প্রেম অন্তরিক্ষ


“ভাইয়া আমার সাথে তুমিও চলো না”। রাফিদের এমন কথায় বিরক্তি বোধ করলো সোহেল। আজ তোর কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান, সেখানে গিয়ে আমি কি করবো।তোমাকে আমি কলেজে যেতে বলছি না, বলছি আমাকে কলেজে দিয়ে আসতে। যদি না পারো তাহলে আমিও যাবো না। কারণ নবীন বরণ অনুষ্ঠানে না গেলেও চলবে। এই বলে রাফিদ নিজের কক্ষে চলে গেলো। সোহেল বুঝতে পারছে, যদি রাফিদ একবার বেকে বসে তবে কখনো কলেজে যাবে না। তাই সে খাওয়া ছেড়ে দৌড়ে গেল রাফিদের পিছনে পিছনে।

“লক্ষী ভাই আমার, রাগ করিস না”। তুই তো জানিস আমার কতো কাজ। কাজ ফেলে কিভাবে তোর সাথে যায়? তোমাকে কে বলেছিল জেলা শহরের কলেজে ভর্তি করাতে? হাজার বার পই পই করে বলেছিলাম মাধ্যমিক শেষ করে দোকানের কাজে লেগে পড়ি। কিন্তু তুমি আর ভাবি শুনলে আমার কথা। তোমাদের ছোট একটা ভাই, পড়ালেখা শেষ করে ইয়া বড় চাকরি করবে। এসব কথা বলতে বলতে ভেংচি কাটলো রাফিদ। আচ্ছা আমি তোকে বাস স্টেশনে ছেড়ে আসবো, এবার তো হবে। ভাইয়া বাস স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবে আর কলেজ পর্যন্ত যেতে পারবে না। দেখ ভাই তোকে কতবার করে বললাম যে, আমার অনেক কাজ আছে। আচ্ছা তোমাকে বাস স্টেশনেও যেতে হবে না , আমি একাই পারবো কলেজে যেতে। সোহেল বুঝতে পারছে রাফিদ রেগে আছে।
ভাবি একটু তাড়াতাড়ি করো না, দেড়ি হয়ে যাবে তো। ১০ টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু। হ্যাঁ ভাই করছি, তুমি খাবার টেবিলে এসো। রানু রাফিদের জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে। হ্যাঁ ভাবি দাও, কিন্তু আমি নিজের হাত দিয়ে খেতে পারবো না। তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে। রাফিদের কথায় রানুর মুখে কিছুটা হাসি দেখা যায়। তো এই ব্যাপার, আচ্ছা এখানে বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি। রানু রাফিদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আচ্ছা রাফি এখন না হয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তোমার বউ আসলে তাকে বলবে না খাইয়ে দিতে। কি যে বলো ভাবি? আমি তো বিয়ে করবো না। এমন সময় বিষম খেল রাফিদ, রানু পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় রাফিদ কে।

ভাবি একটু এদিকে আসবে। দেখতো কি পরে যার কলেজে? শার্ট না পাঞ্জাবি। তোমাকে পাঞ্জাবিতে বেশ মানায় তাই আমি বলি কি পাঞ্জাবি পরে যাও। আচ্ছা তাহলে তুমিই পছন্দ করে দাও কোনটা পরবো? রানু হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি রাফিদের হাতে ধরিয়ে দেয়। হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে রাফিদকে খুব মানায়। তাই রানু চোখের কোণ হতে একটু কালি নিয়ে রাফিদের কানে লাগিয়ে দিল। আর বললো, যেন কারো নজর না লাগে।
ভাবি আমি গেলাম। হ্যাঁ সাবধানে যেও,আর হ্যাঁ বেশি দেড়ি করো না। কলেজে পৌঁছে একটা ফোন দিও। আচ্ছা সব করবো, এবার আসি। এই বলে রাফিদ কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।


