :
প্লিজ।
নীনা :
আমি আকাশের তারা দেখি ঘাসের বিছানায় শুয়ে। মাথাটা শুধু একটা
বালিশের কাছে রাখি। হয়েছে?
নীরদ :
হুম্ম।
২/১৮/২০১৮, সকাল ১১.০২টা
নীনা :
হুম্ম মানে? বুঝে নিলে?
নীরদ :
মনে হয় না তুমি বোঝাতে চাইছ।
নীনা :
তুমি হচ্ছ পাঠক। তুমি প্রতীক থেকে অর্থ উদ্ধার করতে পার না এটা
আমার কাছে বিস্ময়কর ঠেকে। আর সবকিছুই সোজাসাপ্টা বলা যায় নাকি!
এখন নিজে এটা পার না, তা পার না কিছু
একটা বলে উঠবে, যুক্তি দেবে। কিন্তু
তোমার সেই অজুহাতও আমাকে স্বস্তি দেয় না।
আমি বিশ্বাস করি আমি ঘাসের বিছানায় বালিশে মাথা রেখে আকাশের তারা
দেখব অথবা হরিণ যদি মানবীর মত আচরণ করে এইসব কথার মর্মার্থ বোঝার ক্ষমতা তোমার
অবশ্যই আছে। নেই- বললে আমি সত্যি বিশ্বাস করব না।
আচ্ছা সে যা-ই হোক। তোমার জীবনে কোনও সাবেক প্রেমিকার ইতিহাস আছে
কি? খুব ব্যক্তিগত নয়, সাদা মনের
প্রশ্ন মনে কোর।
নীরদ :
লেখকের উদ্দেশ্য পাঠককে বিভ্রান্তিতে রাখা। আমি ইতিহাসের নৈবদ্য
নই, কেবল নির্লিপ্ত পাঠক।
নীনা
তার মানে মর্মোদ্ধারের কোনও চেষ্টা করবে না?
২/১৮/২০১৮, সন্ধ্যা ৭:০২টা
নীরদ :
মন খুব খারাপ।
অফিস থেকে ফেরার পথে এক রিকশাওয়ালার গায়ে হাত উঠে গেছে নিজের
অজান্তে।
নীনা :
তারপর?
নীরদ :
আমার দ্বারা এত ফালতু, নীচ একটা কাজ হয়ে
গেছে, ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে নিজের উপর।
গায়ের উপর রিকশা উঠিয়ে দিয়েছে, তা তো
হতেই পারে।
নীনা :
রিকশাওয়ালারা সবাই ধোয়া তুলসীপাতা নয়।
কিন্তু গায়ে হাত তুলেছ! এ তো বিশ্বাস হয় না।
নীরদ :
তা-ই ভাবছি, কিছু দিন আগে বাড্ডা রোডে
উল্টো দিক থেকে আসা অন্য এক রিকশা অনেকটা জখম করে দিয়েছিল, তখন কিন্তু হাত উঠাতে পারিনি।
নীনা :
মন কোথায় গিয়েছিল তোমার!
নীরদ :
হয়তো আগে থেকে ক্ষোভ জমে আছে!
নীনা :
ছেড়ে দাও না।
রাস্তাঘাটে মাঝে মধ্যেইই বেশি সাহসী হয়ে যাই। ফিরে এসে নিজের
প্রতিই তখন রাগ হয়- নারীবাদ মানেই তো আর উগ্রতা নয়
হয়। এমন হয়। সাবকনশাসলি এসব ভুল হয়।
নীরদ :
আই অলওয়েজ থিঙ্ক অফ ফাইটিং ফর দোজ… নিজে কী করলাম আজ!
নীনা :
তুমি বিষ খেয়ে মরে যাও। হি হি হি।
এত নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা অশোভন লাগে না? ভুল
তো মানুষেরই হয়।
নীরদ :
আচ্ছা ছেড়ে দিলাম। তোমার নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে? খবর নিয়েছিলাম; কোন খবর পাইনি।
নীনা :
ওটা পিছিয়ে গেছে। সরি তোমার এত্ত ভোগান্তি হল। আমারই উচিত ছিল
জানানো।
নীরদ :
ভাগ্যিস যাইনি।
নীনা :
ওমা তুমি তা মাথায় রেখে চলে আসতে?
নীরদ :
তোমাকে কথা দিয়েছিলাম মনে আছে? কিন্তু
সব লুকিয়ে রাখতাম, তোমাকে জানাতাম না।
নীনা :
ছয় জন ফিমেল আর্টিস্ট আছে। আমাকে
চিনতে না। ভাবতেই অসাধারণ লাগছে।
তবে তুমি দুজনের মধ্যেই স্থির হতে।
নীরদ :
পাজলড হয়ে যেতাম। যাক তা আর হতে হল না।
নীনা :
অসুবিধা কোথায়! সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না- যদি বেঁচে থাকি দুজনই।
নীরদ :
দ্যট মিন্স ইউ উইল মেইক মি পাজলড। ছাড়বে না!
নীনা :
এখনও কি তা নও?
নীরদ :
এখনও তো আমি তুমি মনে করে অন্য কাউকে দেখিনি।
নীনা :
‘হার’ ছবিটা দেখে নেবে শিঘ্রি, প্লিজ।
নীরদ :
ওখানে তুমি আছ?
নীনা :
মিনসে।
ওটা হলিউডের; একাডেমি এওয়ার্ডে বেস্ট
স্ক্রিপ্ট উইনার। দেখবে তো, কথা দাও?
নীরদ :
বুধবার রাতে। যদি-
নীনা :
যদি?
নীরদ :
যদি টিকে যাই।
নীনা :
কী যে বল না!
ধন্যবাদ।
কেউ গুরুত্ব দিয়ে কথা রাখে যদি মনে আনন্দ পাই।
নীরদ :
প্রোফাইলের পিকচারটা নীনা নয়?
নীনা :
মাই গড, এদ্দিন ছবি দিয়ে আমায় বিচার
করেছ তুমি?
নীরদ :
গডেস, আমি তোমায় আমি বিচার করলাম কবে?
নীনা :
ধুর… ছবি মানে ফটো।
নীরদ :
ফটো মানে পিকচার।
নীনা :
না, পিকচার অর্থ সিনেমাও হতে পারে।
নীরদ :
ফটো মানে ফুটুও হতে পারে, ভূতের
ভবিষ্যতে।
নীনা :
অনেক হল।
এখন তোমার সাবেক প্রেমিকার ইতিহাস বলবে আমাকে।
নীরদ :
এসব আলোচনা করি না। আলোচনার মত কোনও অনুভূতি কাজ করে না।
নীনা :
কী জানি! কী এমন মহার্ঘ ব্যাপার স্যাপার!
নীরদ :
সত্যি বলতে কী- তেমন বলার মত কিছুই নেই আসলে।
২/১৯/২০১৮, দুপুর ১২:৪১টা
নীরদ :
হ্যালো ম্যাম। আই হ্যাভ অ্যা অবজেকশন।
২/১৯/২০১৮, রাত ৮:০৫টা
নীনা :
জ্বি। মাথা পেতে নিচ্ছি।
অবজেকশনটা কী? না বলে চ্যাট থেকে চলে
যাই?
নীরদ :
তাই তো!
তবে আরও নালিশ আছে।
নীনা :
দেরিতে আসি?
নীরদ :
অন্যের ছবি তোমার আইডিতে দিয়েছ, এটা
খারাপ মনে হয় না?
নীনা :
এটা ঠিক অন্যের ফটো বলা চলে না।
তুমি যখন চে গুয়েভারার ছবি দিয়েছ তা কি অন্যায় করেছিলে? আমি তো কক্ষনওই ভাবব না, অন্যায়।
ইনি গোলশিফতেহ ফারাহানি-
তার অভিনয়ে তুমি শ্রদ্ধায় নুইয়ে যাবে। বিশেষ করে বডি অফ লাইসে।
প্রিয় তারকার ছবি ওয়ালপেপার বানিয়ে রাখলে তিনি খুশি হবেন।
নীরদ :
হ্যাঁ, আমি জানতাম এই কাজ তোমার
স্বভাবের সাথে মানানসই নয়। কিন্তু প্রোপিক আমার কাছে অপরিচিত বলে প্রশ্ন করেছিলাম।
২/১৯/২০১৮, রাত ১০:১৯টা
নীনা :
রাগ করেছ নাকি?
নীরদ :
রাগ নয়। কিন্তু এই প্রশ্নটিই অদ্ভুত। এই ছবি যে সুদূরপরাহত- তা
নাম না জানলেও স্পষ্ট বোঝা যায় না?
চল, আরও একটি সিনেমার সাজা বাড়িয়ে
দিচ্ছি তোমায়।
‘হার’ দেখা চাই, এর পাশাপাশি ‘বডি অফ লাইস’; গোলশিফতেকে পাবে, তাকে পোশাকের অজুহাতে ইরান
থেকে বহিষ্কৃত করেছে শুনেছি।
নীরদ :
জ্বি মহারানি , আপনার শাস্তি মাথা পেতে
নিলাম, কিন্তু একটা আর্জি ছিল এই অধমের।
অদ্ভুত প্রশ্ন যদি ইচ্ছে করেই করে থাকি, তবে সাজা কমতে পারে?
নীনা :
এমন কিম্ভুত ইচ্ছের কারণ?
হ্যাঁ, বোধয় অনুমান করেছি।
নীরদ :
ইচ্ছেপূরণ কিন্তু হল না।
আচ্ছা যাও, তোমার অনুমানটি কী?
নীনা :
আসল ফটো?
নীরদ :
হা হা, স্বয়ং ঈশ্বরও বুঝি তোমায় ফাঁকি
দেয়ার কথা ভাবতে যাবেন না।
নীনা :
এতখানি তুলে দিচ্ছ! অনুমান যদি ভুল হয়?
নীরদ :
আমিও জানতে চাই, অনুমান যদি ভুল হয়?
নীনা :
ভুল তো হতেই পারে। ভুল হলেই যে সব অশুদ্ধ হবে তা নয়।
নীরদ :
আই এম ট্রায়িং টু সার্চ ফর নোনা; নোনা
যে আবৃত্তি করে। বাট ইউর আনস ওয়াজ নীনা। ভুলটাই তুমি যখন অনুমান করলে তখন সুযোগটা
ছাড়তে চাইলাম না।
নীনা :
কণ্ঠ হলেই কি নোনার দেখা পেয়ে যাবে?
নীরদ :
এই কোশ্চেন দিয়ে তোমার কাছে একটি দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করেছিলাম;
আমি যেমনটি উত্তর আশা করেছিলাম তুমি তেমনটি দিয়েছিলে; তাই উপহার হিসেবে লাভ ইমো পাঠিয়েছি।
নীনা :
উপরে উঠে ইমো আরেকটু চোখে দেখি তো।
হুম্ম, তখন একটু মুখ রাঙা হয়ে উঠেছিল।
নীরদ :
রাঙা মুখ কি দেখা যাবে?
নীনা :
বলে কী!
নীরদ :
কী জানি ঘোমটায় হাত দিতে হবে?
শৈশবে আনন্দে চাঁদ রাতে ঘুম আসত না; নতুন
জামা জুতো বালিশের পাশে রেখে ঘুমাতাম; এরপর কত ইদ চলে গেল;
কোনও চাঁদ রাত আসেনি জীবনে।
ভাবছি আজ কোনও চাঁদ রাত আসছে কিনা কী জানি!
নীনা :
ঘোমটায় হাত দিতে হবে! মানে?
নীরদ :
ঐটা রূপক ছিল, তুমি যেমন রূপকের ছড়াছড়ি
সাজাও।
নতুন বৌ নিজে থেকে ঘোমটা সরায় না, পাশের
কেউ সরিয়ে দিলে মিটিমিটি হাসে। তাতে অবশ্যই নতুন বৌয়ের ইচ্ছে টের পাওয়া যায় না।
নীনা :
আহারে! মুখ ফসকে রাঙা মুখ বলে কী কাণ্ডটাই না ঘটল!
নীরদ :
আজ কি চাঁদ উঠবে?
নীনা :
কী হবে তার পূর্বাভাষ টের পাওয়া যাবে ওঠার পরে।
নীরদ :
বিশাল আকাশে যার বসবাস, ধরণিতলে আনন্দ
বিলাতে কার্পণ্য সে করবে না বলেই আমার মনে হয়; অবশ্যই
উঠবে।
নীনা :
বালিশ হবে?
নীরদ :
যদি হই?
চাঁদ হাসবে, হাসাবে?
নীনা :
যদি হও আর কী হবে বালিশের কাজে কেউ ব্যবহার করবে।
চাঁদ হোক বা তারা।
নীরদ :
বালিশের বুকে কোন মুখটা লুকোবে দেখি তবে?
নীনা :
তুমিই বল।
নীরদ :
বুকের মাঝে কম্পন টের পাচ্ছি। মর্ত্যলোকে আজ কার আগমন!!
নীনা :
নরকের হরিণ।
নীরদ :
কোথায় সে, দেখি তবে।
তাহার পদধ্বনি ফুরাইব কবে?
নীনা :
কাঁপুনি কমেছে?
নীরদ :
চিরতরে থেমে যেতেও পারে, মায়াহরিণের
দেখা না মিললে।
নীনা :
বাহ। হরিণ নামটি সার্থক হল।
নীরদ :
অপেক্ষা… মায়াহরিণের দর্শন মিলবে বলে।
নীনা :
ঐ প্রশ্নের উত্তর না পেলে কণ্ঠ আর দর্শন
দুটোই ব্যর্থ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
নীরদ :
এমন রজনীতে উত্তর দিতে না পারার ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করতেই
হবে? শর্ত উঠিয়ে নাও না প্লিজ। তুমি মহান।
নীনা :
উত্তরদাতা সক্ষম। প্রশ্নকর্তা ব্যর্থ।
নীরদ :
মিলাইলেই মিলিবে?
হ্যাঁ, আমি অন্তরাত্মার দলে। নাউ ইউর
টার্ন।
নীনা :
না গো। সোজা প্রশ্ন করি?
তোমার হার্টবিট কন্ট্রোলে থাকবে কথা দিলে করব। এবং বিনিময়ে
রসিকতা করবে না, এই কথা দিলে।
নীরদ :
দিলেম কথা।
নীনা :
এইবার এই সোজা প্রশ্ন করতেই আমার সময় চাই।
নীরদ :
মহারানির মর্জি।
নীনা :
ঘুমাবে না? রাত অনেক হল।
নীনা :
ভেবেছিলাম আজ জেগেই কাটিয়ে দেব। কিন্তু প্রজার ইচ্ছে আর মহারানির
ইচ্ছে যে এক নয়, তা বুঝতে একটু সময় লাগল।
নীনা :
সাধসকালে চাকরিতে যাওয়া তো বন্ধ করতে পারবে না। আমার নয়, তোমার জন্য ভেবেই ঘুমের তাড়া দিয়েছি।
নীরদ :
অফ দ্য পিপল বাই দ্য পিপল, ফর… সবাই
প্রজার কথা ভাবে কিনা!
নীনা :
আমার জন্য রাত জেগে শরীর খারাপ করো না। আর আশা করছি অন্য কারও
উদ্দেশ্যে এই মুহুর্তে জেগেও নেই তুমি।
নীরদ :
আবার অফ দ্য পিপল। ভাল থেকো।
নীনা :
প্লিজ, ন্যাকামো কোর না।
নীরদ :
ন্যাকামো কে করছে শুনি! তুমি তো অত রাত জাগ না। যাও ঘুমিয়ে পড়।
নীনা :
আমি তারা দেখছি ঘাসের বিছানায় তাই দেরি হয়ে গেল।
নীরদ :
বালিশের বুক খালি ছিল।
নীনা :
ছিল নাকি?
নীরদ :
মায়াহরিণের মায়াতে খেই হারিয়ে আছি কবেই।
আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়। সময় নষ্ট করেছি তোমার। এখন আর ঘুম নষ্ট করতে
চাই না।
একটা গল্প বলে বিদায় নিচ্ছি। শৈশবে যখন ইদের চাঁদ উঠবে উঠবে করে
ওঠে না তখন খুব মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে ঘুমোতে যেতাম।।
নীনা :
যাচ্ছি।
ভবিষ্যদ্বাণী করলাম, র’স্যালাপ শেষ হলে আপনার আর বালিশ হতে ইচ্ছে করবে না।
নীরদ :
হতেই পারে, আপনার ভবিষদ্বাণী বলে কথা!
নীনা :
মানে তোমার আত্মবিশ্বাস নেই।
নীরদ :
না, নেই।
______________________________________________________________________________
পর্ব ১৩
_______________________________________
২/২০/২০১৮, দুপুর ১২:২২টা
নীনা :
কী করছ?
নীরদ :
বলার মত কিছু নয়।
তুমি কী করছ? রান্নাবাটি তো নিশ্চয় নয়!
নীনা :
না। কান্নাকাটি।
নীরদ :
আজ জাতীয় শোক দিবস নাকি? আগামীকাল যদিও
শহিদ দিবস আসছে, তার জন্য অগ্রিম!
নীনা :
পাজি।
না। আমার অন্ধকারের কথা ভেবে।
নীরদ :
ভয় নেই, অফিস থেকে ফেরার পথে এক গাদা
মোমবাতি নিয়ে আসছি।
২/২১/২০১৮, দুপুর ১:০৩টা
নীনা :
এডির পরীক্ষা আমি দেব না।
নীরদ :
কেন!
নীনা :
পড়ছি না। তাই দেব না। প্রস্তুতি ছাড়া এ পর্যন্ত কোনও
পরীক্ষাতেতেই অংশগ্রহণ করিনি, তাই দেব না।
নীরদ :
হয়ত এখন এমনই মনে হচ্ছে। পরীক্ষা না দিলে প্রশ্ন দেখে নিশ্চয় মনে
হবে সবই জানা জিনিস।
একদিন শুধু গণিত নিয়ে বসছ না কেন! বাকি সব তুমি এমনি এমনি পারবে।
নীনা :
পারলেই বা কী! শত হলেও এ যে ব্যাংক।
তুমিই মনোযোগ দাও ভাল করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিসার বলে কথা,
বউ পাবে ভাল।
নীরদ :
আমাকে দিয়ে ক্যারিয়ার হবে না। ক্যারিয়ার না হলে কিছুই যে হবে না
তাও মেনে নিয়েছি।
নীনা :
এখন তো ভালই আছে ক্যারিয়ার।
নীরদ :
ভাল মনে করলে ভাল। সব আপেক্ষিক।
২/২১/২০১৮, বিকেল ৪: ৩২টা
নীরদ :
বইমেলা থেকে গতকাল কয়েকটি বই নিয়ে এলাম। তার একটি পড়ছি।
নীনা :
তোমাকে তো বলিনি, সকালে গেলাম কবিতা
পড়বার আমন্ত্রণে। প্রভাতফেরিতে হাঁটতে হাঁটতেই অনুষ্ঠান শেষ হল। আর আমন্ত্রণ-রক্ষা
করা হল না।
নীরদ :
আমিও একসময় বেরিয়ে পড়তাম শহিদ মিনার-প্রাঙ্গনে ঘুরতে । প্রতি
বছরেই। সড়কজুড়ে চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের আঁকিবুকি, চোখ ঝলসানো আলো, চারপাশে চা-বিক্রেতা। যা
দেখতাম, তা-ই ভাল লাগত।
______________________________________________________________________________
পর্ব ১৪
_______________________________________
২/২১/২০১৮, সন্ধ্যা ৭.৫০টা
নীনা :
ভাল ছেলে।
নীরদ :
ভাল ছেলে, এ তো ছোট বিশেষণ! আমি কাব্যের
আশায় ছিলাম যে।
নীনা :
তোমাকে কবিতা একটা দেব। অপেক্ষা কর,খুঁজে
দেখি।
নীরদ :
যাক, কাব্য চেয়ে কবিতা! মন্দ নয়।
নীনা :
সুরমা ও নোনা গাঙ।
: কেমন আছ?
: ভাল নয় ভাল মেশানো ছবি। ওয়াশের পেইন্টিংয়ের মত কিছু বোঝা যায়
না।
: নিজে বোঝ না?
: বুঝতে পারলে তো চোখে ধাঁধাঁ লাগত না গো।
: পালিয়েছি ভেবেছ?
: আমার ভাঙা খাঁচায় সোনার টিয়ে কি বসবে? সে যে পালিয়ে বেড়ায় কোন সোনালি রোদ্দুরের খোঁজে।
: দরোজা খোলা যে- পাখি তো পালাতে চায়।
: পালাবে কী- পালিও না পাখি, প্লীইইজ।
: ভাঙা সারাবে।
: আমি মুক্ত অরণ্য প্রান্তর হলুম, যেন
আমার টিয়ে পাখি কখনো মনে না করে তাকে আমি বন্দি করেছি।
: তা বলে ছোঁবে না আমাকে?
: দেবো গো- আমার বুক পেতে দেব- হেঁটে যেও।
: ঠিক?
: ঠিক। কথা পেলুম তো টিয়ের কাছ থেকে? উড়ে
বেড়াও- কিন্তু তোমার রাজকণ্যে ডাকলে উড়ে এসো- রাজকণ্যে অপেক্ষায় থাকবে।
: অপেক্ষা ভাঙাতেই তো চাই- প্রশ্ন এড়িয়ে যায় যে!
: রাজকণ্যে আসবে গো- সত্যি- আরেকটু অপেক্ষা কর নোনা সাগর- নদী
বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
নীরদ ;
জেলগেট থেকে ঘুরে- ফিরে এলাম।
নীনা :
জেলগেটে কেন?
নীরদ :
ঘুরে বেড়াব ঠিক করেছিলাম। লেক ধরে হেঁটে আসতে মনে হল জেলগেট হয়েই
যাই।
জেলগেট মানে আমার অফিস, যেখানে রোজকার
বন্দি থাকার নিয়ম।
নীনা :
আহ! তুমি পারও বটে।
তা জেলগেটে ঘুরতেও প্রতিদিন যাও?
নীরদ :
নাহ।
তোমার কবিতা ভালো লেগেছে কিন্তু একটি বিশেষণ দিয়ে তা প্রকাশ করতে
চাইছিলাম না । আবার সবটুকু গুছিয়ে বলার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
এ জন্যই অফিসের কানে হাত দেওয়া। অফিসের পাশে একটা পার্ক আছে,
পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে অফিসভবনের সামনে হয়ে আসা।
নীনা :
অফিসের নামে উচ্চারণ করে কবিতার প্রতি অনুভূতিপ্রকাশ! কেমন!
নীরদ :
হাহা। দুর্বল যে। কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছি।
নীনা :
নোনার সন্ধান কি পাওয়া যায়নি?
নীরদ :
এখনও অভিযান চলছে।
২/২১/২০১৮, রাত ১০:০৮টা
নীরদ :
নীনা, একটা প্রশ্ন।
ধর ,বিয়ের পর তোমার মেয়ে হল, কী নাম রাখবে গো? অথবা ছেলে হল , তার নাম কী হবে?
নীনা :
ছেলে মেয়ে যেটাই হোক প্রথমজনের নাম হবে দ্বিমিক।
নীরদ :
মা বাবা কেউ নামে থাকবে না?
দ্বিমিকে যদি বাবা পক্ষের দ্বিমত থাকে?
নীনা :
আসল নাম ঐ পক্ষ দেবে। ডাকা নাম দ্বিমিক। ফিক্সড।
আসল নাম মানে ইয়া মোটা নামটা, বুঝলে?
নীরদ :
যদি তাও মেনে না নেয় ?
আচ্ছা দ্বিমিকের মা, আমার আরেকটা প্রশ্ন
ছিল ।
নীনা :
কর না।
নীরদ :
কাব্য চেয়ে কবিতা পেলাম। যদি রাষ্ট্রের মানচিত্র চাই, তাতে কি ঐ রাষ্ট্রের বিশেষ একজনের স্থিরচিত্র পাওয়া যাবে ?
নীনা :
হরিণ আর মানবীর রহস্যভেদ করতে হবে।
নীরদ :
চেষ্টা যে করিনি তা না ।
বস্তুবাদ তো হরিণের কথা বলে, কিন্তু…
দ্বিমিকের মা, তুমি কোন দলের?
নীনা :
আমি কোন দলের তা প্রশ্ন নয়।
জানতে চেয়েছিলাম- হরিণ যদি মানবীর মতন আচরণ করে তুমি নেবে
কোনটাকে? বাইরেরটা না ভেতরেরটা। মানব-মানবীর সম্পর্কের
মধ্যে কোন প্রকৃতির সম্পর্কের সম্ভাবনা থাকবে, কোন
সম্পর্কের সম্ভাবনা যাবে উবে।
নীরদ :
আমি তো অন্তরাত্মার দলে, তোমার তো জানার
কথা।
নীনা :
না, নীরদ। তুমি কি সত্যি সত্যি জঙ্গলের
একটা হরিণের সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক হতে পার? পার এটা
কল্পনায় আনতে? হোক না সে ভেতরে মানবীর মতন। যতই মানবীর মন
হোক।
হরিণ ইজ হরিণ। কোনও রূপক ভেবো না। আক্ষরিক অর্থে। কিন্তু তার
মনটা মানবী, যার সাথে তুমি দূরত্বের প্রেম সাজাতে পার,
ঘর করতে তো পার না! সেটা এই পৃথিবীতে সম্ভব তোমার চোখে?
নীরদ :
যেমন বস্তুবাদের দৃষ্টিতে বস্তু থেকে ভাবনা আছে, স্বাভাবিক নিয়মে হরিণের সাথে মানব মানবীর ন্যায় সম্পর্ক হতে পারে না ।
যেহেতু তুমি হরিণ বলেই আগে থেকে জেনেছ ।
অনেককে দেখি প্রেমের স্মৃতি বুকে নিয়ে বিয়ে থাও করেনি; তারা হয়তো দৈহিক প্রেমের ঊর্ধে।
নীনা :
সেটা হতে পারে। কিন্তু মিলন হরিণের সাথে মানুষের কিছুতেই হতে
পারে না। তাই না?
নীরদ :
হুম।
নীনা :
হতে পারে না। এটাই তাহলে তোমার ফাইনাল?
নীরদ :
হুম।
নীনা :
হা হা।
যাক শেষমেশ উত্তর পেয়ে গেলাম।
নীরদ :
আর আমি পাব কী?
নীনা :
কী পেতে চাও?
নীরদ :
মানচিত্র চেয়েছিলাম গো।
নীনা :
গুগল থেকে হরিণের ছবি নামিয়ে নিতে হবে যে তোমাকে।
আর না হয় আমিই হরিণের ছবি দিয়ে দেব। এখন জিরো এমবি।
নীরদ :
ইচ্ছে না করলে দিও না।
নীনা :
ইচ্ছের বিষয় নয়।
সোজা একটা কথা বলছি। শোন।
তোমার জন্য আমার মায়া হয়
ভালবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু
অসম্ভব যা তা অসম্ভবই।
ছবিটা আজ দেখার কথা দিয়েছিলে। দেখে নিও প্লিজ, ওখানে আমার মনের কথা সব আছে।
খুশি? নাকি বিরক্ত হলে?
নীরদ :
বাংলাদেশ যেদিন জিতে যায় আমি প্রাণ খুলে আনন্দ করি; আর হেরে যাবার লক্ষণ দেখা দিলে টিভি সেটের সামনে থেকে উঠে আসি; মনে ধরে নিই, আজ বাংলাদেশের কোনও খেলা নেই।
মুভি বোধয় আর দেখা হবে না।
নীনা :
নীরদ, আমি তোমাকে ভালবাসতে পারব। দৈহিক,
মানসিক, প্লেটোনিক, নন প্লেটোনিক, লাভ উইথাউট সেক্স, লাভ উইথ সেক্স সব রকম।
কিন্তু তুমি এর সবগুলো পারবে না, বা
একটা পারবে, অন্যটা পারবে না। প্রাকৃতিকভাবেই হয়ত পারবে
না।
তাই তুমি হেরে যাওনি। আমার অন্ধকার জীবনের দোষেই এটা হবে না।
তুমি ভেবে দেখতো একটা হরিণ তোমার সামনে বসে আছে, মানুষের মত কথা বলছে। কিন্তু তাকে তুমি ভালবাসার চুমু খেতে পারবে?
কিন্তু হরিণের অন্তর যেহেতু মানুষ সে পারবে মানুষের শিহরণ অনুভব
করতে।
কাজেই আমি পারব ভালবাসতে। তুমি অন্তরাত্মার ধ্যান করেও পারবে না।
তুমি যদি বল পারবে তাতে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। কিন্তু
সেটা তো তোমার পক্ষে এই পৃথিবীতে সম্ভব হওয়ার কম্ম নয়।
তবু তুমি কোন বাতিঘর দেখ?
নীরদ :
তুমি কি এক্সিস্ট কর?
নীনা :
আমি বহিরঙ্গে এক্সিস্ট করি না। আমি মানবী, আমার অন্তর যখন এক্সিস্ট করে…
আমি অন্তরে মানবী, বহিরঙ্গে সুশ্রী
হরিণ।
নীরদ :
যেভাবে আমি চিনেছি সেই নীনা নও তুমি?
আমায় কনফিউজড করে তুমি সুখ পাচ্ছ?
নীনা :
কনফিউজড কেন গো? গোড়া থেকেই কত রকমে
বোঝাতে চেয়েছি তোমায়; স্কিপ করে যাচ্ছিলে।
নীরদ :
আমি তো গল্প ধরে নিচ্ছিলাম।
নীনা :
এই চ্যাট কনভারসেশনটা সমস্ত পড়ে দেখ না তুমি; বারবার বলেছি এটা জীবনের গল্প, জীবনের সাথে
সম্পর্কিত।
নীরদ :
তার মানে তুমি বলতে চাইছ তুমি লেসবিয়ান?
