
ঘাসফড়িং
সন্ধ্যা হতেই বেরিয়ে পড়লো রাফি।
ঘরের সবার জন্য দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতে হবে।
তার ছোট ভাইটার জন্য স্কুলের বই কিনতে হবে, বাবার ঔষুধ কিনতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে রাফি রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছে । ল্যাম্প পোষ্টের আলো শহরটাকে কেমন জানি অচেনা করে তুলেছে।
রাত হলেই শহরের হাজারো লোক ভিড় জমায়। সবার চাহিদা গুলোই তাদেরকে মুখাপেক্ষী করে যান্ত্রিক এই শহরের কাছে। কেমন যেন অচেনা লাগছে শহরটাকে।
এত বড় শহরটাতেও রাফি তার সততার পথ খুজে পেলোনা।
এসব ভাবনা গুলোই রাফির চোখের কোনে জল এনে দেয়।
যা শুধু আকাশের চাঁদটাই দেখতে পায়।
এই চোখের জল যে মূল্যহীন।
ছলছল দুচোখ নিয়ে রাফি গুলশানের বাসে উঠে পড়ে।
রাতেও একটুকু জায়গা নেই বাসটাতে।
শিক ধরে দাড়িয়েই বোধ হয় পুরো পথটা যেতে হবে।
কিছুক্ষণ পর রাফি দেখলো একটা সিট খালি হয়েছে।
রাফি গিয়ে বসে পড়লো।
রাজ সাহেবের ফোন বেজে উঠলো।
( যার জন্যে আজ রাফি গুলশানে যাচ্ছে )।
রাফি: হ্যালো স্যার।
রাজ: কোথায় তুমি। কোনসময় থেকে ওয়েইট করছি।
রাফি: স্যার আর কিছুক্ষণ । আমি এসে পড়েছি।
রাজ: তাড়াতাড়ি আসো।
ভাড়া চুকিয়ে রাফি বাস থেকে নেমে পড়লো।
গুলশান স্টেশনে নামতেই আবার রাজের ফোন বেজে উঠলো।
রাফি: হ্যাঁ স্যার। চলে এসেছি ।
রাজ: তুমি কি ব্লু শার্ট আর কালো জিন্স পড়ে এসেছো?
রাফি: হুম স্যার।
রাফি দেখলো একটা লোক রাফির দিকে আসছে। লম্বা , গায়ের রঙ শ্যামলা, লম্বা একটা নাক, চওড়া কপাল, চোখে কালো ফ্রেমের চিকন একটি চশমা।
সবমিলিয়ে লোকটাকে দেখবার মতো। হলিউড সিনেমার কোন নায়কও মনে হয় ওর সাথে মানাবেনা।
রাজ: তুমি রাফি?
রাফি: হ্যাঁ স্যার। আপনি কি রাজ সাহেব?
রাজ: হ্যাঁ । চলো।
রাফি: আমরা এখন কোথায় যাব স্যার ?
রাজ: কেন, আমার বাসায়। কোন প্রবলেম।
রাফি: না স্যার। আমাদের কোন প্রবলেম নেই। আপনি চাইলে এই ফুটপাতেও আপনার শখ মেটাতে পারেন।
রাজ একটি রিকশা ডেকে উঠে পড়লো।
বিরামহীন গতিতে রিকশা তার নিয়মে এগিয়ে যাচ্ছে ।
বাতাসে গা টা কেমন একটা শিরশিরানী অনুভব দিয়ে উঠে রাফির।
রাতে রিকশা চড়ে ঘুরে বেড়ানোর নাকি একটা আলাদা আনন্দ রয়েছে।
যা রাফির খুব ভালোভাবেই উপলদ্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে।
রাফির ভালোলাগা গুলোর মধ্যে রাত্রি বেলায় রিকশা চড়াটা ছিল শীর্ষে।
বাবার সাথে কত রিকশায় চড়েছি।
পূরনো স্মৃতি গুলো মনে করে রাফির দুচোখ আবারও ভিজে উঠে।
ধূর। বোকার মতো কাঁদছি কেন?
নিজেই নিজকে তিরস্কার দিতে লাগলো রাফি।
রাজ: এই রিকশা থামো থামো।
নাও তোমার ভাড়া।
নেমে এসো।
রাফি রিকশা থেকে নেমে চারদিকে চোখ ঘুরাতে লাগলো। কেমন যেন থমথমে একটা পরিবেশ।
যদিও রাফির ঢাকার প্রায় সব জায়গাই চেনা। কিন্তু এ জায়গাটা কেমন জানি অচেনা মনে হচ্ছে ।
আবার রাতের আঁধারে তেমন বুঝতেও পারছেনা।
রাফি: স্যার। এটা কোথায় নিয়ে এলেন।
রাজ: কেন আগে কখনো আসোনি?
ভয় করছে? ভয় পাবার কিছু নেই।
রাজ রাফিকে নিয়ে একটি খুব সুন্দর বাংলোতে উপস্থিত হয়।
রাফি তো অবাক।স্যার বলেছিলো রাজ সাহেব নাকি রাফিকে নিয়ে তার বাংলোতে উঠবে। তাহলে এটাই কি স্যারের বাংলো।
জিজ্ঞেস করবে কিনা আবার জিজ্ঞেস করলে স্যার যদি রেগে যায় ।
রাফি: স্যার। এটা কার বাংলো? আপনার ?
রাজ: কেন। ডাউট হচ্ছে ?
রাফি: না স্যার। এমনিতেই ।
রাজ: হুম। এটা আমারই বাংলো।
আর এই বাংলো আমার নিজস্ব ।
অবাক হচ্ছো। কিছুটা অবাক হওয়ার মতোই ।
অ্যাকচুয়েলী এই বাংলোটা আমার বাবাই আমার নামে আমার জন্য কিনেছিলো।
বিয়ের পর আমি এই ফ্ল্যাটে উঠবো বিয়ে করা বউ নিয়ে । কিন্তু আমি বাবার কথা রাখতে পারিনি।
আর রাখবই বা কি করে বলো, আমি তো আর বাবার ইচ্ছে পূরন করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মাইনি।
সবগুলো কথা এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলার পর থেমে উঠলো রাজ।
আর আমি এগুলো কি করছি।
সবকথা এখনই শেষ করে দিচ্ছি।
তাহলে বাকি রাতটুকু কাটাবো কি করে?
রাফি: স্যার আপনি এগুলো কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আপনি কি সারারাত কথা বলার জন্যই আমাকে ডেকেছেন।
আপনার কথা কেমন জানি তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে ।
রাজ: তোমাকে এসব ভাবতে হবেনা।
কি খাবে বলো, চা না কফি?
