
দিহান হাওলাদার
১
তুই অনেক ভালো আছিস।।সত্যিই তো আমার সাথে থেকে তোর কি লাভ হত??
চলে গিয়েছিস ভালোই হয়েছে।।কিন্তু আমায় এই জগতে না রেখে গেলেই পারতিস।।তুই থাক আমায় ছাড়াই ভালো। আমি ও এইভাবেই থাকবো।
তোর দরকার নেই।।
:কি অপরাধ আমার,??কয়টা হলো??
:এই নিয়ে ১৫ পিস।কই নাতো খুব বেশি না।
আরো কয়েক প্যাকেট তো আছেই।।
কিন্তু কত ঝামেলা!!আবার এই গুলোর ভিতরের তামাক বের করতে হবে।। ধুর নে তুই বের করে দে এই তামাক।।
কি হলো দিবি না??
-একটু থাম না রিফাত।আচ্ছা তুই এমন করলে কি আমার ভালো লাগে??তুই জানিস তোকে এভাবে কস্টে দেখলে নিজের কত কস্ট হয়!!
-চুপ!!একদম চুপ।।তোর আবার কস্ট!!মাছের মায়ের পুত্রশোকক এই আর কি!!যা তো শালা।।দুরে ভাগ
-দেখ রিফাত তোকে তোর মা বাবা কত আশা ভরসা করে এখানে পাঠিয়েছে।তুই এই মর্যাদা দিবি?
তোর জীবনের সঙ্গে আরো অনেকের জীবন জড়িয়ে আছে।নিজেকে এভাবে শেষ করিস না।প্লিজ।এবার ছাদ থেকে নাম।।আর এইসব গাজার নেশা ছেড়ে মানুষ হ।।
-ধুর।আজাইরা প্যাচাল।
তরে এক্ষুনি কিন্তু ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিমু।।
– দে তাহলে।
ওমনি রিফাত ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিল আবিরকে!!
হা হা শালায় মরছে মনে হয়।ওর যা ইচ্ছা হোক।আমার কি??আমাকে ছেরে তো ও কবেই চলে গেছে।ওরে নিয়া আমার এত চিন্তার কি আছে।।মরছে ব্যাটা ভালোই হইছে।।
এসব এলোপাথাড়ি চিন্তা করে রিফাত আবার নেশায় বুদ হয়ে যেতে লাগল।।চারিদিকে ধোয়া,,পাশে মদের বতল।আর কয়েক পেগ নিবে সে।।তারপর দিব্যি ঘুম।।প্রতিদিনের রুটিন।
২
ঝিল পাড় দিয়ে প্রতিদিনের মতই এক প্যাকেট গোল্ডলিফ কিনে বাসায় যাচ্ছে রিফাত।
আচ্ছা প্রতিদিন এই মেয়েটা কেন এখানে এই সময় ই দাড়িয়ে থাকে।। আর আমার দিকে আড় চোখে তাকায়।
রিফাত ভাবলো।
আমার প্রেমে ট্রেমে পড়ল নাকি।।হা হা।
কে যানে।।!!
