
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি গল্প।কারো জীবনের কাহিনীর সাথে মিলে গেলে তা সম্পূর্ণ কাকতালীয়)
********
১।২০১৭ সাল।জানুয়ারি মাস চারদিকে কনকনে ঠাণ্ডা। তবে ঢাকা শহরে তা বুঝা বরো দায়। ঢাকার নামকরা স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে অংকন।ক্লাসে অন্যতম একটি সহজ সরল,শান্তশিষ্ট স্বভাবের একটা ছেলে। ৪ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। সবসময় চুপচাপ থাকে। অংকন এর লাইফ দৈতস্বত্বায় বন্দী!
সে এই জীবনে আসে ২০১৫ সালে।তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।২বছর হয়ে গেছে!তাদের স্কুলে প্রতিবছর ই নতুন নতুন শিক্ষক এর আগমন ঘটে।আর এমনই একজন শিক্ষক এর আগমন ঘটে যাকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায় অংকনের। লাভ এট ফাস্ট সাইট।হয়তো হতে পারে।
********
২।শিক্ষকের নাম সায়ন। কি যেন এক আকর্ষণ। তার হাসি, তার কথা……… ।সায়ন স্যার ছিলেন ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট এর।কিন্তু দুর্ভাগ্য যে,অংকন দের ক্লাস উনি নেন না।একদিন প্রক্সি ক্লাসে উনি আসেন। আয়ত চোখ , শ্যামল বরন গায়ের রঙ , একহারা গড়ন। মনে মনে বলে সে ” সায়ন স্যার , কে বলেছিল আপনাকে এতটা সুদর্শন হতে ????মনে মনে ভাবতে থাকে সে!ধুর নাহ!না না! এরকম হতে পারে না!স্যারকে নিয়ে এসব কল্পনা করা ঠিক না! কিন্তু মন বরো অবাধ্য । ফেসবুকে সার্চ দিল স্যার নাম দিয়ে। পেয়েও গেল! খুব খুশি হয়েছে সে। দুরু দুরু বুকে স্যার কে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিল। মনে মনে বলছিলো ,”আল্লাহ,স্যার যাতে রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে”!
অংকনের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৯:৪০ থেকে।আর সায়ন স্যার ক্লাস নেয় ৭ম শ্রেণির “ক” শাখায়।প্রতিদিন স্যার ওদের ক্লাস রুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যেত।প্রতিদিন দেখত স্যারকে!
এবার আসি স্যারের প্রসঙ্গে!
********
৩।জাহিদ হাসান সায়ন।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজিতে অর্নাস এবং মাস্টার্স শেষ করে অংকন দের স্কুলে জয়েন করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে।তার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়।সায়ন শ্যামলা বর্ণের দেখতে।উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। আড়ালে আবডালে শুনা যায় যে স্যার কে নাকি অনেক মেয়ে প্রপোজ করেছে ।কিন্তু সে সবগুলো কেই রিজেক্ট করে দিত। ভাবতো কিশোরী আবেগে দোটানায় দোলা মন । এদিকে আজ ফেসবুকে ঢুকা হয়নি তার । লগ ইন করার পর দেখল ১টি রিকুয়েস্ট! দেখল তার স্কুলের এক স্টুডেন্ট । নাম টা তার খুব ভাল লাগল!
“অংকন”! যার কাজ চিত্রায়িত করা। জীবনের নানা দিকের ক্যানভাস বন্দি সময় । এদিকে সারাদিন স্কুল করার পর ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরে অংকন । যাপিত জীবন ও কিছু দীর্ঘশ্বাস । আরামদায়ক আলস্যে গা এলায় বিছানায়। ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করে সে অভ্যাস বশত । দেখল নোটিফিকেশন এসেছে! । স্যার এর একসেপ্ট। সাথে সাথেই নক দিল স্যার কে!
অংকন:আসসালামু আলাইকুম স্যার!কেমন আছেন???
