
ফ্লিন রাইডার
রাজশাহীর গ্রামের এক সমকামির আত্তপ্রকাশ ও নির্যাতনের পর গ্রামছাড়া
সমকামিতাকে ঘিরে এখন অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি।না পারিবারিক না রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আছে। তার চেয়ে বেশি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি, পরিবারের অত্যাচারে।দিন, রাত যুদ্ধ করে চলেছি বেঁচে থাকার জন্য।কিন্তু এখন আর এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছি না।হয়ত অদূরভবিষ্যতে কিছু একটা করে ফেলবো…….বেঁচে থেকেই
নরক বাস করছি।
উপরের পোস্ট ফেসবুকে দেখবার পরেই বুঝলাম কি হয়েছে নক দিলাম
আমি – কি হয়েছে ?
ছেলে- বাড়িতে খুব ঝামেলায় আছি , বাড়ি ছাড়তে হবে নিজে থেকে কয়েক দিনের মধ্যে
আমি – তোমার বাসায় জানে ?
ছেলে- হুম। আগে জানত না ।
আমি – কবে জানছে?
ছেলে- কয়েক দিন আগেই জানিয়েছি । এখন বাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে বলে এলারট দিচ্ছে।
আমি- জানাইসো কি জন্য ?আমার অবস্থা দেখ নাই ? এই কাজ করতে গেছো কেন ?
ছেলে – আমি খুব ফ্রি ছিলাম বাবার সাথে, এখন সব শেষ।
আমি- আমি এত পোস্ট করি । এগুলি দেখে শিখো না! বাবা মা কি বলছে ?
ছেলে- মা নেই। বাবা এসব মেনে নিবে না । অনার্স কমপ্লিট করে বিয়ে করতে হবে জানিয়েছে। এদিকে অনার্স শেষের পথে।
আমি – শেষ করো, তত দিন চুপ থাকো। তোমাকে জোর করে বিয়ে দিতে পারবে না । যত সময় যাবে তত নরম হবে।
ছেলে- ফ্যামিলি তে সব আমাকে সামলাতে হয় । এখন বিয়ে টা ওনার কাছে জরুরি হয়ে হয়ে পড়েছে।
এদিকে এই কারণে আমি বলে দিয়েছি এসব। এখন ঝামেলা করছে।
আমি- গায়ে হাত তুলছে ?
ছেলে- তুলেনি। তবে দেরি দেখছি না। কি করবো বুঝতে পারছি না।
আমি- বলবা যে এখন একজন অতিরিক্ত মানুষের ভরন পোষন করবার মত টাকা তোমার হাতে নাই। হিসাব দিবা আরেকজন মানুষের পিছনে কি পরিমান অর্থ লাগে, এই ঘানি তোমার পক্ষে এখন টানা সম্ভব না। আর উনি নিজেও বাবা, সামী । সংসার চালানো কি জালা উনি বুঝেন,এগুলি শুনলে আর চাপ দেবেন না।
ছেলে- অনেক বুঝাচ্ছি উনি আমাক ধর্মের দোহায় দিয়ে ঝামেলা করছে।
আমি- গত কয়দিনে কত গুলা পোস্ট দিছি, আমার কত গুলো পোস্ট দেখতেছো কত দিন ধরে এরপরে এই কাজ কেমনে করলা !! তুমি এক কাজ করো বল যে পরীক্ষা শেষে ডাক্তার দেখাবা। ট্রিটমেন্ট করে ভাল হবা, এরপরে বিয়ে করবা। এসব বুঝায়ে পার হউ ।আর ডাক্তাররা তোমার পক্ষ নিবে পরে ,তখন ডাক্তার বুঝায়ে দিলে কিছু বলতে পারবে না । তোমার পড়াও শেষ হয়ে যাবে, জবও পেয়ে যাবা। ঢাকায় যে ডাক্তার দেখাবা মেহতাব খানম , মোহিত কামাল, ফারুক আলম, মেখলা সরকার সবাই পক্ষে বলবে ।
ছেলে-তারা আমাকে সবরকম নির্যাতন করছে,সহ্য করার মত না
আমি- তারা মানে ?
ছেলে- গায়ে হাত উঠাতেও ছাড়ল না আমাকে।
আমি- বাবা ?
ছেলে- না, মৌলভি মওলানা আর ওর ভায়ের ছেলেরা
আমি- হুজুর মাওলানা এরা জানল কেমনে ? আর ওরা তোমার গায়ে হাত তুলবে কেন ?, ওদের কোন অধিকার নাই ।কবে মারছে তোমাকে ?
ছেলে- ওদের দিয়ে বুঝাতে এনেছে ওদের কথার জবাব দিয়েছি তাই
আমি- তোমার বাসা কোথায় ?
ছেলে – রাজশাহী
আমি- তোমার বাবা এটা মেনে নীল ,চোখের সামনে অন্য মানুষ তোমার গায়ে তুলল আর সে মারতে দিল এভাবে?
ছেলে- উনিই সাহস দেখাইছে
আমি- তোমার বাবা তো আরেক বোকা, যে খারাপ লোকজন। তোমার নানা ভাবে সমস্যা করবে । অনেক ঝামেলা করবে।এটা কবের ঘটনা ?