এইসব ভেবে বাসায় যাচ্ছে সে।
বাসায় কেউ থাকে না।
একটা রুম শুধু।আগে আবির থাকতো।এখন আবিরের স্মৃতি আর রিফাতের ভালোবাসা,,নিকোটিন,,কিছু বিয়ার,মদের বোতল,,এইসব আর অর্ধমৃত রিফাত সে ঘরে বসববাস করে
দেয়ালে রিফাত আর আবিরের কিছু বিশেষ মুহুর্তের ছবি বাধাই করা।।
সেই ব্রিজের উপর রিফাত বসা।।নিচেই হ্রদ।।তাই আবির আর বসেনি।।ভয় পায় বেচারা। তাই ব্রিজের উপর রিফাতের পাশ ঘেষেই দাড়িয়ে এই সেলফি নিয়েছিলো।
কি কিউট একটা হাসি আবিরের মুখে।আর রিফাতের মুঝে যেন আল্লাহ কখনোই হাসি দেয় না।
গোমড়া।।সেই সেলফিটির আজ স্থান দেয়ালে।
অপলক তাকিয়ে আছে রিফাত।আর চোখে নোনাজল আসছে।
নাহ!আর সইতে পারে না রিফাত।।
আবিরের হাসি টা যেন মাতাল করে দেয় ওকে।।
পুরো আসক্ত করে দেয়।
আর এই নেশা কাটাতে পারে শুধুই ধোয়া আর তেতোজল।।
কথায় বলে কাটা দিয়ে কাটা তুলা।আবারো রিফাত ব্যাস্ত তার নেশায়।
ছাদের এক কোনে ছোট্ট একটা রুম।।
পুরো ছাদ খালিই থাকে।মাঝে মাঝে কেউ আসে আড্ডা দিতে।দিয়ে চলেও যায়।রিফাত এসব খোজ খবর রাখে না।।রাত দশটার পর ও ছাদের গেট লক করে নেশায় চলে যায়।। ডুব দেয় কালো যগতে।।তার খারাপ ও লাগে না।হুম অনেক শান্তি।তারপরে এই যগতে ডুব দিলেই সে তার ভালোবাসা কে একটু সময়ের জন্য হলেও দেখতে পায়।।হুম আবির আসে তার কল্পনায়।গল্প করে তারা দুজন।কত আবেগের কথা বলে ওরা দুজন।
মাঝে মাঝে রিফাত আবিরকে ধাক্কা মারে ছাদ থেকে।।আবার কখনোও বা ছুয়ে দেয় তীব্র ভালোবাসায়।।জড়িয়ে যায় ওরা দুজন।।আবার রিফাত দু:খ না সহ্য করতে পেরে কস্টে আবিরকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়। আবিরটা রিফাতকে এই অগোছালো জীবন থেকে সরানোর জন্য কত উপদেশ,,আদেশ,,দেয়।
আগে রিফাতের এসব ভালোই লাগত।এখন আবিরের এসব কথা শুনতে গা জ্বলে যায়।যে তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে তার কথা কেন শুনবে আবির!!!
৩
-আচ্ছা দোস্ত যাই।
-কেন??এত তারাতারি কেন যাবি??বাসায় ভাবি আছে নাকি??
বলেই সবাই হেসে দিলো।।হা হা হা।
অন্যদিকে, এসব কথা শুনতে রিফাতের বুকে মনেহয় যে ছুড়ির ক্ষত হচ্ছে।আগে আবির অপেক্ষা করত।
দুইজন একসাথে খেত।
আবিরের কলেজ ছুটি হত রিফাতের ভার্সিটি শেষ হওয়ার আগেই।
তারা একত্রেই খেত।
ঘুমোতো।।
আর বিকেলে বাইকে চড়ে বেরিয়ে পরত যেদিক দুচোখ যায়।
আড্ডা দিত।আর রাতে পড়ার শেষে গান।।
কি সুখময় স্মৃতি!!
ভাবতেই চোখে জল আসে। আসলে আবির গ্রামের ছেলে।রিফাত টাঙাইলের মির্জাপুরের ছেলে।রিফাত হলো আড্ডাবাজ,বড় লোকের ছেলে,,ধুমপায়ী।পড়ালেখায় মনোযোগ কম।।শুধু পাশের চিন্তা।।
এরপরে সে দেশের বাইরে চলে যাবে।।
অন্যদিকে আবির শান্তশিষ্ট,, ভদ্র,,মেধাবী,,মিশুক,হাসিখুশি,,আর পড়ুয়া।তবে সেও কম আড্ডাবাজ নয়।সু্যোগ পেলেই আড্ডা।।
কোন এক ভর দুপুরে তাদের দেখা।কেউই কাউকে আগে চিনত না।।আবির হেটে চলছে উপরের দিকে চেয়ে চেয়ে।আর রিফাত বাইকে চড়ে হিরো মুডে দ্রুত চলছে।
হঠাৎ জোড়ে ব্রেক কষল।
-অই মিয়া।দেখে চলতে পারোনা??মরার শখ আছেনি??তাইলে ট্রেন লাইনে যাও।(রিফাত)
-সরি ভাই।আসলে টু লেট খুজছিলাম।আমি নতুন ঢাকা আসছি।
-বাড়ি কই?
