
১.
আইডিতে স্ক্রল করতে করতে হুট করে খেয়াল করলাম একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে।”সুপর্না হক”
একটু অবাক আর বিরক্ত হয়ে আবার হোম পেইজে ঢুকলাম।সচরাচর আমি তেমন কারো সাথে কথা বলিনা এই আইডিতে।আমার আরেকটি আইডি আছে।যেটাকে আমার সমকামী আইডি বা ফেইক একাউন্ট বলি।সেটার নাম “সন্ধ্যা রাজা”।তবে সেখানে আজ আর যাইনি।রিয়েল আইডিতে ঢুকেই হোম পেইজ স্ক্রল করছিলাম।বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবদের স্ট্যাটাস,ডিপি,কভার,মা দিবস কেন্দ্রিক পোস্ট দেখতে দেখতেই সময় কাটছিলো।টার্ন অফ চ্যাটে থাকায় কারো মেসেজ ও আসেনি।
আসলে আমার কেমন যেন মনেহয় এরা কেউ আমার আপন না;এদের মধ্যে আমি ঢুকতে চেস্টা করেও বড় ব্যার্থ।অথচ একটা সময় আমিও এইখানে কত সময় দিতাম!নিজেকে কিভাবে এক্সপোজ করা যায় তার সবটুকু চেস্টাই করতাম।আজ দু বছরে তেমন কোন পোস্ট দেইনি;ইনবক্স ও খাঁ খাঁ করছে।
মাঝে মধ্যে বন্ধুরা ফটো পোস্ট করে আমায় ট্যাগ করে কারন আমিও সেই ফটোগ্রাফির কিছু অংশ জুড়ে থাকি;আর তা দিয়েই আমার টাইম লাইন ভর্তি।
.
মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখলাম সেই আইডি থেকে মেসেজ রিকোয়েস্ট শো করছে।একটু কৌতুহলী হয়ে মেসেজ টা চেক করতেই দেখি”ভাইয়া আপনি দেখতে খুব সুন্দর!”
মানুষকে কেউ প্রশংসা করলে তার প্রতি ভালোলাগা যাগে।আমার ক্ষেত্রেও তেমনটা হলো।একটা হাসি দিয়ে রিপ্লাই দিলাম”ধন্যবাদ আপনাকে”
ও পাশের মানুষটিও দ্রুত উত্তর দিতে শুরু করে…
কেমন আছি,বাসার সবার কি খবর টুকটাক কথা হচ্ছিলো।এমন সময়েই মানুষটির আর খবর নাই।না বলেই অফ লাইনে চলে গেলো।
আমি সমকামী হলেও এই সুপর্নার মায়ায় পরেছি মনেহলো।কাম বাসানা হীন এক মায়া যাকে বলে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা কেউ কি প্রকৃত সমকামী? না কি সবাই অন্তরালে উভকামী সত্বা লালন করি?
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে তার আইডিটা ঘুরে আসলাম।নাহ!তেমন কিছুই নাই।কিছু ছেলে ফ্রেন্ড,মেয়েদের আরো ফেইক আইডির সাথে এড আছে আর প্রোফাইলে একটা মডেলের কনে সাজা ছবি।
কিজানি ও পাশের মানুষটি দেখতে কেমন!
.
ভার্সিটি থেকে সোজা চলে গেলাম টিউশানে।দুটো ভাইবোন পড়ে আমার কাছে।মেয়েটি ক্লাস নাইনে আর ছেলেটা এইটে।বাচ্চাদুটো খুব মিশুক।তাদের মায়ের ও অমায়িক ব্যবহার।দুটোতে সারাদিন ঝগড়া করে;আমার সামনেও বাদ যায় না।ওদের থামাতেই মাঝে মধ্যে আমার হিমশিম খেতে হয়।
.
