
লিখেছেন : রাহুল সেন
“সপ্ত বধূ মধু কলস কাঁধে
শীলের পড়ে মাটির ভান্ড রাখে
দাঁড়ায় শীলে পায়ের পারা দিয়া
নিজের কপাল নিজেই ভাঙ্গে মাইয়া”
(বাড়িওয়ালি, ২০০০)
বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে “ঋতুপর্ণ” বরাবরি এক উপমা। আমাদের বয়ঃসন্ধিকালে, যে সময় থেকে ঋতুপর্ণ খ্যাতি অর্জন শুরু করলেন, এবং তার পরেও তাকে নিয়ে নানা মত, নানা বক্তব্য শুনে এসেছি – তার মধ্যে কিছু প্রশংসা, কিছু বিস্ময়, কিছু কৌতুহল, কিছু ব্যঙ্গ, ও কিছু বিদ্রুপ। “লোকটা কিন্তু দর্শকদের ভাবিয়ে তুলতে পারে,” “পরিচালক হিসেবে ভালোই, কিন্তু ওর সিনেমায় ভর্তি bed scenes,” “সবই ঠিক ছিলো, হঠাৎ যে কেন মেয়ে হওয়ার ইচ্ছে জাগলো কে জানে,” “ওর সাজ-গোজটা এরম কেন জানি না” ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার কাছে ঋতুপর্ণ এই সমস্ত কিছুর সমাহার; কোনো একটি সত্যকে আমি ঋতুপর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারিনি। করতে চাইও না; আমার মনে হয় তিনি নিজেও সেটা মেনে নিতেন না। একক সত্য বা খাঁটিত্বকে আঁকড়ে ধরে চলার চেষ্টা যে কি সাংঘাতিক জিনিস তা আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রোজই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। আর জীবনের এই অকৃত্রিমতা বা একক সত্যকে বারংবার অতিক্রম করে, ভাঙা গড়ার মাধ্যমে নানা ভাবে নিজের কাজকে ও জীবনকে পরিচালিত করেছে সে। তাই ঋতুপর্ণর কোনো একটি পরিচয় নেই; তার অনেক পরিচয় – এই বহুত্ব পরিচয়ের মধ্যেই আছে তার queerness, যা আমাদের হিংস্র সামাজিক ও রাজনৈতিক একতার বিপক্ষে হাঁটে।
অথচ তর্কে-বিতর্কে, সমালোচনায়, যে একটি প্রসঙ্গ বার বার আলোচিত হয়েছে, এবং ঋতুপর্ণ ও তার কাজকে ব্যাখ্যা করেছে তা হলো তার যৌন/লিঙ্গ পরিচয়। এমনটা নয় যে লিঙ্গ রাজনীতি বা যৌনতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় নয়। কিন্তু ঋতুপর্ণ হঠাৎই এক বিকল্প লিঙ্গ রাজনীতির উপসর্গ (যাকে psychoanalytic terms এ বলা হয় ‘symptom’) হয়ে ওঠে তার কর্মজীবনের শেষের দিকে – যখন জনসমক্ষে তাঁর পোশাক-আশাক, সাজ-গোজ বদলাতে থাকে ও দৈহিক পরিবর্তন হতে শুরু করে। “আরেকটি প্রেমের গল্প” release হওয়ার কিছুটা সময় আগে থেকে তাঁর জীবনের শেষ অবধি, ঋতুপর্ণ এক queer icon হয়ে ওঠে। তাঁর cinema ও ব্যক্তিগত উপস্থাপনা অনেক প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের কাছে হয়ে ওঠে একাত্মতার একটা জায়গা। আমার cinema প্রেমী বন্ধুদের প্রায়ই বলতে শুনি যে, ঋতুপর্ণর বেশিরভাগ সিনেমাই নারীকেন্দ্রিক বা feminist, এবং শেষ কয়েকটি ছবি queer। আমার মতে এই পরিছন্ন বিভাজনটা নিতান্তই মর্মান্তিক দুটো কারণে: ১) এইরকম একটা যুক্তি দৃশ্যমানতা কে প্রাধান্য দেয়, এবং queernessকে খুঁজে পায় যখন তা চাক্ষুষ ও সুস্পষ্ট। এটাকে আমার দর্শকের আলসেমি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। আর, ২) ওই যে একটু আগে বললাম, খাঁটিত্বকে আঁকড়ে ধরা এক সাংঘাতিক জিনিস; এই তার্কিক পরিছন্নতাও তারই বিস্তারিত একটি রূপ।
