
আমার মানুষ নামের পরিচয়
প্রথমতো আমি মানুষ। আমি নিজেকে নিয়ে এই পরিচয় দিতে এবং মানুষ সমাজে এই পরিচয়ে বাঁচতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি যদিও কিন্তু এখনো পরিপূর্ণ মানুষ হবার চেষ্টায় আছি।
আমি মনে করি, আমারা সবাই প্রাকৃতিক এবং প্রকৃতির একটা অংশ মাত্র। আমরা নিজেরাই নিজেদের নাম দিয়েছি মানুষ। মনুষ্যত্ব আর মানবতা বলতে যা বোঝায়, সেগুলোর মানদণ্ড আমারা নিজেরাই ঠিক করে দিয়েছি। এই মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে আমরা কারো কাজকে বলি ভালো, কারো কাজকে বলি মন্দ।
এই ভালো ও মন্দের মানদণ্ড আবার এক এক দল, জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে, প্রত্যেকের মূল্যবোধের উপর নির্ভর করে।
এইতো গেল, আমার মানুষ নামের পরিচয়।
আমার ভালো লাগাগুলো
ছোট বেলা থেকেই আমার মেয়েদের সাথে মিশতে ভালো লাগতো। মেয়েদের পুতুল খেলা, বউছি, এসব খুবই ভালো লাগতো। কাপড় দিয়ে বানানো, আমার একটা ছোট্ট বাবু ছিল, সেই বাবুকে আদর করতে আরো বেশি ভালো লাগতো।
আমি আমার নিজের শরীর নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম না কখনোই। মনে হতো কি একটা অশরীরী ভর করেছে আমার এই ছোট্ট মেয়েলী দেহের উপর। নারীর মন অথচ পুরুষের দেহ, এটা কোন ভাবেই মেনে নেবার মতো ছিল না।
যখন একটু বড় হতে লাগলাম। আমার ছেলেদের সাথে কথা বলতে, ছেলেদের বিভিন্ন খেলা খেলতে, এক রকমের সংকোচ কাজ করতো মনের মধ্যে। আমার পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, এসবের বদলে, মেয়েদের ফ্রগ, সুন্দর ফুল করা গেঞ্জি, এসবের দিকে মন টানতো। ভায়োলেট রং আমার খুব বেশি পছন্দের।
অনুসন্ধিৎসু অবিরাম আমি
ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো, কলা বিভাগের অঙ্কন, অভিনয় বা সংগীত নিয়ে পড়বো। একটু বড় হয়ে সাংবাদিকতা, দর্শন অথবা মনো বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার প্রতি ইচ্ছাটা মোড় নেয়। কারণ বিভিন্ন ধরনেরমানুষের সাথে মেশা, লেখালেখি, মানুযের চিন্তা, চেতনার আধুনিকায়ন, এসবের সূত্র খুজতে খুজতে, মেলাতে মেলাতে নিজের মধ্যে এক অন্য আমিকে খুজে পেতাম। আর এসব ফুটে উঠতো লেখালেখি, কবিতার মাধ্যমে। আর অঙ্কন, অভিনয় বা সংগীত এগুলো অবসরে শেখার ইচ্ছা ছিল।
এখনো মনে হয়, বেঁচে থাকতে নিজের ইচ্ছা গুলোকে পূরণ করেই ছারবো যেভাবেই হোক। আমি ছোট বেলা থেকেই যে কোনো জিনিস দেখে প্রায় হুবাহু আঁকতে পারতাম। গানের গলা খুবই ভালো ছিলো।
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন, কবিতা লিখতে শুরু করেথি। প্রথম কবিতাই একটি সাহিত্যিক মাসিক পত্রিকায় এসেছিল। আর বর্তমানে স্নাতকে পড়ছি, মৃত্তিকা বিজ্ঞান নিয়ে। এখনো নিজের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই পড়ছি।
মাঝে মাঝে পরানের চাপা আওয়াজ, কল্পনায় নিজের কানে এসে বার বার বলতে থাকে। হায়! আমার কি হবে?