রাফিকে রাজের প্রত্যেকটা কথাই অবাক করিয়ে দিচ্ছে । রাফি ভাবছে কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম না তো। কি বলছে এসব। মনে হয় যেনো বিএফকে তার বাসায় আমন্ত্রণ করেছে যেভাবে আপ্যায়নে ব্যস্ত ।
রাজ: কি ভাবছ? ভাবছো হয়তো এ আবার কোন পাগল? নিজের বিএফের সাথেও তো কেউ এভাবে কথা বলেনা।
আর আমার সাথে কথা বলার ধরন দেখে মনে হয় যেনো আমি ওনার জানু।
হায় হায়। পাগল নয়। এ আমি কোনো তান্ত্রিকের খপ্পরে পড়েছি মনে হয়। কি ব্যাপার? ওনি কি মনের ভাষা পড়তে পারেন নাকি।
রাফি: না স্যার। এসব কি বলছেন।
এগুলো ভাববো কেন? তবে ভাবনা কিন্তু আমার ভিতরে সত্যিই প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছে।
আমি বুঝতে পারছিনা কিছু।
রাজ: এখন কিছুই বুঝতে হবেনা।
তুমি জাস্ট বসো। আমি চা করে আনছি।
রাজের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো রাফি।
কি অদ্ভুত লোকরে বাবা।
জীবনে কতরকমের লোক দেখেছি কিন্তু এরকম একটাও দেখিনি। আসলে ওনার মনে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেইতো।
ভাবতেই রাফির বুকটা ভয়েকেঁপে উঠলো। ওনার ভিতরে কোন খারাপ মতলব নেইতো। আমাকে কোথায় খুব সচেতন হওয়ার কথা ছিল আর আমি…..
কিচেন থেকে রাজ চায়ের কাপ নিয়ে রুমে ঢুকলো।
রাফি রাজের হাত থেকে চায়ের কাপ নিতে নিতে বললো
রাফি: আচ্ছা স্যার। আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো?
রাজ: হুম। করো।
রাফি: স্যার আপনি কি বিবাহিত ?
রাফি চায়ের কাপ থেকে মুখ নামিয়ে বলতে লাগলো।
এই যতকিছু হচ্ছে সবতো শুধুমাত্র বিয়ের জন্যই।
রাফি: তার মানে স্যার আপনি কি বিয়ে করতে যাচ্ছেন ?
রাজ: আরে না।
বলতে পারো বিয়ে আটকাবার জন্যে।
রাফি: মানে?
রাজ: গুলিয়ে যাচ্ছে ।শোন তাহলে।
আমার বাবা একজন ঢাকা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ।
আরফান চৌধুরীর নাম শুনেছো নিশ্চয়ই ।
ওনি আমার বাবা। আর আমি ওনার একমাত্র ছেলে রাজ চৌধুরী।বুঝতে পারলে?
রাফি: কি? স্যার আপনি আরফান চৌধুরীর ছেলে? আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। তো স্যার আপনার প্রবলেম কি? আর আমাকেই বা কেন ডাকলেন?
রাজ: আসলে রাফি কি জানোতো। আমি একটি ছেলেকে প্রচণ্ড ভালবাসি।
ফেইসবুকের মাধ্যমে ওর সাথে আমার পরিচয় । ওকে ছাড়া আমি এখন এক মুহূর্তও চলতে পারিনা। আমার পৃথিবীটা জুড়ে শুধু এখন আমি ইরফানকেই দেখতে পাই। তাকে একদন্ড না দেখলে আমার চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন দেখো। ভাগ্যের নিয়মে তাকে ছেড়ে আজ প্রায় ৫ মাস আমি অনেক দূরে আছি। বলতে পারো ইরফানই ছেড়ে চলে গেছে। স্কলারশিপ পাওয়ার পর ও এখন ইংল্যান্ডে আছে। আর কিছুদিন পরেই ফিরবে। ওর সাথে কমপক্ষে দিনে ৩ বার ফোনে আমার কথা বলতেই হবে।না হলে আমি থাকতেই পারিনা।আর কিছুদিন পরেই সে ফিরে আসবে।
রাফি? বিভোর হয়ে রাজের কথাগুলো শুনছিলো।
রাফি: স্যার এবার কাপটাতে ঠোট ছোয়ান। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে।
রাজ: অহ সিউর।
তুমিও নাও।
রাফি: হুম স্যার । শুরু করেন।
রাজ: কিন্তু বাবা এখন আমার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করেছে। আমি বাবাকে হাজারবার বুঝিয়েছি।
যে বাবা আমি সবে মাত্র লেখাপড়াটা শেষ করেছি। একটু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে দাও। তারপর না হয়….
কিন্তু বাবা আমার কোন কথাই কানে তুলছেনা।
আর আমি তো ইরফানকে ছাড়া আর কাউকেই আমার কল্পনার জগতে ভাবতে পারিনা। কিন্তু বাবাকে বলার মতো সেই শক্তি বা সাহস কোনোটাই আমার ছিলোনা।
কিন্ত ইরফানের অনুপ্রেরণায় আমি বাবাকে আমার মতভেদ জানিয়ে দেই । বাবা ব্যাপারটাকে হাস্যকর ভেবে উড়িয়ে দেয়।
আমি বাবাকে সিরিয়াসলি ভাবেই বলি। বাবা হাসতে হাসতে আমাকে বলেন যে আমি যেন দু একদিনের মধ্যেই ইরফানকে বাবার সামনে এনে উপস্থিত করি । ইরফানের সাথে বাবা কথা বলতে চায় সরাসরি ।বাবা দেখতে চায় আমার কথাটা সত্য কিনা।
প্রকৃতপক্ষে বাবা কথাটাকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা। আর তাই বাবা স্বচক্ষে দেখতে চায় ইরফানকে ।
আমার এখন এটা ভেবে ভয় করছে যে আমার এই অধপতন দেখে বাবা নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেন কিনা।
রাফি: স্যার সেটা পরে দেখা যাবে।
কিন্তু এখন তো আপনার ভালবাসা বাঁচাতে হবে।
রাজ: কিন্তু এখন আমি ইরফানকে বাবার সামনে আনবো কিভাবে। ইরফান তো এখন দেশের বাহিরে।
তাই তোমার এখানে আসা।
রাফি, তোমাকে ইরফানের ছদ্মবেশে আমার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে হবে।
পারবে তো?
রাফি একগাল ঠেলে হেসে দিয়ে বললো,
স্যার আমাদের অনুমতি নিতে হয়না।
আপনি যেভাবে বলবেন , আপনার ঠিক যেমন ইচ্ছে ,আপনি ঠিক তেমনভাবেই আমাকে ব্যবহার করতে পারবেন।
রাফির মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনার পর রাজের বুকের বামপাশটা কেমন একটা চিনচিন করে উঠলো।
রাজ বললো, রাফি এমনভাবে বলছো কেন?