রিপ্লে যেন আসেই নাহ। অস্থির লাগে তার। ১০ মিনিট অপেক্ষার পর প্রথম বার্তা
সায়ন:Hi… valo…u???
অংকন:জ্বী স্যার ভাল আছি।কি করছেন স্যার????
সায়ন:কিছু না।তুমি???
অংকন:আমিও।
এরপর থেকে প্রতিদিন অংকন স্কুলে গিয়ে স্যারকে দেখে।যদিও তাদের ক্লাস নিত না।তবুও সবসময় দেখার চেষ্টা করে যেত। অনেকটা বাসায় মা না থাকলে চুরি করে মিষ্টি খাওয়ার মত। এভাবে টুকটাক কথায় দিন কাটে ।
তারপর হঠাৎ একদিন সায়নের ফেসবুক আইডি টি বন্ধ হয়ে যায়। যেন সে হারিয়ে গেলো। যে মানুষ গুলো যত তাড়াতাড়ি আসে তারা না কি ততো তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়। অনেকটা স্যার এর মতো।
******
৪। মানুষ মানুষকে ভুলে যায়। এ নিয়মে যেন দিন কাটে । অনেকদিন পর অংকন কি মনে করে আবার সায়নের নাম লিখে সার্চ দিলো । আর সাথে সাথেই চলে এল একগাদা অপরিচিত মানুষ । তবে সে অপরিচিতের ভিড়ে আকাঙ্খিত মানুষটা ঠিক ই আছে । সায়ন নতুন আইডি খুলেছে।সাথে সাথে রিকুয়েস্ট দিল অংকন।এদিকে অংকনের টেস্ট এক্সাম শুরু হয়ে গেছে।মোটামুটি ভালই হচ্ছে এক্সাম।এক্সামের জন্য অংকন ফেসবুকে বেশি সময় দেয় না।তারপরও তার মন মানে না!সায়ন কে সে মেসেজ দিয়েই ফেলল!
অংকন:হাই স্যার!কেমন আছেন স্যার??
সায়ন’:You should concentrate on ur study.Not on Facebook.
মন খারাপ হয়ে গেল অংকনের।সায়ন স্যার কি তবে ওর মেসেজে বিরক্ত হয়??
তারপরও রিপলে দিল,
অংকন:হ্যা স্যার।তারপরও একটু আসি।ফ্রেন্ড দের খোজঁ খবর নিতে।দোয়া করবেন স্যার।
সায়ন:I love u from the core of my heart….!
মেসেজ চেক করার পর অংকনের মনের মধ্যে অজানা কারনে এক শিহরণ বয়ে গেল। সাধারন একটা বার্তা তবু কেনইবা মন ঝটপট করে? কিসের এতো চাওয়া ?
এরপর থেকে অংকন নিয়মিত পড়াশোনা করতে লাগল।দেখতে দেখতে টেস্ট এক্সাম ও শেষ।রেজাল্ট ও দিয়ে দিল।রেজাল্ট এর দিন প্রচন্ড ভয় লাগছিল অংকনের।ফেল করলে বাড়িতে প্রচন্ড রাগারাগি করবে।তার হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগল খুব দ্রুত।স্কুলের কাছাকাছি যেতে আরও বেড়ে গেল।স্কুলের ভেতর গেল সে।গিয়ে দেখল তার ক্লাসের অনেক বন্ধুরাও পাশ করেছে।এরপর আস্তে আস্তে গিয়ে দেখল তার রেজাল্ট। সে পাশ করেছে!মনে মনে সবার আগে আল্লাহ কে সে ধন্যবাদ দিল।শুকরিয়া আদায় করল তার কাছে।তারপর অন্য ফ্রেন্ড দের খোঁজ খবর নিল।তার ক্লাসের সবাই পাশ করেছে।অন্যদিকে উপর থেকে তাদের শিক্ষক রা তাদের আনন্দ দেখছে।সেই সাথে তার ভালবাসার মানুষ সায়ন ও আছে।অংকন অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে সায়নের দিকে।সায়ন ও তাকিয়ে আছে তার দিকে।অংকন মনে মনে বলতে লাগল,”আজ স্যারকে নক দিব”
********
৫।রাতে নক দিল সায়ন কে।কিন্তু সে অনলাইনে ছিল না।মেসেজ দিয়ে রাখল অংকন।
অংকন:হাই স্যার।কেমন আছেন স্যার???