মগজে, মনে, বুকে, প্রতিটি অঙ্গের মাংসে, রক্তের শিরায় শিরায়, যে আমিত্ত্ব মিসে আছে, সে আমির কি হবে? বাইরের আমি আর ভিতরের আমির সাথে, প্রতিনিয়তো যুদ্ধ করেই চলছি। আমির সাথে যুদ্ধ, এ যেনো এক মহা যুদ্ধ। এখনো তার সাথে আবার চলছে, নিজের পারিবারিক বাঁধা। আমি রুপান্তরকামী নারী, এটা পরিবার মেনে নিতে পারছে না। আর আর্থিক বাঁধা, সে তো নিজের সত্যিকারের সৎ বন্ধুর মতো নিজেকে আগলে রেখেছে। আর সামাজিক বাঁধা? এতো লোকের মরমী উক্তি,লোভে পাপ পাপে মৃত্যু সমতুল্য। তাই থাক, খাল খনন করে কুমির আনার চেয়ে,তা আজ না বলাই বাহুল্য।
হয়তো মনের সিন্দুকে বন্দী থাকা দৈত্যটা আলাদিনের চেরাগের মতো, হুকুম মেনে এক সময় সব পূরণ করেও ফেলতে পারে। আবার, নাও হতে পারে।
কেউ আমার মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে বাকি সব এমনিতেই হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু সময় পার করে এসে, এখন দেখছি ক্ষেত্র বিশেষ বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন।
কি করব? মনের সিন্দুকে তালা বন্দি, অন্য আমি। কারো সাথে মতবিরোধ দ্বন্দ্ব নেই। ব্যক্তিগতভাবে চাইও না থাকুক। সেদিক থেকে আমি অনেক খুশি, তার পরেও তো আমার বর্তমান চলছে, চলবে, চলেই যাবে।
কে আমি?
আমি দেখতে শুনতে একজন ছেলে মানুষ কিন্তু আমি খুব সুন্দরী আর মিষ্টি নারী হয়ে যেতে চাই। এটা অনুভব করি ছোট বেলা থেকে, যখন থেকে আমি কিছুটা বুঝতে শিখেছি।
তখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম। একটা ছবির পোস্টার দেয়ালে চোখে পড়লে, আমি চিন্তা করতাম আমি কিভাবে নায়িকাদের মতো সুন্দরী হবো। নায়ককে দেখে মনে হত, একটা ছেলে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু নায়কের ভূমিকা, আমাকে টানতো না। আমার অনুভবে আসতো না। কারো বাসায় বেড়াতে গেলে মেয়েদের মেকআপ চুরি করে মুখে মাখতাম।
যখন আরেকটু বড়ো হলাম। বন্ধুদের দেখে মিথ্যা নায়ক সাজবার অনেক অভিনয় করেছি। সাহরুখ খান, হৃত্বিক রোশন কে দেখে আমি যতই নায়ক সাজবার অভিনয় করেছি, মনের মধ্যে অনুভব হতো আমি বুঝি ভিন্ন গ্রহের কেউ।
আমার শরীর তো এটা নয়। প্রতি মুহূর্তে অনুভব হতে থাকে, আমার পুরো শরীর একজন মেয়ে কিংবা নারী। যত বড়ো হচ্ছি মনে হতো, এটা বোধহয় গডের একটা অভিশাপ। আমি খুব পাপি কেউ। কিন্তু তবুও স্নান রুমে ঝড়না ছেড়ে খুব কাঁদতাম। মনের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো সবসময় এমনটা কেনো হবে?
খুব বেশি টানাটানি করতাম, পুরুষাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলার জন্য। মনে হতো ওটা ছিঁড়ে ফেলে দিলেই বুঝি নারী হয়ে যেতে পারবো। অনেক সময় ঘুমের আগে, ওটা ভিতর দিকে দিয়ে চামড়ায় কিছু একটা দিয়ে বেঁধে ঘুমিয়ে পড়তাম। আর প্রার্থনা করতাম, গড তুমি যদি থেকে থাকো আর আমার মনটা বুঝে থাকো। তবে ঘুম থেকে উঠেই যেন নিজেকে নারী আবিষ্কার করি। কিন্তু এসব কিছুদিন করার পর, জায়গাটা বেশ ব্যাথা করতো।
কত রাত কুকরে কুকরে কেঁদেছি, বালিশ ভিজিয়েছি তার হিসেব অজানা। হঠাৎ করেই মনে হতো, আমার এখনি গলায় ফাঁস দেয়া দরকার। প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ভাবতাম, আমার কি এখনি মরে যাওয়া উচিত নয়? আমার সাথেই কেন প্রকৃতির এমন তান্ডব লীলা!