-সিরাজগঞ্জ।
-কিসে পড়?
-ভাই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে। আসলে কাওরেই চিনি না।এক আত্মীয়ের বাসায় আসছি।আমার বাবাও ছিল।বাট আব্বু অসুস্থ।
আজ আসেনি। আমি একাই আসছি।আর ভাই আমি মেসে থাকতে অভ্যস্ত নই।তাই ইচ্ছা ছোট একটা বাসা নিয়ে থাকবো।পরে ক্লাসের কাওরে চিনলে ২-১ জনকে ম্যানেজ করে নিব।
-তা বাসা পাওনি??
-না ভাই।মনের মত হয়না।ভাড়ায় মিলে না। -ও আচ্ছা।একটা কথা বলি
-জি ভাই।বলেন
– আসলে আমারা দুই তিনজন থাকতাম।এখন এক জন ফ্রেন্ড আছে।তুমি চাইলে থাকতে পারো।ভাড়াও মোটামুটি কম
-আসলে ভাই আমি একটু চিন্তা করে দেখি।
-আচ্ছা ফোন নং টা দাও তো।
-০১৭*****৬৯৮।ভাই নেন।কল দেন একটা। আমি সেইভ করে নেই।।
-হুম।আচ্ছা তোনার নামটাই তো যানা হলোনা।।আমি রিফাত।
-আমি আবির।আচ্ছা ভাই এখন তাহলে আসি।
-আরে একটু চা তো খেয়ে যাও।
-ভাই এই ভর দুপুরে দোকান খোলা থাকলে তো।
-ও আচ্ছা।।খেয়াল নেই।
আমার বাইকে উঠে বসো।তোমায় এগিয়ে দেই।
-ভাই বাইকে আমার একটু এলার্জি আছে।।আমি বাইক চড়তে ভয় পাই
-হা হা।।
-হা হা।আমি রোড পার হতেও হেজিটেশন ফিল করি।
– যাই হোক তুমি উঠে বসো।আমি ধীরে চালাবো।
-ওকে।এই বলেই উঠে পরলো আবির।
বাইক স্টার্ট দিতেই আবির পরে যাওয়ার অবস্থা।
রিফাত বুঝতে পেরে একগাল মুচকি হাসি দিয়ে বললো
– আচ্ছা তুমি আমায় ধরে বসতে পারো।
আবির ইতস্তত করেও রিফাতের শার্ট টা শক্ত করে ধরে বসে।তার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।এ যুগেও সে বাইকে চড়তে ভয় পায়।কি বিরক্তির। ভাবতেই রাগ লাগছে তার।সে ও রিফাত দের মতই সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। মান সম্মান একটু বেশিই।
অন্যদিকে রিফাত মনে মনে হাসতে হাসতে বাইক চালাচ্ছে।কপালে বড় বড় চুল গুলো আসছে।।বাতাস বইছে।ভালোই লাগছে ওদের।কেউ কাউকে চিনে না।অথচ মনে হছে কত আপন।কত দিনের চেনা!!.
হঠাৎ জোড়ে বাইক থামল।আবিরের ভাবনায় ছেদ পরল।
রিফাত বললো এসে পরেছি।
আবির নেমে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
৩
২ দিন পর।
রিফাত গোসল করছে।হঠাৎ ক্রিং ক্রিং।
-ধ্যাত তেরি বাল।এই সময়ে কে ফোন করল??
আসিফ ফোনটা রিসিভ কর তো
-আরে শালা আমি আমার জি এফ এর সাথে কথা বলছি।তুই বের হয়ে রিসিভ কর।
-কে একটু দেখ।
-আবির না কে যেন।
এবার রিফাত বেরিয়ে রিসিভ করল।
-আসসালামু আলাইকুম।আমি আবির
– হুম।কেমন আছো?