অথবা…
নীনা :
অথবা?
নীরদ :
অথবা গে?
নীনা :
হিহিহি।
খুব উদযাপন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে সেটা অন্যায়; কাউকে কষ্ট দিয়ে আমার এই হাসি আসা উচিত নয়।
লেসবিয়ান কিংবা গে হলে তুমি সত্যি সত্যি ধাক্কা খাবে তাই না?
এ দুটোর একটি হলে?
নীরদ :
না, ধাক্কা খাব না, মানুষের ভাল লাগার স্বাধীনতায় আমি বিশ্বাস করি।
নীনা :
আসল আইডিটার ফেসবুকে একটা কিছু লিখেছিলাম একদিন, ভেতরের মর্ম সহজে কেউ জানবে না অবশ্য, অভিজ্ঞ
আর চতুর না হলে তো নয়ই।
“দরকার ছিল না, এমনতর বংশে আমায়
জন্মে দিয়ে আবার আমার মধ্যেই এই অপাংক্তেয় ভাইরাসের প্রজনন ঘটিয়ে দেবার কোন
দরকার ছিল না।– কাকে বলছি, ঈশ্বরকে? তা কে সৃজন করেছেন, ঈশ্বর? তিনিই যখন নেপথ্যে, তাহলে দরকার ছিল। দরকার
ছিল বলে, আমার একেবারেই হাত নেই বলে, তিনি সর্বশক্তিমান বলে, সর্বশক্তিমান কখনও অসম
বিচারের মত অন্যায় করেন না বলে, তিনি ন্যায়বিচারক বলে-
এই বিচারে এই দণ্ডের পাপ আমার ছিটেফোঁটা নেই। পরম করুণাময়, ঠাকুর, কে বোঝে তোমার অপার লীলে!”
নীরদ :
নীনা, একটা মজার কথা শুনবে?
ছবিটা নিয়ে আমার কৌতূহলটা কোথায় জান? তোমার
প্রোপিক দেখতে দেখতে নীনা বলতে
এই একট্রেসের মুখ ভেসে উঠছিল।
নীনা :
সাংঘাতিক তো!
নীরদ :
তা যেন না ঘটে তাই একটা ছবি চেয়েছিলাম।
না-হয় চ্যাট থেকে যে কাউকে দেখতেই হবে এমন কোনও কথা নেই।
আর তোমার কণ্ঠে কোনও কবিতা শুনতে ইচ্ছে করেছিল।
তুমি যা-ই হওনা কেন আমি মানুষ হিসেবে সম্মান করি।।
নীরদ :
রূপকের আশ্রয় ছাড়া মনের ভাব প্রকাশের আর কোনও পথ খোলা ছিল না
আমার। না দেখা দিতে পেরেছি, না গান শোনাতে।
কিন্তু আমাকে ফিল করোনি কখনও, এলিবাই
দিয়ে এটাই বোঝালে।
নীরদ :
ফিল করেছি। তোমার কথোপকথনগুলো কি ফিল না করার মত বল? কিন্তু তার জন্য মন থেকে জোরাজুরির বিরুদ্ধে ছিলাম।
নীনা :
মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করবে এটা তো আমার জানা কথা। সহানুভূতি
করবে। তুমি সাম্যবাদী মানুষ। কিন্তু রোমান্টিক নীরদ- যে জায়গায় দেখেছি, ওখান থেকে যে পতন হল সেখানে আর উঠতে পারবে না। দেখলে তো প্রমাণিত হয়ে
গেল।
যেই মানসিকতা নিয়ে সেদিন বলেছিলে, ভয়
আছে, হৃদকম্পনের কথা বলেছিলে; সেটার
বীণা আর তোমার মনে বাজবে না।
শরীরের কী শক্তি! মনের উপর বিজয়ের, দেখেছ?
নীরদ :
তুমি আমায় ভালবাস তা তো বলোনি। আগেই চলে এসেছ সিদ্ধান্তে।
নীনা :
বললে কী হবে! তুমি বাসবে না তাই বলিনি কখনও।
নীরদ :
কে বলল?
দ্বিমিকের মা তুমি সবকিছু বোঝ, কিন্তু
আমাকে বোঝনি!!
ভালোবাসা ছাড়া এত কথা বলা যায়!
নীনা :
আমি তো মানবী নই।
নীরদ :
কে তুমি?
নীনা :
এত বোকা তুমি! এখনও প্রশ্ন করছ!
নাকি বোকাসুন্দরের অভিনয় করতে ভাল লাগছে!
নীরদ :
না, আমি তো তোমাকে নীনা ছাড়া ভাবতে
পারছি না।
তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাইছ না?
নীনা :
নীনা মানেই কি মানবী হবে? অন্তরে মানবী
হবে শুধু। বহিরঙ্গে অন্য কোনও জীব। সেটা ভাবতে পারছ না?
নীরদ :
ভাবতে পারি, যা তোমার প্রোফাইল পিকচারে
দেখেছি। গোলশিফতেহ ফারাহানি।
এর বাইরের কিছু ভাবনাতে আসেনি।
নীনা :
তুমি এই সুন্দরীর বাইরেরটা আর আমার ভেতরটা ভালবেসেছ। বাইরেরটা তো
মিথ্যে। তাহলে সেটা আঁকড়ে লাভ কী?
নীরদ :
এই সুন্দরী হবে না, কিন্তু তার পরিবর্তে
অন্য মানবী হবে এমন প্রত্যাশা করা ভুল?
নীনা :
ভুল না।
কিন্তু আমার এত রকমের ইঙ্গিত একটুও গুরুত্ব পেল না, আমলে নিলে না! সে জিনিস ভুল।
নীরদ :
একদম যে আসেনি তা না, কিন্তু বিশ্বাস
করিনি। বারবার মনে হচ্ছিল হয়ত তোমার কল্পনা অথবা গল্প।
নীনা :
আমি তো বারবার তোমাকে বলেছি, নিছক গল্প
শোনানোর জন্য গল্প নয়।
নীরদ :
তোমার অনুভূতির জন্য মায়া হচ্ছে। কিন্তু ন্যাচারালি আমি তো তা
না!
নীনা :
এ জন্যই তো বলছি জয় শরীরের জয়।
বল, জয় শরীরের জয়?
নীরদ :
তোমার নামটা বল।
নীনা :
কেন গো! নীনা ধ্বংস হয়ে গেছে?
আমার নাম নোনা গাঙ।
নীরদ :
না থাক, আমি তোমাকে নীনা নামেই জানব।
নীনা :
এই তো সেই শেষের কবিতা আর শিউলিমালা!
নীরদ :
প্রাকৃতিক ভাবে আমি যে তোমার দলে না।
এই সত্যটুকু স্বীকার করতেই হচ্ছে।
নীনা :
অবশ্যই। অন্তরাত্মা সর্বস্ব নয়। শরীরও সর্বস্ব নয়। এই দুইয়ের
অনিবার্য বন্ধন রয়েছে, এটা কি স্পষ্ট মনে হচ্ছে?
নীরদ :
স্পষ্ট মনে হচ্ছে।
নীনা :
নতুনভাবে?
নীরদ :
আগে থেকেই বোধহয় কমবেশি স্বীকার করতাম এ দুটোর বন্ধন। কিন্তু
তোমার মধ্য দিয়ে নতুনভাবে উপলব্ধি করলাম।
নীনা, আমার এক সহপাঠী ছিল, এখন টিভিসি নাটক এই সব বানায়।
সব দিক দিয়ে খুব ভাল, জানাশোনাও ভাল।
নীনা :
আচ্ছা। বেশ তো।
নীরদ :
কিন্তু ছেলেটি গে।
নীনা :
হতেই পারে।
হ্যাঁ, তারপর?
নীরদ :
একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে আমার এক বন্ধু বুঝতে পারে বিষয়টি। এর পর
থেকে অনেকেই নানাভাবে সমালোচনা করে আসছে।
নীনা :
হুহ। আচ্ছা!
নীরদ :
ওর জানাশোনা সবকিছু মিলিয়ে ওর সাথে কথা বলে আমার মনে হল, আর যা-ই হোক, এই ঘটনাটা ন্যাচারাল।
নীনা :
বলে যাও।
নীরদ :
তখন থেকে লেসবিয়ান বা গে নিয়ে আমার নেতিবাচক ধারণা যায় চলে।
নীনা, তুমি আমার কাছে কী আশা কর।
নীনা :
সেদিনের একটা কথা মনে পড়ছে। এই স্ক্রিনশট-
: আজ জাতীয় শোক দিবস নাকি? আগামীকাল
যদিও শহিদ দিবস আসছে, তার জন্য অগ্রিম!
: পাজি।
না। আমার অন্ধকারের কথা ভেবে।
: ভয় নেই, অফিস থেকে ফেরার পথে এক গাদা
মোমবাতি নিয়ে আসছি।
২/২২/২০১৮, সকাল ৭:৩১টা
নীরদ :
ও নীনা।
নীনা :
এই সোহাগ তুমি মন থেকে আগের মত কখনওই করবে না, সেটাই বাস্তব। এখন হবে সিমপ্যাথি। এখন ওটা হৃদকম্পন নয়।
নীরদ :
নীনা।
নীনা :
তুমি বল।
নীরদ :
রাগ করেছ আমার উপর?
নীনা :
প্রশ্নই আসে না। আমিই ভবিষৎবাণীই করেছিলাম।
নীরদ :
তুমি কি থার্ড জেন্ডার?
আচ্ছা থাক, না বললে নেই।
নীনা :
থাকবে কেন!
না, আমি বাইরের তথাকথিত আচার-আচরণ,
দৈহিক কাঠামো, বাইরের ব্যক্তিত্ব,
সামাজিক অবস্থান মোটকথা সমস্ত বহিরঙ্গে পুরুষ। আমাকে প্রতিনিয়ত
দক্ষ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এই অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
আমি না বলে দিলে কেউ আমার গুমরের মর্ম বুঝবে না।
নীরদ :
ওহ্।
গে?
তাও তো না। তা কী করে হয়!
নীনা :
হিহি। হাসব?
না থাক, হাসব না যাও, কাঁদব। এটা ছাড়া আর কী কী হতে পারে বলো দিকি।
তোমার সহপাঠীর উদাহরণই বা দিলে কেন?
আমার সেক্স অর্থে নারীসঙ্গ অসহ্য লাগে। কিন্তু নারীদের ভালবাসি।
আমি নারীবাদী। এবং নারীদের সুবিধাবাদী স্বভাব আমি ঘৃণা করি।
নীরদ :
নীনা, আমি তোমায় অন্তর ভেবে ভালবাসি,
এর বাইরে আমি অক্ষম।
নীনা :
সেটাও কম নয়।
নীরদ :
নীনা।
নীনা :
জ্বি জনাব।
নীরদ :
তোমার মত একইরকম অনুভূতি নিয়ে এই সমাজে অনেকেই আছে। আশা করব
তোমার মত একজনকে খুঁজে নিয়ে ভাল থাকবে। ভাল থেকো, নোনা।
হাসো কেন?
নীনা :
সবই ঠিক আছে। তবে এই পরামর্শ না দিলে আমায় যে যথার্থ মর্যাদা
দেয়া হত এটুকু বোধ তোমার নেই?
কিছু মনে করো না, তুমিও ভাল থেকো,
নীরদ।
নীরদ :
আমি তোমায় আঘাত দিতে চাইনি।
নীনা
তোমার সহপাঠীটি তোমাকে আমাদের এই শ্রেণীটির প্রতি সহানুভূতি পোষণ
করতে শিখিয়েছেন। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ। অশেষ ধন্যবাদ।
______________________________________________________________________________
পর্ব ১৫
_______________________________________
২/২৬/২০১৮, রাত ১১:১০টা
নীনা :
জানো, ঢাকায় এসেছি। ফিরে যাচ্ছি তূর্ণা
নিশিথায়। অন্ধকার এখন।
নীরদ :
দেখা করে যেতে।
দেখো, তুমি যা-ই হও না কেন, তোমার জানাশোনাকে আমি মন থেকে সম্মান জানাই।
নীনা :
আগে কখনও দেখা করার নামটি উচ্চারণ করনি, যখন ভালবাসতে।
সঙ্কোচ করেছিলে। সেই কম্বাইন পরীক্ষার সময়ে। প্রিলি
পরীক্ষা-অজুহাতে বাড়ি এলে। আবার এলে লম্বা ছুটি নিয়ে। চট্টগ্রামে এতসময় ধরে
কাটিয়েছ। সেই কদিনে একবারও যে বললে না দেখা করার কথা।
আর এখন সাহসী, বীরপুরুষ হয়েছ?
নীরদ :
হাহাহা। আইকিউ তোমার দারুণ!
নীনা :
নো দাইসেলভস। নিজেকে চিনে জগত চেনা।
নীরদ :
না, সত্যি তোমার আইকিউ অন্যরকম।
তুমি মেয়ে হলে তোমার জন্য জীবন বাজি রাখতাম। এবং জীবনটাই হারাতে
হত।
নীনা :
মেয়ে নই বলে আমি খুব নোনতা।
একটু আসছি।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, শোন নীরদ, তোমায় প্রথমে চার সমকামীর অণুগল্প
বলেছি। তারপর শুনিয়েছি পদ্মাবতী, বাহার, বিদ্যার গল্প। বলেছিলাম, দুটো গল্পের একটি
যোগসূত্র আছে এবং প্রথমটির রহস্য তুমি জেনেও গেছ।
দ্বিতীয় গল্পে কিন্তু এখনো জট খোলেনি।
নীরদ :
হ্যাঁ!
নীনা :
গল্পটিই হয়ত ভুলে গেছ। চ্যাটকন্যা আর স্ত্রী যে এক।
নীরদ :
তা বুঝেছিলাম।
নীনা :
দুটো গল্পের মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাও না?
নীরদ :
সম্পর্ক আছে তা তো মনে হয়নি।
নীনা :
ফ্রিল্যান্সে তোমার সদিচ্ছা আছে এই তথ্য আমি জানতে পেলাম কোথায়?
নীরদ :
আমিই তো বলেছিলাম।
নীনা :
না। চ্যাটের হিস্ট্রি দেখলেই বুঝবে। প্রসঙ্গটি আমি তুলেছিলাম।
শুধু তা-ই নয়, আরও কিছু পারব বলতে।
নীরদ :
কেমন?
নীনা :
ভূমি মন্ত্রণালয়ের চাকরির জন্য ধন্যা দিয়েছিলে। অর্থের বিনিময়ে
চাকরি ভাগিয়ে নেয়া যায় কিনা এমন সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়ও ভেবে দেখেছিলে।
নীরদ :
মিথ্যে কথা।
তুমি এসব কী বলছ? টাকা দিয়ে চাকরির আশা
আমি কক্ষনও করিনি। এক বিন্দু রক্ত থাকতেও কক্ষনও নয়।
নীনা :
কিন্তু তুমি যদি নিজের দুএকটি অসুন্দর ব্যাপার ভুলে গিয়ে থাক বা
সেটা বাস্তবে পরিণত না করে সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই ভুলে গিয়ে থাক সেটা দারূণ ব্যাপার।
সম্মান করি এই বিস্মৃতি, এই আনন্দের ভুলে যাওয়া।
নীরদ :
অসম্ভব। চ্যাট হিস্ট্রি পড়ে দেখ।
নীনা :
স্যার, এসব কথ চ্যাট হিস্ট্রির
পার্স্পেক্টিভে নয়। একদম নয়। বরং বাইরের কথা এইখানের চ্যাটে আশ্চর্যভাবে আমি
জানিয়ে দিচ্ছি।
চ্যাটকন্যাই যে স্ত্রী এর ভেদ তো স্বামী জানতে না। কিন্তু
চ্যাটকন্যা কীভাবে তার গুপ্তাঙ্গের চিহ্নের খবর পেল- সেটা নিয়েই তো গল্প এগিয়েছে।
আমি প্রমাণ করে দিচ্ছি, আমি তোমার তেমনই
একজন।
নীরদ :
কী বলছ তুমি!
নীনা :
লোকপ্রশাসন তৃতীয় বর্ষে অধ্যাপক ফারজানা খান। স্থানীয় সরকারের
উপর এসাইনমেন্ট নেবেন বলে চৌদ্দ দলে ভাগ করলেন তোমাদের। তোমার ভাগ্যে জুটেছিল
কক্সবাজারের পৌরসভা। তোমার সেই সমকামী সহপাঠী, যে কিনা
এখন টিভিসি বানাচ্ছে আর সুড়সুড়ি দিয়ে লোকহাসানো নাটক বানাচ্ছে, সেও ছিল তখন তোমাদের প্রেজেন্টেশনের দলে। কক্সবাজারে সেবারে আটজনের
ট্যুর দিয়েছিলে।
নীরদ :
কে তুমি? তুমি মিনু? আমি আর ভাবতে পারছি না!
আটজন ছিলাম না!
নীনা :
ওহ না। একটা মিস্টেক করে ফেলেছি।
তোমরা দশজন। পাঁচজন পুরুষ, পাঁচ নারী।
নীরদ :
কে তুমি?
তুমি আমাদের কেউ? তুমি আমার সহপাঠী!
এদ্দিন পরিচয় গোপন করেছ!
থাক, গোপন থাক। হয়ত সহ্য করতে পারব না।
নীনা :
না। তাদের কেউ নই। এটা দিব্যি বলছি। সেই গে টিভিসি ডাইরেক্টর তো
আমি নইই। তেমনটা হলে আমার বিসিএসে ফাইট করার দরকার হত না।
নীরদ :
তাহলে? এত কিছু তুমি কীভাবে জানলে?
নীনা :
গল্প দুটির রহস্য এখানেই শেষ হয়ে গেছে। এখানেই থামি।
লক্ষীটি, তুমি শুনে রাখ। ঐ ভূমি
মন্ত্রনালয়ের চেয়ে তোমার ব্যাংকের কামলা খাটা পরাধীনতা ঢেড় ভাল। তুমি সততা বজায়
রেখেছ। তুমি সুন্দর মনের। এটা নিয়েই তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
নীরদ :
এই ইনফরমেশন ভুল।
নীনা :
আমার কানে তোমার শব্দ ভুল নয়। ভুলে গেছ তুমি। থাক, ঐ কথা থাক।
আমার পরিচয় গোপনই থাকবে। একটা অনুরোধ, ওই
ডিরেক্টরকে এসব কখনও জিজ্ঞেস করো না। সে আমায় চেনে, আমার
এই সমকামী পরিচয়ের খোঁজ সে বহু আগেই পেয়েছে কোনও এক দুর্ঘটনায়।
তবে আমার শ্রেণির হলেও সে একটা মানুষরূপী জানোয়ার।
আমাকে ভালবাসলে এই অনুরোধ রাখবে তো?
নীরদ :
ওর সাথে আমার কোনও যোগাযোগ নেই। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মত
বন্ধুত্বও নেই।
নীনা :
যদি কখনও হয়!
নীরদ :
কিন্তু তাকে তো ভালমানুষ মনে হয়েছিল!
নীনা :
একটা রূপ দেখে তুমি সিদ্ধান্তে আস, যা
ভুল ফলাফলই দিবে।
মানুষের ভেতরে কত সংঘর্ষ নিজের সাথেই।
খারাপের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে তখন তাকে পাশবিক বলতে হবে।
নীরদ :
তোমায় কী নামে ডাকব?
নোনা?
নীনা :
তোমার যা খুশি।
নীরদ :
আমার খুশি অন্যকে আঘাত করলে, তা তো মানা
যায় না।
নীনা :
আমাকে তুমি কতইবা আর আঘাত দিতে পারবে! পুড়ে গেছে, নতুন করে পোড়ানোর সেই সামর্থ্যই তোমার নেই। পেটা লোহা, বেতের আঘাতে কাজ হবে না।
নীনা মানে তুমি আমায় ভালবাস। নোনা হলে তুমি আমায় সহানুভূতি
দেখাচ্ছ। কোনটিতেই আমার আপত্তি নেই।
জান, যেখানে ছদ্মনামের বালাই নেই,
যেখানে আমি তোমার সহপাঠীই কেবল, সেখানে
আমার আর তোমার মাঝে কোনও সখ্যই নেই। সেখানে আছে নিতান্তই হ্যালো, হাই আর পিঠ চাপড়ানোর দুএকটি ইতিহাস। কী আশ্চর্য, তাই না!
আর এখানে কতইনা দরদ, আদর, ভালবাসা, বোঝাপড়া, আলোচনা,
মনের কাছে ঠাঁই পাওয়া, সান্ত্বনা,
পছন্দ-অপছন্দের মিল-অমিল তলিয়ে তোমাকে ভাল করে দেখবার সুযোগ
পেলাম।
তবে মুখোমুখি একান্ত আলাপচারিতা তোমার সঙ্গে আমার একটিবার হয়েছে বটে,
এমএসএস কোর্সে। তখন আমায় ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গে বুদ্ধি দিয়েছিলে
তুমি, ফ্রিল্যান্সে সুযোগ তৈরি করতে বলেছিলে। আর ভূমি
মন্ত্রণালয়… থাক এ জিনিস ভুলে গেছ, তোমার যন্ত্রণা
বাড়াব না।
২/২৮/২০১৮, সকাল ১১:০৬টা
নীনা :
দেহের এত শক্তি যে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে।
নীরদ :
রুচির প্রশ্ন নয়।
আমি খুব করে ভাবলাম, জান!
কেন নীনা, কেন! আমি আমার মত একাকী খুব
ভাল ছিলাম, একা ধানমণ্ডির লেকের পাড়ে, জেলগেটের পার্কে। তুমি তো জানতে আমার আর তোমার হবার নয়, কেন দুর্বল করেছ দিনের পর দিন আমাকে!
বিশ্বাসে যে ধাক্কা লেগেছে তা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। ফেসবুকের
অন্য আট-দশজন বন্ধুর মতন তোমার সাথেও আমি কথা বলতে পারি বৈ কী। কিন্তু ধাক্কা
সামলে ওঠা দায়।
নীনা :
জানি আমি পাপ করেছি। কিন্তু তা তো দীর্ঘ করিনি। বরং সেখানে তোমার
জন্য আমার ভেতর যে ভালবাসা জন্মেছে এই সম্পদ তুমি ফেলে দিতে পার না।
পাঁচ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তোমায় আমি ভালবাসিনি কখনওই,
না তোমার রূপ টেনেছিল আমায়, না পেয়েছি
তোমার আন্তরিক কোনও বৈশিষ্ট্য। পাশে আরশিনগর, পড়শি বসত
করে, একদিনও না দেখিলাম!
কিন্তু এইখানে এত নরম, স্বচ্ছ, প্রেমময় তুমি! যে আমায় এই কৃত্রিম আলোর শহরকে বিদায় জানিয়ে জোনাকির দেশে
পালিয়ে যেতে স্বপ্ন দেখাল; তোমাকে এই নতুনরূপে আবিষ্কার,
একজন সত্যিকার মানুষের মনের পাশে বসবাস, তা যে কত বড় পাওয়া তুমি বুঝবে না।
কত ভালবাসা পুষে রেখেছ, তার হদিশ তো সেই
প্রাচীন নীরদে কখনও পড়ে দেখার সুযোগ পাইনি আমি।
আর দেখ না, কী কাকতালীয়! আমার এই নকল নাম
দেখে, অথবা এ-ই তো আসল, তোমার
একটা ফেসবুকের ফ্রেন্ডশিপ রিকোয়েস্ট সেই কোমলমতি নীরদকে জানিয়ে দিলে, চিনিয়ে দিল। এই যে অর্জন, জানি না কোনওদিন
তোমায় আমি বোঝাতে পারব কিনা!
বহিরঙ্গে পদ্মাবতী, অন্তরের বিদ্যা,
বাহার কস্মিনকালে হিসেব মেলাতে পারত কি যদি না একটি বিসর্জনের
গল্প এখানে রচিত হত!
২/২৮/২০১৮, দুপুর ২:১৬টা
নীরদ :
তুমি কি ক্রাচের কর্নেল পড়েছো?
নীনা :
পড়ার আগেই বইটি একজন নিয়ে ফেরত আর দেয়নি।
নীরদ :
বইবাজারে এক কপিই ছিল নাকি!
নীনা :
তা ছিল না। হয়ে ওঠেনি।
জিয়া বিশ্বাসঘাতক এটাই বলবে তো!
নীরদ :
আরে নাহ।
তাহের নিয়ে আমার কিছুই যায় আসে না। আমার দৃষ্টি আরও গভীরে। আশ্রাফুন্নেসার
উপর।
নীনা :
আমার মনে পড়ে চিলেকোঠারর সেপাই আর ক্রাচের কর্নেল এ দুটো বই
আমাদের সহপাঠীকে পড়তে দিয়ে ফেরতে আর উদ্ধার করতে পারিনি।
আশ্রাফুন্নেসার গল্প জানি না বলে দুঃখ হচ্ছে।
নীরদ :
শাকিলের ঘরে চিলেকোঠার সেপাই আমার চোখে পড়েছে।
নীনা, সব কেমন সাজানো চিত্রনাট্য,
এই গল্পের স্রষ্টা কি তুমি?
নীনা :
শাকিলের ঘরে সে জিনিস আমার হতে যাবে কেন!
নীরদ :
সব কাকতালকেই আমার এখন স্বাভাবিক ঠেকা শুরু করেছে। এ একটা ট্রমা
হতে পারে।
নীনা :
সব ঘটে চলেছে, বিশ্বাস কর, আমি পরিকল্পিত কোনও স্ক্রিপ্ট লিখিনি।
নীরদ :
তা বটে, কাকতালীয়।
আশ্রাফুন্নেসার কথা হচ্ছিল, তাহেরের মা,
যার হাত ধরে তাহেরের সৃষ্টি হয় ইতিহাসে।
নীনা :
কী বোঝাতে চাও এ দ্বারা।
নীরদ :
কিছুই না।
এমন চরিত্র খুব দুষ্প্রাপ্য।
সুযোগ থাকলে বাইরে যেতে চেষ্টা করে দেখ, নীনা।
নীনা :
বাংলাদেশের বাইরে?
তোমরা যারা সিমপ্যাথাইজড, তারা সব্বাই
এই এক পরামর্শ।
বাংলাদেশের বাইরে দরিদ্র লোকেদেরও পাঠিয়ে দিও। ওরাও যথেষ্ট কষ্টে
আছে। বাংলাদেশে।
বা যে- যেখানকার অধিকারবঞ্চিত সেখান থেকে পালিয়ে যেতে দেবে এটাই
প্রতিকার!
ঠিক!
নীরদ :
আরে! তুমি সব আগেই যা তা ভেবে নিচ্ছ!
সাবজেক্ট রিলেটেড ফিল্ডে পিএইচডি করবে- দেশও দেখা হল, ক্যারিয়ারও।
বিসিএসে জানার কিছু নেই, জব দরকার বলে
অপ্রয়োজনীয় তথ্য মুখস্থ করছে সবাই।
নীনা :
আচ্ছা।
পিএইচডির ইচ্ছে আছে বিশ্বাস হবে না হয়ত।
‘ভালবাসা’ ‘সংস্কৃতি’ এই ধরনের শব্দগুলো কাকে বলে, প্রমিত অর্থ কী,
ব্যবহারিক অর্থ কী- এসব নিয়ে।
নীরদ :
বিশ্বাস হবে না কেন, তুমি খুব পড় তো- তা
তো বুঝেছি।
একটা প্রশ্ন করব।
নীনা :
হুঁ।
নীরদ :
পুরুষদের প্রতি তোমার এই দুর্বলতা- তা কি জন্ম থেকে নাকি জীবনের
কোনও এক সময় থেকে অনুভব করছিলে?
নীনা :
কখন থেকে মানুষের কামনার অনুভূতি হয় বোঝ? সেই সময়টা।
নীরদ :
প্রপোজ দেয়নি, কোনও মেয়ে?
নীনা :
গার্লফ্রেন্ড! এ জিনিস ছিল বৈ কী। চেষ্টা করে গেছি অভিনয়ের। সাত
মাস ধরে। হয় না এসব। খামখা মেয়েটিকে কষ্ট দেয়া।
নীরদ :
হাসতে অনুমতি চাইছি।
নীনা :
হাসির ব্যাপার মনে হয় না এটা।
নীরদ :
হাসলাম না যাও।
এখন কোনও পার্টনার আছে কি?
নীনা :
আচ্ছা, তোমার প্রেমিকা থাকলে তুমি তাকে
পার্টনার নাম দেবে, তাই বোধহয়!
শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা আছে, খুব
ভাল বলতে পার। চাইলেই পাই বলে এজন্য ফুঁসে উঠি না। কালেভদ্রে।
আর প্রেম বিষয়টি নিরীক্ষায় গেছি। নিরীক্ষায় ফেল আসে। কেউ ফেল
করাতে দুই বছর লাগিয়ে দেয়, কেউ আমার প্রাক্তন মেয়েটির মত
সাত মাস। এই তফাত।
নীরদ :
শুধু ভুল ধরেই যাচ্ছ। তোমার সাথে কথা বলাই মুশকিল।
নীনা :
আগে ভুল ধরলে মিষ্টি লাগত। এখন মনে হয় বেশ ভারি লাগছে। আচ্ছা
সামনে সামলে নেব; ভুল ধরব না।
নীরদ :
সত্যটা জানার পর তোমার প্রতি আমার ফিলিংস নেই, এটা দেখিও দিচ্ছ তো!
নীনা :
ফিলিংস ছিল না?
নীরদ :
তোমার শরীরের প্রতি?
নীনা :
পাগল হয়েছ, তুমি আমাকে দেখইনি। সেখানে
আবার… আমি বলছি ইম্পোর্ট্যান্স, এট্রাকশন সবকিছু।
নীরদ :
এমন ঘটে কোন পর্যায়ে বলতে পার?
