অস্থাবর

যবে থেকে এই পেইজটিতে সংযুক্ত হয়েছি,তখন থেকেই পেইজটির প্রতি ভালোলাগা কাজ করে যাচ্ছে।এখানে আমরা অবহেলিত, অধিকার থেকে দূরে থাকা নিভৃতে জীবন যাপন করা লোক গুলো খুব সহজেই আমাদের রিক্তের ব্যথা-সুখ গুলো সহজেই প্রকাশ করতে পারি।এজন্য শুরুতেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতেছি পেইজটির এডমিনকে,আমাদের জন্য এত সুন্দর একটা প্রকাশ জায়গা দেওয়ার জন্য।।

সবার মতন আমার জীবনও আজকে ব্যথায় আটকে চলেছে।তাই প্রকাশ করলাম শূন্য রিক্তের ব্যথা,চাওয়া,আকাঙ্ক্ষা গুলো…………

সেই কয়েক বছর আগে সোশাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি, ‘আমার সেই বুঝতে পারার পর থেকে যে ছেলেদেরকে একটা পুরুষরূপে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ‘, এটার নাম “সমকামি প্রবিত্তি বা গে”।কথাটা প্রথমে একদমই মেনে নিতে পারিনি,তবে এখন বিভিন্ন বই উইকিপিডিয়া পড়ে নিজেকে পরিপূর্ণ রূপে মেনে নিতে পেরেছি।।কোনে ছেলেকে নিজের জন্য পুরুষ রূপে চাওয়াটা আজকে একদম অতি সহজেই মেনে নিয়েছি কারন এটাও আমার প্রকৃতির চাওয়া।আমি বাহ্যিক ভাবে কোনো আচারন বা চলন ভঙ্গির দিক দিয়ে একটুও মেয়েলি না তবু কেন যে আমার এই শূন্য মন কোনো পুরুষ দিয়ে পূর্নতা পেতে চায় তা আমি জানিনা।হয়ত বাহ্যিক আবরনে, চলনে নারী নেই তবে অন্তরের অন্তস্তলের আসনে বসে আছে কোনো নারী।

সমকামি হিসেবে নিজেকে জানার পর হৈ হুল্লুরে,পড়াশুনার ব্যস্ততায় জীবন থেকে কেটে গেছে বছর খানেক সময়।।তারপর আবার নতুন করে প্রবেশ হয় ফেসবুকে।।প্রথমে রিয়েল আইডি ইউজ করে জানতে পারলেও, এখন বছর খানেক সময় হয়েছে ফেইক আইডি ইউজ করি।।প্রায় প্রত্যেক সমকামি ব্যাক্তির জীবনেই যেমন ভাঙা-গড়ার খেলার সূচনা হয়,আমার জীবনেও হয়েছিল।একমাসে গড়েছিলাম চারমাস পর একরাতেই ভেঙে গেল,’আমি আর পারতেছি না।আমি পরিবারের একমাত্র ছেলে। আমাকে বিয়ে করতেই হবে।তাই এখনই দূরে সরে যেতে চাই’ মাত্র এই কয়টা কথায়ই সব ভেঙে গেল।কি আজব তাইনা……………!!

সেই দিন গুলো মনে আসলে একটা লোকগীতি মনে আসে_

“ও প্রেম গড়তে একদিন_

“ভাঙতে দুইদিন_

“এমন প্রেম আর কইরো না দরদি__

যাই হোক সে চলে যাওয়ার পর আমি সম্পূর্ন রূপে অস্থাবর হয়ে গিয়েছিলাম।নিজেকে প্রচন্ড রকমের ব্যর্থ এবং হীন মনে হয়েছিল।তবুও সেই ভাঙনের ব্যথা বুকে পাথর রেখে সামলে নিয়েছি।হয়ত আমাদের সম্পর্ক বেশি গভীর হয়নি  বা অন্যদের মতন তেমন বার বার দেখাও হয়নি, তাই হয়ত স্মৃতির পাতাটা ছোট ছিল। সহজেই পাতা গুলো উল্টে যেতে পেরেছিলাম____

তবে আমরা তো মানুষ!আমাদের অনুভূতিটা কি করে মাটি দেই?কি করে প্রেম ভালোবাসার মতন পবিত্র অনুভূতি গুলোকে অস্বীকার করে বাঁচি।

বাঁচতে হলেত একজন সঙ্গী দরকার____!!এটা সবারই দরকার।হাজার বন্ধু থাকার পরও দরকার পরে।।প্রত্যেকটা মানুষের জীবন জোড়াতেই পূর্ণতা পায়।

আমি আপাতত বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।।জানি জীবনে এখনও অনেক সময় পাওয়া যাবে প্রেম বা ভালোবাসার জন্য।।আসলেই কি তাই??জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসার কি কোনো সময় আছে নাকি??এটাত ভূমিকম্পের মতন হুট করেই এসে জীবন তোলপাড় করে দেয়,কোনো পূর্বাভাষ দেয় না।।।

বর্তমানে আমার নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে।কারন আমি যখন জানতে পারি আমি গে তারপর থেকেই কেমন যেন আর কোনো ছেলের সাথে তেমন বন্ধু সুলভ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি এমনকি চলার পথে কথাও কম বলেছি। ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের সাথেও তেমন বন্ধু সুলভ রূপে চলতে পারিনি।।একেত একা,তারপর তেমন বন্ধু নেই,বাসায়ও একা,জীবন সব কিছুতেই সেই ছোট বেলা থেকেই একা……বিরক্ত হয়ে গেছি আপাতত আমি।।আমার এখন কোনো একটা নির্জন নিরালয় পূর্ন ছাঁয়াতল দরকার।কারোর মায়ায় পূর্ন বিশ্রাম দরকার।আমি একাকিত্ব পূর্ন জীবন চালিয়ে বেশ অস্থাবর হয়েছি,,,,,,আজ কারোর নিবিড় পরিচর্চা দরকার হয়ে পরেছে জীবনে।।আজ কারোর কাছে নিজেকে সকালের শিশিরে ভেজা শিউলি ফুলের মতন মুষ্ঠি ভরে তুলে দিতে মন চাচ্ছে।আজ কাউকে একান্তই আমার আমিতে লুকিয়ে নিতে মন চাচ্ছে।

তবে হ্যাঁ তাকে অবশ্যই সমকামি জীবনকে মেনে নিয়ে চলার মতন সৎসাহস তার মাঝে থাকতে হবে।।বুকের মাঝে সত্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্য প্রনয় থাকতে হবে।।তাকে আগে এটা মেনে নিতে শিখতে হবে যে সমকামি চয়েজেও জীবনটা সুন্দর করে কাটানো যায়।।আমরা সবকিছুই সবাইকে জানাই না,সব কিছুতে অন্য জন কি বলবে তার ভয় করিনা,, ঠিক এভাবেই নিভৃতভাবে জীবন কাটানো যায়।।তাছাড়া আমিও ক্লান্ত দ্বিতীয় বার আবারও কেউ আমাকে ভেঙে দিয়ে গেলে জুড়িয়ে নেওয়ার বা নিজেকে ফের গড়ে তোলার শক্তি হয়ত আর হবে না।।

Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.