-ভালো ভাই।আপনি??
-হুম ভালো।যাই হোক কিছু বলবা??
-ভাই আমি আপনাদের সাথেই থাকতে রাজি।
-ও তাই নাকি??
কবে আসছো?
-১ তারিখ ভাই।
-আচ্ছা।ওয়েটিং ফর ইউ।বাই
-আল্লাহ হাফেয।
৪) আজ ১ তারিখ।আবির এসেছে।
রুমে এখন রিফাত আবির, আসিফ।
তারা পরিচিত হচ্ছে।কথা বলছে।মজা করছে।
পরিচিতে শেষে খাওয়া দাওয়া।রাতে ঘুম।সবাই।
এভাবেই দিন কাটে তাদের ৩ জনের।
বিকেলে ঝিল পারে আড্ডা, রাতের গান।সকালে ওদের চা খাওয়া।
অবশ্য রিফাত স্মোকার।আসিফ, আবির তা নয়।রিফাত একটু বেপরোয়া, উদাসীন টাইপ।
একদিন হঠাৎ আসিফ তার বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে চলে গেল আসিফ।
পরে রইল আবির,রিফাত।বন্ধুকে হারিয়ে তাদের মন খুব খারাপ।
যাই হোক তারা দুজন একত্রে খায়,ঘুরে,সময় কাটায়।
৫
এমনই একদিন বৃষ্টির দিন আবির ঘুমচ্ছে।
রিফাত গান শুনছে।
গান শুনতে শুনতে সে লক্ষ্য করল আবিরের মায়াবি মুখের দিকে।
কি কোমল আবির!!
সে অনুভব করে আবিরের প্রতি নিজের দুর্বলতা।
আচ্ছা আমি কেন নারী তে আকৃষ্ট নই।নিজে নিজে ভাবে।
কিন্তু আবির তো এরকম নাও হতে পারে।কিন্তু হতেও তো পারে।হয়ত সেও নারী আকৃষ্ট নয় ।
ভাবতে ভাবতে সে আবিরের ঠোটের দিকে নিজের ঠোট বাড়ায়।
এইত আর একিটু।
এরপর ছুয়ে যায় আবিরের ঠোট।
আবির হকচকিয়ে যায়।
কিন্তু কিছু বলতে পারে না।রিফাত তাকে তার শক্ত হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।।
নড়তে পারে না আবির।রিফাত পিপাসার্ত পথিকের মত নিজের তৃষ্ণা নিবারণে ব্যাস্ত হয়ে যায়।আবির প্রথমে বাধা দিতে চাইলেও পারে না।
চিৎকার ও দিতে পারেনা।কারন ঠোট দুটো রিফাতের কবজায়।
তারপর চললো ভোগ।রিফাত নিজের কামনা চরিতার্থ করে।।
ঘেমে গেছে ওরা দুজন।রিফাত হাপিয়ে যায় এক পর্যায়।
পাশে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পরে।
আবিরের চোখে পানি।প্রচন্ড লজ্জা লাগছে তার।নিজের উপর ঘৃনা লাগছে।
উলংগ রিফাত পাশেই শোয়া।
আবির বিছানা চাদর টা টেনে গায়ে জড়িয়ে নিচে বসে পরে।
কিছুক্ষন কাদে।তারপর ওয়াসরুমে দৌড়ে যেয়ে এটে দেয় দরজা।
শাওয়ারে নিজেকে পবিত্র করতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
রিফাত অনুতপ্ত হয়ে পরে।।কি করল সে।না অনুমুইতি নিয়েই আবিরকে ভোগ করল। আবির না যানি তাকে কত খারাপ ভাবছে।নোংরা ভাবছে।
না আর এক মুহুর্ত নয়।
রিফাত শার্ট প্যান্ট পরে বেরিয়ে পরে রাস্তায়।দোকানে বসে একটার পর একটা সিগারেট টেনেই যাচ্ছে।
অন্যদিকে আবির শাওয়ার সেরে বাইরে এসে কাদে।কি হল তার সাথে।কেন করল এমন রিফাত।
আজ আর সে দুপুরের খাবার খায় না।।রিফাতও আসে না।খায় না।
দেখতে দেখতে বিকাল গড়িয়ে রাত হয়ে যায়।
রিফাত আসে না।
আবির একটু অস্বস্তিতে পরে যায়।
এই ছাদের উপর একা বাসায় আসিফ ও নেই।
কিভাবে থাকবে সে!!