পরদিন সায়ন তার মেসেজ এর উত্তর দিল।
সায়ন:I saw u yesterday!
অংকন স্কুল থেকে ফিরে রাতে দেখল সায়ন মেসেজের উত্তর দিয়েছে।খুশিতে গদগদ হয়ে লিখল
:আমিও গতকাল আপনাকে দেখেছি স্যার।
:রেজাল্ট এর কি অবস্থা??
:পাশ করেছি স্যার।দোয়া করবেন
:Congratulations!
:Thank u sir!
:U’re also welcome!
good night.
:good night sir!
২-৩ দিন পর অংকন মেসেজ দিল সায়ন স্যার কে।
:স্যার কেমন আছেন??
স্যার কয়েকদিন পর চলে যাব স্কুল ছেড়ে।আপনাকে খুব মিস করব।আর দেখতে পারব না আপনাকে।
রাতে সায়ন অনলাইনে আসার পর অংকনের মেসেজ দেখল
এবং সে রিপলে দিল
: কেন দেখা হবে না?? এ ইন্টারনেট এর যুগে দূর বলে কি কিছু আছে।
I will talk with u…..and give ur address!
স্যার এর নাম্বার ও ঠিকানা নেয়া হলো। যেন তা আশাতীত পাওয়া। স্যার বললঃ
:xm দাও ভাল মত।এক্সামের পর আড্ডা দিব তোমার সাথে। Get A+ first.
:জ্বী স্যার।অবশ্যই।দোয়া করবেন স্যার।
:I love u from core of my heart!
:Me too sir.I love u so much sir!
:।Good night.Hv a sweet dream!
:Good night
মনে এক অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করছে অংকনের। কিছু রঙ্গিন সুতায় স্বপ্ন বুনে গায়ে জড়াবে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল অংকন।
***********
৬।কয়েকদিন পর আবার নক দিল।কিন্তু সায়ন রিপলে দিল না।কোন কিছু মনে করল না অংকন।ভাবল সে হয়ত ব্যস্ত কোন কাজে! ভাবল আরো কয়েকদিন পর দিই!এভাবে দেখতে দেখতে ১৫ দিন পর আবার অংকন নক দেয় সায়ন কে।কিন্তু কোন রিপলে আসল না ওপাশ থেকে।মন খারাপ করে বসে থাকে সে।ভাবল আবার কয়েকদিন পর দিবে। ১০ দিন পর আবার নক দেয়।কিন্তু তাতেও কোন লাভ হল না।অংকন বুঝতে পারল সায়ন তাকে ইগনোর করছে।কিন্তু যতদিন স্কুলে থাকবে ততদিন সে কিছুতেই সায়ন স্যারকে ভুলতে পারবেনা।এজন্য অপেক্ষা করছে তাদের স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানের।অনুষ্ঠান টা হলেই সায়ন স্যার কে ভুলা যাবে।
২৫ জানুয়ারি, ২০১৮।অংকনের স্কুলে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান। সবাই আজ সুন্দর ভাবে এসেছে।সবাই আজ পাঞ্জাবী পরে এসেছে।অংকন ও পরেছে।সে লিলেন কাপড়ের কালো রংয়ের একটা পাঞ্জাবী পরেছে।অবাক করা বিষয় হল সেদিন সায়ন স্যার ও একই রকম পাঞ্জাবী পরেছে।অংকন ব্যাপারটা খেয়াল করল আর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা চলে এল।২ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের এক্সাম।ভাল মতই দিচ্ছে সে প্রতিটা এক্সাম।এক্সামের কারনে সায়ন স্যার কে অনেকটাই ভুলে গেছে সে।ভালই হয়েছে!যাকে সে কোনদিন পাবে না,তার জন্য হাহাকার করে কি লাভ!যে জিনিস অধরা ই থেকে যাবে তা পাওয়ার জন্য বৃথা চেষ্টা করে কোন লাভ নেই।বরং সামনের দিকে এগোতে থাকা উচিত।
***********
৭।মে মাসে অংকনের রেজাল্ট দিল।অংকন অনেক ভাল রেজাল্ট করেছে।রেজাল্ট এর দিন সায়ন স্যার ফেসবুকে নক দেয় তাকে,
-Result ki???
