
লেখকঃ অ্যাডোনিস
স্টোন
– এই তুষার আমার জায়গায় ব্যাগ রেখেছে কে?
– নতুন ছেলে এসেছে একটা, ওকে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু কথা কানেই নিলো না!
– কোথায় মাল টা? বানাবো আজ শালাকে।
– আছে হয়তো আশে পাশেই কোথাও।
– আসুক শালা রুমে। বোঝাবো ভালো মতো অন্যের জায়গায় বসার পরিনতি।
– আরে মামা নতুন এসেছে মাত্র। এখনই ডোজ দেয়া শুরু করবি? কিছুদিন যেতে দে। স্কুলে তো রোজ আসবেই তাই না? হাহাহা!
– কিসের নতুন, নতুন বলেই তো গ্যাঞ্জাম করবো, ওর তো জানতে হবে আমি কে?
এই বলে শ্রাবন নতুন অচেনা ছেলেটার ব্যাগ নিচে ছুড়ে ফেলে দিলো। শ্রাবণের বন্ধু রা সব এ নিয়ে বেশ খুশী, নতুন নাটক দেখবে তারা, শ্রাবণ ভীষন বদমেজাজি, আর তার এই রাগের ফায়দা লুটে তার বন্ধুরা। কোথায় কি গ্যাঞ্জাম বাধলো, ডেকে নিয়ে যাবে এই শ্রাবণকেই। স্কুল পড়ুয়া এই ছেলের এসব কাজে বিরক্ত এলাকার বেশ কিছু প্রতিবেশী ও। এসব গ্যাঞ্জাম ফ্যাসাদে তার কোনো লাভ নেই। কিন্তু তার বন্ধুরা তার এই রাগ এবং রাগের মাথায় করা কাজ গুলো উপভোগ করতে বেশ ভালোবাসে! আজ ও হয়তো তারা নতুন কিছু দেখতে চলেছে।
এমন সময় অপু ক্লাসে ঢুকলো, তুষার শ্রাবণ কে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো যে এটাই সেই নতুন ছেলেটা।
অন্যদিকে নিজের ব্যাগ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ক্ষেপে উঠলো নতুন ছাত্র।
– আজ প্রথম দিন হলো এসেছি, কোন জানোয়ার ঝামেলা বাধাতে চাচ্ছিস রে?
– এই! এই! কি সমস্যা গালাগাল দিচ্ছো কাকে বড়ভাই?
– আমার ব্যাগ ফেলেছে কে?
– আমি ফেলেছি, কোনো সমস্যা?
– কেন ফেলেছো? আমার ব্যাগ তোমাকে কোথায় কামড়েছে?
– ব্যাগ কোথাও কামড়ায় নি, সমস্যা হলো, যেখানে ব্যাগ টা রাখা হয়েছে সেই বেঞ্চ টা আমার। আমি বসি রোজ!
– বেঞ্চ কি তোমার বাবা কিনে দেয়? চেহারা দেখলেই তো বোঝা যায় কোথা থেকে উঠে এসেছো। এত গরম কিসের?
শ্রাবণ রেগে খপ করে ছেলেটার কলার চেপে ধরলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলো তুষার, হঠাৎ ক্লাস টিচার কে আসতে দেখে সে বলে উঠলো_
– এই এই থাম তোরা, স্যার চলে এসেছে।
– আজকের মতো বেঁচে গেলি। পরে দেখে নেবো তোকে।
ক্লাসে স্যার আসলেন। নতুন ছাত্রের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
– কেমন আছো সবাই? তোমাদের নতুন বন্ধুর সাথে পরিচিত হয়েছো তোমরা?
পাশ দিয়ে ইভা রসিকতার সূরে বলে উঠলো, ‘সে সুযোগ আর হলো কই?’
পুরো ক্লাস হেঁসে উঠলো। স্যার ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, ‘চুপ করো সবাই, খুব চর্বি জমেছে তাইনা? তোমাদের ওষুধের দরকার, এই শুভ অফিস রুম থেকে আমার বেত টা নিয়ে আয়, আর চক ডাস্টার ও নিয়ে আয়’
কিছুক্ষন থেমে
– তা কি বলছিলাম আমি? হ্যা! তা বাবা দাড়াও তো, তোমার নাম কি?
