
লেখকঃ-রবিন হাসান
সন্ধ্যায় ক্লাস কমন রুমে পার্টি চলছিল। রক – বিটিং সং। ড্যান্স। মাস্তি। ভোদকা – শ্যাম্পেইন। চলছে ফুল ডিজে ক্রাউডি উত্তেজনা।
যে যার সাথে খুশি নাচছে। এক জন এর পর আরেক জন এর সাথে ঘুরে ঘুরে ড্যান্সিং কিসিং। আর ভাল লাগলে অফার করে সাইডের রেস্ট রুম অথবা স্লিপিং রুম যেটা ফ্র্যান্সের মত ইউরোপিয়ান কান্ট্রিতে প্রায়শই কমন ব্যাপার।
ডিজের তালে তালে হেলে দুলে সবার নাচ সাইডে দাড়িয়ে বিয়ার খেয়ে খেয়ে দেখছিল লুকাস, অ্যালেক্স, বাজিল। আর কার কত সাইজ হবে, কাকে পেলে বেশি মজা পাওয়া যাবে তাই নিয়ে আলাপ চলছিল। লুকাস কে বার বার ওরা বলছিল একটা চান্স নিয়ে নে। খুব জোরাজোরিও বলা যায়। আসলে লুকাস একটু অন্য রকম ফ্রিলি বলতে কেমন সাই ফিল করে। তার পরেও তাকে বলতেই হল চিকন আর শর্টস পরা মেয়েটা ভাল লেগেছে তার।
মারিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেল। মেয়েটা তাকে ধরে নিয়ে আসল।
বাট লুকাসের বন্ধুরা বলল, আরে আমি দেখছি তুমি ছাড়। আর লুকাস কে দেখিয়ে বলল ওর সাথে কথা বল। হাত বাড়িয়ে বল। হোলা ( হ্যালো) ! আমি ক্লোয়ে।
বলেই তাকে জড়িয়ে ধরল। গলায় হাত দিয়ে জড়িয়ে কিসিং করতে লাগল। লুকাস ও করল।
ক্লোয়ে বলল। চল পাশের রুমে একটু রিল্যাক্স করি। দুজনেই গেল। কিসিং করে চরম মুহুর্তে পরিনত করল ক্লোয়ে। হঠাৎ কাদের আসার শব্দ পেয়েই লুকাস বেড়িয়ে গেল। আর বন্ধুদের দেয়া কন্ডমের প্যাকেট টা ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে এল বাসায়।
সকালে ফোন এল ম্যানন এর। মিকার ফোন এ। ওদের রুমমেট সে। লন্ডন এ গেছে কয়েকদিন আগে।সেও লুকাস কে খুব পছন্দ করে বাট লুকাস করে না। ওদের রুমে আর থাকে মিকার জিএফ লেফি।
ক্লাস শুরু হয়েছে মাত্র দু সপ্তাহ। সবার তেমন কোন পরিচিতি নেই সবার সাথে। তাই ডেফনি, ইম্যান, ইমি , ওরা একটা গেট টুগেদার করার প্লান করল। আর তাই কিছু কাজের জন্য সবাইকে ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে বেড়াচ্ছে। লুকাস, আলেক্স, বাজিল, ইয়ান সবাই ক্যাম্পাস কম্পাউন্ড এ ছিল। ডেফনি এসে ওদেরো কার্ড দিয়ে গেল।
ক্লাস রুমে সবাই উপস্থিত। আরো অনেকেই ঢুকছে। লুকাস, আলেক্স, বাজিল, ইয়ান একসাথে বসে আছে। পার্টিতে দেখা হওয়া লুকাসের সাথে সেই ক্লোয়ে মেয়েটিও এসেছে। বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে, হাসছে। ক্লোয়ে চোখ মেরে দিল লুকাস কে। আরে, ফাক লুকাস , ড্যাম ইট। তুই অফার দে, সেক্স কর এই সেই বলে ওকে শুধু পটাচ্ছে। বাট কিছুই বলছে না সে। হঠাৎ লম্বা একটা ছেলে ঢুকল ক্লাসে, এলোমেলো চুল। অপরূপ হাসি। চোখের চাওয়ায় মোহ আছে। লুকাসের ঠিক দুই সারি চেয়ার পেছনে বসল। ঘাড় বাকাতেই চোখে চোখে চোখ পড়ল। আর ছেলেটাও রহস্য ময় একটা চাহুনি দিল। যেন কোন বোঝা পড়া আছে দুজনের। লুকাস মুখ ঘুরিয়ে নিলে ছেলেটা তাকে ফলো করল। আবার লুকাস তাকাতে সেও ঘুরে গেল।
লুকাস তুই চুপ ক্যান? কি হল বল ওকে করবি কিনা? লুকাস আনমনে ছেলেটার কথা ভেবে ভেবেই রিপ্লাই দিল তোরা যদি বলিস তবে রাজি। ইয়া ইয়া,ভেরি গুড
হিপ হুররে বলে সবাই লুকাসকে কংগ্রাটস জানাল।
আসলে লুকাসের বুকে কাটা পড়েছে ছেলেটার চাহুনির ধারালো ছুড়িতে। যদিও ক্লাসে তাদের কোন কথাই হয় নি।ক্লাস আওয়ার শেষ হলে সবাই বেড়িয়ে গেল। বাইরে এসে লুকাস ছেলে টাকে খুজল।অটোমেটিক শপ এ কয়েন ঢুকিয়ে স্মোকিং বার নিচ্ছিল সে। লুকাস পাশে এসে দাড়াতেই তাকে শপের গ্লাসে দেখে ঘুরে তাকাল।
ওহ, আমি তোমাকে দেখিই নি। কোন টা নিব বলত?
– টুয়েন্টি ফোর টা ভাল।
কিছু বলবে?
না।
নিবে?
না।
আচ্ছা, আমি নিলাম তাতেই দুজনের হয়ে যাবে। ছেলেটাই বলল।
চল বসি।
তিনটা চেয়ার আছে বেঞ্চ টায়। মাঝের টা ফাকা। দুজন দু পাশে।
স্মোকিং করতে করতে কথা বলছে। ক্লাসের কাজ নিয়ে। কবে আসল। এই কথা হল মাত্র।
এর মধ্যে ক্লোয়ে দৌড়ে আসল কোত্থেকে।
এই লুকাস তুমি চোরার মত পালিয়ে আসলে কেন সেদিন?
এই বলে সিগারেট টা টেনে নিয়ে সেও স্মোকিং শুরু করল।
হ্যালো। তুমি নতুন আসছ?
-হুম।
নাইস টু মিট ইউ। আমি ক্লোয়ে।
তুমি?
এলিয়ট।
আরেকবার চোখ ঘুরে লুকাসের দিকে তাকিয়ে বলল-
আমি এলিয়ট।
লুকাস প্রথম প্রাপ্তির একটা হাসি দিল। হুম ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
পরদিন ক্যাম্পাস এ গিয়ে লুকাস এলিয়ট কে খুজল বাট পেল না।তার সম্পর্কে জানতে সে উদগ্রীব হয়ে পড়ল। আলমিরাতে রাখা সবার এড্রেস এর রেজিস্ট্রার ঘেটে অবশেষ এ সে তার ইনফরমেশন পেল। তার এফবি আকডি। মেইল। ইন্সটা। বাসায় এসে সে তার ইন্সটাগ্রাম ঘুরে আসল। মনে হল এলিয়ট অদ্ভুত রকমের। ” পোলারিস” নামের কি থিওরি বের করেছে সে। সেই নয়ে ভিডিও করে অনেক গুলো ভিডিও পোস্ট করেছে। ছবিও আকে সে। ইদুর, আর চিকিরের ছবি একেছে কতগুলো। একটা ছবি দেখে খুব অবাক লেগেছে।একটা ছেলে অন্ধকারে হাটছে। পথ দেখিয়ে আরেকজন কে নিয়ে যাছে। তার হাতের আঙুলে আত রেখেছে। তাকে চুমু খাচ্ছে। জড়িয়ে আছে।
কিন্তু অবাক করার বিষয় ছেলেটার সাথে থাকা অপর ব্যাক্তিটি ছেলে না মেয়ে তা বোঝাই যাচ্ছে না। কারন তার অবয়ব ছেলের মত নয়, মেয়ের মতও নয় । পোলারিস কি এরকম কিছু। কিছুই বুঝল না লুকাস।
শুধু অস্থিরতা কাজ কপ্রছে ভেতরে। আমি কি গে? নাকি বাইসেক্সুয়াল? গুগল টেস্টিং ও দিল কয়েকটা লিংকে। বাট এলিয়ট ই যে তার অস্থিরতা আর শংসয় এর কারন সেটা টের পাচ্ছে লুকাস।
সন্ধ্যায় মারিয়ার এপার্টমেন্ট এ পার্টি আছে। ফ্রেন্ড সার্কেল সবারি ইনভাইটেশন আছে। বিয়ার কেনার দায়িত্ব টা ছিল লুকাসের ওপর। একটু জামেলায় পড়ে গেল সে। চিন্তা করছিল বাস স্টপেজে বসে।
এলিয়ট এসেই তার পাশে বসল ..!