-sir valo na!
-আরে বল।তুমি তোমার কর্মের ফল পাচ্ছ।তা ভাল হোক বা মন্দ মেনে নাও।কারন এটাই তোমার ভাগ্যে লেখা ছিল।বল।রেজাল্ট কি???
-স্যার আমি গোল্ডেন এর আশা করেছিলাম।কিন্তু আসে নি।এ প্লাস এসেছে।
-Wow….congratulations!
-Thank u sir!
কখনো ভাবতে পারে নি এইভাবেই শেষ হবে আলাপচারিতা। তার একটা বিকেল পাওনা ছিলো স্যার এর কাছে। তা আর এজীবনে পাওয়া হলো নাহ।
***********
৮। ভর্তি পরিক্ষার জন্য সে ভালো করে পড়াশোনা করে। ভুলে যেতে চেষ্টা করে সেইসব অতীত। অবশেষে সে ভালো একটা ভার্সিটি তে চান্স পায়। পড়াশোনা, প্রাইভেট টিউটর, ল্যাব,কুইজ,ক্লাব মিটিং ইত্যাদির তাড়নায় এখন অংকন ভুলেই গেছে সায়ন স্যারের কথা। এখন আর মনে পড়ে না।না পড়লেই ভাল।এখন সে অনেক কিছু বুঝতে পারে।বাস্তবতার আড়ালে হারিয়ে গেছে সেইসব আবেগ । সেই ভাললাগা , সেই সময়।
কলেজের উঠার ৩ মাস পর শুনল সায়ন স্যার বিয়ে করেছে।ফেসবুকে তার এক রিলেটিভ তাকে ট্যাগ করে পোস্ট দিয়েছে,ছবি আপলোড করেছে।স্যার কে বরের বেশে খুব সুন্দর লাগছিল।স্যারের স্ত্রীও বেশ ভাল দেখতে।
ভেতর থেকে এক চাপা দীর্ঘশ্বাস আসল অংকন এর। যা না পাওয়ার তা নিয়ে আশা করে আর কি লাভ। কোনো কোনো অলস বিকেলে সে শহরের এক অচেনা প্রান্তে চলে যায়। যেখানে তার সঙ্গি শুধু সেই। বেলুয়ারি রুদ্দুর যখন এই শহরে আছড়ে পড়ে , তখন তার হুহুমনা মন বৈরাগ বহেমিয়ান হয়ে ছুটে চলে কোনো এক প্রাচের নগরীতে। তার মতো আরো অনেক বিরহী প্রেমিক না পাওয়া ভালবাসার কষ্ট নিয়ে সেই নগরের পথে হাটে। তারা কেউ কাউকে চেনে না । জানে না। টালমাটাল পায়ে তারা কক্ষচ্যুত নিসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে হাজারো ছায়াপথ পাড়ি জমায়। তারা কখনো থামে না, থামে না……………………………
******************সমাপ্ত******************** —
লেখক: অন্তিমে মিষ্টু
প্রকাশেঃ সাতরঙা গল্প