
লেখকঃ-ফাহিম হাসান
…………………………………………………………………….
লোকটার বাসাবাড়িটা প্রকাণ্ড। যতদূর দেখলাম বেশ কয়েকটা রুম অাছে, ছয়-সাতটা তো হবেই! অামাকে তিনি বসিয়ে রেখেছেন টিভির ঘরটায়। ঘরটা পুরোটাই সাজানো গোছানো। বইয়ের তাক অাছে টিভির পাশে। সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথ অার বিভূতিভূষণের বই ঊঁকিঝুকি দিচ্ছে। বইগুলোও পরিষ্কার। সমস্ত রুম পরিপাটি বলে বোঝা যাচ্ছে- এগুলো লোকটার স্ত্রীয়ের কাজ।
লোকটার বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি হবে। মাথার অর্ধেক টাক পড়ে গেছে। জুলফির যেটুকু চুল বাকি অাছে সেগুলোও যাই যাই করছে। ভালোমতন মুখ দেখতে ইচ্ছা করছিল না বলে তার দিকে অার তাকাই নি।
পুরো বাড়িটা ফাঁকা। লোকটা কোথায় গেলো কে জানে! রবীন্দ্রনাথের “নৌকাডুবি” বইটা খুলে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। বইটা অাগেও একবার পড়েছি। রমেশের কথা বইটায় যতবার পড়েছি ততোবারই শওকতের কথা মনে হয়েছে।
“তুই বইও পড়িস নাকি?” বলে লোকটা ঘরে ঢুকলেন। তার এক হাতে ভাতের থালা অারেক হাতে পানির গ্লাস। অামি বই রেখে দাঁড়ালাম। বললাম “কেন অামাদের মতো ছেলেদের কি বই পড়া নিষেধ?”
“নিষেধ বলেই তো মনে হয়। ব্যাটাছেলে দেখলে তোদের তো অাবার মাথার ঠিক থাকে না। তোরা কোনোদিন বই ধরিস বলে মনে হয় না”, লোকটা বললেন।
অামি হেসে বললাম, “অাপনি ঠিকই ধরেছেন। অাসলে বই পড়তে অামারও ভালো লাগে না। অার রবীন্দ্রনাথের বই তো বুঝিই না।”
লোকটা বললেন, “দ্যাখ তাহলে, অাগেই বলেছিলাম।” তারপর উনি ভাতের থালার দিকে ইশারা করে বললেন, “ভাত খেয়ে নে। বেশিকিছু দিতে পারি নি। বৌ তাড়াহুড়া করে চলে গেছে, ছোট মাছের তরকারি ছাড়া অার কিছু রান্না করতে পারে নি।”
অামি শীতল গলায় বললাম, “অামি খাবো না। তারচে’ বরং অাপনি খেয়ে অাসুন।”
“অামিও খাবো না”, লোকটা বললেন এবং অামার পাশে এসে বসলেন। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেন উনি। অামিও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে অাছি। বাইরে ঝিঁঝি পোকা ডাকছে। একসময় উনি তার ডান হাত অামার উরুর উপর রাখলেন। অামার গা ঘিনঘিন করতে লাগলো। এরপর তার হাত অামার গা জুড়ে পায়চারি করতে লাগলো। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম অামি।
শেষ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো। অামার পাশেই লোকটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। হঠাৎ করেই নিজের ওপরে ঘেন্না জমতে শুরু করলো, কেন করছি এসব?