– স্যার আমি অপু, আজাদ ইসলাম অপু।
– আচ্ছা বসো, সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিও, এতগুলো ছাত্রের সাথে পরিচিত করাতে করাতে ক্লাসের সময় পেরিয়ে যাবে, আচ্ছা তোমরা এবার বই বের করো, পেজ নম্বর ৫৭
এভাবেই পার হলো শ্রাবণের সে দিন। তার অপুর প্রতি চরম রাগ, যত দিন যাচ্ছে এই রাগ বাড়ছে বৈ কমছে না। অপু সব দিক দিয়ে শ্রাবণ কে ছাড়িয়ে, পড়াশুনা খেলাধুলো সবদিক দিয়েই। সে ধীরে ধীরে সকলের প্রিয় হতে লাগলো, খুব কম সময়ের মধ্যেই শিক্ষকদের আদরের ছাত্র হয়ে গেলো অপু। শ্রাবণের এসব মোটেও পছন্দ না, স্কুলের প্রায় সকল ক্লাবেই অপু কে দেখা যায়, সে বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য হয়েছে, এমনকি ইংলিশ ক্লাবে সে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছে। শ্রাবণ এসব আর সহ্য করতে পারছে না। ক্লাসের সব ছাত্র ছাত্রীরাও অপুর ফ্যান হয়ে গেছে। এভাবেই রাগ ঝগড়ায় পার হলো তাদের ক্লাস নাইনের জীবন।
ক্লাস টেন এর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। আর শ্রাবণ এর পেছনেই অপুর সীট। এ নিয়ে তুষার ঠাট্টা করে বললো,
– শালা চিপকু সব জায়গায় তোর পেছনে পড়ে আছে, এমনকি পরীক্ষার সীট ও পড়েছে তোর পেছনে? হাহাহা!
– ধ্যাত! ভালো লাগে না, যেদিন থেকে স্কুলে এসেছে লাইফ টা হেল করে দিয়েছে। ইচ্ছে করে জ্যান্ত কবর দেই ব্যাটাকে।
– সাবধানে পরীক্ষা দিস এবার বন্ধু। পেছনে যমের সীট পড়েছে, হাহাহা!
পরীক্ষা শুরু হলো সব পরীক্ষা ই বেশ ভালো হচ্ছিলো, হঠাৎ গণিত পরীক্ষার দিন শ্রাবণ এর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, সে অপু কে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যেই সাথে করে নকলের কাগজ নিয়ে গেছিলো হলে। গণিত পরীক্ষায় অপু বেশ মন দিয়ে লিখছে। আর শ্রাবণ মাঝে মাঝেই মুচকি মুচকি হাঁসছে। অপু যেই লুজ নেয়ার উদ্দেশ্যে সীট থেকে বের হয়েছে, তখনই শ্রাবন, অপুর খাতার ভাজে নকল টা ঢুকিয়ে দিয়েছে। অপু লুজ নিয়ে এসে খাতা খুলতেই দেখে তার খাতার ভাজে বই এর পাতা,
সে উলটে পালটে দেখতে থাকে কাগজটাকে
আর এমন সময়ে শ্রাবন দাঁড়িয়ে জোরে বলে উঠে,“স্যার!! অপুর হাতে নকলের কাগজ, পুরো বই এর পাতা ছিড়ে এনেছে!” স্যার দ্রুত উঠে আসে আর দেখে সত্যিই অপুর হাতে একটা ছেড়া বই এর পাতা। তাতে লেখা রয়েছে গণিত বিষয়ক সকল সূত্র!
অপুর গণিত খাতা এক্সপেল করে দেয়া হয়। এই খুশিতে শ্রাবণ আর তুষার মিলে খুব হাঁসাহাঁসি করেছে।
হঠাৎ দেখে সামনে অপু দাঁড়িয়ে,
শ্রাবণ বলে উঠে।
– এই তুষার দেখ, আমাদের টিচার চলে এসেছে, সরি সরি চিটার চলে এসেছে! তা কেমন আদর্শ ছাত্র হলে শুনি? যদি পরীক্ষার হলে চিটিং করতে হয়? হাহাহাহা
– অপু কোনো উত্তর দেয় না, তার চোখে পানি। সে সেখান থেকে চলে যায় তৎক্ষনাৎ।
শ্রাবণ তুষারের সাথে আড্ডা দেয়া শেষে বাড়ির দিকে রওনা হয়। হঠাৎ পাশ থেকে অপু বলে উঠে,
– কাজ টা তুমি ঠিক করোনি শ্রাবণ! আমার মা অসুস্থ, ক্যান্সারের রোগী, বাবার রোজগার কম আমাকেই তো পড়াশোনা করে বাবার সাথে সংসারের হাল ধরতে হবে তাইনা? স্যার বাবাকে ফোন করে আজকের ঘটনা বলে দিয়েছেন। আমার বাবা মা আমার দিকে যে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তুমি সেটা মুহুর্তে একটা কৌতুক বানিয়ে দিলে!
শ্রাবণ এবার তার এই অপরাধের জন্য বেশ অনুতপ্ত হলো। সে বললো
– আই অ্যাম সো সরি। আমি জানতাম না এরকমটা! আমি সত্যিই দুঃখিত এখন।
– জুতো মেরে গরু দান করার কি কোনো মানে আছে শ্রাবণ? আমার এক্সপেলড খাতা কি আর ঠিক হয়ে যাবে?