এমন ভাবতে ভাবতেই দরজায় কড়া নারার শব্দ।
-কে??
-আমি রিফাত।
বলে চুপ করে থাকে সে। আবির।দরজাটা খুল।
দরজা খুলে নিজের বেডে শুয়ে পরে আবির।
রিফাত দেখে খাবার পরে আছে পাশে।আবিরও খায়নি
দেখেই রিফাতের মাথায় আগুন ধরে যায়।সে নিজেকে কন্ট্রোল করে আবিরকে বলে
-খাস নি কেন??
কি হলো চুপ কেন।
আমার কিন্তু রাগ উঠে।তুই জানিস আমার রাগ উঠলে আমি কি করি।
খাবি কি না বল।
কথা বলিস না কেন??
এই বলেই থালাটা আবিরের সামনে এনে দেয়।আবির ধাক্কা দেয়।
এবার রিফাত ওগ্নিশর্মা হয়ে থালা গুলো ধরে ছিটকে মারে।
আবির ভয় পেয়ে যায়।কেপে উঠে সে।আবারো কাদছে সে।
এর কিছুখন পরেই একটা ব্লেড নিয়ে আসে রিফাত।নিজের হাত কাটতে শুরু করে।
আবির দেখছে আর ভয় পাচ্ছে।
রক্ত পরছে।আবির আর সইতে না পেরে দৌড় দিয়ে আটকায় রিফাতকে।
রিফাত থামে না।আবির কি করবে বুঝতে পারেনা।।রিফাতের ব্লেডিং হচ্ছে।
কি করবে সে??কন্তু আবির যানে এখন রিফাত কে থামানোও যাবে না।উপায় না বুঝতে পেরে সে আবিরের হাতে ও কপালে চুমু একে দেয়।
এর পরেই আবির রিফাতের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।আর বলে
-রিফাত ভাই,তুমি কেন পাগলামি করো??
-তোকে ভালোবাসি তাই।
-কিন্তু,এটা,,,
-তুই আর কিছু বললেই কিন্তু আবার শুরু করব।
আমি তোকে ভালোবাসি তুইও বাসবি ব্যাস।
আবির চুপপ করে সব মেনে নেয়
৬
পরের দিন রিফাত আবিরের জন্য একটা ফুলভর্তি কাঠগোলাপের ডাল নিয়ে আসে।কাঠগোলাপ রিফাতের পছন্দের ফুল।
দিন যাচ্ছে।।রিফাত আবিরকে অনেক ভালো বেসে ফেলেছে। আবির ও রিফাতের পাগলামি সহ্য করছে।এছাড়া কিছুই করার নেই।কারন তাহলে রিফাত আবারো পাগলামি করবে।
আবির ও ধীরে ধীরে অনুভব করে সে রিফাতকে ভালোবেসে ফেলেছে।ওর পাগলামি গুলোই আবিরের ভালো লাগে।ওকে ছারা খেতে,ঘুমুতে কিছুই করতে ভালো লাগে না।
আসিফ আর আসবে না।সে তার নিজ গ্রামেই পরালেখা চালাচ্ছে।এখন শুধু আবির আর রিফাত।
দেখতে দেখতে রোজা এসে পরে।আবির আর রিফাত বন্ধে বাড়ি যাবে।কিন্তু কারোরই ভালো লাগছে না।কিন্তু কিছু করার নেই।তারা ঈদের জন্য শপিং করে একসাথে।।আজই তাদের ঈদের আগের শেষ দেখা।ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায়।
এরপর একজন টাংগাইল আরেকজন সিরাজগঞ্জ এর পথ ধরে।রিফাত আবির কে বাসে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও বাসে চড়ে বসে।
যাওয়ার আগে আবিরের হাতে একটা চুমু খায়।আবির তার কপালে চুমু দেয়।ভালো থেকো বলে তারা রওনা দেয়। ৭)এতক্ষন ধরে রিফাত সেই কল্পনায় হারিয়ে যায়।
চেতনা ফিরে তার বন্ধু সৌরভের ডাকে।সৌরভ বলে
-অই মামু,কি ভাবস??
