
ফ্লিন রাইডার
‘LGBT in Bangladesh’ নিয়ে একটি আলোচনা ১ম দিন
আমি * বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী।’মনোগ্রাফ’ নামে আমাদের একটি বিষয় রয়েছে যেখানে কোন একটি বিষয় নিয়ে গবেষনা করে সেটি বিভাগে সাবমিট করতে হয়।
আমি আমার বিষয় হিসেবে ‘LGBT in Bangladesh’কে নির্বাচন করেছি।আমি মূলত এলজিবিটিদের সামজিক এবং পারিবারিকভাবে যেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেসব অভিজ্ঞতা জানতে ইচ্ছুক।
এই কারনে এলজিবিটি কমিউনিটির অর্ন্তভূক্ত এমন ব্যক্তির সাথে দেখা করে “ইনফরমাল ইন্টারভিউয়ের” মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে চাই। কিন্তু এরকম কারো সাথে আমার পূর্ব পরিচয় নেই।তাই এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সাক্ষাতকার গ্রহনে আপনাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে কৃতার্থ হব।
গবেষনার ethicsমেনেই এটি করব বলে কারো পরিচয় বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা হবে না।বরং ছদ্মনাম ব্যবহার করা হবে।আমার সর্ম্পকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যেকোন জিজ্ঞাসা থাকলে কিংবা প্রমাণের প্রয়োজন হলে নিঃসঙ্কোচে বলতে পারেন।
গবেষনার প্রয়োজনে আমার কয়েকবার ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।আর আমি * থাকি।তাই এই দুই জায়গায় যারা আছেন এবং আমার গবেষনায় সহযোগিতা করতে চান, তাদেরকে অনুগ্রহ করে আমাকে ইনবক্স করার জন্য অনুরোধ করছি।এছাড়া কেউ এই বিষয়ে কোন ঘটনা/ফাইল/ডকুমেন্ট/অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ইনবক্সে বা অন্য কোন মাধ্যমে আমার সাথে শেয়ার করতে চাইলে উপকৃত হব।
আলোচনা পর্ব- প্রথম দিন
-হ্যালো,আমি *।
-হাই, আমি *, কেমন আছেন ?
-এইতো ভালো।আপনি কেমন আছেন?
-জি , আমিও ভাল আছি
-আচ্ছা।আমি আপনাকে বেশকিছু প্রশ্ন করতে চাই।বলা যায় রীতিমত বিরক্ত করবো!আপনি সময় নিয়ে আমার প্রশ্রগুলোর উত্তর দিতে পারেন।কোন প্রশ্নে বিব্রতবোধ করলে সরাসরি বলে দিবেন।কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না চাইলেও বলে দিবেন।
-আমার কোন সমস্যা নেই, প্রশ্ন করতে পারেন। তবে মেসেঞ্জারে অডিও কলে হলে আমার জন্য বেশি সুবিধে হত।
-আপনাকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য।আমি ঢাকা গেলে কি আপনার সাথে দেখা করা যাবে?
-হ্যাঁ অবশ্যই দেখা করা যাবে
-আচ্ছা,আমি সামনে ঢাকা গেলে আপনাকে অবহিত করে যাব।আর মেসেঞ্জারে অডিও কলের জন্য আপনি আমাকে কখন সময় দিতে পারবেন বলুন,তথন আমি আপনাকে কল দিব।
-আমার ফোন নাম্বার * and *
-আর আমি ফ্রি থাকি সারাদিন, বেকার, বাসায় পড়াশুনা করি , সোঁ সমস্যা নেই, চাইলে এখনি কিছু প্রশ্ন করতে পারেন, আমি এখন ফ্রি আছি।
-আচ্ছা,আমি আপনাকে বিকেল ৫-রাত ১০টা,এই সময়ে কল দিয়ে যোগাযোগ করব।আর এখন মেসেঞ্জারে কি চ্যাটিং চালিয়ে যেতে পারি?
-আচ্ছা হ্যাঁ সে সময় সম্ভব, কাল হয়ত ব্যস্ত থাকতে পারি সে সময়, তবে নাও থাকতে পারি, হ্যাঁ এখন চ্যাটিং চালিয়ে যেতে পারেন
-ধন্যবাদ।আপনার মতে, আপনার লিঙ্গীয় পরিচয় কি?
