
লেখক:-তানভীন হাসান সৌরভ
সৌরভ>> হ্যালো, শাতিল
শাতিল>> শুনতেছি বল,
সৌরভ>> কোথায় তুই?
শাতিল>> বাসর রুমে বউর সাথে গল্প করছি
সৌরভ>>কি (কিছুটা রাগি সুরে) ভার্সিটিতে আসিস
নাই কেন?
শাতিল>> আমি ভার্সিটিতে যাই না সকালে। দুপুর গেলো
বিকেল গেলো এখন রাত ১১.৪৫ এখন তুই আমার খোজ
নিলি?
সৌরভ>>ফোনে ব্যালেন্স ছিলো না সে জন্য ফোন
করতে পারি নাই । কেন তুই তো একবারও ফোন দিলি না।
নিজে দেয় না আবার অন্যকে বলে।
শাতিল>> কোটিপতি বাবার ছেলে যদি বলে তার ফোনে
ব্যালেন্স নেই তাইলে আমার মতো মধ্যবিত্ত ঘরের
ছেলের ফোনে কি ভাবে থাকবে???
সৌরভ>> এ তুই না একটু বেশি কথা বলিস। রাতে খাইছস???
শাতিল>> হুম। আচ্ছা ফোনটা রাখ আমার একটু কাজ করতে
হবে। বলেই ফোনটা কেটে দিলো শাতিল তার কোন
কাজ নেই ঘুমাবে সে অভি ঘুম পাগল মানুষ।
শাতিলল গ্রামের মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ঢাকা এসে পড়াশোনা
করে হিঃবিঃ তে অনার্স করে।
সৌরভ তার বাবার একমাত্র ছেলে।মা ছোট বেলায় মারা গেছে। তার কথা চিন্তা করে
তার বাবা বিয়ে করেনি। ঢাকা শহরের একজন বড় ব্যবসায়ী।
ভার্সিটিতে পরিচয় হয় দুজনের তারপর বন্ধুত্ব
সৌরভ তাকে অসীম ভালোবাসে কিন্তু বলে না।।ইতি মধ্যে তার বাবাকে সব জানিয়েছে সৌরভ। তিনি মেনেও নিয়েছেন।
শাতিলও সৌরভকে তার জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসে। সৌরভ চায় শাতিল বলবে।
__________
সৌরভ>>আজকে ক্লাস করবি শাতিল??
শাতিল>> কেন আজ কি তোর দাদার মৃত্যু দিবস নাকি যে ক্লাস
করবো না।
সৌরভ>> চুপ কর (ধমকের সুরে) তুই বেশি কথা বলা বন্ধ কর
না হয় ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
শাতিল>> (চুপ)
সৌরভ>> আজকে আমার ভালো লাগে না, তাই ভাবলাম ক্লাশ না
করে আজকে ঘুরবো। চলনা দুজনে ঘুরি আজকে সারাদিন
ঘুরবো।
শাতিল >> তাইলে সে জন্য এতো তাড়াতাড়ি তলব করলি।
সৌরভ>> হেসে দিয়ে হুম চল
শাতিল একটা গান শুরু করলো
বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়িড় সামনে দিয়া
রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায় ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্ট যায়
সৌরভ হটাৎ দাড়িয়ে গেলো রেগে তাকিয়ে আছে শাতিলের
দিকে
সৌরভ দাড়িয়ে থাকা দেখে শাতিল গানটা বন্ধ করে
দিলো।।।।।। মুচকি একটা হাসি দিলো
সৌরভ>>> এইটা কি গান গাইলি? এটা কোন গানের মধ্যে পরে।
এই গানের চল আছে কোন লোক শুনে এই গান?
শাতিল >> হাগল নি কোন। এর চাইতে সুন্দর কোন গান হয়, এটি
বেশি শোনে কারা জানস। এটা বেশি শুনে
যারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরিও পায় না বফও পায় না। অথছ
তার পাশের বন্ধুরা বিয়ে করে তার বাড়ির সামনে দিয়ে বউ
নিয়ে যায়।। হিহিহিহি
সৌরভ>>> তোর তো কোনটাই এখন প্রয়োজন নেই।
তো তুই কেন গাইলি?