এত তুচ্ছ কেন ভাবো নিজকে? তুমিও তো একটা মানুষ । আর তোমার ইচ্ছের মর্যাদা দেওয়াটা আমার কর্তব্য ।
রাফি হেসে দিয়ে ,
ইচ্ছে , মর্যাদা !
স্যার আপনার কথাগুলো সত্যিই আমাকে খুব হাসায়। আমাদের কোন ইচ্ছে নেই। আমরা পরের অধীনে কাজ করি। আমরা অন্যের শৃংখলে আবদ্ধ । অন্যের কথামতোই আমরা সব করি।
রাজ: কেন রাফি?? তোমাদেরও তো একটা ইচ্ছে আছে। কেন কোন স্বপ্ন দোখোনা।
রাফি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
সমস্ত প্রাসাদটাই যেন কেঁপে উঠছে রাফির হাসির ধ্বনিতে।
রাজ: হাসছো যে?
রাফি হাসি থামাতেই পারছেনা।
হাসি থামিয়ে রাফি বলতে লাগলো,
বড্ড হাসালেন স্যার। এ বছরেও মনে হয় এমন হাসা হাসিনি।
রাজ: কেন? আমি এমন কি বললাম।
যার জন্য তুমি হাসতে হাসতেই খুন।
রাফি সোফা থেকে উঠে পড়লো।
চোখের কোনে কিছুটা জলও দেখা যাচ্ছে ।
রাফি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে লাগলো।
স্যার রতনদা বলেছে। আমাদের স্বপ্ন থাকতে নেই। আমাদের স্বপ্ন দেখা বারন।
রাজও দাড়িয়ে গেলো।
কেন রাফি? আর দশটা মানুষের মত তোমারও তো জীবন আছে। তোমারও তো স্বপ্ন থাকার কথা।
রাফি: আপনি কি এসব বলার জন্যই আমাকে ডেকেছেন। আমার এসব মোটেও ভাল লাগছেনা। যদি আপনার কাজ শেষ হয়ে থাকে। তাহলে আমাকে টাকা দিন। বেরিয়ে পড়ি।
রাজ: প্লীজ রাফি, কাম ডাউন। উত্তেজিত হয়োনা। বসো। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি।
রাফি: আপনি আর আঘাত করলেন কোথায় ? এখনোও তো বিছানাতেই গেলেন না। আঘাত তো অনেক দূরে।
রাফির কথাগুলো রাজের বুকের মধ্যে মনে হচ্ছে একেকটা সূচের মতো বিধছে।
আর মনে হচ্ছে এই কথা গুলো যেন তার নিজের মুখ থেকে নয়। এমন একটা কিছু আছেযা তাকে বাধ্য করছে এসব বলতে, এসব করতে। তার ভিতরে কষ্টের ভারী একটা পাথর আটকে আছে। যা সে কাউকে বলতেও পারছেনা।
না আমাকে পিছু হটলে চলবে না। আমার আজ জানতেই হবে। জানতে হবে রাফির অতীত। আরো যতো কটু কথাই বলুক না কেন রাফি।
রাজ: রাফি তুমি আমাকে স্যার নয়। একজন ভালো বন্ধু ভাবতে পারো।
রাফি: কেন স্যার? আপনার কি বন্ধুর অভাব পড়েছে? যার জন্যে একটা পতিতাকে আপনার বন্ধু বানাতে চাইছেন।
রাজ: তুমি এ পথে নামলে কেন রাফি? প্লীজ আমাকে বলতে পারো। আমি শুনতে চাই । তোমাকে এ পথ কেন ধরতে হলো।
রাফি: স্যার আমাদের জীবনটাই এরকম। বড় বিচিত্রময়।
আমিও একটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই জীবনে বাঁচতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম ছোট্ট একটা সাজানো সংসার হবে আমার।আমার মা-বাবা আর ছোট ভাই বোনদের নিয়ে।
কিন্তু সব ইচ্ছে তো পূরন হয় না।আর তাই আমারও বোধহয় এই ইচ্ছেটা পূরন হয়নি।যা আমার পুরো জীবনের মোড়টাই অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলো ।
আমাকে একটা নষ্টা ছেলে করে দিলো।
রাফির গাল বেয়ে জল পড়ছে। চোখের জল গুলোই তার ভিতরের কষ্টগুলোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাফি আবার বলতে শুরু করলো।
আমাদেরও একটা সাজানো পরিবার ছিল স্যার। মা-বাবা আর ছোট্ট ভাই বোনগুলোকে নিয়ে।
আমার বাবা একজন দিনমজুর ছিলেন। রিকশা চালাতেন।
আর আমি ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র । কিছু পাড়ার ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে আর বাবার আয় দিয়ে আমাদের ভালোই চলে যাচ্ছিলো দিন গুলো।
কিন্তু একদিন, টিউশনি শেষে বাসায় ফিরছিলাম। দেখলাম পথের মধ্যে অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে।
আমি ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম।
এতবড় একটা করুন দৃশ্য আমাকে দেখতে হবে আমি কোনদিনও ভাবিনি।
বাবা রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে রাস্তার মাঝখানে । আমি চিৎকার দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। ততক্ষণে বাবা আর ইহলোকে নেই।
পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
এতবড় একটা আঘাত মা সইতে না পেরে হার্ট এটার্ক করেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলেন নিয়মিত ঔষুধ চালাতে পারলেই মা-কে সুস্থ রাখা যাবে। যার জন্য প্রতি মাসে মার জন্য প্রায় ছয়-সাত হাজার টাকার ঔষুধ প্রয়োজন হয়।
এই মা-ই তো আমার পৃথিবীর সব। বাবাকে হারিয়ে আমার একটা স্বর্গ হারিয়েছি। আর একটা স্বর্গ যদি আমি টিকিয়ে রাখতে না পারি তাহলে আমার আর আমার ছোট ভাই বোনদের জীবনটা অন্ধকারে ছেয়ে যাবে । এতিম হয়ে যাবো আমরা।
দিন না পেরোতেই বাড়িওয়ালা চাচা তার ভাড়ার জন্য এলার্ম দিয়ে যান।
ছোট ভাই বোনগুলোর মুখে দুটো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য দোকানদার রহিম চাচার দোকানে বাকির স্তুপ জমিয়ে ফেলেছি। ভাই-বোনটাকে স্কুলের বেতন দিতে হবে।
সবকিছু মিলিয়ে আমার মাথায় যেন কেউ পাথর দিয়ে আঘাত করছে।
প্রতিনিয়ত এমন ব্যথায় কুকড়াচ্ছিলাম।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রতন দার কাছ থেকে টাকা ধার নেই।
আরো টাকা দরকার পড়ে।কিন্তু
রতন দা আর দিতে চায়না।
বলে টাকা নিতে নিতে তো আমাকে লাঠে তুলে ফেলছিস।কতবার বললাম যে চলে আয় আমার সাথে।এতবড় একটা সংকটে পড়ে আছিস।তবুও তোর ভয় হয় না।
মা ভাই, বোন গুলোর জন্য দুঃখ হয়না।
আরে , এইভাবে আর কয়দিন চলবি?
