
নীল আকাশ
ভূমিকা:
সারা শহরে লোডসেডিং।নীল জোসনা আছরে পরছে জগতে।জানালাটা খুলে দিতেই জোসনায় আলোকিত হয়ে গেল ঘরটা।একমনে চেয়ে আছি জানালার দিকে।
১.
হটাত,দরজায় কারো উপস্থিতি বুঝতে পারলাম।বাতাসে অনুভব করলাম সুমিষ্টি ঘ্রান।পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সে।হ্যা, আমি জানতাম সে আসবে।হালকা করে আমার পাশে বসল।কিছুক্ষন পর সে কিছুটা নিম্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো,”কেমন আছো?”।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে আবারো বলল,”ক্ষমা করে দিও”।আমি এখনো চুপ।আমার এবার কিছুটা ঘুম পাচ্ছে।বালিশে মাথা রেখে ওর দিকে তাকালাম,ও অবিরত জোসনা দেখে যাচ্ছে।
২.
সকালে উঠে দেখলাম সে নেই।আমি আর ওকে নিয়ে ভাবতে বসলাম না,তবে যতই ওকে নিয়ে ভাবতে চাই না ততই সে মনে পড়ে।ওর চলে যাওয়াটা যে আজও আমাকে ভাবায়।
৩.
ওর সাথে আমার প্রথম দেখা কুয়াশা ভেজা স্যাঁতসেঁতে কোন দিন।পার্কের শেষ বেঞ্চে বসে ছিলাম,তুমিও পাশে এসে বসলে।প্রথমে পরিচয়,তারপর বন্ধুত্ব।হাজার হাজার কথা।তবে ভালোবাসা কবে হয়েছিল তা কেউই বুঝতে পারি নি।তবে মনে পরে কোন এক বসন্ত বিকেলে পুকুরপাড়ে কানেকানে হালকা করে বলেছিল,”ভালোবাসি”।তারপর থেকে শুরু প্রেম।
কোন একদিন সে আবদার করলো আমাকে নিয়ে পুরো শহর রিকশায় ঘুরবে।আমি আর সাত-পাঁচ ভাবতে গেলাম না।ভালোবাসার মানুষটার সাথে কে না ভালো মূহুর্ত কাটাতে চায়।ঘুরতে ঘুরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল।বলতে হয় ওর সাহস আছে বটে।সে দিন আমি আমার প্রথম চুম্বন অনুভব করি।চুমুটা ক্ষণিকের হলেও তাতে যেন হাজার বছরের স্বর্গীয় সুখ সঞ্চিত ছিল।কলেজ থেকে ফেরার পথে ও সবসময় রিকশার বাম পাশটায় বসতো।কারণ জান্তে চাইলে বলতো,বাম পাশে বসলে তার নাকি আমার কাধে মাথা রাখতে সুবিধা হয়।তাই আমি তাকে আর মানা করি নি।এমনই যেতে পারত বাকি দিন গুলো।কিন্তু বাস্তবতা?
৪.
বেশ কয়েক মাস কেটে গেল আমাদের ভালোবাসার।আমাদের ভালোবাসাটা আজও কমেনি।কিন্তু অচিরেই ঝরটা এসে পরলো আমাদের ওপর।আর তা হলো পরিবার থেকে বিয়ের চাপ।তবে আমি আমার পরিবারকে বলে দিয়ে ছিলাম যে আমি বিয়ে করব না।তার তা মেনেও নেন।কারণ,বংশ রক্ষার্থে আমার বড় ভাই বিয়ে অনেক আগেই করে ফেলেছে।কিন্তু ওর জন্য ইতিমধ্যে পাত্রী দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে।প্রায় প্রতিদিনই আমি ওকে বলতাম,”আমি কিন্তু আমার পরিবারকে বলে দিয়েছি যে আমি বিয়ে করবো না,তুমি বলবে কবে?!” এর উত্তরে ও আমাকে প্রতিদিনই বলতো,”বলব,বলব”।এর মধ্যে ওর চাকরিটাও হয়ে গেল।চাকরির জন্য ও কে চেনা শহর ও আমাকে ছেড়ে যেতে হলো দূর কোন সীমান্তে।আমাদের মধ্যকার দূরত্ব যতটা বেশি হলো,ভালোবাসা ততটাই কমে যেতে শুরু করলো।তার ফোন আসাও কমে গেল।খুব মিস করতে থাকলাম তাকে।
৫.
একদিন আকস্মিক ভাবে একটা চিঠি এল।ভেবে অবাক হলাম এই যুগেও কি কেউ চিঠি লেখে।খামটা খুলে যা দেখলাম তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।এ কোন চিঠি এটা যে ওর বিয়ের কার্ড।কার্ড টা দেখে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল।
৬.
তার পর থেকে ওর সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।শুনেছি ওর নাকি একটা ছেলে হয়েছিল।ছেলেটার নাম কখনো জাননে চাইনি।কারন আমি চাইনা তার নামটা ছাড়া অন্য একটা নাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পিছু টান হয়ে দাঁড়াক।কিন্তু একদিন হটাত ওর বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি ও আর নেই।ব্রেইন ক্যান্সার ওকে খেয়ে ফেলেছে।সেদিন কষ্টে আমার বুক ফেটে যেন হৃদয়টা বের হয়ে যাচ্ছিল।তবে কিছু করার ছিল না।সবই যে বিধাতার লিলা খেলা।তাই ওকে আমার অপ্রাপ্তিতেই রেখে গেল।
৭.
আজ সারা শহরে লোডসেডিং।বাইরে নীল জোসনা।জানালার দিকে চেয়ে আছি আমি।চারপাশে গাঢ় অন্ধকার।এমন নিস্তব্ধতায় দরজার ওপাশে কাওকে অনুভব করলাম।আবারো সেই মিষ্টি গন্ধ।বুঝলাম প্রতিদিনের মতো আজও সে এসেছে।
…… সমাপ্ত।
সমপ্রেমের গল্প