শাতিল >>এইতো আর ৪বছর তারপর তো শেষ তখন তো
জানি আমার চাকরিও হবে না ঠিক সেই সময়ে তুইও তাড়িয়ে দিবি। আমি
তো আর মোটা অংকের ঘুস দিতে পারবো না। বর্তমানে
তো ঘুস ছাড়া চাকরি হয় না
সৌরভ>> আগে তো পড়াশোনা শেষ কর। তারপর এই চিন্তা।
চল আমরা ওই যায়গাতে বসি শাতিল সারাসময় সৌরভ সাথে দুস্টামি করেই থাকে
শাতিল>>> সৌরভ
সৌরভ>> হুম
শাতিল >> চল আমারা পালিয়ে বিয়ে করি
সৌরভ>>দেশে কি ছেলের অভাব পরছে যে তোকে
বিয়ে করতে যাবো।।।
শাতিল >> এএএ আমার মতো ছেলে পাওয়া তোর ভাগ্যের
ব্যাপার,তুই জানিস আমাদের বাসার পাশের কত ছেলেরা
আমার সাথে বিয়ে দিতে পাগল। কিন্তু
আমি
করি না (কিছুটা বুক ফুলিয়ে)
সৌরভ>>>করে ফেল তাড়াতাড়ি না হয় পরে ছেলে তো দূর মেয়েও না
পেতে পারিস। হিহিহিহিহিহিহিহি
শাতিল >>না তোকে করবো। এবং আমি ৮০০ সন্তানের বাবা
হবো তুই মা হবি বলেই হেসে আবার বলে আমারা বিশ্ব
রেকর্ড করবো চারদিকে আমাদের নাম ছড়িয়ে যাবে
সৌরভ>>মনের অজান্তেই হেসে দিয়ে বললো তোর
মতো বানরকে আমি বিয়ে করবো মাথা নস্ট
শাতিল >>> হাগল নি কোন। আমাকে বাংলা ছবির পরিচালক মনতাজুর
রহমান আকবর একবার বলছিলো যে তোমার চেহারা তো
অনেক সুন্দর
তুমি নায়ক হতে পারবা। আমি বলছি না আমি নায়ক হবো না তাহলে
বাংলার হিরোরা ফকির হয়ে যাবে।।।
সৌরভ>>> হাহাহাাহাহাহাহা
হাহাহাহাাহাহোহো
হোহোহোহোহোহোহোহো
হো এই চেহারায়
আয়নায় কখনো নিজকে দেখেছিস? তোকে তো
বিলেন হিসেবেও নিবে না।
শাতিল >>> দেত তোর সাথে কথাই বলবো না।
সৌরভ>>> হাহাহাহাহাহাহা শাতিল প্রচুর ক্ষুদা লাগছেরে কিছু নিয়ে
আয়।।
শাতিল >> টাকা নাই তোকে খাওয়ানোর কোন ইচ্ছা নাই।
সৌরভ>> কোন দিন তোর টাকা ছিলো। আর কোন দিনটায়
আমাকে তুই খাওয়ালি??
হুম আজ পর্যন্ত শাতিল সৌরভকে দশটাকার বাদাম ছাড়া কিছুই খাওয়ানি,
যাই হোক না কেন প্রতিদিন সৌরভ ই বিলটা দেয়। তারপরেও
তার মাঝে কোন বিরক্তির ছাপ নেই কোন হিংসার ছাপ নেই
হয়তো এটাই ভালোবাসার রুপ
সৌরভ>>> এই নে টাকা ভালো দেখে বার্গার ছুমুছা আর স্পিড
নিয়ে আয়।
অতপর শাতিল নিয়ে আসলো
সৌরভ খাচ্ছে কিন্তু শাতিল মুখ ফুলিয়ে বসে আছে
সৌরভ সেটা কিছুসময় পর সেটা খেয়াল করলো
সৌরভ>> কি ব্যাপার নায়ক সাহেব আপনি খাচ্ছেন না কেন?
শাতিল >> খাবো না!
সৌরভ>> কেনো রাগ করছেন। নাকি খাইয়ে দিতে হবে?
বলেই সৌরভ তার হাতের ছমুছাটা শাতিলের মুখের ভিতর দিয়ে
দিলো।
শাতিল >> আচ্ছা সৌরভ তুইকি আমাকে সত্যি ভালোবাসিস?