-বেশ কঠিন প্রশ্ন, এবং নিজের চিন্তাটা একাডমিকালি বলাটা বেশ কঠিন। প্রথমত, আমাদের সমাজে যেই লিঙ্গ পরিচয় আছে, বা চাপিয়ে দেয়া হয় সেটা সামাজিক নির্মাণ।
এখন আমাদের কিছু বিষয়কে পুরুষের গুণাবলি আর কিছু বিষয়কে নারী গুনাবলি হিসাবে চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পুরুষ আর নারী সত্ত্বা সবার মাঝেই কম বেশি বিদ্যমান। এখন দৈহিক সামাজিক অভিজ্ঞতা বিভিন্ন কারনে আমাদের মধ্যে পুরুষ আর নারীর গুনাবলি একেক জনের মাঝে একেক রকম
আমার লিঙ্গ পরিচয় আমি বুঝতে পারি তখন যখন আমি আমার প্রাপ্ত বয়স্ক অনুভুতি গুলি মানসিক আর দৈহিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারি
এই বুঝতে পারা শুরু হয় যখন বয়সন্ধির পরে যখন আমার দেহের পরিবর্তন আসে, আর আমার শরীরে মনে কাম যৌনতার ক্ষমতা আসে।
-আপনার ভাবনাগুলো বেশ গভীর আর গুছানো।আপনার সাথে পরিচয় হওয়াতে ভাল লাগছে।আমার গবেষনার ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসবে।আমি আছি, আপনি আপনার ভাবনাগুলো বিস্তারিত লিখতে থাকুন।
-আচ্ছা আমার যৌনাঙ্গের উপর ভিত্তি করে আমাকে ছেলে শিশু হিসাবে ঘোষনা দিলেও শিশুকাল থেকে যত টূকু মনে পড়ে, আমি ছোট থেকেই পুরুষ নারী দু ধরনের বৈশিষ্ট্য বা বাইনারি প্রকাশ করতাম। যেমন – মায়ের শাড়ি পড়া , মেয়েদের ফ্রক পড়া, গেঞ্জি টেনে কাধ বের করা মেয়েদের পোশাক পড়া, আবার অন্য দিকে পুরুষদের মত দাড়ি গোফ নিজে নিজে রং তুলি দিয়ে আঁকতাম। তো যত বড় হয়েছি, সেসব নারী বৈশিষ্ট্য চেপে গেছি, সামাজিক চাপ আর ভয়ে। আর বয়েজ স্কুলে পড়েছি, ছেলে বন্ধুদের থেকে না জেনেই সে সময় থেকে যৌনাঙ্গ হাতানর মাধ্যমে যৌন অভিজ্ঞতা শুরু শিশু কাল থেকে, সেটা ছিল খেলার মত।
এরপরে আসি আমার ক্লাস ৫-৬ এর ঘুমের মাঝের সপ্নে, আমি আদোজাগরনে সপ্নে দেখতাম,হিন্দি সিনেমার নায়ক সানি দেওল আসছে, তার সাথে রোমান্টিসিজম করছি, টানা পোড়েন চলছে। আবার ভাল লাগছে ব্যাপারটা ।
ক্লাস ৭ এ যখন বন্ধুরা পর্ণ দেখা শুরু করল, যৌনতার আলাপ শুরু করল, তখন নারী পুরুষের যৌনতা দেখাব্র পরে বুঝতে পারি ,আমার আকর্ষণ সম্পূর্ণ ছেলেটির প্রতি, নারীর প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নেই।এছাড়া আমার ক্লাসমেটের চরম পুরুষত্ত আমাকে টানত, তার পেশি বহুল শরীর, তেজ, ভারী গলার স্বর, দাড়ি, তার মানসিকতা। আমার আরেক বন্ধু ছিল সে জানত সমকামিতা কি । তখন থেকে বুঝতে পারি ,আমার লিঙ্গ পরিচয় সমকামি। যদিও আমার মানতে অনেক সময় লেগেছে।
আমি বোধ হয় গুলিয়ে ফেলেছি এখানে লিঙ্গ পরিচয় সমকামি বলে
-কেন এমনটি মনে হচ্ছে?
-কথাটা হবে , আমার তখন থেকে বুঝতে পারি ,আমার তখন থেকে বুঝতে পারি ,আমার যৌন দৃষ্টিভঙ্গি সমকামি।
জেন্ডার আইডেন্টিটি লিঙ্গ পরিচয় আর সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন -যৌন দৃষ্টিভঙ্গি, দুটা ভিন্ন জিনিষ। আচ্ছা লিঙ্গ পরিচয়ে আসি, এটা আমি কেন কিভাবে নির্মাণ করি যৌন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য।
-হ্যা,বলুন।
-এখন আমার আকর্ষণ তো পুরুষদের প্রতি, ছেলেদের পুরুষত্ত আমাকে আকর্ষণ করে চরম ভাবে । ঐযে বললাম, ছেলেদের শরীর, পেশি, লোমশ বুক, দাড়ি, ভারী গলার স্বর, ছেলেদের যৌনাঙ্গ , ছেলেদের মানসিকতা এসব আমার ভাল্লাগে, তা আমার দৈহিক আর মানসিক ভাবে পেতে ইচ্ছে করে। সেগুলি আমার কাছে ডিজায়রেবল , আবার যখন সমকামি পুরুষদের সাথে মিশতে গেলাম তখন দেখলাম তারাও একই ভাবে আমার মাঝে সেই পুরুষ গুনাবলি খুজে বেড়াচ্ছে, তার মানে আমি যদি আমার সমকামী লাভারদের কাছে প্রিয় হতে চাই, তবে আমার মাঝেও সেই পুরুষ গুন ধারন করতে হবে। তাই আমি আমার মেইন বাইনারি হিসাবে মেন-পুরুশকে বেছে নেই, এবং লিঙ্গ পরিচয় নির্মাণ করি, তবে নারী বাইনারি কে একবারে , ফেলে দেই না, সেকেন্ডারি বাইনারি হিসাবে সুবিধে মত ব্যবহার করি নিজের জন্য, নিজের কমফোরট জোনের মধ্যে। তো আমি একজন সিস জেন্ডার ,মেন-পুরুশ, এটাই আমার লিঙ্গ পরিচয়। তবে কুয়ের বা জেন্ডার আম্ব্রেলা তে বলা আছে সেক্সুয়াল মাইনরিটি মানে যাদের যৌন দৃষ্টি ভঙ্গি হেটেরোদের মত না, তবে তাকে কুয়ের বলা যায়। সে সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি কুয়ের।
-আপনার লিখা বেশ তথ্যবহুল আর যৌক্তিক।ধন্যবাদ। নারীদের যে বিষয়গুলো আপনার কাছে ছিল বা এখন সেকেন্ডারি বাইনারি হিসেবে ব্যবহার করেন,সে কারনে আপনার মধ্যে ট্রান্সজেন্ডারের বৈশিষ্টও রয়েছে, এটি কি বলতে পারি?