ফাক ..! তুমি ত ভয় পায়িয়ে দিচ্ছিলে।
তুমি কি চিন্তিত লুকাস?
আসলে মারিয়ার বাসায় পার্টি আছে সন্ধায়। কিন্তু বিয়ার নেয়ার দায়িত্ব ছিল আমার। বাট টাকা উইথড্র করতে পারিনি। আর আমার রুমমেট রাও কেউ নেই।
-নো টেনশন। আমি তোমাকে হেল্প করতে পারব।
-আমি কারো কাছ থেকে ধার নেই না।
-আরে আমার কাছেও টাকা নেই অত। বাট অনেক বিয়ার আছে। যত চাও আনতে পার।
– সিরিয়াস্লি?
– লুকাস ! আমি এখন মাতাল নই। সত্যিই আছে। চল আমার ওখানে। যাবে?
বাস চলে আসল এর মধ্যে।
আস লুকাস।
বাসে উঠে গেল তারা।
এলিওটের সাথে এই প্রথম লুকাসের সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগল।
এলিয়ট এর বাসায় পৌঁছে লুকাসের নজরে পড়ল। লুকাসের আঁকা সেই ইদুর চামচিকার ছবি গুলো। কোনটা কাঁদছে, হাসছে হাত দিয়ে দেখাচ্ছে লুকাস।
আর এইটা দেখ । এটার চোখে একটা মাস্ক ও পড়া আছে। বলেই হেসে পড়ল এলিয়ট। আর তার অবাক করা হাসিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে লুকাস।
দুজনের মধ্যে অমিল হল লুকাস একটু সব্ধ, ডিপ মুডের, আর এলিয়ট চঞ্চল, উচ্ছ্বল। আর মিল হল দুজনে চোখের ভাষায় কথা বলতে পারে।
একটা পেঁচার ছবি দেখিয়ে লুকাস বলল, এটা কি ..!!! অদ্ভুত দেখতে।
উম্মম্ম…. এটা হল আমার স্প্রিট এনিমাল।এটা আমাকে শক্তি যোগায় …!
হেলার সুরে লুকাস বলল, পেঁচা তোমার স্প্রিট এনিমল। ..!!? হাসালে। আচ্ছা, যদি আমাকে আকতে ..? তাহলে তুমি কিভাবে আকতে?
লুকাসের ফর্সা মুখ গোছানো লং হেয়ার একবার গভীর মনযোগ দিয়ে দেখে এলিয়ট বলল, জানি না। আমাকে একটু ভাবয়ে হবে।
বলেই দুজন হাসিতে ফেটে পড়ল।
ড্রইং রুমে এসে লুকাস আর এলিয়ট বসল। স্মোকিং করতে করতে লুকাস আর এলিয়ট কথা বলছে। ডিজে ডিস্ক এ একটা পছন্দের জাজ সং প্লে করল এলিয়ট। বাজতেই নাচা শুরু করল একাই। ধুম ধাম ড্যান্স মেরে নিজেই লজ্জা পেল সে। লুকাস তার চঞ্চল্য দেখে নতুন ভাবে বুঝল এলিয়ট কে। পাশা পাশি সোফায় শুয়ে উঠে দেখল অনেকটাই সময় কেটে গেছে। ডিজে স্পিড শেষ হয়ে গেছে। লুকাস উঠে ডিস্কটা পাশের আলমিরাতে রাখল। দেখল একটা পিয়ানো রাখা।
এলিয়ট! বাজাতে পার?
পারি তবে বাজিয়ে তোমাকে ইম্প্রেস করতে পারব না ! বলেই মুচকি আসল এলিয়ট।
আমি বাজাব একটু?
হুম শিওর ..!
লুকাস প্লে করল পিয়ানো …..
টুন ….
টুন টিন
টিন টুন টান টান…….
স্পিড বাড়াতেই পিয়ানোর মুহুর্মুহু তে নেচে উঠল আশপাশ।
এলিয়ট নড়ে চড়ে উঠে বসল। লুকাসের আবাক করা মিউজিক শুনে সে মুগ্ধ হয়ে গেল ।
ওয়াও ..!!!
ঘুরে তাকাল লুকাস। এলিয়ট চোখের ভ্রু উপরে বাকিয়ে ঠোটে হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল।
ইউ আর সারপ্রাইজিং …!
আই লাইক সারপ্রাইজিং পিপল …!
লুকাস শুধু তাকিয়ে রইল।
এলিয়ট এর ফোনে একটা মেসেজ আসল। চেক করেই …
ও ফাক …! আমার ফ্রেন্ডস রা আমাকে যেতে বলেছিল। আমি ভুলেই গিয়েছি।
এলিয়ট বলল, আমাকেও যেতে হবে। ওরা সেই সন্ধ্যা থেকেই মেসেজ দিচ্ছে।
হুম চলো।
একটা বিয়ার এর বক্স নিল লুকাস। গেট এ বের হয়ে …
তোমাকে এভাবে বের করে দেয়ার জন্য সরি লুকাস।
আরে ব্যাপার না। আমাকে এই বিয়ার গুলো দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আবার আসব অন্য সময়। বাই।
হেই লুকাস ..!
( জাস্ট ইন টু সেকেন্ডস, লুকাস এর মাথার উপরে জাস্ট একটা চুল টেনে ছুয়ে দেখল এলিয়ট)
সি ইউ। ( ক্লোসিং ডোর)
বাইরে এসেই লুকাস দেখল, তার ফ্রেন্ডস রা কত কত মেসেজ দিয়ে রেখে আর বকেছে …!!! একপা দাড়াতেই পেছন ঘুরে দেখল এলিয়ট ও বের হয়েছে…কিন্তু তাকে দেখে নি। একটু দূরে হেটে গিয়েই একটা মেয়েকে খুব যত্নের সাথে চুমু খেয়ে গ্রিটিংস করছে।
ভাবাচ্যাকা খেয়ে লুকাস শুধু বোকার মত তাকিয়ে রইল সেদিক।
পরদিন ক্লাস এ গিয়ে লুকাস খুব বকা খেল ওর ফ্রেন্ডসদের থেকে।
– তুই এত টা দায়িত্ব হীন?
– এক টা মেসেজ এর রিপ্লে দিস নাই ..!!!
লুকাস বলতে পারে নি যে সে এলিয়ট এর বাসায় গিয়েছিল। তাই ঘুরিয়ে মিথ্যা বলল যে আমার বাসায় একটু সমস্যা ছিল।
স্কুল কম্পাউন্ড এ ক্লাস আওয়ার এর পর কথা বলছিল লুকাস ,বাজিল, এলেক্স , জিয়ান।
হঠাৎ পিছন থেকে এলিয়ট আসল ….
স্যালু…( হাই)
– সবাই গ্রিটিংস করল ..!( স্যালু …ফ্রেঞ্চ ওয়ার্ড)
লুকাস কে একটা মাফলার হাতে দিয়ে বলল সেদিন তুমি এটা ফেলে রেখে এসেছিলে।
– লুকাস আর কিছু বলার আগেই বলল : ওহ তুমি এটা কমন রুমে পেয়েছিলে ..? ম্যাক্সি এলিয়ট ..( ম্যাক্সি – থ্যাংস)
এলিয়ট কিছু বলল না আর। বাই বলে চলে গেল।
সবাই জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা কে?