– আমি…
অপু আর এক মুহুর্ত ও সেখানে দাঁড়ায় না। মুহুর্তেই সে স্থান ত্যাগ করে।
এদিকে শ্রাবন বেশ অনুতপ্ত সে অপুর চোখে চোখ মেলাতে পারে না৷ অন্যান্য পরীক্ষা গুলো ও তার ভালো যাচ্ছে না। সে অপুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু অপু আর শ্রাবনের সাথে কোনো কথা বলে না। সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যায়। একে একে সব পরীক্ষা শেষ হয়ে আবার ক্লাস শুরু হয়ে যায়। অপু ক্লাসে ঢুকতেই ইভা বলে উঠলো,
– অপু, প্রিন্সিপাল স্যার তোমাকে ডেকেছেন।
– কেন?
– আমি জানি না। পিওন কাকা এসে বলে গেছেন তুমি আসলে যেন প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যেতে বলি।
অপুর হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো, না জানি শ্রাবণ আবার কোন ঝামেলায় ফেললো তাকে৷ প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে অপু বললো,
– স্যার আসতে পারি?
– হ্যা এসো!
– স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন?
– হ্যা বসো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে৷
– জ্বি স্যার।
– তোমার গণিত পরীক্ষায় এক্সপেল হয়েছিলে কি কারণে বলো তো?
– স্যার, আমার কাছে নকল পাওয়া গিয়েছিলো।
– তোমার জন্য একটা খুশির সংবাদ আছে। তোমার পরীক্ষার খাতা বাতিল হয় নি। সে খাতা এখন রায়হান স্যারের দায়ীত্বে আছে সে অন্যান্য খাতার সাথে তোমার খাতা ও চেক করবেন!
– কিন্তু স্যার! আমার কাছে তো নকল পাওয়া গিয়েছিলো। তাহলে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?
– তোমার সামনের সীটে যে বসেছিলো, শ্রাবণ নাম ছেলেটার। ও এসে কনফেস করেছে যে ওটা ওর কাজ। ও তোমার খাতায় নকল ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। এই অপরাধে তোমার খাতার পরিবর্তে ওর খাতা এক্সপেল করা হয়েছে।
শ্রাবণ ক্লাসে বসে আছে। অপু এসে শ্রাবণের পাশে বসলো।
– থ্যাংক্স শ্রাবণ
– থ্যাংক্স কেন?
– আমার খাতা বাঁচিয়ে দিলে তাই।
– ও কিছু না। আমাকে মাফ করে দিও। তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি।
– থাক ব্যাপার না! এখন কি আমরা বন্ধু হতে পারি?
এই বলে অপু তার হাত টা বাড়িয়ে দিলো। শ্রাবণ বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো অপুর দিকে তারপর বললো,“শালা তোর জন্য আমার খাতা বাঁশ গেলো এখন এসেছিস বন্ধু হতে” এই বলেই খপ করে অপুর হাত টা ধরে জড়িয়ে ধরলো অপু কে।
আর ক্লাসের সবাই চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করলো, খুশিতে তারা বলে উঠলো,‘টম এন্ড জেরির গ্যাঞ্জাম মিটলো’
যত দিন যায় শ্রাবণ আর অপু তত ঘনিষ্ট হয়। তাদের বন্ধুত্ব দেখে কেউ বলবে না তারা যে একসময় এরকম ঝগড়া করতো। বন্ধুত্ব শুরু হবার পর আর কখনো ঝগড়া হয় নি তাদের। তাদের বন্ধুত্ব এমন পর্যায়ে পৌছলো যে কেউ একজন কে ছাড়া আরেকজন থাকতে পারতো না। ঠিক এরকম ই কোনো এক বিকেলে কোনো এক পার্কে দুজনে আড্ডা দিতে দিতেই শ্রাবণ অপুর বাম হাত শক্ত করে ধরে, টেনে নিয়ে গেলো এক নির্জন জায়গায়, সেখানে এক দেয়ালে অপুকে চেপে ধরে অপুর ঠোটে চুমু খেয়ে নিলো, শ্রাবণ মুখ সরানোর পর অপু চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে চেয়ে রইলো, শ্রাবন অপুর কানের কাছে গিয়ে বললো, “আমি তোকে ভালোবাসি”
অপু নির্বাক, তার মুখে কথা নেই কোনো, সে শুধু একটা শব্দ ই বললো,“ আমিও”
পেপার
– এই মেয়েটা আমার জীবনটা তছনছ করে দিলো, একটা কাজ ও ঠিকমতো করতে পারে না। এমন মেয়ে যেন কেউ শত্রু কে ও দেয়। নাওয়া নেই খাওয়া নেই আছে এক মোবাইল নিয়ে
জয়ার মা জয়াকে নিয়ে হতাশ, মেয়ে না তো পড়াশোনায় ভালো, আর না কোনো কাজ কর্মে, জয়ার মা বেশ চিন্তিত, এই মেয়েকে বিয়ে দেবে কি করে! আর জয়া? সে এসবে কানই দেয় না। সে তার মতোই আছে, ফেইসবুকে বন্ধু, আড্ডা আরো কত কি! মায়ের মুখে শত বকা শুনলেও বাবার কাছে সে বড্ড আদরের। একমাত্র মেয়ে, বাবা মেয়েকে প্রচুর ভালোবাসেন। জয়ার মা যখন বকাঝকা করছিলেন তখন জয়ার বাবা বললেন,
– কি করবে এত পড়াশুনা করে? এত কাজ করে? দুদিন পর তো বিয়ে করে চলেই যাবে তাই না? তুমি এত বকবে না আমার সোনা মানিক কে, সে যা খুশি করবে, খবরদাএ বকবে না!