তোমাকে বলি। আমার ভার্সিটি লাইফ কেটেছে ডিপার্টমেন্টের এক মেয়ের
প্রেমে পড়ে। রোজ চোখাচোখি হত।
২/২৮/২০১৮, রাত ১০:৫৩টা
নীনা :
কই? এরপর?
নীরদ :
আছি।
কোনওভাবেই বলতে পারছিলাম না। সাহস পাচ্ছি না। আবার ভুলতেও পারছি
না। কিন্তু ধরেই নিয়েছিলাম, বললেই সে রাজি হবে।
প্রায় তিন বছর পর- তাকে জানাই।
বাতিল করে দেয়। স্টিল আই ক্যান্ট স্টপ রিকলিং হার।
নীনা :
সরে দাঁড়াবার কারণ বলেনি কিছু?
নীরদ :
বলেছে- নীরদ, আমাদের সম্পর্ক হলে ঠকবে
তুমি।
জান, আজ ওকে একটা কিছু লিখেছি; যদিও শুনেছি বিয়ে হয়েছে ওর।
নীনা :
এত্তদিন পর তাকে টেক্সট করেছ!
নীরদ :
হুট করে মনে পড়ল। আমার বিশ্বাসের এই যে ধাক্বাটা…
৩/১/২০১৮, রাত ১১:১০টা
নীরদ :
শাকিলকে তো চেনই।
নীনা :
সেই পৌরসভা- লোকাল গভর্নমেন্টের প্রেজেন্টেশন করেছিলে এক টিমের
হয়ে। দশজনের একজন।
নীরদ :
আমি আর শাকিল এখন এক মেসে আছি। সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
টিমের রোকেয়া আর আরিফ বিয়ে করেছে, তা
বোধহয় জান। বিয়েতে মিনুকে দেখিনি!
নীনা :
আমি সব খবর পাই। মিনু এখন জার্মানিতে আছে। কেন, কারণটি ঠিক আমি জানি না। হতে পারে ট্রেনিং পারপাস। অথবা তার ঘটনা ওপেন
সিক্রেট, তাই এই দেশে সমকামী জীবন নিরাপদ নয় বলে ভেগেছে।
ও হ্যাঁ, গুরুত্বপূর্ণ একটা ইনফরমেশন এই
মুহুর্তে মনে পড়ল, তোমাকে জানানো উচিত।
নীরদ :
এখনও গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন বাকি রয়ে গেছে!
নীনা :
মিডিয়ায় আসতে চায় এমন সুদর্শন তরুণদের কাজের প্রলোভন আর টোপ ফেলে
মিনু সেক্সের প্রয়োজন মিটিয়ে নেয়, আমি বললে তুমি নিশ্চয়
এই কথা অবিশ্বাস করবে না।
নীরদ :
তাই বুঝি! মেয়েদের বেলায় এমন কেচ্ছা বহু শুনেছি। পুরুষদেরও!
নীনা :
সে যে কত অসৎ আর অমানবিক তোমাকে একটা নমুনা দিই।
সে নানাজনের কুৎসা গেয়ে শোনাত আমাকে। কারণ আমি আর সে একই
কমিউনিটির হওয়াতে একটা সাহস পেত।
সে-ই আমায় বলেছিল, শাকিল নাকি
কক্সবাজারের ট্যুরে তোমার সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে চেয়েছে।
মানুষ সম্পর্কে না জেনে নিজের ভুল অনুমানকে প্রবলভাবে বিশ্বাস
করে সে রটিয়ে দেয়।
নীরদ :
হায় হায়! আমি হেসে কুটিকুটি হয়ে পড়ছি।
আর তোমার সাথে কী অন্যায় সে করেছে, বলতো।
নীনা :
ঐ যে দশজনের নামে মিথ্যে বদনাম আমার সামনে রটিয়ে বেড়াতে পারলে
আমার গোপন কথা সে যে তার ঘনিষ্ঠজনের কাছে লিক করছে না, এর
তো কোনও নিশ্চয়তা নেই।
আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। না, কুপ্রস্তাব
বলব না, শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়া কোনও অন্যায় নয়।
কিন্তু আমার তার উপরে রুচি জন্মায়নি। সফল না হয়ে, আমার এই
কনফিডেনসিয়াল এফেয়ারটি সে আমার এক বিষমকামী বন্ধুর কানে তুলেছে হিংসাস্বরূপ।
ভাগ্যিস, আমার বন্ধুটি সে কথা বিশ্বাস করেনি এ জন্য যে
মিনুর নিন্দুক চরিত্র সম্বন্ধে সে সমান ওয়াকিবহাল।
আমার ঘটনা তো তাও সত্যি। কিন্তু যে লোক সমকামী নয় তাকেও সে
সমকামী ট্যাগ লাগিয়ে দেয় নিছক অনুমানের বশে। শাকিল আর তোমার ব্যাপারে কী বলেছে সে
কথা শুনলে।
তেমন আরও আছে। মিত্র-সৌর। ছন্দ-আলি। বার্ড ট্যুরে এদের
ঘনিষ্টতাকে সে রীতিমতো টিজ করতে শুরু করে। আর আমায় বলছিল, বার্ডের হোস্টেলে, আরব বসন্ত নেমেছে। যার মানে
বোঝাতে চেয়েছিল, সমকামী বিপ্লব।
এছাড়াও আরও বদভ্যাস আছে মিনুর।
নীরদ :
কথা লাগিয়ে বেড়ানোর বদভ্যাস তবে তো খুব কমন তার ক্ষেত্রে।
নীনা :
আর আমি কারও নিন্দা গাইলেও দেয়ালের ওপারে যাবে না। বলতে পার সে
আর আমি সহপাঠী, আবার দুজনই সমকামী। তা সত্ত্বেও মূদ্রার
এপিঠ, ওপিঠ।
নীরদ :
আমার ডিপার্টমেন্টে, উপরন্তু আমার
ব্যাচে এমন যে দুজন আছে, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি
কখনও।
নীনা :
এমন আরও আছে। আমি তোমাকে তাদের পরিচয় বলব না, যেহেতু আমি মিনু নই, তোমার নীনা তত খারাপ নয়।
আর এই শ্রেণির একাধিক মানুষ থাকা খুব স্বাভাবিক। আমি শুনেছি
পৃথিবীর দশ শতাংশের বেশি মানুষ এইরকম ব্যতিক্রম যৌনচাহিদাসম্পন্ন।
নীরদ :
রাজি হলে না কেন দৈহিক সম্পর্কে?
৩/২/২০১৮, সকাল ১১:২০টা
নীনা :
এটা প্রশ্ন হল, নীরদ! সমকামী বলতেই কি
শুধু দুটো পুরুষ প্রয়োজন। আমায় একটুকুও সহানুভূতি যদি কর, এই পাশবিক লোকটির হাতে তুমি আমায় ছেড়ে দেবে?
আর তাকে আমার কোনওদিকেই পছন্দ নয়।
তবে এই অন্যায় আচরণে সে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়,
প্রথমেই কেউ কিছু টের পাবে না, যেমনটি
তুমি পাওনি, বরঞ্চ সে তোমায় ভাল জিনিসই শিখিয়েছে, শিখিয়েছে সমাকামিতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে। তাই একসময় বন্ধুত্ব যে
আমার সাথেও তার ছিল না, তা নয়। কিন্তু
দিনশেষে তার পাশবিক রূপের দেখা মেলে।
যা হোক। আমার নামেও সে রটিয়েছে বলে কিন্তু এসব অপগীত গাইছি না,
আসলেই সে এমন যে ঐসব কথা না বলে দেয়ারও কিছু নেই। বললে লোকে
সাবধান হতে পারবে। নিষ্ঠুর একটা মানুষ। নিজের সাবেক প্রেমিককে গরম খুন্তি দিয়ে
পিঠে বড় জখম করে দিয়েছে, জান! তোমাকে সাবধান করা ছাড়া
অন্য কোনও ইনটেনশানে তার লোম্বা ফিরিস্তি গাইছি না।
নীরদ :
বলে ভাল করেছ। যদিও নতুন করে যোগাযোগের সম্ভাবনা দেখছি না।
আর হ্যাঁ। মিনু নিজেকে আমার কাছে প্রকাশ করেনি কখনও, তুমি যে বললে ওপেন সিক্রেট, সে প্রেক্ষিতে
আমারো শোনা। শুনেও আমি শুধু তার আচরণ আর প্রতিভার কদর করে, কথা বলে তার অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি মিলিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ
হিসেবেই দেখছি। বুঝেছি সমকাম কোনও মানসিক ব্যাধি নয়।
নীনা :
তোমাকে ধন্যবাদ। ব্যাক্তির দোষ জানার পরেও এজন্য তুমি
সামগ্রিকভাবে সমকামকে দায়ী করছ না।
৩/২/২০১৮, রাত ৭:৩৬টা
নীরদ :
ঢাকায় কেন এসেছিলে, নীনা।
নীনা :
আমার ফুপাতো এক বোনের বৌভাতে। কনে চট্টগ্রামের। বর এখানের
মোহাম্মদপুরে বাড়ি।
নীরদ :
তাই!
নীনা :
চ্যাটে আমার প্রাত্যহিক খবরাখবর নিতে ভালবাসতে। কিন্তু উৎসাহ
নিয়ে আমার সাহিত্যের গভীরে প্রবেশ করনি তুমি। এ কারণেই হাইপোথেসিসে একটা গড়বড়
হয়েছে।
নীরদ :
তা নয়, নিয়তির লেখা এই পাণ্ডুলিপিতে
জীবন আর গল্পকে মিলিয়ে ফেলা যায়, বই পড়ে জানলেও প্রয়োগের
দীক্ষা আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নেই। তুমি শেখালে।
নীনা, তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক।
নীরদকে ছুটি দাও এবার।
(ইউ ক্যাননট রিপ্লাই টু নীরদ নির্বাসনে)
______________________________________________________________________________
উপন্যাস : নোনা গাঙ
রচনা : নিরালোকে দিব্যরথ
খণ্ড : ২
পর্ব ১
_______________________________________
৬/২৬/১৯, সকাল ৬:৩৩টা
ধ্রুব :
সুপ্রভাত। কী থেকে কী শুরু করব আজ? গত
রাতে শুনেছিলাম নজরুলগীতি- বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খচিত্তের অবসাদ দূর কর,
কর দূর ভয়… না, আবার মনে হল এখান
থেকেই তোমার নামধাম- পরিচয় প্রয়োজন।
কিন্তু হঠাৎ শরীর বিগড়ে আছে। রাতে দুটো মাংসের টুকরো, পরে এক বাটি গরুর দুধ হজম করতে পারিনি, মনে হয়
গ্যাস করে গেছে।
তার পরে দেখ, ঐ দুজনের কথোপকথন গোড়া
থেকে খুঁজে বের করতে গিয়ে আমার মাথাটাও বিগড়ে গেল।
রাজীব :
দুধ খেয়েছ তাও মাংসসহ ! সূর্য ডোবার পর দুধ না খেলেই পারতে !
সম্ভব হলে ঠান্ডা দুধ সামান্য চিনিসহ খেয়ে দেখ তো এরপর।
কেমন একটা গুমোট ভাব। ভাল ঘুম হয়নি। তুমি, তোমার লেখা সব গুলিয়ে মিলিয়ে তন্দ্রার ভেতর ঘুরে ফিরে আসে।
ধ্রুব :
বেশ! দুটি তথ্যই মনে রাখতে বলছ? তন্দ্রা।
দুধ । একটায় সাবধান হলে তোমার সুবিধা হয়। অন্যটি আমার।
কেন পরিচয়পর্বটি সেরে ফেলছ না শীঘ্রি?
রাজীব :
মনে করো একজন, সুদূর ভবিষ্যতের! আর
তুমি…!
ধ্রুব :
হেঁয়ালি ছাড়! বুঝিনি যে আমাকেও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেবে।
আচ্ছা, তুমি গুরুজন। অনায়াসে ‘তুমি’ বলছি বলে মনে কিছু থাকলে মুছে ফেলবে!
রাজীব :
আমি গুরুজন, হা হা হা ! পৃথিবীর চক্ৰপাক
তাহলে তুমিও বিশ্বাস করো বয়সের ক্ষেত্রে! আর হয়তো নিজের অন্তরে বিশ্বাস করো ‘তুমি’ বলার সে অধিকার আছে তোমার। নিজের
অন্তরের চেয়ে আর কে আছে, যে সত্য বলার অধিকার রাখে!
৬/২৬/১৯, বিকেল ৩:১০টা
ধ্রুব :
তোমার কোনও প্রেমিক ছিল?
রাজীব :
কেউ ছিল না। কেউ নেই।
ধ্রুব :
কোত্থাও একজন নেই? যাকে স্মৃতি বলে
অন্তত রোমন্থন করা যায়?
নির্দিষ্ট কোনও পেশার লোককে পছন্দ?
রাজীব :
যে কোনও পেশাতে পছন্দাপছন্দ আলাদা করে বলা চলে না। কিন্তু
সৃষ্টিশীল পেশা হলে বড় ভাল হত। তার এবং আমার গভীর একটি আত্মিক প্রেম চাইব যা
শরীরের চাহিদা অস্বীকার না করে তবে নগণ্য করে দেবে। আমার এসব বক্তব্য তুমিও বড্ড
বেশি জান। আর বাড়াব না।
কিন্তু এই কদিন অসহ্য গরমের পর একটু আগেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু
হয়েছে… আবহাওয়া শীতল।
ধ্রুব :
এই আবহাওয়ার কোনও নিয়ম নেই। প্রতিদিনই এই তো রোদ, ইচ্ছে হলে হল মেঘ, আর বৃষ্টি।
রাজীব :
তবুও। গরম সইতে পারা যায় না। আকাশে রোদ হলেই ঘরের বাইরেটি যাওয়া
শাসন বারণ করে নিয়েছি নিজের উপর। শীত এবং বর্ষাই আমার প্রিয় ঋতু এখন।
৬/২৮/১৯, সকাল ৭:০৪টা
রাজীব :
দূরবীন পড়েছ তুমি? ‘ধ্রুব’কে কেমন লাগে? কখনও নিজেকে ধ্রুবের মাপকাঠিতে
বসাতে পেরেছিলে?
ধ্রুব :
ধ্রুবের আছে কেমন একটা রহস্যময় রোমান্টিসিজম। আমার প্রেম সরল।
ছকে বাঁধা। ধ্রবের উচ্চতায় যেতে পারি না। কিন্তু ধ্রুব নয়, তার বাবার প্রেম হৃদয় স্পর্শ করে।
রাজীব :
ধ্রুবের বাবার প্রেমেও সারল্য আছে। কিন্তু ধ্রুবের প্রেম ছিল
অকস্মাৎ, বজ্রপাতের মতো ! নারীকুল মনে মনে ধ্রুবের প্রেম
চাইলেও প্রাত্যহিক জীবনে সইতে পারে না। নারীরা বাস্তবে জীবনে বজ্রপাত আশা করে না,
চায় অঝর বৃষ্টি।
ধ্রুব :
পচা শামুকে পা কেটেছে ধ্রুবের – জনৈক
বলেছিলেন। উপন্যাসের যাবতীয় এপিগ্রামের পরিবর্তে আমার ঐ একটি সস্তাদরের কথাই শক্ত
করে মনে গেঁথে আছে। দেখ কাণ্ড।
৬/২৮/১৯, সকাল ৯:২০টা
রাজীব :
তোমাকে আটকানো দায়। এমন ফোড়ন দেয়া কথা জান।
যা হোক, আমার মনটা ভাল আজকে। রোদও
দৃষ্টিকটু নয়। বাতাসের মিষ্টি একটা সামঞ্জস্য টের পাও দূর থেকে?
সুন্দর হোক তোমার এই দিন, আগামীর দিন।
ধ্রুব :
আমার রাতের কী অপরাধ?
রাজীব :
আপাতত রাত একেলা কাটছে, ভাবলাম তার সাথী
আমি একাই হব! তোমাকে নিশ্চয় নাগাল পাওয়া যাবে না রাতে।
ধ্রুব :
কখন একেলা কাটেনি? সেই অতীতে! কথা
পাল্টে নিও না এবার যথারীতি। অভিমান হবে।
রাজীব :
একটু অভিমান করলে নাহয়। আচ্ছা, তোমাকে
কী নামে ডাকি!
ধ্রুব :
ধ্রুব নামেই ডেকো। যদিও ওর কোনও গুণ আমার নেই। ওর দোষও নেই আমার
মধ্যে।
এই যে, তুমি কিছুতে বলবে না নিজের
সম্বন্ধে?
রাজীব :
তোমারই অভিজ্ঞতার ভাণ্ডটিই নাহয় উজাড় করে দাও।
ধ্রুব :
কত কি জানতে চাইছি। একটু ধন্যবাদ তো দিতে পার? কথা বলতে নাছোড়বান্দা হয়ে ছিলে। নাহয় আমার বয়েই গেছিল। এখন বিষয় খুঁজে
দিচ্ছি তো পাত্তা নেই।
ঠিক আছে, আমিই তোমাকে একটি কুৎসিত ঘটনা
বলব। তোমার সাজা, যেন বিস্ময়ের ঘোর লেগে যায়।
তুমি পেডোফিলিয়া বোঝ?
রাজীব :
জানোই তো না, বন্ধু। আমি কত্ত অলস।
পিডোফেলিয়া সম্পর্কে যেটুকু জানি বলছি। এটা শিশু পর্নোগ্রাফি নয়?
বাংলাদেশের একজন কথাসাহিত্যিক এই পেশার সাথে জড়িত বলে
সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছিল বেশিদিন হয়নি!
ধ্রুব :
পর্নো! ভুল জেনে থাকবে। তোমাকে পেডোফিলিয়ার একটা ইতিহাস বলব।
ওয়েট নিতে পারবে?
রাজীব :
বলো ধ্রুব ! দেখি, কত ভারের!
আচ্ছা, আমার কোনও নাম দিলে না? লোকালয়ে কী নামে ডাকবে? আড়ালে?
ধ্রুব :
পার্থসারথি নাম- তোরজোড় করে দিতে চেয়েছিলাম শুরুতে। তোমার কথা
শুনে কোথাও ভীতি জয় করবার শক্তি খুঁজে পাইনি।
তবু আড়ালে অথবা জনসমক্ষে পার্থই ডাকব।
যার অঘটনের কথা বলব ওরও নাম মনে কোর ধ্রুব। মনে কোর সেই ধ্রুব
আমি নই।
রাজীব :
পার্থ! প্রসিদ্ধ নাম। এমন এক নাম দিতে পারছ না যা আমি এবং ধ্রুব
ছাড়া কেউ জানতেই পাবে না! বীজমন্ত্র যেন গুরুর মুখে, শিষ্যের
কানে।
ধ্রুব নিজের গুনে নিজে মহীয়ান, তাকে
নিঃসংশয় করা আর কারও সাধ্য আছে?
ধ্রুব :
ভাববার সময় দাও। পার্থ থেকে অর্থ অনর্থ কিছু বের করে নেব।
______________________________________________________________________________
পর্ব ২
_______________________________________
৬/ ২৮/১৯, রাত ৯:২৭টা
ধ্রুব :
ধ্রুব থাকত ঢাকার মিরপুরে। কোচিংয়ের ক্লাস ফার্মগেটে। ধ্রুব বাকি
প্রার্থীদের মত হামেশা চাকরিতে পরীক্ষা দেয়ার অভ্যাস করেনি। শুধু লোকাল বাস
নিউভিশন/দিশারী, কোচিং আর ঘরে এতেকাফ… এতেকাফ বোঝ?
নিজেকে বন্দি করে নেয়া। কচুর লেখাপড়া। যাচ্ছেতাই অবস্থা।
রাজীব :
এতেকাফ, সম্ভবত রমজানের শেষ দশদিন
নিজেকে মসজিদে রাখা !
তারপর?
ধ্রুব :
এতেকাফের আক্ষরিক অর্থের দরকার নেই।
খাওয়াপরা, ওয়াশরুম, গৌণ ঘুম আর গৌণ বাইরে পা দেবার সময় বাদে উগান্ডা, গুয়েতেমালার রাজধানী কী- এসব ছাইপাঁশ গিলে, এর
মানে মুখস্ত করে দিন কাটত একটা টেবিল আর ছোট বেডরুমে। ঠিক যেন সেই এতেকাফে বন্দি
ধার্মিক অথবা ধ্যানস্থ বক।
রূপনগরে থাকতেন ধ্রুবের ভাই-ভাবি। এরা ঠিক আপন বা দূরসম্পর্কের
নন। অন্যরকম সম্পর্ক। তা তুমি সময় হলে জানবে। তিনটি ফুটফুটে বাচ্চা ছিল এদের।
আব্দুল্লাহ এবং তানিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে, ফাতেমা নার্সারিতে
পড়ে।
ধ্রুব মিরপুরে খালার বাসাতেই থাকবার এক ইতিহাস আছে। ইতিহাস
বিরাট। তা মূল ঘটনায় ফিরে যেতে আমাদের সময় নেবে কিছু। ধৈর্য রাখতে পারবে পুরো সময়?
রাজীব :
আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও।
ধ্রুব :
নিচ্ছি। এবার শোন।
ধ্রুবের স্বপ্ন, টেলিভিশনে প্রোগ্রামের
প্রোডিউসার হবে। প্রডিউস এখানে ঠিক টাকা লগ্নি বোঝায় না। প্রোগ্রাম প্রডিউস,
যার অর্থ হয়, অনুষ্ঠানের পরিচালনা,
যেই কাজের স্বপ্ন ঢাকাতে টেনে এনেছিল ধ্রুবকে।
রাজীব :
ভাইভাবির প্রসঙ্গ এর মাঝে এনেছ কেন?
ধ্রুব :
ওটি ইঙ্গিত, এবং ওটিই মূল। বেশ
ক্ষাণিক্ষণ পর ফিরে আসব সেই ঘটনায়। ইতিহাসটি আগে জানাই।
এখন তো ধ্রুবের একটা আসল নাম দেয়া লাগে, যেহেতু তার মা-বাবা পির বংশের। সময়ে আমরা ধ্রুব নাম ধরেও ডাকব। খেয়াল
রেখো, সাবধানে।
ধ্রুবের নাম মুশকিল কোশা। মুশকিল কোশা টেলিভিশন করবে, এবং তা নারীঘেষা মিডিয়ায়, চট্টগ্রামের হাইপার
কনজারভেটিভ মা নিশ্চিন্তে এইসব করে তাকে লুটুপুটি (!) খাবার অনুমতি দেবেন তা ভাবতে
পারা যায় না। মুশকিল এ কারণেই মিথ্যে বলেছিল, সে বাংলাদেশ
সিভিল সার্ভিসে পরীক্ষা দেবে- চট্টগ্রামে সে মামুলি কাজে জড়িয়ে পড়েছে- মুক্ত হবে-
লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে ঢাকায় থাকা আবশ্যক। এভাবে একটা যুক্তি দাঁড় করানো হল।
রাজীব :
ধ্রুব নামটি আদতে তোমার। মুশকিল কোশা আর তোমার মধ্যে গোঁজামিল
ঘটে গেলে দোষ কিন্তু আমার নয়। তবু তোমার সাবধানবাণী আমি মেনে নিচ্ছি।
ধ্রুব :
শুনেই যাও না। অন্তমিলের শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না।
৬/২৯/১৯, দুপুর ১২:০৭টা
রাজীব :
ধ্রুব, নিখোঁজসংবাদের আয়োজন করতে হবে!
এমনভাবে চুপ করে গেলে!
ধ্রুব :
মাথা ধরেছে।
৬/ ৩০/ ১৯, সকাল ৮:১৭টা
রাজীব :
ধ্রুব…
ধ্রুব :
সুপ্রভাত। নিখোঁজ হতে পারলে ভাল হত।
রাজীব :
নিষেধ করেছে কে ! নিখোজ হবার মতো হৃদয়ের আকাল পড়েছে নাকি?
ধ্রুব :
হারিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই এখানে হারাব বলে, পা টিপে এগোতে গেলেই গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক পায়ে পায়ে হারাবার
জায়গা খুঁজে মরি।
এই গান শুনেছ? কোথাও হারানোর সুযোগ
পাওয়া যায়নি।
রাজীব :
সুন্দরী তুমি শুকতারা, সুদুর শৈল
শীখরান্তে , শর্বরী যবে হবে সারা, দর্শন দিও দিকভ্রান্তে। ধ্রুবতারা নিখোঁজ হবে কি করে !
ধ্রুব :
অবশ্য না ফেরার দেশে একটা উপায় আছে।
রাজীব :
যেখানে সবাই যায় সেখানে যাবে কেন? যেখানে
সাহস করে কেউ যায়নি সেখানেই না যাওয়া চাই। ভাবছ, একা
অচেনা পথ, যাবে কি করে! পথে একবার নেমেই দেখো, সঙ্গী পেয়ে যাবে।
৬/ ৩০/ ১৯, দুপুর ১২:৪০টা
রাজীব :
সারাদিন পরিষ্কার আকাশে হঠাৎ করে মেঘ জমেছে ! তোমার আকাশের সংবাদ
কী ?
ধ্রুব :
রোদ। তবে এখন ঘরঘর শব্দ পাচ্ছি।
রাজীব :
শব্দ কীসের?
ধ্রুব :
মেঘ হয়ত। জানলা পর্দা দেয়া। সরাসরি দেখতে পাচ্ছি না।
রাজীব :
আমার এখানে আকাশে এখনও গুমোট। আশা দিয়েও বৃষ্টি না ঝরে যদি!
ধ্রুব :
এখন শ্রাবণ মাস? ক্যালেন্ডার দেখা হল
না।
রাজীব :
মধ্য আষাঢ়। আকাশের গুমোটভাব আমার কষ্ট হয়। ভয় আর ক্লান্তি জাগায়
মনে।
ধ্রুব :
আর আমার যে মেঘপ্রলয়, গহীন অন্ধকার ভাল
লাগে। সূর্যের খরতাপ, বৃষ্টিতে কাদা দুটো কষ্ট দেয় আমায়।
মেঘের মাঝে আমি শীতলতা খুঁজে পাই, যা
বরফে কাবু করে না।। তবু অসুবিধা হল, সে শুধু ক্ষণিকের।
বেশিক্ষণ তিষ্ঠোতে পারে কই!
রাজীব :
আমি অপেক্ষায় থাকি এই গুমোট ভাব কেটে সূর্য হাসুক অথবা অঝর ধারায়
ঝরে পড়ুক। আমাকেও ভাসিয়ে নিয়ে যায় যাক, তবুও যাতে চেপে না
থাকে !
কখন কাটবে? আবহাওয়ার খবর কিছু জানা আছে
তোমার ?
ধ্রুব :
যে যেভাবে উদ্ভাবন করেছে। তাছাড়া গুমোটকেও ভালবাসা সম্ভব
দুঃখবিলাসী হলে।
সুখ.
ভারা ভারা বুদ্ধি ঝুলছে- শিবখেরার পজিটিভ, মসৃন সুমুখের পিচঢালা, বা কখনো বন্ধুর-
এবার আমার একটু চিন্তার কার্যকারিতা দরকার ।
কিন্তু মন এখন উড়ন্ত বকদের ভালবাসলেও তাদের লিখতে জানে না,
সুর্যের এ তেজ প্রখর না হয়ে কিছুটা মেঘ নেমে আসাতে হয়েছে ভাল,
আমি এখন আমারই মত গুম খাওয়া বিরাটকায় দিঘিটায় কিছুটা বিষন্নতার
ছাপ দেখে বলছি-
ভাল হয়েছে খুব,
অবিনাশী বিদ্রোহীর সুর বেরোবে না গলা দিয়ে,
এখন একটু মেঘের অবসাদ, একটু মলিন হওয়া
দরকার ।
একটু সতর্ক হওয়া দরকার কেউ এসে সুর খাদে যেন চড়া না করে ।
ভাল হয়েছে খুব,
দূরের শীর্ন পাহাড়ের গোপন বসতি থেকে একটা মৃদু গুন এসে পৌঁছাচ্ছে,
এ আবছা শব্দ যাচ্ছে থেমে, আবার শোনাচ্ছে
একটা শিরশিরে কাঁপুনি,
এসব ততো শক্তিধর নয় বলেই বিবর্ণ মনটার সাথে খাপ খাচ্ছে দারুণ ।
এখন ফিরে আসলেন মৌনতার কবি প্রকৃতিকে দুঃখীর মত বেসুরো হতে দিতে,
মানুষকে মানুষের মত জঘন্য
এ মুহুর্তে মনের রঙ উধাও হয়েছে,
কী সুন্দর ! মনে হচ্ছে এটাও হয়েছে ভাল ।
বিষাদকে এক্সট্রাক্যারিকুলার বিষাদে ফাঁপিয়ে বলা যাচ্ছে-
এ কিন্তু অন্যরকম শিল্প ।
পজিটিভ, স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, শপথ- নয়, মনে হয় আপাতত সুখের হবে গুমট তিতীক্ষা ।
আমাকে আরেকটু হতাশ হতে হবে-
কাছের এ জলজ প্রতিবিম্বে যেমন নিরস আকাশ থেকে বিষন্নতা বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ।
এটা কিন্তু একটা শিল্প ।
একটা ভ্যাপসা অবহেলিত বিকাল ।
রাজীব :
হতাশ হয়েছি !
ধ্রুব :
হতাশার সৌন্দর্য খুঁজে পাবে এই কবিতায়।
রাজীব :
না না। তুমি দুঃখবিলাসী হলে কেন? আমি তো
অপেক্ষা করি আকাশের অবস্থা পরিবর্তনের… যদি বৃষ্টি আসে তবে তৃষা মিটুক আর না-ই
মিটুক মেঘ কেটে যাবার আনন্দ উপভোগ করব।
ধ্রুব :
বৃষ্টি তোমার এতই বিশ্বস্ত! চাওয়া পূরণ হোক তোমার।
৬/ ৩০/ ১৯, রাত ৯:৪০টা
রাজীব :
আচ্ছা তারপর? তারপর ঘটনাটি কী হলো,
ধ্রুব?