যাওয়ার পথে অনেক চিন্তা রাফিদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নতুন কলেজ কেমন হবে। তাছাড়া সে কলেজের সব কিছু ঠিক ভাবে চেনে না।করিমপুর বাস স্টেশন থেকে অম্বিকাপুর যেতে মিনিট ২৫ এর মতো সময় লাগবে। রাফিদ বাসে উঠে জানালার পাশে সিট খুঁজছে কিন্তু তার চেষ্টা ব্যর্থ হলো কারণ বাসে কোন সিট খালি ছিল না। কি আর করার তাকে দাড়িয়ে পুরো রাস্তা যেতে হলো। অম্বিকাপুর হতে বায়তুলআমান যেতে বেশি সময় লাগে না। অম্বিকাপুর চত্বর হতে রাফিদ রিক্সা করে বায়তুলআমান গেল। শতবর্ষী রাজেন্দ্র কলেজ বিশাল এরিয়া নিয়ে কলেজের ক্যাম্পাস।এ কলেজের একটা ইতিহাস আছে। ইংরেজ আমলে নাকি অম্বিকা চরণ মজুমদার নামে এক জমিদারের হাতে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা। কলেজে ডুকতেই রাফিদের মুখ মলিন হয়ে গেলো। এ কলেজে তার পরিচিত কেউ নেই। নতুন সব কিছুতে রাফিদ নিজেকে নিজে বোকাবনে নিয়ে গেল। নবীণদের বরণ করার জন্য কলেজে প্রতিটি বিভাগে যাকযমক আয়োজন করা হয়েছে।
রাফিদ সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ক্লাসে ঢুকে পড়লো। তাদের ক্লাসও জমকালো আয়োজনে সাজানো হয়েছে। বেলুন, রঙিন কাগজে পুরো ক্লাস রুমে একটা নতুনত্বের ভাব ফুটে উঠেছে।
প্রথমে সকল প্রফেসরদের পরিচয় পর্ব, তার পর কলেজ সম্পর্কে আলোচনা,তারপর ফুল দিয়ে নবীন দের বরণ করে নেওয়া। রাফিদ বসে বসে ভাবছে আর রাগছে।কেন যে মরতে এখানে এসেছে? এতো মানুষ তবুও সে কাউকে চিনে না। এদিকে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের আলোচনা করা হচ্ছে, বাঙালি অর্থনীতিবীদ অমর্ত সেনের কথাও বলছে। অর্থনীতিতে তার অবদান সম্পর্কে জোরালো এক বক্তব্য দিল বিভাগীয় প্রধান। কিন্তু কিছুতেই রাফিদের মন বসছে না। আলোচনা শেষ কলেজের বর্ষীয়ান ছাত্র ছাত্রীরা গান, কবিতা পরিবেশন করলো। বেশ কয়েক জনের সাথে রাফিদের পরিচয় হলো।

কলেজের পশ্চিম দিকে একটা অর্ধ শতাব্দীর কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ।অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী সেখানে বসে আড্ডা, খোশগল্প করে। রাফিদ একটু দূড়ে দাড়িয়ে দেখেছিল। হঠাৎ তার কাঁধে কারো হাত পড়তেই সে পিছন ফিরে তাকায়। তাকাতেই সে দেখতে পেলো নাইম কে। রাফিদ কে দেখে সে হেসে বললো, কি ব্যাপার এখানে মনমরা হয়ে দাড়িয়ে আছো কেন? রাফিদ একটু ইতঃস্তত হয়ে বললো, না মানে কলেজে নতুন তো তাই আর কি।
– ও আচ্ছা এই ব্যাপার।
– হুম।
– তাহলে চলো আজ তোমাকে পুরো কলেজ ঘুরিয়ে দেখায়।
এই বলে নাইম রাফিদের হাত ধরে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখালো।
– আচ্ছা রাফিদ তুমি কোন ডিপার্টমেন্টে?
– অর্থনীতি।আপনি?
– আমি উদ্ভিদ বিদ্যা।
– ভালো বিষয়।
-আর তোমারটা বুঝি ভালো বিষয় না। শোনো রাফিদ যে বিষয়ে আমরা পড়ালেখা করি না কেন সব বিষয় ভালো ।
নাইমের কথায় রাফিদ মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
আচ্ছা রাফি তোমাকে ফেইসবুকে পায় না কেন? রাফিদ একটু লজ্জাবোধ করে বললো, আসলে আমি ফেইসবুক ব্যবহার করি না। রাফিদের কথা শুনে নাইম একটা অট্ট হাসি দিল। তুমি এই যুগের ছেলে হয়ে ফেইসবুক ইউজ করো না। তুমি কি জানো বর্তমান সময়ে ফেইসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। রাফিদ শুধু আস্তে করে বললো, হুম।
– আচ্ছা তোমার ফোনটা আমাকে দাও তো।
– কেন নাইম ভাইয়া?
– তোমাকে একটা ফেইসবুক একাউন্ট খুলে দিচ্ছি। তুমি চাইলে তোমার সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
– কিন্তু নাইম ভাইয়া।
– কোন কিন্তু না, তুমি একবার ব্যবহার করে দেখো, আমার বিশ্বাস যে তোমার ভালো লাগবে।
– ঠিক আছে।
নাইম ফেইসবুক একাউন্ট খুলে বেশ কয়েক জনের সাথে রাফিদের বন্ধুত্ব করে দিল।
নাইম এবার সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। রাফিদের সাথে তার এলাকায় ক্রিকেট খেলার সময়। রাফিদের গ্রামের পাশের গ্রামে নাইমের বাড়ি। (এখানে উল্লেখ্য যে নাইম একজন সমকামী)।সে নিজের কাম চরিতার্থ করার জন্য যে কোন ছেলেকে ব্যবহার করতে পারে।
– রাফিদ তুমি কি বাড়ি থেকে রোজ কলেজে আসবে? না কি হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছো।
– না ভাইয়া, তেমন কিছু ভাবিনি। তবে যদি নিয়মিত ক্লাস করার প্রয়োজন হয় তবে ভাইয়ার বাসা থেকে যাওয়া আসা করবো।
– তোমার ভাইয়ের বাসা কোথায়?
– সদর হাসপাতালের পেছনে ।
– ওহ। তাহলে তো বেশি দূরে না।
– হুম।
রাফিদের মনে একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো, যায় হোক নাইম ভাইয়ার জন্য পুরো কলেজ ক্যাম্পাস টা ঘুরে দেখা হলো।