– ওই বলে বলেই মেয়েকে মাথায় তুলেছো। আর মেয়ে বিয়ে করে যে যাবে কাজ কম্ম তো কিছু জানে না। বেয়ান বাড়িতে মুখ দেখাবো কি করে শুনি?
– আমি আমার মেয়ের জন্য রাজপুত্র ধরে আনবো, যার বাড়িতে ১০-১২ টা চাকর চাকরানী থাকবে, আমার মেয়েকে কিচ্ছুটি করতে হবে না।
– হ্যা হ্যা আমিও দেখবো কোন রাজপুত্র তোমার মেয়েকে বিয়ে করে।
এরকম সময় জয়ার প্রবেশ, সে আহ্লাদ করে “বা…..বা” বলে ডাক দেয়, আর জিজ্ঞের করে,“কি নিয়ে কথা বলছো তোমরা?”
জয়ার মা উত্তর দেয়,
– তোর বিয়ে নিয়ে, তোর বাবা নাকি তোর জন্য রাজকুমার ধরে আনবে!
– এসব কি বাবা? তোমাদের কতবার বলতে হয় আমি বিয়ে করবো না।
– বললেই হয়? বিয়ে সবাইকে করতে হয়। তোকেও করতে হবে।
– না করবো না আমি বিয়ে! আরেকবার বিয়ের কথা বললে আমি ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেবো।
– খেলে খা! তাও ভালো তোর জন্য, সারারাত তো ঘুমোস ও না, ওই মোবাইল নিয়ে বসে থাকিস। ওষুধ খেয়ে যদি একটু ঘুম হয়। কে জানে এই মেয়ে বিয়ে কেন করতে চায় না?
– ইটস মাই চয়েস। হুহু। আচ্ছা বাবা কিছু টাকা লাগবে, আমার বাইকে তেল শেষ, আর কিছু প্যান্ট ও কিনতে হবে।
– আচ্ছা বাহিরে বের হবার আগে মনে করে দিও। তখন দেবো। আর মা এই জিন্স টিশার্ট বাদে একটু সালওয়ার কামিজ পড়া যায় না?
– উফফ বাবা আমার এগুলোই কম্ফোর্টেবল লাগে। তা আমি কি করবো?
– আচ্ছা, বেশ বেশ, যেমন টা আমার মায়ের পছন্দ। তা রিয়া আসছে না যে কতদিন হলো। শরীর ঠিকাছে তী ওর?
– আজ শপিং এ যাবো একসাথে, সেখান থেকে আসবে। রাতে থাকবে।
রিয়া আর জয়ার প্রায় ৪ বছরের সম্পর্ক। বন্ধুমহলে এই লেসবিয়ান কাপল কে সবাই বেশ ভালোবাসে, জয়া হলো সবার জয় ভাই, আর রিয়া হলো বৌদি। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাইকে করে জয়া বেরিয়ে গেলো রিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে, রিয়ার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ফোন দিলো,
– হ্যালো? কোথায় তুই? আমি তোর বাসার নিচে!
– হ্যা আসছি দু’মিনিট।
– জলদি আয়!
– আসছি।
দু’মিনিট এর পরিবর্তে ৫ মিনিট পার হয়ে যায়, ৭ মিনিটের মাথায় রিয়া কে দেখা যায় কেচিগেট খুলে বের হতে।
জয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। আকাশী রঙের কামিজ, সাদা পায়জামা, সাদা ওড়নায় এই সাধারণ মেয়েটাকে কি অসাধারণ দেখাচ্ছে। রিয়া কাছে এসে জয়াকে ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
– ওই? কি হলো? হা করে কি দেখছিস? আমাকে এই প্রথমবার দেখলি?
– না মানে…মানে…মানে এই তোর দু’মিনিট?
– আরে বাবা চুল বাঁধছিলাম। বাইকে বসলে বাতাসে তুল এলোমেলো হয়ে যায়।
– হ্যা যা বড় ঘোড়ার লেজ।
– খবরদার ঘোড়ার লেজ বলবি না। যে মেয়ের চুল নাভীর নিচ পর্যন্ত বড় হয় হাশরের ময়দানে সেই চুল সে মেয়ের সারা শরীর ঢেকে রাখে। বুঝলি?
– হুহ তোর হাদিস তোর কাছে রাখ তুই। এবার বল কোথায় যাবি?
– তুই বল?
– জমুনায় যাবি?
– ইশ জমুনা। সেখানে জিনিসের খুব দাম।
– তা কোথায়?