বাসায় ফিরে খেয়ে নেই।এখন রাত সাড়ে আটটা বাজে।শরীর খুব টায়ার্ড লাগছে।”সন্ধ্যা রাজা”আইডিতে কিছুক্ষন থাকার পর মনে পরলো সুপর্নার কথা।রিয়েল আইডিতে লগ ইন করেই দেখলাম তার কিছু টেক্সট জমেছে।
সকাল সাতটার সময়”গুড মর্নিং”
সন্ধ্যায়”শুভ সন্ধ্যা ভাইয়া। আপনাকে লাল টি-শার্টে বেশ মানায়”
এবার একটু অবাক হলাম।মানুষটি আমায় চেনে।ভার্সিটির কেউ নাতো!তিঁথিও হতে পারে।যা মেজাজী মেয়ে;আমায় তো বলেছিলো যে প্রেমে পড়িয়েই ছাড়বে।হাহা,কিছু মেয়েরা কেমন যেন!সমকামী ছেলেদের প্রেমে পরে যায়।ইশ!ওরা যদি বুঝতো ছেলেটি সমকামী!
.
দু-তিন মিনিটের মধ্যে আইডিটার পাশের সবুজ বাতি জ্বলে উঠে।
আমি বললাম”সুপর্ণা তুমি আমায় চেনো?”
-জানিনা।
-কাল না বলে চলে গেছিলে কেন?
-মা ফোন নিয়ে গেছিলো তাই।আমার নিজের তো ফোন নাই
-বেশ করেছেন।কোন ক্লাসে পড় তুমি?
-টেন এ।
-কিছুদিন পর তো বোর্ড এক্সাম।তাই হয়ত।পড়াশুনায় মন দাও।
-আচ্ছা,এখন আসি।ভালো থাকবেন।মা দেখলে মারবে।
.
সে চলে যায়।মানুষটার প্রতি এক অজানা ভালোলাগা কাজ করতে থাকে।কথাবার্তায় বেশ বাচ্চামো স্বভাব।
২.
নিয়মিত ভার্সিটি,ক্লাস,টিউশান,বাসা,নিজের পড়া এসেবে দিন কেটে যায়।আর রাত ন’টা থেকে দশটার কাছাকাছি অব্দি সময়ে সেই সুপর্নার সাথে কথা।এইতো বেশ যাচ্ছে সময়।
দিনগুলো খুব দ্রুত যাচ্ছিলো।ছাত্রের জে এস সি পরীক্ষা সামনে।সময় বেশি দিতে হচ্ছিলো।ক্লাসটেস্ট এ ভালো ফলাফল করেনি।তাই সেদিন কান মলে দিয়েছি।বেচারা ইদানিং কম কথা বলে।ওর বোন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন ওর ফলাফল এর এই অবস্থা।ছাত্রী বলে ইদানীং ফোনের আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে।সুপর্নার কথা মনে হলো তখনই;ও এখন একটু বেশিই সময় দেয়।আজ যেয়ে কড়া ভাবে বলতে হবে পড়ার কথা।অল্প কদিনেই ওকে আপন লাগছিলো।তাই হুট হাট শাশন করে বসি।আসলেই এখনকার বাচ্চারা ফোনে একটু বেশিই ঝুকছে।
.
বাসায় যেতেই দেখি সুপর্না অনলাইনে।আজ হুট করেই ও বলে”ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি”
আমি অবাক হই;সাথে বিরক্ত ও হই।কিছুদিন পর ওর পরীক্ষা আর ও এখন এসব বলছে।একবার দেখিও নি ওকে।আর এটা কেমন কথা।উত্তর দেই”দেখো সুপর্না তুমি অনেক ছোট।উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে প্রেম করো।এখন প্রেমের পেছনে সময় দিও না।আর কাল থেকে যেন তোমায় অনলাইনে আধাঘন্টার বেশি না দেখি”
“আচ্ছা ভাইয়া”
.