লুকাস বলল ও নতুন এসেছে …. আসলে তেমন কাউকে চিনে না, আমার সাথে পরিচিত হল সেদিন ……….
ঘন্টা পড়ে গেছে এর মধ্যে। সবাই ক্লাসে চলে গেল তখনি। ক্লাস শেষে বারান্দায় ক্লোয়ের সাথে দেখা লুকাসের সামনাসামনি।
স্যালু লুকাস!
-স্যালু!
ইউ ফ্রি দিস উইকেন্ড ?
হুম।
চল না একটু ঘুরে আসি? জাস্ট তুমি আর আমি? মানে একটু ক্লোসলি হয়ে …?
– হুম শিওর…( খুব বিষন্ন হয়েই বলল লুকাস)
এর মধ্যে এলিয়ট আসল ..
– লুকাস তোমার সাথে একটু কথা ছিল…
বল…?
এই বলেই ক্লোয়ের কাধে হাত রেখে লুকাস এলিয়ট কে দেখানোর চেস্টা করল যে গার্ল্ফ্রেন্ড আমারো আছে…!!!( হা হা)
তখন এলিয়ট এর ভাবখানা যেমন ( ওরে বাবাহ…!আইলাম তরে নিয়া সময় কাটামু তার ইনভাইটেশন দিতে, আর তুই …!!!!)
-একটু পাশে চল?
না বল। সমস্যা নেই …!
( এলিয়ট এর মেজাজ আগুউন….!)
উইকেন্ডে ফ্রি আছ?
মায়াবি কন্ঠে ক্লোয়ে বলে উঠল: কিন্তু আমরা তো উইকেন্ডে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করেছি .. ! বাই দ্য ওয়ে আমরা তাহলে একটা কাজ করি, তোমার বাসায় যাই? সেখানে লুসিল ( এলিয়ট এর সেই জিএফ) এর সাথেও দেখা হল। মানে ডাবল ডেটিং হল?
কুল ! করা যায় …
লুকাসও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি সূচক : কুল ! ( যেন এলিয়ট যা বলবে তাই ই সঠিক)
রাত নটা। এলিয়ট এর বাসায় :
এলিয়ট আর লুসিল টেবিলের একপাশ এ । অন্য পাশে লুকাস আর ক্লোয়ে।
এলিয়ট সিগারেট ফুকছে … লুকাস চুপ কপ্রে বসে আছে। ক্লোয়ে চঞ্চল মেয়ে …লুসিল এর সাথে আলাপ করছে :-
তোমাদের বাসায় এসে খুব ভাল লাগল। এই রকম কথায় কথায় কিছুক্ষন পর , ক্লাস পড়া নিয়ে কথা ঊঠল …:
ক্লোয়ে : আমি ত ভাবি নি যে সেম ব্যাচের কারো সাথে রিলেশন হবে। তুমি কিভাবে ওর সাথে রিলেশন এ আসলে !!!!!!
লুসিল : এলিয়ট সিনিয়র ছিল আমার । গত বছর ও এক্সাম দেয় নি। তাই এখন সেম ব্যাচ। পড়া শুনা না করলে ত হবেই এমন !
এলিয়ট এবার রাগই হল মনে হয়।
– লুসিল তুমি কিন্তু বেশি ই বলে ফেলছ মনে হয়!
– আমি ত তোমার ভালর জন্যই বলছি।
– আমি আমার ভাল বুঝি। আমার আরো কয়েকবছর সময় আছে লুসিল …আর তোমার কি মনে হয়? আমার তোমাকে দরকার !!! ভুল। আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক অনেক দূর হয়ে গেছে।
সামান্য কথা থেকে কি হয়ে গেল কেউ বুঝল না। লুসিল রাগ হয়ে উঠে চলে যায়। ক্লোয়ে দেখল তার এখানে বসে থাকাটা মানায় না। সেও চলে গেল। লুকাস বোকার মত বসে রইল।
– সরি লুকাস! তোমার এটা দেখা টা ঠিক হয় নি ….আমি এটা চাই নি। আমি এরো কিছু স্পেসাল চেয়েছিলাম।
লুকাস : স্পেশাল?
-হুম। শুধু তোমার আর আমার !
লুকাস চেয়ে থাকে অবাক হয়ে …
এলিয়ট বলল চল এখান থেকে বের হয়ে যাই।
ওরা কি ভাববে?
চলত ..!
চুপি চুপি দুজনই বের হয়ে যায় ….
এলিয়ট দৌড় শুরু করে। লুকাস কিছু না বুঝে সেও তার পিছনে দৌড়াতে থাকে। এলিয়ট একটা পার্কের কাছে চলে আসে । রাতে সেখানে কেউ আসে না। খুব নিরিবিলি।
লুকাস আস্তে আস্তে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল:
কই যাচ্ছ?
– দেখবে চল ….
লুকাস দাড়িয়ে থাকে। একপ্রকার জোর করে টান দিয়ে লুকাসের হাত ধরেই দৌড় শুরু করে এলিয়ট।
তারা অনেক ভেতরে চলে আসে।
এলিয়ট : স্তব্ধতার শব্দ শুনতে পাচ্ছ?
– হুম। তুমি এখানে আস প্রায়ই?
এলিয়ট : হুম এটা শহরের একটা প্রিয় জায়গা আমার। আমি যখন একা ফিল করি তখন আসি এখানে।
– কাউকে নিয়ে আস একা ফিল করলে? ( হেসে হেসে বলল লুকাস। )
– উহু । তুমিই প্রথম।
– লুসিলও নয়?
– তুমিই প্রথম।
লুকাসের ফোন আউট অফ ব্যাটারি হয়ে যায় আর চুপ করে দাড়িয়ে যায়।
কি হল?
– ব্যাটারি ডাউন।
– খুব নরম ভাবে, দায়িত্বের সুরে এলিয়ট বলল আমিত আছি। আমি নিয়ে যাব!
লুকাসের হাতটা ধরে সে তাকে সামনে এগিয়ে নিল। ক্রেজি বয় এলিয়ট ( )আবার দৌড় শুরু করল ।একটু সামনে গিয়ে ছোট রেস্ট হাট (rest hut) এর নিচে দাড়াল।
এই টা আমার ঘর। কেউ আসে না মাঝে মাঝে আমি আসলে এখানে বসি।
লুকাস একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বলল : ম্যাক্সি! ফর ইনভাইটেশন।
– তোমার পছন্দ হয়েছে? আর তোমার কি ভয় করছে?
লুকাস: আমার ভয় করছে?
– হুম?
লুকাস:ভয় করছে না।
– ভয় করছে না?
লুকাস : ভয় করছে না।
– কেমন অদ্ভুত লাগছে না?
হুম্মম্মম্মম্ম……..
বলতেই এলিয়ট টর্চ লাইট অফ করে দিল।
লুকাস চমকে উঠল । ডাকা শুরু করল
এলিয়ট?
কই তুমি?
এলিয়ট?
সাইড থেকে টর্চ অন করল এলিয়ট।
( ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিজ ইচ্ছায় কল্পনা করুন)
– এখনো ভয় করছে না?
না এখনো না।
-ওকে…কিন্তু ( আবার টর্চ অফ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও অফ)
এবার লুকাস একটু রাগই হল।
ফাক ! এলিয়ট সিরিয়াস্লি …!!! ওকে একটু ভয় করছে।
এবার লুকাস একদম পাশে এসে টর্চ অন করল। ( মিউজিক অন)
বিরক্তি আর আসক্তির পূর্ন মাত্রার ব্যবহার করে লুকাস তার মুখটা এলিয়ট এর দিকে উপরে তুলল। সবচেয়ে কিউটনেস এইটা যে এলিয়ট লম্বা আর লুকাস খাট। মানে এমন যে লুকাসের মাথাটা ঠিক এলিয়ট এর বুক বরাবর সই।
এলিয়ট টর্চটা দুজনের মাঝ বরাবর উপর দিক করে ধরল । কুল বয় বেচারা লুকাস খুব বাচ্চা বাচ্চা ভাবে চোখ বড় করে এলিয়ট এর মুখপানে তাকাইছে। যেন কিছু বুঝে না। আর এলিয়ট যেন তার ভয় কাটাতে আসছে। খুব কাছে আগাচ্ছে লুকাসের। লুকাস তার চোখ বন্ধ করে ফেলল। এলিয়ট জাস্ট ঠোট ছুই ছুই অবস্থায় টর্চ টা আবার অফ করে দিয়ে পালাইছে বাইরে …!!!
