ট্যুরিস্ট

সেমিষ্টার ফাইনাল শেষে ঠিক করলাম একটু বাহির থেকে ঘুরে আসা যাক। কারণ লম্বা ছুটি আছে। মানুষের এই যান্ত্রিক জীবনে একটু প্রশান্তির ছোঁয়ার জন্য কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা ভাল। প্রকৃতিকেও ভাল ভাবে জানা যায়,অনুভব করা যায় প্রকৃতিকে। অনেক কবিগণ তাদের কবিতায় দেশের প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা তুলে ধরেছেন। যার জন্য কবি জীবনানন্দ দাশ কে প্রকৃতির কবি বলা হয়। যাই হোক,আজ বাসায় আব্বু-আম্মু কে বলব কোথাও ট্যুর দেওয়ার কথা!

২।
আমি সুষম। সুষম আহমেদ। আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমি আমার জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি বাবা-মায়ের কাছ থেকে। বলা যায়, সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মেছি। আজ পর্যন্ত বাবা-মায়ের কাছে যা চেয়েছি তা ই পেয়েছি। কিন্তু একটা ব্যাপারে আমি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আমার ভেতরে থাকা স্বত্তাকে নিয়ে। আমি বাহিরে এক রকম, ভিতরে আরেক রকম। আমি সমকামী! আমি তোহ কখখনো এরকম অভিশপ্ত জীবন চাইনি! প্রায় সময়ই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি, চিন্তা করি কি হবে ভবিষ্যতে! কি জবাব দিব নিজের বাবা-মাকে! কিভাবে বলব নিজের দৈত স্বত্তার ব্যাপারে!

৩।
সকালে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি। এমন সময় আব্বুকে বললাম,
– আব্বু, আমার তোহ এখন লম্বা ছুটি। আমি কোথাও গিয়ে ঘুরতে চাইছি। যাব?
– কোথায় যাওয়ার ইচ্ছে?
– কক্সবাজার যেতে চাইছি।
রান্নাঘর থেকে আম্মু সব শুনছিল। এসে বলল,
– এত দূরে যাবে?
– হ্যা আম্মু। আমার দুটো বন্ধুও যাবে!
– আচ্ছা ঠিকাছে। কবে যেতে চাইছ?
– তোমরা বললে কালই যেতে চাই।
– বাবা কি বলে দেখ!
– আব্বু যাই?
– আচ্ছা যাও। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
– Thank u so much Abbu. Love u so much.
এভাবেই শেষ হল ট্যুর নিয়ে আব্বু-আম্মুর সাথে আমার কথোপকথন। প্রস্তুতি নিলাম ট্যুরে যাওয়ার জন্য! আমার বন্ধুদেরও বলে দিলাম রেডি হওয়ার জন্য।

৪।
সকাল ১০ টায় আমি বের হলাম বাসা থেকে। আমাদের যাত্রা শুরু হল ১১ টায়। আব্বুর গাড়ি নিয়েই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
খুব উপভোগ করলাম পুরো রাস্তা। দেখতে থাকলাম বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য্য। চোখ জুড়িয়ে গেল। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি। এজন্যই কবি-সাহিত্যিক গণ তাদের লেখায় তুলে ধরেছেন আমাদের বাংলার নিটোল সৌন্দর্য।
পৌঁছে গেলাম কক্সবাজারে। প্রথমেই হোটেল বুক করলাম। হোটেলে গিয়ে বিছানায় শরীর মিলিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে একে একে প্রত্যেকে গোছল করে, দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে নিলাম কিছুক্ষণ!

৫।
বিকাল ৫ টা।হোটেলের ম্যানেজার কে জিজ্ঞাসা করলাম একজন গাইডের সন্ধান দিতে পারবে কিনা। তিনি বললেন তিনি পারবেন। এরই মধ্যে তিনি তাকে আসতেও বললেন। আমরা বের হওয়ার প্রস্তুতিও নিলাম।গাইড লোকটা এরই মধ্যে হোটেলে এসে পড়েছেন। আমার এবং আমার বন্ধুদের সাথে হাত মিলালেন।আমি, শামীম আর মাহমুদ মিলে বের হলাম। ঘুরলাম বিভিন্ন জায়গায়।গাইড লোকটা আমাদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গেলেন। কিন্তু এরই মধ্যে আমার স্বত্তা আমার মধ্যে জেগে উঠেছে।আমি তাকে দেখেই ভাল লাগতে শুরু হল।জানিনা কেন এরকম হল।অচেনা অজানা মানুষকে হঠাৎ ভাল লাগতে শুরু হল! যাকে বলা হয় love at first side! যাই হোক আমার খুব ভাল লাগল তার সাথে কথা বলতে,ছবি তুলতে!