ওদিকে ছাত্রের জন্য চিন্তা হচ্ছিলো খুব।ক্লাস সেভেন থেকে পড়াই।সবাই কত ভালোবাসে।বাচ্চাদুটোও খুব ভালোবাসে।আর ছাত্রটা তো একটু বেশিই কেয়ার করে।
যদি একটা ভালো রেজাল্ট না আসে আন্টিকে মুখ দেখাবো কেমন করে!
পরদিন ছাত্রীকে বললাম”ও(ছাত্র)যেন ফোন না ধরে একদম,ঠিক আছে?”
“হাহা স্যার কি যে বলেন আপনি,ও ইদানিং ফেসবুক ও চালায়”
আমার খুব জেদ উঠে।ওকে খুব করে বকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে নেই।আসার সময় দেখছিলাম ছাত্রের চোখে ছলছল পানি। কস্ট পেয়েছে হয়ত।
ঘর থেকে বেরোতেই দেখি আকাশ কালো।মে মাসেএতই গরম যে যখন তখন কাল বৈশাখী ঝড় চলে আসে।তারতারি করে রিকশায় উঠলাম।ওমনি ঝড়!
রিকশাওয়ালা মামা বলে দিলেন তিনি আর যাবেন না।ওই সাইডে বৃষ্টি হলেই খুব পানি জমে।তখন রিকশা সামলাতে বড় ঝামেলা।
অগত্যা নেমে একটা দোকানের নিচে দাড়ালাম।বৃষ্টি কমছে না।হালকা ভাবে বৃষ্টি হচ্ছেই।আবার রওনা দিলাম।ভেঙে ভেঙে নিজ বাসায় পৌঁছাই।
এবার আর রক্ষা নাই।জ্বর আসবেই বোধয়।মাথা ব্যাথা করছে।
বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়েই আইডিতে লগ ইন করলাম।
দেখলাম সুপর্না বেশ বড় একটা মেসেজ দিয়েছে
“স্যার আমি সুমন।আপনার ছাত্র।মজা করে এই আইডিটা খুলেছি।কিন্তু আমার পড়ালেখায় খুব সমস্যা হচ্ছে এখন।তাই আইডিটা ডিলিট করে দেব।ক্ষমা করে দিয়েন স্যার।”
তারপর লেখা৷ “You can’t reply this conversation “
এতক্ষন যা দেখলাম তাতে আমার গলা ধরে আসছিলো।সুমন এমন টা করতে পারলো!!
চাপা একটা কস্ট হচ্ছিলো।শুয়ে পড়ি মশারী টানিয়ে।
জ্বর আসছে খুব।শুতেই চোখে ভেসে উঠে আমার কৈশরের স্মৃতি।
৩.
তখন আমিও এইট কিংবা নাইনে পড়ি।আমার দু বোন। পিঠাপিঠি এক বোন।
ও ক্লাস টেনে পড়ত তখন।যেই পাড়ায় আমরা বড় হতাম সেই পাড়ার বড় ভাই ছিলেন শুভ আর বাপ্পী ভাই।দুটো একত্রেই চলতো।
দুটো মানুষকেই আমার খুব ভালোলাগতো। শুভ ভাই আমার পিঠাপিঠি বোনকে পছন্দ করতো। আমি ক্লাস ফাইভ থেকেই জানতাম।আচরনে চাইল্ডিশ ভাব থাকাতে তিনি খুব পছন্দ করতেন আমাকে।কোলে তুলে এলাকা ঘুরিয়েছেন কত!আমায় তিনি”বন্ধু” বলে ডাকতেন।
আপুকে পছন্দ করতো সেই সুবাদে আমায় হাত করার চিন্তা ছিল তার।আমিও তাকে সমর্থন করতাম কেন যেন!
তাকে দেখতে বিকেলে মাঠে যেয়ে বসে থাকতাম,তিনি খেলতো।আমি এটা ওটা এনে দিতাম,চেয়ে থাকতাম।ইচ্ছেহত সারাদিন তার সাথেই থাকি।বয়সে অনেক বড় হলেও তার সাথেই থাকতাম;খুব স্নেহ করতেন কিনা!
