
লেখকঃ অরিত্র হোসেন
লেখালেখিতে এমন কোন শক্ত অবস্থানে পৌছাইনি যে দাবি করবো আমার লেখাটা যেখানেই দেই না কেন ছাপা হয়! চেষ্টাও কম করিনি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা দিয়েছি। লাভ কিছুই হয়নি। একটাও ছাপা হয়নি। আশাহত হইনি, হয়ত একদিন ছাপা হবে!
পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ছাপা হয়নি তো কি হয়েছে? ফেসবুকে লেখালেখিতে সবার রেসপন্স ভালোই পেয়েছি। তাই ফুলে ফেপে একাকার হয়ে নিজের মধ্যে যে ‘হুমায়ুন’ ‘হুমায়ূন’ ভাব আছে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়েছি। সবারই একই অভিযোগ, হুমায়ুনের ছোঁয়া তোমার লেখায়!
সব লেখার আগে ‘ফাউ’ কিছু কথা আমার বলতেই হয়। লিখতে বসলাম মিশন ‘প্রনয়নামা’ আর লিখছি নিজের নামা! ‘প্রনয়নামা’ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলার নেই! সবারই জানা কথা, তাও একটু তবলায় ঠুকঠাক করতেই হয়!
ভালোবাসার কাহানী বলার আসর আয়োজিত হতে যাচ্ছে। প্রনয়নামা। আমাকে বলা হল একটা ভালোবাসার গল্প লিখে দিতে। আমি তো খুশিতে আটখানা, কেউ এই প্রথম লেখা চাইল তাও আমার! কিন্তু একটা জায়গায় আটকে গেলাম যেটা হল, ‘ভালবাসা’। এই ব্যাপারে আমার জ্ঞান-বুদ্ধি অতি সামান্য আর ঘেঁটে দেখলাম মাত্র একটাই গল্প লেখা আছে যার নাম ‘প্রণয় প্রশ্ন’, তাও আবার গল্পের শেষটা অনেক দুঃখে ভরা। সেটাই দিলাম, সম্ভবত কারোর পছন্দ হয়নি। অনেকদিন আগে খুব শখ করে একটা উপন্যাস লিখেছিলাম, উপন্যাসের নাম, ‘ম্রিয়মাণ দিগন্ত’। যাইহোক খুব খারাপ ভাবে কেটেকুটে উপন্যাস থেকে একটা অংশ ছোটো গল্পে রুপান্তর করে পরদিন দিলাম, কিন্তু উল্লেখ করার মত রেসপন্স পেলামনা। কিছুদিন পর আমাদের সবাইকে রিহারসাল এ আসতে বলা হল। আমিও যাবো কিনা এই নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম কিন্তু রিহারসাল এ সবাইকে প্রচণ্ড ভালো লাগলো।
আমাকে বলা হল, এই ছোটো গল্পকে আবার পোস্টমর্টেম করে নাটকে রূপান্তর করতে। অবশ্যই দুজন অভিনেতা লাগবে যারা অভিনয় করবে। আমার তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল! নাটকে রুপান্তর তো করতে পারবো কিন্তু অভিনেতা! কোথায় পাবো অভিনেতা! আমার তো পরিচিত কেউ নেই! অবশেষে অনেক অভিযান এর পর আমাকেই বলা হল অভিনয় করতে! এবার তো কেবল আকাশ মাথায় পড়লো না বরং পুরো মহাকাশ ভেঙ্গে পড়ল, খুব কষ্ট করে তা সামলে বাধ্য ছেলের মতো রাজি হয়ে গেলাম।
আমার সাথে আরেকজন অভিনয় করবে – স। সেভাবে চিনতাম না স’কে, রিহারসেলে প্রথম দেখা হল। যাইহোক, বিশাল এক দায়িত্ব নিয়ে আমাদের যুদ্ধ শুরু হোল।