কথা গুলো সবসময় চেপেই রেখেছি। কাউকে বিষয় টা নিয়ে বলার সাহস হতো না। আর লজ্জার বিষয় টা তো আছেই। ২০১৮ তে এসে এগুলো নিয়ে খুব গুগল করতে লাগলাম, যেটা আরো আগেই উচিত ছিল।
নিজেকে প্রথমবারের মতো, নিজের কাছেই একটা ভিন্ন পরিচয় পেলাম।
আর সেই পরিচয় টা হচ্ছে, আমি একজন রুপান্তরকামী নারী।
আমার কিছু বন্ধুরা বলেছিলো, তোর ভেতরটায় একটা মহিলা শয়তান প্রবেশ করেছে, কোন ভালো কবিরাজ দেখিয়ে বিষয়টা শিঘ্রই ঠিক করে ফেল। কিন্তু এখন ভালো ভাবেই বুঝতে পারলাম, আমার ভেতর খারাপ শয়তান প্রবেশ করেনি। আমার সাথে যা ঘটে চলছে, এটা একটা প্রাকৃতিক বিষয়।
সেই ছোট বেলা থেকেই নিজের ভেতর টা একজন সম্পূর্ণা ভেবে এসেছি, মনের অজান্তেই। খুব ছোট বেলায় ভাবতাম আমি একটা ছোট্ট পরী। আমার রাজ্যে আমি রাণী।
ভাবতে ভালই লাগে, যে এটাকেও একটা লৈঙ্গিক পরিচয় ধরা হয়। যা আমাদের সভ্য সমাজের লোকেরা লিঙ্গ হিসেবে, ছেলে, মেয়ে ও হিজরা শব্দ বাদে, ভিন্ন কিছুই তারা কল্পনাতেও আনতে চান না।
রুপান্তরকামী নারী পরিচয় টা আমার কাছে গর্বের সাথে প্রকাশ্যে বুক উঁচিয়ে বলতে ভালো লাগে। ছোট বেলা থেকে কখনো কিছু লুকাতে চাইনি। কারণ আমি তো অন্যায় কিছু করিনি, চুরি করিনি, ডাকাতি করিনি।
শুধু ভেতরের সত্যটা প্রকাশ করেছি মাত্র।
বিষয় গুলো বোঝার পরে এখন আর সত্যিই মরতে ইচ্ছে হয়না। জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে ইচ্ছে হয়। সমাজের মূলধারার মানুষদের মতো ভালো ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে হয়। পরিবারকে খুব আপন করে পেতে ইচ্ছে হয়।
কিন্তু আমার নারী হবার ইচ্ছাটা কি পূরন হবে?
নাকি এসব ভাবতে ভাবতে এভাবেই একদিন মারা পড়েবো?
নাকি কথা গুলো খুলে বলবার জন্য আমি কলঙ্কিত পুরুষ, সভ্য সমাজের কাছে?
আমার যৌন আকর্ষণ বোধ
আমাদের সমাজে একজন পুরুষ, একজন নারীর দিকে আকৃষ্ট হবে এবং একজন নারী, একজন পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। আর একজন মেয়ে, একজন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হবে এবং একজন পুরুষ, একজন পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হবে, একথা শুনলে বলতে গেলে কেউ বলে পাগলের প্রলাপ বলছি। কেউ বলবে এগুলো আমাদের দেশের সমাজে নিষিদ্ধ।
এটা যে হয় আমার নিজের সম্পর্কে উদাহরণ দিয়েই বলছি। আমার সুন্দর সুঠাম দেহের অধিকারী একজন পুরুষ কে দেখলে যৌন আকর্ষণ অনুভব হয় এবং আমার পুরুষালি যে কোন লিঙ্গের অধিকারী হোক, তাকে আমার ভালো লাগে। কাছে টেনে নিতে ইচ্ছে হয়। আদর করতে ইচ্ছে হয়। এমনকি একজন মেয়ে মানুষের চলাচল যদি পুরুষালি ধরনের হয়, তাকেও আমার ভালো লাগে। একরকম আকর্ষণ অনুভব করি।
আমার মাঝে মাঝে নিজেকে নারী রুপে, আবেদনময়ী ভাবে খুব করে সাজাতে ইচ্ছে হয়, একজন পুরুষের চোখকে আকৃষ্ট করার জন্য। মিষ্টি রঙের লিপস্টিক দিতে ভালো লাগে। আমার বেগুনী এবং গোলাপী রঙের মিশ্রণ রং খুব প্রিয়। খুব করে বিভিন্ন ডিজাইনের চুরি পরতে আমার খুব ভালো লাগে এবং সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
আসলে আমার সমস্ত মেয়েলীপনা, সাজুগুজু করার বিষয় গুলো, আমার নিজের কাছেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। এরপর মনের মধ্যে কোনো ভালোবাসার মানুষ কে কেন্দ্র করে, আমার মেয়েলীপনা, রং ঢং আরও বেশি প্রকাশ পায়।