যা বলছি তা মন দিয়ে শুন।চলে আয়।
সারাদিন মায়ের সেবাযত্ন করবি ভাই বোনটাকে দেখে রাখবি।আর রাত হলে আমার সাথে চলে যাবি।
শুধু রাতটুকুই তো।সকাল হলেই তো তোর ছুটি। কেউ আর তোকে আটকাবে না।
প্রতি রাত একহাজার করে পাবি।
ভাগ্য ভাল হলে দুই হাজারোও পেতে পারোস।
এত ভাবিস না।যা বলছি তাই কর।
আমি রতন দা কে বললাম , দাদা পাড়ার মানুষ। মা , আমার কলেজের ছাত্র ছাত্রী গুলো?
আরে, ওরা জানলেই তো। তুই কি ওদেরকে বলতে যাবি। নাকি আমি যাবো।
ওরা তো টেরই পাবেনা।
আরে তুই আত্মসম্মানের কথা ভাবস? তোর পরিবারের লোকজনই যদি না থাকে, তাহলে তুই আত্মসম্মান দিয়ে কি করবি।
গোষ্ঠী মারি এই আত্মসম্মান বোধের।
আজকে মার ঔষুধ নেই। আজকের জন্য অন্তত পাচশো টাকা ধার দাও।
ধমক দিয়ে রতন দা আমাকে তাড়িয়ে দেয়।
পরে ভেবে দেখলাম যে, বাবার দায়িত্বটা তো আমাকেই নিতে হবে।
আর তা ছাড়া কমতো ঘুরিনি চাকরির জন্য । এই শহরে ইন্টার পাসের কোন চাকরি নেই। চাকরির জন্য ঘুরতে ঘুরতে কঠিন এই অচেনা শহরটা আমার কাছে আরো পরিচিত হয়ে উঠলো।
নেমে এলাম।
এই পথেই ভাগ্য আমাকে নেমে আসতে বাধ্য করলো।
কথাগুলো শেষ হওয়া পরে রাফির চোখগুলো থেকে দুফোটা চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।
এতগুলো কথা রাজ একাগ্রচিত্তে শুনছিলো। রাজের বুকটা ফেটে যাচ্ছে রাফির এই সিনেমাকে হার মানানো জীবন কাহিনীটা শুনে। ভাবতেই পারছেনা।
একটা মানুষের জীবন এমন কষ্টের হয় কিভাবে? এত কষ্ট নিয়েই বা একটা মানুষ বেঁচে থাকে কি করে? চোখ গুলো নিজের অজান্তেই ভিজে এলো।
রাজ: রাফি তুমি আর কোথায়ও চাকরির খোজ করোনি?
রাফি: কোথাও বাদ পড়েছে বলে তো মনে হয় না।
রাজ: না মানে আরো ভালো করে দেখতে। কত রকমের কাজই তো আছে।
রাফি এবার কিছুটা রেগে উঠে বলতে লাগলো,
কি বলত চাচ্ছেন আপনি।একটা মানুষ শখ করে এই পথে নামে।
আমি শখ করে এই পথে নেমেছি।
চাকরির জন্য হাজারো মানুষের দ্বারে দ্বারে আমি ঘুরেছি।কিন্তু কোথাও পাইনি।
বলেই রাফি কান্নায় ভেঙে পড়লো।
রাজ কি বলে রাফিকে শান্তনা দেবে বুঝতেই পারছেনা।
আর রাফিকে এই নড়ক থেকে বের করতে হবে। কিন্তু আমি বললেই কি রাফি আমার কথা শুনবে। বেরোবে এই অন্ধকার থেকে। যেই হৃদয়টা ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে সেই হৃদয় কি আবার জোড়া লাগবে।এসব ভাবছিল রাজ।আর তার মধ্যে রাজের ফোনটা বেজে উঠলো।
আফনান সাহেব ফোন করেছে।
রাজ: হ্যালো বাবা। তুমি কোথায় ?
আরফান চৌধুরী: হ্যাঁ আমি এসে পড়েছি। পাঁচ মিনিট ওয়েইট করো। তুমি কোথায় বাংলোতে?
রাজ: হ্যাঁ বাবা।
আরফান চৌধুরী:আমি আসছি।
ফোনটা রেখে দিলো।
রাফি: স্যার , কে ফোন করেছিলো? আপনার বাবা?
রাজ: হুম।
রাফি: হ্যাঁ সেটা বুঝতে পেরেছি।
রাজ ভাবনার গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো।
রাফি: কি ভাবছেন স্যার।
রাজ: না কিছু না । তবে কি জানো? বাবা আমাকে খুব ভালবাসে। আমাকে নিয়েই বাবা-মার সব স্বপ্ন । বাবার আশাগুলোত এভাবে গুড়েবালি দিচ্ছি । আমার কি এটা ঠিক হচ্ছে । আমি কোন ভুল করছিনা তো রাফি?
রাফি: স্যার। আপনি কোন ভুল করছেন না। আপনি আপনার মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা আকাঙ্ক্ষা আপনার বাবাকে জানিয়েছেন। কিন্তু আপনার বাবা তা মেনে নিচ্ছে না। সেটা আপনার বাবার ভুল।
রাজ: রাফি তোমাকে জাস্ট বাবার সাথে একটু কথা বলতে হবে।
আর একটু কুশল বিনিময় করবে। এই একটু।
রাফি: স্যার আপনার বাবা কিন্তু প্রচন্ড রাগী। আমাকে দেখে আবার কিছু করে বসবেন না তো।
রাজ: আরে না। তুমি ভয় পেয়োনা।
আর শোন। তুমি কিন্তু এখন ইরফান। আমার ভালবাসার মানুষ । সো পরিস্থিতি মোতাবেক তোমাকে অনেক রকমের একটিংই করতে হবে।আর তোমার বাবা মায়ের নাম জিজ্ঞাসা করলে তোমার সত্যটাই বলবে। শুধুমাত্র লেখাপড়ার ব্যাপারটাই বলবে যে তুমি ইংল্যান্ড থেকে পড়ছো। ঠিক আছে?
রাফি: জি স্যার।
এরই মধ্যে কলিং বেইল বেজে উঠলো।
বসো রাফি। আমি গিয়ে দরজা খুলছি।
রাজ: বাবা ভেতরে এসো।
রুমে ঢুকতে ঢুকতে রাজ বলতে লাগলো বাবা তোমাকে ইরফানের কথা বলেছিলাম না। ওকে আজ এনেছি।
আরফান চৌধুরী: কোথায় সে?
রাজ: ওই যে।
আরফান চৌধুরী রাফির দিকে এগিয়ে এলো।
তুমিই ইরফান?
