
লেখকঃঅন্তিমে অন্তু
১।
সময়টা ২০১৪ । রমজান মাস । । পুরো মাস আল্লাহর ইবাদাতে সময় কাটাই । দেখতে দেখতে ঈদ এসে গেল । ঈদের নামায পড়তে গেলাম। নামায শেষে বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজনের সাথে কুলাকুলি করে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলাম একটি ছেলেকে। একদম দেবদূত এর মত দেখতে ! এমন মনে হল,যেন ওর মত সুন্দর ছেলে আর কেউ নেই ! ছেলে মানুষ এত সুন্দর হয়,তা আমার জানা ছিল না ! যাইহোক,এবার আমার পরিচয় দেই ।আমি রাজীব । নারায়ণগঞ্জ থাকি । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি।আর তখন যার কথা বলছিলাম তার নাম জানা ছিল না।সেই কথায় একটু পর আসছি।
২।
ঈদের ২-৩ দিন পর টঙয়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি।একটু পর দেখলাম অই ছেলেটি আসছে । আমি ওকে দেখার সাথে সাথে একটু ভালভাবে সরে উঠে দাঁড়ালাম, যাতে তাকে আমি ভালমত দেখতে পারি! আমার সামনে দিয়েই গেল । আমি বন্ধুদের ছেড়ে ওর পিছু নিতে গেলাম।ওর বাড়িও চিনে নিলাম । অথচ আমি তার বাসা কোথায়,বাবা কে বা সে কার ভাই কিছুই জানতাম না।
৩।
ব্যাপারটা একেবারে পাগলামির পর্যায়ে চলে গেছে। ও যেখানে যেত আমি ওর পিছু নিতাম । ও মাঠে খেলত সেখানে গিয়ে ওর খেলা দেখতাম।একদিন খেলা শেষে দেখলাম ও আমার পাশ দিয়েই গেল, যাতে আমি তাকে দেখতে পারি!
কিন্তু নিজের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসল । মনে মনে অনুশোচনায় ভুগলাম । নিজের বিবেকই বলছে,আমার এরকম করা উচিত নয়।ও একজন টিনেজ ছেলে । ও যদি আমার মত না হয় ! এরপর ও কে দেখলেও না দেখার ভান করে থাকতাম।কিন্তু খেয়াল করলাম,ও আমার দিকে প্রতিদিন তাকায় এবং সেই সাথে কেন জানি মনে হল আমি তার দিকে কেন তাকাই না এজন্য তার হয়তোবা মন খারাপ!
একদিন হঠাৎ করে………
ছেলেটি:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
আমি:ওলাইকুম ছালাম।কেমন আছ?
ছেলেটি:জ্বী ভাইয়া,আলহামদুলিল্লাহ ভাল।আপনি??
আমি:হ্যা আলহামদুলিল্লাহ ভাল।তোমার নামটা জানা হল না!
ছেলেটি:ইনাম।
আমি:বাহ!খুব সুন্দর নাম!কিসে পড়?
ইনাম:এইবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।আপনার নাম??
আমি:আমি রাজীব। ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ি।
ইনাম:ওহ আচ্ছা।ভাইয়া এখন আসি পরে কথা বলব।
আসসালামু আলাইকুম।
আমি:ওয়ালাইকুম ছালাম।যাও!
খুব ভাল লাগল ওর সাথে কথা বলে!মনের মধ্যে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে লাগল!
সন্ধায় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল।বৃষ্টি আমার অনেক প্রিয়!এই বৃষ্টি তে আমার খুব বৃষ্টির গান শুনতে ভাল লাগে।তাই,নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস কৃষ্ণপক্ষ ছবির একটা গান ছাড়লাম……….
……………………………………………..
“এই,চলনা বৃষ্টিতে ভিজি!
চলনা কোনায় যাই ছাদের!
আজ আমরা বৃষ্টি বন্দি
ভালবাসার অপরাধে!”
……………………………………………..
৪।
হঠাৎ দেখলাম আমার বোন আমায় ডাকছে-
-এই ভাইয়া,উঠ!আর কত ঘুমাবি।এইবার উঠ!আব্বু ডাকছে!
-উফফ!দিলি তোহ শান্তির ঘুমটা ভেঙ্গে! যা আসছি!
আমার খুব প্রিয় একটি গান।কখন যে গানটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছি টেরই পাই নি!
বিছানা থেকে উঠে বাবার ঘরে গেলাম।বাবা বলল,
-এতক্ষণে আসার সময় হল?
-আব্বু সরি!ঘুম একটু বেশি ছিল!তাই উঠতে দেরি হয়ে গেছে!
-আচ্ছা ঠিকাছে।যার জন্য ডেকেছিলাম তা মন দিয়ে শুন।ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছ,সেই সাথে কিছু একটা কর।আমি তোহ আর ১বছর পরেই রির্টায়ার্ড করব।এবার কিছু একটার লাইন করে নাও বাবা!
-জ্বী আব্বু, আমি দেখছি!
আমার বাবা খুবই ভাল একজন মানুষ। এলাকার সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।এতে ছেলে হিসেবে আমারো খুব ভাল লাগে।আব্বুই আমাদের ২ ভাই বোন কে শিখিয়েছেন,কিভাবে জীবনে সফল হতে হয়,জীবিনের সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়।আজ আব্বুর কথাটি আমার বিবেকে নাড়া দিল।
কিছুদিন পর…………
৫।
ইনামের সাথে কথা বার্তা চলছিল।কিন্তু আমি যে ওকে মনে মনে ভালবাসি!সেটা কি ওর কাছে কোন দিন প্রকাশ করতে পারব???
নাকি আমার ভালবাসা অপ্রকাশিত হয়েই থাকবে!কিন্তু আবার ভাবছি এটা হয় না।ও আমাকে তোহ ভাইয়ের মত মনে করে।তাই ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগলাম।
মনকে শক্ত করলাম।মাঝে মাঝে ত্যাগের মধ্যেও যে সুখ পাওয়া যায় তা উপলব্ধি করতে পারলাম।সবসময় যে নিজের ভালবাসা পেতেই হবে এমন কোন কথা নেই।মাঝে মাঝে নিজের ভালবাসা কে বিসর্জন দিলেও অনেক সুখ পাওয়া যায়!ইনামকে আমি পাই নি ভালবাসার মানুষ হিসেবে।কিন্তু এখন তার সাথে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।আর ফেক আইডির নামটা ওর নামের সাথে মিল রেখেই করলাম।আর আইডিয়াটা ফেক আইডির এক ছোট ভাই দিয়েছে।সেজন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
পরিশেষে বলব,ভোগে নয়,ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোগের ও প্রয়োজন আছে আবার ত্যাগের ও প্রয়োজন আছে।তাই সব মানুষের উচিত কখন ভোগ করা উচিত এবং কখন ত্যাগ করা উচিত তা চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া।
মানুষের জীবনটা খুব ছোট, কিন্তু জীবনের গল্পটা অনেক বড়!যা যুগ যুগ ধরে বেচেঁ থাকে।তাই জীবনটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে জীবনযাপন করা প্রত্যেকের কর্তব্য।জীবনের সবকিছুতে ছোট বড় সব ধরনের সিদ্ধান্ত ভেবে চিন্তে নেয়া উচিত।তবেই জীবন হবে সুন্দর ও সুখকর।
প্রকাশেঃ সাতরঙা গল্প