অাবার, এর বাইরেও তো করার মতো কিছুই ছিলো না। অন্তত নিজের খরচটা তো চালাতে হবে। বাড়ি থেকে তো সেই কবেই বের করে দিয়েছে। অামাকে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় বাবার চোখে ছিল স্পষ্ট ক্রোধ। অার মা হতভম্ব হয়ে সব দেখছিলেন। ছোট ভাইটা প্রচন্ড স্বরে কাঁদতে ছিল। এখন পর্যন্তও তাদের সাথে অার কখনই কথা হয় নি। হয়তো ভুলেই গেছে যে তাদের অপু নামের একটা ছেলে ছিলো। ফজরের অাযান শুরু হয়েছে। কতবার ইচ্ছা হয়েছে নামায শুরু করে অাগের মতো হওয়ার। কিন্তু, অাগের মতো হওয়া বিষয়টা হয়তো এতো সহজ না।
ঝিম ধরে বসে রইলাম। একসময় থাই গ্লাস ভেদ করে অালোর রেখা অাসতে শুরু করলো। জানালা খুলে দিলাম। পুব অাকাশ এখনও লালচে হয়ে অাছে। অনেকদিন সূর্য ওঠা দেখি না। অাজ দেখলাম। এর মধ্যে লোকটা ঘুম থেকে উঠে পড়লেন। অার বাইরে থেকে পরোটা কিনে অানলেন। এক নলা মুখে নিয়েই রুচি হারিয়ে গেলো। দ্বিতীয়বার অার মুখে তুলতে ইচ্ছা হলো না। লোকটা অফিসের জন্য বের হচ্ছেন বোধহয়। তিনি ওয়াশরুম থেকে বের হলে অামি বললাম, “অামার টাকাটা দিয়ে দিলে ভালো হতো। সকাল সকাল বাসা ভাড়া না দিলে বাড়ি ওয়ালা অার রাখবেন না। তার ওপরে অামার নামে অনেকেই কমপ্লেইন করেছে।”
লোকটা এক মুহূর্তের জন্য অামার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বললেন, “তিনশো তো?”
অামি মাথা নাড়ালাম। তিনি বললেন, “এই নে তোকে সাড়ে তিনশো টাকা দিলাম। পঞ্চাশ টাকা বকশিস।”
অামি নির্বিকার হয়ে টাকাটা নিলাম। টাকা নেওয়ার সময় ভেতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করলো। সেটাকেও মাটিচাপা দিলাম। কতো অনুভূতিই তো এভাবে অবহেলায় পড়ে অাছে!
লোকটা বললো, “এসব কাজ কেন করিস? তোকে তো ভালো ফ্যামিলির বলেই মনে হয়। তোর বয়েসি অামার একটা ছেলে অাছে। অাদমজী ক্যান্টনমেন্টে পড়ছে এখন। তুই পড়াশোনা করিস না?”
“ইচ্ছা থাকলেও করতে পারি না। অাচ্ছা অামি না হয় যাই তাহলে” বললাম।
তিনি বললেন, “তোর নম্বরটা মোবাইলে সেভ করে রেখে যা। অার তোর কন্ট্যাক্ট নেম দিবি ‘রং মিস্ত্রি’। অামার বউ খুবই সন্দেহপ্রবণ। সেবার তো একটা ছেলেকে ধরে ফেলে এমন অবস্থা। অার রিস্ক নেবো না। এখন থেকে সেইফলি কাজ করব।”
অামি সামান্য হেসে উনার থেকে মোবাইলটা নিয়ে অামার ফোন নম্বরটা সেভ করলাম। তার বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। মিরপুর থেকে উত্তরা পায়ে হেঁটে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট কষ্টদায়ক। তবুও, পকেটের কিছু টাকা হলেও বাঁচানো খুবই প্রয়োজন। বাড়ি ভাড়া পুরোপুরি শোধ করা লাগবে। অাগের দুই মাসের ভাড়া বাঁকি পড়ে অাছে। অামার বিছানার বালিশের কভারের ভেতরে জমানো সব টাকাগুলো অাছে। কত টাকা হয়েছে কে জানে। কমপক্ষে নয় হাজার টাকা অাজকে বাড়িওয়ালাকে না দিলে বাড়ি থেকে বের করেও দিতে পারে। দ্রুত পা চালাতে লাগলাম।
বাসাতে ঢুকতেই বাড়িওয়ালা চাচা হুংকার দিয়ে উঠলেন, “এই যে নবাবজাদা অাসছে। কেউ তারে বসতে দাও গো। তা, কই গেছিলি হ্যাঁ? মরদের বাড়িতে?”