বলতে দ্বিধা নেই, আমার যৌন চাহিদা, আকর্ষণ, কামনার দিক থেকে, পুরুষালি আচরণের যে কোন লিঙ্গের অধিকারী মানুষকে আমার ভালো লাগে। তবে শর্ত হচ্ছে, তাকেও আমার সমস্ত রকমের মেয়েলীপনা আচরণকে ভালো লাগতে হবে। এরকম যৌন কামনাকে ইংরেজিতে বলে, “androsexuality”। যৌন প্রবৃত্তি এবং লৈঙ্গিক পরিচয় দুটিই ভিন্ন। যেমন আমি রুপান্তরকামী নারী, এটা আমার লৈঙ্গিক পরিচয়, আর পুরুষালি আচরণের যে লিঙ্গের মানুষকে আমার ভালো লাগে, এটা হচ্ছে আমার, যৌন প্রবৃত্তি বা কামবোধ। ব্যাক্তি ভেদে এক একজন মানুষ এক এক লিঙ্গের অধিকারী এবং এক এক যৌন প্রবৃত্তির হতে পারে।
অশ্রু ঝরা এক রাত
মানুষ কখন কাঁদে? এটা একেক জনের কাছে একেক একেক রকম। আমার কাছে মনে হয়, যখন কাঁদা ছাড়া মানুষের কাছে, দ্বিতীয় সমস্ত কিছুকে শূন্য মনে হয় এবং জীবনে বেঁচে থাকার অর্থটা শুন্য মনে হয়।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি যখন মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, ইচ্ছা মতো মনের সুখে কাঁদি। তখন আমার কাছে ভালোভাবে কেঁদে হালকা হওয়াটা, একরকম সুখের মনে হয়।
আরো হালকা অনুভব করা যায়, যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষকে, নিজের ভেতরকার কথা গুলো বলা যায়। সেরকমই একদিন সকাল সকাল ডাক্তার দেখিয়ে এসে, দুপুরের খাবার খাচ্ছি আর মনের ভেতরের কথা গুলো, মাকে বলে যাচ্ছি-
“মা! আমার একজন মেয়ে মানুষের বদলে, একজন ছেলে মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে ইচ্ছা করে।”
“প্রতিটি ঈদে, তোমারা আমাকে, প্যান্ট, সার্ট, পাঞ্জাবি দাও কিন্তু এসবের বদলে আমার শাড়ি ব্লাউজ এবং মেয়েদের পোশাক এসব বেশি পছন্দ।”
“মা আমার শরীর টা নিয়ে, আমি খুশি নই।”
“আমার শরীরটাতে একজন নারীর শরীর অনুভব করি। সেটা নিয়েই আমি বাঁচতে চাই।”
মা! আমি একজন ডাক্তার কে, এসব কিছু খুলে বলেছি।
এরপর তিনি আমার কথা শুনে, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছেন। মা আমার এসব কথা ভাবতে ভাবতে বললেন, এসব কথা ডাক্তার কে বলে ভালো করেছি। মা এটা বলেও শান্তনা দিলেন, এসব বিষয় নিয়ে যাতে, দুশ্চিন্তা না করি। আর নিয়ম মেনে ডাক্তারের কথা শুনতে বললেন।
জীবনে কখনো কোন কিছু লুকাইনি। আমার উপর শারীরিক ও মানুষিক আঘাত আসতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও, জীবনে প্রথমবারের মতো, যেদিন আমার ভেতরে থাকা সত্ত্বার কথা জানিয়ে দিয়েছিলাম পরিবারকে। সেদিনের রাতটা ছিল, বালিশে মুখ গুজে কেঁদে কেঁদে সুখী হবার রাত।
আমি জানি অনেকে বলবেন, আগে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, সাবলম্বী হয়ে, ধীরে ধীরে পরিবারকে কিছুটা মানিয়ে নিয়ে এবং নিজের গ্রহণ যোগ্যতার জায়গা গুলো ধীরে ধীরে তৈরি করে, তবেই না হয় বলতে! এতো আগেভাগে জানানো ঠিক হয়নি, এটা অনেকে বলেই ফেলবেন।
আবার অনেকে বলবেন, একদম ঠিক কাজ করেছি।
আমি আমার জায়গা থেকে, কে ঠিক আর কে বেঠিক করলো, সেটা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ প্রত্যেকে প্রত্যেকের বাস্তবতা এবং চিন্তার জায়গা থেকে যেটা ঠিক বলে মনে করেন, সেটাই বলেন।
আসলে আমি আমার নিজের বাস্তবতার জায়গা থেকে, কিভাবে পরিবারের সদস্যদের সাথে, আমার নারী সত্ত্বার জায়গাটা মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছি, এটা হচ্ছে মূল বিষয়।
কারণ, একটা বিষয়কে চেপে রেখে, কতদিন পরিবারের সাথে মিথ্যে অভিনয় করে চলবো? সোজা বাংলায়, আমি আর পারতে ছিলাম না, না জানিয়ে থেকে।
আমি চাইনা আমার পরিবারের কাছ থেকে কোন অর্থ সম্পদ, আমার সার্জারির জন্য।
আমি চাই, শুধু মাত্র একটুখানি হাসিমুখে কথা বলা, চাই মানুষিক সান্ত্বনা।
আমি নিজেও চাই, আমার আর এক ভাই, আর এক বোনের মতো করে, আমি যেন একজন বোনের মতোই তাদের সাথে মিশতে পারি, চলতে পারি।
