আকাঙ্ক্ষার রঙিন গোধূলি

বছর ঘুরে আরেকটা মার্চ মাস এসে প্রায় চলেও যাচ্ছে।বিগত মার্চগুলোর মতো এই মার্চেও সঞ্জয় নাগের ডিরেকশনে ঋতুপর্ণ ঘোষের অভিনয়ে “মেমোরিস ইন মার্চ” সিনেমাটা দেখলাম। কিন্তু সিনেমা দেখার সময় আমার উপলব্ধি অনুভূতি কিছুই আগের দেখাগুলোর মতো ছিল না।আমি অরতির তার ছেলের মৃত্যুর পর তার ছেলের সেক্সুয়ালিটি জানা, অর্ণবের সাথে অরতির কথোপকথনের সৌন্দর্য্য খুব গভীরভাবে অনুভব করতে পেরেছি।আমি গত বছর জুনে দীর্ঘ পাঁচ বছরের স্ট্রেইট, বাইরোমেন্টিক হেটারোসেক্সুয়াল গোলকধাঁধার কনফিউশনের পর অবশেষে বুঝতে পেরেছিলাম আমি শুধু মেয়েদের প্রতি আকর্ষন বোধ করি।আমি ২০১৫ সালে আমার স্কুলের এক ফিমেল টিচারের প্রতি খুব অবসেসড ছিলাম। আমার বন্ধুরা তখন একেক সেলিব্রিটিকে পছন্দ করতো তাই আমিও বলতাম আমারও অমুক মেল সেলিব্রিটিকে ভালো লাগে।কিন্তু আমার আসলে ওই সেলিব্রিটির গান শুনতে ভালো লাগতো সেলিব্রিটিকে না।ক্লাস নাইনে উঠার পর ওই ফিমেল টিচারের প্রতি অবসেশন কেটে গেলো।এরপর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে কলেজের এক টিচারের প্রতি অবসেসড হলাম।উনাকে অনেক বিরক্ত করেছি এখন সেগুলো মনে পড়লে নিজেকে খুব বেকুব আর বিরক্তিকর মনে হয়।ফিমেল টিচারদের জন্য যা ছিল তাকে অবসেশন বললাম কারণ তাদের প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ ছিল না থাকার মধ্যে ছিল এক্সট্রিম লেভেলের ভালো লাগা যা আবার সময়ের সাথে সাথে নিঃশেষও হয়ে গেছে।এই বিষয়টা আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার সেক্সুয়ালিটি জানার পর।যার প্রতি আমার আকর্ষণ আছে সে আমার প্রাক্তন ক্লাসমেট।আমার এখনো রোজ একবার হলেও মনে পরে কিভাবে ওর গালে টোল খাওয়া হাসি দেখে প্রেমে পরেছিলাম।যদিও যখন প্রেমে পরেছিলাম তখন আমি বুঝতে পারিনি এটা যে প্রেমে পরা নিজের সেক্সুয়ালিটি জানার পর বুঝতে পেরেছি।ওর প্রতি আমার কোনো অবসেশন কাজ করতো না আমি ওই টিচার বেলায় যেমন পিছনে পিছনে ঘুরেছি আরো কত কিছু করেছি তার কিছুই ওর সাথে করিনি।শুধু হঠাৎ ওকে দেখলে আমার হার্টবিট বেড়ে যেতো।ঐ হাসির প্রেমে পরার পরই এসএসসি হয় এবং ও অন্য কলেজে চলে যায়। আমাদের বাড়ি এক এলাকায় তাই রাস্তায় মাসে একবার হলেও দেখা হতো। কিন্তু আমি যেহেতু ইন্ট্রোভার্ট তাই কিছুই বলতে পারতাম না সৌজন্যতার জন্য সামান্য হাসতেও পারতাম না।শুধু হার্টবিট বেড়ে যেতো আর কানে বাজতো “আমি তোমারই নাম গাই” আর “লাল ইস্ক” গান দুটো।সত্যিই “জলে কেনো ডাঙায় আমি ডুবতেও রাজি আছি যদি ওই মেয়েটা আমাকে ভাসিয়ে তোলে”।”নিজের নাম বদলে নিবো নাকি ওর নাম লুকিয়ে ফেলবো” আমি তা বুঝতে পারিনা।ওর সাথে আমার বড়সড়ভাবে কলেজে সময় দেখা হয়েছিল এক-দুইমাসের জন্য এক টিচারের বাসায় পড়ার কারণে তখন আমি প্রায় এক সপ্তাহ চেষ্টা করে সব ভয় কাটিয়ে ওকে আমার সাথে একটা ছবি তোলার জন্য জিজ্ঞাসা করেছিলাম।ও ছবি তুলেছিল আমার সাথে।এখনও আমি প্রতিদিন ওই ছবিটা দেখি।গত একবছর আমার ওর সাথে দেখা হয়নি। কারণ করোনার জন্য তো বাড়ির বাইরে যাওয়া হয় না।কিন্তু আমি এরজন্য মোটেও দুঃখী না। কিংবা আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্যও আমি দুঃখী না।বেশ তো আছি এডমিশন টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি একটু সময় খালি থাকলে ইউরি মাঙ্গা মানহুয়া পড়ছি, গান শুনছি।এডমিশন টেস্ট শেষ হলে আবার সিনেমা, সিরিজ দেখবো, বই পড়বো।ভালোই তো আছি ভালোই তো থাকবো।আমি অনেক কিছু ইমাজিন করি। যেমন ইমাজিন করি ওর সাথে সময় কাটানোর পর এক মানহুয়ায় পড়া চাংগিং এক্সপ্রেসের একটু পালটানো ডায়লগ “At our closest point of intimacy, we were just 0.01 cm apart from each other.57 hours later,i fell in love with this women.”–মনে মনে আওড়াচ্ছি।আবার ইমাজিন করি আমরা “Singing in the rain” আর এক ইউরি মানহুয়ার এক দৃশ্যের মতো বৃষ্টিতে ভিজছি আর “Singing in the rain” গাইছি।ইমাজিন করি আমরা একসাথে সিনেমা দেখছি। অক্টোবর মাসে ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি জ্বেলে গার্ল ইন রেডের “We fell in love in October” শুনছি। এতো সুন্দর মুহূর্ত ইমাজিন করতে পারছি তাহলে কিভাবে দুঃখী থাকবো বলেন তো!

Source: BAH( Bangladesh Against Homophobia)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.