ঋতুপর্ণর শিল্পসম্ভারে queerness আসে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে, অপ্রত্যাশিত ভাবে। Queerness এখানে কোনো সংজ্ঞায়িত যৌন পরিচয় নয় বরং একটা নান্দনিক অনুশীলন, একটা intellectual practice, বা সিনেমা নির্মাণের কৌশল যা অভ্যাসের বাইরে গিয়ে দর্শকদের ভাবতে প্ররোচিত করে। এই কৌশল বা নান্দনিকতা সুনির্দিষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত নয়; বরং সংজ্ঞা বিরোধী, প্রতিষ্ঠিত রীতি-নীতির বিপক্ষে চলা এক রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, ‘রবিবার’ পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেন, বোম্বের রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চেপে যাওয়ার সময়কার এক অভিজ্ঞতা:
“ট্রাফিক সিগনালে প্রচুর ফেরিওয়ালা … তাদেরই মধ্যে একজন … ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসে গাড়ির জানালায়। অমনি শশব্যস্ত জানলার কাঁচ উঠে যায়। তাড়াতাড়ি অটোরিকশার সিটগুলো সিঁটিয়ে যায় ভয়ে। এদিকে আসবে না তো! কেউ জানে না সে কোনদিকে যাবে। সেও জানে না সে কোনদিকে যাবে। দীর্ঘদেহী, বৃষস্কন্ধ, কঠিন আননে কমনীয়তার বিদ্রুপ। দাঁড়িয়ে আছে ট্রাফিক সিগনালে। ত্রাসের মানবমূর্তি … খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে চিরবন্দিনি। বোম্বের বৃহন্নলা।”
উদ্ধৃত এই অংশটির মধ্যে যৌনতার অন্ততপক্ষে তিনটি নান্দনিক দৃশ্য আমরা দেখতে পারি: ১) অনিশ্চয়তা বা অনির্দিষ্টতা – “কেউ জানে না সে কোনদিকে যাবে। সে নিজেও জানে না সে কোনদিকে যাবে।” অনেক সত্যের মধ্যে, যৌনতার বা লিঙ্গের একটি সত্য হলো এটা; তার তারল্যের হাতছানি যে আমাদের কোন সময়, কোনদিকে নিয়ে যাবে আমরা নিজেরাও জানি না। কখনো পুরুষ, কখনো নারী, কখনো বা পুরুষ থেকে নারী, কিংবা নারী থেকে পুরুষ। কখনো এই সমস্ত কিছুর সমাহার, আবার কখনো এগুলোর মধ্যে কোনোটাই নয়। যৌনতার ও লিঙ্গের এই বৃহৎ, অমীমাংসাকে তিনি অঙ্কন করেছেন কিছু শব্দ চয়নের মাধ্যমে। Sexuality ভাষান্তরিত হয়েছে লেখনীর সৌন্দর্যে।
২) “কেউ জানে না … সে নিজেও জানে না”: জ্ঞান এবং ক্ষমতার মধ্যে যে একটা সুপ্ত সংযোগ আছে তা এই বাক্যটি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে। মনস্তাত্তিকরা অনেক সময়ই বলে থাকেন যে আমরা সেই জিনিসকেই সব থেকে বেশি ভয় পাই যা আমাদের বোধগম্যের বা জ্ঞানের বাইরে, যার সাথে আমাদের তেমন ঘনিষ্ঠতা বা পরিচিতি নেই। যেমন ধরুন ‘অন্ধকার’ কিংবা ‘ভূত-প্রেত’ – আমরা অন্ধকারকে ভয় পাই কারণ আমরা “জানি না” সেখানে কি আছে, বা কোন সময় সেখান থেকে কি বেরিয়ে পড়তে পারে। ঠিক তেমনি, বেশিরভাগ মানুষই কোনোদিন ভূত-প্রেত দেখেনি, কিন্তু তা সত্ত্বেও ভূতে প্রবল ভয় কেবলমাত্র তাকে দেখতে পাওয়া যায় না বলেই। তাই কোনো জিনিসকে আয়ত্তের মধ্যে আনবার বা ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ হলো সেই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভাবে রপ্ত করা। Gender আর Sexuality’র মধ্যে এমন এক মাত্রাধিকতা আছে যা আমাদের বিচারাধিকারের বাইরে; তাকে আমরা কোনোদিনও সম্পূর্ণ রূপে আয়ত্ত করতে পারবো না। আমাদের “আসল” gender বা sexual orientation কি, সেটা সবসময় একটা মায়া হয়েই থেকে যাবে; আঁচ করতে পারলেও ধরতে পারবো না। সম্পূর্ণরূপে কোনো কিছু না জানার অনিশ্চয়তা ও অনির্দিষ্টতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন তার কলাকৌশলীতে, লেখা লিখিতে, এবং নিজের জীবন চালনাতেও।