সৌরভ>>> কেনো? হটাৎ এই প্রশ্ন কেনো
শাতিল >>না এমনি জানতে ইচ্ছে হলো।।
সৌরভ>> না (মিথ্যা)
শাতিল >> আমারো তাই মনে হইছিলো। আচ্ছা আমি যদি
কখনো দূরে কোথাও চলে যাই তুই কি কস্ট পাবি? যেখান
থেকে আসার আর কোন সুযোগ নেই
সৌরভ>> তুই চলে গেলে আমি কস্ট পাবো কেন?(ফান
করে)
শাতিল >>হুম সেটাই তো। জানিস আমি একদিন চলে যাবো
বহুদূর আর আসবো না তুই সত চেস্টা করেও আনতে পারবি
না আমাকে এবং সেই দিনটা বেশি দূরে নারে (আকাশের
দিকে তাকিয়ে)
সৌরভ>>> তোকে কোথাও যেতে হবে না সারাজীবন
আমার কাছে রেখে দিবো এখন চল বাসায় যাবো
১.০০ বাজে
তারপর দুজন চলে আসে।
বিকালে সৌরভের কেন জানি বারবার শাতিল কে ফোন দিতে
ইচ্ছে করে একটু কথা বলবে তার সাথে। শাতিল কে কেন
জানি বলতে ইচ্ছে করছে তোকে অনেক ভালোবাসি
শাতিল
সৌরভ ফোন দিলো
কিন্তু শাতিল ফোন তুলছে না
প্রায় ২০ মিনিট পর
রিসিভ হলো
সৌরভ>>ওই কুত্তা হারামি বান্দর শয়তান ফোন রিসিভ করস না
কেন???
ওপাশ>>না আমি শাতিল , না তার বন্ধু দুপুরে হটাৎ
শাতিলের কি যানো হইছে দুপুরে কোই থেকে যেনো
এসে হটাৎ বিছানায় পরে যায় আর প্রচুর রক্ত ভুমি হয়। আমরা
এখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি
সৌরভ>> কি। আপনি কি বলছেন এসব?
ওপাশ>> হুমম ঠিকই বলছি আপনি হাসপাতালে চলে আসেন
(বলেই ফোনটা কেটে দিলো)
সৌরভ চোখ দিয়ে পানি পরছে
বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো একটা সিএনজি নিয়ে চলে
গেলো হাসপাতালে বারবার চোখের পানি মুছে শাতিলের কিছু হয়ে গেলে আমি বাচবো না। কি নিয়ে বাচবো
কাকে নিয়ে বাচবো কি করে সে বাঁচবো
কিন্তু এতক্ষনে শাতিল নেই
চলেগেছে না ফেরার দেশে।
শাতিলের এই রোগটা সেই ছোট বেলা থেকেই
কোন সমাধান দিতেপারে না ডাক্তার
এবং আজও বাচিয়ে রাখতে পারলো না শাতিল কে_।
তার বন্ধুরা তার বেডের পাশে দাড়িয়ে আছে কারো মুখে
কোন কথা নেই
সবার চোখ দিয়ে পানি পরছে
সৌরভ দৌড়ে এলো রুমে
সৌরভ>>শাতিল কোথায়
বন্ধু>> চুপ
সৌরভ>> কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন শাতিল কোথায়
(চিতকার করে)
একজন হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিলো
সৌরভ দেখলো সাদা কাপড় দিয়ে ডাকা একটা লাশ
সৌরভেরর বুজতে বাকি রইলো না কি হইছে
সাদা কাপড়টা উঠিয়ে চিৎকার করে কেদে দিলো
কি হইছে তোর শাতিল এইতো আমি দেখ আমি এসেছি
তোর কিচ্ছু হবে না। তুই উঠ শাতিল আমার সাথে ঝগড়া করবি না
আমাকে রাগাবি না এই আমি দুপুরে যাওয়ার পথে তোর জন্য
একটা শার্ট কিনছি
তুই জানতে চেয়েছিলা না আমি তোকে ভলোবাসি কিনা
আমি তোকে প্রচুর ভালোবাসিরে শাতিল তোকে নিয়ে
কত স্বপ্ন দেখিরে তুই রাগ করে আছিস শাতিল
রাগ করিস না উঠে আয় শাতিল আমরা গল্প করবো
তুই ৮০০ সন্তানের বাবা হবি না? আমি রাজিবরে রে তোর বউ
হতে আমি তোকে আর রাগাবো না
শাতিল ধরে চিৎকার দিয়ে বলে যাচ্ছে সৌরভ
জোরে জোরে নারছে শাতিল কে শাতিল এর বন্ধুদের
চোখে বৃস্টির মতো পানি যাচ্ছে সৌরভের এই অবস্থা
দেখে নার্স এসে সৌরভকে টেনে আনতে চেস্টা
করলো
কিন্তু শাতিল কে ছাড়ছে না। সৌরভ শুধু চিৎকার করে করে বলে
কিরে শাতিল তুই এতো বেইমান হয়ে গেলি
আমার কথা তুই শুনছিস না।
সৌরভের চিৎকারে মানুষের ভির জমে গেলো।
সৌরভ হাসছে শুধু হাসছে
চারদিক অন্ধকার নেমে আসছে।
৩ দিন পর
সৌরভকে এখন শিকল দিয়ে বেধে রাখতে হয় রুমের
ভিতর।
শুধু হাসে আর বলে শাতিল আমি তোর বউ হবো রে………………….