
তুষার বাহ্যিকভাবে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ মানুষ। কিন্তু তার আচরণ কিছুদিন পুরুষালি থাকে আবার কিছুদিন নারীসুলভ থাকে। যে কয়দিন তার আচরণ নারীসুলভ থাকে সে কয়দিন তার কথা বলার ধরন, হাতের ভঙ্গিমা, চোখ মুখের অভিব্যক্তি ইত্যাদি দেখে অনেকেই ধারণা করে তার শরীরে হরমোনের ভারসাম্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না। অনেকেই এই কথাটা তাকে সরাসরি বলতে দ্বিধাবোধ করেননি। সে এই বিষয়টা তার বয়ঃসন্ধিকালে বুঝতে না পারলেও তার প্রতি অন্যদের মন্তব্যের কারনে তার কৌতুহল জাগে। ইন্টারনেটে বেশ কিছু প্রবন্ধ পড়ার পড়ার পর সে জেন্ডার ফ্লুইড সম্পর্কে জানতে পারে এবং সে নিজে একজন জেন্ডার ফ্লুইড তা বুঝতে পারে। যার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য থাকে সে নিজেকে কখনো নারী ভাবতে পছন্দ করে আবার কখনো পুরুষ ভাবতে পছন্দ করে। যখন থেকে সে বিষয়টা জানতে পেরেছে তখন থেকে তার মনে নিজেকে নারী হিসেবে আবিষ্কার করার প্রবনতা সৃষ্টি হয়েছে। নারী এবং পুরুষ উভয়কেই খুব সহজে বুঝতে পারার ক্ষমতা আছে তার মধ্যে আগে থেকেই ছিলো। এটাকে জেন্ডার ফ্লুইডিটির একটি বিশেষ গুন বলা যেতে পারে। যদিও তার পোষাক আশাক পছন্দ এবং অপছন্দের জায়গাগুলো স্বাভাবিক পুরুষ মানুষের মতো। অপমানিত হওয়ার বা লজ্জা পাবার আশঙ্কায় এই কথাগুলো কাউকে বলার সুযোগ বা মনোবল কখনো হয়নি। যখন তার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, তখন তার শরীর ও মন প্রবলভাবে পুরুষ সঙ্গ কামনা করে যা সে সমাজের ভয়ে দমিয়ে রাখে এবং অন্যসময়ে সে স্বাভাবিকভাবেই নারী সঙ্গ কামনা করে এবং এটাকেও সে প্রকাশ করেনা। আবার এমনও হয় যে দীর্ঘদিন সে নারী বা পুরুষ কারো প্রতিই যৌন আকর্ষণ অনুভব করেনা। এরকম দোদুল্যমান যৌন কামনা নিয়ে কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানোটা সে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে কারন তার মনের আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন অধিকাংশ নারী বা পুরুষ বুঝতে পারবে না। তাছাড়া ডমিন্যান্ট সমকামীদের অনেকেই তার সাবমিসিভ সঙ্গীকে অপমান করে কথা বলে একথা জানার পর সে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়েছে এবং সে এখন সঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করাটাও নিরাপদ মনে করে না। নারী, পুরুষ অথবা জেন্ডার ফ্লুইড, যাই হোক না কেনো, সবার আগে সে একজন মানুষ তো! প্রত্যেকেরই আত্মসম্মান আছে, অপমানবোধ আছে, আবেগ অনুভুতির যায়গা আছে। আসুন আমরা সবাইকে মানুষ হিসেবে সম্মান করি এবং ভালবাসতে শিখি…
Source: BAH (Bangladesh Against Homophobia)