-না কিছু না।
-যাই হোক মাম্মা।তুমি প্রেমে পরছো।
-দেখ মজা নিস না।
-যাই হোক দোস্তে অই মেয়েটা কে??তোর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
-আসলেই কে এই মেয়ে।প্রতিদিন এ সময়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আচ্ছা দোস্ত তোরা থাক আমি যাই।বলে উঠে পরে রিফাত।একটু দুরে যেয়ে সে মেয়েটাকে ডাক দেয়।মেয়েটি আসে।
-আচ্ছা আপনি কে??প্রতিদিন দেখি এখানে
-আমি তিন্নি।আসলে এমনি বিকেলে একটু ঘুরতে আসি।
-আমি রিফাত।পাশেই থাকি।
আর সারা পথ তাদের কথা হয়নি।তারা অনেক টা পথ একত্রে হাটে।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নাম।আস্তে আস্তে রাত হয়।তারা রেল লাইনের পাশে হাটছে।
কিছুক্ষন পরে মেয়েটি বলে
-অইত সামনেই আমাদের বাড়ি।আর আসতে হবে না।আপনি সময় করে আসবেন,,কেমন?
-আচ্ছা।ভালো থাকবেন।
-আল্লাহ হাফেয।
তিন্নি চলে যায় নিজ গন্তব্যে।মা মরা মেয়েটির ছোট ভাই আর বাবাকে নিয়ে থাকে।বাবা অনেক রাতে আসে।
অন্যদিকে আবির চলে যায় তার বাসায়।রাত অনেক হয়েছে।সে আজো নেশায় মগ্ন।
আর বেচারি তিন্নি।সে আজ মহাখুশি।সে ভাবলো তার ভালোবাসা আজ তাকে ধরা দিয়েছে।
-কিরে আবির কেমন আছিস?
-ভালো আছি।তুমি?
-আমার আর ভালো মন্দ।
-রিফাত আজ তোমার সাথে একটি মেয়েকে দেখলাম। ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
-চুপ।ও বাসলেই কি না বাসলেই কি।যদিও ও হয়ত তোর মত ধোকা দিবে না।
-হুম।তুমি ওকে নিয়ে সুখী হবে।ওকে ভালোবেসো, কেমন?
রিফাত আর কোন কথা বলে না।সে আবারো হারিয়ে যায় সে দিনটায় যেদিন আবিরের আসার কথা ছিল।
-হ্যালো তুই কই আবির?
-কাল রওনা দিব।মা আজ আসতে দিবে না।
-কেন?আজই আসবি।নাহইলে আমি কিন্তু কি যে করব তুই দেখবি
-প্লিজ রিফাত ভাই।একটু বুঝতে চেস্টা করো
-না,না,না
অগত্যা আবির রওনা দিল।
২ দিন হয়ে গেল।আবির এর কোন খোজ খবর নেই।রিফাত ও বেশ রাগ হয়েছে।সে আবিরের কাছে আর ফোন ও দেয়নি।যদিও কয়েক বার ট্রাই করেছিলো বাট সুইচড অফ।
হঠাৎ আবিরের বাড়ি থেকে কল আসে রিফাতের কাছে।রিসিভ করে জানতে পারে যে আবির আরো ২ দিন আগেই রওনা দিয়েছে।।বাট পৌছে আর কল কল দেয়নি।তাই তার বাবা রিফাতের কাছে কল দেয়।রিফাত ও জানায় যে আবির এখানে আসে নি।
রিফাত আজ আর কাদতে পারে না।কেমন যেন বুকের উপর ভারি ভারি অনুভব করে।কেন এমন লাগছে!!
