
লেখকঃ রাজ চৌধুরী
(গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোনো কিছুই বাস্তবতার সাথে মিল নাই।)
উৎসর্গঃ হারিয়ে যাওয়া তাওহীকে
সকাল থেকে বৃষ্টি। থামছে ঝরছে। বৃষ্টি হবারই কথা। বর্ষাকাল বৃষ্টি না হলে চলেনা। গরম গরম চা আর ছাতা সঙ্গি। বসে আছি স্টেশনের পাশের দোকানে ।
বহুদিন পরে কারো জন্য অপেক্ষা। অফিসের কাজ। আর দৈনন্দিন সাদা কালো রুটিন যেনো একেবারে রোবটিক করে তুলেছে।
অপেক্ষায় আছি ট্রেনের। ১১ টার সময় আসার কথা। একটু আগেই চলে আসছি।
ট্রেনেই আসছে রুহুল। ওরই অপেক্ষা।
প্রায় ৬ বছর পরে দেখা হবে। এর মধ্যে মাঝে মাঝে ফোনে যোগাযোগ হতো। দেখা করাটা কখনো হয়ে ওঠেনি আমার।
বৃষ্টি কমে গেছে অনেক। আরেক কাপ চায়ে চুমুক দিলাম। ট্রেনের হুইসেল শুনে। চা রেখে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম।
অনেকেই নামলো। নাহ। রুহুলকে দেখতে পেলাম না।
ওর চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই বলে চিনতে পারবোনা? নাহ কেনো হবে।
প্ল্যাটফর্ম প্রায় খালি। ট্রেন চলে গেলো।
রুহুলের দেখা পেলাম না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মনে হলো। চলে গেছে ।
রাগই হলো চলে যাবি ভালোকথা। আসার কথা কেনো বলল। চলে আসতে বের হলাম। হঠাৎ মনে হলো । দোকানিকে চায়ের বিলটা দেইনি। গেলাম চায়ের দোকানে। বিল দিলাম।
মনো হলো একবার ফোন দিয়ে দেখি ।
ফোন দিলাম। নাম্বার বিজি। ধুর।
চলে যাই।
বলেই। হাটা শুরু করলাম। মিনিট দুয়েক হাটলাম।
পেছন থেকে কেউ ডাকলো ” শিশির “
আমি তাকালাম। কে ডাকলো দেখার জন্য। দেখলাম রুহুল। রাগ হয়েই বললাম
” আচ্ছা বদ অভ্যাসটা তোর এখনো যায়নি দেখছি রহুল। সেই কখন আসছি তোর আইডিয়া আছে। একবার ফোনও দিলাম। ব্যস্ত।”
——রোহান ফোন দিয়েছিলো। আর তুইও কি পাল্টেছিস? একটুতেই রাগ।
—–বাদ দে। চল সামনে যাবি চল। কিছু খাওয়া দরকার।
—–নারে খাবো না। সময় কম। আর কিছু খাবার ছিলো খেয়েছি ট্রেনেই। তার চেয়ে চলনা কিছুটা সময় কাটাই কোথাও বসি।
আমি আর না করলাম না। কি বলব। স্বাভাবিক কথাই বলতে পারছিলাম না। কত্তদিন পরে দেখা। পূর্বের স্মৃতিগুলো কেমন নাড়া দিচ্ছিলো আমায়। চুপকরে ছিলাম।
হাটছিলাম। রুহুল বলল ” কিরে একেবারে চুপ যে। ব্যাপারকি। ভাবি কিছু বলেছে? “
বুঝলাম রুহুলও হয়তো আমারমত চুপসে গেছে। তাই এসব বলছে।
আমি বললাম ” না রুহুল তোর ভাবি মাটির মানুষ একটা। কখনো এমন কিছু করেনা যাতে আমার মন খারাপ হবে।”
—–আচ্ছা শিশির। তোর ছেলের নাম যেনো কি?
—-তাওহীদ। তাওহীদ নাম ওর। ওর মায়ের পছন্দে রাখা। তোর ছেলের নাম কি রোহান।?
—-হুম।। রোহান।
—–যোগাযোগ তেমন রাখিস না। সবকি মনে থাকে বল!
—-মনে নেই কিছুই? তাহলে আসছিস কেনো?