সেবার ডিসেম্বরে আমরা এলাকা ছাড়ি।আসার আগের দিন সন্ধ্যায় ভাইয়া একটা কাগজে তার আইডি নাম আর ফোন নাম্বার লিখে দেন।জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে বলেন”বন্ধু ভালো থেকো।আর পারলে কল দিও”
আপুর আর ভাইয়ার সম্পর্ক টা হয়না আর।আমরা এলাকা ছেড়ে চলে আসি।খুব মিস করতাম তাদের।আসার দিন চোখ থেকে পানি বেরিয়ে এসেছিলো।
.
তারপর জীবন স্বাভাবিক ভাবে চলছিলো।মাঝে মধ্যে ঐ এলাকায় যেতাম।ওখানেই আমাদের বাড়ি।কখনো তাকে দেখতাম।কখনো বা দেখিনি।আমায় পেলে সারাক্ষন তার সাথেই রাখতেন।আমি ক্লাস এইটে উঠতেই ফেসবুক একাউন্ট খুলি।ভাইকে এড করি।ভাইয়া স্পেলিং করে তার আইডি শিখিয়ে দিয়েছিলো আমায় সেবার। তাই নাম্বার হারালেও আইডির নাম ভুলিনি।আমার একাউন্ট খুলেই তাকে এড দেই প্রথমে।মানুষ টাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছা করতো আমার।তখন ও আমার সমকামী সত্ত্বার কথা বুঝতাম না।কিংবা এমন কোনো কমিউনিটি আছে কিনা তা ও জানতাম না।ভাবতাম আমিই হয়ত ব্যাতিক্রম ;তাই শুভ ভাইকে এত ভালোলাগে!
৪.
একদিন সন্ধ্যায় ইচ্ছে হলো একটা ফেইক একাউন্ট খুলি মেয়েদের নামে।”জেসিকা ইসলাম দিয়া”নামে একটা ফেইক একাউন্ট খুলি আমি।দু তিন দিন পর ভাইয়া কে এড দেই।পরিচিত আরো অনেক বড় ভাইদের ও এড দিতাম।কতগুলো মানুষের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক হতে থাকে।তারা ভাবতো আমি একটা মেয়ে।শুভ ভাই,হৃদয় আর জাহিদ নামের তিনটা ভদ্রলোকের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়।আর আমার দুটো ক্লাসমেটের সাথে ও একটু গাঢ় সম্পর্ক তৈরী হয়।মেহেদী নামক দূর সম্পর্কের মামার সাথে ফ্লার্টিং এর সম্পর্ক।
সবাই নাম্বার চাইতো খুব।বলতাম মায়ের ফোন।কথা ঘুড়িয়ে নিতাম।
এরমধ্যে শুভ ভাই অনেক টা সময় দিতেন আমায়।সেই সন্ধ্যা থেকে রাত একটা-দুটো অব্দি চ্যাট করতাম।
আর জাহিদ নামক ভদ্রলোককে আমি তেমন চিনতাম না।তিনি খুব শান্তশিষ্ট ছিলেন।ডেইলি লাইফ নিয়ে সব শেয়ার করতেন।কোথায় চাকরী ইন্টারভিউ দিচ্ছেন,কেমন কোশ্যেন সবটাই বলতেন।আমি মেধাবী হওয়ায় বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যাবলী আমায় বলতেন সমাধান করে দিতে।আমিও দিতাম।তার ইচ্ছে ছিলো ঈদের পর পরই দেখা করবেন আমার সাথে।ভালোবাসতেন এটুকু বুঝতাম।
.
হৃদয় নামের ছেলেটা ছিলো সেক্সফ্রিক।তার ভালোবাসায় যৌনতা ছিলো বেশি।তাই তাকে মন থেকে কখনো সম্মান করিনি।
.