আচ্ছা রাফিদ আজ তাহলে আসি। আমি কাছেই একটা ছাত্রাবাসে থাকি, দরকার পড়লে আসবে কিন্তু। নাইমের কথায় রাফিদ তাকে অনেক ধন্যবাদ জানালো। আচ্ছা রাফি পরে ফেইসবুকে কথা হবে। আস্তে আস্তে নাইম অদৃশ্য হয়ে গেলো।


বাড়িতে এসে রাফিদ ফ্রেশ হয়ে ছাদে বসে আছে। হঠাৎ তার মনে পড়লো নাইম ভাইয়া তাকে ফেইসবুক একাউন্ট খুলে দিয়েছে। সে দৌড়ে নিজের ঘরে যায়। পেছন থেকে রানুর ডাক শোনা গেল, রাফি কি হলো? এভাবে দৌড় দিলি যে।ওহ্ ভাবি তুমিও না। একটু আকটু দৌড় ঝাপ না দিলে যে শরীর অকেজো হয়ে যায়।
রাফিদ হাতে ফোন নিয়ে বসে আছে। ফেইসবুকে ঢুকতেই সে দেখতে পেলো অনেক গুলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, সাথে কিছু মেসেজ। সে মেসেজ চেক করলো।
সেখানে নাইম প্রথম তাকে মেসেজ করেছে। ওপাশ থেকে
– হাই, কি করছো?
এপাশ থেকে,
-শুয়ে আছি। আপনি?
– এই তো একটু হাটছি।
– দুপুরের খাওয়া হয়েছে।
– হুম। আপনার?
– হ্যাঁ হয়েছে। তো কেমন লাগছে ফেইসবুক?
– সত্যি বলতে অনেক ভালো।
– আমি বলেছিলাম না ভালো লাগবে।
এভাবে রাফি নাইমের সাথে রোজ কথা বলতো। একটা সময় রাফি বুঝতে পারলো সে নাইমকে ভালোবাসে। কিন্তু কখনো কি সে নাইমকে বলতে পারবে।
দেখতে দেখতে সময় পার হয়। একদিন নাইম রাফিদকে বলেই ফেলে সে তাকে ভালোবাসে। তাই রাফিদ যদি শহরে যায় তবে তার সাথে বেশি সময় কাটাতে পারবে।
নাইমের কথা মতো রাফিদকে তার বড় ভাইয়ের বাসায় পাঠানো হলো। এখন রাফিদ আর নাইম চুকিয়ে প্রেম করে।

