
আমাদের বন্ধুত্বটা আর সবার মত না। একটু, না না, একটু বেশিই অন্যরকম। রিশাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব ক্লাস থ্রি থেকে। ছোটবেলাকার বন্ধুত্বগুলো যেমন হয় আর কি! ক্লাসে পাশাপাশি বসা থেকে শুরু, তারপর হোম ওয়ার্ক আর টিফিন শেয়ার করার মাধ্যমে বন্ধুত্বটাকে পূর্ণতা প্রদান। ভালোই চলছিল আমাদের শৈশবের দিনগুলি। কিন্তু মাঝে বাগড়া বসালো আমার মা। অভিযোগ, রিশাদ খারাপ ছাত্র। ওর সাথে পেছনের বেঞ্চে বসে আমিও খারাপ ছাত্র হয়ে যাচ্ছি। মা এই কথাটা শুধু আমাকে বললে পারতেন, কিন্তু না। আমার ড্রামা কুইন মা’টা ক্লাস টিচার ম্যামকে বলে দিলেন রিশাদকে যেন আমার পাশে বসতে না দেয়। ম্যামও ক্লাসে সবার সামনে কড়াভাবে নিষেধ করে দিলেন রিশাদকে, যেন আমার পাশে আর না বসে। রিশাদ কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “সানির মা নিষেধ করেছে।”
বাচ্চাদেরও যে আত্নসম্মানবোধ আছে, ম্যাম হয়তো সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। সেই থেকে রিশাদ আর আমার পাশে বসতো না, কথা বলতো না। কতো বার যে সরি বলেছি! কাজ হয়নি। এর মধ্যে আমার অতি সচেতন মা জননী আমার সুন্দর ভবিষ্যত রচনার আশায় আমাকে ভালো স্কুলে বদলি করে দিলেন। রিশাদের সাথে দেখা হবার সুযোগটাও গেলো বন্ধ হয়ে।
এরপর কেটে গেলো কয়েকটা বছর। কলেজে উঠলাম। আবারো দু’জন দু’কলেজে। যোগাযোগের পথ বন্ধই থেকে গেলো। বলে রাখা ভালো, রিশাদের খবরাখবর রাখতাম ওর এলাকার এক ছেলে কচির কাছ থেকে। কচি একদিন বলল, “অনেকদিন তো হলো, একবার রিশাদদের বাসায় যা। গেলেই দেখবি ওর রাগ পড়ে গেছে।”
অনেক সাহস আর আশা নিয়ে গেলাম রিশাদদের বাসায়। এখনো মনে পড়ে, কলিংবেল টেপার সময় হাতটা কাঁপছিল। বেলটা টেপার সাথে সাথেই বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ধুক ধুক শব্দ। কী হয়, কে জানে!
আন্টি দরজা খুললেন। রিশাদ বাসায় ছিল না। অনেক বছর পর গিয়েছি দেখে আন্টি চা-নাস্তা খাইয়ে তারপর বিদায় দিলেন। নিচে নামতেই দেখি রিশাদ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে খুব অবাক হলো, মুখে হাসি। জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছো?” আমি বললাম, “আমি আবার তোর কাছে তুমি হলাম কবে থেকে?”
সেই থেকে আমাদের শুকিয়া যাওয়া বন্ধুত্ব নামক গাছটা প্রাণ ফিরে পেলো যেন। কী করিনি আমরা? প্রতিদিন সন্ধ্যায় রিশাদদের গলির সামনে আড্ডা দেয়া, রাস্তায় মেয়েদের যেতে দেখে কমেন্ট পাস করা থেকে শুরু করে একসাথে পর্ন দেখা পর্যন্ত সব!
এক সময় রিশাদ আমার ফ্রেন্ড থেকে বেস্টফ্রেন্ড হয়ে ওঠে। আমাদের আলোচনা তখন কে কোন নায়িকাকে ভেবে মাস্টারবেট করি তা নিয়ে। এমন কিছুই ছিল না যা রিশাদের সাথে শেয়ার করতাম না। কিন্ত একসময় প্রচন্ড চাপা একটা কষ্ট অনুভব করলাম নিজের ভেতর। কষ্টটা মিথ্যা বলার, নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটার কাছে বলতে না পারার যে রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মেয়েদের চেয়ে ছেলেদেরকেই আমার ভাল লাগে বেশি, পর্ন দেখার সময় ভালো লাগে ছেলে পর্নস্টারটাকে দেখতে, আর মাস্টারবেট করার সময়ও কোন মেয়েকে না, ছেলেকে কল্পনা করতেই ভালো লাগে আমার।
কষ্টটা একসময় অসহনীয় হয়ে উঠলো। আর পারলাম না রিশাদের সাথে মিথ্যা অভিনয় করে যেতে। একদিন সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে গিয়ে অনেক সাহস করে বলে ফেললাম,
- রিশাদ, আমি ছেলেদের পছন্দ করি
- মানে!
- মানে আমি গে।
রিশাদ নিশ্চুপ। ভাবলাম হয়তো অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে। সেদিন আর কথা বাড়ালাম না। চলে এলাম বাসায়। পরদিন থেকে দেখি ও খুব স্বাভাবিক আচরণ করছে, যেটা ছিল আমার কাছে প্রচন্ড অস্বস্তিকর। খুব ইচ্ছে করছিল রিশাদের মনের কথা জানতে। কিন্তু সাহস করলাম না, পরে যদি কথা বলাই বন্ধ করে দেয়!
ছয় মাস পরের কথা। একই জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এই দীর্ঘ সময়ে ওই বিষয়টা নিয়ে আর কোন কথা হয়নি আমাদের মাঝে। হঠাত করে রিশাদ বলে বসলো,
- সানি, একটা কথা বলবো।
- বল!
- আমিও না গে!
- হোয়াট!
- হুম!
- হারামি! এইজন্য তুই সেদিন কোন রিএক্ট করিস নাই!
বলেই মারা শুরু করলাম রিশাদকে আচ্ছা মতো।
সময়ের সাথে সাথে কৈশোর পেরিয়ে দুজনেই এখন যৌবনে, চাকরি-বাকরি করে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমি ঢাকায় আর রিশাদ রাজশাহীতে সেটেল্ড। ছুটি পেলেই ছুটে যাই রাজশাহীতে ওর কাছে, প্রাণ খুলে দু’দন্ড কথা বলার জন্য। এখনো আমরা একসাথে পর্ন দেখি। তবে স্ট্রেইট পর্ন না, গে পর্ন।