ধ্রুব :
মুশকিল কোশা মেসে ব্যাচেলর থাকলে বিগড়ে যাবে, এভাবে মায়ের মতানুসারে একজন কঠিন দৃঢ়চেতা তার মায়ের মতই
কুসংস্কারাচ্ছন্ন মহিলার আশ্রয়ে ঢাকায় থাকতে হয়েছিল তাকে। মা-বাবার ইচ্ছেয়। মহিলা
পরিচয়ে বড় খালা, মায়ের জ্যাঠত বোন। আপন ভাগ্নের মতই আদরে
রেখেছিলেন, কিন্তু প্রশ্রয়ে নয়। মানে টেলিভিশনের কাজের
স্বপ্নপূরণ তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল এ মহিলার কারণে। হাতে নির্ভর করার মত
অর্থও নেই যে পালিয়ে গিয়ে ঐ কাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতদূর পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে
ক্যারিয়ারটা সে কল্পনা করতে পারছে না; সব হয়ত তারই জড়তার
দোষ।
সারমর্ম হল মুশকিল স্বেচ্ছায় ঢাকায় এসেছে যে উদ্দেশ্যে, যেটি পরিবারের পক্ষে কোনও সমর্থন পাবে না। যদি জানে তো থাকার খরচও দেবে
না। তাই চাকরির লেখাপড়ার নাম করে মিথ্যে বলতে হয়েছে।
কিন্তু খালার কঠোরতায় চাপা পড়ে প্রকৃত উদ্দেশ্য হালে পানি পাচ্ছে
না।
সে পালিয়ে যেতে পারত, নিজেকে ভাসিয়ে দিত
পারত অজানা স্রোতে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আশঙ্কা হয়ে দাঁড়াল শারীরিক কুপ্রস্তাবের
একাধিক দুরবস্থা।
রাজীব :
শারীরিক কুপ্রস্তাব!
ধ্রুব :
পেডোফিলিয়ার একটি ঘটনা দিয়ে তোমাকে শক দেব আমি। সেখান থেকে
ভূমিকা দিতে গিয়ে ভূমিকাটাই মহাকাব্য হয়ে পড়েছে। এখনও সেটাই ঠিকঠাক শুরু হয়নি,
দেখ।
সব মনে রাখতে পার? বল আমাকে, তানিয়া, আব্দুল্লাহ, ফাতেমা
এরা কারা?
রাজীব :
তুমি কি চৌদ্দশ বছর আগের আব্দুল্লাহ , ফাতেমার
কথা জানতে চাও !
ধ্রুব :
আমাকে হাসালে। আব্দুল্লাহ, তানিয়া বা
ফাতেমা কিন্তু শিশু। আর পেডোফিলিয়ার শিশু নিয়েই। ভাই ও ভাবির প্রসঙ্গে ফিরে আসব
জানিয়েছিলাম। সেই অঙ্কটি মাথায় রেখো কিন্তু।
রাজীব :
আমার স্মৃতি বিভ্রম তোমাকে মেনে নিতে হবে।
ধ্রুব :
এমন হতেই পারে। হাসতে হয় বলেই হেসে নিলাম। মেকি হাসি মনে কোর।
রূপনগরের ভাই-ভাবি ডেকে নিত মুশকিলকে প্রায়। রাতেও থেকে যেতে
আবদার জুড়ত। খালা সেখানেও খুব একটা বেড়াবার পারমিশন দেন না।
রাজীব :
কেন?
ধ্রুব :
ঐ যে আধুনিক মুক্তমনের মানুষ, ঢাকায় সে
কোনওভাবে বিগড়ে যাবে কোশার পরিবার এই ভয় থেকেই- মা-বাবা মেসের বদলে খালার আশ্রয়ে
পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। খালা কর্তব্য মনে করলেন- সে কোথায় যায়, না যায় এমন সব প্রশ্নে বিব্রত করে তোলা। তার চার দামাল ছেলে।
প্রত্যেকেই মুশকিল কোশার জ্যেষ্ঠ। তারাও নানাভাবে জবাবদিহি নেয়াকে রুটিন করে
নিয়েছিল। প্রত্যেকেই ভালবাসাতে আন্তরিক, কিন্তু রক্ষণশীল,অত্যাচারী। বিরক্ত হয়ে মুশকিল এতেকাফ ধরেছে।
কিন্তু শাসন-আদরের এই অত্যাচার এতেকাফের একমাত্র কারণ নয়।
মিডিয়াতে যৌনপ্রস্তাবের ঘটনা একটা বড় আক্ষেপ তৈরি করেছে। এইরকম যৌনপ্রস্তাবের
বিষয়ে কি তুমি কারও কাছেই- কখনওই- কিছুই শোননি?
______________________________________________________________________________
পর্ব ৩
_______________________________________
৬/৩০/১৯, রাত ৯:৫৪টা
রাজীব :
কখনও মোটর সাইকেল চালিয়েছ, ধ্রুব ?
ধ্রুব :
পাগল নাকি! এক্রোফোবিয়া আছে আমার। পাশে বাইকে ফোবিয়াও আছে।
ভয়ঙ্করভাবে আছে । বিশেষত, যখন দানবীয় গতিতে কেউ
মোটরসাইকেল চালায়, নৃশংস মনে হয় ঐ দৃশ্য।
রাজীব :
ভালই তো আশা ভেঙে দিতে জান।
ধ্রুব :
এতে প্রশ্ন কোর না। রুহু যেন ছটফট করে।
কেন আশা করেছ, বল?
রাজীব :
পেছনে বসে ছন্দে ছন্দে ঘুরে বেড়াব ভেবেছি। বাতাসের উদ্দাম
নৃত্যের মধ্যেই পঙখিরাজ ছুটে যাবে- স্বপ্ন দেখা।
ধ্রুব :
আমার যে নৌকা বড় ভাল লাগে। পুলের স্বচ্ছ জলে পা ভেজাতে, হাত দিয়ে জলের ছিটে দিতে ভাল লাগে!
রাজীব :
বছর তিনেকের মাথায় না হয় একটা ছাদ খোলা গাড়ি নিয়ে নিও, ছুটির দিনে বেড়াতে যাব।
ধ্রুব :
বছর তিনেক! পার বটে!
কোথায়?
রাজীব :
পাহাড়ঘেরা পথে।
ধ্রুব :
মজার কথা হল পাহাড়ের চেয়ে সমূদ্রই আমাকে টানে বেশি।
রাজীব :
সমুদ্রে তো আর নৌকাভ্রমন হবে না।
ধ্রুব :
জোয়ারের পানিতে আর নৌকায় চুপটি করে বসে পা ছেড়ে দেয় দুটোতেই পা
ভেজানোর মিল আছে টের পাও না?
রাজীব :
তবে তো হুটখোলা গাড়িতে আর বেড়ানো হলো না!… নৌবিহারেই যাব।
তোমার অভ্যেসকেই আমার বানিয়ে নিতে চাইব।
তখন যদি পূর্ণিমা হত!
ধ্রুব :
একটা উপায় আছে তো। হুট খুলে দিলেও পাহাড়ি রাস্তায় কেউ চালিয়ে
নিয়ে গেলে মন্দ লাগবে না। পাহাড় বাইতে ভালবাসি না আমি, তা
হলেও পাহাড়ে পিচের রাস্তায় গাড়িতে বসে ঘুরতে বললে শান্তি আসে। মসৃন।
দূরপাল্লার বাস আমার ভয় করে খুব। বাইকের মতই পিশাচের চলন তার।
কিন্তু প্রাইভেট কার-পাজেরোর একটা আরাম আছে।
বুঝে পেলে তো, আমি খুব কুঁড়ে? জীবনে সাইকেল চালাতে শিখিনি। সাঁতার পারি, তাও
বড় অদ্ভুত। পানি ঝাপটে চারদিকে ফোয়ারা ওঠে।
রাজীব :
আমিও সাইক্লিং পারি না। গাছে চড়তেও না। সামান্য সাঁতার পারি।
তাতে কী?
দুজনের ইচ্ছে মিলে গেলেই মনে হয় ভালো হবে ! হুটখোলা গাড়িতে চড়ে
সমুদ্রে পা ভেজানো, এরপর নৌবিহারেই ফিরে আসা।
৭/০১/১৯, সকাল ৭:২৬টা
ধ্রুব :
মুশকিল হল দেখি।
রাজীব :
কী মুশকিল হল !
ধ্রুব :
মুশকিল হল গিয়ে আমাদের অপারগতা, চালিয়ে
যেতে, চড়ে যেতে ।
তাই এই ধ্রুব থেকে মুশকিল আসান ধ্রুবতে ফিরে যাচ্ছি আমি। যৌন
প্রস্তাব, পেডোফিল অনেক কেচ্ছা বাকি রয়েছে। অথচ দিব্বি
হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছি দুজন। এটা যদিও সত্য যে জীবনের কুৎসিত ছবি আর
পাহাড়-সমূদ্রের সৌন্দর্যের কল্পনায় গলায় গলায় হেঁটেই আমাদের এগোতে হবে। গত্যন্তর
কী?
মুশকিলের এক বন্ধু তাকে এক লক্ষ টাকা স্পন্সর করে বলল, সে নিজের লেখা একটি গল্প নিয়ে টেলিভিশনের নাটক প্রডিউস করতে চায়,
মুশকিলকে ডিরেক্টর হিসেবেই চায়।
যেহেতু মুশকিলের একজন সহপাঠী ইতঃপূর্বে ডিওপির কাজ করছে, তার সাথে কথা বলে মুশকিল সাহস করল, টেলিভিশনের
নাটক সেও বুননে সক্ষম, যদিও ক্যামেরার কাজ বিন্দু বিসর্গ
সে বোঝে না।
রাজীব :
তারপর?
ধ্রুব :
চিপ কাহিনি। এটির মান নিশ্চিত করতে এবং স্ক্রিপ্টিংয়ের পেছনে
মুশকিল কোশাকে বেগ পেতে হল খুবই। শেষমেষ যা দাঁড়াল, ঠিক
রুচিসম্মত বলা চলে না। তবু অনেকখানি জাতে এল। যেন নোলানের আদর্শে প্লট জটিল
সমীকরণে বিন্যস্ত করা হয়েছে। অভিনয় আর ক্যামেরায় মুন্সিয়ানা থাকলে ঠিকই উতরে যাবে।
দুহাজার তের সালের লাক্সের বিজয়ী সামিয়া, অভিনেতা এলেন শুভ্র, বন্ধু তনুশ্রী, কিছু উঠতি তারকা স্ক্রিপ্ট পড়ে রাজি। এই স্ক্রিপ্টে এক লেখকের চরিত্রে
অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন আবুল হায়াত। তিনি যে স্বাধীনতা না একুশে পদক
কিছু একটা এচিভ করেছেন দেরি হয়নি, এর ফলে কাজ খুব বাছাই
করছেন নিশ্চয়। পরে ঐ চরিত্রে আজাদ আবুল কালাম সম্মতি দেন।
বাজেট এক লাখ ইম্পসিবল। প্রোডিউসার দরকার। মাছরাঙা টেলিভিশনের
অনুষ্ঠানপ্রযোজক রাব্বি মুশকিলকে দুজন লগ্নিকারী প্রডিউসারের সাথে পরিচয় করিয়ে
দেয়। শর্ত হল দুজনের সাথেই হোটেলে দেখা করতে হবে। কিন্তু একসাথে নয়। দুটো ভিন্ন
সময়ে।
রাজীব :
এটা কোনও পর্ন?
ধ্রুব :
ছিঃ। তুমি যৌনতাকে জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে
দিচ্ছ।
রাজীব :
কোনও কিছুই বিচ্ছিন্ন কিংবা সংযুক্ত করিনি, জানতে চেয়েছি মাত্র। এখান থেকেই সেই শিশু পর্ন কাহিনির উদ্ভব হবে,
তাই না?
ধ্রুব :
প্রথমত পেডোফিলিয়া আসলে শুধু পর্ন নয়। শিশুদের সাথে যৌনকর্ম যারা
ভালবাসে তাদের পেডোফিল বলে। এটা নিন্দনীয় অবশ্যই।
কিন্তু পেডোফিলের কথায় এখনও ঠিকমতো প্রবেশ করিনি। তার আগে
উপকাহিনিতে এসেছে এডাল্ট যৌনতার এক রূপ, যা মিডিয়ার আংশিক
রূপ তুলে ধরবে এই মুশকিল কোশার জীবন থেকেই।
বাজেট এক লাখ ইম্পসিবল। প্রোডিউসার দরকার। মাছরাঙা টেলিভিশনের
অনুষ্ঠানপ্রযোজক রাব্বি মুশকিলকে দুজন লগ্নিকারী প্রডিউসারের সাথে পরিচয় করিয়ে
দেয়। দুজনের সাথেই হোটেলে দেখা করতে হবে। কিন্তু একসাথে নয়। দুটো ভিন্ন সময়ে।
পাণ্ডুলিপিকারের অভাব আছে নাকি! তাদের চাপার নেপথ্যে রয়েছে আসলে
অন্য স্বার্থ, মুশকিল ওরফে ধ্রুবের শরীর। তার পশ্চাদ্দেশ,
লিঙ্গ, বুক আর বিভিন্ন খাঁজ। গিভ এন্ড
টেকের ব্যাপারটা মেনে নিয়ে নিজেকে সঁপে দিতে বাঁধে না বোকাটার। আদতে বোকা নয়। সেও
শরীর ভালবাসে।
ঐ প্রডিউসার দুজনও বয়েসে বুড়ো নয়। আছে রূপজৌলুশ আর দেহের বাঁক।
মুশকিল একজনের সঙ্গে চমৎকার এক্টিভ রোল করেছিল।
কিন্তু নাটকের বাজেট নিয়ে সে ঝুলে রইল। ওরা অর্থায়নের ব্যাপারে
দায়সারা কথা বলেছিল পরে। স্ক্রিপ্ট জটিল। নায়ক নায়িকা চেঞ্জ। হেনতেন নানা বাহানা।
মিশু সাব্বির কিছুতেই যাচ্ছে না ঐ চরিত্রে, অথচ তাকেই
এলেন শুভ্রের ক্যারেকটারে চেঞ্জ করার শর্ত, শর্তের বহর
দেখ।
কত কত কম্প্রোমাইজ, আবার নতুন স্ক্রিপ্ট
করা, এসবে মুশকিল ক্ষুব্ধ হয়েছিল। নাটকের পরিচালনা আছে
ঝুলে। অভিনেতারা সব্বাই প্রশ্ন করছেন শুটিং কবে? তার মুখ
নষ্ট হল পুরোদস্তুর।
রাজীব :
একদম।
হুম তার জন্য কষ্ট হচ্ছে। তারপর?
৭/০১/১৯ সকাল ১০.৫১টা
ধ্রুব :
তোমার মনে কোনও আশ্চর্য বিষয়ের অবতারণা হচ্ছে, মুশকিল কোশা একজন পির ঘরের অলদ, তার সঙ্গে এসব
নাটকপাড়া, মিডিয়া, তার উপর অবাধ
যৌনতা- দু প্রান্তের দুটো আলাদা হিসেব একসাথে এসে বসল কী করে?
রাজীব :
না , আশ্চর্য কিছু মনে হচ্ছে না। কারণ
শিক্ষা , চিন্তার স্বাধীনতা এবং যৌনচাহিদা কোন বংশ মনে
রাখে না।
ধ্রুব :
কিন্তু ঐখান থেকে বেরিয়ে আসা গেল কীভাবে, অনুমান করতে পার?
একটা নিয়ম, শৃঙখলা, নামেমাত্র আচার, কখনও ধর্ম-পরকালের ভয়,
তার মধ্যে সামাজিক বর্ম থেকে একটা লোক কী মন্ত্রবলে নিজস্ব একটি
ধর্ম বানিয়ে নিতে পারে যেখানে আচারধর্ম গৌণ হয়ে পড়েছে? কেতাবে
লেখা বড় বড় পাপকাজ তার ওজন হারিয়ে ফেললে কেমন করে? পাপের
সংজ্ঞা সে নতুন করে শিখল কোথায় মনে হয়?
রাজীব :
মানুষের কিছু জন্মগত জ্ঞান থাকে। তা ছাড়া যদি জোর করে মাদ্রাসায়
পাঠানো হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্র আর শিক্ষকের সাথে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত
হয়ে থাকতে পারে ! সমপ্রেমে বা সমকামে বিশ্বাসীরা সাধারণত ধর্মের বিধিনিষেধ তেমন
মান্যগণ্য করে না , নিজের ব্যতিক্রম অনুভূতি তাকে
ব্যতিক্রমীভাবে তৈরি করে । তারা লিবারেল এবং অনেক ক্ষেত্রে বিনয়ী এবং ভাল মানুষ
হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ।
ধ্রুব :
এখানে তুমি সমপ্রেম পেলে কোথায়? ধ্রুবকে
সমকামী মনে কোরছ?
রাজীব :
প্রডিউসারের সাথে সে একটিভ রোল প্লে করেছিল।
ধ্রুব :
হেহে। নাড়িয়ে দিলাম। তোমার তবল ক্ষাণিকটা বাজিয়ে দিলাম। ভুলো
স্বভাবটি তোমার সম্পূর্ণ সত্য দাবি নয়।
রাজীব :
তোমার বাদ্যযন্ত্রে সুর তুলতে পেরে ভালো লাগছে।
ধ্রুব :
মাছরাঙা টিভির সেই রাব্বির এক বুড়োর কাছে হোটেলে পাঠাতে চাইল
মুশকিল কোশাকে। তার কাছে অনুমতি নেবার প্রয়োজন বোধ করেনি পর্যন্ত। শুধু তার
কনট্যাক্ট নম্বর ধরিয়ে দিয়েছে। মিনসে আঙ্কেলের বয়সী বলা নেই কওয়া নেই, বলে কিনা রাব্বি তার নাম বলেছে। হঠাৎ বুড়ো ফোন দিয়ে বলে, হোটেল সাফিনায় আসতে। মুখের উপর মোবাইল টপস করে কেটে রাব্বিকে ফোন লাগাল
মুশকিল। জানতে চাইল, ঐ লোকটি কে? রাব্বির কথাতেই এবার পরিষ্কার- রাব্বির সাথে যেদিন প্রথম সাক্ষাৎ হয়,
সেদিনের একজন। বৃদ্ধ হলেও বেশ ফিটফাট, কেতাদুরস্ত।
শারীরিক মিলন অস্বস্তি হত না।
কিন্তু মুশকিল তেঁতে আছে। এরা পেয়েছে কী তাকে! বিনে পয়সার ভোজ?
গণিকা বানিয়েছে তাকে?
রাব্বিকে শাঁসিয়ে দিল- মানুষের কাছে তাকে আর একটিবারও না পাঠায়
যেন। এই কপট দাদাগিরি সাহায্যের কোনও দরকার নেই।
নাটক ডিশমিশ। স্পন্সর বন্ধুর কাঁধে চাপড়ে মুশকিল বলল- দোস্ত
দুঃখিত, তোর কম্ম আমাকে দিয়ে হল না।
স্ক্রিপ্টের নাম ছিল কি জান? ‘ইনফাচুয়েশন’।
রাজীব :
ইশ। একটা ধাক্কা এবং অভিজ্ঞতা বলা চলে।
মুশকিলের অত কিছু খালার নজর এড়িয়ে যাওয়া একটু কঠিন ছিল না কি?
ধ্রুব :
ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তুমি ভুলে গেছ ফার্মগেটে কোচিংয়ের
কথা? কোচিং নামে একটা কাহিনি ফাঁদা হয়েছিল না? সেটাকে কালেভদ্রে ফাঁকি দিত বৈ কী। কিন্তু ফাঁক দিয়েও যখন আশায়
গুড়েবালি… তখন বলাই বাহুল্য।
একটি কথা আগেই বলেছি। খালা এককভাবে দায়ী নন, আবার ঐ ধোঁয়াশা কুপ্রস্তাবগুলো এককভাবে নয়। দুই প্রান্তের দুটো
প্রতিপক্ষ মিলে ওকে ক্লান্ত করেছে।
কিন্তু মাছরাঙার ঘটনার পরও আশা জিঁইয়ে রেখেছিল মুশকিল। তখনও সে
এতেকাফ ধরেনি।
রাজীব :
তার মনোবল এবং গণ্ডি ছেড়ে বেরোবার প্রবণতা প্রশংসনীয়।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৪
_______________________________________
৭/০৪/১৯, সকাল ৬.২২টা
রাজীব :
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া চরণে
ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।
প্রিয়তম।
শুভ সকাল। কেমন আছ, কী কোরছ?
ধ্রুব :
এলোমেলো বইপত্তর আর পোশাক গুছিয়ে নিচ্ছি।
কেমনে আছি ওটুকু থাক পড়ে।
রাজীব :
কোথাও যাবে নাকি!
ধ্রুব :
অক্ষমকে যাবার কথা জিজ্ঞেস করো না। যদি সত্যিই কোথাও চলে যেতে
পারতাম চোখ বন্ধ করে!
রাজীব :
যাকে লোকে সিংহাসনে স্থান দেয় সে কেবল না পাওয়ার কথা বলে। রাজার
অসুখ বলে কথা।
মন খারাপ?
ধ্রুব :
বাদ দাও। না, কিছু নয়।
রাজীব :
আমি ট্রেনে।
ধ্রুব :
চট্টগ্রামে আসছ?
রাজীব :
বাড়ি আসছি। ঢাকা থেকেই।
ধ্রুব :
বাহরে।
রাজীব :
চট্টগ্রামের মানুষ স্বার্থপর। ভাল লাগে না একটুও।
ধ্রুব :
আমারও ভারি অপছন্দ। স্বার্থপর কি, নাকি
না, তা বলতে পারি না। কিন্তু সাংঘাতিক রক্ষণশীল। মননে
মানসিকতায় তোমার চারপাশে এখানে আলোকিত, মুক্ত ধ্যানের
মানুষ খুঁজে পাবে না।
রাজীব :
তুমি আছ তো।
ধ্রুব :
হ্যালো, আমাকে টেনে এনো না। আমি ব্যর্থ।
আমার উদাহরণ দেয়া সাজে নাকি!
কিন্তু, এইখানের লোকদের আতিথেয়তার
যেটুকু সুনাম, সেও বড় লোকদেখানো। আনুষ্ঠানিকতায় যে পরিমাণ
মরিয়া, হৃদয়ের কথায়য় কান পেতে শুনতে ঠিক সে পরিমাণ অপারগ।
এরচেয়ে ঢাকায় তুমি অনেক স্বাধীন হবে। অন্তত তোমাকে ভ্রুকুটি
দেখাতে লোকের বয়েই গেছে!
রাজীব :
আমরা কিন্তু জন্মস্থানের গুষ্টি উদ্ধার করে দিচ্ছি। ঢাকাও অপছন্দ
করে হাজার মানুষ।
ধ্রুব :
তা করে বৈ কী! ঢাকা নাকি যান্ত্রিক। আমার তো মনে হয়নি। মানুষকে
বেঁধে রেখেছে বেঁচে থাকার তাগিদ। কিন্তু মানুষের মন বাঁধতে পারে না যন্ত্র।
৭/০৪/১৯, রাত ৯:১৬টা
রাজীব
তুমি আঁচার খাও?
ধ্রুব :
মিষ্টি আঁচার ভাল। টক কম। আমসত্ত্ব, আমের
মোরব্বা খুবই ভাল লাগে।
রাজীব :
এই! আমসত্ত্ব যে আমার সহ্যই হয় না। দাঁতে লেগে গেলে , জিহবায় লেগে গেলে বিচ্ছিরি অবস্থা হয়।
কিন্তু আমাকে সাধারণত মিষ্টির দোকানে ঢুকিয়ে দাও। দই আর মিষ্টিতে
পেট ভরিয়ে নিতে পারব। আর পায়েস, খেজুরের গুড়ের পায়েস।
ধ্রুব :
উল্টোটি ঠিক। আঁচার, টফি, তিলের খাজা, গুটিকয়ের কথা বাদ দাও তো মিষ্টি
আমার সয়ই না। মুচমুচে, মসলাদার খাবার হলে আমার কাছে তার
জুড়ি নেই। আর দেশি খাবারের কথা বলতে গেলে সর্ষে ইলিশ, সাথে
ইলিশের আস্ত ভাজা ডিম, শুটকিতে মরিচ দিয়ে কয়েক পদ,
আবার কিছু ভর্তাও ভাল লাগে।
রাজীব :
গন্ধ রে বাবা! শুটকি আমি খেতেই পারি না। অর্ধেক ভেজিটেরিয়ান আমি।
৭/০৫/১৯, সকাল ৫:২৮টা
রাজীব :
যদি তারে নাই চিনি গো সে কি আমায় নেবে চিনে এই নব ফাল্গুনের দিনে,
জানিনে জানিনে।। সে কি আমার কুঁড়ির কানে কবে কথা গানে গানে,
পরান তাহার নেবে কিনে এই নব ফাল্গুনের দিনে- জানিনে, জানিনে॥
৭/০৫/১৯, সকাল ৯:১৬টা
ধ্রুব :
সাধ সকালে উঠে কবিতাও লেখ?
রাজীব :
পাগলা। এটা রবি ঠাকুরের গান। আমার খুব ভালো লাগে , তাই তোমাকে শুনতে দিলেম। আমি যখন যে গান শুনতে দেব, না শুনলে আমার কথা অব্যক্ত থাকবে, জেনো।
ধ্রুব :
সবগুলো রবিন্দ্রসঙ্গীত আমার মুখস্থ থাকবে এমন তো কোনও কথা নেই।
শুনতে দিলে কই। গেয়ে দিলেই না শুনতে পেতাম।
রাজীব :
আমি গাইতে পারি নাকি!
ধ্রুব :
শুনিয়েই দেখ না, পার কিনা।
রাজীব :
ওরে আমার কন্ঠে সুর নাই। আমার মা আমাকে অসুর বলে। আবৃত্তির
ফরমায়েশ করলে হয়ত চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আজ কথাও খাবি খাচ্ছে।
এই গানটা শুনে দেখ, সানামপুরির কণ্ঠে ‘তুমি রবে নীরবে’। শুনে কেমন হল জানিও।
ধ্রুব :
গলা অসুর ভর করে অসুখ বাঁধিয়েছে? কী
হয়েছে বল তো!
অবাঙ্গালীর কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত! মুগ্ধতায় আমন্ত্রণ!
রাজীব :
আমার মনে এটার সুর সব সময় বাজে।
গত কাল থেকেই গলা ধরেছে, ব্যাথাও কোরছে।
ধ্রুব :
নিজের যত্ন নাও।
শোনা হয়ে গেছে, ঠোঁটে মেলাচ্ছেন?
না, তিনিই গায়ক!
রাজীব :
হ্যাঁ।
ধ্রুব :
সুন্দর।
রাজীব :
গায়কী? নাকি গায়ক?
ধ্রুব :
দুটোই। মানুষটি ক্ষাণিক বেশি।
৭/০৫/১৯, দুপুর ১.৪৫টা
রাজীব :
বৌটা আমাকে ঝাল শুটকির ভরতা, ডাল দিয়ে
লতি ভুনা আর ভাত দিয়েছে। এই দুঃখ সইছে না।
ধ্রুব :
বৌকে বোল আমাকে নেমন্তন্ন করতে।
রাজীব :
মরগে তুমি। ধ্রুবের কী হল?
৭/০৫/১৯, বিকেল ৩.০৬টা
ধ্রুব :
ধ্রুবতে আসছি।
আরটিভির অনুষ্ঠান পরিচালক সোহেল রানা, ডাকা
নাম ঋতু। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে মুশকিল কোশাকে।
কারণ কি এ যে মুশকিলের ফেসের আদল ভারি মায়াবি, অথবা পোশাকে ফ্যাশনচেতা। উঠতি কিছু সেলিব্রিটি মুখচেনা না হলেও মধ্যে
মধ্যে তাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয়।
কেন? সেই ব্যাপারটি একটু সরিয়ে রাখছি।
পরে এসবের যুক্তিতর্ক করা যাবে।
ঋতু চ্যাটে নিমন্ত্রণ করেছিল মুশকিলকে, ভারি
আদিখ্যেতা দিয়ে। কথাপ্রসঙ্গে মুশকিল কাজের সুযোগ পাবে কিনা জিজ্ঞেস করে জেনেছিল,
ঋতু করবে সাহায্য।
যেদিন আরটিভিতে পৌঁছায় বৃষ্টির ফ্যাসাদে বের হতে দেরি হতে থাকে।
ছাতাও নেই। এর ফাঁকে ভাল ভাল কথা শোনাতে থাকে ঋতু। পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয় এগোতে চায়
বলে মুশকিলের ভূঁয়সী প্রশংসায় গদগদ।
একটি প্রস্তাব। স্বনামধন্য ডিজাইনার পল্লব সাহার এসিস্ট্যান্ট
হিসেবে থাকতে হবে। এটিই নয় শুধু, পল্লবের সাথে
যৌনসম্পর্কে যাবার ইঙ্গিতও আছে। কে না চেনে পল্লব সাহাকে! শীর্ষ দেশীয় ব্র্যান্ড
সারেংয়ের প্রতিষ্ঠাতা।
এর পাশে ঋতু সিভিও দিতে বলেছিল চ্যানেলের অন্য কোনও পোস্টের
জন্য। সিভির বিষয়টি ভাঁওতা ধরে নিতে পার।
মুশকিল বলে দিলে, সে গে নয়। তবু কাজের
জন্য কম্প্রোমাইজের দরকারে এটুকুতে সে যেন নিমরাজি হয়েছে। কিন্তু ওসব তো ঝুলিয়ে
রাখার নামান্তর। আগেও এই অভিজ্ঞতা তার আছে।
পার্থ, প্রডিউসারদের সাথে মুশকিল কোশার
শারীরিক সম্পর্কের সুবাদে তার প্রকৃতিকে সমকাম ধরে নিয়েছিলে, এবং পির-পরিবারের সন্তান হওয়ার পরেও মিডিয়ার আকর্ষণ অথবা মুক্তচেতনার
নেপথ্যে সমকাম ট্রাজেডির অবদান বলে উল্লেখ করেছ ইতোপূর্বে। কিন্তু আরটিভি এবং
সোহাল রানাকে ঘিরে যৌনপ্রস্তাবের এবারের ঘটনাটিতে তোমার সেই অনুমানের জোর কমে যেতে
পারে।
রাজীব :
মুখে সমকাম নিয়ে অস্বীকার করলেও কাজের সুবিধার জন্য সে এ
কর্মকাণ্ডে সম্মত আছে। সোজাসাপ্টা তুমি বলে দিলেও আমি সন্দিহান। যদি সে সমকামী,
আমাকে এই অনুমান বাদ দিতে জোর কর, সেক্ষেত্রে
তাকে উভকামী আখ্যা দেব। সমকামী বা উভকামী দুটোর একটি না হলে যত বিপদেই পড়ুক কাজের
সুবিধার প্রেক্ষাপট এলেও সে কিছুতেই পুরুষের দৈহিক সঙ্গ নিতে পারত না । তাও কোনও
পূর্ণবয়েসী লোকের সাথে? ধ্রুব, কোনওভাবেই
না।
বিষমকামী পুরুষ কমবয়েসি পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে এমনটি
শুনেছি; কারণ কমবয়েসির মাঝে নারীর কোমলতা খুঁজে পায় তারা।
ধ্রুব :
কচু হয়েছে তোমার, মনোবিজ্ঞানী। জান
নাকি! সেক্সুয়্যাল ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদেরও ধোঁয়াশা কাটেনি। তুমি না
জেনে এত বিশ্বাস নিয়ে বলছ কী করে!