ছেলে- আজকেই। মান সম্মান রাস্তাই নামিয়ে গ্রামের সবার সামনে অপমান অপদস্ত করেছে সেখানে আমার মূল্য কোথায়?
আমি – হ্যাঁ মুল্য নাই। কিন্তু তোমার তো নিজের কাছে নিজের জীবনের মুল্য আছে নাকি ?আরো অনেক মানুষ আছে তোমার জীবনের মুল্য দেবার। তোমাকে ওই গ্রাম থেকে বের হয়ে আস্তে হবে, ভাল কিছু করতে হবে
ছেলে- আর চলে যাচ্ছি ভাই
আমি- এখন দয়া করে যেটা বলি সেটা শুনো
ছেলে- হুমমম
আমি- বাবাকে বল যে- পরীক্ষার পরে ডাক্তার দেখাবে, ঢাকায় বড় ডাক্তার আছে , অনেক দিন ট্রিটমেন্ট করে নাকি ঠিক হয় ।এগুলি বলবা। বলে সময় টা নিবা। এর মধ্যে সবার সাথে অভিনয় চালায়ে যাবা ।
পাস করে জব নিয়ে আর ওদিকে তাকাবা না
ছেলে- ভাই কি পেলাম জিবনে। আর ফিরব না ভাই অনেক আগে থেকেই অত্যাচারে আছি। আমাকেই এরকম করছে।
আমি- দেখ, আমার মা বলছে -আমি যদি আগে জানতাম তুই গে হবি তাহলে তোকে ছোট থাকতে গলা টিপে মেরে ফেলতাম। আমার বাবা মা দুজনেই বাসা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল। ফিরবে না মানে ? তুমি কই আছো এখন ?
ছেলে- এক সমকামি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি
আমি- দেখো আমি সামলে নিছি ,তোমার ও সামলায়ে নিতে হবে।তোমাকে খাওয়াবে কে ,পড়াবে কে ? এই খরচ আসবে কই থেকে?তোমার বাবা কি তোমায় বের করে দিয়েছে বাসা থেকে ? এমন কিছু বলেছে ?
ছেলে- বের করে দিয়েছে জানিয়েছে যে আমি যদি বাড়ি থেকে না যায় তাহলে উনি নিজেই মরবেন
আমি- হুম, তাহলে কিছু করবার নাই
ছেলে- আমার ফোন নাম্বার নাও
ছেলে-হুম ভাই
আমি- কার কাছে যাচ্ছো?*** ** কে জানিয়েছ?
ছেলে- আপাতত এক সমকামি বন্ধুর কাছে। কেউ হেল্প করবে না এখন ভাই। ওই এখন ভরসা।
আমি- আচ্ছা যাও, আমি দেখি আমার একটা গ্রুপ আছে, ওদের জানাই, ওরা কিছু করতে পারে কিনা। তোমার পড়াশুনা শেষ হয়ে যাবে এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি আসলে তোমায় সমবেদনা জানাবার ভাষা খুজে পাচ্ছি না। দেখি কেউ যদি তোমার জন্য কোন ভাবে এগিয়ে আসে।
ছেলে- এখন আমার পাশে কেউ নাই ভাই,নিজ দেশে আমি পরাধিনতার বলির শিকার।আপনি ম্যসান্জারে আমাকে ব্লক করেছেন নাকি রিপ্লে দিতে পারছি না
আমি- আস্তে আস্তে সব ঠিক হবে। একটু ধরয ধরো ।সবাময় খারাপ সময় যায় না। এই অবস্থার পরিবর্তন হবেই। একসময় তুমি নিজের পায়ে দারিয়ে নিজের মত চলবা ।আজকে গিয়ে বন্ধুর বাসায় খেয়ে ঘুমাও। কালকে থেকে ভেবে চিন্তে বের করো কি করবা। ব্লক দিব কেন রে, মাথা ঠান্ডা করো, বন্ধুর বাসায় পোছেছ?
ছেলে- হুমম পৌছেছি ভাই
আমি-খেয়ে ঘুম দাও। কাল কথা হবে ।
চ্যট বক্স থেকে বেরিয়ে দেখলাম, ছেলেটা স্ট্যাটাস দিয়েছে-
চলে যাচ্ছি বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে,ভাল থাকুক বাংলাদেশের সকল বিষমকামিরা।
চেয়ে দেখছি ,আমার নিজেই বেকার, বাবারটা বসে খাই, তাকে কিভাবে সাহায্য করব। আমার আফসোস আমার কমিউনিটির একটা ছেলে এভাবে পরিবার হারা হল, তার সুন্দর ভবিশ্যতটা চরম অনিশ্চয়তায় পড়ল। আমরা যদি আমাদের এই অবস্থা গুলি রোধ করতে না এগিয়ে আসি আর কেউ আসবে না। দয়া করে ব্যাপার গুলি নিয়ে আলোচনা করুন, সহমরমী হোন। আমরা নিজেরা না এগিয়ে আসলে কেউ আসবে না। আপনার একটু চেষ্টায় কেউ ভুল থেকে বেচে যায় , জীবনটা সুন্দর ভাবে নিজের মত গুছিয়ে নিতে পারে।