দুর্ঘটনাবশত পরিবারে সমকামী আত্মপ্রকাশ

ফ্লিন রাইডার

আমি- হঠাত এসাইলাম কি জন্য খুজতেছো?

ছেলে- আমার জন্য

আমি- কি হইছে ?

ছেলে- তিন দিন হইল বাসায় সব জেনে ফেলেছে, খুব সমস্যা হচ্ছে, আমার পরিবার রক্ষনশীল মানসিকতার। আমাদের গে কমিউনিটির এক ফ্রেণ্ড বলে দিয়েছে। এখন বিয়ে করতে হবে, না হলে বাড়ি ছাড়তে হবে।

আমি- বিয়ে ভুলেও কইরো না। শোন ফ্যামিলি ব্ল্যাকমেইল করবে কিন্তু এটা প্রতিরোধ করতে হবে।তুমি তো তোমার বাবার ব্যবসা দেখো যত দূর মনে পড়ে

ছেলে- হুম, আমি এখনো প্রতিরোধ করছি। বাবা রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর আমি বাবার ব্যাবসা দেখি। কিছু টাকা হাতে আছে , চলতে পারব কিছু দিন।

আমি-দেখা করো একদিন।সামনা সামনি সব শুনি।

ছেলে- আচ্ছা, আমি বের হতে পারলে আসব।

আমি- বাসা থেকে বের হতে দেয় না ?

ছেলে- খুব একটা না। বের হলে দলের লোক পাঠায়।

আমি- বল কি !! এই অবস্থা ?তাহলে তো অনেক রিস্কি। ধরো, তুমি আসলে তখন তোমার পিছে পিছে আসল তখন কি হবে !!

ছেলে- ওটাই ভাবছি। কোন ভাবে এর মধ্যে গ্রামে যাব। এরপরে ওখান থেকে আসবার চেষ্টা করব।

আমি- তুমি জব খুজে নিয়ে আলাদা হয়ে যাও ,এভাবে থাকার কোন মানে নাই।

ছেলে-আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলেছি জব নিয়ে। নিজের ছোট একটা ফার্নিচার ব্যবসা আছে ওটা দিয়ে চলে যাবে। এসাইলাম সিক করতে কি কি কাগজ লাগে ? আর এই বছরে কানাডা তে স্টুডেন্ট ভিসায় চেষ্টা করব ভাবছি।

আমি- তোমার অবস্থা ভয়ঙ্কর , তোমাকে কিছু করবে না, কিন্তু তুমি যাদের সাথে মিশবা তাদের ক্ষতি করবে তোমার পরিবার।

ছেলে-তাই তো কারো সাথে দেখা করতে পারছি না, কথা বলতে পারছি না।আমার পাসপোর্ট প্রোফাইল যা আছে তা দিয়ে টূরিস্ট ভিসায় চেষ্টা করতে পারব।

আমি- তোমার অনেক আগে বাসা থেকে আলাদা হওয়া উচিত ছিল।

ছেলে- হুম আগে বুঝিনি ব্যাপার টা ।আব্বু ভালবাসত কিন্তু এরকম করবে আগে ভাবিনি।

আমি- স্বার্থের জন্য সবাই এমন, বাপ মা যেই হোক না কেন ।

ছেলে- হুম, মা আরো বেশি ,তারা হজ করে আসছে,আমি গে তাই নাকি তাদের নাকি হজ নষ্ট হচ্ছে।

আমি- লোল,ঢঙ্গ ।

ছেলে- সত্যি লোলয,হুম।

আমি- থাকে ক্যাপিটালিজমে(পুজিবাদে)। রাখে ব্যাংকে টাকা, খায় হারাম দিয়ে, তখন তো তাদের গডের সাথে ট্রাস্ট(বিশ্বাস) ব্রেক হয় না। একদম বলে দিবা এইডা। আমারে প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট দিত।

ছেলে- আমি পাত্তা দিচ্ছি না।

আমি-পড়ে বুঝছি যে ইচ্ছা করে টর্চার করতেছে।তখন আমিও ছাড়ি নাই।একেবারে কথা ধরে ঊল্টায়ে দিছি লজিক দিয়ে। সব ধরে ধর্ম উদ্ধার করছি।

ছেলে- তার বড় ছেলে প্রতি রাতে মাগী লাগায় তাতে হজ নষ্ট হয় না, সেটা বলেছি।

আমি-লোলয, এটা জানে তোমার বাবা মা ?

ছেলে- হুম

আমি- বল নাই তখন এগুলি ?

ছেলে-আমি তখন সাথে সাথে মুখের উপর বলছি

আমি- গ্রেইট, এরপরে কি বলে ?