এবার লুকাস রাগ ও করে নাই আর ভয় ও পায় নাই। জাস্ট ফিলিং বোরিং। ধুর বাইরে বৃষ্টিও শুরু হইছে …!
এলিয়ট?
এলিয়ট?
বাইরে এসে দেখল সে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে ভিজতেছে। লুকাস ছাউনির নিচে দাড়িয়ে এলিয়ট এর সামনে আসল।
– তুমি কি বৃষ্টিও ভয় পাও?
( এখন একটা দারুন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কল্পনা করুন প্লিপ্লিজ)
লুকাস কথা বলল না কোন। ঠোট বাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে দুই হাত উচু করে এলিয়ট এর দিকে বাড়িয়ে দিল । এলিয়ট ও হাত বাড়িয়ে দিল।একটা আঙুল আরেকটা আঙুল এর ফাকে মুঠ করে আটকে গেল। আঙুলে আঙুল রেখে একটা শক্ত বন্ধন পড়ল দুই হাতে। একটা হেচকা টান
দিয়ে এলিয়ট লুকাসকে বৃষ্টির ভেতর নিয়ে আসল। দুই ঠোট এই প্রথম মিলল। লুকাস যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বৃষ্টির সাথে ভিজে ভিজে একাকার হয়ে গেছে দুটি ঠোট, দুটি দেহ, দুটি প্রান, দুটি মন।
লুকাসের বাসা।
ভোর ছয়টা। বাইরে মাত্র আলো ফুটেছে।
কাল রাতে এলিয়ট লুকাসের বাসায় এসেছিল। ঘুম ভাঙলো দুজন দুজন কে পরম যত্নে চুমু খেয়ে। এলিয়ট লুকাস কে বুকের মধ্যে চেপে ধরে আছে । লুকাস তার হাত এলিয়ট এর চুলে বুলিয়ে দিচ্ছে। আলতো করে লুকাস উচু হয়ে এলিয়ট এর নাকে একটা ছোট চুমু দিল। এলিয়ট নি:শব্দে হেসে লুকাস কে জিজ্ঞেস করল :
আমি তোমার প্রথম?
– আমার প্রথম কি?
তোমার প্রথম পুরুষ?
লুকাস কিছু বলল না। ঠোট বাকিয়ে হাসার চেস্টা করল। এলিয়ট বলল, ওকে আমি এটাকে হ্যা ই ধরে নিলাম। লুকাস পাল্টা জিজ্ঞেস করল-
তোমার? এলিয়ট ভ্রুদুটো উপরে তুলে হেসে ফেয়ে পড়ল। সাথে লুকাস ও বোকাবাবুর মত হাসতে লাগল। দুজন আবার চুমুতে মেতে উঠল। আদরে আদরে কখন ঘুমিয়ে পড়ল তা কেউ জানে না। ঘুম থেকে উঠে লুকাস দেখল এলিয়ট পাশে নেই। চলে গেছে। বালিশের পাশে দেখল একটা চিরকুট রাখা। একটা র্যাকুন (প্রানী, কুকুরের সাইজ) এর ছবি আকা।
র্যাকুনের হাতে লেখা : তুমি ঘুমালে খুব সুন্দর লাগে দেখতে লুকাস।
বিমর্ষ হাসি দিয়ে লুকাস আবার শুয়ে পড়ল অলস মন নিয়ে।
ক্লাস আওয়ার ।
ক্লাসে বসে ম্যাথ করছিল ইম্যান আর লুকাস। হঠাৎ এলিয়ট এর ম্যাসেজ। বাইরে আসবে লুকাস? লুকাস এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল। কাচের দরজার বাইরে তাকাতেই দেখল হাসি মাখা মুখ নিয়ে দাড়িয়ে এলিয়ট। বই খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে লুকাস বাইরে চলে গেল। বারান্দায় দাড়াতেই এলিয়ট লুকাসের ঠোটে কিস করল। লুকাস একটু বিব্রতভাব নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, দেউ দেখল কিনা। এলিয়ট বলল:
আমি লুসিল কে বলে দিয়েছি।
– কি বলে দিয়েছ?
আমাদের সম্পর্কে।
তুমি তোমার ফ্যামিলিকে জানাবে না?
-আমার বাবা হয়ত মানবে না। বাট আমার মা খুব ক্রেজি পারসন।
ক্রেজি মিন্স?
– সে হয়ত আমাকে চার্চ এ নিয়ে যাবে। আমাকে সুধরানোর জন্য চেস্টা করবে। ব্যাপার না এলিয়ট। আমি সব ম্যানেজ করে ফেলব। আর আমার রুমমেট রাও খুব হেল্পফুল। উই উইল বি হ্যাপি এলিয়ট।
এলিয়ট লুকাসের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়েই বাই বলে চলে গেল। লুকাস একটা চুমু খেতে চেয়েছিল। কিন্তু এলিয়ট পিছু হয়ে সি ইউ বলে বিদায় নিল।
লুকাসের বাসা।
লুকাসের রুমমেট মিকা । লুকাস তাকে সব খুলে বলল। ম্যানন আর লিসাকেও জানালো। সবাই তাকে সাপোর্ট দিল। আর সেদিন সে রুমে এসেছিল সেটাও জানাল। সবার সাথে নিজেই পরিচিত হয়েছে। সব মিলিয়ে সে ভালই। সবার সাপোর্ট পেয়ে লুকাসেরো ভাল লেগেছে নিজের কাছে।
বিকেলে এলিয়ট কে ম্যাসেজ দিল লুকাস। কাল উইকেন্ডে কিছু প্ল্যান আছে তোমার ? আর আমি আমার রুমমেট আর ফ্যামিলিকে আমাদের সম্পর্কে জানিয়েছি। এলিয়ট রিপ্লাই দিল :
“দ্যাটস গ্রেট।
বাট আমি একটু বিজি তাই তোমার সাথে এখন কথা বলতে পারছি না।
বাই “
এমন তাচ্ছিল্যের জবাব লুকাসকে মুহুর্তেই চুপসে যাওয়া বেলুনের মত করে ফেলল। ফোনটা কে নিজের হাটুর উপরে আগাত দিল রাগে। ফ্রেন্ডস গ্যাং গ্রুপে ম্যাসেজ করল – ” হোয়াটস এবাউট টুমরো? “
রবিবার বিকেল।
বাজিল, ইয়ান, এলেক্স লুকাস সবাই বের হয়েছে। বাজিল বলল আজকে ডেফনির বাসায় পার্টি আছে। চল যাই। সবাই রাজি। লুকাস কিছুই বলল না। মনের কস্ট নিয়েও পার্রটিতে যেতে রাজি হল।
বাজিল ডেফনি মেয়েটাকে খুব পছন্দ করে। তাই তার আগ্রহ খুব বেশী। সেই সবার আগে আগে ঢুকল ভেতরে। লুকাস ও মন মরা হয়ে ঢুকল। হঠাৎ চোখে পড়ল লুসিল কে। লুসিল কে দেখে ভাবল এখানে এলিয়ট ও আছে। খুজতে লাগল পেল না। বাইরে বেরিয়ে এল সে। কিছুক্ষন পর দেখল। এলিয়ট লুসিল কে চুমু খাচ্ছে। লুকাস রাগ, ক্ষোভ, অভিমান, আর অসহায়ত্ব নিয়ে সেখান থেকে কাদতে কাদতে বের হয়ে এল। গানের শব্দে কেউ শুনে নি। কিছু দূর এসে খুব রাগে একটা স্টীল এর গেইটে হাত দিয়ে ঘুসি দিয়ে নিজের হাতকে রক্তাক্ত করল। আর চিতকার করে কেদে মনের দুখ কে একটু হাল্কা করল।
মিকা সান্ত্বনা দিল। কেদো না লুকাস। কেউ যদি বিশ্বাস ঘাতকতা করে, ভালবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে জাস্ট ফাক দেম। হুম?
