পলাতকা প্রেম

কবিঃ শুভ্র নিষাদ

রাজ মহল থেকে টেকনাফের দিকে পালাচ্ছেন শাহজাহান পুত্র মোঘল শাহজাদা শাহ সুজা, পিছনে ছুটছেন তার উভকামি প্রেমিক। এখানেই কবিতার শুরু …

দিল্লীর মসনদে আজ রোশনাই
ময়ূর সিংহাসনে আসীন আওরঙ্গজেব।

তিমির রাত্রি,দুর্গম পথ আকাশে নেই চাঁদ
মোঘলজাদা পথ চলছে 
অজানা সে পথ , অচেনা সব পথের সাথী।
পিছনে ছুটছে প্রেম কাতর কলমচি।
দুজনের দেখা হল টেকনাফের আরকান সীমান্তে 

শুরু হল পদ্যের ঝংকার ,কলমচির কথন,

প্রিয়ে, অস্তমিত আকাশের চাঁদ
আবছা অন্ধকারে তুমি আর আমি
দূরে উল্লাস করছে নাফ নদীর জলধারা।
মোঘল মহলে পাইনি তোমার অধর স্পর্শ 
আজ প্রান ভরে নিতে চাই তোমার অধর রস।
তাকিয়ে দেখ, দূরে দাঁড়িয়ে আছে আরকান পর্বত
এই সীমানা ভেদ করে কেহ জানবে না 
সম অধরের পিপাসা মেটানো প্রণয় খেলা।

শাহ সুজার কথন,

আমার প্রান কলমচি,
হেরেছি যুদ্ধে পালাচ্ছি আমি 
কিন্তু সাথে নিতে ভুলিনি সিন্ধুর আঙ্গুরের রস
ইরানের গোলাপ,পেশোয়ারের পশমি
চেয়েছিলাম সাথে আসুক মোঘল হেরেমের আনারকলিরা
হায়, আনারকলি হায় আমার রংমহলের বাঁদি 
রূপের কুমার শাহ সুজা ধূলিসাৎ হয়ে গেল 
আর, তারা সেই ধুলি মেখে বরণ করল 
ময়ূর সিংহাসনের নতুন অধিপতিকে। 
প্রাণ কলমচি, তুমি প্রমান করে দিলে
প্রেম মানে না কোন বাঁধা 
প্রেম হয় মনে মনে,
শরীর সে তো প্রেম নয়
সে তো ধুলি আর কাদা।

কলমচির কথন,

আমার জীবনের ধ্রুবতারা ,
ওগো আমার রূপের কুমার সুজা
ভালবেসেছি ,ভালবাসবো 
আমি তোমারে করি পুজা।
আমি অধর চাইছি,এর মানে এই নয়
আমি কামাতুর।
আমি চাই অধরে অধরে বাঁধা থাকুক প্রেম
শরীরের লোম কূপে লোম কূপে লেগে থাকুক প্রেম! 
বাদশাজাদা আমি প্রেম চাই , প্রেম
প্রেমের লাগি আমি জেগেছি সারা রজনী
দ্বার থেকে ফিরে গেছে কত রূপসী সজনী।

শাহ সুজার কথন,
মোঘল মহল আমায় বুঝতে দেয় নি 
সম প্রেমের সম দরদ,
সেখানে শুধু নারী আর শুরা।
প্রেম সেখানে; নারীর মসলিনে ঢাকা শরীরের মধ্যে আবদ্ধ ,
প্রেম সেখানে শুরা পাত্রে আঙুরের রসে নিমজ্জিত ।
বাইজির ঘুংঘুরের রুনুঝুনু রবে সেখানে প্রেম কথা বলে।
মোহ শেষ, নেশা শেষ প্রেম শেষ। 
প্রিয়ে, কলমচি আমি হাজার প্রেমের বেসাত করেছি
দূর আফগান থেকে। আমি প্রেম এনেছি পারস্যের উপকূল থেকে
সারা দুনিয়ার প্রেম মহলের রূপকুমার আমি ,কিন্তু
আমি জানিনা আমার প্রেমে দগ্ধ হয়ে জ্বলে মরছে
আমার কবিতার ঝংকার কলমচি। 

শাহ সুজা আর কলমচির যুগল কথন,
প্রেম প্রেম প্রেম আহা প্রেম!
নর আর নারী প্রেম মানি না সে কথা
নরে নরে প্রেম হয় 
তবে, সে প্রেম পথ চলে 
ধুকে ধুকে ধীরে ধীরে
সাথে নিয়ে ব্যথা! 

রাতের আর বেশি বাকি ছিল না , শাহ সুজা আর কলমচি দুজনেই ঘুমিয়ে পরে টেকনাফের মর্মর প্রস্তরে। কলমচির কোলে শাহ সুজার মাথা।তারা যখন চোখ খুলল , তখন তারা বন্দী হয়ে ফিরছে আগ্রার পথে।আহা! প্রেম!

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.