রাজীব :
যেটুকু না বুঝলাম , তাও কচু ! কী জানি ,
আমার কথা শুনে ধ্রুব মুশকিল কোশাকে বদলে দিচ্ছে কিনা !
ধ্রুব :
একদম নয়।
ঋতু ডিফেন্স করল। মুশকিল, তুমি গিয়েই তো
আর শুয়ে পড়ছ না। পর্যবেক্ষণ কর। আমাকে বোল সমস্যা হলে। এসিস্টেন্ট হওয়া মানে
তোমাকে রাতদিন নানা স্পটে থাকতে হবে। খালার বাসা ছাড়তে হবে।
পল্লব সাহা ছাড়াও আরও আরও বিখ্যাত লোকেদের এসিস্টান্ট হতে পারবে।
এঁটে থাকতে পারবে?
মুশকিল চট্টগ্রামের শিল্পকলাতে যে ভাবমূর্তি তিলে তিলে গড়েছে,
সেখানে- ফাইল নিয়ে ঘোরাঘুরির কিসিমের অফিস! প্রস্তাবে সম্মান বোধ
হল না। তাছাড়া, খাওয়াবে পরাবে কে ঘর ছাড়লে! এসিস্টেন্সি
গ্যারান্টেড নয়।
ঋতু। আরটিভি থেকে বেরোবার পরেই মোবাইলে বার্তা দেন, সত্যি করে বল তুমি গে?
বুঝে পেলে, পার্থ, সব বৃন্দাবনের একই আখ্যান। এমন ছ্যাঁচড়ের মত সেঁটেও থাকতে পারত না
মুশকিল। পায়ের তলায় কিছু নেই। যন্ত্রপাতির কলকব্জার কাজ আর আইটিতে এত দুর্বল না
হলে হয়ত সে অসহায় বোধ করত না। কিছু করে খেত। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি সে অসম্ভব
অদক্ষ। শেষে মিথ্যে করে বানিয়ে বলা সেই বিসিএসেই ঘুরে গেল তার ব্যস্ততার চাকা।
এভাবেই দুহাজার পনের-সতের কেটেছে ঢাকাতে। এতেকাফে। বিদায়, টেলিভিশন।
মিডিয়াতে শরীর, টাকা অথবা মাগনা খাটিয়ে
নেয়া এসবই আছে। এভাবেই চলছে তারা। যোগ্যরা উঠে আসছে না তাও নয়। কিন্তু ওদের হয়ত
পরিবারের ছায়া নয়তো একটা কম্প্রোমাইজের গল্প আছে যা সব্বাই জানে না।
রাজীব :
নির্মম। কিন্তু আমি নিশ্চিত হতে পারিনি, আমার কথা শুনে ধ্রুব মুশকিল কোশাকে বদলে দিচ্ছে কিনা !
ধ্রুব :
এর উত্তর তুমি সময়মতো পাবে।
উপরে তুমি বলেছ, বিষমকামী পুরুষ কমবয়েসি
পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে বলে শুনেছ; কারণ কমবয়েসির
মাঝে নারীর কোমলতা খুঁজে পায় তারা। এখন কমবয়েসী নিয়ে তুমি নিজেও একটা ধারণা ফেঁদেছ
দেখছি। পরের যে ঘটনাটি শোনাব সেখানে মুশকিল এমন কুকীর্তিতে জড়িয়ে যেতে পারত যাকে
বলে পেডোফিলিয়া। তখন তুমি বিচার কোর সে বিষম নাকি সমকামী? তোমার কথামতে পেডোফিলরা শিশুদের মধ্যে নারীর কোমলতা খুঁজে বেড়ায়। বিচার
করবে তুমি, তা কি সব্বাই?
রাজীব :
একজন মনে মনে যে পরিকল্পনা আঁটে, অন্যের
বক্তব্য শুনে তা বদলাতে পারে, সিম্পল… এটাই যুদ্ধ এবং
যথার্থ কূটনীতির অংশ।
ধ্রুব :
তোমার সাথে আমার যুদ্ধ বেঁধেছে কবে! আমি বেপরোয়া, যেখানে কূটকৌশলেরও বালাই নেই। স্বার্থই বা কী!
যাই হোক, মশাই, কচুটার কথা বলে তোমায় ক্ষেপিয়েছিলাম। আমলে নিতে হয় না।
রাজীব :
আমাকে কচু জেনেছি বলাতে মোটেই কিছু মনে করিনি। বরং এর ভেতর একটা
মিষ্টি ভালবাসা খুঁজে পেয়েছি ! আমি তো ধ্রুবর কাছে ভালবাসার দাবিদার ছিলাম
আদ্যপান্ত। যে ভালোবাসাতে হৃদয়ের টান থাকবে অফুরন্ত! যে ভালোবাসাতে হাত হাত রাখা,পাশে বসে সঙ্গীতে হারিয়ে যাওয়া , নৌবিহারে
নদীর জলে পা ডুবানো। কপট ঘুম পাড়ানোর নামে কপাল জড়িয়ে দেয়া। যাকে বলে যৌনতার
সীমারেখা অতিক্রম করে চরম অনুভব।
ধ্রুব :
ধ্রুব তোমাকে কী নামে ডাকবে তুমিই বল। এই নামের জন্য অপেক্ষাটা
নিশ্চয় দীর্ঘ হয়েছে।
রাজীব :
ধ্রুব যে নামে ডাকবে সেটা আমি উপহার হিসেবে নেব। এই কিপ্টে
ধ্রুবর কাছে হাত পেতে না চাইলে যে সে কিছুই দেবে না এই কদিনে বেশ বুঝেছি।
ধ্রুব :
ধ্রুব তোমার নাম দিল রাজীব। পদ্মপাতা অস্থায়িত্বের প্রতীক।
কিন্তু পদ্ম দেখলে সেই কথাটা মনে পড়ে না। পদ্ম ধীরে ধীরে তার ভেতরের নন্দন বিকশিত
করে ফুটে উঠবে। চাপা কষ্টে পুড়িয়ে দেয়া কবিতার খাতা থেকে আগুনের পাখি জন্ম নেবে
আবার। তুমি হলে রাজীব। তুমি পদ্ম।
রাজীব :
পদ্মপাতা মোটেই অস্থায়িত্বের প্রতীক নয় । বরং পদ্মপাতার জল,
শিশির অস্থায়িত্বের প্রতীক।
ধ্রুব যেন রাজীবকে শিশির নামে বদলে না দেয়, সেটাই কামনা কোরছি। ধ্রুব রাজীবকে মুগ্ধ নামেও ডাক দিতে পারত, যে ধ্রুবের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায় অবিরত ।
ধ্রুব :
পদ্মপাতার জলই বলতে চেয়েছিলুম গো। জল শব্দটা কেটেছে ভুল করে। তবে
পদ্মফুল আর ঐ জলের মাঝামাঝি যে পদ্মপাতা নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে এই মাত্র মনে
এল। মনে এলো, রাজীব না হয়ে পদ্মপাতাই তোমার নাম দেয়া যেত।
কিন্তু ঐ বস্তুটাকে আর ঘোরালো করতে চাইছি না। তুমি রাজীবই।
মুগ্ধও নয়। আমাতে মুগ্ধ হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। কেননা ধ্রুবকে
এখনও জানলেই না ভাল করে। যেটুকু জেনেছ তা মুশকিল কোশা নামের অন্য ধ্রুবতেই ঘুরে
ফিরে গেছে।
পরের ঘটনা বলেই, এই উটকো মুশকিল কোশাকে
বিদায় জানিয়ে দেব তাই।
রাজীব :
ঠিক আছে। কিপ্টের উপহার রাজীব নিয়ে নিল, নয়তো কোনও কারণে এও ফসকে যেত।
কিন্তু মুশকিল কোশা কী জন্য উটকো তা তো বুঝে পেলাম না ! আমার তো
মনে হয় ঘুরে ফিরে নামে বেনামে আমাদের মধ্যে মুশকিল আসবে। কেননা সে আমাদের গল্পের
প্রাণ না হলেও প্রাণের উপকরণ।
ধ্রুব :
‘গল্প’ মানে মিথ্যে। শব্দটি বদলে নিও।
রাজীব :
ভুল হয়েছে। ক্ষমা চাইছি।
৭/৫/১৯, বিকেল ৪.৫৭টা
ধ্রুব :
মিরপুরের আনসার ক্যাম্পে খালার বাসা। কিন্তু মিরপুরের রূপনগরে
তাদের খানকা। খানকা মানে পিরদের বিভিন্ন এদলাকায় ঘর থাকে যা ঐ এলাকার মুরিদদের
কমিটি ভাড়া মিটিয়ে দেয় মেটায়। আবার পিরসাহেব নিজের খরচেও মেটাতে পারেন। খানকাতে
মিলাদ, মাহফিল, ফাতেহা, ভোজন, ধর্মীয় আলোচনা সবই চলে। মোমবাতি,
আগর, ভাণ্ডারী গান, ভাণ্ডারী বই থাকে।
রূপনগরের খানকায় ওর বাবার এক মুরিদ দম্পতি থাকত। তিন সন্তান। এক
ছেলে দুই মেয়ে। সব্বাই ক্লাস ফাইভের নিচে পড়াশোনা। সচ্ছল। খানকাটা বড়, কারণ ঢাকা জুড়ে এটা ওদের একমাত্র খানকা। আরেকটি আছে নারায়ণগঞ্জে। রূপনগরের
খানকাতে বাসার ভাড়া অর্ধেক মুশকিলের বাবা মেটাত, অর্ধেক ঐ
মুরিদ দম্পতি।
রাজীব :
খানকা সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারণা আমার আছে । চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ
গালি খানকী, এই নামটি এসেছে খানকা থেকে । খানকাতে যেসব
নারী রক্ষিতার মতো থাকত তারা খানকী নামে পরিচয় পেত।
ধ্রুব :
ঐ খানকা কি মুসলিম পরিবারের? আমাকে খবর
নিয়ে জানিও। কেননা মুশকিল কোশার পারিবারিক ঐতিহ্যে রক্ষিতা নামের কোনও সংস্কৃতি
গড়ে ওঠেনি। তাই নতুন কথা শুনে কৌতুহল হচ্ছে।
রাজীব :
যদি এই বয়েসে সাংবাদিক বা প্রত্নতাত্তিক হওয়ার ইচ্ছে কিছু হলেও
অটুট থাকে তবে চেষ্টা করব । এ কথা আমি জেনেছিলাম বইয়ে পড়ে! কিন্তু আগে থাকলেও এখন
যে খানকাতে খানকী থাকে না সে কথা আমায় মানতে হবে !
ধ্রুব :
রূপনগরের খানকায় মুশকিলের বাবার এক মুরিদ দম্পতির বাস।
তিন সন্তান। একজন ছেলে। দুজন মেয়ে। সব্বাই ফাইভের নিচে পড়াশোনা।
সচ্ছল। খানকায় বড় বড় কয়েকটি কক্ষ। কারণ ঢাকা জুড়ে এটা ওদের
একমাত্র খানকা। আরেকটা আছে নারায়ণগঞ্জে। রূপনগরের খানকাতে বাসা ভাড়ার অর্ধেক
মুশকিলের বাপ পিরসাহেব মেটাতেন, অর্ধেক ঐ মুরিদ দম্পতি।
তিনজন শিশু। আব্দুল্লাহ, তানিয়া এবং
ফাতেমা।
তার মধ্যে আমাদের ঘটনায় প্রাসঙ্গিক শুধুই একজন।
৭/০৫/১৯, সন্ধ্যা ৭.২১টা
রাজীব :
“আমি তো ধ্রুবর কাছে ভালবাসার দাবিদার ছিলাম আদ্যপান্ত। যে
ভালোবাসাতে হৃদয়ের টান থাকবে অফুরন্ত! যে ভালোবাসাতে হাত হাত রাখা,পাশে বসে সঙ্গীতে হারিয়ে যাওয়া , নৌবিহারে
নদীর জলে পা ডুবানো। কপট ঘুম পাড়ানোর নামে কপাল জড়িয়ে দেয়া। যাকে বলে যৌনতার
সীমারেখা অতিক্রম করে চরম অনুভব।”
কোনও কারণে এই কটা কথা তোমার নজর এড়িয়ে গেছে।
অভিযোগ করেছ, আমি তোমাকে জানি না। তাহলে
জানাও না কেন? কীভাবে চায় রাজীবকে ধ্রুব?
ধ্রুব :
কোনও অনুযোগ অভিযোগ করিনি।
আর সাবধান, দুর্বল হয়ে ভুল কোরছ।
মুগ্ধতার চাকচিক্যকে ভেঙে ভেতরের শুন্যতা বোঝাতে ধ্রুব ঐ কথা বলেছে।
রেকর্ডে গান পাঠিয়েছি শুনে দেখো। তোমার মত অসুর না হয়ে বেসুরো
হলেও মনে দুঃখ না থাকে যেন।
রাজীব :
ওরে, পায়ে পড়ি তোর চোর! চুরি করা দেয়
ছেড়ে। শক্ত দুয়ারে মনটা রেখেছি, নিঃস্ব করিস নারে।।
গান শুনে গান এল।
ধ্রুব :
এ নিশ্চয় রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়।
রাজীব :
এহ, রবি এতো কাঁচা!
৭/০৬/১৯, সকাল ১১.৩৩টা
রাজীব :
ফোন ধরলে না।
ধ্রুব :
মেজবানে যাই। বাবা আছেন সাথে।
রাজীব :
শহরে?
ধ্রুব :
একটি গ্রামে।
রাজীব :
কোন গ্রামে?
ধ্রুব :
নজু মিয়ার হাটে।
রাজীব :
ইরিব্বাবা। আমার গ্রামে এসে আমার কাছে লুকোচ্ছ এতক্ষণ ধরে।
ধ্রুব :
রসিকতা করেছি। আসলে নজুমিয়ার হাটে যাচ্ছিনে । তাদের মেয়ের
শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি। দাঁড়াও, কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করে নিই,
দাদা।
মোহরা। সিটি কর্পোরেশনের মধ্যেই।
রাজীব :
হায়, এ আমি কাকে নিয়ে পড়েছি! সে কোথায়
যায় নিজে জানে না।
ধ্রুব :
সাথে বাবা আছেন। কী হবে আমি জেনে!
রাজীব :
বুড়োর বয়েস বত্রিশ। এই বয়েসে বাবাকেই তুমি দেখবে।
ধ্রুব :
“আমি বয়স বাড়ে আমি বাড়ি না। সময় ছুটে চলে আমি আটকে পড়ে রই।
আমার রাস্তা হাঁটে আমি হাঁটি না।”
রাজীব :
তোমার পাশে থাকলে আমাকেই হয়ত তুলে নিয়ে যাবে কেউ।
৭/০৬/১৯, দুপুর ২.২১টা
ধ্রুব :
আমার প্রিয় ভাঁপ ওঠা গরম চিতই আর ছিটকা পিঠা দিয়েছে।
পেটে ব্যাথা। মেজবানের মাংসের লোভ ছাড়তে হল।
রাজীব :
এটা আমার কথার রিপ্লে?
ধ্রুব :
এখনও ট্রাবলে আছে পেট।
হ্যাঁ। এটাই রিপ্লে।
রাজীব :
যাক তোমার পেটে পীড়া। ক্ষমা করে দিচ্ছি; আমার ভীষণ নরম মন!
বৃত্তান্তে তোমার প্রিয় খাবারের তালিকায় নজর দিয়ে এলাম। এই ফর্দ
তো নজুমিয়ার হাট থেকে নাজিরহাট অবধি। কিন্তু আমার ঘরে এলে আমি এর মধ্যে কোন খাবার
দিয়েই খুশি করতে পারব না বোধহয় তোমায়। সব যে মশলার জয়জয়কার।
ধ্রুব :
এখন কী খেতে সাজিয়ে দিচ্ছে, শুনবে?
পিঠা ছাড়াও আইসক্রিম, পুডিং, মধু, সস, সমুচা,
কাঁঠাল আর মিষ্টি পানের খিলি।
রাজীব :
রাজীব স্বল্পাহারী। তাকে লোভে ফেলতে পারবে না, সোনা।
ধ্রুব :
তাতে কী। আমি স্বল্পাহারী নই।
রাজীব :
বাড়ি এলাম কাল বিকেলে। ছোট্ট বড় সবাই আমার শাসনে এক দিনেই
অতিষ্ঠ। যে কাজ তারা প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই করে অভ্যস্ত। সেটাই এখন যাচ্ছে ভুলে।
ধ্রুব :
কী শাসন কোরছ?
বাড়ির কথা আমায় বিস্তারিত বল তো। কে কী কোরছে?
রাজীব :
আমি শুধু সবার ভুল দেখে যাচ্ছি; অথবা
আমার উপস্থিতিতে এরা কাজে ভুলটাই পারে।
ফোনে বলব সবটা। সেকেন্ডে সেকেন্ডে কাজের পরিবর্তন হচ্ছে।
ধ্রুব :
সেরেছে। তার আর প্রয়োজন নেই।
রাজীব :
খাবার শেষ?
ধ্রুব :
কাঁঠাল ছাড়া সব। এক দু টুকরো করে।
রাজীব :
কাঁঠাল বাদ গেল কেন? এই ফল আমার ভীষণ
প্রিয়। এ বছর এখনও খাওয়া সৌভাগ্য হল না।
আমার বাবা খুব কাঁঠাল চেনে। কালই তাক বলেছিলাম কাঁঠালের কথা।
তিনি বললেন, কাল পর্যন্ত দেখি, ভাল পাব।
ধ্রুব :
আমার ভীষণ অপ্রিয়। একমাত্র লালচে মতন ছোট কোয়া আর মিষ্টি কাঁঠাল
কিছুটা খাওয়া সম্ভব। তাও বেশি নয়। তবে ভাঙার আগে নরম কাঁঠালের খোসা ছুঁয়ে দেখতে
আনন্দ। আবার বেড়ে না ওঠা অঙ্কুরের ভর্তাও অসাধারণ। কিন্তু পাকা কাঁঠাল খেতে টানে
না।
রাজীব :
আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে এবার তা আর অস্বীকার করবে না বোধ করি। দুজনের
সব পছন্দেই অমিল।
পাকা কাঁঠাল খেয়ে অন্য কিছু না খেলেও চলে । আমি ভালো ইচর রাঁধতে
পারি। ইচর বোঝ তো। কাঁচা কাঁঠাল।
ধ্রুব :
আচ্ছা, দুএকটি বা বেশ কটি রুচির অমিল
হলেই কি তাকে যুদ্ধ বলে। কী সব উদ্ভট যুক্তি তোমার, আর
পারা গেল না।
ইচরের কথা আমি জানি। এটা ভাল রাঁধতে পার?
কিন্তু আমার তো পাকা কাঁঠালের পর প্রচুর পানি খেতে হয় বলেই ধারণা,
আঠালো হওয়াতে। নইলে রক্তনালীতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
রাজীব :
মোটামুটি সবই রাঁধতে পারি। ঢাকায় এসো। যতটা পারি তোমায় রেঁধে
খাওয়াব।
ধ্রুব :
তোমার কীর্তির বিখ্যাত রান্নার তালিকা লেখ।
রাজীব :
পোলাও , ভুনা খিচুড়ি , নারকেল চিংড়ি, , লটিয়া মাছ , সর্ষে ইলিশ , আলু পনির , সয়াবড়ি , মাশরুম, মুরগী
কাচ্চি, মাছ দিয়ে কুমড়ো পাতার বড়া , ডালের বড়া, ডালে ভর্তা , রুই কাচ্চি, ইচর ঝোল…।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৫
_______________________________________
৭/৬/২০১৯, সকাল ১০:০৮টা
ধ্রুব :
পুরুষ সমকামী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি শ্রেণি রয়েছেন, যারা নারী ও পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন আচরণের তত্ত্বে বিশ্বাসী। এবং তারা
সমাজে রচিত সেইসব পুরুষালি অঙ্গভঙ্গি বা স্বভাব অনুযায়ী চলাফেরা করবেন, মেয়েলিদেরকে স্বগোত্রীয় মনে করবেন না, সম্ভবত
আমিসহ পরিচিত সিংহভাগ সমকামীরা এই ধারণাটি কটু হলেও চুপিচুপি অনেকটা স্বীকার করে
নিয়েছি। সমাজে রচিত নারী-পুরুষের আলাদা আচরণতত্ত্বে বিশ্বাস করে নিয়েছি। এই
ব্যাপারে তুমি কী ভাবছ?
রাজীব :
যদি পুরুষ হয়ে অন্য একজন পুরুষকে কামনা করি তাহলে অবশ্যই তার
ভেতর পুরাষালি আচরণ থাকবে, তা আশা করব না?
৭/৬/২০১৯, দুপুর ১২:৫৪টা
রাজীব :
দেখ আমার আঙিনা। আর সুস্মিতা পাত্রের কণ্ঠে ভালবেসে সখী। শুনতে
দিলাম তোমায়।
৭/৬/২০১৯, সন্ধ্যা ৬:০২টা
ধ্রুব :
ছাত্রের বাড়িতে ইন্টারনেট নেই। রেঞ্জে এলে তখন তোমার ছবি আর গান
দেখতে পাব। কিছু মনে কোর না।
রাজিব :
টিউশনি করছ? কই একথা আগে বললে না আমাকে!
ধ্রুব :
এ তো বিসিএস পড়ুয়া। নতুন। নিয়মিত যাওয়া প্রয়োজন পড়ে না।
রাজিব :
তাই বল। শোন, সোমবারের পর যে কোনওদিন
চলে যেতে পারি ……!
দেখা কোর, সোমবারই উত্তম।
ধ্রুব :
সে দেখা যাবে ক্ষণ। এখন খুব দাঁত ব্যাথা কোরছে।
রাজীব :
ব্যাথা! ব্যাথার বিষয় বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সদুত্তর কিনা বিচার
করতে গেলাম না। আর, ব্যাথা প্রায় করে ?
ধ্রুব :
কী যে বল!
না, একটা অকেজো ক্যাপ আছে। তাতে ভুলে
মাংস বা গাজর লেগে গেলে প্রচুর ব্যাথা পাই।
রাজীব :
রয়ে সয়ে খেলে হতো না! ওষুধ নিয়েছিলে?
ধ্রুব :
এক্সিডেন্ট তো হয়ই, হতেই পারে। টুথজেল
মেখে রেখেছি। ইটোরিক্স মানে পেইনকিলার ব্যবহার না করে এটাই ব্যবহার করি ব্যাথা
হলে। একটু সময় নেয় বটে। কাজ দেয়।
৭/৬/২০১৯, রাত ১০:০২ টা
ধ্রুব :
যদি পুরুষ হয়ে অন্য এক পুরুষকে কামনা করতে হয়, তবে অবশ্যই তার ভেতর পুরাষালি আচরণ প্রত্যাশা কর তুমি। আমি জানতে চাই-
পুরুষালি ও মেয়েলি আচরণের এমন ক্লাসিফিকেশন কি রাখার কোনও দরকার আছে?
রাজীব :
চোখে লাগে যে!
ধ্রুব :
সমকামী হলে নারীর মত নাকি পুরুষের মত আচরণ করবে, সেই ফ্যাক্ট আমার বিবেচনা নয়। আমি বুঝতে চাইছি ‘নারীর মত’ বা ‘পুরুষের
মত’ এই ক্লাসিফিকেশন কতটা সঙ্গত। সমকামী মানুষেরা এ নিয়ে
কী ভাবছে? নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গিকে সমাজের অধিকাংশ বিষমকামী
মানুষের মত নিন্দার চোখে দেখা কমিউনিটিতেও প্রচলন রয়েছে। নিজেও পুরুষের কোমর
বাঁকানো, পশ্চাৎ দোলানো দেখলে মনের অজ্ঞাতে কিছু
অস্বস্তিতেতে পড়ি, এ জন্য নিজের প্রতি আমার ক্ষোভও আছে।
আমি তাদের অসম্মান করে কখনওই কিছু বলিনি, কিন্তু মনে মনে
এটুকু অস্বস্তি আমার কেন হয়, তা আমারও আক্ষেপ। তাই সবাইকে
বলছি, দীর্ঘদিন সোসাইটির চাপানো এই অভ্যাস থেকে বেরোতে
হলে নারী-পুরুষের আচরণের ক্লাসিফিকেশন ভেঙে ফেলতে হবে না?
ওটা সমাজ তোমাকে আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে
যে এইটে মেয়েলি, ওটা পুরুষালি। স্বপ্নময়
চক্রবর্তীর লেখা ‘হলদে গোলাপ’ নামে
উপন্যাসটি সময় করে পড়ো তো।
রাজীব :
আসলে কোমর বাঁকা বা অহেতুক ভঙ্গি মেয়েরাই যে করে তা তো নয়। তৃতীয়
লিঙ্গের লোকেরাই এমন সব করে, যা দৃষ্টিকটু । অন্য সবার
মতো সেটি আমারও অস্বস্তির কারণ।
ধ্রুব :
ঐ যে বলেছিলাম ধর্ম যার যার আলাদা। কিন্তু এসবকে পুরুষ, নারী নাম দিতে হবে কেন। এটা হিঁদুর, ওটা
মুসলিমের বলতে হবে কেন! এটা সালেহার, ওটা হাকিমের,
ওটা ইন্দুবালার ধর্ম বলা হবে না কেন?
রাজীব :
হয়তো কোনও একসময় সব কিছুর মধ্যে সবার অংশগ্রহণ না থাকলেও মেনে
নেয়া বা আমলে না নিয়ে প্রাকৃতিকভাব আসবে … সে সময় হয়তো আমরা থাকব না।
ধ্রুব :
এটাই। জান, পশ্চিমা বিশ্বের অনেক
পুরুষের ঢ্যাঙা আচরণ দেখলেও মনে কামনা জাগে। কারণ তাদের সোসাইটি এসব ভালমতে গ্রহণ
করে নিচ্ছে, আমাদের চোখেও আর অস্বাভাবিক ঠেকছে না। তাছাড়া
আরেকটি বিষয় হল ঐ পুরুষেরা তথাকথিত মেয়েলি হাবভাব হলেও একটা এপিয়ারেন্স বা
ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে জানে। এই সাবকন্টিনেন্টে রুচিগুলো কেমন গুলিয়ে যায়। তাই
আমাদের অস্বস্তি ভাবনাও কাটে না।
রাজীব :
তৃতীয় লিঙ্গের মতো শারিরীক আচরণ আমার ভেতর অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
নারীদের কোনও আচরণ আমি তেমন ঠাওর করতে পারি না … সবাই নারীদের আচরণ আর তৃতীয়
লিঙ্গের আচরণ গুলিয়ে ফেলেছে।
ধ্রুব :
এখনও কিন্তু তুমি নির্দিষ্ট লিঙ্গের আচরণ থাকতেই হবে এই ধারণাতেই
পড়ে রইলে। আলাদা আলাদা মানুষের আচরণে আসতে পারলে না একদম।
রাজীব :
উফ, আর পারছি না। প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাই।
কোনও কারণে মনে হয় এই লেখাটা তোমার চোখ এরিয়ে গেছে যে- “রাজীব ধ্রুব সম্পর্কে
জানতে চায় এবং রাজীবকে ধ্রুব কীভাবে চায় সেটাও চায় জানতে।”
ধ্রুব :
যায়নি। ওটার টোপ তুমি গেলনি। প্রেমিক সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল
ধ্রুব। বাস্তবে ছিটোফোঁটা যেসব স্মৃতি ছিল সেটাকে কল্পনায় রাঙিয়ে নিলেই হয়ে যেত।
রাজিবকে সম্পূর্ণ বাস্তব হতে হবে এমন তো কথা নেই। আর প্রেমিকের গল্পের সূত্র ধরে
ধ্রুব আর রাজীবের জীবনের অতলে যাওয়ার পথ উম্মুক্ত হত।
রাজীব :
সখা , তুমি আমায় শুধু টোপ দিচ্ছ কেন ?