অামি কিছু না বলে চারপাশটা দেখতে লাগলাম। বাসার বেশ কয়েকজন লোক বাইরে দাঁড়িয়ে অাছে। তাদের চোখেও বাড়িওয়ালা চাচার মতো ঘৃণা জমে অাছে। বুঝতে পারলাম যে এখানে থাকার সময় পেরিয়ে গেছে।
*
অাবার রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করেছি। পায়ের স্যান্ডেলে ধূলো জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে। কোথায় যাবো কিছুই জানি না। মাথার ওপর সূর্য গনগন করছে। কপালের কাছটা অাঠালো বলে ঠেকলে। হাত সামনে এনে দেখি রক্ত। শার্টের হাতা দিয়ে রক্তটুকু মুছে নিলাম। হাঁটুর কাছে ব্যাথা করছে। বেশিদূর অার হাঁটতে পারলাম না। একটা ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ির ওপরে বসে রইলাম। এই শহরে কতো মানুষকেই তো দেখি রোজ। শুধু অাপন মানুষদেরই দেখা যায় না।
হঠাৎ করেই গনগনে সূর্য ঢেকে গিয়ে কালচে মেঘ পুরো অাকাশটা ঘিরে ফেলল। শব্দ করে বাজ পড়তে অারম্ভ হলো। ফুটওভার ব্রিজের টিনের চালা ভিজিয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। অামি বসেই রইলাম। মানুষজন দ্রুতপদে রাস্তা পার হচ্ছে।
একসময় অামি রাস্তায় নেমে পড়লাম। ভিজতে লাগলাম। হাতে ধরে রাখা কাপড়ের ব্যাগের কাপড় চোপড়গুলোও ভিজতে শুরু করলো। অনির্দিষ্ট যাত্রা অামার। বর্ষা পড়ে গেছে মনে হয়। বৃষ্টির ফোঁটা অারও ঘন হচ্ছে।
এমন ঘোর বর্ষার দিনই অামি একদিন বাড়িতে পড়তে ছিলাম। সন্ধ্যা হবো হবো এমন সময় অামার ঘরের জানালা ঠকঠক করে উঠলো। হারিকেনটা নিয়ে জানালার কাছে অাসলাম। কিন্তু, শব্দ হবে এমন কিছুই তো নেই। দাঁড়িয়েই অাছি এমন সময় অাবার জানালায় শব্দ। জানালাটা খুললাম তখন। শওকত দাঁড়িয়ে ছিলো জানালার ওপাশে। হাতে বেশ কয়েকটা লাল শাপলা। বৃষ্টিতে তার গা পুরোটাই ভিজে গেছে। সে বলল, “এই নে, এগুলো সব তোর জন্য।”
অামি বললাম হেসে ফুলগুলো নিয়ে বললাম, “এগুলো তুমি কই থেকে পেলে?”
সে বলল, “বিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। তখন লাল শাপলা দেখে মনে হলো তোর কথা। তোর অাবার লাল শাপলা পছন্দ। এই জন্যেই তুলে অানলাম কয়েকটা।”
অামি এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। সে বললো, “বৃষ্টিতে ভিজবি?”