3) বোম্বের বৃহন্নলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন এমন এক উপমার যা বৈপরীত্যকে দক্ষতার সাথে ধরে রাখতে সক্ষম। “খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে চিরবন্দিনি”: বাক্যটি যেন দুধারের বিপরীত অর্থের ভারে নুয়ে পড়েছে, কিন্তু ভাঙছে না। খোলা রাস্তার অকপটতা যেন চিরবন্দিনির কারাবাসকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে। যে বৃহন্নলা সত্ত্বা নারী-পুরুষের দ্বৈত চেতনা কে অতিক্রম করেছে – সে উভয়ত নারী এবং পুরুষ, আবার দুটোর মধ্যে কোনোটাই নয় – সেই সত্ত্বায় বাক্যরচনা ও শব্দ চয়ন করেছেন ঋতুপর্ণ। সে খোলা রাস্তার এক স্বাধীন পথিক, কিন্তু সে চিরবন্দিনি। এটাই তাঁর শিল্পের বৃহনল্লাত্ব; লেখনীর রূপান্তরকামিতা।
উদ্ধৃত এই লেখাটির মাধ্যমে এটাই দেখতে চাইলাম যে ঋতুপর্ণ তাঁর লেখায় কিভাবে যৌনতা ও লিঙ্গকে পরিচয়/identity’র ঊর্ধে নিয়ে গেছেন। Identity কে পরিণত করেছেন শিল্পনির্মাণের অলঙ্কারিক ভাষায়। এবার ধরা যাক তাঁর সিনেমার কথায়। সাধারণত ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং যৌনতা নিয়ে আলোচনা বসলে যে তিনটি ছবির কথা উঠে আসে, তা হলো – “আরেকটি প্রেমের গল্প”, “Memories in March”, এবং “চিত্রাঙ্গদা”। তিনটি ছবিতেই অভিনয় করেছেন তিনি, এবং পরিচালনা করেছেন একটি। অনেকে এই তিনটি ছবিকে ঋতুপর্ণর queer trilogy বলে থাকে; এই তিনটি সিনেমাই ফ্রেমবন্দি করেছে যৌন সংখ্যালঘু মানুষদের জীবনের প্রেম, ভালোবাসা ও বিরহের কথা। কিন্তু আমি এখানে ঋতুপর্ণর প্রথমদিককার একটি ছবি নিয়ে আলোচনা করতে চাই যা আপাতদৃষ্টিতে queer মনে না হলেও – কারণ এটা সরাসরি ভাবে যৌন সংখ্যালঘু মানুষদের কথা বলে না – ওঁর সমস্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি queer ছবি। সিনেমাটির নাম “বাড়িওয়ালি”, মুক্তি পেয়েছিল ২০০০ সালে।
বনলতা, সিনেমার প্রধান চরিত্র, একজন অবিবাহিতা, মাঝবয়সী, নিঃসঙ্গিনী মহিলা। একমাত্র সঙ্গ বলতে বাড়ির পুরাতন ভৃত্য, প্রসন্ন, যে বনলতার ছোটবেলাকার খেলার সাথীও বটে। আর আছে মালতি, বাড়ির পরিচারিকা। বিয়ের আগের রাতে হবু বর সাপের কামড়ে মারা যায়; সেই থেকে লগ্নভ্রষ্টা বনলতা একাকী, স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত। বেহুলা লখিন্দরের ছায়ায় ঋতুপর্ণ বনলতার একাকী জীবন সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছেন; সঙ্গে আছে এক তীব্র কামজ বেদনা যা নিঃসঙ্গতার ভার কয়েকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। বেহুলা অবশ্য ঈশ্বরের কৃপায় লখিন্দরকে ফিরে পেয়েছিলেন; বনলতা সেই সৌভাগ্যটুকু থেকেও বঞ্চিত। এক অনন্ত বিরহই তার জীবনের সত্য, যা কদাচিৎ ঘটনাবহুল হয়ে ওঠে তুচ্ছ গতানুগতিক সমস্যার কারণে – বাড়ির দলিল খুঁজে না পাওয়া, দোতলার আলো fuse হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