তুমি জান না মিকা, আমি এত ম্যাসেজ দিলাম ওর থেকে কোন রেস্পন্স ই নেই। খুব ব্যাস্ত নাকি সে! অথচ লুসিলের সাথেই ও পার্টিতে ছিল! বলতে বলতে বাচ্ছাদের মত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে লুকাস ছেলেটা। ফর্সা মুখটা কস্টে কেদে কেদে লাল বর্ন হয়ে গেছে। ম্যানন মেয়েটাও রুমমেট হিসেবে ভাল। লুকাসকে কাধের উপরে মাথা রাখিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে সেও কাদছে আজ।
কিন্তু মিকার জিএফ লিসা ..!!!এতক্ষন ফোন টিপাচ্ছিল। এত কস্ট, এত কান্নার মাঝে লুকাসকে সে জিজ্ঞেস করে ।
ওয়েট ..! লুকাস, তুমি গে?
কান্না বিজড়িত মুখে হালকা একটু হাসি ফুটল মিকা ,লুকাস আর ম্যানন এর।
ক্লাস কমন রুমটা এত দিন বন্ধ ছিল। রিওপেনিং এর জন্য অনেক কাজ। প্রথমেই দেয়ালের ম্যুরাল টা পেইন্ট করতে হবে। কিন্তু কে করবে? সবাই দায়িত্বটা দিল লুকাস গ্যাংদের। বাট ভাল পেইন্টিং তো এলিয়ট পারে। তাকে কেউ জানাও। ডেফনি বলল। লুকাস ই ত জানাতে পারে। তাই অনিচ্ছা সত্বেও এলিয়ট কে ম্যাসেজ দিল লুকাস । লুকাস রাজি হল। কাল বিকেলের দিকে এসো। আমরা কমন রুমে থাকব ।
লুকাস সবাইকে কনফার্ম করল। সবাই নতুন কমন রুম পেয়ে খুব খুশি। যদিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডেফনি স্যারের সাথে তর্ক করে রিওপেনিং করার ব্যাবস্থা করে। ফুল ক্রেডিট বলতে গেলে তারই। সবাই তাকে কনগ্রেটস জানাচ্ছে। আজ বাজিলেরও খুব ইচ্ছা করছে ডেফনিকে প্রোপোজ করতে। তবুও ডেফনিকে বলল যেদিন তোমার উপযুক্ত হব সেদিনই তোমাকে কিস করব। ডেফনির মনটা খুশিতে ভরে যায়। বাজিল সত্যিই ভাল ছেলে। খুব ভালবাসে তাকে।
পরদিন বিকেলে কমন রুমে রং তুলি নিয়ে সবাই ই অপেক্ষা করছে। বাট এলিয়ট আসছে না। সবাই বলছে প্লিজ ওকে ম্যাসেজ কর। লুকাস ম্যাসেজ দিল। রিপ্লাই এলে জানাল হ্যা ও আসছে । বাট কি হল, সবাই ফাকিবাজ …!!!
– ওহ তাহলে ত ও একাই পারবে, আর তুই ও সাথে থাক আমরা যাই বলেই পালালো ওরা। রুমে এসে ঢুকল এলিয়ট। পিছন ফিরে তাকাল লুকাস। অনেকদিন পর মুখোমুখি দুজন। কেউ কিছু বলছে না। লুকাস মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল। এই যে রং আছে আর তুলি ও রাখা আছে। আমাদেরকেই করতে হবে পুরোটা। এলিয়ট তুলি হাতে নিয়ে রঙে চুবিয়ে নিয়ে ছুড়ে মারল দেয়ালে।
– এটা কি? লুকাস বলল।
এভাবেই আকব। সবগুলো রং ছিটিয়ে দিয়ে একটা আলাদা ধরনের ম্যুরাল হবে এটা। লুকাস বলল ওকে …। সেও একটা তুমি তে রং নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে দিল।
এলিয়ট বলল ইউ ফেইল্ড ..!
– নো আই ডোন্ট।
আমি তোমাকে চ্যালেঞ্জ করছি না লুকাস।
এলিয়ট এর চোখের দিকে তাকিয়ে কি ভেবেই যেন সব চাপা ক্ষোভ দূর হয়ে গেল লুকাসের ।
শ শ শ শব্দ করে বাকা চাঁদের মত হাসল লুকাস।
এলিয়ট প্রশংসা করে বলল :
তোমার হাসলে খুব সুন্দর লাগে।
-সেদিন পার্টিতে তোমাকেও লুসিলের সাথে হাসিখুশি দেখে খুব ভাল লেগেছে।
তুমি এটা বলতে পার না লুকাস।
লুকাস পাশ ঘুরে এলিয়ট এর মুখোমুখি দাড়াল।
ভাঙা কন্ঠের মত করে বলল – কেন?
কারন যা কিছু হয়ে গেসে ইট ডাসেন্ট ম্যাটার।
-ডাসেন্ট ম্যাটার ?
ডাসেন্ট ম্যাটার । তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর অনলি দ্য ম্যাটার ইজ ইউ লুকাস।
লুকাস কিছু বলে না। আরেকটু রং মাখিয়ে তুলি টা দেয়ালে ছুড়ে দেয়।রং করতে করতে এলিয়ট একটু রং লুকাসের নাকে লাগিয়ে দেয়।
লুকাস বলল, সিরিয়াস্লি !!
– হুম …
দুজন দুজনকে জোর করে রং মাখাচ্ছে। ভালবাসার রং, অধিকারের রং। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। পুরো স্কুল ফাকা। কমন রুমে দুইটা ছেলে। আজ সাতরঙা ভালবাসায় মেতেছে রং নিয়ে। দুজন দুজনের টিশার্ট ট্রাউজার খুলে দিল। কালো চুল সাত রঙের ছোয়ায় রঙীন হয়ে গেছে।ঠোটে থেকে ঠোট হয়ে বুক, বাহু, শিশ্ন, নিতম্ব হয়ে পায়ের পাতায় পাতায় রং মিশে গেছে। কেমিক্যাল এর রং ভালবাসার রঙে পরিনত হয়েছে উন্মাদ উত্তেজনায়।
সকাল।
লুকাসের বাসা।
কাল রাতে তারা দুজন অনেক পরিশ্রম করে রং তুলেছে শরীর থেকে। উত্তেজনায় আর মনেই ছিল না কিছু । বেশ রাত করেই ঘুমাতে হয়েছে। সকালে লুকাসের ঘুম ভাঙল তার মায়ের এস এম এস এ। তোমার বাবা আর আমি চার্চে নিয়ে যাব তোমায় আসবে কিন্তু। খুব বিরক্ত হয়ে ওকে বলে রিপ্লাই দিল সে।
টের পেল কিচেনে কারা যেন কথা বলছে। গিয়ে দেখল এলিয়ট রান্না করছে। অবাক হয়ে তাকাল লুকাস।
– তুমি উঠে গেছ বেবি? বলেই লুকাসের ঠোটে চুমু খেল এলিয়ট। মিকা আর ম্যানন চোখাচোখি করল গ্রেট জব মুডে।
লুকাস বলল আমি ভেবেছি তুমি সেদিন এর মত চলে গেছ।
– আরে তুমি ত আমাকে দেখতেই পাচ্ছ এখানে …!!!
কি রান্না হচ্ছে?
– এটা? পনি। তোমার প্রিয় লুকাস। ম্যানন বলল। হুম এলিয়ট ভাল রান্না জানে মিকা সাথে বলল।
লুকাস বলল আচ্ছা আমরা কি কাল রাতে তোমাদের ঘুমে ডিস্টার্ব করেছিলাম?