-ট্রান্সজেন্ডার যারা আছে তারা সিস জেন্ডার মেইন বাইনারি হিসাবে ব্যবহার করে না। যেমন আমি আমার যৌনাঙ্গ অনুযায়ী যেভাবে লিঙ্গ পরিচয় নির্মাণ করা হয়েছে আমি সেটাই ব্যবহার করছি, আমি সিস জেণ্ডার। নারী বাইনারি অকেশনালি ব্যবহার করছি। কিন্তু ট্রান্স জেন্ডারদের আচরণ, মানসিকতা তাদের যৌনাঙ্গ অনুযায়ী সমাজের দেয়া লিঙ্গ পরিচয়ের বিপরীত। যেমন আমার সমকামী ছেলে বন্ধু সে নারীদের আচরণ, মানসিকতা বেশি ধারন করে, নারীদের মত তার কোমর দুলিয়ে চলতে বেশি পছন্দ। গলার স্বর নারীদের মত, সেভাবে টোন আনে, শাড়ি পড়তে পছন্দ করে, সেভাবে নিজেকে সাজায়। মেকাপ করে, তার নারী দেহ পেতে ইচ্ছে হয়, জেন্ডার রিএসাইনমেন্ট সার্জারি করে মেয়েদের মত স্তন আর মেয়েদের যৌনাঙ্গ চায়, তারা ছেলে-সিস মেন হতে ট্রান্স উইমেন হতে চায়। আবার আমার লেসবিয়ন ফ্রেণ্ড আছে, তাদের আচরণ মানসিকতা চরম পুরুষের মত। তাদের যৌনাঙ্গের ভিত্তিতে সামজিক ভাবে নারী বললেও ,তাদের মাঝে পুরুষ বাইনারি প্রকট। আর সেটা ব্যবহারে সচ্ছন্দ বোধ করে। চ্যাট করলে মনে হবে একজন ডমিন্যান্ট পুরুষের সাথে চ্যাট করতেছি, আমি আর আমার গে ফ্রেণ্ড তো পুরাই টাশকি, তারা আবার ছেলেদের মানসিকতা ,আচরণ, বেশ ভুশাই ধারন করে না, তারা দৈহিক ভাবে পুরুষ হতে চায়। শেভ করে, দাড়ি উঠায়, সব সময় ছেলদের পোশাক পড়ে, সেভাবে চলে, জেন্ডার রিএসাইনমেন্ট করে ছেলেদের লিঙ্গ দেহে সংযোজন করতে চায়, গলার স্বর ছেলেদের মত করতে হরমোন থেরাপি নেয়। তাদের মেয়েদের স্তন সার্জারি করে ছেলেদের স্তন বানায়। এমনকি সেক্সে তারা বিশেষ ডিল্ড সংযোজিত পোশাক পড়ে, ছেলেদের মত সেক্স করে পারটনারদের সাথে। তারা মেয়ে থেকে ট্রান্স মেন হইতে যায়। এখন ট্রান্সজেন্ডার হিসাবে সংজ্ঞায়িত হতে হলে আমার মাঝে নারী আচরণ প্রকট ভাবে আনতে হবে। সেই ভাবে রুপান্তনর হয়ে নারী চর্চা দেহে আর মনে আনতে হবে সব সময়ের জন্য। কিন্তু আমি যেহেতু সিসমেন ব্যাপারটা বেশির ভাগ সময় চর্চা করছি তাই আমি মনে করি ট্রান্স উইমেন শ্রেনিতে আমি পড়ছি না।
-ধন্যবাদ,বুঝেছি।আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন? আমরা আজকে এখানে শেষ করে কালকে আবার শুরু করতে পারি?
-না, মোটেও না, হ্যাঁ আমরা কাল আবার শুরু করতে পারি , আজকে রাত হয়ে গেছে ।
-আচ্ছা।শুভরাত্রি! ভালো থাকবেন।কালকে আবার কথা হবে।
-শুভ রাত্রি, আপনিও ভাল থাকবেন