রাজিবকে ধ্রুব কীভাবে চায় তা না জানলে রাজীব আসবে কী করে!
ধ্রুব :
ভয় পেলে চলবে কী করে!
রাজীব : ল
ধ্রুব, তুমি শুধু মজাই লুটে নিচ্ছ।
৭/৭/২০১৯, দুপুর ২:১৭টা
রাজীব :
দেখা কোরছো তো কাল? স্থানকাল জানাও।
ঝড়বৃষ্টি যা হবে হোক তবুও।
ধ্রুব :
পরের দিনটি খুব কি সমস্যা হবে?
রাজীব :
সেভাবে তো চিন্তা করিনি বা তুমিও এর আগে কোনও বিকল্প প্রস্তাব
দাওনি !
ধ্রুব :
মঙ্গলবারে শহরেই আসছি। তবে তোমার সুবিধা বিবেচনায় কাল তোমার পৌরসভা
অবধি যেতে আমার আপত্তি নেইকো। বল দাঁড়াব কোথায়?
রাজীব :
আমার সুবিধার কথা উহ্য থাক । চট্টগ্রাম আমি ভুলেই গিয়েছি। তুমিই
বল কখন কোথায়। পৌঁছে যাব ! যখন যেখানটায় বলবে…
ধ্রুব :
কাল আসতেই হচ্ছে। এরপরে যে ফিরে যেতে পার বলেছ।
রাজীব :
পরদিনও থাকছি, তোমার অসুবিধে আমি চাই
না। এবার বল কাল নাকি পরশু?
ধ্রুব :
তোমাকে অনেককটা ভালবাসা।
তাহলে পরশুই।
রাজীব :
স্থান, সময়?
ধ্রুব :
জানাব।
৭/৭/২০১৯, বিকেল ৫:৫০টা
রাজীব :
কি করছো
ধ্রুব :
এবার একটু চুপ থাক। কোশার আখ্যান বাকিটা শুনতে হবে তোমায়।
রাজীব :
মাথার ব্যামোটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে?
ধ্রুব :
পচা। হাল ছেড়ে দিতে চাইছ।
আমি কিছু একটা রিপিট করছি।
রূপনগরের খানকায় তার বাবার এক মুরিদ দম্পতির নিবাস। তিন সন্তান
তাদের। এক ছেলে, দুই মেয়ে। সব্বাই প্রাথমিক বিদ্যালয়েই
পড়ছে। সচ্ছল। খানকা বড় এবং কারণ ঢাকায় এটিই তাদের একমাত্র খানকা। নারায়ণগঞ্জে আছে
একটি, সেটি বেশ জমজমাট। রূপনগরের এই খানকাতে বাসাভাড়ার
অর্ধেক মুশকিলের বাবা মেটাতেন। অর্ধেক ঐ দম্পতি। স্বামীস্ত্রী দুজনই মনেপ্রাণে বড়
ভাই মেনে মুশকিল কোশাকে বড় ভালবাসে । বড় ভাই মানে বয়সে নয় কিন্তুক, সম্মানে বড়, পিরের জ্যেষ্ঠপুত্র বলে কথা। দম্পতিটি
মুশকিল কোশাকে প্রায় বায়না ধরত বেড়াতে যাবে কবে, তাদের এই
অভিপ্রায় । কিন্তু ফ্যাঁকড়া বাঁধাতেন খালা, তার খুব একটা
সম্মতি নেই, মায়ের চেয়ে বেশি নজরদারি শুরু করলেন। এক রাতে
তো যৌনকলাপের উদ্দেশ্য নিয়ে বাইরেই ছিল মুশকিল। খালা রাতে না ফেরা নিয়ে খুব মনোমালিন্য
করেছিলেন, তাই আর কখনও তার কথা ছাড়া রাতে কোথাও থাকা
হয়নি। ঝঞ্ঝাট এড়াতে হয়।
রাজীব :
যৌনকলাপের সঙ্গীটি কে?
ধ্রুব :
আচ্ছা লোকটি তুমি, একেবারেই যাচ্ছেতাই!
এত কথার ফাঁকে কেবল যৌনকলাপ শব্দটাই গিললে। তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্কটি যেন, দুই হাত এগিয়ে এক হাত পেছাচ্ছ। মিডিয়ায় ট্রাজেডি ভুলে গেছ নাকি?
কত বিষদ আকারে শুনিয়েছি।
রাজীব :
হা হা হা. .. আমি পেছাইনি ! তোমার মুখ থেকে কিছু একটা বের করতে
চেয়েছিলাম , কিন্তু তুমি আমার উপর সিজারের ভার দিলে !
ঠিক আছে। মুশকিলের কথাই বল।
ধ্রুব :
মুশকিলের মা-বাবা, এটাই চেয়েছিলেন আসলে।
খানকায় থাকলে দম্পতির কাছে স্বাধীনতা যেটুকু পেত, খালা
তার রাশ টেনে ধরবেন। খালা যে তাকে স্বাধীন করে দিচ্ছেন না এটি দেখাতেই আরও বেশি
জেলারের ভূমিকা নিলেন। মুশকিল অবশ্য এর ফলে টর্চারড বললে ভুল হবে। কেননা, মিডিয়াকাহিনির বিচ্ছেদ ঘটেছে, আর তারপর সে
জবের গাইড বইয়ে সেই কবেই দিয়েছে ডুব। স্বাধীনতার দরকার হয়নি।
ঐ ভাইভাবি মানে দম্পতি খানকায় যেতে এত অনুরোধ করবার পরও খুব
হিসেব করে যেত। মুশকিল রাতে থাকে না, এসব কারণে খালার উপর
রুষ্ট ছিলেন ভাইভাবি, যার সবকিছুই আসলে নির্ভেজাল
ভালবাসাই বলা চলে।
মুশকিল তাদের তিনটি সন্তানকে ভালবাসত খুব। সোহাগ আর এটা সেটা
কিনে দেয়াতে প্রকাশ পেত সব। ওরা ন্যাওটা ছিল তার। মাসে একটি দুটিবার দেখা হলে
পরিবারটি মুশকিলকে নিয়ে ঘুরতে বেরোত তামান্না পার্কে, ফ্যান্টাসি
কিংডমে বা চিড়িয়াখানায়। ভাবি আনসারক্যাম্প এসে মুশকিলের আধোয়া কাপড় এনে ধুয়ে
শুকিয়ে আবার এনে ফেরত দিয়ে যেতেন। আর খানকাতে গেলে মুশকিলের মাথা বা পাও টিপে
দিতেন। হ্যাঁ, পির-মুরিদের কালচারে এসব স্বাভাবিক,
তা তুমি নিশ্চয় জেনে থাকবে।
মাঝেমধ্যে ভাবির পা টেপার ধরন দেখলে অল্প বিব্রত সে হতো বৈ কী।
ভাবি কোনও একবার বলেছিলেনও- জিন্স এত শক্ত কেন, ভালমতে
টিপতে পারছেন না। মনে মনে অস্বাভাবিক মেনে বিব্রত হলেও মুশকিল এটিকে স্নেহ হিসেবেই
ব্যাখ্যা করে নিজেকে বোঝাল।
রাজীব :
ভারি বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে , তারপর…
ধ্রুব :
ভাই-ভাবির ছেলেটির নাম, আব্দুল্লাহ।
জানই তো আব্দুল্লার উপরে ধ্রুবের ভয়াবহ কামানুভূতি, সাধারণ
চুমু খেলেও মনে মনে কামানুভূতিই জাগ্রত হয়। আব্দুল্লাহ এক শিশু। কিন্তু পেটা শরীর।
বারবার ইচ্ছে করে আব্দুল্লাহর হিপে হাত দিয়ে খামচে ধরতে। রিকশায় বসে আব্দুল্লাহকে
কোলে নিতে বড় বেশি ভাল লাগে।
এই শিশু তিনটির প্রত্যেকে মুশকিল ফেরত চলে এলে ভীষণ মন খারাপ
করে। আব্দুল্লার ডাকটা যেন বেশিই, আবার কখন আসবেন মামা!
তাদের মাকে ভাবি ডাকলেও মুশকিলের সম্বোধন ছিল ছিল তাদের কাছে মামাই। আব্দুল্লাহকে
মুশকিল পিটুনিও দেয়, ভারি দুষ্টু। কিন্তু এডোরেবল,
আবার ভাল না বেসেও পারা যায় না। আব্দুল্লার সঙ্গে মুশকিল
সীমালঙ্ঘন করেনি। শুধু ওদ্দুরই। খুব একটা চুমুও নয়, নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ করতে জানে মুশকিল, সে তো আর পশু নয়।
একদিনের ঘটনা। সিভিল সার্ভিসের ভাইভা পরীক্ষা শেষ হল। ছুটি।
উড়ুক্কুভাব। খালার মনও গলল, মুশকিল পেল সেরাতে দম্পতির
বাসায় থাকবার অনুমতি।
ঐ ভাইটির কথা একটুখানি বলে নিই। তিনি অফিস সময়েও মুশকিলের খোঁজ
নেন। যা যা দরকার বা মুশকিলের পছন্দের কই আর ইলিশ বাজার করে আনেন প্রায়। নিজেদের
প্রেমের ইতিহাস কম শোনাননি। অতীতে একজন প্রেমিকা থেকে চিটিংয়ের শিকার হয়েছিলেন,
টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল মেয়েটি, তারপর এই
ভাবি তার জীবনে এসে জীবন গুছিয়ে দেন। এমন শত কথা। একদিন তো দম্পতিকে বেডরুমে
আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেছিল মুশকিল। কেউ খেয়াল করেনি যে, অনভিপ্রেত দর্শক জুটেছে।
সেই পরীক্ষা শেষের দিন, যেদিন খানকাতে
রাতে থাকবে মুশকিল, ইদের মত আনন্দ বাজে। রিল্যাক্স
মোমেন্ট যাকে বলে। ভাই বাসায় ফেরেননি। মুশকিল সন্ধ্যায় এসে পড়ল।
ভাবির ওড়না নেই, যা সচরাচর থাকে। কেমন
আলাদা দেখাতে থাকে। অযথা লিপস্টিক ঘষছেন মুশকিলের সামনেই। কালো স্যালোয়ার কামিজে
লাল লিপ্সটিক মিলে রঙটা মুশকিলের সয়নি। তবু তার মাথায় এসব স্বাভাবিক বলেই কাজ
করেছে। নেই, এখানে ভুল কিছুই তো নেই। এ তো হতেই পারে। সে
তো মুক্ত প্রগতিশীল মনের অধিকারী। সইবার ক্ষমতা আছে তার। আগে যদিও কখনও এমন
খোলামেলা হয়ে ভাবি সামনে আসেননি, তাতে কী। কিন্তু
লিপস্টিক মাখানো শেষ হলে ভাবি হঠাৎ বলে বসেন- ও আল্লাহ ভাইজানের সাথে তো কোলাকুলি
হইল না। মুশকিল সামান্য অপ্রস্তুত হল বটে, তবুও অস্বাভাবিক বলে কিছুতে মেনে নিতে ইচ্ছে হল না। ভাণ্ডারী ব্যাপার
স্যাপার, সবটায় গোঁড়ামি চলে না। পির ভাইকে আপন ভাইয়ের মতই
আদর করছেন ভাবি।
ভাবি কোলাকুলি নামে তার স্তন মুশকিলের বুকে স্পর্শ করে দিলেন।
এবার সত্যিই অসম্ভব বিব্রত হতে হয় মুশকিলকে। তবুও মুখে প্লাস সাইন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা
চালিয়ে গেল সে। অমন কিছু নয়, কুৎসিত কিছু নয়, ভেতর ভেতর জিকির চলেছে তার। ভাবি খানকার ব্যাপার বা মুরিদি ব্যাপারগুলো
এত ভক্তির সাথেই চর্চা করে চলেছিলেন যে অন্য কিছুই ধ্রুবের মাথায় আসতে চাইল না।
আসলেও লাপাত্তা।
এদিকে রাত। আব্দুল্লাহ আর মুশকিলকে একই বিছানায় শুতে দিয়ে
স্বামীস্ত্রী আর মেয়েদুটো নিজেদের বেডরুমে শুল। মুশকিলের ভেতর ঘড়ির কাঁটার মত
টিকটিক করে কাঁপছে। আব্দুল্লাকে নিয়ে অদম্য কাম সে কীভাবে সামলে নেবে ভেবে কূল
পাচ্ছে না।
রাজীব :
মুশকিলের প্রতি ভাবির আগ্রহ! আর ভাবির সন্তানের পরে মুশকিলের
দৃষ্টি … ঘোরতর ব্যাপার।
ধ্রুব :
রাতে ঘুমন্ত আব্দুল্লাহর হিপে বেশ কয়েকবার খামছে দিল মুশকিল।
এইটে ছাড়া বাকি সব ক্রিয়াকলাপ আর নিজের অদম্য কামকে দমন করে নিলে। হস্তমৈথুনেই
প্রবোধ দিলে মনকে। সকালে ঘুম ভাঙল। আব্দুল্লাহ এক পাশ শুয়ে। মুশকিল মোবাইলে
গুঁতোতে থাকে। ক্ষাণিক পরেই ভাবি বেরোলেন। “হালকা ঘুম ভাইঙা গেসে?”
বলেই মুশকিলের দিকে হেসে ফিরে গেলেন কিচেনে। বাকি সব্বাই ঘুমে।
মুশকিল, যাকে বড্ড কামাবেদনময়ী দেখাচ্ছে নিশ্চয়। গা আদুল,
লুঙ্গি। গায়ে নেই কাঁথা। ভাবি প্রাতরাশ তৈরিতে ব্যস্ত। সেখানটা
হতেই বুলেটগতিতে এসে হঠাৎ মশারির মধ্যে তার মুখটা প্রবেশ করালেন, শরীরও অর্ধেকটা। মুশকিল কিচ্ছুটি বুঝে ওঠার আগেই প্রায় ওর ঠোঁটের কাছে
চলে এলেন চুমুর ভাবগতিকে। ততক্ষণে সামলে নিয়ে চুমু দেবার আগেই ভাবির মুখটা জোরে
একদিকে সরিয়ে দিল মুশকিল। যেভাবে ধুমধাম মশারির ভেতর এসে পড়েন সেভাবেই ধুমধাম
বেরিয়ে গেলেন। মশা ঢুকে পড়লে চাপড় দিলে যেভাবে সুড়ুত করে উড়ে যায়, যন্ত্রের মতন। কিচেন একেবারে ধ্রুবের শোবার জায়গা থেকে দেখা দেখা
যাচ্ছিল। মহিলার রুটি বানানোর ছবি। স্বাভাবিক। রান্নায় মশগুল ভাবি। একটু পরে
বরাবররের মতই একটা অর্ধসেদ্ধ ডিম এনে দেন। মশারি তোলেন বরাবরের মতই। মুশকিল
স্বাভাবিকভাবে প্লেটে চামচ কেটে খেয়ে নিলে। যেন কোত্থাও কিচ্ছুটি হয়নি।
বল তো রাজীব, মুশকিল কোশা একজন সমকামী
নাকি একজন শিশুকামী? গবেষকেরা দুটো ওরিয়েন্টেশনকে এক মনে
করেন না।
রাজীব :
আপাতত মুশকিলকে পেডোফিল বলা চলে, যদিও
সে মিডিয়ার ঘটনায় সমকামিতায় বাধ্য হয়েছিল।
ধ্রুব :
ভাবির মুখ সরিয়ে দিলে কেন?
রাজীব :
একই সাথে মা আর সন্তানের প্রতি আকর্ষণ অমানবিক।
ধ্রুব :
আকর্ষন মানবিকতা অমানবিকতা বিচার করে আসে! এইটুকু ছেলের উপর
আকর্ষণের বাস্তবায়ন খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার বলেই সে বহু কষ্টে নিজেকে সংবরণ করেছে।
মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে গেলে ভাবির উপর আকর্ষণই অপেক্ষাকৃত মানবিক। তাই আকর্ষণ
যেহেতু মানবিকবোধ মেনে তৈরি হয়নি, সুতরাং সেই যুক্তি ধোপে
টিকবে না। অথবা তুমি বলতে পারতে, মুশকিল পারিবারিক
ঐতিহ্যে বলীয়ান হয়ে আর যার সাথেই হোক মুরিদের বউয়ের সাথে এসব করার কথা ভাবতেই
পারেনি। কিন্তু মুরিদের বাচ্চার সাথে? তা তো বাস্তবায়ন না
হলেও ভাবতে পেরেছে। বিন্দু পরিমাণ হলেও বাস্তবায়ন করেছে খামছে ধরে, হাতে লেপ্টে লেপ্টে। সে যা-ই হোক, পরেই একটি
কষ্টের কথা আছে এখানে।
দম্পতির ঘর থেকে সে বিদায় নিয়ে এল যথাসময়ে। তার পরেই সেই কষ্টের
ঘটনাটি ঘটে। প্রথমত ভাবির কামুক মুখ সরিয়ে দিলেও ধ্রুব খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিল।
এটা পাপ হলে আব্দুল্লার উপরে দৃষ্টি দিয়ে সে তো সমান পাপী। আব্দুল্লার উপর নিজের
সেই কুদৃষ্টি না দিলেও এই ভাবিকে মুশকিল ক্ষমা করে দিত। যৌনাকাঙ্ক্ষায় হিতাহিত
জ্ঞান হারালেও দ্রুত সামলে নেয়ার পর সেটা আর কোনও পাপ নয় বলে মুশকিল বিশ্বাস করে।
কিন্তু পরে ভাবি এমন একটি জঘন্য কীর্তি করে বসলেন যে কারণে তার উপর ঘৃণার উদ্রেক
হয়।
রাজীব :
মুশকিল কেন হাত সরিয়ে নিয়েছিলো তা খোলশা হয়েছে।
ধ্রুব :
খোলাশা মোটেও করিনি। সেই সম্ভাবনাটাও বাতিল করেছি, যে পারিবারিক কারণেও নয়। আরও একটু মনোযোগ দাও বুঝবে। ড্রপ ইট। কষ্টটা
কোথায় শোন।
রাজীব :
বলে যাও।
ধ্রুব :
কেন ঘৃণা করত হল ভাবিকে। সেটি চুমু চেয়েছেন বলে নয় তো মোটেও।
পিরঘরের শাহজাদা হলে কী হবে, সামাজিক ধ্যানজ্ঞান বহু আগেই
মুশকিলের মন থেকে হয়েছে ধুলিস্যাৎ। সেখানে মুরিদের বউয়ের দ্বারা পিরজাদার প্রতি
একটি ব্যর্থ চুম্বনের প্রয়াস কোনও ব্যাপারই নয় তার কাছে। সে তো এসব খুব কোমল মনে
বিচার করে অতি স্বাভাবিক বলে রায় দেবার ন্যূনতম বিবেক পোষণ করে। তবে? তবু কেন ঘৃণা করতে হল এই মহিলাকে?
রাজীব :
চুপ করে শুনতে বলেছ, শুনছি। আপাতত
প্রশ্ন করব না।
ধ্রুব :
ভাবি পরে বেশ কখানা ফোন লাগালেন, সাইলেন্ট
ছিল বলে মুশকিলের নজরে পড়েনি। যখন রিসিভ হল, ভাবি কাকুতি
করে যাচ্ছেন- ভাইজান কি রাগ করেছেন? মুশকিল বিনয়ের সাথে
জানাল- না, না, না।
তিনি বললেন, বাজান, যিনি ধ্রুবের বাবা পীরসাহেবই বাজান, কতগুলো
বস্তু চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে বলেছেন, সে কারণে খানকাতে
আবার যেতে হবে মুশকিলকে। সরল মনে বাজানকে সত্য কিনা জিজ্ঞেস করার কথা মুশকিলের
মাথায় এলো না। জবাব দিলে, আচ্ছা ভাবি, আসব।
পরীক্ষা শেষ। দেড় বছরের এতেকাফ সাধনা চুকিয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে
যাচ্ছে মুশকিল কোশা। ফিরে যাওয়ার আগেই ভাবিকে কল করেছিল, ঐ
বস্তুগুলো নিতে সে আসবে খানকায়, এটুকু জানাতে। ভাবি তখন
“আপ্নে কে? এটা ভুল নম্বরে ফোন দেসেন।” কেমন
বিশ্রী ঝগড়াটে মহিলার মত কণ্ঠে আগে থেকে রেকর্ড করে রেখেছেন এমন মোডে গলা বাজিয়ে
গেলেন। চুমু আখ্যানে ধ্রুবের মনে নিন্দা গায়নি। কিন্তু এই ব্যবহার তাকে খুব কষ্ট দিয়ে
গেল। পরে ভাবির বর খোঁজ খবর নেবার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে শতবার ডায়াল করেছেন,
হাজারটা মেসেজ দিয়েছেন আন্তরিকভাবে, করুণভাবে।
তবু বিরক্ত হয়ে ব্লকলিস্টে ফেলতে হল ভাইয়ের নম্বর।। ইমো খোলার পর ভাই ইমোতেও
বিরক্ত করা শুরু করেছিলেন। ব্লক করতে হল সেই নম্বরও। ভাইয়ের ভালবাসায় আর ভাবির
ভালবাসার নিগূঢ় বক্তব্য এক নয়। কিন্তু আপাতত ঐ পরিবারই হল একটা ঘৃণার নাম,
শুধু ভাবির জন্যে। ভাবির জন্যে নয়, ধ্রুবের
মানবিক আধুনিক আর বিশাল মনের উদারতায় সুযোগ পেয়েও ঐ মহিলা নিজেকে ঠাঁই করে নিতে
পারলে না, না চেনার অভিনয়ই করতে হল তাকে? শুধু সেই কারণেই। আব্দুল্লাহকে যদিও ভুলতে পারবে না ধ্রুব। ভাই প্রচুর
মেসেজ দিয়ে যেতেন, শাহজাদা কোনও কারণে মনে কষ্ট নিয়েছে
কিনা। মাফ করে দেন যেন। যদিও তিনি এসবের কিছুই জানেন না, কোনওদিন
জানবেনই না। তার স্ত্রী তার চোখে পবিত্র থাকুন সেই পুরনো প্রেমিকার ক্ষত ভুলিয়ে
দেয়া মহিয়সী স্ত্রী হয়ে থাকুন, এটুকু বাড়াভাতে ছাই না
পড়ুক।
ওহ তোমার জানা উচিত, তানিয়া আর ফাতেমাও
শিশু, এদের দিকে কখনও কুদৃষ্টি পড়েনি মুশকিলের। ওরা যে
নারী!
রাজীব :
তুমি শেষ কর গল্প।
ধ্রুব :
সবই শেষ। মনে হয়। মুশকিলককে আমাদের আর কোনও প্রয়োজন নেই। এবার রাজীবকে
জানতে হবে যে?
রাজীব :
রাজিব অতি সাধারণ । ধ্রুব যেভাবে জানতে চায় তাতে দ্বিধা করবে না
। ধ্রুব চাইলে রাজীব রং মাখাতে বা খোলশের আশ্রয় নিতে পারে।
ধ্রুব :
ধ্রুব বলেছিল কী চায়।
রাজীব :
যদি আমি বুঝে থাকি তাহলে রাজিব হবে বাস্তব আর কল্পনায় মেশানো এক
মানব যার কাছে বাস্তব আর কল্পনার অনুপাত খুঁজে যেন ধ্রুব কল্পনাকেই অনুপাতে হেলিয়ে
না দেয় বা বাস্তবতাকে চিরন্তন ধরে না নেয়।
ধ্রুব :
আর ভূমিকা করতে হবে না। রাজীব একটি আখ্যান শোনাবে যেখানে রাজীবের
অতীত জীবনের প্রেমিক জীবন্তভাবে হাজির হবে। মুশকিল কোশার ছদ্মপরিচয়ে তুমি যেভাবে
আদতে এই আমাকেই জেনেছ, যা আমি স্বেচ্ছায় আলাদা করতে
চাইলেও তুমি আমি ভালই জানি দুই ধ্রুব একজনই।
রাজীব :
মনে হচ্ছে একরকম জোর করেই তুমি মুশকিল কোশাকে সরিয়ে দিচ্ছ। তার
হয়তো আরও কিছু বলবার ছিলো । যদি আর কিছু বলার নাই থাকে তাহলে আমি কি তাকে একেবারেই
অপ্রাসঙ্গিক বলব? কী করে বলি ? অপ্রাসঙ্গিক
হলে এত যত্ন, এত সময় নিয়ে তো তুমি তাকে আনতে না।
ধ্রুব :
এই কাঁচা গল্পগুলোতে যেদিন শান দিয়ে তোমার সামনে হাজির করব সেদিন
নাহয় প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক বিচার কোর।
আর শেষের কথাতে এটুকু তো জানলে আমিই মুশকিল কোশা। এর বেশি প্রাসঙ্গিক
আর কী হতে পারে?
______________________________________________________________________________
পর্ব ৬
_______________________________________
৭/৮/২০১৯, সকাল ১০:২৯টা
রাজীব :
রাজীব নিজেকে পুঁজি করে কতখানি কথা ফাঁদতে পারে? নিশ্চিত নই। মনে হয় না খুব বেশিদূর যাবে। কিন্তু কাছে থেকে দেখা একটা
জীবনের কিয়দংশ তোমায় শোনাতে পারি। এইখানে রাজীব তার ভেতরের মানুষটিকে ঐ জীবনের
ভেতর খুঁজে পেয়েছে;
বড় নামটি ভেঙেচুড়ে সবাই যাকে জিতু বলেই ডাকে। জীবনে কোনও কিছুতেই
জয়ের ছিটেফোঁটা না থাকলেও অতি আদরে বড় হয়েছে জিতু। রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে জন্ম
হলেও চারপাশে মুসলিম প্রতিবেশীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিচরণ করেছিল বলে কখনও দুই
ধর্মের লোকের চরিত্রে কেমন আলাদা সে কথা জিতু ঠাহর করতে পারেনি ।
কিন্তু ছেলেবেলা থেকে কড়া নজরদারিতে বেড়ে ওঠার ফলে ঘটমান বহু
চলচ্চিত্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যথাসময়ে নিজের নজরে নিতে পারেনি। যেমন, দেহসৌষ্ঠব, উজ্জল গাত্ররংয়ের ফলে স্কুলজীবনে
নানা আত্মীয়-অনাত্মীয়ের চুম্বনের পাত্র হয়েছিল সে।
ধ্রুব :
রাজিব নিজেকে নিয়ে তেমন কিছু বলতে পারবে না, এ কেমন কথা? রাজীবকে কৃপণ হলে চলবে কেন! যদি
হাল ছেড়ে দেয় তবে আর জোর খাটানো যায় না।
আশা করছি, সেসব চুম্বনের এক একটি দাগ
অতীত থেকে তুলে দেখাবে তুমি। আরও গুরুত্ববহ কিছু থেকে যদি থাকে তবে অবশ্য আগেই
জানিয়ে রেখো।
রাজীব :
জিতুর বয়স কম ছিল বটে, কিন্তু শরীরে
যৌবন আসতে সময় লাগেনি । সপ্তম শ্রেণিতেই দুজন নারী প্রতিবেশী তার কামনার বস্তু
ছিল। দিনরাত গোপনাঙ্গের এমন নিপীড়ন সে সইতে পারত না। আর যুবকেরা তাকে জড়িয়ে ধরে,
চুমিয়ে দিত, এসব সে সাবলীল সোহাগের
খাতায় ফেলত বা কিশোরের সরল মনে যার হিসেব বোঝা দায়। কজন গ্রাম্য যুবকের মনোযোগের
আধিক্য সে তার সুন্দরী বোনদের প্রতি মনোযোগ নেয়ারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ভেবে
দেখে, একটা অহঙ্কার নিয়ে দূরে থাকতে চায়। একবার দূরদেশের
অপরিচিত এক অতিথি নির্জনে তাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটেমুখে দীর্ঘ একটি চুম্বন এঁকে
দিয়েছিল, তখন সে ঐ লোকটির শক্ত গোপনাঙ্গ অনুভব করে।
সেদিনের পরেই একটা ভয় এবং পাপবোধ তাকে কুঁড়ে খায়। তবু পুরুষদের কাউকে কাউকে দেখবার
একটা অনুভুতি তার ভেতর কাজ করতে থাকে, দেখবার অভ্যাস
সৃষ্টি হয়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সময় নারীদের প্রতি তার যৌনাকাঙ্ক্ষা নেতিয়ে যায়।
এই মনোভাবকে পাপ এবং অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে পরিত্রাণের আশায় দেবীর কাছে সে
কঠিন প্রার্থনা করেছিল দিনের পর দিন । কিন্তু লাগামছাড়া হৃদয় যেন তাকে প্রকৃতপক্ষে
পুরুষেরই সৌন্দর্যের পূজারীতে পরিণত করে। হ্যাঁ, সুযোগে
একাধিক সমবয়েসী আত্মীয় বা পড়শির সাথে শারীরিক স্পর্শের আনন্দ উপভোগে সক্ষম হলেও
পরিপূর্ণ মিলন বলতে যা বোঝায় সেই অবধি ঘটনা প্রলম্বিত হয়নি। আবার চিরাচরিত সেই
পাপবোধের আড়ষ্টতা তাকে পিছে টেনে আনত।
রাজীব :
আমাকে দুটি বিষয় খোলাসা কর, রাজীব।
প্রথমত, নারীর প্রতি তোমার কোনও কালে যৌনানুভূতি কাজ
করেছে, তা পরে বদলে গেছে, তা কী
করে হয়? এমন কথা তো আমি কক্ষনও শুনিনি।
দ্বিতীয়ত, কয়েকটি অল্পবয়েসী পুরুষ তোমার
উপর আকৃষ্ট হয়ে যৌনানন্দ দিয়েছে। এসব নিয়ে আমাকে কম করে হলেও একটি বিস্তারিত
এপিসোড শোনাতে হবে।
৭/৮/২০১৯, দুপুর ১২:৪৭টা
রাজীব :
এখানে শুধুই জিতুর কথা হচ্ছে। কিন্তু রাজীবের জীবনে জিতুর কোনওটা
বেশি, কোনওটা কম মিলবে, তা তুমি
মনে রেখো। জিতুর বয়স যখন এগারো-বার তার প্রতিবেশী দুই জ্যেষ্ঠ নারীর কারণে দ্রুত
যৌনানুভূতি বুঝতে শিখেছিল, সেটি হয়ত প্রচ্ছন্ন অনুভূতি।
দশম শ্রেণিতে পা দিতেই পুরুষ তার সাইকোলজিতে গেঁড়ে বসে। নিজের ভেতর শত যুদ্ধ আর
কান্নায় মুষড়ে পড়ার ইতিহাসের সে এক একা যাত্রী। কেন সে এরকম, এই কথা কারও সাথেই আলোচনা করা যায়নি কখনো। একালের মত প্রুযুক্তি থাকলে
হয়তো ঘটনা যেত বদলে। এ থেকেই নিজেকে আলাদা ভাবতে শুরু করে ভীষণ একাকিত্বে নিজেকে
নিয়ে চলতে শুরু করা, যে কারণে পরবর্তী জীবনেও নিঃসঙ্গতা
তার স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ে।
এপিসোড হবে কিনা জানি না, প্রবাহ থেকে
যেটুকু পার বুঝে নাও। কিছু বেশিবয়সী পুরুষ যেভাবে জিতুর শরীরে দৃষ্টি নিবদ্ধ
করেছিল, এভাবেই অল্পবয়েসীরা আকৃষ্ট হয় তার। তার দূর
সম্পর্কের এক ভাইপোর টানে কালেভদ্রে শহরে ছুটে যেত, তা
বটে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সঙ্গমে ধাবিত হয়নি।
ধ্রুব :
এই যে এখানে একজন আছে, বললে কেন জিতু
একা!