সে ভাবে।তার নি:শ্বাস গরম হয়ে যায়।অস্থিরতা কাজ করে।ওমনি আবার বলে উঠে
-ছাদ থেকে রুমে যাও রিফাত।আমি যে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।
রিফাত চলে যায়।
৮
আজ আবিরের জন্ম দিন ছিল।।হুম তাদের রিলেশনের পর প্রথম বার্থডে। রিফাতের ইচ্ছে ছিল সে এই দিনটা অনেক ভালোভাবে কাটাবে।।কত প্লানিং।
নাহ!! আজ আর আবির নেই।
বিকেলে রিফাত বেরোয়। রাস্তায় দেখা হয় তিন্নির সাথে।কিছুক্ষন কথা হয়।
আজ তিন্নি বেশ পরিপাটি ভাবে এসেছে।কপালে কালো টিপ,চোখে মোটা কাজল।পায়ে নুপুর।
তাকে বিদায় জানিয়ে প্রথমে রিফাত যায় একটি ফুলের দোকানে,দেখান থেকে সে গ্লাডিওলাসের স্টিক আর বেলী ফুলের মালা কিনে।
তারপর সুপার শপে।এখান থেকে একটা কেক,কিছু কিটক্যাট,২ টা আইসক্রিম, আর পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে ২ প্যাকেট তেহারী আর একটা কোক নিয়ে চলে যায় তার বাসায়।
সেখানে আবির বসে আছে টি শার্ট আর শর্টস পরে।নীল টি শার্ট। রিফাত নীল পাঞ্জাবি পরে নেয়।
আর বলে
– মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্ন্স অফ দ্য ডে।
আবির কিছুই বলে না।
কারন সে তো ওয়ালের একটা ফ্রেমে বন্দী।
শুধু মিটিমিটি হাসে।
সযন্তে রিফাত ফ্রেম টাকে নামায়।নিজের খাটের পাশে রাখে।তারপর ১৯ টা গ্লাডিওলাসের স্টিক দেয়। কারন আবির এবার ১৯ এ পা দিয়েছে।
মোম গুলো জ্বালায় রিফাত।১৯ টা মোম।
একে একে সবগুলো নিভায় আর বলে
-হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার আবির।হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
বলতে বলতেই তার মুখ ভার হয়ে যাচ্ছে।
আর পারছে না বলতে।কথা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
মুখ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
চোখ বর্ষন করতে শুরু করে দিয়েছে।
কেক কাটে সে।আবির চুপচাপ দেখছে।
সে আবিরকে কেক খাইয়ে দেয়।।আর নিজেও খায়।
আজ আর সে নেশা করবে না।রিফাত ভাবে,
আজ তার জন্যই আবির পৃথিবী তে নেই।কারন অইদিন আবিরকে কিছু গুন্ডারা আক্রমন করে।তাকে মেরে ফেলে দেয় ডোবায়।
৩ দিন পর লাশ পাওয়া যায়।রিফাত ছুটে গিয়েছিল সিরাজগঞ্জ।
আবিরের মুখটা অর্ধ পচে গিয়েছিলো।কেউ আসেনি ধারে।কিন্তু রিফাত নিজেকে সামলাতে পারেনি।সে আবিরকে ধরে অনেক কেদেছে।অজ্ঞান হয়ে গেছিলো কয়েক বার।সবাই অবাক হয়ে যায় বন্ধুর প্রতি এত ভালোবাসা দেখে।কিন্তু রিফাত যানে আবির তার কতটা।
যানোয়ার গুলো আবিরের বুক আর হাতটা কুপিয়ে জখম করেছিলো।
এই সেই বুক যেখানে রিফাত ঘুমাতো চির শান্তিতে।
আর এই সেই হাত যে হাতে রিফাত চুমু খেয়েছিলো সেদিন।