– নিউমার্কেট এ চল! তুই তো টি শার্ট ছাড়া আর কিছু কিনিস ও না
– আচ্ছা আপনি যা বলবেন ম্যাডাম!
– হুহ হয়েছে আর আহ্লাদ করতে হবে না। চল এবার।
জয় আর রিয়া সারাদিন কাটালো নিউমার্কেট এ, জয় প্রায় ৫-৬ টা টি শার্ট কিনলো, ৩ টা নতুন প্যান্ট কিনলো, রিয়ার জন্য কিনলো দুটো শাড়ি, ৪-৫ রঙের চুড়ি, কিছু কানের দুল। তারা একসাথে ভেলপুরি খেলো, কাচকলার পাঁচমিশালি ভর্তা খেলো, সন্ধ্যায় দুজনে বাড়ি ফিরেছে। দুজনেই বেশ ক্লান্ত। কিন্তু জয়ার ঘরের জঘন্য অবস্থা দেখে রিয়ার ক্লান্তি সব শেষ।
– কি হাল করেছিস ঘরের?
– কি করেছি? সব ঠিকই তো আছে!
– এগুলো ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছে তোর?
– হুম তা নয় তো কি?
– বিছানার উপরে এত তার, ল্যাপটপ এর চার্জার, ফোনের চার্জার হেডফোন! চেয়ারের উপরে জামাকাপড়, ব্রা পড়ে আছে ফ্লোরে আর আলমারিতে পানির মগ? আর তুই বলছিস সব ঠিকাছে?
– আরে রাখ তো, রেস্ট নে একটু, এমনিও তো আজ রাত জাগতে হবে তাই না বাবু?
– হ্যা সোনা রাত তো জাগতেই হবে, কিন্তু কোনো রোম্যান্স না! এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার না করে আমি বসবো না!
– ভদ্দরমহিলার গায়ে কত চর্বি দেখো দেখি।
– হ্যা অনেক চর্বি। আমার না, তোমার। সরো এখন এসব পরিষ্কার করতে দাও!
রিয়া ঘরের সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করলো, আলমারি গুছিয়ে নিলো, নতুন বিছানার চাদর পড়ালো, ঘর ঝাড়ু দিলো বুকশেলফ এ পড়ে থাকা ঝুল গুলো ভেঙে দিলো। কিছু সময়ের মধ্যেই ঘর টা জঙ্গল থেকে মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে গেলো। এবার জয় আর রিয়া গোসল সেরে নিলো। খাবার টেবিলে বসলো সবাই।
জয়ার বাবা রিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি খবর তোমার রিয়া? এতদিন পর এলে যে?
– জ্বি আঙ্কেল, এক বোনের বিয়ে তে গেছিলাম!
– পড়াশোনার কি খবর?
– জ্বি ভালো।
জয়ার মা বললেন,
– রিয়া সবদিক দিয়েই পরিপাটি, কত সাংসারিক মেয়ে। পড়াশুনায় ও ভালো, অসাধারণ রান্না করে। আমার জয়া টা ই একটা অপদার্থ, হ্যারে শেখ শেখ ওর কাছ থেকে কিছু।
– ধ্যাত আম্মা, কি যে বলো না? নিজের মেয়ে কে কেউ এসব বলে? আর আমি তো আছিই, সময় হলে সব শিখিয়ে দেবো!
– বলবো না তো কি করবো! তোমার সাথে কতদিন ধরে মিশছে, ওকে কিছু শেখাতে পারছো না?
– উফ মা চুপ করো। খাওয়ার সময় কথা বলা গুনাহ!
– ওরে আমার হাদিস ওয়ালি রে। নামাজ তো পড়িস না এক ওয়াক্ত।
– হ্যা খাও এবার। খেয়ে ঘুমাও, ঘুমিয়ে রহম করো!
খাওয়াদাওয়া শেষে রিয়া জয়ার ঘরে গিয়ে তার কিনে দেয়া নতুন সবুজ শাড়ি টা পড়লো, চুল গুলো গুছিয়ে একপাশে নিলো, নতুন চুড়ি পড়লো, কপালে একটা সবুজ টিপ পড়লো। আর জয়া বসে বসে তার সাজসজ্জা দেখছিলো। সাজগোজ শেষ করে পেছনে তাকিয়ে দেখে জয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে উঠে জয়ার পাশে গিয়ে বসলো, জয়ার দিকে সে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে, কে বলবে এই মেয়ে সারাদিন দুনিয়া কাপিয়ে বেড়ায়? ঘুমিয়ে গেলে মানুষকে কত নিষ্পাপ লাগে। রিয়া জয়ার কপালে আলতো চুমু খেয়ে আলো নেভানোর জন্য উঠতেই জয়া রিয়ার হাত টেনে ধরলো। আর বললো,
– যার জন্য এত সাজলে তাকে না দেখিয়েই ঘুমিয়ে যাবে? আজ তো ঘুমনোর কথা নয় আমাদের।
– ওরে পাজি। জেগে ছিলি তুই?