ছেলে- তখন কথা ঊল্টায়ে দিয়ে অন্য টপিক নিয়ে আসে তখন

আমি- হুম ,এটাই করে বাপ মা, টপিক ছাড়তেই দিবা না একদম। তোমার বাসার অবস্থা বিপদজনক, তোমার কখন কি করে ফেলে ঠিক নাই কিন্তু।

ছেলে- হুম যাই হোক আমায় বিয়ে দিতে পারবে না

আমি- আমাকে কিন্তু এক বছর বাসায় আটকায়ে রাখছিল

ছেলে-সেটাই টেনশনে আছি। বাসা থেকে বের হতে পারলে তো দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতাম। আম্মু আসতেছে ,আমি রাতে নক দিব নে।

এরপরের ঘটনাটা সংক্ষেপে বলি, ছেলেটা বাসা থেকে পালানর প্ল্যান করে। বাসায় চুপিচুপি সব দরকারী কাগজপ্ত্র সবকিছু গুছিয়ে নেয়, গ্রামে যায়। এরপরে সবার নজর এড়িয়ে সুযোগ বুঝে পালায়। সেখান থেকে ঢাকায় চলে আসে। এখন ভাই আছে , তার এক্স বয়ফ্রেণ্ড তাকে থাকতে দিয়েছে, ছেলেটা তার বন্ধুকে বলে ভাল চাকরি ম্যানেজ করেছে, এখন দেশের বাইরে জবের জন্য এপ্লাই করছে হয়েও যাবে। ঘরের বাহিরে গেলে সাবধানে বের হয়, চুলের কাট পরিবর্তন করেছে, সাবধানে ঘুরাফিরা করে, পরে সে জেনেছে তাকে অনেক খোঁজাখুজি হচ্ছে।

তারা তিন ভাইবোন। তার বোন বাসার ড্রাইভারের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। মেয়েটি ছিল উচ্চশিক্ষিতা হাইক্লাস রাজনৈতিক ফ্যামিলির, আর ছেলেটা ছিল তাদের বাসার ড্রাইভার, অনেক সুন্দর হ্যন্ডসাম। একটা ছেলে-মেয়ের প্রেমের বিয়েই তার পরিবার টিকতে দেয় নি, তার বোনের জামাইকে হুমকি দিয়ে কিছু রাখে নি।তার বাসায় গিয়ে বাবা মাকে হুমকি সহ বিশাল অবস্থা, জোর করে ডিভোর্স করায়, তার বোনকে জোর করে পাঠায়ে দেয় কানাডায়, মেয়েটি চেয়েছিল তার জামাই নিয়ে যাবে, কিন্তু ছেলেটা আর বসে থাকে না পরে সে আরেকটা বিয়ে করে, কি করবে, তার নিজেরও পরিবার আছে ,তাদেরকে নিরাপদ রাখতে সে সম্পর্ক ছেদ করে। মেয়েটি আর তার ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ রাখেনি। ২ বছর ধরে দেশের বাইরে, আর জীবনে বিয়ে করবে না।

তার বড়ভাইয়ের জন্য এখন পোয়াবারো, বোন চলে গেছে, ভাই চলে গেছে,বাবার সব কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি সে।   আমার বন্ধু বলে, যেখানে আমার বোনের এই অবস্থা করেছে, একটা ছেলে মেয়ের প্রেম বিয়ে মানে নাই, তার পরিবার, সেখানে সে তো একজন সমকামী, তাকে কি করবে সে আর ভাবতে চায় না। তবে এখন বেশ ভাল আছে, আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল, স্বাধীন জীবন নতুন করে উপভোগ করছে। সেসময় আমি পাশে থেকে মানসিক ভাবে পাশে ছিলাম ,এর জন্য জানায় কৃতজ্ঞতা। খুব শীঘ্রই তার হয়ত দেশের বাইরে সব কনফার্ম হয়ে যাবে।

গত এক বছরে আমাদের গে কমিউনিটির ৫ জনের আত্মহত্যার খবর শুনেছি, আর পরিচিত কত জনকে যে বাসা থেকে বের করে দিছে হিসাব নেই, কাউকে কাউকে অত্যাচার করছে, বিশেষ করে লেসবিয়নদের অবস্থা বেশ ভয়ংকর। আমার আক্ষেপ হইত, আমি আমার নিজের কমিউনিটির মানুষদেরকে বাচাতে পারছি না, আমার নিজের কমিউনিটির মানুষকে যদি আমি বাচাতে না পারি ,তাহলে আর কি থাকে, কার সাথে চলব আমি!!!! যাই হোক একজনের পাশে খুব সামান্য হলেও দাড়িয়েছি এই ভেবে নিজের কিছু করতে না পারার অপরাধবোধকে প্রবোধ দিয়ে রাখি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.