ফোনটা বাজছিল। রাফিদ মুখ তুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। দুইটা দশ। অবশ্য এ ফোনটা এখন ওর জন্য নয়। ওর বন্ধুরা কেউ এই সময়ে ফোন করবে না। বিপদ আপদ আলাদা কথা। কারণ সবাই জানে রাফিদ দুপুরে মরার মতো পড়ে ঘুমায়। আধ ভাঙ্গা ঘুমে ফোনের শব্দটা তার কাছে অসহ্য লাগছিল।
ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করলো রাফিদ।
– হ্যালো
ওপাশ থেকে খুব যত্নে কথা আসলো।
– কে রাফিদ?
– হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে?
– আমি নাইম। তুমি আমাকে চিনবে না। আমার বাড়ি তোমার পাশের গ্রামে গোপালপুর।
– তো কি জন্য ফোন করেছেন সেটা বলুন?
– আচ্ছা দরকার বিধায় তো ফোন করেছি।
– কি দরকার?
– আসলে আমাদের এখানে ট্রিমে ক্রিকেট খেলা হয়।
– তো,,,,,
– আমার ট্রিমে তোমার ওখানকার লিটন ভাইয়া ছিল। তার পরিক্ষার জন্য সে ফাইনাল খেলায় থাকতে পারবে না।
– তো বুঝতে পারছি তার হয়ে আমাকে খেলতে হবে।
-হ্যাঁ। এর জন্যই তোমাকে ফোন করা।
– হ্যাঁ বলুন কখন, কোথায় যেতে হবে?
– আগামীকাল সকাল দশ টা, গোপালপুর স্কুল মাঠে।
আচ্ছা বলে রাফিদ ফোন কেটে দিল। পরদিন যথা সময়ে রাফিদ স্কুল মাঠে হাজির হলো। সেখানে তার অনেক স্কুল বন্ধু ছিল। সে খেলায় রাফিদের জন্য নাইমের ট্রিম জয় লাভ করেছিল। আর সেখা থেকেই রাফিদের সাথে নাইমের পরিচয়।

অপরাহ্ন সাড়ে পাঁচটায় কোচিং ক্লাস ছুটির পর রাফিদ অকারণে একটা সরু রাস্তা দিয়ে হেটে চলছে। গ্রাম থেকে আসার পর শহুরে পরিবেশে রাফিদের নিজেকে বেখাপ্পা মনে হয়।
হঠাৎ তার হাতে একটা টান পড়ে। তাকিয়ে দেখে নাইম।ওহ্ তুমি , আমি তো ভাবলাম,,,,,,,, রাফিদকে থামিয়ে নাইম বললো, কি ভয় পেয়েছো? হুম একটু একটু । আচ্ছা রাফিদ আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি। রাফিদ একটু হাসলো।মন যাকে দিতে পেরেছি শরীর দিতে পারবো না। এমন টা আমি কখনো শুনিনি। ওমনি নাইম রাফিদকে জড়িয়ে ধরলো।
– রাফিদ চলোনা আজ একটু ঘুরে আসি।
– এখন , ভাইয়া চিন্তা করবে না।
– তুমি ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিও।
নাইমের কথায় রাফিদ রাজি হয়ে যায়। রাফিদ এই প্রথম তোমাকে নিজের মতো করে কাছে পেলাম। রাফিদ কোন কথা বলে না। কারণ তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।
– আচ্ছা নাইম আমরা কোথায় আছি।
– কেন ভূতের বাড়ি।
– মানে। তাহলে তুমি থাকো আমি গেলাম। আমার আবার ভূতে খুব ভয় করে।
– আরে বাবা না। সবাই এটাকে ভূতের বাড়ি বলে। মনের মানুষের সাথে একান্তে সময় কাটানোর জন্য সবাই এখানে আসে।
– ও তাই বলো।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। চারদিকে জোনাকি পোকার মিটি মিটি আলো জ্বলছে। একটা সময় নাইম রাফিদের কপালে, চোখে, মুখে, ঠোঁটে চুম্বনের আবেশে ভরিয়ে দিলো। দুজনের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জেগে উঠলো। রাফিদ নাইমকে বাধা দিল, কিন্তু নাইম তার বাধা মানলো না।
– কি করছো নাইম?
– একবার করে দেখো ভালো লাগবে।
– কিন্তু নাইম আমি তো এ সবের জন্য প্রস্তুত না।
– এ সবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় না । এসব আপনা আপনি হয়ে যায়।
– কিন্তু নাইম,,,,,,
– কোন কিন্তু না। তুমি জানো না ” প্রেমের পূর্ণতা পায় কামে”।
নিজের কাম চরিতার্থ করার জন্য রাফিদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নাইম তাকে ব্যবহার করে।