জয়া রিয়ার হাত ধরে জোরে টান দিয়ে বিছানার উপরে ফেলে দেয়। লম্বা চুল সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে মুখ ঢেকে যায় রিয়ার। জয় আঙুল দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। আর বলে,
– হাজব্যান্ড কে কেউ তুই করে বলে? কাল মা কে বলবো, রিয়া সব জানে কিন্তু পতি ভক্তি জানে না…
সিজর্স
২০১৩ সাল
রাত ১:২১
– হাই
– হাই
– কেমন আছেন?
– জ্বি ভালো আপনি?
– আমিও ভালো
– আজ তো প্রথম কথা বলছি, আমরা কি পরিচিত হতে পারি?
– হ্যা অবশ্যই পারি।
– আমি জাফর, বিবিএ পড়ছি
– আমি মেঘ, ক্লাস এইটে পড়ছি।
– এত কম বয়সেই ফেইসবুক? বাড়িতে বকে না?
– না বকে না! আমি বেশি থাকি না ফেইসবুকে।
– আচ্ছা! কি করছো এখন?
– শুয়ে আছি আপনি?
– সুন্দর হাস্যোজ্জ্বল একটা ছেলের সাথে কথা বলছি!
– হাহাহা ভারি মজার মানুষ তো আপনি!
– না না মজা নয়, সত্যি বলছি। আচ্ছা অনেক রাত হলো বাচ্চা মানুষের এত রাত জাগতে হয় না। ঘুমিয়ে পড়ো।
– আচ্ছা আপনিও ঘুমিয়ে পড়েন।
– আবার কবে কথা হবে আমাদের?
– উম্ম? কাল রাতে?
– আচ্ছা আমি মেসেজ দেবো।
এই জাফর নামক লোকটির সাথে কথা বলে মেঘ এর তেমন ভালো লাগলো না, কেমন গায়ে পড়া স্বভাবের লোক। কিশোর মন। নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা।
মেঘ ঠিক করে নেয় লোকটাকে আর মেসেজ দিবে না। কিন্তু কি একটা টান কাজ করছিলো সে নিজেও জানে না। সে সারাদিন তার মেসেজের অপেক্ষা করছিলো। অবশেষে রাতে সে মেসেজ দিলো,
– হ্যালো বাচ্চা কেমন আছো?
– ভালো আছি, আপনি?
– আমিও আছি ভালোই
– কেমন কাটলো তোমার সারা দিন?
– বেশ ভালো, আপনার?
– কেটেছে ভালোই।
– রাতে খেয়েছো?
– হ্যা আপনি?
– না খাই নি এখনো।
– ডায়েটে আছেন?
– না না তেমন কিছু না, ক্ষুধা নেই।
এভাবেই একদিন দুইদিন করে তাদের কথা হতে থাকে, এই ছোট্ট কিশোর লোকটার মেসেজের অপেক্ষায় থাকে রোজ। আর রোজ রাতে জাফর মেসেজ দিয়ে খোজ নেয় মেঘের। সে মেঘ কে প্রতিটা মুহুর্ত মানসিকভাবে শক্তি দেয়। আর ছোট্ট মেঘ ও জাফরের মাঝে তার মনের মানুষ কে খুজে নেয়। প্রেমে পড়ে যায় জাফরের।
কোনো এক রাতে,
– কেমন আছো মেঘ?
– ভালো না।
– কি হয়েছে? বলো?
– কিছু না তুমি বলো, কেমন আছো?
– আমিও ভালো না
– কেন?
– তুমি ভালো না থাকলে আমি ভালো থাকবো কি করে?
– আমার এত কেয়ার করো কেন?
– তোমার সাথে কথা বললে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। আমার সারাদিন এর ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আমার মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
কিছুক্ষন পর,
– কি হলো, উত্তর দিচ্ছো না যে?
– মেঘ?
– হাই?
– রাগ করেছো?
– ঘুমিয়ে গেছো?
মেঘ মেসেজের উত্তর দিচ্ছে না, রাগ করে নয়, সে বড্ড অবাক হয়েছে, তার ভালোবাসার পুরুষ ও তাকে ভালোবাসে। তার জীবনের প্রথম প্রেম। পরদিন সারাদিন মেঘ একটা ঘোরের মাঝে কাটালো। সে নিজের মধ্যে নেই। তার মাথায় শুধু জাফরের মুখ ভাসছে। গতরাতের মেসেজ গুলো ভাসছে! রাতে মেঘ ফেইসবুকে ঢুকে দেখে জাফরের প্রায় ১০০ টা বেশি মেসেজ, সে ভয় পেয়ে গেছে, মেঘ রাগ করলো কিনা, মেঘ অনলাইনে আসার সাথে সাথে জাফর লিখলো,
– মেঘ এসেছো?
– রাতের জন্য দুঃখিত
– আবেগে বলে ফেলেছিলাম
– ক্ষমা করে দাও
মেঘ উত্তর দিলো,
– আমিও তোমাকে ভালোবাসি
– কি? সত্যি?
– হ্যা সত্যি!