এই সিনেমায় queerness আসে বিষমকামিতার ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে: কোনো নারী-পুরুষের রোমান্টিক সম্পর্কের পূর্ণতা পরিচালক এই সিনেমায় দেখাননি। বনলতার হবু বর বিয়ের ঠিক আগেই মারা যায়; তার বাড়িতে শুটিং করতে আসা সিনেমা পরিচালকের প্রতি বনলতার কামুক আশক্তিও দিনের আলো দেখতে পায় না; সিনেমা পরিচালকের স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক বছর আগেই। অর্থাৎ “বাড়িওয়ালি” সিনেমার জগতে নারী-পুরুষের রোমান্টিক প্রেমের সম্ভবনাকে সম্পূর্ণ ভাবে নস্যাৎ করেছেন ঋতুপর্ণ। যে একটিমাত্র দোসরত্ব টিকে থাকে শেষ অবধি, তা হলো বনলতা-প্রসন্ন জুটি। এই সিনেমাটি কল্পনা করতে সক্ষম হয়েছে এক বিকল্প পারিবারিক ও সামাজিক পরিকাঠামোর, যেটা নারী-পুরুষের বৈবাহিক/প্রেমের সম্পর্কের বাইরে – যেখানে বিরহ আছে, কিন্তু আছে পারস্পরিক নির্ভরতাও। এটাই এই সিনেমার queer নকশা।
এবার আসা যাক সিনেমার একটি বিশেষ দৃশ্যে: বনলতা স্বপ্নে দেখছে তার বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। সে প্রসন্নকে বলছে – “তাড়াতাড়ি করে কলাপাতা গুলো দাও প্রসন্ন। নিচে ওরা বসে আছে” (অনুষ্ঠান বাড়িতে কলাপাতায় খেতে দেওয়া একটা পুরোনো রীতি)। প্রসন্ন বলে: “এ কলাগাছ তো দেওয়া যাবে না দিদি … ভেলা তৈরি হবে যে … সাপে কাটা মড়া তো, কলার ভেলায় ভাসিয়ে দিতে হবে।” স্বপ্নে বনলতা দেখে, প্রসন্ন শাড়ি পরে, শাঁখা-পলা-সিঁদুর পরে, বাকি এয়োস্ত্রীদের সাথে কলাতলা প্রদক্ষিন করছে। কিন্তু সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হলো প্রসন্নর কথা গুলি: যে কলাপাতাগুলি খাবার পরিবেশনের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা, তা রূপান্তরিত হচ্ছে মৃত্যুবাহী যানে। জীবন ও মরণের ক্ষীণ রেখা নিমেষের মধ্যে উবে যায় প্রসন্নর এই ছোট্ট সংলাপটিতে। এবং কোনো একটি জিনিসের যে একই সাথে একাধিক অর্থ থাকতে পারে, তা এই সংলাপটি আমাদের বোঝাতে সাহায্য করে – কলাপাতা এখানে খাবার থালা, আবার শববাহী যান, ঠিক যেমন শাঁখা-শাড়ী পরা প্রসন্ন এই দৃশ্যে পুরুষও বটে আবার নারীও বটে, আবার হয় দুটির মধ্যে কোনোটাই নয় কিংবা এক সাথে দুটি।
ঋতুপর্ণর queer নান্দনিকতার আরেকটি মুখ্য উদাহরণ এটি: যৌনতা বা লিঙ্গের অনির্ণেয়তাকে ব্যবহার করা অন্য জিনিসের একাধিকত্বের ওপর আলোকপাতের উদ্দেশ্যে। তাই তাঁর ছবিতে যে শুধুমাত্র সমকামী বা রূপান্তরকামী চরিত্র রয়েছে তাই নয়, তার সিনেমার নির্দেশনার মধ্যে আছে এক রূপান্তরকামিতা, কাহিনীসূত্রের ছায়ায় আছে সমকামিত্ব। এগুলো কোনোটাই নিৰ্দিষ্ট, সংজ্ঞায়িত পরিচয় নয় – সিনেমা নির্মাণের প্রণালী মাত্র, যা ছড়িয়ে আছে আমাদের চারিপাশে, অজ্ঞানে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে কোনো স্থবির অর্থ নেই – আছে এক অনন্ত বিরহ, যেখানে প্রেম বিচ্ছেদের সমার্থক, পুরুষ মানেই নারী, জীবন ও মৃত্যুর উৎস এক। এ যেন এক ভাষ্যিক এবং cinematic queerness যা আমাদের আশপাশের চেনা জগতটাকে আবার নতুন করে চিনতে শেখায়; সে জগতে আমরা সবাই রূপান্তরকামী/সমকামী, আবার কেউই রূপান্তরকামী/সমকামী নই।
প্রথম প্রকাশঃ ঠাহর (প্রথম সংখ্যা)