আর দুটো ক্লাসমেট এর মধ্যে আমায় নিয়ে ঝামেলা চলছিলো।তারা আমার কথার প্রেমে পরে।রোজার দিন নামাজ পড়তে গেলে ছবি দিতো।সেহেরীতে মেসেজ দিত।ইফতারে কি রেডি করছে তার খবর ও জানতো। ওরা ঝামেলা করত আর ক্লাসে আমি মজা নিতাম।
.
তখন অব্ধি জাহিদ,আর একটা ক্লাসমেট বলেছিলো”দিয়া আই লাভ ইউ”
আর শুভ ভাই,হৃদয়,আরেক ক্লাসমেট ওরা বলেনি।
আমি আপুকে মাঝে মাঝে বলতাম “আপু জানিস আমি একটা ফেইক একাউন্ট খুলছি,আর শুভ ভাই,মেহেদী মামা উনারা কি পরিমানই না লুতুপুতু করছে!” আপু হেসে উড়িয়ে দিতো।
.
রোজা থাকায় আমি ঘুমোতাম না তখন।সেহেরী অব্দি কথা বলতাম।শুভ ভাই আর জাহিদ ভাই ই থাকতেন অলয়েজ,মাঝে মধ্যে অন্যরাও থাকতো অত রাত অব্দি।
৫.
কোন একদিন রাতে শুভ ভাই এর সাথে অনেক কথা হচ্ছিলো।সেহেরীর আগেই তিনি একটা বড় মেসেজ দিলো।সেখানে কি কি লেখা ছিল এখন আমার মনে নাই।তবে সব শেষে লেখাছিলো”আই লাভ ইউ দিয়া”
আর শেষে ব্রাকেটে লেখা ছিলো”শুভ+দিয়া”
তারপর তিনি খেতে চলে গেছিলেন।সেদিন মনে হচ্ছিলো আমি জীবনে সবচেয়ে দামী জিনিস টা পেয়ে গেছি।
সেহেরীতে মা উঠে দেখেন আমি তখন ও সজাগ।তাই রাগ করলেন।আমি আপুরে বলি”জানিস আপু,শুভ ভাই না আমার ফেইক আইডিতে আমায় প্রোপোজ করেছে”
কথাটা শুনে আপু সেদিন আর হাসেনি।রাগ করে বললো”তুই একটুও ঘুমাস নাই তাইনা??মানুষের মন নিয়া রাত বিরেত ফাযলামো করোস”
আপু আমায় বুঝালো এসব নিয়ে মজা করতে না।শুভ ওই এলাকার একজন বড় ভাই;আর সেখানে আমাদের বাড়ি।তিনি জানতে পারলে ঝামেলা করবেন।আর অনুভূতি নিয়ে খেলার অধিকার কারো নাই।
সেহেরী খেয়ে আমি অনেকট সময় ভাবলাম কি করা যায়।যেটাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া মনে হচ্ছিলো সেটাই মনেহচ্ছিলো বড় ত্যাগ।
আচ্ছা আমি তো সত্যিই শুভ ভাইকে ভালোবাসি।কিন্তু আমি তো ছেলে!এটা কেমন ভালোবাসা??উনাকে পেয়েও আমি পেলাম না।মানুষটি আমার কথার প্রেমে পরে গেছেন।কত স্বপ্ন নিয়ে আমায় প্রোপোজ করলেন।তারমত সুন্দর,স্মার্ট আর লম্বা পুরুষের জন্য মেয়ের অভাব হবেনা…এসব ভাবলাম কিছুক্ষন।তারপর একটা চাপা কস্ট অনুভব করলাম।জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলতেই চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে।কোনোভাবেই তাকে হারাতে চাইনি আমি।
তারপর আইডিতে ঢুকে ক্লাসমেট দুটোকে আমার পরিচয় দিলাম।ওরা লজ্জ্যা পেলো খব।ক্লাসে আমারে ইচ্ছেমত ঘুষি দিয়েছিলো তারপর দিন।
জাহিদের জন্য ও মনটা খচখচ করছিলো খুব…তাকে মেসেজ দিলাম”ক্ষমা করে দিও জাহিদ”আমার পরিচয় আর দেইনি তাকে।এখন বুঝি মানুষটা হয়ত অনেক কস্ট পেয়েছিলেন।সাদাসিধা একজন সুন্দর মানুষ।আমায় এতদিন প্রেমের লোভ দেখিয়ে কেউ ছেড়ে গেলে আমি হয়ত কোনোদিন ক্ষমা করতে পারতাম না।তিনিও পারেন নি!