এবার আসি মায়ের কথায়। মাকে আমার নারী সত্ত্বার কাঁথা বুঝিয়ে বলেছিলাম এবং এটাও বলেছি যে, বিষয়টি প্রাকৃতিক। আমি নিজেকে আরো ভালো করে বোঝার স্বার্থে, মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। আমি আমার ভেতরের অনুভূতি গুলো, তাদের খুলে বলেছি। তারা আমাকে ভালো করে বুঝে, যেটা করলে ভালো হয়, সেটাই পরামর্শ দেবেন।
এরপর বোন যেহেতু বিএসসি নার্স, তাকে বিষয় গুলো খুলে বলেন। আমারো ভালো লাগে এই ভেবে, যেহেতু বোন বিএসসি নার্স, মাকে আরো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
কিন্তু বোনের সাথে কথা বলার পর থেকে, মায়ের মত পাল্টাতে থাকে। আমাকে এই ধরনের অসুখের জন্য ভালো করে নামাজ পড়তে বলেন, ভালো ভাবে দোয়া করতে বলেন, যাতে আমার এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাই, তার জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। ঠিকঠাক করে ধর্ম কর্ম পালন করতে বলেন। আর মা আমাকে ঠিক একই পরামর্শ গুলো দিতে লাগলেন।
মা প্রথমে বিষয়টি, ভালো ভাবে নিলেও, একটা কথা এখন বারবার বলছেন- “তুমি তোমার নারী হবার চিন্তা, মেয়ে হবার চিন্তা, মাথা থেকে বাদ দাও।”
“আমার দিকে খেয়াল করো, আমার দিকে দেখো, তোমার বোনের দিকে দেখো; একজন নারীর জীবন কত অসহায়ের হয়, কতটা অসহায় নিয়ে বাঁচতে হয়।”
“গরমের ভেতরেও শাড়ি পড়তে হয়, বোরখা পড়ে রাস্তায় বের হতে হয়, যখন তখন বাহিরে বের হওয়া যায় না। যেটা ছেলেরা অনায়াসেই করতে পারে, সেটা মেয়েরা করতে পারেনা।”
“এগুলো হচ্ছে, শয়তানের কুমন্ত্রনা।”
“এখানো সময় আছে, দীনের পথে আয়। নামাজ রোজা ঠিক মতো কর, ইবাদত বন্দেগী ঠিক মতো কর। আর তাওবা করে আল্লাহর নিকট মাফ চেয়ে, ঠিক হয়ে যা।”
এ জায়গাতেও আমি বলবো, মা মায়ের জায়গায় ঠিকঠাক আছেন। কারণ, কারো মা বাবাই চাননা, তার সন্তান কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক বা কোন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাক।
কিন্তু যে পরিবার গুলো প্রগতিশীল চিন্তাধারার না হন, সুস্থ্য মানবিক চিন্তা ধারার না হন, সে পরিবার গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আশপাশের প্রচলিত পরিবেশ এবং নিজেদের আত্নীয় স্বজনদের চিন্তা ধারায়, নিজেদের কে আবদ্ধ করেন। আর এখানেই ঘটে থাকে বাঁক বিতর্ক।
যেমন আমার মা প্রথমে মেনে নিলেও, নিজ ঘরের ভাইবোনদের পরামর্শে প্রভাবিত হয়ে, এখন তার মত পাল্টাতে শুরু করেছেন।
ডাক্তার যে ওষুধ গুলো, মানুষিক ভাবে ঠান্ডা থাকবে জন্য দিয়েছেন, সেগুলো নিয়েও তারা সন্দেহ শুধু করে দিয়েছেন। মা বারবার জিজ্ঞেস করছেন, আমার ওষুধ গুলো মেয়ে হবার জন্য সেবন করছি কিনা?
গোপনে আমার ওষুধ গুলোর নাম ছবি তুলে, ছোট ভাই বোনকে দেখাচ্ছেন। বোন সবাইকে বলে দিচ্ছেন, আমার উপর যেন ঠিকঠাক নজর রাখা হয়। কি করি? কি ধরনের ওষুধ সেবন করি? কাদের সাথে মিশি? কথা বলি।
এগুলোও আমি স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে নিয়েছি। কারণ, আমি এসব ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া না পেলেও, যখন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তার জন্য আগে থেকেই মানুষিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম।
কিন্তু যে বিষয়গুলোর জন্য আমি প্রস্তুত থাকিনি, সেটা হচ্ছে- যখন দেখছি ছোট ভাই, মা, আমার বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বুকের সাইজ নাকি আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে।
মায়ের সাথে আবার তাল মিলিয়ে ছোট ভাই ও একই কথা বলছেন। ছোট ভাই ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
“হ্যাঁ, মা!”