তারপর রিফাত চলে আসে এই ব্যস্ত নগরীতে।কিন্তু সে আর ব্যস্ত হতে পারেনা।সে সময়ের চাকায় আটকে যায়।তার জীবন আর আবিরময় হয় না।সাদা কালো হয়ে যায়।যদি ওইদিন আবিরকে না জোড় করত তাহলে হয়ত এরকম হত না।
ইসস কি কস্ট না হয়েছিলো আবিরের।রিফাত পাগলের মত হয়ে যায় আবার।আবার স্মোকিং শুরু করে। ভাবে আমার জন্য ই আবিরের এই হাল।আবির যতটা কস্ট পেয়েছিলো সে তা নিজেও অনুভব করতে চায়।
ব্লেড দিয়ে কাটতে থাকে নিজের হাত।একের পর এক পোচ দিয়েই চলছে।টপটপ করে রক্ত পরছে।
৯
সেদিনের পর থেকে আর রিফাতকে দেখা যায়নি বন্ধুদের আড্ডায়।দেখা যায়নি ঝিল পাড়ের অই চা,সিগারেট এর দোকানে।
অন্যদিকে তিন্নি তার পরের দিন কালো শাড়ি পরে হাতে টিফিন বক্স নিয়ে এসেছিলো।রিফাত কে খাওয়াবে বলে।তিন্নি রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে।কিন্তু রিফাত আর আসেনি।
কিন্তু তিন্নি প্রতিদিন ই আসে।রিফাতের জন্য অপেক্ষা করে।সে শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পরেছে।কিন্তু রিফাতের দেখা নেই!!
আর আবির এখন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।যেখানে মাদকমুক্ত থাকার প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।
আসলে ওইদিন রাতে হাত কেটে তীব্র ব্লেডিং এর ফলে রিফাত অজ্ঞান হয়ে পরে।সকালে বাড়িওয়ালা দেখতে পেয়ে তার বাবা মাকে খবর দেয়।বাবা মা তাকে নিয়ে যায় সেখান থেকে।।তার সব কিছু নিয়ে যায়। কিন্তু আবিরের ছবির ফ্রেম গুলো নেয়না।হয়ত নতুন ভাড়াটে আসলে সেগুলোর স্থান ডাস্টবিনে হবে।আবির মারা যাওয়ার পরেই রিফাত তার বাইকটা বিক্রি করে ফেলে।কারন বাইকে এখন তার পিছে কে বসবে তাকে জড়িয়ে!!
কে বলবে বাইকে আমার এলার্জি আছে।কে ব্রেক করলে ভয় পেয়ে উঠবে!রিফাতের মন এখনো সে চতুষ্কোন ঘরেই পরে থাকে।আবির আর রিফাতের সেই সুমধুর দিনগুলোর দিনগুলোর কথা।
কিন্তু আর সেদিন গুলো আসবে না।
তবে এখনো আবির আসে রিফাতের কল্পনায়।তারা কথা বলে।
আচ্ছা আবির কি রিফাতের এই অবস্থা দেখে ভালো আছে??হয়ত আছে হয়ত বা নেই।
আবির আর রিফাত তো গেলো।কিন্তু তিন্নি।
সে কি আরো অপেক্ষা করবে রিফাতের জন্য।
রিফাতই কি আবির কে ভুলে স্বাভাবিক হতে পারবে।নিকোটিন কি রিফাতকে ছেড়ে দিবে??
আর ডাস্টবিনে পরে থাকা হাস্যজ্জ্বল নীল টি শার্ট পরা আবিরের মুচকি হাসিটুকু এখনো কি আছে??
ব্রিজের উপর তুলা সেলফিটির ই বা কি অবস্থা।!!
কেউ কি এদের খবর রাখে??
যে যাকে নিয়ে ব্যস্ত।
কিন্তু সত্যিকারের করুন ভালোবাসা গুলোর পরিনতি যে এভাবেই অজানা রয়ে যায়।
…………..
সমাপ্ত।
সমপ্রেমের গল্প