ম্যানন বলল, না আমি কিছু টের পাইনি। মিকাও বলল না কিছুই না।
বাট ওদের রুমমেট বেচারী লিসা মানে মিকার জিএফ, সে বলল : হুম খুব ডিস্টার্ব হয়েছিল ম্যানন। কারন আই হ্যাভ আ সেক্সুয়াল লাইফ এজ আইম ইন রিলেশনশিপ । বাট তুমি এখন ও সিংগেল। ম্যানন রাগ হয়ে কিচেন থেকে বের হল। লিসাও গেল। মিকা বুঝল ম্যানন রাগ করছে। তাই ম্যানন ম্যানন করতে করতে সেও কিচেন থেকে বের হল।
এলিয়ট ব্যাপারটা এঞ্জয় করল। লুকাস্কে বলল। তোমার রুমমেট রা খুব ক্রেজি …!
– নাহ ওরা খুব কুল ও । মুখটা খুব মলিন দেখে এলিয়ট জিজ্ঞেস করল :
ইউ ওকে?
হুম।
আরেহ। মন খারাপ করো না লুকাস। পেছনের কথা ভেবে এত সিরিয়াস হয়ে যেও না।
লুকাস উপরের দিকে মুখ তুলে এলিয়ট এর চোখে চোখ তাক করে বলল, কিন্তু এমি সত্যিই সিরিয়াস কিছুই চেয়েছিলাম।
এলিয়ট লুকাসের দুই গাল দুই হাত দিয়ে চেপে আরেকটু কাছে টেনে আনল।
বলল আর যাব না ছেড়ে ..?
লুকাস বলল : ওহ ইয়াহ?
হুম!
লুকাসের পাতলা ঠোট কে মাল্টার ফালির মত চুষে মুখে পুরে নিল এলিয়ট ….!!!!
বিকাল তিনটা।
ভেন্ড্রেডি টাউন এর বাইরে একটা পার্কে।
অনেকদিন পর ফ্রেনড সার্কেল সবাই এসেছে ঘুরতে। ডেফনি, ইম্যান, এলেক্সিয়া, বাজিল, ইয়ান, এলেক্স, ম্যানন, মিকা, লিসা সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। একটু দূরে এলিয়ট আর লুকাস গাছটার নিচে বসে আছে। এলিয়ট এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে লুকাস। এলিয়ট এর হাত নিখুত ভাবে ছুঁয়ে দেখছে লুকাস আর বাবু বাচ্চাকে কথা শেখানোর ভঙ্গিতে এলিয়ট লুকাসের কথা চলছে …
এলিয়ট : তুমি কি ভেবেছিলে, তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা কমন রুম এ ? আসলে তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি করিডোরে। আমি কাউকেই চিনতাম না। তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে যাচ্ছিলে। আর আমি তোমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। তুমি আমাকে দেখনি। বাট আমি তোমাকে দেখেছি।
আমি শুধু তোমাকেই দেখেছিলাম।
লুকাস মন দিয়ে সব শুনে বলল, কি হত যদি আমি সেদিন ওই মিটিং এ না আসতাম। অথবা যদি বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা না করতাম। তাহলে হয়ত তোমার বাসায় যাওয়া হত না, আর তোমার সাথে দেখাও হত না ……
এলিয়ট বলল, কি অদ্ভুত তাই না …!!!
– হুম। ।।
লুকাস প্রসংগ পাল্টে জিজ্ঞেস করল, তাহলে এই উইকেন্ডে তুমি আমার বাসায় আস ?
– উহু এইবার গেলে লিসা আমাকে ব্লক ই করে দিবে। হাসিতে ফেটে পড়ল দুজন।
আমি একটু বিশেষ কিছু চাই।
লুকাস জিজ্ঞেস করল সেটা কি ?
– এখন বলব না। সারপ্রাইজ দিব।
সারপ্রাইজ?
হুম সারপ্রাইজ।
লুকাস এলিয়ট এর হাতে একটা চুমু দিয়ে পূর্ন সমর্থন জানাল।
রবিবার।
রাত দশটা।
নদীর পাশে ভেড়ানো একটা হাউস বোট এর কাছে লুকাসের চোখ চেপে নিয়ে আসল এলিয়ট।
– কই নিয়ে আসলে?
আর একটু দাড়াও…
আস্তে !! আস্তে !!! চলো, হুম সাবধানে ….!এলিয়ট লুকাসকে বোটের সিড়ির কাছে নিয়ে আসল। সিড়ি গুনে উপরে নিচ্ছে এখন।
ছয়
সাত
আট ….না না আট না এইত্ত…..
– আমি কি এবার চোখ খুলতে পারি ..?
হুম হুম ।
– রিয়েলি …?
টাডা ….!!!!!!!
তুমি এই টা প্লান করেছিলে এই উইকেন্ডের জন্য …?
হুম। এলিয়ট কে জড়িয়ে ধরল লুকাস। কত টাকা পে করতে হয়েছে ..? ধুর বলে উড়িয়ে এলিয়ট লুকাসের ঠোটে চুমু দিল। এলিয়ট বোটের সামনে দুইহাত তুলে চিতকার দিয়ে বলল, লুকাস আমার বয়ফ্রেন্ড …!!! ও খুব হট..!!
লুকাস খুশির বন্যায় মুখে হাত দিয়ে লজ্জার হাসিতে ফেটে পড়ল।
এলিয়ট বলল এখোনো তুমি সব দেখনি। চল ভিতরে চল।
চল………..
হাউস বোটের ভেতরে ডাইনিং এ বসে দুজন। উপরে হালকা আলোর ঝাড়বাতি টা জ্বলছে। টেবিলের উপরে শ্যাম্পেইনের বোতল, হাম, আর সিগারেট এর প্যাকেট সাজানো।
গ্লাসে ঢেলে শ্যাম্পেইন চিয়ার্স করল দুজন।
উম হামটা ট্রাই কর লুকাস …!!
দুজন খাচ্ছে আর গল্প করছে।
এলিয়ট সিগারেট ফুকছে, স্মোক রিং ছাড়ছে…..
এলিয়ট এর মুখে মুখ লাগিয়ে একটু ধোয়া নিয়ে লুকাস ও উপরের দিকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল স্মোক রিং……
বেড রুমে।চারপাশটা খোলাই বলা চলে। তাকালেই নদীটা দেখা যায়। ফুরফুরে বাতাস আসছে ভেতরে। চিকন গড়ন আর ফর্সা দেহের দুইটা আধা যুবক জড়িয়ে আছে। একজন আরেকজন এর উপরে ঊঠে যাচ্ছে একটু পর পর। চুল কান গলা বুক চিবুক উরু খুটে খুটে পরখ করছে দুজন। এলিয়ট নামের ছেলেটা লুকাসের বুক থেকে নিচের দিকে বেয়ে চলা পশমের পথ ধরে যতই নিম্নগামী হচ্ছে লুকাসের মাথা ডান থেকে বামে ঘুরছে ততবার ।এলিয়ট যতই মুভ করছে লুকাসের চোখ খুলতে ততই কস্ট লাগছে। এই মুহুর্তে তার চোখ আটকানো যাচ্ছে না। হাতের স্পর্শে দক্ষ কুমোরের মত যৌনতার কাদামাটি দুজন দুজনকে মেখে দিচ্ছে। নাঙা দেহকে মাত্রই গড়া মাটির পুতুলের মত দেখতে। উন্মাদনা শেষ কখন হল? যখন এলিয়ট লুকাসের বুকে মাথা রেখে আছে দেখা গেল তখন মনে হয়।
লুকাস এলিয়ট এর চুল গুল ছুয়ে দেখছে …..
আমাদের বিয়ের দিন এটা ভাড়া নিব …
লুকাস বলল আমাদের বিয়ে?
– হুম তুমি চাওনা আমাদের বিয়ে হবে?
হুম চাই। বাট বোট কেন?
– কারন এটা সবচেয়ে স্পেশাল হবে। আর গেস্ট রা আসলে তাদের খেতে দিব হাম আর শ্যাম্পেইন। তারপর আমরা এই বোটটা নিয়ে সাগরে ভেসে চলব।
লুকাস শুধু শুনছে।
তারপর আমরা ভেসে ভেসে আলাস্কা দিবে যাব। এলিয়ট হাসছে আর এসব বকছে। তারপর তোমার সিফিভার হবে। তাই আমাদের ও নেমে যেতে হবে বাট আমাদের ডোনাল্ট ট্রাম্প ধরে ফেলবে ….!!!