– প্লিজ আমাকে বলো এটা স্বপ্ন না,
– না এটা স্বপ্ন না, এটা সত্যি।
– আজ আমি খুব খুশি।
– আমিই
– আচ্ছা আমরা দেখা করবো না?
– করবো, কিন্তু কিভাবে? আমি তো কিছু চিনি না!
– সমস্যা নেই, আমি তোমার স্কুলের আশেপাশে যাবো।
– কবে আসবে?
– কালকেই।
– কাল তো শুক্রবার
– তাহলে পরশুদিন।
– আচ্ছা!
শনিবারে মেঘ রিতীমত স্কুলে যায়। কিন্তু তার ক্লাসে মন বসে না, আজ সে তার রাজকুমার এর সাথে দেখা করবে। ঘড়ির কাটা যেন থেমে আছে, সময় এগোচ্ছে না কোনোভাবেই। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। ছুটির ঘন্টা বাজলো।
স্কুল গেট থেকে বের হয়েই মেঘ ফুটপাথে আলাদা একটা ফাকা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো। একে একে ছাত্ররা সব চলে গেলো, স্কুল এলাকা অনেকটা নির্জন হয়ে গেলো, কিন্তু জাফরের কোনো খোজ পাওয়া গেলো না। হঠাৎ মেঘের কাধে হাত দিয়ে একজন বলে উঠলো,“গুড আফটারনুন ইয়াং ম্যান”
মেঘের হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো, কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো। তার জাফর এসেছে। পেছনে ঘুরেই মেঘ ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, কোথায় তার জাফর? এ তো ফরমাল ড্রেস পড়ে মাথায় কলব লাগিয়ে চুল কালো করে আসা ৪৫-৪৭ বছর বয়সী লোক। মেঘ জিজ্ঞেস করলো,
– কে আপনি?
– কে হওয়ার কথা বলো তো?
– না সরি চিনলাম না আপনি কে?
– আমি জাফর। রোজ কথা হয় আমাদের! আজ দেখা করার কথা ছিলো। বাবাহ তোমাদের এখানে রাস্তায় কত জ্যাম। নাও চকোলেট এনেছি তোমার জন্য।
জাফর আরো নানান কথা বলছে। কিন্তু মেঘ কিছু শুনতে পারছে না, তার প্রথম প্রেম, তার রাজকুমার তার বাবার বয়সী? একথা মেঘ মানতে পারছে না, ছবিতে যাকে দেখেছিলো এ সেই ব্যাক্তি নয়৷ এ সেই জাফর নয় যার সাথে কথা বলতো মেঘ রোজ। বিশ্বাসঘাতকতা, অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে মেঘের সাথে। মেঘ এক দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো বাসায়। আর জাফর কথা বলতে বলতেই হঠাৎ থেমে একদিকে তাকিয়ে রইলো।
রইল।
রাতে জাফর মেসেজ দিলো,
– আমি জানি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো, কিন্তু আমি যদি তোমাকে সব সত্যি বলতাম তাহলে হয়তো তুমি আমার সাথে দেখা করতে না। আমার সাথে কথা বলতে না। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি,অনেক, আমাকে ক্ষমা করে দাও
মেঘ সে রাতে উত্তর দিলো না আর। সে সারা রাত ঘুমাতে পারে নি। সে এই কথা কোনোভাবেই মানতে পারছে না যে তার প্রথম ভালোবাসা টা এরকম হবে!
মেঘ সারাদিন এ বিষয়ে ভাবলো, পরে সে চিন্তা করলো, এই লোক যেভাবে তার খেয়াল রাখে তাতে মনে হয় না তার ভালোবাসা মিথ্যে। শুধু চেহারার জন্য এই লোক কে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না।
মেঘ রাতে জাফরকে মেসেজ দেয়,
– আর কি কি লুকিয়েছেন আমার কাছে আপনি?
– আমাকে ক্ষমা করো মেঘ আমার এটা করা ঠিক হয় নি। কিন্তু আমি নিরুপায়।
– আপনার আসল পরিচয় দিন, আসল নাম, প্রোফেশন, সব
– আমার নাম সত্যিই জাফর, আমি সিটি ব্যাংকে চাকরি করি, আমি বিবাহিত, আমার দুই সন্তান আছে। কিন্তু আমার স্ত্রীর সাথে আমার সম্পর্ক ভালো নেই। সেজন্য আমি একজন সঙ্গীর অপেক্ষায় ছিলাম, তোমাকে পেয়ে আমার সেই অপেক্ষার ঘড়ি শেষ হয়েছে। আজ পর্যন্ত যাকেই আমার আসল বয়স বলেছি সে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি তোমাকে সত্যি টা জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভয়ে পারি নি।
প্লিজ মেঘ অন্যদের মতো তুমিও আমায় ছেড়ে যেও না, আমি একা খুব, খুব একা আমি
– আমি কোথাও যাচ্ছি না। তোমার পাশেই আছি, ভালোবাসি, কাল আবার দেখা করবো আমি।
– আচ্ছা আমি সময় মতো পৌছে যাবো। তবে কাল কি তুমি স্কুল ফাঁকি দিতে পারো? আমি একটু বেশি সময় থাকতে চাই তোমার সাথে। অনেক কথ আছে। আমি জানি তুমি এখনো এটা মেনে নিতে পারো নি। আমাকে একটা সুযোগ দাও, নিজেকে প্রমান করার।
– আচ্ছা সকাল ৮ টায় স্কুলের পেছনের গেটে থাকবো আমি
মেঘের পৌছতে একটু দেরি হয়, গিয়ে দেখে জাফর দাঁড়িয়ে আছে, হাতে গোলাপ। মেঘ কে দেখে জাফর একটু হাঁসে, তারপর গোলাপ টা এগিয়ে দেয়। মেঘ মুচকি হাঁসি দিয়ে গোলাপ টা নেয়, তারপর বলে,
– চকোলেট টা কোথায়?