৬।
ও হ্যাঁ! গাইডের পরিচয় দিতে তোহ ভুলেই গেছিলাম! গাইডের নাম রনি। তিনি পড়াশোনা করেন। কাছাকাছি কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি তার সাথে বিভিন্ন রকম ভাবে কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলাম।তার সাথে কথা বললে আমার মনে অন্যরকম এক শিহরণ বয়ে যায়! তবে কি আমি তাকে ভালবাসি? আচ্ছা আমি যা মনে মনে ভাবি সেও কি তা ভাবে?
এসব উত্তরহীন প্রশ্ন মনে আসতে থাকে! আবার নিজেকে নিজেই বুঝাই,”ধ্যাত কিসব ভাবছি আমি!সে তোহ আমার মত নাও হতে পারে!”

৭।
সুষম, রনির প্রেমে পড়ে গেল। তাকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে থাকে! মানুষ প্রেমে পড়লে কত্ত কিছু ভাবে! কিন্তু এদিকে রনিও সমপ্রেমী। তার ও ছেলেদের প্রতি ইন্টারেস্ট আছে। এদিকে রনিরও সুষম কে ভাল লাগে! তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নং নেয়!
রাতে রনি ফোন দেয় সুষম কে,
– হ্যালো!
– হ্যালো! কে বলছেন?
– আমি রনি। তোমার গাইড!
– ওব হ্যাঁ হ্যাঁ! কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। কি কর?
– এইত বসে আছি। আপনি?
– আমিও। আর তোমার কথা ভাবি!
– কিইইইইই! আমার কথা?
– হ্যা তোমার!
– তা কি কি ভাবছেন?
– এই যে তুমি কি কর, খেয়েছ কিনা,কি খাবে এসব!
– ওওও আচ্ছা! জানেন আমিও আপনার কথা ভাবছিলাম!
– ওহ তাই?
– হুম!
– তা কি কি ভাবছিলে?
– আপনি যা যা ভাবছিলেন তা তা!
– হাহাহাহা
এভাবেই চলছিল দুজনের কথাবার্তা। সুষম ১সপ্তাহ ছিল কক্সবাজারে। এরই মধ্যে একদিন গাইড রনি তাকে জরুরি ভিত্তিতে ডাকল।সুষম বুঝে উঠতে পারল না কি এমন জরুরি তলব!তবে সুষম মনে মনে খুশিই হয়েছে। ভালবাসার মানুষ টা ডাক দিয়েছে! এক ছুটে চলে গেল তার কাছে!
– তা বলুন মি.রনি! কি এমন জরুরি ভিত্তিতে আমাকে স্মরণ করলেন?
– আজ তোমাকে কিছু বলতে চাই!
– কি? (ভয় পেয়ে গেল সুষম)
– কথাটা তুমি কিভাবে নিবে আমি জানি না!
– আগে বলেন! তারপর ভেবে দেখব! (মুখে হাসি দিয়ে বলল সুষম)
– আগে চোখ বন্ধ কর!
– আবার চোখ কেন বন্ধ করব??
-আহা!কর না প্লিজ!
– করলাম!
পকেট থেকে একটি আংটি বের করে হাটু গেড়ে বলল,
– এবার চোখ খুলো!
চোখ খুলে সুষমের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল!
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না!
সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল রনির দিকে!
– কি হল? পছন্দ হয় নি আংটি টা?
– হয়েছে!
– এবার বল!
– কি?
– Do you love me?
– (কাঁপা গলায় বলল) Yes!
রনি আংটিটা সুষমের হাতে পড়িয়ে দিল! আর বলল,
– তোমার আমার প্রেমে থাকবে না কোন দাঁড়ি কমা হসন্ত,
আমাদের প্রেমের সব ঋতুই হবে বসন্ত!
পরিশিষ্টঃ সুষম এবং রনি দুজনেই এখন বেশ ভাল আছে! সুষম তার পরিবার কে জানিয়েছে তার ব্যাপারে। তার বাবা-মা আধুনিক হওয়ার কারণে তারাও ছেলের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে। এবং একটি সুখী সমাপ্তি ঘটলো একটি সমপ্রেম জীবনকাহিনীর।

লেখকঃ মৃগেন্দ্র কেশরী

প্রকাশেঃসাতরঙা গল্প

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.