“আপনি ঠিকই বলেছেন।”
“জিনিস টা আজকে খেয়াল করলাম।”
আমার বুকটা তখন চেপে আসছিলো। আর না চাইতেই, চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে, অঝর ধারায়। সেদিনের রাতটা ছিল, অশ্রু ঝরা এক রাত। এটা ছিল আমার পরিবারে, নিজের সত্তা সম্পর্কে জানানোর, প্রথম দিনের একটা অভিজ্ঞতা।
আমরা সবাই সমানে সমান
আমাদের সবারই কোন না কোন দিক থেকে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমারো রয়েছে। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, প্রথমে নিজের ভালো কাজগুলো, যেগুলো আমি করতে পারি। সেগুলোর সাথে প্রেম করি। মানে আমি সময় এবং নিজের কাজের সাথে প্রেম করতে চাই।
প্রথমত নিজেকে নিজে খুব করে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়, তারপর না হয়, অন্য কাউকে।
তবে আমি আমার বেঁচে থাকা নিয়ে মাঝে মাঝে খুব মনখারাপ করে ফেলি। নিজেকে নিজেই খুব গালাগালি করতে ইচ্ছে করে কিন্তু করিনা। কারণ আমি জানি গালাগালি দেয়া কোন সমাধান নয়।
এমনো অনেক মানুষ আছেন, যারা আমার চেয়েও অনেক বেশি কষ্টের মধ্যে আছেন। তাদের কথা চিন্তা করলে আর মরতে ইচ্ছা হয় না।
আমার মাঝে মাঝে সাজতে ভীষণ ভালো লাগে। একদম নিজ মনের পরীর মত। কিন্তু পরিবার থেকে সেটা গ্রহণ করে না। জোর করে দাঁড়ি গোঁফ রাখাটা, চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, নইলে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হবে। এমন চাপ দেয়া হয় সবসময়ই।
আমি আমার পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছি আমি রুপান্তরকামী নারী। পরিবার এটাকে আমার মানুষিক রোগ হিসেবে দেখছেন।
জন্ম যেহেতু নিয়েছি, মরতে একসময় হবেই। তাই সময় ফুরাবার আগে আমার স্বপ্নে ঘেরা কাজগুলো সঠিক ভাবে করতে পারি। এটাই একমাত্র আমার আশা এবং চাওয়া।
আমার চাওয়া গুলোর মধ্যে রয়েছে, সবার কাছে একজন ভালো মনের মানুষ হওয়া। নিজেকে নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ছোট বড়ো সবাই কে নিয়ে, একই মঞ্চে কাজ করা। যেখানে সবাই সবাইকে ভালোবাসবে। সবাই সবাইকে সাহায্য করবে। কেউ একা একা (আমার মতো), বালিশে মুখ গুজে কাঁদবে না।
যেখানে সম্মানের দিক থেকে থাকবে, সবাই সমানে সমান। সবাই সবার কাজকে সম্মান করবে। যেখানে কেউ কাউকে ঠকাবে না। ধর্ম, বর্ণ, জাত, গোষ্ঠী, দল নিয়ে ভেদাভেদ সৃষ্টি করবে না।
একটাই ধ্বনি বাজবে সবার অন্তরে- “আমরা সবাই সমানে সমান।”
আত্মত্যাগ ও মানবিক বিসর্জন
ত্যাগ, বিসর্জন এই দুটি শব্দের ভাবার্থ একই হলেও,
এর মাহাত্ম্য সমস্ত ভাষাগত অর্থের উর্দ্ধে। আমরা সেটাই করতে পছন্দ করি, যেটা আমরা করতে ভালোবাসি। আর শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান, এগুলো ভালোবাসার অংশ।
আমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে–
“ভালোবাসা মানে, একসাথে পরস্পর ভালো থাকার যুদ্ধ করা।”
এবার আসি ত্যাগ বা বিসর্জনের কথায়। ধরি, একটা ফুল তার সৌন্দর্য দিয়ে, ঘ্রাণ দিয়ে আপনাকে মোহিত করছে। আপনি সেই ফুলকে ভালোবেসে, সেই ফুল গাছকে যত্ন করছেন, পানি দিচ্ছেন নিয়ম মেনে। নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন।
এখানে একসাথে কাজ করার সমন্বয় তৈরি হয়েছে, উভয়ের মধ্য থেকেই। ফুল তার সৌন্দর্য, ঘ্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে বা ত্যাগ করছে। আর আপনি সেটাকে ভালোবেসে শ্রম বিসর্জন দিচ্ছেন, মায়া করছেন।
