অবরুদ্ধের আর্তনাদ

প্রিয় সৃষ্টিকর্তা,

গত চিঠিতে জানতে চেয়েছো কেমন আছি। আসো আজ আমার জীবনের গল্প শোনাব তোমায়। আমি মানুষ,যদিও ‘মানুষ’ তা ভাবেনা,তবে আমার বিশ্বাস তুমি ঠিকই ভাবো। বয়স ১৭ ছুঁয়েছে এ বর্ষায়। তোমার এতদিনের দেয়া এই জীবনের জন্য আমার প্রত্যেকদিন সকালে উঠে ঘৃনা হয় আর রাতে ঘুমাতে গেলে হয় মায়া। ঠিক এভাবেই বুদ্ধি হওয়ার পর ১০টি বসন্ত পার করেছি,কারন আমার আশেপাশের মানুষ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি ভিন্ন। কিভাবে ভিন্ন? তুমি তোমার সৃজনশীলতার শেষ বিন্দু দিয়ে আমায় রাঙাতে চেয়েছিলেন হয়তো,তাই শরীরের সাথে আত্নার দুরত্ব কমিয়ে পুরুষের দেহে আমায় নারী বানালে। স্বত্ত্বার এই ভিন্নতাকে আমি দোষ বলিনা,মানুষ বলে৷ “মানুষ” কথাটা বারবার বলায় যতটা অদ্ভুত এবং হাস্যকর শোনাচ্ছে,বাস্তবে এই জীবনে বেঁচে থাকা প্রত্যেকদিন একই মাত্রায় অসহনীয়, ওই ‘মানুষের’ কারনেই। ‘মানুষ’ শুনে যদি বুঝতে না পারো এরা কারা, তবে বলি ওরাও তোমারই সৃষ্টি, শুধু আমার মত নয়। এই বয়সের সকল উচ্ছাস,আনন্দ,বেদনার দ্বার পার করে কোথায় যেন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই আসেনা,কিন্তু তাও বাঁচি। অনেকটা বাঁচি ওই “মানুষ” গুলোর করুনায়,কেউ কোন কথা না শোনালে একবেলা হয়তো একটু হাসি,বাকিটুকু সেই এক লাশের মত পরে থাকা। গল্পটাকে সাজাতে পারলাম না হয়তো। নিজের জীবনটার সিংহ ভাগই যখন অনিশ্চিত তখন গল্প সাজাতে বসা অনেকটা বিলাসিতা। তুমি ভালো আছোতো? আচ্ছা তোমার আমায় এভাবে প্রতিনিয়ত মরতে দেখে কেমন লাগছে? তোমার পরের চিঠিতে জানিও। আর হ্যাঁ তোমার ভাগের করুনায় নাহয় লাঞ্চনা না দিয়ে দুফোঁটা বৃষ্টি দিও।

ইতি,

তোমার নিপিড়ীত সৃষ্টি।

লিখেছেনঃ মূর্খ

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.