—–রুহুল প্লিজ। কেনো আসছি তুই জানিস না।
—–জানি।
রুহুলের সাথে এভাবে কথা বলতে থাকলে। ঝগরা শুরু হবে। আবার মন খারাপ হবে। তাই চুপ করে গেলাম। পুরুনো অধ্যায়টা মাটিচাপা দিয়ে বললাম
“রুহুল বৃষ্টি শুরু হলো। চল সামনের ঐ ছাউনিটার নিচে বসি”
রুহুল আমি দুজনেই বসে রইলাম। বৃষ্টি বেড়ে গেলো।
রুহুল একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” শিশির কেমন আছিস”
আমি যে কেমন আছি। তা বলতে পারছিলাম না। রুহুলের দিকে ভালো করে তাকালাম। বৃষ্টিরতই অঝরে ঝরছে চোখের পানি। কি বলব। কি বলা যায় দীর্ঘ ৬ বছর পরে এসে বলছে কেমন আছি।
আমি বললাম ” ভালো আছি রুহুল, কাঁদছিস কেনো।? “
—-জানিনা কেনো কাঁদছি। হয়তো অতীত স্মৃতি আমাকে কাঁদতে বাধ্য করছে তাই। আচ্ছা শিশির। কিছু মানুষ এতো ভালো হয় কি করে রে?
—–জানিনারে। হয়তো তোরমত মানুষের সাথেই তোর পরিচয় হয়। তাই ভালো মানুষ দেখিস তুই।
—–হবে হয়তো। সেজন্যই হয়তো কিছু সম্পর্ক কিছু নাম রক্তে মিশে যায় ভুলা যায়না কখনো। যেমন তুই। তোকে ভুলে থাকা যায়না।
রুহুলের কথায় পুরোনো স্মৃতিগুলো যেনো প্রাণ ফিরে পাচ্ছিলো। আমি চাইছিলাম না। এমনটা হোক। খুব ইচ্ছে করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে রাখি বুকে। অনেক্ষণ ধরে কাঁদি। কিন্তু না । এমনটা করার সাহসটা যেনো হারিয়ে গেছে । কোথাও যেনো কমতি হয়ে গেছে। জোর করে কিছু করা । জোর করে চাওয়া গুলোর পূর্ণতা দেয়া।
রুহুল কে বললাম ” রুহুল তুইতো আবার চলে যাবি তাইনা! আমিও চলে যাচ্ছি পরশুদিন us এ অফিসের কাজে। মাস ছয়েক থাকতে হবে। “
——-হুম। কাজতো কাজ। যেতেই হবে। আমিও যাই। বাসা থেকে কয়েকবার ফোন দিলো।
বৃষ্টি কমে গেছে। আমি আর কিছু বললাম না।
রুহুল বের হলো। আমিও বের হলাম।
রুহুল ছাতা মেলে মাথায় ধরলো। আমিও আমার ছাতাটা মেলতে গেলাম। রুহুল বলল ” শিশির থাকনা একটু একই ছাতার নিচে। কতটাই আর ভিজবো বল। যাবার একটু পথ নাহয় এক ছাতা হাতেই হাটি। আমি বললাম। ” হুম”
একই সাথে হাটছি। রুহুল আমার কত্ত কাছে। অথচ কতদূর মনে হচ্ছে। এমন কেনো লাগছে আমার। কিছু দূর যাবার পরে বললাম ” রুহুল তোকে একটু জড়িয়ে ধরি রে। খুব ইচ্ছে করছে”
রুহুল থামলো বলল ” শিশির এভাবেই দূরত্ব বাড়ালি তুই। কিচ্ছু বলব না আর। ধরতেই দেবোনা। যা চলে যা। “
রুহুল কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। আবার বলল ” শিশির তোকে কখনো কোনোদিনও কিছু করতে মানা করেছি! কখনো না ।
এমন করে কেনো বলছিস। আমারও যে তোকে বুকে জড়াতে খুব ইচ্ছে করছে। আয়না একবার…………
রুহুলকে জাপটে ধরলাম দুহাত দিয়ে…..
অনেকটা সময় ধরে রাখলাম। বুকের ভেতরটা যেনো তৃপ্ত হলো বহুদিন পরে । হাল্কা বৃষ্টিতে ভিজে গেলাম দুজনেই। রুহুলের কপালে কয়েকটা চুমু খেলাম।
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছিল তখন। বৃষ্টির জলে মিশে যাচ্ছিল চোখের জল।
যাবার সময় বললাম। ” ভালো থাকিস রুহুল খুব ভালো। যদি সময় সুযোগ হয় আবার কখনো দেখা হবে। চৈত্রের বিকেলে অথবা বর্ষার কোনো এক দুপুরে।
——————————————–
————–সমাপ্ত——————
সমপ্রেমের গল্প