ভালোবাসার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন যোগসাজশের সমন্বয়ে, ধীরে ধীরে, বড় থেকে ছোট, ছোট থেকে ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র বিষয়ের প্রতি, গভীর থেকে আরো বেশি গভীরভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের সাথে সাথে, নিজের শক্তি, সামর্থ্য, সাধ্যমত ত্যাগ করতে পারার যোগ্যতা অর্জন করা।
তার মানে এই নয় যে, আপনি যাকে ভালোবাসবেন, তার প্রতি নিজের সবকিছু আত্মসমর্পণ করবেন। তাহলে সেটা পুজো করার সমতুল্য হয়ে যাবে।
আমার তীর্থস্থান
আমি যদি কোথাও গিয়ে স্বর্গীয় তৃপ্তি পাই, সেটা হচ্ছে কোনো গ্রন্থাগার কিংবা পাঠাগার। তুমি এসেছো বাবু? কেমন যেন একটা শীতল আওয়াজ শুনতে পাই। বিভিন্ন রঙ্গে ঢঙ্গে পড়তে আমার ভালো লাগে। যে যাই বলুক তাতে কোনো আমার সমস্যা নাই।
যেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্নপোশাকে বই গুলোর সামনে উপস্থিত হতে ভালো লাগে। বিভিন্ন ভঙ্গিতে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করি। মনের আদান প্রদান হয়। একটা নিবিড় ভালোলাগায় ডুবে যাই। চুমু খাই, বুকে জড়িয়ে ধরি, তাতে কোনো আমার বাঁধা থাকে না।
কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করে, তোমার মন আর কল্পনার দৃষ্টির বাইরে তোমার সাথে আর কে আছে, তোমার সবচেয়ে কাছের আর আপন? তার উত্তরে আমি বলি-
যে কখনো তোমাকে ঠকায় না, আমাকে হাসায়, কাঁদায় আবার কিছু শেখায়, আবার আনন্দ দেয় সে হচ্ছে বই। সেই আমার সবচেয়ে আপন। যেখানে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। এটা পড়বে না, ওটা পড়বে না। এটা ছুবে না, ওটা ছুবে না।
এটা ছুলে জাত যাবে, ওটা ধরলে জাত বৃদ্ধি পাবে। যেখানে এরকম কোন ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম থাকবে না। যেখানে খুলে যাবে ভ্রান্ত ধারনা গুলো থেকে বের হবার বিভিন্ন দরজা।
সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে কারো কোনো বাঁধা থাকবে না, থাকবে না কোনো নিষেধাজ্ঞা।
আমার ভালোবাসা হচ্ছে বই। আর ভালোবাসার কারখানা হচ্ছে গ্রন্থাগার কিংবা পাঠাগার। আমার তীর্থস্থান, যেখানে সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা পরে থাকা যায়। যেখানে প্রত্যেকটা লাইন আমার কাছে অমীয় সুধা কিংবা অমীয় বানীর মতো।
ছোট বেলায় যখন রাস্তায় কোন কিছু পড়ে থাকতো, কিছু একটা আগ্রহ নিয়ে খেয়াল করতাম। বিশেষ করে যখন বুঝতে শুরু করলাম, কোনো ছোট পেপারের কাগজে কিছু লেখা থাকে। যেগুলো ঠোঙ্গা বানিয়ে বিক্রেতারা বাদাম, ঝালমুড়ি, বুট এবং বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। খুব আগ্রহ থাকতো সেগুলোর প্রতি।
মাটিতে কিংবা পথের মাঝে কোনো কিছু পরে থাকতে দেখলে আর আসেপাশে আমার দিকে কেউ না তাকালে, ফট করে তুলেই পড়াশুরু করে দিতাম। কি না জানি গুপ্ত কথা লেখা আছে সেগুলোয়, যা আমি পড়ে জানতে পারবো। এরকম টা মনে হতো। কেমন যেন একটা রহস্য রহস্য কাজ করতো, মনের মধ্যে। আমি খুবই উৎসুক থাকতাম, অজানা কিছু জানার প্রতি। মাঝে মাঝে মনে হতো, এই বাক্যটা দিয়েই বুঝি পুরো পৃথিবী বদলে ফেলা যাবে। এই শব্দটা দিয়েই বুঝি অসম্ভব কোনো কিছু সম্ভব হয়ে পড়বে। যেটা আমি করে ফেলতে পারবো খুব সহজেই। কিন্তু কি করতে পারবো, আর কি করতে পারবোনা। সেসব কিছুই মাথায় আসতো না।
এখনো সবসময় মনে হয়, কিছু একটা হবে, কিছু একটা জানবো আর কিছু একটা করতে পারবো, মানুষের কল্যাণের স্বার্থে।
বই, গ্রন্থাগার, গ্রন্থমেলা, এই তিন মিলে আমার তীর্থস্থান।
