ব্রেকআপ

লেখক-তানভীন হাসান সৌরভ

ব্রেকআপ!!! চিৎকার করে উঠল সৌরভ! -মানে? -মানে বুঝ না?মানে হল তোমার আর আমার রিলেশনের এখানেই শেষ!বাই বাই! -আচ্ছা| -আচ্ছা মানে?তুমি কিছু বলবা না? -আচ্ছা আজকে কি আমরা শোক পালন করব?না মানে যেমন ধর…প্রতিদিন আমরা আইসক্রিম,ঝালমুড়ি,ফুচ-কা খাই..আজকে বরং তা না করে সিগারেট খাই! -তুমি আমাকে সিগারেট খাওয়াবা!!! -না মানে…কষ্ট ভুলতে তো মানুষ তা-ই করে! -তোমার কি মনে হয় আমার কষ্ট লাগবে?মোটেও না! -ও রাগে হাতের ব্যাগটা আছাড় মারল সৌরভ ! -তুমি একটা ছাগল আর একটা ছাগলের সাথে কোনো মানুষের সম্পর্ক থাকতে পারে না! কথাটা বলেই বাসার দিকে হাঁটতে লাগল সৌরভ |সৌরভের ফেলে যাওয়া ব্যাগটা হাতে নিল আকাশ|বেগে উপরের চেনে একটা মোবাইল আর কিছু টাকা আছে আর নিচের চেনে দুটো বই শুধু |আকাশ একবার ভাবল সৌরভকে ব্যাগের জন্য ডাক দিবে|কিন্ত পরক্ষণেই চিন্তাটা বাদ দিল|নিজের ব্যাগটা কাদে আর সৌরভের ব্যাগটা সামনে মানে বুকে নিয়েই হাঁটা শুরু করল ও|দুটো বাচ্চা মেয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দড়িলাফ খেলছিল| খিলখিল করে হেসে উঠল মেয়ে দুটো|ওদের হাসি দেখে আকাশও হেসে দেয়|তবে এবার আর মেয়ে দুটো হাসে না|হয়ত ওকে পাগল ভাবছে! -হ্যালো,তুমি আমার টাকা আর মোবাইলসহ ব্যাগ চুরি করলা কেন? -না,না আমি তা করিনি!তুমি ই তো ব্যাগটা ফেলে আসলে| -একদম মুখের ওপর কথা বলবা না!কালকে আমার ব্যাগ নিয়ে সোজা ক্যাম্পাসে চলে আসবা|বাই! ফোনটা কেটে দিল সৌরভ !কাঁদছে ও!দুটো কারণে ব্যাগটা ও ইচ্ছে করেই ফেলে এসেছে!প্রথমত,এই ব্যাগের অজুহাতে আবার আকাশের সাথে দেখা করা যাবে!আর দ্বিতীয়ত,আজ-ই আকাশের মেসের ভাড়া দেয়ার শেষ দিন|তাই ব্যাগের টাকাটা রেখে এসেছে যাতে বাধ্য হয়ে ওর টাকাটা দিয়ে মেসের ভাড়াটা মিটাতে পারে আকাশ!এমনিতে সরাসরি দিলে আকাশ তা কোনোদিনই নিত না!তাই বাধ্য হয়েই ঝগড়াটা সৃষ্টি করছিল ও! আধঘন্টা ধরে বসে আছে সৌরভ |কিন্ত আকাশের আসার কোনো নাম নেই!যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে এসে দাঁড়ায় আকাশ! -সরি!এই নাও তোমার ব্যাগ!আর একটা কথা বলব? -কি? -আমি তোমার টাকাগুলো খরচ করে ফেলেছি! সৌরভের মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল!কিন্ত মুখে বলল, -ফাও কথা বলবা না!ব্যাগে কোনো টাকা ছিল না! -না,না,সত্যি ছিল!তোমার ওই টাকা দিয়েই তো জব্বার চাচাকে একটা কম্বল কিনে দিয়েছি!সরি!প্লিজ কিছু মনে কর না!আসলে হাতে কোনো টাকা ছিল না তাই!তবে এ মাসের টিউশিনির টাকাটা পেলেই দিয়ে দিব!তুমি তো চাচার কথা সবই জানো!তাই আর কি ..সরি! ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রেখেছে সৌরভ !যে মানুষটা নিজেই ঠিকমত চলতে পারে না,যার নিজেরই একটা ভালো শীতের জামা নেই,যে নিজেই সারা বছর কষ্ট করে কাটায়, সেই মানুষটাই কিনা আরেকজনকে সাহায্য করে তার জন্য আমার মাফ চাইছে!কোনোমতে সামলে উঠে বলল ও, -তোমাকে মেস থেকে বের করে দেইনি?? -না!আরো দুইদিন সময় দিয়েছে| -বের করে দিলে খুশি হতাম! -আচ্ছা আজ থেকে কি তোমার ফোন রিসিভ করব?না মানে তুমি ই তো কাল বললে… -হ্যা আজকে থেকে তুমি আর আমার ফোন রিসিভ করবা না!কিন্ত ফোন ঠিকই দিবা!না দিলে চড় দিয়ে আক্কেল দাঁতসহ সবগুলো দাঁত ফালায়া দিব! এবার আর কান্না আটকে রাখতে পারল না ছেলেটা!অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আকাশ!আর দশটা সাধারণ গল্পের ছেলেগুলোর মত আকাশও বুঝতে পারছে না ছেলেটা কেন কাঁদছে!শুধু মনে মনে বলছে-“আবার কি করলাম!”

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.