
লেখক- নীলাভ
গল্পটা লকডাইনের মধ্যে নয়।
মনে করে নিলাম লকডাইন আর কোভিড ১৯ এ ব্যাপার গুলো পৃথিবীতে নেই।
সুহৃদ আর সৌরনীলের পরিচয়টা হঠাৎ ই। অনুরাগটাও হঠাৎ, প্রেম বোধ হয় এভাবেই আসে।
তাই সে নব্য প্রেমর এর টানে কঠোর পরিবারের শাসন আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেখা করতে যায় সুহৃদ সৌরনীলের সাথে। ও কুমিল্লা থাকে, তাই ওরা ঠিক করলো শালবন/ ময়নামতি যে নামেই ঢাকুন না কেন সেখানে দেখা করবে।
সুহৃদ আজ সৌরনীলের প্রিয় রঙে সেজেছে, বেশ সুগন্ধি ও মেখেছে।
মা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করছে আর বলছে, “এমন নওশা( জামাই) সাইজ্জা কোনহানে যাওন লইসোস, কোন হানে আবার সোনা চুইতে যাবি?”
কিছু উত্তর করে মুডটা নষ্ট করতে চাইলো না।বের হয়ে গেল আর বললো ফিরতে দেরি হবে আজ কলেজে ফাংশন আছে।
বেড় হতেই দেখলো বাড়ির ছোট্ট জারুল ফুল গাছটাই প্রথম ফুল ফুটেছে, সে ডালা সহ ফুলটা ভেঙে নিল
ফাস্ট ট্রিপের বাস সে ধরতে পারলো না, তাই অগত্যা ৮টার বাসে করে কুমিল্লা রওনা হলো, ১১ টার মধ্যেই পৌছে গেল।
সৌরনীলকে সে সমানে ফোন করছে কোথায় সে?
ও খালি বলে আসছি আর আসছি।
এমন করে প্রায় ১ ঘন্টা কেটে গেল, সৌরনীল ফোন তুলছে না। শেষ কলে সে বলেছিল ক্লাস আছে আর একটু মিটিং এর মতো আছে। সুহৃদ যেন টিকিট কেটে ভিতরে ঘুরতে থাকে। এছাড়া কি তার ড্রেস আর কি তার রঙ সবটাই জেনে নিয়েছে সৌরনীল।
সুহৃদ সব বলে দিয়েছে এই ভেবে দুজনে একই রঙের জামাকাপড় পড়বে। সুহৃদ ভিতরে গিয়ে পুরো বিহার একলা একলা ঘুরে দেখছে। আর চারপাশে কত রকমের যুগল রা বসে বসে প্রেমালাপ করছে তা তার চোখে পড়ছে।
সৌরনীল এখনো এলো না এই ভরা জৈষ্ঠ্যমাসের রৌদ্রে সে একা একা ঘুরছে।রোদ সুহৃদ এক্কেবারে সহ্যকরতে পারে না।
ঘামে তার সারা শরীর নেয়ে গেছে, মুখ লাল হয়ে জ্বলছে আর হাতের জারুল ফুল গুলো সব চুপসে ওর মতোই নেতিয়ে গিয়েছে।
সৌরনীলের ফোনে এনিয়ে বোধ করি প্রায় ৫০টার মতো কল করা হয়ে গেছে।
নাহ্ এলো না সৌরনীল
ও কি তবে সবার মতো আমার এই কুৎসিত চেহারা টা দূর থেকে দেখে চলে গেল?
একেই তো সকাল থেকে না খাওয়া, তার উপর রাজ্যের
হতাশা আর এই তীব্র রোদের তেজে সুহৃদ এর মাথা ঘুরিয়ে কেমন জানি শরীর খারাপ লাগছিল।
নাহ্ চলে যাবে সুহৃদ, এই ভাবনায় যেই না উঠে দাঁড়ালো আর তখনি সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার উপক্রম হলো।
না কেউ তাকে সামলে নিতে এগিয়ে আসে নি, একাই সে নিজেকে সামাল দিল।
যদিও একটু নরম মানুষ ও কিন্তু নিজেকে সামলে নিতে সে শিখে গেছে।
না সৌরনীল এলো না, এখন তো ফোনটাই সুইচড অফ্ বলছে।
টলতে টলতে সে পা বাড়ালো, বাড়িতে ফিরবে।
কিন্তু সত্যি সে আর পড়ছে না,চোখে ঝাপসা দেখছে।
না এবার সে সত্যিই পড়ে গেল কিন্তু আশ্চর্য হলো যে কিছু নরম তার মাথায় ঠেকছে।
অনেক কষ্টে চোখ টেনে খুলে দেখল এ যে সৌরনীল
তার প্রিয় সৌরনীল যার জন্য এত অপেক্ষা।
আর কিছু মনে নেই সুহৃদের সে অচৈতন্য হয়ে পড়লো
আর হাত থেকে খসে পড়লো ধরে রাখা সেই জারুল ফুল……………