রাফি একটু হতভম্ব হয়ে গেলো।
মনে মনে ভাবতে লাগলো। এখনতো আমিই ইরফান।
জি, জি আমিই ইরফান।
আরফান চৌধুরী: কোথায় থাকো ? কিসে পড়ো?
রাফি: আংকেল গুলশান একে থাকি।
স্কলারশিপ পেয়ে এখন ইংল্যান্ডে আছি। কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে আসবো।
আরফান চৌধুরী: বাবা মা কি করে?
রাফি: বাবা কলেজের প্রফেসর। আর মা গৃহিনী ।
আরফান চৌধুরী: রাজ, তুমি এখন এখান থেকে একটু যাওতো।
রাজ: কেন বাবা। আমার সামনে কথা বলতে কোনো সমস্যা আছে।
সমস্যা থাকলে কথা বলার দরকার নেই। আমি এখান থেকে যাবোনা।
আরফান চৌধুরী: বড্ড মুখে মুখে কথা বলা শিখে গেছো না।
রাফির দিকে এবার আরফান সাহেব তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্র ঘরেরই সন্তান।
এবার বলো,কতো টাকা পেলে আমার ছেলের জীবন থেকে সরে যাবে?
রাফি এতক্ষণ নিচের দিকে মুখ করে সব কথা শুনছিলো।
এবার মাথা তুলে আরফান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে,
মানে?
কি বলতে চাইছেন এসব?
আরফান চৌধুরী: কেন বুঝতে পারছোনা। রাফি: আমি টাকার জন্য আপনার ছেলেকে ভালোবাসিনি।
আর আপনি ভালবাসা টাকা দিয়ে কিনতে চান?
রাজ: বাবা। তুমি এসব কি বলছো।
আরফান চৌধরী ধমক দিয়ে বললো।
এই ,তুই চুপ কর।
আরফান চৌধুরী: আমি ভালো করেই জানি।তোমাদের মতো ছেলেদের উদ্দেশ্য।
কি খাইয়ে আমার ছেলেকে বশ করেছিস কে জানে? যার জন্য আমার ছেলে শহরে এত সুন্দরী মেয়ে থাকতেও তোর পিছনে পাগলের মতো ছুটছে।
লোভী, ছোটলোক। এদের মা বাবাই লেলিয়ে দেয় বড়লোক ছেলেদের পিছনে।
রাফি: মুখ সামলে কথা বলুন।
আমি ছোটলোক নই। আর আমার মা বাবার সম্পর্কে কোন রকম খারাপ কথা বলবেন না। সীমা লংঘন করলে আমিও জানি কিভাবে সীমার রেখার ভিতরে রাখতে হয়।
আরফান চৌধুরী এবার রেগে গিয়ে বলতে লাগলো,
কি তোর তো সাহস কম নয়।তুই আমার মুখের উপর কথা বলছিস।বলেই রাফির গালে সজোরে এক থাপ্পড় মেরে বসে।
রাজ তার বাবার এইরকম আচরণ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে এগিয়ে এসে তার বাবাকে বলতে লাগলো,
অনেক হয়েছে আরফান চৌধুরী। থামুন।
আমি এতক্ষণ মুখ বুজে সব সহ্য করছিলাম। তাই বলে এই নয়যে আমি পঙ্গু হয়ে গেছি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবোনা।
কি ভাবেন আপনি নিজেকে? হ্যাঁ ?
যখন যা ইচ্ছা তাই করবেন।
কারো ইচ্ছা ,আকাঙ্ক্ষা , ভালোবাসার কোন মূল্য নেই আপনার কাছে?
সবসময় টাকাটাই আপনি বড় করে দেখেছেন। টাকার কাছে আপনি সবকিছু মূল্যহীন ভাবেন।যার জন্য আজ একমাত্র ছেলের সুখকেও আপনি বিসর্জন দিচ্ছেন ।
আর শুনুন।
আপনার মতো বাবা আমার পাশে না থাকলেও চলবে। যতদিন বাঁচব , আমাকে একটু সুখে বাচঁতে দিন।
আমার আর ভালোবাসার মধ্যে বাঁধা হয়ে দাড়াবেন না প্লীজ। আমি আপনার কাছে করজোড়ে মিনতি করছি। প্লীজ আপনি এখান থেকে চলে যান।
আরফান সাহেবের চোখগুলো ধীরে ধীরে ঘুলাটে হয়ে আসছে।
মনে হচ্ছে তার হৃদয়টাকে কেউ চাকু দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে তুলছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।সে তার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।?
তার একমাত্র ছেলে তাকে এভাবে অপমান করবে শুধুমাত্র বাহিরের এক ছেলের জন্য।
তিনি রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
পিছু হটতে শুরু করলেন।
বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।
রাফি: আপনি এসব কি করলেন স্যার? ওনি যা বলেছে আমাকে বলেছে আপনি কেন ওনাকে এমন ভাবে কঠোর কথা বলতে গেলেন?
রাজ: তুমি চুপ করো।
আমি তোমার জন্য কিছু করিনি।
আমি আমার ইরফানের জন্যই এত কিছু করেছি।আমার ভালবাসার জন্য ।
তবে হ্যাঁ এটা বলতে পারো যে, আমি তোমার উপর বাবা হাত তোলাতে ঠিক থাকতে পারিনি।
যার জন্য আমার মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছিলো।
রাজ মাথায় দুহাতে চেপে ধরে সোফায় বসে পড়লো।
বাবার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছি বোধহয় । কিন্তু কিই বা করার ছিলো, বাবাই তো আমাকে বাধ্য করলো এরকম ব্যবহার করতে।
রাজ মাথা নিচের দিকে করে বসে আছে।
রাফি: স্যার । একটা কথা বলবো।
আপনার ভালোবাসা সফল হউক এই প্রার্থনাই করবো স্রষ্টার কাছে।
এরকম ভালোবাসা পৃথিবীর বুকে সত্যিই বিরল।
আচ্ছা স্যার ভোর হয়ে আসছে।
আমি এখন আসি।
রাজ: দাড়াও। একটু বসো। আমি উপর থেকে আসছি।
বলেই রাজ সিড়ি বেয়ে উপরে গেলো।
কিছুক্ষণ পর হাতে করে একটি কিসের কাগজ যেনো নিয়ে এলো।
রাজ: নাও। এটা ধরো।
রাফি: এটা কি স্যার ?
রাজ: আহা ধরইনা।
রাফি রাজের হাত থেকে কাগজটা নিতেই দেখলো এটা একটা চেক।
যার মূল্য এক লক্ষ টাকা।
রাফি: স্যার এটা আমাকে দিচ্ছেন কেনো?