রাজীব :
ভাইপো উভকামী, নারীবন্দনাও গাইতে জানে
ভাল মতেই। এখন তো ভাইপোটি ব্যাঙ্কার। কদিন আগেই সংসার পেতেছে। আর আমার জিতুর ভেতর
পুরোটাই কি কাম? তার এক নিশ্চিন্ত নির্ভরতার প্রয়োজন,
শুধু সান্ত্বনা নয়। এছাড়া সংস্কার, পাপবোধের
পিছুটান যে নিঃসঙ্গতায় ডুবিয়ে দেয় তা তো যৌনসঙ্গী নিয়েই ধুয়ে মুছে যাবে না।
হ্যাঁ, বিভিন্ন মানুষের সাথেই তার দৈহিক
মিলনের ঘটনা ঘটেছে পরে। এমনকী পড়শি চাচাদের সাথেও। কিন্তু রাত পেরিয়ে দিবালয়ে সে
কিছুতেই ঐ লোকেদের সামনে নিজের আদল তুলে ধরতে পারত না, কোনওভাবেই
স্বাভাবিক আচরণ করতে পারত না।
সেই ভাইপোটির আপন চাচার সাথেই এক রাতের পরিস্থিতিতে জিতুর খাট
পড়ে। প্রথম থেকেই ক্ষাণিক অস্বস্তিতে থেকেই ঘুমিয়ে পড়লেও মাঝরতে নিজেকে সে ঐ লোকের
বুকের খোপে আবিষ্কার করেছিল। শরীর সপেই দিয়েছিল সে। ঐ লোক প্রচণ্ড কামাতুর,
অনেকখানি জোর করেই জিতুকে সম্ভোগ করে নেয়। সে রাতেই প্রথম- জিতু
রক্তাক্ত হয়। প্রায় সপ্তাহখানেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রথম
বর্ষেই এই লোক আরও দু দুটি বার সঙ্গমের পরিপূর্ণ রূপ উম্মোচিত করেছিল জিতুর সামনে
।
ধ্রুব :
জিতুর চারপাশে সমকামের এত ইভেন্ট। শুনলে কে বলবে এই জিনিসটা
সমাজের অপাংক্তেয়।
রাজীব :
রাতের চোর দিনের মুসল্লি মান তো!
ধ্রুব :
যৌনমিলন যদিও ঠিক চুরি নয়, কিন্তু একে
অস্বীকার করে সাধুর বেশ ধরা মানুষগুলো চোর বটে।
রাজীব :
যদি প্রথম প্রেমের নাম নিতে হয়, সেটি
ইসহাক মৌলভীর ব্যাটা। বুলবুল। যাকে ভালবাসার কথা মুখ ফুটে বলতেই পারেনি জিতু।
বুলবুল গ্রামের পাট চুকিয়ে মুসলিম হাইস্কুলে পড়তে শহরেই চলে এল, সাথে করে জিতুর মন ডাকাত করে নিয়ে এল। প্রযুক্তিহীন সেই সময়ে ছোট্ট
জিতুর পক্ষে বুলবুলকে খুঁজে নেয়া সম্ভব ছিল না। অনেকদিন পরেই খুঁজে পায়, তখন জিতু পড়ে কলেজে। আর বুলবুল- চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দ্বিতীয়
বর্ষে।
ধ্রুব :
এটুকুতেই প্রেমিক বলা চলে? বুলবুল তো
মনের একটি সুপ্ত আশা মাত্র।
রাজীব :
জিতুর চোখে বুলবুলই সবচাইতে সুন্দর পুরুষ ।
বুলবুল বাকপতি, আর মেধায় , চলনেবলনে, রুচিতে অনন্য।
কলেজ শেষে জিতু যখন ফিরত, প্রায় একই সময়
বুলবুল ফিরত বিশ্ববিদ্যালয় শেষে। দেখা হত, কিন্তু কোনও
কথা নেই। পাশাপাশি বা পেছনে হেঁটেই বুলবুলের রাস্তা ধরাতেই জিতুর শান্তি। পরে একটা
সময় সে জানতে পেরেছিল, আসলে বুলবুল তাকে দেখত বটে,
কিন্তু চিনতে পারেনি। জিতুর মনে একটাই আরাধনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, এমন
হলেই বুলবুলের সাথে হৃদ্যতার একটা সুযোগ পাবে, দেখার
সুযোগ পাবে।
৭/৮/২০১৯, দুপুর ২:৪৪টা
রাজীব :
ধ্রুব এখানে প্রচুর ঝড়বৃষ্টি আর জল। ক্ষাণিক আগে ফিরলাম।
বৃষ্টিতে ছন্নছাড়া। আসবে কাল? যদি কালও অমন ঝড় হয়?
তুমি যদি বল আসবে, তবে যতই তুফান হোক,
যেখানেই বল আমি আসব। বাকি সিদ্ধান্ত তোমার। দেখাটা করলে খুব ভাল হয়।
আমার তো বেশ ভালই লাগে ভেজা এই আবহাওয়া।
ধ্রুব :
খুব সকালে বেরোতে পারি। ধর দশটায় দেখা হলে আড়াইটা বা তিনটে
পর্যন্ত সময় একসাথে পাব। সাড়ে তিনটায় গ্রুপের স্টাডির সময় ঠিক করা।
বৃষ্টি আমার কাছে খুব সমস্যা মনে হয় না। যদি না রাস্তায় পানি জমে
গাড়িঘোড়া বন্ধ হয়ে যায়।
রাজীব :
এটাই তো স্পিরিট।
ধ্রুব :
শোন, বুলবুলের সম্বন্ধে আমি যা জানতে
চেয়েছিলাম তা হল, ওর মাঝে সমপ্রেমের কোনও লক্ষণ জিতু টের
পেয়েছে কি? কী ঘটনা জিতুকে আশাবাদী করেছে, যে বুলবুল প্রেমে পড়তে পারে? যেখানে আশা নেই
সেখানে প্রেমে পড়াকে প্রেম ধরলে প্রেমিকের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলবে।
রাজীব :
বুলবুলের ভেতরের কিছু তো লক্ষ্য করার ফুরসত জিতু পায়নি। জিতু
ভীতু, আবেগপ্রবণ। প্রত্যাখ্যাত হওয়া জিতুর কাছে চরম
অপমানের। এই জন্য বাকি জীবনে জিতু কাউকেই বীরের মত বলতে পারেনি, ভালবাসি। জিতু সবসময় একজন পরিপূর্ণ পুরুষকে চেয়েছে যে চলনে, মেধা আর মননে তার পছন্দসই । বুলবুলের মাঝে কৈশোরেই সে তার পছন্দের
পুরুষকে দেখতে পায়, বুলবুল আকর্ষণীয় রূপশ্রী, যদিও জিতু সবসময় বুলবুলের গুণগুলিকে প্রাধান্য দিয়ে স্বপ্নে ভেসেছে।
ধ্রুব :
রূপ আর গুণে মেস করে ফেলছ। আর দূরের মানুষকে পরিপূর্ণই মনে হয়।
আচ্ছা বাদ দাও। তুমি বলে যাও।
রাজীব :
সবকিছু তোমার বিশ্বাস হবে না আমি মানছি। তাও বলি।
এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে জিতু পড়ছে। বুলবুলকে
সে সময়ে সময়ে দেখতে পেত বটে, কিন্তু ডিপার্টমেন্ট আলাদা,
নিয়মিত দেখা হওয়াটা যে ঠিক এভাবে সম্ভব নয়, সেই কলেজে পড়ার সময় মনে মনে সুদূরকল্পনা করে নেয়া বিলাসিতা, তা সে বুঝতে পারেনি। হ্যাঁ, অল্পবিস্তর কথা যা
হয়েছিল তা জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠের মতন। জিতুর তাতেই শান্তি। আরাধ্যজনের সাথে দুটো হাই
হ্যালোর গল্প, তাও সে তো করতে পারছে।
এই বছরই কোন এক উৎসব। সম্ভবত বুলবুলের বিভাগের। জিতু শুধু বুলবুলকে
গভীরভাবে দেখতেই সেই আবর্তনে যায়। এই প্রথম জিতু বুকভাঙা কষ্ট পেল, বুলবুলকে সে ঘনিষ্ঠভাবে আবিষ্কার করে এক নারীর সাথে, ঘনিষ্ঠ ছবি তুলতে ব্যস্ত বুলবুল। জিতু এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে কষ্টে
সরে পড়েছিল।
ধ্রুব :
একটা মনোভাব চেপে রাখতে পারছি না। বলি?
রাজীব :
বিদ্রুপ?
ধ্রুব :
ঘটনা জিতুর যদি সত্যি হয় তবে এর একটা মূল্য আছে। কিন্তু যদি
ফেঁদে থাক, আমাকে হাসিয়েছ তুমি। এরচেয়ে নিজের স্পষ্ট
অতীতকেই কেন যে লিখলে না!
রাজীব :
পঞ্চাশ পঞ্চাশ সম্ভাবনা তুমি নিজেই হিসেব করেছ, এটুকুই যথেষ্ট। তাই আমি নতুন যুক্তি শোনাব না।
জিতু মনে মনে প্রার্থনা করেছিল, যেন
বুলবুলের সাথে আর দেখা না হয় । এরপরও কারণ-অকারণ মিলে দেখা হয়েছিল, জিতু বলেনি কোনও কথা। যেদিন বুলবুলের দেখা পেত, বিষাদে জিতুর মন হত ভারাক্রান্ত।
বর্তমানের কথা বললে বুলবুল এখন হবে বেশ প্রবীণ। প্রৌঢ়।
ধ্রুব :
জিতুর কাছে বুলবুলের ছবি আছে?
রাজীব :
ছবি নেই । জিতু আর বুলবুলের বাড়ি দেড় কিলোমিটারের দূরত্বে ।
কিন্তু কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে! জিতু চায় না তার যৌবনের প্রেম
প্রৌঢ়ের কাছে বলি দিতে । জিতুর জীবনে বুলবুল সেই স্বপ্নের পুরুষ হয়েই থাকুক না।
ধ্রুব :
এ যে দেহেরই গুণ সর্বত্র। যাক সে তর্কে যাব না। আমায় বল- জিতু
কখনও বুলবুলকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করেনি? ফেসবুক,
টুইটার বা ইন্সটাগ্রাম?
রাজীব :
জিতুকে কখনও প্রশ্ন করা হয়নি এই বিষয়ে । প্রয়োজনই নেই, সেই তথ্যটি আগের উত্তরেই তোমার বুঝতে পারার কথা।
জিতুর জীবনে আর একজন মানুষ এসেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের
একেবারে শেষের দিকে । বলতে গেলে জিতুকে বদলে ফেলেছিল যে লোকটি। তিন তিনটি বছর জিতু
স্বাভাবিক প্রাণী ছিল না। এই ঘটনার বূহ্য ভেদ করে আসতে অনেক সময় গড়িয়েছে তার। যে
লোকটির জন্য জিতু তার সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারে, মানুষটি
এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশের বাইরে শান্তিতে আছে। জিতুর ফেইসবুকে আছে সে । জিতু
বারবার বার্তা দিলেও সে পক্ষের অনাগ্রহের ফলে এখন যোগাযোগই নেই । মানুষটির গল্প
অন্য এক সময় শোনাব তোমায়। যদি জিতুকে অন্য কোন জনম বেছে নিতে বলে তবে জিতু সেই
মানুষটিকে শতবার চেয়ে নেবে ঈশ্বরের কাছে ।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৭
_______________________________________
৭/৮/২০১৯, বিকেল ৫.০০টা
রাজীব :
ধ্রুব, খুব ইচ্ছে ছিল প্রিয়জন আর আমি
প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখব। ছোটখাটো এই না পাওয়া আমাকে পীড়া দেয়।
একবার এক আদরের ধনকে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছিলাম, গায়ে সুগন্ধ সাবান মেখে স্নান করিয়ে দিয়েছিলাম, ভেজা চুল- পরম মমতাময় আঁচড়ে দিয়েছিলাম। মাথার চুলে বিলুনি কেটে ঘুম
পাড়িয়ে কপালে চুমু একে কখন যে নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই!
ধ্রুব :
এটা স্বপ্নে?
রাজীব :
হয়ত!
কেউ আসবে হয়ত বাস্তবে, জন্ম জন্মান্তরের
অপেক্ষার পর। এক জন্মে নাকি সব পাওয়া যায় না, পাওয়া উচিতও
নয়।
ধ্রুব :
রাজীব, তুমি বিয়ে কেন করেছ?
রাজীব :
বিয়ে… এর অর্থ কী?
ধ্রুব :
সাধারণ লোকে যা বোঝে!
রাজীব :
যদি সন্তান উৎপাদনের সামাজিক স্বীকৃতিকে বিয়ে বল তাহলে আমার বিয়ে
হয়েছে। যদি- হৃদয়ং তব, তদস্থং হৃদয়ং মম এটাই বোঝাতে চাও
তাহলে হয়নি। আমি সঁপিতে চাহি প্রাণ, মন, দেহ… কোথায় পাব তারে!
ধ্রুবকে আজও জানা হল না।
ধ্রুব :
মুশকিল কোশা সম্পর্কে তুমি যেটুকু জান, সেখানে
এর উত্তর যদি না খুঁজে না পাও, তাহলে দুঃখ করা ছাড়া উপায়
কী!
রাজীব :
বিয়ে নিয়ে ভাবছ, কবে নাগাদ এই শুভ কাজটি
সমাধা করবে?
ধ্রুব :
বেকারের কীসের বিয়ে, এই যুক্তিতে
সামাজিক বিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছি বলতে পার। মানুষকে এটুকু শোনাতে পারি যে, আমি এখনও বেকার। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের নন ক্যাডারের অপেক্ষমান
তালিকায় থেকেও শেষ পর্যন্ত আমার চাকরি জোটে না কপালে। মা-বাবা বেঁচেবর্তে আছেন,
ফ্রি খেয়ে-পরে এত্ত কুঁড়ে হয়েছি যে অন্য কোথাও চেষ্টার বালাই
নেই।
এসব মনোটোনাস! ভাল লাগবে না শুনে।
রাজীব :
আমার বিয়ে নিয়ে তোমার প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছো?
ধ্রুব :
তোমার স্ত্রী এবং তুমি দুজনেই শিকার এটুকু আমি বেশ বুঝতে পারি।
তোমার স্বপ্নে বিয়ে নিয়ে নিশ্চয় বহু ফ্যান্টাসি কাজ করে। শুনতে
ইচ্ছে করছে।
রাজীব :
বিয়ে করলে জানিও। আশেপাশেই লালিতপালিত হচ্ছে ভগ্নিতুল্য কেউ,
রুপে গুনে অনন্য। সন্মতি দিলে ঘটকালি করতে পারি।
ধ্রুব :
রসিকতা না করলে হত না? আমি কী জানতে
চেয়েছি?
রাজীব :
আমি তোমার বিয়ে নিয়ে রসিকতা করব? কী যে
বল! আমি ভাবছি তোমার বিয়েতে কদিনের ছুটি নেব। একটা পোশাকও ঠিক করে রেখেছি।
ধ্রুব :
সেটা তুমি ঠিকই করেছ। কিন্তু ঘটক তোমায় হতে হবে না বলে ভারি কষ্ট
হয়। পাত্র বা পাত্রী যে নামেই বল, ঠিক করা আছে।
রাজীব :
হতাশ করলে। আশা ছিলো তোমায় না পেলেও তোমার ঘটকালিটা অন্তত আমার
কপালে আছে।
ধ্রুব :
সমবেদনা জানাচ্ছি তোমায়।
রাজীব :
চোখ টিপ্পনী সমবেদনা!
আচ্ছা, তোমায় আর ক্ষেপাব না।
কিন্তু কারও সাথে সত্যিকারের সাতপাকে বাধা পড়তে ইচ্ছে করে। হাতে
হাত রেখে , চোখে চোখ রেখে সেই মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে
ইচ্ছে করে।
ধ্রুব :
সত্যিকারের সাতপাকে বাঁধা বুঝিয়ে বল না। মুসলিম ঘরে জন্মেছি। অত
বুঝি না বাপু।
রাজীব :
তবে তো কারও বিয়েতে তোমার উপস্থিত থাকা লাগে। না হলে এই নিয়মেই
তোমার বিয়ে দেব।
ধ্রুব :
বয়েই গেছে।
সাত পাকে বাঁধা পড়লেই লেটা চুকে গেল? যদি
সন্তান উৎপাদনের সামাজিক স্বীকৃতিকে বিয়ে বল তাহলে তোমার বিয়ে হয়েছে। এইখানে তো
সেই একই সাতপাকে বাঁধা পড়েছ। ‘সত্যিকার’ শব্দটি নিয়ে আমার যত কৌতূহল। সাতপাক ধরেই তুমি উত্তর দিলে এ কারণে
হিঁদু রীতির প্রসঙ্গ এসেছিল। নয়তো কিচ্ছুটি আগ্রহ নেই জানার। বড্ড সময়ক্ষেপণ মনে
হয় এই রীতি। সত্যিকার বিয়ের স্বাদ এর মধ্য দিয়েই তুমি কীভাবে খুঁজে পেলে সেইখানটায়
আমার কৌতূহল।
রাজীব :
যার সাথে মনেপ্রাণে বাঁধা পড়তে চাই তা কি পেরেছি? রীতিনীতি তো কতোই মানতে হয়, সেখানে যদি মন আর
ইচ্ছের প্রতিফলন না ঘটে তাহলে তা শুধু সময়ক্ষেপনই বটে। যখন প্রতিফলন ঘটে তখন নিয়ম
আর সংস্কার না থাকলেও খুঁজে নিয়ে শত নিয়মে বাঁধা পড়তে ইচ্ছে করে ।
রাজীব :
বিয়ের দিন ছাড়াও বিয়ের আরও কথা আছে, আরও
দিন আছে। ওসব ফ্যান্টাসি?
রাজীব :
বুঝিয়ে বল সহজ কথায়। রাজীব মেধাশুন্য ! কঠিন কিছু শুনলে মাথার
ব্যামো হয়।
ধ্রুব :
আমার ভালবাসার নাম পিংকি। নারী মনে করে চোখ কপালে তুলো না দেখো।
পিংকি আমার আদরে দেয়া নাম, তোমাদের ভাষায় সাতপাকে বাঁধা
আর আমাদের ভাষায় কবুল এখনও হয়নি। কিন্তু বাগদত্তা মনে কোর। অবশ্য কপালে না সইলে
পিংকির স্থানে রিংকিও আসন গড়তে পারে, ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি
কোনও মন্তব্য করতে চাইনে।
আমার স্বপ্ন। পিংকি ইউটুব ঘেটে আমার পছন্দের কাঁচা মরিচের
পেস্টের সস সবজি-চিংড়ি-কুচি নুডলসে ঢেলে দিচ্ছে, সর্ষে
বাটার ইলিশ, আর রাজহাঁসের ক্রিসপি লেগ, ক্যাপসিকাম গাজরের সালাদ বানাচ্ছে। আমি ওকে সাহায্য করতে গিয়ে ভুল করে
ফেলছি, আবার ভুলে আমার আঙুল কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
ফার্স্ট এইড দেয়ার আগেই ঐ রক্ত পিংকি ঠোঁটের ভেজা স্পর্শে মুছে গেছে। টোনাটুনির
সংসার বোঝ তো। আমি কাজে বেরুলে, অথবা ধর না সে কাজে
বেরুলে কপালে একটি সুদীর্ঘ আশীর্বাদচুম্বন লেপ্টে দিতে পারি। পিংকির হিপ দারুণ
পছন্দ আমার। শোবার ঘরে ওর হিপ নিয়ে খেলতে পারি আমি। ল্যাপটপে ক্লাসিক দেখানোর সময়ে
আমি ইন্টারপ্রেটারের ভূমিকা নেবার ফলে সেও মজা পেয়ে শেষ না করে উঠতে চায় না।
শিল্পকলার মিলনায়তনে সেদিন ‘ফাগুন
হাওয়ায়’ চলছিল। একসঙ্গে আছি। রা-টি করেনি, জান! সবটুকু এনজয় করেছে। এমন আরও কত। তুমি নিশ্চয় আন্দাজ করতে পার। তোমার
ফ্যান্টাসি আমার চেয়েও উঁচুদরের হবে মনে হচ্ছে। এ জন্যই আমার ভারি কৌতূহল। নতুন
শিল্পকর্ম শিখতেও পারব বৈ কী মনে ধরলে। ভালবাসা হল আর্ট, জানতো!
রাজীব :
ধ্রুব, আমার জীবনে কেউ তেমন নেই আর
ফ্যান্টাসির কখনো কোনও সীমা থাকে না, হাতেগোণা ছবিতে আটকে
পড়ে না। তবুও বলি, প্রতিদিন তার ঘুম আমার চুমুতে ভাঙবে।
এমন ধারাবাহিক কোনও কথা নেই যদিও, মাঝে সেও স্নানের পরে
আমায় জাগাতে আসলে জড়িয়ে তার ভেজা চুলের ঘ্রান নিতে ইচ্ছে করে। রিক্সায় পাশাপাশি
বসে আইস্ক্রিম তার মুখে লেপ্টে দিয়ে তাতে নিজের জিভ ঠেকাতে ইচ্ছে হয়। ঠোঁটের প্রতি
তীব্র আকর্ষণ আমার, এই ঠোঁট মুখে নিয়ে অমৃতস্বাদ পেতে
ইচ্ছে হয়। তাকে গোলাপজলে স্নান করিয়ে পরিপাটি সাজে রাঙাতে ইচ্ছে হয়। সে ঘুম ভাঙিয়ে
আমায় খাইয়ে দিক, ঘুমের চোখে খেতে খেতে তার বকুনির স্বাদের
তো কোনও তুলনা হয় না। প্রতিদিনেই সে চুল আঁচড়ে দেয় আমায়। আমি রাঁধি, সে পেছন জড়িয়ে ধরে আপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়, একটা
চুমুর বিনিময়ে সাজা মওকুফ করি তার। মাঝরাতে বুকে চেপে নাকে নাক লাগিয়ে রাখি,
যাতে তার নিশ্বাসের স্পর্শ নিতে পারি।
ধ্রুব :
ফ্যান্টাসিতে তোমাদের কোনও সন্তান হবে না?
রাজীব :
দত্তক আমার পছন্দ নয়। যদি আমি আর সে মিলে কোন সন্তান নিতে পারি
তবে সে হবে আমার কাছে পরম পাওয়া। এ কল্পনার যেহেতু কোনও আশা নেই, সেহেতু আমার কাছে তা আপেক্ষিক। তুমি কী চাও?
ধ্রুব :
‘জন্মমৃত্যু জীবন যাপন’ এই কবিতাখানা
গুগল থেকে আমায় খুঁজে দাও। আমি উত্তর দিচ্ছি। তোমায় খুঁজতে বলার কারণ আমার ঘরে
বিদ্যুৎ নেই। সারাদিন খুব বৃষ্টি। বৃষ্টি আর লোডশেডিং মানিকজোড়।
রাজীব :
পেয়েছি। শুধু একটি শব্দ এসেছে।
ধ্রুব :
কিছু একটা গোলমাল করেছ। আধটু চেষ্টা কর। আচ্ছা যাও। আমি মুখস্থ
থেকে যেটুক পারি শোনাচ্ছি তোমায়।
“আমাদের জীবনের অর্ধেক তো আমরা সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে
শেষ করে দিলাম, সুধীবৃন্দ, তবুও
জীবনে কয়বার বলুন তো আমরা আমাদের কাছে বলতে পেরেছি, ভাল
আছি, খুব ভাল আছি?”
আবুল হাসানের। ভীষণ নাড়া দেয় লেখাটা। পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়াচ্ছি,
কিন্তু ভালবাসতে পারছি না। আমার ঔরশে জন্ম দিয়ে একটি জনসংখ্যা
বাড়িয়ে ভালবাসার টানাটানি হবে, তার চাইতে, নিপীড়িত সিরিয়ার যুদ্ধশিশু দত্তক নেয়ার মতন ধারণা আমায় বেশি টানে।
ধ্রুব :
আমার ফ্যান্টাসি বড় বেশি সেকেলে ঠেকেছে বোধয় তোমার কাছে, তবুও এইরকম কিছুই লালন করি আমি।
ধ্রুব :
আমি ঠিক একেলে শুনব ভেবে রেখেছি, তা তো
নয়। কিন্তু গুপ্তরহস্যের উম্মোচন আশা করেছিলাম। সেকেলে ঐতিহ্যেরও কত কিছু যে আমি
জানিনা।
রাজীব :
তুমি যা জান না তা আমার জানা থাকবে কী করে? আমি যদি প্রেমে ইচ্ছুক হই তবে তুমি হবে প্রেমাস্পদ। ধ্রুব সব সময় সত্য
এবং স্থিরতার প্রতীক। বাকিরা তো ধ্রবকেই প্রদক্ষিণ করবে , তা-ই নয় কি?
ধ্রুব :
তুমি মুশকিল কোশা মানে জান?
রাজীব :
না জানলেও ধারনা করেছি- ‘বিপদ তাড়ক’-জাতীয় কিছু হবে হয়ত।
কিন্তু আমি ধ্রুবকে চেয়েছিলাম।
ধ্রুব :
তোমার ধারণা একটুও ভুল হয়নি। কোশা মানে আসলেই দূরীভূতকারী। যদিও
হরহামেশা এর উল্টোটা, আমি আর বিপদ সমার্থক না হলেও বিপদের
সাথে আমার দূরত্ব নেই, একদিন ভাল করেই আমায় গিলে নেবে
বুঝতে পারি। ধ্রুব নামটিও অধমের স্বরূপ বাস্তবায়ন করে কিনা তা বলতে পারব না।
ধ্রুবকে কেন চেয়েছিলে?
রাজীব :
রাজীবের রূপ, রস, গন্ধ সবই আছে। তবে বড্ড বেশি ক্ষনস্থায়ী। পঙ্কে জন্ম বলে অনেকেই এড়িয়ে
চলে কারণ, তাকে এত কষ্টে অর্জনের মানে খুঁজে পায় না।
কিন্তু রাজীবের এই ক্ষনস্থায়ী জীবনকে সত্য সুন্দর আর ভালোবাসা দিয়ে অক্ষয় করে
তুলতে ইচ্ছে করে। সবাই এড়িয়ে গেলেও সত্য ও স্থিরতার প্রতীক কি তাকে এড়িয়ে যাবে?
ধ্রুব :
নামই সর্বস্ব! নামের সাথে সংঘর্ষ রেখে উত্তর দেয়া চলে না?
রাজীব :
রাজীবের কল্পনার সাথে ধ্রুব হয়ত মিলেছিল, বাকিটা মানিয়ে নেয়ার অভিপ্রায়ে হয়তো চেয়েছে।
ধ্রুব :
“সুন্দর আমি তোমাকে চেয়েছি নির্মাণ করি আমার ভিতর তাই কি
এমন ক্ষত বিক্ষত ভিতরে বাইরে প্রচণ্ড ঝড়।” তোমার জন্য এই চরণ দুটি আমার মনে
পড়ছে। আমিই তোমার বেদনার কারণ। কিন্তু সে জিনিস আমার লাঘব করার ক্ষমতা নেই।
রাজীব :
প্রচন্ড ঝড়ে ভেঙেচুড়ে আবার আমাকে কি পার না গড়ে নিতে নিজের মত
করে?