অামি বললাম, “ধূর কী যে বলো। অাব্বা দেখলে মার দিবে। তার ওপরে কাল পরীক্ষা।”
শুকনো মুখ করে শওকত বললো, “ও! তাহলে পড়। অামি যাই।”
শওকত হাঁটতে শুরু করলো। কী যেন মনে হয়ে অামিও বৃষ্টির মধ্যে নেমে পড়লাম। দৌড় দিয়ে শওকতের কাছে চলে গেলাম। শওকত অামাকে দেখে একটা ভুবন ভোলানো হাসি দিল। অামি ওর হাত শক্ত করে ধরলাম।
তারপর অনেক দিন কেটে গিয়েছিল। কীভাবে যেন গ্রামের মানুষজনের মধ্যে বিষয়টা জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। অামাদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে পঞ্চায়েত সভা বসল। মসজিদের ইমাম সাহেব পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে সীমাহীন ক্ষোভ দেখালেন। মুরুব্বিরাও নাঁক সিঁটকাতে লাগলো। এবং, সবার সম্মতি ক্রমে দুজনকেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুকুম দেওয়া হলো। শওকতকে প্রচন্ড মারধোর করা হয়েছিল। অামার বাবাও লাঠি দিয়ে ইচ্ছেমতো মেরেছিল অামায়। তার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সময়টা এখনও চোখে ভাসে।
এরপর শওকত কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ওর কোনো খবরও অার পাই নি। গ্রামে গিয়ে যে শুনবো সেই উপায়টাও ছিল না। কোথাও দেখতাম না ওকে। তবে, ভাসা ভাসা যেটুকু শুনেছি তাতে মনে হয়েছে শওকতও ঢাকাতেই এসেছে।
ট্রেনে চড়ে টিকিট চেকারের চোখে ফাঁকি দিয়ে অামিও একদিন ঢাকা চলে এলাম। ফুটপাত ধরে অনেক দিন হেঁটে বেরিয়েছি। ক্ষুধার যে কী জ্বালা তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এমনি এক রাতে অামি রাস্তার পাশের একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসে ঝিমুচ্ছিলাম। তখন কোত্থেকে যেন এক লোক এসে অামার সামনে দাঁড়ালো। বেঁটে খাটো লোক। পান খাচ্ছেন, লালচে পানের রস শার্টে গড়িয়ে পড়ছে। নেশা করেছিলেন হয়তো। অামার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কিরে, যাবি নাকি? চল। তোকে টাকা দেবো।”
অামি উনার সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। রাতের পরেরটুকুতে সেই লোকটা অামার গায়ের সাথে লেপটে রইল।
সে অনেক দিন আগের কথা।
*
একটা বাসস্ট্যান্ডে এসে বসলাম। বৃষ্টি থেমে গেছে। রাত নেমেছে। মেইন রোড দিয়ে অালো ঝলকে ঝলকে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। ফোনটা বেজে উঠলো বোধহয়। ব্যাগ থেকে টিফিন বক্সের মধ্যে রাখা মোবাইলটা বের করলাম। রাজীব ভাই কল দিয়েছেন। রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে ভারী গলায় অাওয়াজ অাসলো, “হ্যালো, অপু।”
অামি বললাম, “হ্যাঁ, ভাইয়া। কেমন অাছেন?
“এই তো দিন যাচ্ছে কোনোরকম। তোর কী খবর?” রাজীব ভাই বললেন।
“অামার অাবার খবর। আছি ভালোই”, বললাম অামি।
রাজীব ভাই কিছুক্ষণ অামতা অামতা করে বললেন, “ইয়ে অপু। অাজ রাতে তুই কি অামার সাথে থাকতে পারবি?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, “হ্যাঁ, পারবো না কেন? কখন অাসবো সেটা বলেন।”
রাজীব ভাই উৎসাহ নিয়ে বললেন, “সাড়ে দশটার দিকে অাসলেই হবে।”
“ঠিক অাছে”, বলে ফোনটা রেখে দিলাম। একটা সেলুনে ঢুকলাম। অায়নায় নিজেকে বড় অচেনা লাগছে দেখতে। চোখের নিচে হালকা কালো দাগ পড়ে গেছে। কাটা জায়গাটা কালচে হয়ে অাছে। মুখে অার সেই পুরাতন অামি’র কোনো চিহ্ন অবধি নেই। চোখে নেই সেই সজীবতা। তার জায়গায় পড়ে অাছে মলিন একখানি মুখ।