রাজ: এটা তোমার পারিশ্রমিক ।আমার তরফ থেকে তোমাকে এটা উপহার হিসেবে দিলাম তাও বলবোনা।জানি তুমি নেবে না।
রাফি: স্যার এটা তো আমার প্রাপ্য নয়।
রাজ: কেন? এটাই তো তোমার প্রাপ্য ।
আমার কথামতো তুমি বাবার সামনে যদি আজ না আসতে তাহলে আজ কি যে হতো।
রাফি: না স্যার । এটা আমি নিতে পারবোনা। আমার ব্যক্তিত্ববোধে আঘাত করছে।
আমি সারা রাত আর যেখানেই কাটাই। সেটা ফাইভস্টার হোটেল হউক বা ফুটপাতই হউক, আমার মূল্য এক হাজারই।
এক লক্ষ নয়।
দিন । আমাকে আমার মূল্য পরিশোধ করে বিদায় করুন।
রাজ পলকহীন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে। কতটাকা পয়সা, বাড়ি গাড়ির মালিক লোক দেখলাম । হাজারো রঙের মানুষ দেখলাম।
কিন্তু এরকম আমার চোখের পড়েনি। কত আদর্শবান তার বিবেক, তার চিন্তাধারা।
কতো উচ্চ তার মনুষত্ব বোধ।
যা রাজের কোমল হৃদয়কে সত্যিই স্পর্শ করলো।
রাজ পকেট থেকে টাকাটা বের করতে যাবে, এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে।
হ্যালো কে বলছেন?
হুম। আমিই রাজ চৌধুরী। বলুন কি বলবেন।
হোয়াট?
রাফি: স্যার কি হয়েছে।
রাজের মুখ থেকে কোন কথা বেরোচ্ছে না।
রাফি: স্যার কি হলো। চুপ করে আছেন কেন?
কি হয়েছে বলুন।
রাজ: রাফি বাবা হার্টস্টোর্ক করেছে।
হাসপাতালে যেতে হবে।
চলো তুমি আমার সাথে।
রাজ হাসপাতালে আসার পর তার বাবার কেবিনে গেলো। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে তার।
আজ তার জন্যই বাবার এ অবস্থা ।
রাফিও রাজের সাথে তার বাবার কেবিনে প্রবেশ করলো।
রাজের মা সোহেনা বেগম তার বাবার মাথার শিউরে বসে বসে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে ।
বাবার জ্ঞান ফিরেনি।
রাজ তার বাবার কাছে যেতেই সোহেনা বেগম চিৎকার করে উঠলো,
স্টপ। স্টপ।
আর একপাও এগোবেনা।
তুমি যদি আর একপাও সামনের দিকে এগিয়েছো, তাহলে আমি আমার জীবন দিয়ে দেব।
তোমার মতো এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমি গর্ভেধারন করেছিলাম তা আমার ভাবতেও ঘৃন্না হচ্ছে । তোমার ঐ মুখটা দেখতেও আমার রুচিতে বাধঁছে।
তোমার বাবা আজ তোমার কাছে যাওয়ার পরই এই অবস্থার শিকার হয়েছে।
রাজ নির্বাক হয়ে কথাগুলো শুনছিলো
রাজ: এসব তুমি কি বলছো মা,
তুমি জানোনা, বাবা ইরফানের সাথে…..
সোহেনা বেগম: চুপ। আর একটা কথাও না। আর আমাকে আর ঐ মুখে কোনদিন । মা বলে ডাকবেনা। আজ তোমার জন্য আমি আমার স্বামীকে হারাতে বসেছি।
আমি তোমাকে ত্যাজ্য করে দিলাম।
যাও। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও ।
রাজ পাথরের মতো তার মার কথা গুলো শুনছিলো।
কিন্তু তার ভিতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। চোখ থেকে শ্রাবনের অঝোর ধারা ঝরেই যাচ্ছে ।
রাজ কেবিন থেকে বেরিয়ে বাহিরে এসে কাঁদতে লাগলো।
রাফি রাজের কাঁধে হাত রেখে বলতে লাগলো,
স্যার কাদঁবেন না।
সবঠিক হয়ে যাবে।
রাজ: এ কি হলো রাফি, আমি আমার ভালোবাসাকে কাছে পেতে আমার মা বাবাকে হারাতে বসেছি।
স্যার চিন্তা করবেন না।বিধাতা যা কিছু করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।আপনি দেখবেন, আবার সবঠিক হয়ে যাবে।
রাজ: সত্যিই সব ঠিক হবে তো রাফি?
রাফি: হুম স্যার । সবঠিক হয়ে যাবে।
রাজ কাঁদতে কাঁদতেই কষ্টের ঘোরের মধ্যে রাফিকে জড়িয়ে ধরে।
রাফির শরীরে একটা ঝর বয়ে গেলো। এমন তো কখনো হয়নি।
তাহলে আজ কেন এরকম লাগলো।
স্যারের স্পর্শে মনে হলো শরীরে এক সমুদ্র তরঙ্গের ঢেউ খেলে গেলো।
বুঝতে পারছিনা।
রাজ এবার নিজেকে রাফির বুক থেকে সরিয়ে নিলো। একটা লজ্জা বোধ করলো রাজ।কিসের মধ্যে কি করে বসলো।
রাফি: আচ্ছা স্যার আপনি কাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খাননি।
চলুন কিছু খেয়ে নিবেন।
রাজ: না রাফি। ভালো লাগছেনা।তুমি গিয়ে খেয়ে এসো।
রাফি: না স্যার । আপনি না গেলে আমিও যাবোনা। আর আমিও কিন্তু এখনো কিছু খাইনি।
অগত্যা রাজকে যেতেই হলো।
একটা হোটেলে খেতে বসে রাজ রাফিকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
আচ্ছা রাফি, তোমার তো এই পথটা ছাড়া উচিত। তোমার সামনে পুরো জীবনটা পড়ে আছে।
রাফি: স্যার,আমার জীবনের চিন্তা করলে আমার পরিবারকে নিয়ে কে ভাববে? আমাদের জীবন বলতে শুধু আমাদের দেহটাকেই বুঝায়।
রাজ: আচ্ছা রাফি, তোমার কি হতে ইচ্ছে করতো, আই মিন তুমি কি হতে চাও ।
রাফি: স্যার আমার বাচ্চাদের পড়াতে ভালো লাগতো। আর রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পাড়ি। যা এখনকার যুগে চলেনা।
রাজ: আচ্ছা রাফি, তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে, বা বাসতে ইচ্ছে করে।