এই তিন স্থানের সাথে যাদের সম্পর্ক। তাদের পায়ের তলার ধুলো হবার যোগ্যতা অর্জন করতে চাই।
যতদিন মানুষ নামের জীব বেঁচে থাকবে। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ বেঁচে থাকবে। যেখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। থাকবে শুধু ভালোবাসার আদান-প্রদান। এটাই আমার মূল দর্শন।
সমস্যা আসলে কাদের
সমস্যা তোমারো নয়, আমারো নয়। মুল সমস্যাটা তাদের, যারা আসলে সমস্যাটা বুঝতে পেরেও, বোঝাতে চেষ্টা করছে না, এটা যে একটা সমস্যা।
শুধু প্রতিযোগিতা মুলক প্রতিবাদ করে যাচ্ছে,
আর কেউ হেরে গিয়ে পরাজয় স্বীকার করছে, তখন তাকে শুধু মাত্র সান্ত্বনা দিচ্ছে অথবা করুনা করছে।
আর নিজে বড় সাজবার জন্য বা বড় থাকবার জন্য সমস্যা টা সেভাবেই তৈরি করে রেখেছে। অথচ, নিজ উদ্যোগে সমস্যা তৈরি হবার আগে বুঝতে পেরে নিজ উদ্যগে এগিয়ে আসছে না। আর সমস্যা তৈরি হবার পর প্রতিবাদী আগ্রাসন চালাচ্ছে।
সমস্যা তাদের, যখন সমস্যা সমাধানের জন্য তুমি এগিয়ে আসছো, আর হিংসুকরা পেছন থেকে টানছে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করবে, যখন তুমি মাটিতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাও, কিছু মানুষ তোমার পড়ে যাওয়া দেখে হাসবে। আরেকদল অনর্থক পড়ে যাওয়ার জন্য প্রতিবাদ মুলক ক্ষোভ প্রকাশ করবে। আরেকদল শুধু সান্ত্বনা দিবে। আরেকদল পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওয়ার পর যখন তুমি সাহায্য চেয়ে চিৎকার করবে পাশের লোকজনের কাছে, তারা তোমায় একটু করুনা করবে উঠে দাঁড়াতে। কিন্তু এমন লোক পাওয়া ভার হবে যে এগিয়ে এসে বলবে তোমায় কিভাবে হাঁটলে, আর তুমি কখনোই পড়বে না।
সমাজে কিছু লোক আসন গেড়ে বসে আছে, তুমি পড়ে গেলে তোমাকে দাঁড় করিয়ে করুনা করবে, ভালো সেজে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। তারা সমস্যাগত ধরনটা টা সেভাবেই সাজিয়ে রাখতে চান। বোঝাতে চান জন সাধারণের জন্য, তারা খুবই ভালো লোক। কিন্তু তাদের ছাড়া, নিয়ন্ত্রক আর কারা থাকবেন, যদি সমস্যার ধরন অনুযায়ী তারা শিখিয়ে দেন যে, কিভাবে সমস্যা থেকে বাঁচতে হয়?
জোর করে বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্মান আদায় করা সম্ভব, কিন্তু মন থেকে অর্জন করা সম্ভব নয়। ঠিক যেমনটি ভালোবাসার ক্ষেত্রে।
পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা
পরিবার ও সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে, নিজের ব্যক্তিত্ব কে ঠিক রেখে চলাও একটা বড়ো রকমের শিক্ষা। যদিও সমাজ আমাকে খাওয়াবে না, কিন্তু পরিবার ও সমাজের প্রতি কিছু সীমাবদ্ধতা এবং দায়বদ্ধতা থেকেই যায় সারাজীবন। এই উপলব্ধিটা কারো কারো অনেক পরে আসে। আবার, কারো কারো অল্পতেই আসে। আর পরিবার ও সমাজ যেনো ভিন্ন ভিন্ন রঙের সুতোয় বোনা, একটা রঙ্গিন সীমাহীন মায়ার জাল।
নারীবাদী
আমি নিজেকে একজন নারীবাদী আন্দোলনের সাধারণ কর্মী হিসেবে চিন্তা করি। আমি মনে করি, নারী-পুরুষের সমতার স্বার্থে, আমাদের সবারই এটা নিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। বলতে পারেন, আমার অনেক গুলো নৈতিক মূল্যবোধ গুলোর মধ্যে এটা একটা, যে আমি নারীবাদ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
মৃত্তিকা রাই সম্পর্কে কিছু কথা- উনি একজন ট্রান্সজেন্ডার, ট্রান্স উইমেন, রূপান্তরকামী নারী। উনি পুরুষ দেহে জন্মালেও, উনার মানসিক লিঙ্গ নারী।