নিজের কক্ষে দরজা বন্ধ করে বসে আছে রাফিদ। মনে মনে ভাবছে, আমি ভুল কিছু করলাম না তো। না না, এটা আমি কি ভাবছি? নাইম আমাকে ভালোবাসে, আর আমার সব কিছু তো নাইমের জন্য।
আজ সারাদিন একবারের জন্যও নাইম তার সাথে কথা বলেনি। তাই রাফিদ নিজে থেকে নাইমকে ফোন করলো। কিন্তু নাইম ফোনটা অযত্নে কানে ধরে বললো, যখন তখন তোমাকে ফোন করতে নিষেধ করেছি না।
নাইমের এ কথায় রাফিদ একটু কষ্ট পেল। তাই সেও আর কথা বললো না ।
এর পর বেশ কয়েকটা দিন নাইম রাফিদের সাথে কোন যোগাযোগ করে নি।
রাফিদ হাজারো চেষ্টা করে একবার নাইমের সাথে কথা বললো। কিন্তু কোন কথা বললো না, শুধু ভূতের বাড়িতে দেখা করতে বলেছে।
সন্ধ্যা সাতটা, রাফিদ ভূতের বাড়িতে বসে আছে। কিন্তু আজ সে একা তার কোন ভয় লাগছে না । নাইম তাড়াহুড়ো করে সেখানে এলো।
– কি বলবে বলো?
– তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো নাইম?
– কেন তোমার কোন সন্দেহ হয়?
– হ্যাঁ সন্দেহ হয়। কারণ আমার দেহের স্বাদ নেওয়ার পর তুমি কেমন আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
– হ্যাঁ তোমার সন্দেহ ঠিক। আমি একটা প্লে বয়।
নাইমের কথা শুনে রাদিফ হাটু গেড়ে বসে পড়লো। নাইমের সামনে হাত জোর করে বললো, নাইম আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে যেওনা।
রাফিদের কথায় নাইম একটা হাসি দিয়ে বলে, তোমার এসব ন্যাকামি দেখার সময় আমার নেই।
রাফিদ কে রেখে নাইম সেখান থেকে চলে যায়।

ছয় মাস পর। হঠাৎ একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে রাফিদের সাথে নাইমের দেখা।
নাইম দূর থেকে দেখলো রাফিদ ও তার কিছু বন্ধু তামাশার ছলে হাসাহাসি করছে।
রাফিদে হঠাৎ চোখ আটকে গেল নাইমের দিকে। নাইম অপলক তাকিয়ে আছে তার পানে। বন্ধুদের কাছে বাহানা দিয়ে সেখানে থেকে চলে গেলো রাফিদ।
নাইম পেছন থেকে বেশ কয়েক বার রাফিদ কে ডাকলো। কিন্তু রাফিদ তার ডাকে সারা দিল না। নাইম রাফিদ কে লক্ষ্য রেখে দ্রুত এগিয়ে গেল।
– রাফিদ প্লিজ! একবার আমার কথাটা শুনো।
– আপনার কোন কথা শুনবার ইচ্ছে আমার নেই।
– রাফিদ প্লিজ! একবার দাড়াও।
নাইমের অনুনয়ে রাফিদ তার কথা শুনবার জন্য রাজি হলো।
– কি বলবেন? বলেন।
– সময়ের ব্যবধানে মানুষের জীবনে কালো
মেঘের আধার নামে, সেটা তুমি জানো।
-হুম। আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।যেদিন আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন সেদিন থেকেই কালো মেঘের আধার আমার জীবনে নেমে এসেছে।
– রাফিদ আমি কখনো ভাবতে পারিনি সে আধার আসবে আমার জীবনে।
নাইমের কথা শুনে রাফিদের মুখে একটা হাসির ঝিলিক দেখা দিল। কিন্তু পরক্ষণেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
– তুমি তো দেখছি বেশ ভালো আছো রাফিদ।
– আমি আমার মতো আছি। তবে ভালো আছি কিনা বলতে পারবো না।
– তা কেন হবে? দেখলাম কলেজ ক্যাম্পাসে খুব হাসছো।
– মুখে মিছে হাসি নিয়ে এখনো বেচে আছি। আর আমার এই হাসির কারণ তুমি জানো না তা।
– আচ্ছা রাফিদ আমারা কি আবার আগে,,,,,,, ।
– চুপ করুন। আপনার মুখ থেকে আর একটি কথাও শুনতে চায় না।
– কিন্তু কেন?
– আপনার মতো মানুষের কাছে ভালোবাসা মানে, নিজের যৌন প্রবৃত্তির খায়েশ মেটানো। নগ্ন দেহের স্বাদ নিয়ে তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া। আপনার মতো মানুষের মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না।
– রাফিদ আমি আর আগের মত নেই।
– ঢের হয়েছে। আপনার জন্য আমি আমার নিজের স্বত্বা কে বিসর্জন দিয়েছি। আপনার কাছে হাত জোর করে বলছি, জীবনে কখনো আমার সামনে আসবেন না।
রাফিদ আর কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে হেটে চলছে। নাইম হাটু গেড়ে মাটিতে বসে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। আকাশ পানে অনেক পাখি শূন্য অন্তরিক্ষে পাখা মেলতে মেলতে অজানাতে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নাইমের প্রেম অন্তরিক্ষে বুক থেকে রাফিদ নামের নক্ষত্রটি হারিয়ে গেছে।

লেখকঃ শুভ্র মেঘ

প্রকাশেঃ সাতরঙা গল্প

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.