অাবার হাঁটতে শুরু করেছি। পা ব্যাথা করছে। এদিকে, সিএনজি নিতেও ইচ্ছা হচ্ছে না। চোখ বুজে অাসছে। স্ট্রিটল্যাম্প গুলো যেন এক দৃষ্টে নগরবাসীর দিকে তাকিয়ে অাছে। মাঝে মাঝে গাড়ির হর্নের শব্দ অাসছে।
সত্যি বলতে তেমন কিছুই তো চেয়েছিলাম না। একটা ঘর, একটা ভালোবাসার মানুষ; এই তো। সেই মানুষটা বৃষ্টি হলে লাল শাপলা তুলে অানবে। অার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবে। তার কাঁধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখব। জোছনাভরা রাতে তার সাথে হাঁটতে বের হবো, ব্যস। কিন্তু, পরম করুণাময় হয়তো অামার ভাগ্যে এমন কিছুই লেখেন নি। জোছনা রাতগুলো এখন এমনিতেই কেটে যায়। বৃষ্টিগুলো অানে না অনুভূতি। মানুষের স্পর্শ পেলেই গা ঘিনঘিন করতে শুরু হয়। পুরুষ মানুষগুলোর দিকে মুখ তুলে তাকাতেও ইচ্ছা হয় না। অাবার, তাদের সাথেই রাত কেটে যায়। মাঝে মাঝে বেঁচে থাকাটাকে অর্থহীন বলে মনে হয়। কী করছি পৃথিবীতে? কোনো পূণ্যের কাজ? নরকের দরজা তো বরাবরই খোলা অামার জন্যে। তখন পৃথিবীটাকে হাস্যকর বলে মনে হয়। “সমাজ”, “সমাজ” করে কতো অনাচার-ই যে চলছে এখানে। তবুও, রাতগুলো শেষ হয়ে ঝলমলে দিন অাসে। কিন্তু, অামার জন্য দিনগুলো স্যাঁতসেঁতেই থেকে যায়। প্রতিটা দিনেই অামি খুঁজে ফিরে ভালোবাসার মানুষটাকে। যদি কখনও কোনোভাবে দেখা হয়ে যায়? দেখা হলে হয়তো সে বলে উঠবে, “কী অবস্থা করেছো চেহারার? কপালে কেটেও গেছে দেখছি। দাঁড়াও মেডিকেল শপ থেকে ব্যান্ডেজ নিয়ে অাসি।”
হয়তো তখন অামি শুধুই তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো। তার মায়া ভরা চোখটায়। এক সময় হয়তো সে বলবে, “ফলের জুস খাবে? বেলের শরবত? ওই খানটায় ভালো বেলের শরবত বিক্রি হয়।” বলে হয়তো সে অামার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে।
বৃথাই অপেক্ষা করি হয়তো এসবের। জানি কখনই ঘটবে না এসব। তবুও, এই অপেক্ষা-ই বাঁচিয়ে রেখেছে অামাকে। রাতে ঘুমাতে পারি এই অাশাতেই। অপেক্ষা করি ভালোবাসাময় স্পর্শের।
রাজীব ভাইয়ের বাসা পৌঁছে গিয়েছি। দরজায় কড়া নাড়ার পর রাজীব ভাই দরজা খুললেন। মদ খেয়েছে মনে হচ্ছে। উৎকট গন্ধ অাসছে তার গা থেকে। ঘরে ঢোকার পরে দেখি তার অারো দুইজনবন্ধুও সোফায় বসে অাছে। তাদের সামনে মদের বোতল। অামি ভেতরে যেতেই রাজীব ভাই দরজা বন্ধ করে দিলেন। অার তার সব বন্ধুরা অামার গায়ের ওপরে এসে পড়তে লাগল। সাপের মতো তাদের হাত অামার পুরো শরীর জুড়ে কিলবিল করতে লাগলো। কেউ একজন অামার শার্টেরর হাতা ছিঁড়ে ফেলল। জাপটে ধরেছে কেউ একজন পেছন থেকে।
রাত অাড়াইটা বাজে। টিভিতে তখনও হিন্দী গান বাজছে। তাদের কেউ কেউ গানের তালে তালে হাত-পা ইতস্তত ছোড়াছুড়ি করছে। রাজীব ভাই অাগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। তবে, অন্যরা জেগে অাছে। অার অামি ব্যবহৃত হচ্ছি। ঘেন্নায় অামার গা গোলাচ্ছে। তৃতীয়বারের মতো যখন কালো অার লম্বা লোকটা অামার হাত খামছে ধরলো তখন মনে মনেই বলে ফেললাম, “শওকত, কোথায় তুমি? বড়ো ভালোবাসি যে তোমায়।”
প্রথম প্রকাশঃ-সাতরঙা গল্প
সমপ্রেমের গল্প