ধ্রুব :
তুমি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিলে। অথবা জিতু। ঐ আখ্যান এখানে রচিত হোক।
ভাঙা গড়ার খেলা নিয়ম মেনেই আসবে তারপর।
______________________________________________________________________________
পর্ব ৮
_______________________________________
৭/৮/২০১৯, রাত ১০:৩৩টা
ধ্রুব :
সকালে অ্যালার্ম দিয়ে রেখো। রাস্তায় হাটুপানি থাকতে পারে,
টেনশানে আছি।
রাজীব
:
আজও মুরাদপুরের হাটুজল।
ধ্রুব
:
প্রবর্তক মোড়ের এই চিত্র। আরও কোথায় তাণ্ডব চলছে, কী জানি!
রাজীব
:
কত সকালে ঘুম ভাঙতে হবে?
ধ্রুব
:
সাড়ে আটটায় উঠে পড়ো। নটায় বেরোব।
রাজীব
:
কী যে বল ; তাহলে আমায় সাতটায় উঠতে হবে
যে! স্নানে সময় লাগে। জল গরম হতেও। বিদ্যুৎ না থাকলে ঢের যন্ত্রণা। আজ এই অবধি
চৌদ্দবার বিদ্যুৎ গেল।
ধ্রুব
:
নটায় বেরোব মানে পৌঁছুতে এগারটা বাজবে রে হাবু।
রাজীব
:
ওহ।
এইখানে এসে বিদ্যুতের কাণ্ডে খুব বিরক্ত লাগছে। এইরকম ভেল্কিবাজি
আমার অভিজ্ঞতার বাইরে।
ধ্রুব
:
বৃষ্টি পড়লেই বিঘ্ন করে।
রাজীব
:
চট্টগ্রামের বৃষ্টি পুরোদস্তুর কলেরা রোগের মতো, একনাগারে দশদিন।
ধ্রুব
:
এদ্দিন বৃষ্টি না পড়াতে সবাই বৃষ্টি চাইছিল!
রাজীব
:
বৃষ্টি চেয়েছিল, কলেরা বা ডায়রিয়া চায়নি
নিশ্চয়।
এখানে তো বৃষ্টি শুরু হলে মেঘের তলা ফুটো হয়ে যায়।
ধ্রুব
:
তুমিও না মেঘ ভেঙে বৃষ্টির জন্য এত কান্নাকাটি করলে!
রাজীব
:
ওরে , আমি এখনও বৃষ্টিকে ভালবাসি,
তাকে আমি এখনও চাই । কিন্তু সে কেন প্লাবন সৃষ্টি করছে! আমি তো
প্লাবন চাইনি।
ধ্রুব
:
এক্সেস অব এনিথিং ইজ ভেরি ব্যাড।
তোমার বাসায় যাব।
রাজীব
:
এই নাহ। মা বাবা দুজনেরই শরীর খারাপ। এই ভাবে তোমাকে আমার বাড়িতে
আনতে পারি না তুমি উদার তা বুঝতে পেরেছি। তুমি উঠোনে শুয়ে আম বা অন্য কিছু খেতেও
পার বটে। কিন্তু আমি ততটা উদার নই যে বন্ধুকে মাটিতে মাদুর পেতে দেব।
ধ্রুব
:
ঘরের কথা বলেছি বৃষ্টির দুশ্চিন্তা থেকে। বৃষ্টিতে বাইরে নিরাপদ
না হতে পারে।
রাজীব
:
তোমার কাছেই তো যাচ্ছি। দেখি তুমি কোথায় নিয়ে যাও আমায়।
ধ্রুব
:
দেখি তবে। শুভ রাত্রি।
রাজীব
:
শুভ রাত্রি, ধ্রুব।
গতকাল সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খেলো পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানের
কলি ও মান্না দের গাওয়া পঁয়তাল্লিশ বছরের পুরনো এই গানটি। এত সুন্দর মমতায় করে
অদ্রিজ ঘোষ গেয়ে উঠলেন… এতো রাগ নয় গো, এ যে অভিমান এ
শুধু তোমায় চাওয়ার আরও বেশি কাছে পাওয়ার ছল ভরা গান।
এটা শুনে যাও।
৭/৮/২০১৯, সকাল ৮:১৩টা
ধ্রুব
:
এখন শুনলেম।
বৃষ্টি আজও ছাড়বে বলে মনে হয় না। আমার ব্যাগে থাকবে অনেক বই।
হাঁটাহাঁটি অসুবিধে। বৃষ্টিতে নিরাপদ, আবার বসেও আড্ডা
দেয়া যায় তেমন স্পট ভাবছি।
রাজীব
:
ভাবতে ভাবতে চলে এসো।
Top of Form
উপন্যাস : নোনা গাঙ
পর্ব ১৮
_______________________________________
৭/৮/২০১৯, সন্ধ্যা ৬:৫৫টা
রাজীব :
কোথায় আছ এখন?
ধ্রুব :
বিশ্রামে।
রাজীব :
তোমাকে সারাদিন আড়ষ্ট মনে হয়েছে, স্বতঃস্ফূর্ত
ছিলে না।
ধ্রুব :
আড়ষ্ট মানে? জড়তা! তা যে ছিলাম না এটা
হলফ করে বলা যায়। বোধ হয় একটু আধটু রয়ে সয়ে রয়েছিলাম।
রাজীব :
রয়ে সয়ে? বস্তুটি কী? তুমি বলতে চাইছ, তাহলে আমি ছিলাম রয়ে সয়ের
বাইরে?
ধ্রুব :
আমি সেরকম কিছুর মানে করিনি। আর আমি যেমনটি, তোমায় তেমনটি হতেইবা হবে কেন? তুমি তোমার মত
বেশ দারুণ!
আমার নিজেকে ‘রয়ে সয়ে’ বলার কারণ হয়ত বৃষ্টি, ছাতা, বাইরের লোক নানা বস্তুর অর্থ করে। তুমি নিশ্চয় সব কিছুতে নজর দাওনি।
নিজের মতই বেঁচেবর্তে ছিলে।
মুখে আমি কেমন ভাষা বলেছি জানি না। বাস্তবে স্বতঃস্ফূর্ত আমি
ছিলাম, হয়ত বোঝনি।
রাজীব :
বহুদিন পরে বন্ধুর সাথে চট্টগ্রামের এই শহরে ঘুরতে বেরিয়েছি,
কিন্তু হতাশ হতে হল। দুজন পুরুষও একই সাথে ঘুরে বেড়ালে বাইরের
লোক মানে দাঁড় করাবে!
ধ্রুব :
রাজীব তোমার চাহনিতে কিছু প্রকাশ পাচ্ছিল। আশপাশে দেখার ইচ্ছে
তোমার হয়নি সে বেশ ভাল। কিন্তু ইচ্ছের বিপরীত প্রান্তে দৃষ্টি দিলে শকুন আছে কিনা
জানতে পেতে ।
রাজীব :
অন্য কিছু না হলেও এই একটি কারণে ঢাকা শহরকে ভীষণ মিস করছি। কারও
চোখ বা অভিব্যক্তি আমাদের দিকে দেখিনি; হয়ত তুমিই মনে
করেছিলে- পাছে লোকে কিছু বলে!
ধ্রুব :
ঢাকা আসলেই স্বাধীনতা দেয়।
তুমি এই বিষয়ে আমায় জেরা করছ বলেই ধারণা হচ্ছে আমায় অন্যরকম
দেখাল কি! অথচ সম্পূর্ণ আমার আমি আমার মত স্বাভাবিক। ভেতরে তোমায় নিয়ে কোনও
আড়ষ্টতা আমার ছিলই না।
যাই হোক। যদি অমন কটু হয়েই থাক, আমি
দুঃখিত।
রাজীব :
হয়ত আমার বোঝার ভুল। জেরা নয়। মনে যা এল, তা-ই খুলে বললাম। প্রসঙ্গটি তুলে আমি দুঃখিত।
ধ্রুব :
তোমার সব কথা শুনতে বেশ লেগেছে। বৃষ্টিতে এমন শ্রোতা হবার একটা
আনন্দ আছে, তা অনুভব করেছি। নিরামিষের তরকারির ভাত খেতে
গিয়ে মুখে না বলে ইশারায় কথা বলছিলে, এ সময়ে আমার হাসি
পেয়েছিল বড্ড। সেই হাসি মুখে ফুটিয়ে তুলিনি বলে এটা ভেব না, আমি মনে কোনও আনন্দই রাখিনি। দারুণ একটি সময়, একটি
দিন।
রাজীব :
ধন্যবাদ। হয়ত আমার পর্যবেক্ষণের পরিধি এখনও কাঁচা। তারপরও আমি
তোমায় পেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত, এর প্রকাশ তুমি পেয়েছ।
বাদ দাও। রেস্ট নাও।
৭/৯/২০১৯, সকাল ৮:৪২টা
ধ্রুব :
এই ট্রলপোস্ট দেখ। তুমি আমায় এ জিনিসের সাথে তুলনা করেছ।
রাজীব :
কবে, ধ্রুব?
ধ্রুব :
বহু প্রেয়সীর সাথে আমার কথোপকথন বলে নির্দিষ্ট করে কারও কেচ্ছাই
ভাল শুনতে পাই না বলে যে অপবাদ দিলে। অবশ্য অপমান করে বলনি সে কথা, হাসিমুখে বলেছ, সে কারণে আমি গায়ে মাখিনি।
ট্রলপোস্টটি শুধুই আনন্দ ভাগ করে নিতে।
রাজীব :
কবে বলেছি। স্ক্রিনশট দেখাতে পারবে?
ধ্রুব :
ফোনে ওপারে। ভুলে বসলে নাকি?
রাজীব :
তাই বুঝি! এ দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছ তুমি, আমার সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনতে পাও!
ধ্রুব :
তোমায় ঠিক চিনতে পারছি না। হঠাৎ বাঘের মত মুখ কুঁচিয়ে জেরা শুরু
করলে!
রাজীব :
জেরা? মোটেই না। ঠিক আছে, তুমিই একশত ভাগ ঠিক। মেনে নিচ্ছি।
ধ্রুব :
এখানে তো কেউ কোনও তর্কের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেনি, রাজীব, যে মেনে নেয়ার অথবা না নেয়ার ঘটনা
আসছে।
রাজীব :
আশ্চর্য! কথা চালিয়ে নেয়ার একটা প্রসঙ্গ তুমি দিয়েছ, তুমি ধন্যবাদ পাবে।
ধ্রুব :
তুমি দয়া করে আমার সাথে আর বন্ধুত্ব কোর না। তুমি আক্রমণাত্মক,
অযৌক্তিক, লাঞ্চনাকর।
৭/৯/২০১৯, বিকেল ৫:৪১
রাজীব :
ফোনটা ধর, সামান্য কথা আছে। আমার ঘাট
হয়েছে, ক্ষমা চাইছি।
ধ্রুব :
ঠিক আছে।
এমন সময় ফোন টুকেছ যখন তোমার পাপড় ভাজা নিয়ে মা আমার পাশে বসে
মুচমুচ করছেন, সেই সাথে আমি তোমার লেখা নতুন গল্পটা সবে
ধরেছি। ‘পীরজাদা’।
রাজীব :
ভালবাসা রইল।
বানান ঠিক করে দেবে এই লেখার?
ধ্রুব :
তোমার এখানে যেসব বানানের ভুল আছে, সাধারণ
চোখে কেউ খুঁজে নেবে না। ণ-ত্ব বিধান, সমাস এমন-
অতিসূক্ষ্ম ভুল আছে।
‘পীরজাদা’ নামকরণের সার্থকতা এবং গল্পটি
নিয়ে ক্ষাণিক পরে মন্তব্য করছি।
রাজীব :
সাজের পাকন পিঠা খাচ্ছি। খাবে? তোমার
প্রিয়, মুচমুচে স্বাদের।
ধ্রুব :
না গো। তবে এখানে ভক্তমুরিদ কত আনে এই জিনিস। প্রায়ই দেখি।
মুচমুচে হলেও মিষ্টি নাশতা আমায় অত টানে না, তা তো জানই।
রাজীব :
বৃষ্টির দিনে পিঠেপুলির ভিন্নরকম সাধ।
ও হ্যাঁ, তুমি পীর পরিবারের শেহজাদা,
তুমি যে ভাগ্যবান।
ধ্রুব :
যে কথা তোমায় বলতে চেয়েছি। অন্য ধর্মের অনুসারীরাও উপহার সামগ্রী
পাঠায় এখানে। খাবার, কাপড়, এমনকী
পুজোর প্রসাদ।
রাজীব :
জানি আমি। যদিও আমি নাখান্দা, পিরের
মাজারে যাতায়াত নেই।
ধ্রুব :
আর সঙ্গীত বিষয়টি এখানের লোকে খুব ভালবাসে। বিশেষত মুরশিদি,
হামদ-নাত, ফোক, ক্লাসিক, পঞ্চকবি, পেট্রিয়টিক,
আধুনিক এসবের তালিম দেয় ভাণ্ডারী সঙ্গীতাঙ্গনগুলো।
রাজীব :
‘পীরজাদা’ গল্পের প্রেক্ষিতে বলছ?
ধ্রুব :
ঐ লেখায় আমি কোনও ত্রুটি খুঁজতে চাই না। তুমি সম্পূর্ণ তোমার
চোখে, তোমার কল্পনায় আঁকলে। তোমার দেখার পরিসরটুকুই তোমার
কাছ থেকে শুধু আসা চাই। তা-ই এনেছ। সঙ্গীতের আর সম্প্রীতির এই দৃশ্যটির যোজনা হতে
পারত, পাঠক হিসেবে যা আমার মনে হয়েছে, এ একান্তই আমার অভিমত।
কিন্তু তুমি তোমার মত দৃশ্য গ্রহণ, বাদ
দেয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।
রাজীব :
ধ্রুবকে প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে থেকেই অন্যরকম ছবিতে আঁকতে
চেয়েছি, শুধু মাজারের প্রতিনিধি নয় পুরো ইসলামিক ব্যবস্থা
আর সমাজের উপর ছোট্ট পরিসরে আলোকপাতের প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে।
ধ্রুব :
দুটো ব্যাপার আছে। কল্পনা বাড়বে, নাকি
সমাজের চিত্র বাড়বে। লেখক নিজের বুদ্ধির আলোকে দুটো থেকে যে কোনওটি গ্রহণের
ক্ষেত্রে স্বাধীন, এবং নিরপেক্ষ, তা অবশ্যই স্বীকার করছি।
রাজীব :
মন্তব্য সেখানটায় করোনি কেন? এই বিতর্ক
সেখানেই ভাল জমত।
ধ্রুব :
বিতর্ক যে করিনি। লেখকের স্বাধীনতার নাম নিয়েছি। তা তোমায় বুঝতে
হবে।
রাজীব :
আমি বিতর্ক ভালভাবেই নিই। আমার শেখার আগ্রহ প্রবল। বিতর্কে
সবকিছু উঠে আসে।
ধ্রুব :
কিন্তু যেখানে বিতর্ক করা হবে না সেটা বিতর্ক বানিয়ে নিও না যেন।
রাজীব :
কিছুটা হুশ এখনো অবশিষ্ট আছে।
ধ্রুব :
মনে হচ্ছে না।
৭/৯/২০১৯, রাত ১০:৪০টা
রাজীব :
বাইরে বৃষ্টি। রাতের আঁধারে চোখে না দেখলেও রাজীব ঠিকই অনুভব
করছে!
ধ্রুব :
চোখের প্রয়োজন কী তবে?
রাজীব :
দেখা জিনিস দেখবার জন্যেই চোখের দরকার ।অদেখা জিনিসে চোখের
ভূমিকা গৌণ, সেখানে মনের আধিপত্য মুখ্য।
ধ্রুব :
বৃষ্টি তো দেখবার জিনিসই।
রাজীব :
আমি কি ধ্রুবর সাথেই কথা বলছি?
ধ্রুব :
ধ্রুব কি অন্যভাবে কথা বলে? ধ্রুবর
সাথেই কথা হচ্ছে।
রাজীব :
আজ আর রাজীব কথা বলতে চাইছে না। হঠাৎ অজানা কারণে রাজীবের মনে
বিষাদ এসেছে। শুভ রাত্রি ।
৭/১০/২০১৯, সকাল ১১:৩১টা
রাজীব :
ধ্রুব…
ধ্রুব :
সুপ্রভাত।
রাজীব :
প্রভাত পাঁচ ঘন্টা আগে যবনিকা, এখন সকাল
শেষ হবার উপক্রম।
ধ্রুব :
ঘুম ভেঙেছে দেরিতে। একটা স্বপ্ন দেখেছি।
“রাজিবুজ্জামান ভাই, তার স্ত্রী,
কজন অতিথি চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়ানো প্ল্যান করে এলেন। একটা আবাসিক
হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলাম, আমাকে পেয়ে তারা খুব খুশি।
পুলিশ কেন জানি না খোঁজা শুরু করল আমাকে, হয়ত প্রেমিকের সাথে পালিয়ে দূরদেশে যাব এই ভেবে। রাজিব ভাইয়ের উপরেও
পুলিশের ফোর্স ধাওয়া করল। কেন এই কারণটা তাও অবশ্য জানি না। এলজিবিটির অধিকার নিয়ে
তিনি সরব এ জন্যেই হয়ত। ড্রাইভার সাহেব আমাদের গোপন পরিচয় ফাঁস করে দিয়েছিল। এক
পর্যায়ে প্রেমিক এবং আমি পালাতে গিয়ে আগে-পিছে হয়ে পড়ি। শত্রুদের প্রত্যাঘাতের
উদ্দেশ্যে ধাতব কিছু ছুঁড়ে মারার ফলে ভুলে আমাদেরই গায়ে লাগে। আমি অথবা আমার
প্রেমিক কোনও একজন লাশ হয়ে পড়ে আছি।
একটু পর দেখতে পাই, লাশের প্রতীক,
সেমত পানিতে বেলুন ভাসছে। নাকি মার্বেল? এর কোনওটি পানিতে ভাসতে পারে? স্বপ্নে পারে।
মমতাজের কণ্ঠের মনপুরা ছায়াছবির গানটি বেজে চলছে। স্বপ্নে যারা আমাদের পেছনে ধাওয়া
করেছিল তারা এবং আমাদের দুই পরিবারের লোক সব্বাই আফশোস করছে। খুব আফশোস।”
রাজিব ভাই নামে আমার সত্যি একজন আছেন কিন্তু। নামে তোমার মিতা।
অবশ্য সংস্কৃত আর আরবি ভাষার শব্দের পার্থক্য আছে, শুনতে
তো একই। তার স্ত্রীর নাম পূর্ণিমা।
রাজীব :
ইদানিং রাজীব স্বপ্ন দেখতেও ভুলেছে। বাস্তবের ভুলোমনা স্বভাব
স্বপ্নেও প্রভাব বিস্তার করছে !
হ্যাঁ, রাজীবেরা সবদিকেই মিতা। তোমার
সেই রাজিব ভাইয়ের অজানা কষ্টও হয়ত তুমি সবটা পড়তে পার না।
ধ্রুব :
স্বপ্ন নিয়ে এপিজের বিখ্যাত সংলাপটি তুমি জান নিশ্চয়।
রাজীব :
স্বপ্নই মানুষকে ঘুমোতে দেয় না। ঘুমিয়ে স্বপ্নটা নাকি স্বপ্ন নয়।
৭/১০/২০১৯, দুপুর ২:৫১টা
ধ্রুব :
তুমি ধ্রুবের হালকা কৌতুক কখনও প্রত্যক্ষ করেছিলে, রাজীব? একেবারে মাটির মানুষের মত। ওসব কৌতুক
দিয়ে অবশ্য সাহিত্য হয় না।
এক কনিষ্ঠ সকালে এসে বিরক্ত করছিল, তাকে
জন্মদিনের উইশের একটি পোস্ট করি যেন, এতে নাকি সে খুব কনসানট্রেশন
পাবে। ধ্রুবের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপল। ছোকরাকে বললাম- কী লেখা হবে তুইই লিখে দে।
যা লিখলে, সেটার আগে একটা ভূমিকা লিখে ধ্রুব তাকে পচাল
জনসম্মুখে। একে খুনসুটি বলে।
“যার জন্মদিন সে নিজেই নিচের লেখাটুকু দিয়ে উইশ করবার
নাকিকান্না জুড়ে দেবার ফলে অনুরোধের ঢেঁকি গেলার পোস্ট।” এই ক্যাপশনের সাথে
একটি ছোট্ট বেড়ালের মুখের প্রতিচ্ছাপঅলা ছবিও এটাচড করেছিলাম।
ছোকরার নামও আব্দুল্লাহ। ছবিতে নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছ, দেখ তো, কিউট না?
রাজীব :
জানি না।
আচ্ছা ধ্রুব , রাজিবের কাছাকাছি আসতে
ইচ্ছা করে তোমার? আমি কাছাকাছি মানে শরীরের কাছাকাছির
অর্থ করেছি।
ধ্রুব :
শরীর শরীরের নিয়মে জাগে। নিয়মটা একটা সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন
অনুসরণ করে বৈ কী। আবদুল্লাহ নামের একটা শিশুর জন্য বা বাগদত্তা পিংকির জন্য,
মানে আব্দুল্লাহর মত, আর পিংকির মত
মানুষদের জন্য নিয়ম খাটবে।
রাজীব :
রাজীবের মনে কৌতুহল ছিল। কৌতুহলটাকে সরাসরি আগ্রহের জায়গায় না
বসালে রাজীব আর ধ্রুব নিসঙ্কোচে হাত ধরে হাঁটতে পারে।
ধ্রুব :
রাজীবের পার্থসারথী পরিচয়টি স্বার্থক হল। ভীতজনে কর হে নিশঙ্ক,
বলে শুরুতে ধ্রুব ডাক দিয়েছিল। কিন্তু এই ভয়কে জয়, সঙ্কীর্ণ অর্থ থেকে বিস্তৃত নালা-নদী, খাল-প্রণালী
পেরিয়ে যেন সমূদ্রে আছড়ে পড়ে। বিশ্বজয়ের আনন্দ হবে, সেখানে
ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির অতৃপ্তি যেন স্থান না পায়।
রাজীব :
ধ্রুবকে সত্য, স্থির এবং সাহসের প্রতীক
জানত রাজীব, কিন্তু সে যে ভীতু এবং সঙ্কোচশূন্য নয় তা তো
জানত না ।
রাজিব অনেক অনেক কাছে আসতে চায় ধ্রুবের। ধ্রুব কিন্তু সেই কাছে
আসার মধ্যেও একটা দূরত্ব রাখছে।
ধ্রুব :
একবার কে যেন আমায় বিজ্ঞানের ভাষায় নূন্যতম দূরত্বের একটা
প্রয়োজনের কথা বলেছিল।
সব স্বচ্ছ করে দেখা হলে সেখানে আবিষ্কারের নেশাও থাকবে না।
রাজীব :
রাজিব ধ্রুবকে বরাবর সঙ্কোচশুন্য দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু ধ্রুবের
ভেতর সঙ্কোচ এবং জড়তা দেখে রাজীব বিস্মিত ।
ধ্রুব :
আমার উত্তর কি কানে নিচ্ছ তুমি? বকবক
করতে লেগেছ। মাথা নষ্ট।
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে। আবার জেগে ওঠে পাখি, বৃক্ষ, নদী, জীবন,
প্রকৃতির ধ্রুব নিয়মে। কিন্তু এই জাগা একদিন থমকে যাবে সেটিও নিয়ম।
তাই প্রতিদিনের এই সজাগ হওয়ার মধ্যেই বিস্ময় কী প্রবলভাবে আছে জান?
রবি ঠাকুর কেন যেন মনের সব নতুন কথাই আগে বলে গেছেন। নতুন করে
আমাকে শব্দ গাঁথতে হয় না।
৭/১০/২০১৯, সন্ধ্যা ৭:২৮টা
রাজীব :
ধ্রুব তোমার প্রস্তুতি কেমন চলেছে !
ধ্রুব :
পরীক্ষার প্রস্তুতি এখনও জমে ওঠেনি। বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষার
তারিখের শুরুটা ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোন পরীক্ষার্থীর কোন তারিখে ডাক পড়বে তার
ডিক্লেয়ারেশন এখনও বাকি আছে। সকাল বেলায় মেজাজ ফুরুফুরে থাকে। তখন আধটু বই ঘেটে
দেখি।
রাজীব :
দুপুর হতে হতে মেজাজে টান পরে বুঝি!
বৃষ্টি আর রোমান্টিক আবহাওয়া তোমাকে কিছুটা কি উদাস এবং চঞ্চল
করছে না?
ধ্রুব :
মেজাজ কেমন হয় ঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারব না। কিন্তু মনোযোগ
বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় দিবস যত পড়ন্ত হয়।
আমি এত্ত সাধারণ যে আবহাওয়া আমাকে ধরাবাঁধা কোনও নিয়মে ডাকে না।
হয়ত ভিজতে ইচ্ছে হয় কখনও। খুব কম। কখনও কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে। সিনেমা দেখতে।
অনেক আয়েশি, আরামপ্রিয় স্বভাবই আমাকে কুঁড়ে করে রেখেছে।
তবে এর মধ্যে সঙ্গীর সাথে প্যান্ট হাঁটু অবধি তুলে রাবারের চপ্পল পরে নির্দ্বিধায়
পথে নেমে যেতে খারাপ লাগে না। এ জন্য আমাকে তুমি রোমান্টিক বলতেও পার। তোমার খোলা
চোখে যদিও এমন দৃশ্য আমার কাছ থেকে তুমি পাওনি। কিন্তু সবই আমার মনের মর্জি। সে
সময়ে সময়ে এই রোমান্টিক ভাবনা হারিয়েও ফেলতে পারে। ফিরেও পেতে পারে। ঠিক নেই।
একেবারে সাধারণ লোক যে!
রাজীব :
রাজীবের সাথে স্বশরীরে দেখা হওয়াকে তোমার দিক থেকে যদি ব্যাখ্যা
করতে বলি তবে এভাবে তুমি এড়িয়ে যাবে না নিশ্চয়।
ধ্রুব :
রাজীবকে সুখী লোক বলে আবিষ্কার করেছি। রাজীবের দুঃখের যে গভীরতা
মনে মনে কল্পনা করে নিয়েছিলাম, মনে হয়েছে তার সেই কষ্ট
অনেকটাই সময়ের সাথে লাঘব হয়েছে। রাজীব দারুণ নিশ্চিন্ত।
যেটুকু অপ্রাপ্তি আছে তা সব মানুষের সাধারণ হাজার হাজার দুঃখের
মধ্যেই একটি।
রাজীব :
আমাকে দুঃখবিলাসী বলছ তুমি! হলি শিট!
একবার ও কি মনে হয়নি- কোনদিন দেখা না হলেই ভাল হত!
ধ্রুব :
না। ধ্রুবের সম্পর্কে তুমি মোটা দাগে হিসেব করতে পার। ধ্রুবের
উপন্যাসের কোনও চরিত্রের মত ফিচার নেই। সে কবি কিন্তু কোনও ঝোলা নেই। প্রেমিক
কিন্তু আর্দ্রতা নেই। উদার আবার শুষ্কও। সে কঠিন লেখে কিন্তু স্থূল কথা বলে। অথবা
স্থূল লেখে, আবার সাজিয়ে কথা কইতে পারে। পলি মাটির মত
অনির্দিষ্ট পার্টিকলে গড়া। তা বলে যে ঠিক মিঃ পারফেক্ট, দৃঢ়
ও রহস্যময় সেটাও নয়। রাজীবের উচ্ছল চরিত্রের পাশে সে নির্মোহ দর্শক। তার কোনও
প্রত্যাশার ভার ছিল না। খুব স্বাভাবিক মানুষের মত সে ঐ সাক্ষাতটিকে সম্মান ও
আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। তার অভিব্যক্তিতে কী ছিল সে ছবি দেখেনি, কিন্তু কোনওদিন দেখা না হওয়ার চেতনা আনার মত ভূতল নড়ে উঠবার ভাবনা করার
অতটা অসাধারণ সে হতে পারেনি। রাজীবের লাড্ডু, চকোলেট,
আচার, মিছরি, দই,
নিরামিষ ভোজের সুন্দর প্রতিচ্ছবিতে আপ্লুত হয়েও গদগদ ভাবে তাকাতে
পারে না। এটা ধ্রুবের দুর্বলতা। কিন্তু মনের সব ভাব মুখে ফুটিয়ে তুলতে হয় না
বোধহয়।
রাজীব :
এই বিশ্লেষণ চায়নি রাজীব । মূল বিষয় থেকে ধ্রুব কিছুটা দূরে সরে
গেছে। যাক, ব্যক্তির স্বাধীনতা আছে আলাদাভাবে সব কিছু
বিশ্লেষণ করার !
ধ্রুব :
ঐ যে। সাধারণ মানুষ। অসাধারণ করে ভাবতে পারে না। তাই।
কোনওদিন দেখা না হলে ভাল হত ধ্রুব এমনটা ভাবতে যাবেইবা কেন?
রাজীব :
না পাওয়ার বেদনা আমার বেড়ে চলছে। আমাকে তুমি কখনওই ভালবাসতে
পারবে না, এ কথা জেনেও বারেবারে অধিকার খাটাতে গেছি। তুমি
অন্যায় কর না, এখন দেখছি এরপরও আমি রেগে ভস্ম হয়ে পড়ছি।
আমাদের কথোপকথন কি এখানেই ইতি টানা যায় না?
রাজীব হারিয়ে যাবে ভাবছে।
ধ্রুব :
নিশ্চয় যায়।
বিদায় রাজীব।
রাজীব :
বিদায় ধ্রুব।
যাবের আগে সুস্মিতা পাত্রের কণ্ঠে এটা শুনে যাও- “মেঘ বলেছে
যাব যাব, রাত বলেছে যাই/ সাগর বলে কূল মিলেছে- আমি তো আর
নাই/ দুঃখ বলে রইনু চুপে/ তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে/ আমি বলে মিলাই আমি আর কিছু না
চাই॥”
______________________________________________________________________________