এলিয়ট এর এসব প্যাচাল শুনে লুকাস বলল …
ওয়াও।
– তাই না?
এলিয়ট আবার বলল আচ্ছা আমি যদি মরে যাই।
লুকাস মনটা খারাপ করে এলিয়ট এর মুখে হাত বুলিয়ে বলল , কেন এসব ইডিয়ট জিনিস বলছ এলিয়ট?
এলিয়ট এবার একটু দমে গেল।
গিয়ে খাটের পাশে চেয়ার টায় বসল। লুকাস কখন ঘুমিয়ে গেল টের পায় নি।
যখন উঠল তখন বারোটা হবে। আধো ঘুমে অস্পষ্ট চোখে তাকিয়ে দেখল এলিয়ট পাশে বসে।
তুমি কি একটুও ঘুমাওনি?
এলিয়ট আস্তে করে বলল, এমন হট একটা ছেলে আমার পাশে থাকলে আমি কিভাবে ঘুমাতে পারি …!
লুকাস লজ্জার হাসি হেসে পাশ ঘুরে আবার ঘুমিয়ে গেল।
লুকাসের আবার ঘন্টা খানেক পর ঘুম ভাঙল। টের পেল এলিয়ট বের হচ্ছে।
– কই যাচ্ছ?
আমি একটু সাতার কাটতে যাচ্ছি।
এটুকু শুনেই ক্লান্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে গেল লুকাস।
যখন উঠল তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। উঠে দেখল পাশে নেই এলিয়ট।
এলিয়ট?
এলিয়ট ? করে সারা বোট খুজল বাট পেল না। কান্না শুরু করল লুকাস। কি করবে ভেবে না পেয়ে ফোন করল লুসিল কে। লুসিল সব কিছু শুনে পুলিসস্টেশন এ জানায়। তারপর সেও ছুটে আসে সেখানে। এসে লুকাসকে বলল তুমি জান না লুকাস ও অসুস্থ। কাল ও খুব মদ খেয়েছে। কাল তোমার উইড স্মোক করেছ লুকাস?
– হুম।
লুকাস ও নেশাগ্রস্ত। এই বোটে নিশ্চয়ই তোমায় কাল রাতে ও নিয়ে এসেছে ..? ও কোথায় এত টাকা পাবে বলত? ও গেইট ভেঙে ঢুকেছিল। ও নেশাগ্রস্থ অবস্থায় এটা করেছে, তোমার জন্য নয়। আর ও কি বলেছে তোমায় ভাল বাসে? তোমায় ও ভালবাসতে পারে না লুকাস। ইউ আর এ ফাকিং হুইম লুকাস! !একটা ভ্রম! ও বিপোলার লুকাস! ! হি ক্যান্ট লাভ ইউ। ..!!!
কথা গুলো শুনে লুকাসের বুক ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। শুধু কাদতে থাকল বেচারা ছোট লুকাস।
লুসিল কে পুলিশ ফোন করেছে। তাদের কাছেই সে আছে সকালে রিভার সাইডে উলংগ অবস্থায় ওকে উদ্ধার করে তারা।পরে লুসিল তাকে নিয়ে যায়।
বাসায় মনমরা হয়ে বসে আছে লুকাস তিনদিন।
এক সপ্তাহ হল এলিয়ট এর সাথে যোগাযোগ নেই। তার মা ও ম্যাসেজ করেছে তাকে নিয়ে চার্চে যাবে তাই। কি করবে ভেবে না পেয়ে ভাঙা মন নিয়ে সন্ধ্যায় চার্চে গেল তারা। লুকাস এবং তার মা পাশাপাশি বসে । ফাদার বাইবেল এর একটি প্যাসেজ এর ভাবার্থ পড়ে শোনাচ্ছেন।
“গড আমাদের বেচে থাকার জন্য সকল শক্তি দিয়েছেন।
যত পাপ হোক, যত ব্যাথা হোক সেটা কোন ব্যাপার না।
আমাদের কোথাও যেতে হবে না যতক্ষন তিনি সাথে আছেন।
আর তার চার্চ হল একটা রিফিউজি, তোমার জন্য।
প্রতিটি মানুষ তার বিশাসে মুক্তি খুজে পাবে। “
কথাগুলো লুকাস খুব মন দিয়ে শুনছে। তার ভাঙা হৃদয়ে কাটার মত বিধেছে। যেন সে ভরসা পাচ্ছে, শক্তি পাচ্ছে।
এর মধ্যে লুকাস এর ম্যাসেজ এলিয়ট আজ সারাদিন ধরে নিখোজ, সেকি তোমার কাছে? ]
এলিয়ট কোন রিপ্লাই দেয়নি। চুপিসারে তার মাকে বলল মা আমাকে যেতে হচ্ছে। ” ঠিক আছে যাও ” । লাভ ইউ মম। লাভ ইউ মাই সান।
এলিয়ট খুব ব্যাস্ত হয়ে উঠে গেল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে চার্চ এর মাঝ খান দিয়ে সে হেটে বের হচ্ছে। সে এখন সেই পার্কে যাবে। কারন জানে এলিয়ট একা হলে সেখানেই চলে যায়। যে একাকীত্বের সঙ্গি কেবল মাত্র সেই প্রথম হয়েছিল।
চার্চ থেকে বের হয়ে লুকাস দৌড় শুরু করল। এক দৌড়ে পার্কে এসে ঢুকল। চারদিকে অন্ধকার। সেই রেস্ট হাট এর মেঝেতে মাথা নিচু করে বসে চোখের পানি ফেলছে তার এলিয়ট।
এলিয়ট তুমি আর একা নও এলিয়ট। এইত আমি এসেছি। চলো আমার সাথে চল।
সোমবার।
লুকাস এর বিছানায় শুয়ে আছে এলিয়ট। দাড়িয়ে দেখছে লুকাস। অপেক্ষাও বলা যায়। এলিয়ট এর ঘুম ভাঙার অপেক্ষা। পীঠে ব্যাগ নেয়া। স্কুলের জন্য বের হবে সে। ম্যানন ডাক দিল। চল লুকাস দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– না আমি একটু পরে আসছি। ওকে বলে ম্যানন বিদায় নিল।
এলিয়ট মেবি সজাগ ই ছিল। শুনছিল হয়ত তাদের কথা।
– তোমার দেরি হচ্ছে না লুকাস?
না। আমি জাস্ট চাই নি যে তুমি একা ঘুম থেকে ওঠ।
– দেখ লুকাস আজ সোমবার আমি জানি। আমি অতটা ইডিয়ট নই। তুমি একটা চিরকুট রেখে যেতে পারতে। বলেই কম্বলটা ঝট করে টেনে মাথায় মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে গেল।
যদিও লুকাস একটা গুড মর্নিং লেকা চিরকুট পাশে রেখেছিল। বাট এক পা সামনে এগিয়ে সেটা বিছানার পাশ থেকে টেনে নিয়ে নিল।
জাস্ট বলল :
ওকে, বাই ….
লুসিল ফোন দিয়ে লুকাস কে দেখা করার জন্য বলল। লুকাস রোড সাইডের বেঞ্চ এ বসে ছিল। এর মধ্যে লুসিল ও এসে পড়ল।
লুকাস তুমি জান কেন তোমায় ডেকেছি। আর এলিয়ট এর মাবাবা কে বলেছি সে তোমার কাছে আছে। আসলে জানোকি এলিয়ট এর কাছে তুমি ই প্রথম নও। কিন্তু সবচেয়ে আলাদা ব্যাপার যেটা আমি জানি তা হল ও তোমার সাথে কেমন আচরন করে সেটা সবার থেকে ভিন্ন। তুমি ওর কাছে সবার থেকে আলাদা লুকাস। আমি হলাম সেই , যে শুধুই কস্ট পেলাম। কথাগুলো বলতে বলতে লুসিল এর চোখ বেয়ে এক ফোটা জল আপনি আপনি বের হয়ে এল। লুকাস শুধু তাকিয়ে রইল। সে কি আজ একটা মেয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী …!!!