– সেটা গতকাল আমার ছেলে শার্টের পকেট থেকে বের করে খেয়ে ফেলেছে। সমস্যা নেই আজ তো আছি, দুপুর পর্যন্ত
– কোথায় যাবেন?
– রবীন্দ্র সরোবর?
– আচ্ছা চলেন।
– মেঘ সারা সকাল জাফরের সাথে ঘুরলো, খাওয়াদাওয়া করলো, জাফর মেঘের প্রতিটা পছন্দের খেয়াল রাখছে, মেঘ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকলো। এবার জাফর মেঘ কে বললো,
– চলো আমার সাথে
– কোথায়?
– একটা স্পেশাল জায়গা দেখাবো তোমাকে
– কিন্তু কোথায়?
– আরে বোকা ভয় পেও না, কিডন্যাপ করবো না।
– আচ্ছা, চলেন।
জাফর রিকশায় করে মেঘকে এক বিল্ডিং এর সামনে নিয়ে গেলো, সেখানে ৬ তলায় একটা ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলো।
মেঘ ভেতরে গিয়ে দেখে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ঘর সাজানো, কিছু মোম জ্বলছে, জাফর মেঘের হাত ধরে বললো,“আই লাভ ইউ মেঘ”
মেঘ এত সুন্দর আয়োজন দেখে বেশ অবাক, সে ও বললো,“আউ লাভ ইউ টু”
জাফর মেঘ কে জড়িয়ে ধরলো, মেঘ ও বাধা দিলো না, মেঘ তার সবটা উজাড় করে দিলো জাফরকে, দেখতে দেখতে ১২ টা বেজে গেলো, মেঘ কে বাসায় ফিরতে হবে।
জাফর মেঘ কে স্কুল পর্যন্ত এগিয়ে দিলো,
রাতে মেঘ মেসেজ দিলো জাফরকে,
– অসংখ্য ধন্যবাদ আজকের দিন টার জন্য।
– হুম
– কি করছো এখন?
– টিভি দেখছি।
– খেয়েছো?
– না, বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে ওদের মা, খাওয়া হলে আমি খাবো
– আচ্ছা খাওয়া হলে ঘুমিয়ে যেও,
– হুম তুমিও।
এভাবে দিন পার হতে থাকে আর মেঘের প্রতি জাফরের সেই পুরাতন টান থাকে না। জাফরের মনে যখন কাম জাগে, তখনই সে মেঘ কে নিয়ে আসে বাসায়। আগে নিজে এগিয়ে দিতো কিন্তু এখন তা ও করে না, রিকশায় তুলে দেয় শুধু।
জাফরের এরকম আচরণে মেঘের আর বুঝতে বাঁকি থাকে না যে সে মেঘের দেহ ভোগের জন্য এত আয়োজন করেছিলো।
জাফর আবার মেঘ কে ডেকে পাঠিয়েছে। মেঘ ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই জাফর ওকে টেনে বিছানায় ঠেলে ফেললো, মেঘের সামনে তার যৌনাঙ্গ মেলে ধরলো, মেঘ হাত দিয়ে তার যৌনাঙ্গ ধরার কয়েক মুহুর্ত পরই জাফর উন্মাদের মতো হয়ে গেলো,
তার যৌনাঙ্গে অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হলো, সে গালাগাল দিতে লাগলো,
– শুয়োরের বাচ্চা, খানকির পোলা, কি করছিস তুই, মাগো জ্বলে যাচ্ছে, আহহ, ইশ। তোকে খুন করে ফেলবো আমি।
ইতোমধ্যে মেঘের ও হাত চুলকে লাল হয়ে যাচ্ছে, সে দাঁড়িয়ে জাফরের আর্তনাদ দেখছে। জাফর পাগলের মতো যৌনাঙ্গে পানি ঢালছে, আর মেঘের গায়ে জিনিস পত্র ছুড়ে মারার চেষ্টা করছে। মেঘ এসব দেখে বললো,
“এটা তোমার শাস্তি, প্রতারণার শাস্তি”