আর কেমন মানুষই তোমার ভালো লাগে।
রাফি: একটা মলিন হাসি দিয়ে ।
হুম স্যার । আমারও একটা ইচ্ছে ছিলো। এমন কেউ থাকবে আমার জীবনে। যে আমাকে খুব ভালোবাসবে। তার পুরোটা জুড়ে শুধু আমিই থাকবো । আমাকে তেমন সুখ দিতে না পারুক, কখনো অন্তত দুঃখ দিবেনা।
সিনেমার হিরোর মতো একটি লাল গোলাপের জন্য সে দূর বহুদূর ছুটে যাবে।
আর সেই ফুলটি সে আমার হাতে এনে তুলে দেবে।
আর তখন কি হবে জানেন, ফুলটি হঠাত্ করে , একটা আমড়া হয়ে যাবে। আর আমি তখন বলবো “টকটক ভালোবাসা”।
বলেই রাফি হাসতে লাগলো।
রাজের চোখের পাতাগুলো পড়তেই যেন ভুলে গেছে। যতই দেখছি এই মানুষটাকে ততই মুগ্ধ হচ্ছি। কি আছে তার মধ্যে ঠিক বুঝতে পারছিনা।
রাজ: আচ্ছা রাফি তুমি যদি কোন চাকরি পাও তাহলে তো নিশ্চয়ই এ পথ থেকে ফিরে আসবে।
রাফি: দয়া দেখাতে এসেছেন স্যার।
দয়া করে আমি যেমন আছি তেমনটাই থাকতে দিন।পারলে আমাকে একহাজার টাকা ধার দিন।আমি শোধ করে দেবো।
আর স্যার আমরা রাতের পাখি। দিন হলে পৃথিবীর আড়ালে লুকিয়ে থাকি , আর রাত হলেই বেরিয়ে পড়ি খদ্দেরের জন্য।বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাফি।
রাজ তার পকেট থেকে দুটি একহাজার টাকার নোট রাফির দিকে বাড়িয়ে দিলো। ইচ্ছে করছে পকেটের সবগুলো টাকা রাফিকে দিয়ে তার দুঃখটা ঘুচিয়ে দেই। একটু হাসি ফুটিয়ে তুলি তার ঐ মায়াবী মুখটায়।কিন্তু আজ আমি তা চাইলেও পারবোনা।
রাফি: ধন্যবাদ স্যার।আপনি আমার কতবড় একটা উপকার করলেন তা আপনি নিজেও জানেন না।
আপনি কোথায় থাকবেন বলুন। আমি টাকাটা নিয়ে আসবো।
রাজ: তুমিই বলো। কোথায় আসতে পারবে।
রাফি: স্যার । মোড়ের ঐ পাশে পার্কটাতে আসবো। আজ কি বার?
বৃহস্পতিবার তো। ঠিক আছে। আমি আগামী বৃহস্পতিবার ঠিক বিকেলে আপনার টাকাটা নিয়ে আসবো।
রাজ: আচ্ছা ঠিক আছে। আমিও থাকবো।
আচ্ছা স্যার এখন যাইতাহলে ।উঠে চলে গেলো রাফি।
রাফির গমনপথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজ। বুকটা কেমন জানি শূন্যতায় ভরে উঠলো। ঠিক আন্দাজ করতে পারছিনা। কেমন জানি খালি খালি লাগছে বুকটা। চোখও জল ভর্তি হয়ে গেলো। এমন হচ্ছে কেন আমার ।
আর যেভাবেই হউক রাফিকে এ পথ থেকে ফিরাতেই হবে।
ততক্ষণে রাফি রাজের দৃষ্টির অন্তরাল হয়ে গেছে।
এসব ভাবতেই রাজের মোবাইলে ইরফানের ফোন উঠলো।
রাজ: হ্যালো ইরফান, কেমন আছো।
আজ দুদিন হলো তেমন ফোনও করোনা। আমি কেমন আছি তাও জানতে চাওনা।কি হয়েছে তোমার ?
ইরফান: রাজ, তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
রাজ: কি কথা বলবে।
আচ্ছা তুমি কি বলো তো। এখনই সব কথা শেষ করে ফেলবে। দুদিন পরতো আসবেই। তখন না হয় সব বলবে।
ইরফান: না রাজ। আমি আর দেশে ফিরছিনা ।
রাজের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো,
রাজ : মানে?
ইরফান : মানে রাজ , আমি এখানে বিয়ে করেছি। আর এখানে থাকতে পারলেই আমি আমার ফিউচার উজ্জ্বল করতে পারবো। তোমার জন্যও শুভ কামনা রইলো। কষ্ট নিয়োনা। কিছু করার ছিলোনা আমার । আজ রাখি। কথা হবে বাই।
ফোনটা কেটে দিলো ইরফান।
রাজ নির্বোধের মত এতক্ষণ ইরফানের কথাগুলো শুনছিলো।
এসব কি শুনলাম আমি।
ইরফান কি আমার সাথে তাহলে ভালবাসার নামে নাটকই করে গেলো।
কি এমন দোষ করেছিলাম। অন্ধের মতো ভালবেসেছি ইরফানকে। আর সে কিনা আজ আমাকে এতবড় একটা ধোকার সম্মুখীন করলো। হৃদয়ের সব আশা ভরসা এভাবে ভেঙে দিতে পারলো ইরফান।
দুচোখ বেয়ে রক্ত কান্নাই ঝরে যাচ্ছে। আমার ভালবাসার কোন দামই ছিলোনা ইরফানের কাছে।
একদম নিস্তেজ হয়ে পড়েছে রাজ। মনে হচ্ছে একটা জীবন্ত লাশ। কি করবে সে এখন।
যার জন্য রাজ তার পরিবার থেকে নিরবচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো, বাবা মার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলো। আজ সে তার ভালোবাসাকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করলো, ছুড়ে ফেলে দিলো ধুলোয়।
রাজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। বাবা-মার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। রাফিকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।কত মহান হৃদয়ের একটা মানুষ।
এসব ভাবতে রাজের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একসিডেন্ট করে।
২মাস পর
কি হইলো সাহেব, অহনো আফনে ঐ বেডার লেইগ্গা অপেক্ষায় থাহেন?
আরে ওনারা বড়লোকের পোলাপাইন। হেগো কথা আর কাড়কার গাতা হমান। অরা আডে আর মাইনষের মন ভাঙ্গে। আফনে আর কয়দিন হের লেইগ্গা এইমনে কানবেন আর বইয়া থাকবেন?
