
লেখক – অজানা
লাল রঙের স্টেট বাসটা একদম রাস্তার মাঝখানে উলটে পড়ে আছে।এক মুহুর্ত না পেরোতেই ভীষণ জ্যাম লেগে গিয়েছে রাস্তাটায় এক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ি দুটোকে ঘিরে।
যানবাহন গুলো একের পর এক হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে।ছোট ছোট রিকশা সিএনজির ড্রাইভার গুলো চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে কপালের ঘাম মুছে মুছে জ্যাম ছুটছে কিনা তার জন্যে একটু পর পর সামনের দিকে তাকাচ্ছে।
অপরদিকে জ্যামটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রতি সেকেণ্ডে।এমন ব্যস্ত রাস্তায় এক্সিডেন্ট হলে যা হয় সাধারণত।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনে ভীড় পড়ে গেছে এক্সিডেন্ট স্পটটায়।
বাসটা ধাক্কা লেগেছে একটা মালবাহী ট্রাকের সাথে।ট্রাকটা রাস্তার পাশে উলটে রয়েছে। পুলিশ ট্রাকের দিকে নজর কম দিয়ে বাসের আহত লোকগুলোকেই বাঁচাচ্ছে।ট্রাকের দুজনই আহত হয়েছে।কিন্তু বাস যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়ে কতেক স্পটডেড বডিও উদ্ধার করছে নিরাপত্তা কর্মীরা।
তাদের হতেই সদ্য মৃত চব্বিশ-পঁচিশ বছর বয়সী একটা ছেলেকে টেনে বের করতেই ছেলেটার সাথে দুটো শপিংও চলে এল পুলিশের সামনে।ঠিকানার ক্লু বের করবার জন্যে ছেলেটার ফোন ঘাটাঘাটি করে ফোন লকড হওয়ায় সুবিধা করতে পারল না পুলিশ।অগত্যা ছেলেটার শপিং ব্যাগ গুলো নেড়েচেড়ে কিছু বই আর চকোলেট ছাড়া কিছুই পেলো না তারা।
……………..
পার্কের এক কোণায় শুভ্র বসে আছে নির্বাকের মত।
তুহিনের এতক্ষণে পৌছে যাওয়ার কথা।সেই কখন সে বলেছে সে বেরিয়েছে।তুহিনের এতক্ষণেও না আসার কারণ খুঁজছিল শুভ্র মনে মনে। ফোনের ডায়াল লিস্ট থেকে তুহিনকে ফোন দিতে যাবে ভাবতেই তুহিন শুভ্রের পেছন দিক হতে ভেসে উঠল হঠাৎ করে। শুভ্র কিছুটা ভয় পেয়ে বলে উঠে,’পেছন থেকে এভাবে ভয় না দেখালে হয় না?আপনার পুরোনো অভ্যেসটা গেল না।’
তুহিন হেসে উত্তর দেয়,’তোমার এই ভয়ই তো আমাকে জয় করালো ছেলে।প্রতিদিন টিউশনি করাতে যেতাম তোমায়,আর তুমি একটু ভয় পেলেই স্যার স্যার করে কেমন যেন কাচুমাচু করতে।তোমার এসব বাচ্চামিই তো আমাকে অনিয়ন্ত্রিত করে দিলো।’
শুভ্র ঠোঁট টিপে হেসে নেয়।বলে,’আসতে এত দেরি হল যে?’
‘আর বলো না।পথে একটা এক্সিডেন্ট হওয়ায় জ্যাম লেগে গিয়েছিল।’
‘আচ্ছা,বুঝলাম।আমার জন্যে আনা জিনিস গুলো কোথায়?’
তুহিন কেমন হন্তদন্ত হয়ে ‘এইতো’ বলে শুভ্রের হাতে দুটো ব্যাগ গুঁজে দেয়।তুহিনের তাড়া থাকায় শুভ্র এতদিন পরে গ্রাম থেকে ফেরা তুহিনের সাথে কথা বলে তৃপ্ত হতে পারেনি।খানিকটা সময় পেরোতেই শুভ্র আর তুহিন পার্ক ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
‘কি এক তাড়া তার!’ অভিমানের স্বরে আওড়াতে আওড়াতে শুভ্র আর তুহিন দুপথে হাঁটা শুরু করল।
……………
বাসায় ফিরে তুহিন ভার্সিটি হলে ফিরল কিনা ভাবতেই শুভ্র তুহিনের নাম্বারে কল দিলো।
‘হ্যালো,পৌছেছেন?’
‘কে বলছেন আপনি?’
ফোনের ওপাশ থেকে এমন অপরিচিত কণ্ঠ আর অপ্রত্যাশিত উত্তরে শুভ্র হতবাক হলো।তার নিরবতা ভাঙল ফোনের অপর প্রান্তের অপরিচিত লোকটির হ্যালো হ্যালো সম্বোধনে।
‘আমি শুভ্র বলছিলাম।কিন্তু আপনি কে?’
‘আমরা পুলিশ স্টেশন থেকে বলছি।এই নাম্বারের লোক আজ দুপুরে মহানগর বড় রাস্তায় বাস এক্সিডেন্টে নিহত হয়েছেন।তার সাথে বই আর চকোলেটের দুটো শপিং ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই পাইনি আমরা।আপনি ফোন দিয়ে আমাদের ঝামেলা কমিয়ে দিলেন।আপনাদের লাশ মহানগর পুলিশ স্টেশনে আছে।ইমিডিয়েটলি ইউ হ্যাভ টু কাম।’
ওপাশ থেকে ফোন নামিয়ে রাখতেই শুভ্র অনুভব করল তার হাত পা কেমন অবশ হয়ে আসছে।ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে শুভ্র তুহিনের নাম্বারটা একবার দেখে নিল।না,নাম্বার তো ঠিকই আছে।এতদিনের সেভড নাম্বার ভুল হবে কী করে! শুভ্র দৌড়ে তার রুমের পড়ার টেবিলের কাছে গেল- তুহিনের দেওয়া নীল রঙের শপিং ব্যাগ দুটো উপুড় করে বিছানার উপর ঝারতেই সমরেশ,নির্মলেন্দু,শরৎ,রবীন্দ্রনাথের বই সহ কয়েকটা চকলেটের প্যাকেট বেরিয়ে এলো।