শুভ ভাইকে মেসেজ দিলাম।তিনি আমার উত্তর এর অপেক্ষা করেন নি।ভেবেছিলেন আমিও তাকে ভালোবাসি।আমায় বললো “দিয়া একটা গান শুনাও।”আমার খুব কস্ট হচ্ছিলো সেদিন।তবুও লিখলাম”জাগি জাগি সোয়ে না মে সারি রাত তেরে লিয়ে, ভিগি ভিগি পালকে মেরি উদাস, তেরে লিয়ে।আখিয়া বেছাই মেনে তেরে লিয়ে,দুনিয়া ভুলাই ম্যানে তেরে লিয়ে”
আমি জানতাম তিনি গানের পরের অংশ লিখছেন।সেই ফাকে দিলাম বড় একটা উত্তর”শুভ ভাই,আমায় ক্ষমা করবেন।আমি আপনার প্রেম প্রস্তাব গ্রহন করতে পারবো না।আমার বয়ফ্রেন্ড আছে”
এই বলে আরো অনেক কিছু লিখলাম।
৬.
এখন মনেনাই অতকিছু।
তার কাছ থেকে বিদায় নিতেই চোখ থেকে পানি অঝোড় ধারায় পানি পরছিলো।শুভ ভাই তখন ও জানতো না আমি একটা ছেলে।তিনিও ওপাশ থেকে পাগলামো করছিলেন।কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা আমার।আমি যে নিরুপায়।ইচ্ছা হচ্ছিলো সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরি তার উদ্দেশ্যে আর যেয়ে যাপটে ধরে বলি”শুভ আমি একটা ছেলে,আমায় কি ভালোবাসা যায়না??”
বলতে পারিনি।ক্ষমা চেয়ে আইডিটা ডিএক্টিভ করে দেই।তারপর মুখে হাত দিয়ে কিছুক্ষন কাঁদি।
আর শপথ নেই কোনোদিন আর কাওকে এভাবে ঠকাবো না।নাজানি ও পাড়ের মানুষ গুলোর কেমন লেগেছে।
তারপর ও মাঝে মধ্যে ঢুকেই আইডিতে মেসেজ দিতাম সেই মানুষ গুলোকে।শুভ চাপা কস্ট নিয়ে কথা বলতো মার্জিত ভাবে।ওর একটাই অনুরোধ ছিল”একবার যেন আমার দেখা পায়”
আমি উত্তর দিতাম “আমি তোমার চিরচেনা;তোমার হাত ধরে বহুদিন হেটেছি”
আর কিছুই বলিনি।সেবারই আইডিটা ডিলিট দেই।
.
বাস্তবতায় ফিরে আসি।চোখ থেকে পানি ঝড়ছে আমার।আচ্ছা আমার সেই ভালোবাসা তো কাম চাহিদা বিহীন ছিলো।তাদের সঙ্গ পাওয়াই মনে হচ্ছিলো তাদের ভালোবাসতে পারা।তবে সবাই কেন বলে এবিউজড না হলে কেউ এখানে আসে না!
আচ্ছা সুমন কেন এমনটা করেছে!সেও কি সমকামী!
তার ও কি কাম চাহিদার বাহিরে আমায় ভালোলাগে??
নাকি যা করেছে নিছকই মজায়।মনকে শক্ত করে ভাবলাম কালই জানা যাবে।সুমনের ইচ্ছাই হবে আমার নতুন জীবনের সূচনা।
লেখকঃদিহান হাওলাদার
প্রকাশেঃ সাতরঙা