রাফি বলতে লাগলো, আরে না চাচা। কি বলছেন। আমি কোথায় কাঁদি।
হ কইলেই অইলো। আমারে বোকা ভাইব্বনা। আমার চউখ ফাকি দেওয়ার মত চালাক এহনো হও নাই।
এসব বলতে বলতে চলে গেলো দারোয়ান চাচা।
আজ ২ মাস যাবত রাজের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে রাফি। সেটা কি শুধু ধার শোধরানোর জন্য। নাকি অন্যকিছু ।
কিন্তু রাজ একদিনের জন্য ও এই পার্কে আসেনি।
রাফি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আসলেই বিকেলের দিকে হেঁটে চলে আসে এই পার্কে।
রাজের কথা সে আজ রাখতে পেরেছে। রাজের তো কোন
স্বার্থ ছিলোনা। তবে সে কেন চাইতো , রাফি এই অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসুক।
যার প্রেরণায় রাফি আজ এই অবস্থায় তাকে তো দেখাতে হবে।
রাফি এখন শিল্পকলা একাডেমির টিচার।
পড়ানোর পাশাপাশি বাচ্চাদের গান শেখায়।
খুব সম্মানিত ব্যক্তি আজ রাফি। কিন্তু তবুও যেন কোথাও একটা কমতি রয়ে গেছে।
স্যারের হাতটা ধরে আর কিছু না বলতে পারুক, অন্তত ধন্যবাদ টুকু তো দিতে পারবে। সেটাই অনেক।
কিন্তু স্যার কি তার ইরফানের কাছে ইংল্যান্ড চলে গেলো।
এসব ভাবতে গেলেই রাফির মনের মধ্যে কেমন একটা হিংসাত্মক ভাব জেগে উঠে।
কেমন জানি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। দাতে দাত লাগিয়ে কটমটিয়ে ইচ্ছে করে মাথার চুলগুলো ছিড়ে ফেলি।
কিন্তু তবুও। স্যারের জন্য অপেক্ষা করি। যদিও স্যার অন্য একজনের। তাতে কি হয়েছে । আমিও তো বোধহয় স্যারের হয়ে গেছি। বলেই একটু হেসে উঠে।
অপেক্ষা করি। স্যার যদি কোনদিনও এখানে আসে। তাহলে যে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হবে।
এসব হাজারো ভাবনা রাফির মাথায় দলাপাকিয়ে দেয়।
রাজ এখন অনেকটা সুস্থ । একটা হাতল ধরে লেংড়িয়ে লেংড়িয়ে হাটে। প্রায় একমাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।
আরফান সাহেব তার অহংকার আর আভিজাত্যের মোহের মধ্যে ছিলো। সে তার ভুল বুঝতে পেরে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। মেনে নিয়েছে তার ভালোবাসা । কিন্তু রাজ এখন নিঃস্ব।
ভালোবাসাহীন।
ইরফানকে প্রায় ভুলেই গেছে রাজ।
কিন্তু এতদিন পরও যার কথা হৃদয়ে গেঁথে আছে, রাফি। তার প্রতি রাজের ভালোবাসা ক্রমান্বয়ে বেড়েই গেছে।
কিন্তু এখনো তার ভালোবাসাটা রাফিকে জানানো হয়নি।
কিভাবেই বা জানাবে।
রাজ যে আজ অক্ষম ।
এসব ভাবতে গেলেই রাজের কষ্টের মাত্রা আরো দিগুন বেড়ে যায় ।
না। এভাবে কষ্ট পেতে পেতে আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলবো।
আমাকে আমার ভালোবাসার সামনে দাড়াতেই হবে।
বলতে হবে তাকে আমি ভালোবাসি।
আজ বৃহস্পতিবার ।
বসন্ত চলে এসেছে ।
চারদিকে শুধু ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে। পলাশ তার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে চারদিক।
রক্তিম বর্নে চারদিক এক রক্তিম আভা ধারন করেছে ।
কোকিল তার মায়াভরা কন্ঠে ভালোবাসার গান গেয়ে যায় ।
আমন্ত্রণ করে যায় ভালোবাসার ।
মাঝে মাঝে দক্ষিণা বাতাস এসে রাজের শরীরে পরশ বুলিয়ে যায় ।
এলোমেলো চুলগুলো বাতাসের সাথে নেচেই যাচ্ছে ।
ভুবন তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য দিয়ে পৃথিবীকে সজ্জিত করে তুলেছে ।
রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো রাজ।
অসংখ্য ফুলের সমাহার বসে আছে রাস্তার ধারে ধারে ।
রাজ সেখান থেকে হৃদয়স্পর্শী একটা সাদা গোলাপ কিনে নেয়।
পার্কে ঢুকার পরই একটা শীতল বাতাস এসে রাজের শরীরটাকে দুলিয়ে দেয়।
ভিতরে ঢুকার পর রাজ দেখতে পেলো কে যেনো একটা চোখে চশমা দেওয়া বসে আছে একটা বেঞ্চে।
রাজ আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে যায় ।
তার ভালোবাসা আজ স্বার্থক হয়েছে।
রাফি বসে আছে সেই বেঞ্চিতে।
রাজকে দেখে রাফি দাড়িয়ে পড়লো। একটা কাঠের পায়ের উপর ভর করে রাজ দাড়িয়ে আছে।
রাফিকে দেখার পর রাজের মনে হলো সে সুস্থ হয়ে গেছে।
কারণ যত ব্যথা ছিলো, সব তার বুকের মধ্যেই ।কিন্ত আজ সেই ব্যথার অবসান ঘটেছে।
হাতলটা ফেলে দিয়ে রাজ রাফির খুব কাছে চলে আসলো।
ভালোবাসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে দুজোড়া চোখ দিয়ে ।
রাফি: স্যার । আপনি কোথায় ছিলেন ।
জানেন আমি কত বার এখানে আপনার জন্য এসেছি।
শুধু মাত্র আপনি আসবেন, সেই ভরসায় ।
রাজ তার দুমাস আগের সব স্মৃতি রাফির সামনে তুলে ধরল।
রাফি: স্যার আপনার টাকাটা।
রাজ: শুধু এই টাকাটা দেওয়ার জন্যই তুমি এভাবে অপেক্ষার প্রহর গুনতে?
রাফি মাথাটা নিচের দিকে ঝুকিয়ে দেয়।
রাজ রাফির থুথুতে ধরে মুখটা রাজের দিকে তুলে ধরে বললো,
আর কিছুই ছিলনা এর পিছনে।
রাফি চুপ করে আছে,
স্যার আমি আপনার কথা রাখতে পেরেছি।
আমি আজ টিচার হতে পেরেছি।
রাজ: সেটা আমি বলিনি রাফি, আর কিছুই প্রত্যাশা করনি আমার কাছ থেকে।
রাজ তার হাতের গোলাপটি রাফির হাতে তুলে দেয়।
রাফি অবাক দৃষ্টিতে রাজের ঐ মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেনা সে।
টপটপ করে পড়তে লাগলো ।
আজ কাঁদতেও তার ভালো লাগছে। আজ যে যার পরম পাওয়ার দিন।
রাফি রাজের হাত থেকে ফুলটা নিলো।
রাজ: তোমার ইচ্ছেটার কিছুটা বাকি রয়ে গেলো রাফি।
রাফি: কি স্যার ?
রাজ:আহা । স্যার নয়। রাজ।
ফুলটা আমড়া হয়নি।
আর “টকটক ভালোবাসা”ও হয়নিবলেই দুজনে হেসে উঠলো।
সমপ্রেম এবং “সমপ্রেমের গল্প” ফেসবুক পেইজ হতে সংগৃহীত। প্রকাশকাল- মে ২০১৬