নেটফ্লিক্সের সেক্স এডুকেশন সিরিজ : যার সবটুকুই শিক্ষণীয়

লেখক : অনির্বাণ

সেক্স শব্দটা শুনলেই আমাদের মাথার ভিতর চলে আসে ১৮+ দৃশ্য। আর আমাদের সমাজে সেক্স শব্দটাই তো ট্যাবু, এখানে এটা উচ্চারণই করা যায় না। অধিকাংশ মানুষ সেক্স এডুকেশন বলতে অশ্লিল শিক্ষা বলে বসবে। অথচ ছোটবেলা থেকেই সেক্স এডুকেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ অন্তত কিছু মানুষ এটাকে অনুধাবন করতে পারে। আপনার যদি সেক্সুয়ালিটি, জেন্ডার, ডিজায়ার সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা না থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় নেটফ্লিক্সের ‘সেক্স এডুকেশন’ সিরিজটি দেখে নিতে পারেন। সেক্স, সেক্সুয়ালিটি, জেন্ডার, ডিজায়ার নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে এক ফ্রেমে এত সহজ নাটকীয় ভাবে তুলে ধরা হয়ত এর আগে কখনো হয়নি। দুই সিজনের এই সিরিজটি কমেডি ধাঁচের এবং এখানে যৌন বৈচিত্র্যকে দারুণ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কমেডি হলেও এর সেক্স এডুকেশনের অংশগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। প্রতিটি এপিসোডেই সেক্সুয়ালিটি, ডিজায়ার নিয়ে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানানো হয়। 

সিরিজের শুরুতে খোলামেলা যৌন দৃশ্য প্রথমে আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে, তাই ধৈর্য্য ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়াই ভালো। সিরিজে কেন্দ্রীয় চরিত্র ওটিস একজন স্কুল পড়ুয়া কিশোর,  ওটিসের মা ডা.জেইন একজন ‘সেক্স থেরাপিস্ট। জেইনের সেক্স থেরাপিস্ট পরিচয়টা, ওটিসের জন্য বেশ অস্বস্তিকর হয়ে দেখা দেয়।  ডা.জেইন যৌনতা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন, তার কাছে অনেক ক্লাইন্টও আসে। তিনি যৌনতা নিয়ে এতটাই উদার যে, নিজের কিশোর ছেলের সঙ্গেও যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করে। ডা.জেইন তার ছেলে ওটিস কে বলেন “Intercourse can be wonderful, But it can also cause tremendoy pani. And if you are not careful, sex can destroy lives. 

ওটিসের স্কুলের প্রিন্সিপালের ছেলে অতিরিক্ত ভায়াগ্রা সেবন করে। ভায়াগ্রা সেবনের ফলে তার পেইনফুল ইরাকশন হতে থাকে। ওটিস এবং মেভ এই অবস্থায় তাকে দেখে ফেলে এবং এরপর ওটিস এই পেইনফুল ইরাকশন থেকে মুক্তিপেতে সাহায্য করে। তারপর থেকে মেভ এবং ওটিস দুইজনে সেক্স থেরাপিস্টের বিজনেস চালু করে স্কুলে। এরপর স্কুলের সব শিক্ষার্থীরা ওটিসের কাছে রিলেশন,সেক্স লাইফ সম্পর্কে পরামর্শ নিতে থাকে।

এই সিরিজের একই সাথে সমান্তরালে গে, স্ট্রেইট, লেসবিয়ান,উভকামী সম্পর্কের জটিলতা দেখতে পাবেন। ওটিসের বন্ধু এরিক একজন নাইজেরিয়ান ধার্মিক পরিবারের ছেলে। এরিকের পরিবার তাকে গে হিসেবে মেনে নিলেও, তার ড্রাগ সাজাটা মেনে নিতে পারেনি। এরিক ড্রাগ সাজার কারণে বুলিংয়েরও শিকার হয়। এখানে বাইসেক্সুয়ালিটিকেও দারুণ ভাবে দেখানো হয়েছে, ওটিসের গার্লফ্রেন্ড পরবর্তীতে বুঝতে পারে সে একজন বাইসেক্সুয়াল। 

স্কুলের একটি মেয়ের ভ্যাজাইনার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। প্রিন্সিপাল হল রুমে সবাইকে ডেকে হলভর্তি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে জানতে চায়, এই ছবিটি কার। তখন এক এক করে সকল মেয়ে এবং ছেলেরাও দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে এই ছবিটি আমার ভ্যাজাইনা। এটাই বেধহয় সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য যেখানে সবাই প্রমাণ করে দিলো শরীরের যে কোন একটি অঙ্গ এতটা স্পর্শকাতর নয়৷ সব অঙ্গই সমান।

এই সিরিজের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন সেক্সুয়াল ডিজায়ার, সেক্সের অন্যতম একটি গুরুতপূর্ণ অংশ। আবার কারো যৌন অনুভূতি নাও থাকতে পারে, এটা একেবারেই স্বাভাবিক একটা বিষয়। এসেক্সুয়াল মানুষেরা একদমই স্বাভাবিক, যৌন আকাঙ্খা তাদের থাকে না কিন্তু তারাও প্রেমে পড়তে পারে। 

সর্বোপরি বলতে চাই, সেক্সএডুকেশন সিরিজটি সকল বয়সী মানুষদের দেখা উচিত। একই সাথে আমাদের সমাজে যে কতরকম লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় মানুষ আছে সেটা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবেন।   

প্রথম প্রকাশঃ ঠাহর (প্রথম সংখ্যা)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.