নিরুপায় চাহুনি দিয়ে লুসিল এর মহত্ব দেখল। জিজ্ঞেস করল তুমি নিশ্চয়ই আমাকে হিংসা কর?
আমার মনে হয় করি। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় কথা হল তোমাকে ওর দরকার এখন ….!
– আমাকে কি করতে হবে?
লুসিল আজ তার প্রেমিক কে দিয়ে যাচ্ছে। আর দায়িত্বের ভার টাও ভাল করে বুঝিতে দিচ্ছে । সে একটানে বলতে শুরু করল :
এজন্য কোন ম্যাজিক্যাল ফরমুলা নেই।
প্রথমে ধৈর্য্য ধরতে শেখ।
কারন তুমি সবকিছু বুঝতে পারবে না। অথবা প্রথমবারেই সফল হবে না। এটা ব্যাপার না।
তুমি ওকে বুঝতে চেস্টা করবে।
প্রশ্নও করবে। কিন্তু ও যখন উত্তর দিতে চাইবে তখন।
সবকিছুর উপরে ওকে ব্যাস্ত করে তুলবে না।
যদি ঘুমাতে চায়, তাহলে ঘুমাতে দিও।
যদি কথা বলতে না চায়, কথা বলতে বাধ্য কোরো না।
আর অনেক সময় তুমি ওকে খুব কাছ থেকে দেখতে পাবে। আবার যেকোন ইঙ্গিত বুঝারও চেস্টা কোরো।
আসলে ওর সাথে শুধু ওর জন্যই থেক।
কিন্তু যখন সে কিছুই চাইবে না, তখন তার জন্য ওয়েট করবে।
কারন ও সবসময় তোমার কাছেই ফিরে আসবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা কি জানো?
এজজয় দ্য কুল মোমেন্টস।
হয়ত অল্প, হয়ত অনেক।
কিন্তু এই কুল মুহুর্ত গুলোই তোমার সব না পাওয়া গুলো পূরন করে দিবে।
তুমি দেখো …!!!
দুপুরের পর লুকাস বাসায় এসেছে।
দরজা চাপিয়ে ভেতরে এসে দেখল এলিয়ট মিকা, লিসাদের সাথে লুডু খেলছে ।
মিকা আর লিসা এলিয়ট আর লুকাস কে কথা বলার সুজোগ দিতে অন্য রুমে চলে গেল। এলিয়ট ফ্লোর থেকে বসা থেকে উঠে দাড়াল। লুকাস কে জিজ্ঞেস করল, কেমন কাটল সারাদিন?
লুকাস জবাব দিল, ইট ওয়াজ ওকে।
তোমার?
এলিয়ট নিচে রাখা লুডুর দিকে তাকিয়ে বলল, ইট ওয়াজ ওকে।
লুকাস এলিয়ট এর ঠোয়ের দিকে ঠোট বাড়িয়ে কথা বলতে চাইল বাট এলিয়ট সরে গেল। লুকাস বলল, দেখো সব আবার ঠিক হয়ে যাবে।
-কিছু ঠিক হবে না লুকাস। আমি জানি আমি এমনই। মাঝে মাঝে খুব ভালভাবে থাকব, আবার হয়ত মাঝে মাঝে তোমাকে খুব কস্ট দেব। আমার হয়ত কোন একটা উইক পুরা ঘুমাব। সব মিলিয়ে আমি চাই না তোমাকে আর কস্ট দিতে।
লুকাস এলিয়ট এর দুই বাহুতে হাত দিয়ে বলল, আমিও অতটা ভাল তাত নই। আমিও মাঝে মাঝে জ্বালাব তোমায়। কিন্তু কি জানো? এই নিয়েই আমি থাকতে চাই। তোমাকে নিয়ে নতুন করে বাচতে চাই।প্রতিটি দিন। প্রতিটি ঘন্টা। উই উইল লিভ মিনিট বাই মিনিট।
এলিয়ট লুকাসের সাথে মিনিট বাই মিনিট থাকার মৌন সম্মতি দিল লুকাস কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে।
– হে ..! ইট স্টার্টস ফ্রম নাউ।
চুমুতে চুমুতে ঘর ভর্তি আলোতে ভরে গেলে দুজনের নতুন ভালবাসায়।
এলিয়ট বাসায় যাচ্ছে।
বাসের জন্য স্টপেজে ওয়েট করছে তারা। লুকাস নিচের দিকে মুখ করে কাদছে। এলিয়ট দুই হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বলল। কেদনা, আমিত আবার ফিরে আসব এক সপ্তাহ পরেই।
– কিন্তু আমি তোমাকে যেতে দিতে চাই না।
বাট আমিত তোমার ড্রেস পরে থাকতে পারছি না।
– কেন ? আমার ড্রেসে কি সমস্যা?
প্রথমেই সাইজটা।
আর আমার বাবা মায়ের সাথে তো দেখা করতে হবে। অনেকদিন হল যাই না।
– হুম । চোখের পানি মুছে দিল এলিয়ট। এর মাঝে বাস ও চলে আসল।
লুকাস বলল, আমাদের কমন রুম রি ওপেনিং এর জন্য আমরা একটা পার্টি করতে যাচ্ছি, তুমি চাইলে ওখানে আসতে পার।এলিয়ট বলল দেখি ..!
বাস এ উঠে গেল এলিয়ট। দরজায় দাড়িয়ে লুকাস এর দিকে তাকিয়ে এই প্রথম বলল :
লুকাস! আই লাভ ইউ।
লুকাস শুধু বলল, আমিও ……………
বাস ছেড়ে দিল। লুকাস তাকিয়ে রইল সেদিক।
বুধবার বিকেল।
পার্টিতে সবাই এসেছে।
সবার হাতে বিয়ার। ড্যান্স চলছে। এই গ্রাজুয়েট স্কুলে আসার পর এটাই ছিল সকল অপরিচিতদের চির পরিচিত বন্ধু হওয়ার প্রথম কোন পার্টি। ফুল সাউন্ড মিউজিক। রক অন গোইং। বেশ কয়েকজন অফার দিয়ে চুমু খাচ্ছে যাকে ভাল লাগছে। কেউ ফাকিং অফার পাচ্ছে। অনেকেই আজ তার প্রিয় মানুষ টাকে প্রোপজ করছে। আজকে বাজিল ও একটা অফার পেয়েও ডিনাই করল। কারন সে ডেফনিকে ভালবাসে। ডেফনি আজ সত্যিই বাজিল এর কাছে এসে নিজেই চুমু খেল। ক্লোয়ে মেয়েটাও এসেছে । খুব উতফুল্ল আজ সে। ম্যানন তার প্রিয় জনের সাথে আজ দেখা করতে পেরেছে। সবাই ই একটা জাকজমক পূর্ন পরিবেশের মধ্যে মেতেছে।
কিন্তু লুকাস ! পুকুর পাড়ে একা দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা বিয়ার এর ক্যান। চুমু খেয়ে ঠিক পুকুরের ওপারে তাকিয়ে আছে।
পেছন থেকে এসে কাধে হাত রাখল এলিয়ট !
চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল –
তুমি এখানে কী করছ?
– প্রমিজ করেছিলাম না আমরা একসাথে থাকব মিনিট বাই মিনিট। এখন পর্যন্ত হয়েছে ১৪২৯ মিনিট।
তুমি কি মাত্র ১৪২৯ মিনিট প্রমিজ করেছিলে ..?
উহু … সারাজীবন থাকব লুকাস।
এলিয়ট লুকাসের ঠোটে চুমু খেল। লুকাসের এক হাতে বিয়ারের ক্যান হাতটা এলিয়ট এর কাধের উপর।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে প্রায়।
দুজন ভিড়ের মাঝে কাধে হাত রেখে এগিয়ে চলল সামনে। মিনিট বাই মিনিট থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ……!
(সমাপ্ত)
ফ্রান্সের টিভি সিরিয়াল অবলম্বনে অনুবাদ গল্প
সমপ্রেমের গল্প