অবরোধের মধ্যে রিহারসাল করতে আসা, সবার সাথে আড্ডা দেওয়া, দুষ্টুমি করা সবই চলতো। এই সবকিছুই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিভাবে যে দেখতে দেখতে মাসখানিক পারিয়ে অনুষ্ঠানের দ্বারপ্রান্তে চলে এলাম, টেরই পাইনি। টনক নড়ল, অনুষ্ঠানের তারিখ দেখে! নাটকের অবস্থা খারাপ, রিহারসেলে ধমক খেয়ে আমরা দুজন প্রথম ডায়লগ মুখস্থ করে আসলাম। তারপর অনুষ্ঠানের চার দিন আগে নাটক দাঁড়ালো। তনয় ভাই এর ব্যাখ্যা, জুলহাজ ভাইয়ের বকুনি, ত ভাইয়ের গুতুনি, আর বাকি সবার পচানি শুনে শুনে আরও বেশি ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
অনুষ্ঠানের দিন এলো। আমি খুব বেশি এক্সাইটেড ছিলাম কারণ নিজের কাছে খুব বেশি আপন লাগছিল সবকিছু। অনুষ্ঠানের একটা অংশ খারাপ হলেও নিজের প্রচণ্ড খারাপ লাগবে। বুক ধক ধক করছিল! অনুষ্ঠান শুরু আগে রিহারসেল করে নিলাম, তেমন ভালো হল না! আশাহত হলাম। মনে হতে লাগলো, যাহ! আমাদের জন্যই এই শো ডুববে!
শুরু হল শো! র ভাইয়া উপস্থাপনায়, জুলহাজ ভাইয়া ছোট ছোট ছড়া বলবেন। ত ভাইয়া স্টেজে গেলেন। অনুষ্ঠান শুরু হল তার একটা গল্প ও প্রনয়নামা সম্পর্কে কিছু কথা দিয়ে। এক আপাও কিছু ইতিবাচক কথা বললেন। তারপর শুরু হল মূল অনুষ্ঠান। আরেক ভাইয়া গেলেন, গল্প বললেন, চলে এলেন। তারপর জ ভাই গেলেন, ‘কফি চুমু’ গল্পটা পড়লেন, করতালিতে চারদিক শব্দময় হয়ে গেলো। তারপর ও আপু মাতিয়ে দিল স্টেজ! তার ভিন্ন পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করলো! তারপর একটি ভিন্ন টক শো নিয়ে আসলো ক ভাইয়া। সাথে ছিল থ আপা এবং ন আপা। বিষয় ছিল হিজড়াদের অধিকার দেওয়ার পর তাদের অবস্থা। কথা আপা, সরকারি প্রতিনিধি আর অনন্যা আপা হিজড়া প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানের সব আকর্ষণ তারাই কেড়ে নিলো! হাসতে হাসতে দর্শক কাতর! তারপর নো ভাইয়া গল্প পড়লেন, করতালি হল! এরপরই আমার নাটক! আমার বুক কাঁপতে লাগলো!
গেলাম, আস্তে আস্তে সব হালকা হল, তারপর শেষ করে এলাম! স চমৎকার অভিনয় করল। নাটক শেষে করতালির বন্যা বয়ে গেলো! শেষ হল অনুষ্ঠান! সবাই তালি দিয়ে অনুষ্ঠানকে সফল করলো! এরপর, ত ভাই আমাদের সবাইকে স্টেজে পরিচিয় করে দিলেন দর্শকের সাথে! শেষ হল, বয়েজ অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক গৌরবময় আয়জন – মিশন প্রনয়নামা!
আমার খুব খারাপ লাগে যখন বয়েজ অব বাংলাদেশ’এর কার্যক্রম নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলে। কোন সংগঠন সম্পর্কে না জেনে, মন্তব্য করা কোন কাজের কথা না। বয়েজ অব বাংলাদেশ’এর কার্যক্রম আমাকে অবাক করলো, বাস্তবে যা শুনেছি আর যা দেখলাম তার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত! আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবো, বয়েজ অব বাংলাদেশ’এর কার্যক্রম প্রশংসনীয়! আমি এক বার নয়, বার বার এমন উদ্যোগ সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাই।
১১ই ডিসেম্বর, ২০১৩